ডিসি টু ডিসি কনভার্টার (১ম পর্ব)- প্রাথমিক আলোচনা

6
2907

ইলেকট্রনিক্সের কোনো প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করার সময় সবথেকে বড় যে সমস্যাগুলো দেখা দেয়, তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে সার্কিটে দরকার মতো ভোল্টেজের ব্যবস্থা করা। ভোল্টেজ বা পাওয়ার সোর্স হিসেবে সাধারণত ব্যাটারী, সোলারসেল, ডিজেল জেনারটর, উইন্ড টারবাইন, বা সরাসরি গ্রীড পাওয়ার ব্যবহার করা হয়। পাওয়ার গ্রীড বা জেনারেটর ভোল্টেজকে ট্রান্সফর্মার দিয়ে কমিয়ে রেক্টিফায়র দিয়ে ডিসি করা যায়, যেখানে ট্রান্সফর্মার সাধারণত 3V/6V/9V/12V ইত্যাদি ভোল্টেজের হয়ে থাকে।

Batteries - ডিসি টু ডিসি কনভার্টার
Batteries – ডিসি টু ডিসি কনভার্টার

ব্যাটারীর মধ্যে লেড এসিড ব্যাটারিই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় যেগুলো সাধারণত 4.4V, 6V, 12V এবং 24V ই বাজারে বেশি প্রচলিত। ড্রাইসেল 1.5V, নিকেল ক্যাডমিয়াম সেলগুলো সাধারণত 1.2V – 1.8V এবং লিথিয়াম আয়ন বা লিথিয়াম পলিমার সেলগুলো 3.7V এর হয়ে থাকে। বাজারে প্রচলিত সোলার প্যানেল সাধারণত 12V, 18V বা 24V হয়ে থাকে।

অন্যদিকে আমাদের প্রজেক্টের লোড হিসেবে একটি সাধারণ বাল্ব থেকে শুরু করে ছোটো মটর, রিলে, মাইক্রোকন্ট্রোলার বোর্ড, মোবাইল ফোন বা এলইডি যে কোনো কিছুই হতে পারে। এদের প্রত্যেকেরই অপারেটিং ভোল্টেজ ভিন্ন ভিন্ন। যেমন আকার এবং রং ভেদে এলইডি সাধারণত 1.5v থেকে 4.5V, মটর 3/6/9/12V, মাইক্রোকন্ট্রোলার বা অন্যান্য ডিজিটাল সার্কিটের জন্য প্রয়োজন হয় 5V এর।

কিন্তু সার্কিটের চাহিদা অনুযায়ী ভোল্টেজ সোর্স সবসময় সরাসরি পাওয়া যায় না। ধরুন মাইক্রোকন্ট্রোলার নিয়ে কাজ করছেন, যেখানে 5V সাপ্লাই দরকার। কিন্তু 5V এর ব্যাটারী সচারচর পাওয়া যাবে না। কিংবা ধরুন কোনো সার্কিটে ঠিক 7V সাপ্লাই দরকার। তখন কি করবেন? বাজারে 7V এ তো কোনো ব্যাটারিই নেই। কিংবা ধরুন সার্কিটে 6V ই লাগবে, 6V ব্যাটারি তো বাজারে পাওয়াই যায়, কিন্তু আপনার কাছে 12V ব্যাটারি আছে, কিংবা 6V ট্রান্সফর্মার ছাড়া আর কিছুই নেই। 6V ট্রান্সফর্মারকে ডায়োড দিয়ে রেক্টিফাই করে ক্যাপাসিটর দিয়ে ফিল্টার করলে প্রায় 8.4V ডিসি পাওয়া যাবে। কিন্তু আপনার তো দরকার 6V, এক্ষেত্রে কি করবেন? ভোল্টেজকে কোনো না কোনোভাবে কমিয়ে দরকারমতো ভোল্টেজে নামিয়ে আনা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
আবার যদি এমন হয়, আপনার কাছে 3.7 ভোল্টের একটি লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি আছে, আপনি সেটা দিয়ে মোবাইল চার্জ করতে চাচ্ছেন (পাওয়ার ব্যাংক সার্কিট), মোবাইলে তো 5V দরকার। এক্ষেত্রে ভোল্টেজ বাড়িয়ে 5V করতে হবে।

আর এই কাজগুলো করতেই দরকার পড়বে ডিসি টু ডিসি কনভার্টার, অর্থাৎ এমন একটা আলাদা সার্কিট যা দিয়ে ডিসি ভোল্টেজকে দরকারমতো কমিয়ে বা বাড়িয়ে এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে উল্টিয়ে বা ইনভার্ট করে (যেমন 12V থেকে -12V এ) মূল সার্কিটে ব্যবহার করা যাবে। সার্কিট ডিজাইন, আকার-আকৃতি, সুবিধা-অসুবিধা, ব্যবহার ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে অনেক ভাবেই ডিসি টু ডিসি কনভার্টার সার্কিট তৈরি করা যায়। সাধারণ একটা রেজিস্টেন্সকে লোডের সাথে সিরিজে লাগালেই যেমন ডিসি টু ডিসি কনভার্টার হয়ে যায়, তেমনি ইন্ডাক্টর ক্যাপাসিটর, মসফেট, ট্রানজি্স্টর ইত্যাদি ব্যবহার করে সুইচিং টেকনোলজির মাধ্যমে জটিল সার্কিট তৈরি করেও ডিসি টু ডিসি কনভার্টার তৈরি করা যায়। প্রত্যেকেরই কিছু সুবিধা-অসুবিধা আছে।

এ্রই টিউটোরিয়ালে পরবর্তীতে ধারাবাহিকভাবে সাধারণ রেজিস্টেন্স দিয়ে তৈরি রেজিস্টিভ ভোল্টেজ ডিভাইডার থেকে শুরু করে একে একে ডায়োড ভোল্টেজ রেগুলেটর, ট্রানজিস্টার ভোল্টেজ রেগুলটর, লিনিয়ার রেগুলেটর, এবং সবশেষে Switch Mode আইসি MC34063 দিয়ে তৈরি বাক কনভার্টার, বুস্ট কনভার্টার এবং ভোল্টেজ ইনভার্টিং কনভার্টার, এদের প্রত্যেকটির গঠন, কার্যপ্রণালী, সুবিধা-অসুবিধা ইত্যাদি নিয়ে যথাসম্ভব বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করবো।

ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের সাথেই থাকুন। কোনো প্রশ্ন থাকলে নিচে কমেন্টস বক্স ব্যবহার করুন, চাইলে ফেসবুক পেজ থেকেও ঘুরে আসতে পারেন

ধন্যবাদ

ডিসি সংক্রান্ত কিছু মজার প্রজেক্ট নিয়ে পড়তে চাইলে ঘুরে আসুন – মিনি আইপিএস তৈরি, ট্রান্সফরমার এর বিভিন্ন অংশএল ই ডি লাইট

আপডেট
দ্বিতীয় পর্ব: ডিসি টু ডিসি কনভার্টার (২য় পর্ব)- ভোল্টেজ ডিভাইডার

6 মন্তব্য

উত্তর প্রদান

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন