ডিসি টু ডিসি কনভার্টার (৩য় পর্ব)- ডায়োড ও জেনার ডায়োড

6
2949

ডিসি টু ডিসি কনভার্টার সিরিজের দ্বিতীয় পর্বে রেজিস্টিভ ভোল্টেজ ডিভাইডার, এর সুবিধা এবং অসুবিধা নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করেছিলাম। সেখানে দেখিয়েছিলাম দুইটি কারণে ভোল্টেজ ডিভাইডার থেকে স্থিরমানের আউটপুট ভোল্টেজ পাওয়া সম্ভব হয় না:

  1. ইনপুট ভোল্টেজ পরিবর্তিত হলে আউটপুট ভোল্টেজেও পরিবর্তন আসে
  2. সিরিজ রেজিস্টেন্স বা লোডে সামান্য পরিবর্তন হলেও আউটপুট ভোল্টেজ পরিবর্তিত হয়

এ দুটি সমস্যা দুর করার জন্য আমাদের এমন একটি ডিভাইস বা কম্পোনেন্ট প্রয়োজন, যার থেকে প্রাপ্ত আউটপুট ভোল্টেজ ইনপুট বা লোডের উপর নির্ভর করে না। আর এমন একটি ডিভাইস বা কম্পোনেন্ট হলো ডায়োড।

diode

ডায়োড কিভাবে ভোল্টেজকে নিয়ন্ত্রণ বা রেগুলেট করতে পারে, তা জানতে হলে আগে আমাদের ডায়োডের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে হবে।

Diode-characteristics-curve
Diode Characteristics Curve

উপরের ছবিটি ডায়োডের Characteristics Curve অর্থাৎ একটি ডায়োডের দুই প্রান্তে ভোল্টেজ দিলে তার দুই প্রান্তের ভোল্টেজ এবং ডায়োডের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত কারেন্টকে গ্রাফ পেপারে প্লট করলে যে গ্রাফটি পাওয়া যাবে, সেটি।

diode_biasing
ডায়োড বায়াসিং

ডায়োডের Anode প্রান্তে পজেটিভ ভোল্ট এবং Cathode প্রান্তে নেগেটিভ বা গ্রাউন্ড বা এনোড প্রান্ত থেকে কম মানের ভোল্টেজ দিলে ডায়োডের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত কারেন্ট এবং ডায়োডের ভোল্টেজ নিয়ে গ্রাফ আকলে যেটি পাওয়া যাবে, সেটি এই গ্রাফের ডানপাশে দেখানো হয়েছে। এধরনের কানেকশনকে বলা হয় Forward Bias বা সম্মুখী ঝোক।

আবার উল্টোকরে কানেকশন দিলে অর্থাৎ Anode –এ নেগেটিভ এবং Cathode –এ পজেটিভ দিলে ভোল্টেজ এবং কারেন্টের যে গ্রাফ পাওয়া যাবে, তা এই গ্রাফের বাম পাশে দেখানো হয়েছে। এধরনের কানেকশনকে বলে Reverse Bias বা বিমুখী ঝোক।

এখানে উল্লেখ্য: ডায়োডের দুই প্রান্তের ভোল্টেজকে ডায়োড ভোল্টেজ (VD) এবং ডায়োডের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত কারেন্টকে ডায়োড কারেন্ট (ID) বলা হয়।

রিভার্স বায়াস নিয়ে একটু পরে আলোচনা করবো। আপাতত ফরোয়ার্ড বায়াসের দিকে নজর দেয়া যাক। গ্রাফ থেকে দেখা যায় ডায়োডের দুই প্রান্তে ভোল্টেজ দিলেও প্রাথমিক অবস্থায় কারেন্ট শূন্য থাকে। ভোল্টেজ বাড়াতে থাকলে একটা নির্দিষ্ট ভোল্টেজে যেয়ে হটাৎ কারেন্টের প্রবাহ শুরু হয় এবং এক্সপোনেনশিয়ালি বাড়তে থাকে। অর্থাৎ ওই ভোল্টেজের পরে ডায়োডের ভোল্টেজ সামান্য বাড়ালেও কারেন্ট বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। ওই নির্দিষ্ট ভোল্টেজকে বলা হয় Threshold Voltage বা Forward Voltage। Threshold Voltage এর আগ পর্যন্ত ডায়োডটি অফ (OFF) এবং Threshold Voltage এর পরে ডায়োডকে অন (ON) ধরা হয়। এই Threshold Voltage ডায়োডের উপাদানের উপর নির্ভর করে। সিলিকন ডায়োডের ক্ষেত্রে এটি 0.6V থেকে 0.8V বা এর কাছাকাছি থাকে, হিসাবের সুবিধার্থে 0.7 ধরা হয়। জার্মেনিয়াম ডায়োডের ক্ষেত্রে 0.3V এবং শটকি ডায়োডের ক্ষেত্রে 0.15V–0.45V হয়ে থাকে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: Threshold Voltage এর আগেও ডায়োডের মধ্য দিয়ে সামান্য পরিমাণ কারেন্ট প্রবাহিত হয়, যাকে লিকেজ কারেন্ট বলে। এর পরিমাণ খুবই কম বলে এই সময় ডায়োডকে অফ ধরা হয়। গ্রাফ থেকে দেখা যাচ্ছে Threshold Voltage এর আগেও কারেন্ট লাইনটি সরাসরি জিরো লাইন ধরে না যেয়ে সামান্য উপর দিয়ে গেছে, এটিই লিকেজ কারেন্ট।

এবারে Threshold Voltage এর পরের অংশে নজর দেয়া যাক। এখান থেকে দেখা যায় ডায়োড ভোল্টেজ খুব সামান্য বাড়ালেও কারেন্ট বহুগুণ বৃদ্ধি পায়, অর্থাৎ উল্টো করে বললে- ডায়োড কারেন্ট অনেক বাড়ালেও ডায়োড ভোল্টেজ খুব সামান্যই বৃদ্ধি পায়। ডায়োডের এই ধর্মই আমার আজকের আলোচনার মূল বিষয়।

যেহেতু ডায়োড কারেন্ট বাড়ালেও ডায়োড ভোল্টেজ খুব সামান্যই পরিবর্তিত হয়, সেহেতু হিসাবের সুবিধার্থে ডায়োড ভোল্টেজ অপরিবর্তিত অর্থাৎ কারেন্ট বাড়ালেও ভোল্টেজ আর বাড়বে না ধরে নেয়া যাক। আরও ধরা যাক ডায়োড দিয়ে কোনো লিকেজ কারেন্ট প্রবাহিত হচ্ছে না। অর্থাৎ Threshold Voltage বা Forward Voltage এর আগে পর্যন্ত ডায়োড পুরোপুরি অফ এবং Threshold Voltage এর পরে ডায়োড পুরোপুরি অন। এরপরে ডায়োড কারেন্ট যতই বাড়ানো হোক, ডায়োড ভোল্টেজ Threshold Voltage এই স্থির থাকবে।  নিচের চিত্রটি দেখলে বিষয়টি আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবেন।

Diode-characteristics-curve_simplified

এই অবস্থায় ডায়োডকে একটি ব্যাটারী হিসেবে ধরা যায়, যার ভোল্টেজ Threshold Voltage এর সমান। নির্দিষ্ট পরিমাণ ডায়োড কারেন্ট দিলে ব্যাটারীটি অন হবে, অন্যথায় ব্যাটারী অফ থাকবে।

diode_regulator_1
ডায়োড সার্কিট – ১

এবারে মনে করুন 12V এর একটি ব্যাটারিতে একটি রেজিস্টেন্স এবং একটি সিলিকন ডায়োড সিরিজে লাগানো হলো। মডেল হিসেবে বহুল প্রচলিত 1N4007 ব্যবহার করা হলো। যেহেতু এটি একটি সিলিকন ডায়োড, তাই এর Threshold Voltage 0.7V হবে। অর্থাৎ A ও B  প্রান্তে ভোল্টমিটার লাগিয়ে ভোল্টেজ মাপলে 0.7V পাওয়া যাবে।

রেজিস্টেন্স R1 এর মান কমালে রেজিস্টেন্সের মধ্য দিয়ে অর্থাৎ একই সাথে ডায়োডের মধ্য দিয়েও কারেন্ট বাড়বে। কিন্তু আমরা আগেই দেখেছি ডায়োড কারেন্ট বাড়ালেও ডায়োড ভোল্টেজ অপরিবর্তীত থাকে। ফলে Forward bias এর ক্ষেত্রে কারেন্ট যতই বাড়ানো হোক না কেনো (অবশ্যই একটা নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত) A ও B প্রান্তের ভোল্টেজ সবসময় 0.7V ই থাকবে। এ অবস্থায় আমরা যদি অন্য সবকিছু ঠিক রেখে V1 কে 12V থেকে কমিয়ে 10V এ নামিয়ে আনি, তাহলে ডায়োড কারেন্ট কিছুটা কমে যাবে, কিন্তু তারপরও ডায়োডকে অন করার মতো পর্যাপ্ত কারেন্ট সার্কিটে প্রবাহিত হবে। ফলে ডায়োড ভোল্টেজ তখনও 0.7V –এই স্থির থাকবে। আবার ভোল্টেজ যদি বাড়িয়ে 14V করা হয়, তাহলে ডায়োড কারেন্ট বেড়ে যাবে, কিন্তু আমরা আগেই দেখেছি কারেন্ট বাড়লেও ডায়োড ভোল্টেজ অপরিবর্তীত থাকে। ফলে আমাদের সোর্স বা ইনপুট ভোল্টেজ (এক্ষেত্রে V1) বাড়লে বা কমলেও A ও B প্রান্তের ভোল্টেজ সবসময়ই অপরিবর্তীত থাকছে। অর্থাৎ আগের পর্বে আমরা যে সমস্যাগুলো দেখেছিলাম, তার প্রথম সমস্যাটির সমাধান হয়ে গেছে।

  1. ইনপুট ভোল্টেজ পরিবর্তিত হলে আউটপুট ভোল্টেজেও পরিবর্তন আসে

এবারে লোড লাগানোর পালা। নিচের সার্কিটের মতো করে A ও B প্রান্তে লোড লাগালেই লোডের দুইপ্রান্তেও  0.7V থাকবে।

diode_regulator_2
ডায়োড সার্কিট – ২

কিন্তু ভোল্টেজ কতক্ষণ 0.7V থাকবে? যদি লোড চেঞ্জ হয়? আমাদের দ্বিতীয় সমস্যাটি কিন্তু এটিই ছিলো। এই সমস্যার সমাধান করতে গেলে আমাদের R1 এর দিকে নজর দিতে হবে।

1N4007 ডায়োডের ক্ষেত্রে দেখা যায় ডায়োড ভোল্টেজ যখন 0.7V, ডায়োড কারেন্ট তখন প্রায় 50mA। অন্যভাবে বললে ডায়োডের মধ্যদিয়ে 50mA কারেন্ট প্রবাহিত হলে ডায়োডের দুই প্রান্তে 0.7V ড্রপ হবে। সুতরাং ডায়োডকে অন করতে হলে অর্থাৎ ডায়োড ভোল্টেজ 0.7V করতে হলে R1 কে এমনভাবে নির্বাচন করতে হবে, যেনো ডায়োডের মধ্যদিয়ে 50mA কারেন্ট প্রবাহিত হতে পারে।

আবার একটু প্রথম সার্কিটের দিকে নজর দেয়া যাক। আমাদের সোর্স বা ইনপুট ভোল্টেজ 12V এবং ডায়োড ভোল্টেজ 0.7V। তাহলে রেজিস্টেন্সের দুইপ্রান্তে ভোল্টেজ ড্রপ হবে 12V – 0.7V = 11.3V । যেহেতু ডায়োড এবং রেজিস্টেন্স সিরিজে আছে, তাই ডায়োড দিয়ে যে কারেন্ট যাবে, রেজিস্টেন্স দিয়েও সেই একই পরিমাণ কারেন্ট প্রবাহিত হবে এবং আমাদের দরকার 50mA। সুতরাং ওহম’এর সূত্র V = IR প্রয়োগ করলেই রেজিস্টেন্সের মান পাওয়া যাবে।

V = IR
=>  R = V/I
=> R = 11.3V / 50mA
=> R = 226Ω

সুতরাং R অর্থাৎ প্রথম সার্কিটের ক্ষেত্রে R1 এর মান 226Ω হলেই ডায়োডের মধ্যদিয়ে 50mA কারেন্ট প্রবাহিত হবে। ফলে ডায়োডে 0.7V ড্রপ হবে।
কিন্তু যদি দ্বিতীয় সার্কিটের কথা ধরি, তাহলে? ধরা যাক, দ্বিতীয় সার্কিটে লোড 20Ω। আবারও ওহম’এর সূত্র থেকে পাই-

V = IR
=> I = V/R
=> I = 0.7V / 20Ω
=> I = 35mA

কিন্তু আমরা R1 এমনভাবে নির্বাচন করেছিলাম, যাতে সার্কিট দিয়ে 50mA কারেন্ট প্রবাহিত হতে পারে। সেখান থেকে লোডে চলে যাচ্ছে 35mA, বাকি থাকে 15mA। ফলে ডায়োড অন হবার জন্য পর্যাপ্ত কারেন্ট পাবে না। ফলাফল, লোড ভোল্টেজ কমে যাবে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: বাস্তবে ডায়োডকে অন করার জন্য 10mA কারেন্টও যথেষ্ট, সেক্ষেত্রে ভোল্টেজ 0.7V এর থেকে কিছুটা কমে যাবে। কিন্তু আমার আলোচনার শুরুতেই আমি ধরে নিয়েছি 0.7V এর আগে ডায়োড পুরোপুরি অফ, এবং 0.7V এর পরে ডায়োড পুরোপুরি অন।

এক্ষেত্রে R1 এর মান এমনভাবে নির্বাচন করতে হবে, যাতে লোডে কারেন্ট দেবার পরও ডায়োডকে ঠিকভাবে বায়াস করার জন্য পর্যাপ্ত কারেন্ট অবশিষ্ট থাকে। আমাদের এই উদাহরণের ক্ষেত্রে লোড কারেন্ট 35mA এবং ডায়োড কারেন্ট 50mA। সুতরাং মোট কারেন্ট 35mA + 50mA = 85mA। সুতরাং R1 এমনভাবে নির্বাচন করতে হবে, যাতে সোর্স থেকে R1 এর মধ্য দিয়ে 85mA কারেন্ট প্রবাহিত হতে পারে। আবারও হিসাব করলে R1 এর মান পাওয়া যায় 132Ω। তাহলে R1 = 132Ω  লোডে প্রয়োজনীয় কারেন্ট দেবার পরও ডায়োডকে সঠিকভাবে বায়াস করার জন্য পর্যাপ্ত কারেন্ট থাকবে। ফলে ডায়োড ভোল্টেজ অর্থাৎ লোড ভোল্টেজও 0.7V এই স্থির থাকবে।

কিন্তু যদি লোড কমানো হয়, অর্থাৎ লোড রেজিস্টেন্স বাড়ানো হয়, তাহলে? ধরা যাক লোড রেজিস্টেন্স 30Ω। তাহলে লোড কারেন্ট হবে 0.7V / 30Ω = 23mA। এক্ষেত্রে বাকি 85mA – 23mA = 62mA কারেন্ট ডায়োডের মধ্যদিয়েই প্রবাহিত হবে। কিন্তু সেক্ষেত্রেও ডায়োড ভোল্টেজ 0.7V ই থাকবে, কেননা আমরা আগেই দেখেছি ডায়োড কারেন্ট বাড়লেও ভোল্টেজ অপরিবর্তনীয় থাকে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: Dioad Current বাড়ালে যদি Voltage সামান্যই বাড়ে, তাহলে Current কমালেও Voltage সামান্যই কমবে। আর এক্ষেত্রে কারেন্ট অল্পপরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে, ফলে ভোল্টেজও সামান্যই বাড়বে, তারউপর আমরা হিসাবের সুবিধার্থে ধরেই নিয়েছি Threshold Voltage এর পরে কারেন্ট বাড়ালেও ডায়োড ভোল্টেজ আর বাড়বে না। ফলে ভোল্টেজের এই সামান্য পরিবর্তনকে আমরা উপেক্ষা করতে পারি।

একইভাবে লোড স্থির রেখে ইনপুট ভোল্টেজ বাড়ালেও কারেন্ট বৃদ্ধি পাবে। এই অতিরিক্ত কারেন্ট ডায়োডের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়ে লোড ভোল্টেজ সবসময় স্থির রাখবে। কিন্তু লোড যদি বাড়ানো হয়, অর্থাৎ লোড রেজিস্টেন্স কমানো হয়? কিংবা ইনপুট ভোল্টেজ যদি কমে যায়, তাহলে?
ধরা যাক লোড 10Ω, তাহলে লোড কারেন্ট হবে 70mA। আমাদের সার্কিট যেহেতু 85mA দেবার মতো করে ডিজাইন করা হয়েছিলো, তাই লোডে 70mA কারেন্ট দিলে ডায়োডের জন্য পর্যাপ্ত কারেন্ট থাকবে না, ফলে ডায়োড ভোল্টেজ বা লোড ভোল্টেজ কমে যাবে।
আবার যদি লোড ঠিক রেখে (20Ω) ইনপুট ভোল্টেজ কমিয়ে 10V এ আনা হয়, তাহলে রেজিস্টেন্সের ড্রপ 10V – 0.7V = 9.3V। রেজিস্টেন্স যেহেতু 132Ω, সেহেতু রেজিস্টেন্সের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত কারেন্ট হবে I = 9.3V / 132Ω = 70.4mA। ফলে লোড দিয়ে 35mA কারেন্ট প্রবাহিত হলে বাকি 35.4mA কারেন্ট ডায়োড দিয়ে প্রবাহিত হবে, যেটিও ডায়োডকে 0.7V এ সঠিকভাবে বায়াস করতে যথেষ্ট নয়। ফলে এক্ষেত্রেও ডায়োড ভোল্টেজ বা লোড ভোল্টেজ কমে যাবে।

এজন্য R1 এর মান নির্বাচনের সময় লোড এবং ইনপুট দুদিকেই খেয়াল রাখতে হবে। ধরা যাক, আমাদের ইনপুট সোর্স একটি 12V Lead Acid ব্যাটারী। সেক্ষেত্রে ব্যাটারীর লো ভোল্টেজ 10.5V পর্যন্ত ধরা যেতে পারে। এর কম হলে ব্যাটারী ফুল ডিসচার্জড বলে ধরা হয়। ফলে ব্যাটারী 10.5V এ নামার পূর্বেই ব্যাটারী চার্জ করা হয়। সুতরাং আমাদের ইনপুট ভোল্টেজের সর্বনিম্ন সীমা 10.5V। আরও ধরা যাক, আমরা আউটপুটে যেসব লোড লাগাবো, তাতে সর্বচ্চো 100mA কারেন্ট লাগতে পারে। তাহলে

Vin_min = 10.5V
ILoad_Max = 100mA
ID = 50mA
Imax = ILoad_Max + ID = 100mA + 50mA = 150mA
এই অবস্থায় R1 = (10.5 – 0.7) / 150mA = 62Ω

ডায়োড সার্কিট - 3
ডায়োড সার্কিট – 3

সুতরাং আমরা R1 হিসেবে যদি 62Ω লাগাই, এবং ইনপুট হিসেবে 12V ব্যাটারী লাগাই, তাহলে 0-100mA পর্যন্ত যে কোনো ধরণের লোডই এই সার্কিটে লাগাতে পারবো। এক্ষেত্রে ইনপুট অর্থাৎ ব্যাটারী ভোল্টেজ কমলে বা বাড়লে, কিংবা লোড কমালে বাড়ালেও (সর্বচ্চো 100mA) লোড ভোল্টেজের কোনো পরিবর্তন হবে না। ফলে আগের পর্বে দেখানো দুইটি সমস্যারই সমাধান হয়ে গেলো।

  1. ইনপুট ভোল্টেজ পরিবর্তিত হলে আউটপুট ভোল্টেজেও পরিবর্তন আসে
  2. সিরিজ রেজিস্টেন্স বা লোডে সামান্য পরিবর্তন হলেও আউটপুট ভোল্টেজ পরিবর্তিত হয়
ডায়োড সার্কিট - ৪
ডায়োড সার্কিট – ৪

এবারে আসুন নতুন একটি সমস্যা দেখা যাক। আমরা সচারচর যেসব লোড ব্যবহার করি, সেগুলো এর থেকে অনেক বেশি ভোল্টের হয়ে থাকে। যেমন: ছোট একটি LED 1.5V বা 2V বা তদুর্দ্ধো, ছোটো একটি মটর 3V বা আরও বেশি। কিন্তু আমাদের এই সার্কিটের আউটপুট ভোল্টেজ মাত্র 0.7V।
এ সমস্যা সমাধানের একটি উপায় হলো অনেকগুলো ডায়োড সিরিজে লাগানো। যেমন দুইটি ডায়োড সিরিজে লাগলে আউটপুট হবে 1.4V, তিনটি লাগালে 2.1V, দশটি লাগলে 7V। কিন্তু এ পদ্ধতি মোটেও বাস্তবসম্মত নয়। এর জন্য এখন আমরা নতুন একধরণের ডায়োড ব্যবহার করবো, যার নাম জেনার ডায়োড (Zener Diode)

জেনার ডায়োড
জেনার ডায়োড

জেনার ডায়োড নিয়ে আলোচনা করার আগে ডায়োডের রিভার্স বায়াসের দিকে একটু নজর দেয়া যাক, যা শুরুতেই উল্লেখ করেছিলাম।

Diode Characteristics Curve
Diode Characteristics Curve

কোনো ডায়োডকে সার্কিটে রিভার্স বায়াসে কানেক্ট করলে ডায়োড কারেন্ট ও ডায়োড ভোল্টেজের যে গ্রাফ পাওয়া যায়, তা এই চিত্রের বাম দিকে দেখানো হয়েছে। গ্রাফ থেকে দেখা যায় রিভার্স বায়াসে ডায়োড ভোল্টেজ যতই বাড়ানো হোক, শুরুতে লিকেজ কারেন্ট ছাড়া আর কোনো কারেন্ট প্রবাহিত হয় না। কিন্তু ভোল্টেজ আরও বাড়াতে থাকলে একটা সময় যেয়ে হটাৎ করে প্রচুর পরিমানে কারেন্ট প্রবাহিত হতে থাকে। এই ভোল্টেজকে বলা হয় ডায়োডের ব্রেকডাউন ভোল্টেজ। এক্ষেত্রেও ফরোয়ার্ড বায়াসের মতোই ভোল্টেজের সামান্য পরিবর্তনেই কারেন্ট বহুগুণ বৃদ্ধি পায়, এমনকি ফরোয়ার্ড বায়াস থেকেও অনেক দ্রুত পরিবর্তিত হয়। অর্থাৎ উল্টো করে বললে ব্রেকডাউন রিজিয়নে কারেন্ট অনেক বেশি বাড়ালেও ভোল্টেজ অতি সামান্যই পরিবর্তিত হয়। সাধারণ সিলিকন ডায়োডের ক্ষেত্রে ব্রেকডাউন ভোল্টেজ প্রায় 200V বা তারও বেশি হয়ে থাকে। এবং কোনোভাবে ব্রেকডাউনে চলে গেলে ডায়োডটি নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু এই ব্রেকডাউন রিজিওনকে কাজে লাগিয়েই জেনার ডায়োড তৈরি করা হয়। জেনার ডায়োডের বৈশিষ্ট এমন যে এটি ফরোয়ার্ড বায়াস এবং রিভার্স বায়াস, দুভাবেই ব্যবহার করা যায়। ফরোয়ার্ড বায়াসে লাগালে সাধারণ ডায়োডের মতোই কাজ করে, অর্থাৎ উপাদানভেদে ডায়োডের দুইপ্রান্তে 0.3V-0.7V ড্রপ হয়। আবার রিভার্স বায়াসে লাগালে ব্রেকডাউন রিজিয়নেও কাজ করে, সাধারণ ডায়োডের মতো নষ্ট হয়ে যায় না। তাছাড়া জেনার ডায়োডের ব্রেকডাউন ভোল্টেজ কয়েক ভোল্ট থেকে শুরু করে কয়েকশ’ ভোল্টেজ পর্যন্ত হতে পারে। এই ভোল্টেজকেই জেনার ভোল্টেজ বলা হয়। চলুন, জেনার ডায়োডের Characteristics Curve টি দেখে নেয়া যাক

Zener Diode Characteristics Curve
Zener Diode Characteristics Curve

গ্রাফ থেকে দেখা যায় ডান পাশে ফরোয়ার্ড বায়াস রিজিয়ন সাধারণ ডায়োডের মতোই। কিন্তু বামপাশে নতুন কয়েকটি নাম বা প্রতীক দেখা যাচ্ছে, এগুলো সম্পর্কে জানা জরুরী বিধায় এদের সাথে একএক করে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি।

VZ = Zener Voltage। এটিই জেনার ডায়োডের ব্রেকডাউন ভোল্টেজ।

IZ(min) = Minimum Zener Current। ব্রেকডাউনে যেতে প্রয়োজনীয় সর্বনিম্ন কারেন্ট। জেনার ডায়োডকে ভোল্টেজ রেগুলেটর হিসেবে ব্যবহার করতে হলে নূন্যতম এই পরিমাণ কারেন্ট জেনার ডায়োড দিয়ে পরিবাহিত হতে হবে।

IZ(max) = Maximum Zener Current। জেনার ডায়োড দিয়ে সর্বচ্চো কত পরিমাণ কারেন্ট নিরাপদে প্রবাহিত হতে পারবে, তার মান। এর চেয়ে বেশি কারেন্ট গেলে জেনারটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

(সাধারণ ডায়োডের ক্ষেত্রেও এধরণের কিছু লিমিট আছে, কিন্তু সাধারণ ডায়োডকে ভোল্টেজ রেগুলেট করার কাজে খুব বেশি ব্যবহার করা হয় না বলে সে সম্পর্কে এখানে আলোচনা করিনি।)

এ তিনটি তথ্যই ডাটাশিটে উল্লেখ করা থাকে। তবে কোনো কারণে যদি ডাটাশিট না পাওয়া যায়, তাহলেও খুব সহজেই মোটামুটি একটা ধারণা পাওয়া যায়। যেমন: 4.7V, 1W জেনার ডায়োডের একটি মডেল হলো 1N4732A। এখানে VZ = 4.7V, 1W হলো ডায়োডটির সর্বচ্চো পাওয়ার রেটিং PZ(max), যা ডায়োডটি সহ্য করতে পারবে। এ দুইটি তথ্য আপনি ডায়োড কেনার সময় দোকান থেকেই পাবেন। জেনার ভোল্টেজ হলো সেই ভোল্টেজ, যেটি আপনি কিনতে যাচ্ছেন, ডায়োডের গায়েও জেনার ভোল্টেজ লেখা থাকে। আর পাওয়ারটা ডায়োডের সাইজ দেখলেই বোঝা যায়। পাওয়ার যত বাড়ে, ডায়োডের সাইজও তত বড় হয়। এখন P=VI সূত্র প্রয়োগ করলে

PZ(max) = VIZ(max) ,
সুতরাং IZ(max) = PZ(max) / VZ = 1W/4.7V = 212mA

ডাটাশিটে খুজলে দেখা যাবে IZ(max) এর মান 193mA, যা আমাদের হিসাব করা মানের কাছাকাছি। ডায়োড তৈরি করার সময়ই IZ(min) যথাসম্ভব কম রাখা হয়, সাধারণত 1mA বা তার কম হয়, নিরাপত্তার খাতিরে 1mA ধরে নিতে পারেন। ফলে কোনকারণে ডাটাশিট না পেলে এভাবে হিসাব করেও মোটামুটি একটা ধারণা পাওয়া যাবে।

সাধারণ ডায়োডের মতো জেনার ডায়োডের ক্ষেত্রেও হিসাবের সুবিধার্থে জেনার ভোল্টেজের পর কারেন্ট বাড়ালেও ভোল্টেজ আর বাড়েনা বলে ধরে নেয়া যায়। সেক্ষেত্রে Characteristics Curve টি দেখতে নিচের মতো হয়।

Zener Diode Simplified Characteristics Curve
Zener Diode Simplified Characteristics Curve

এক্ষেত্রেও আগের মতই জেনার ডায়োডকেও একটি ব্যাটারীর সাথে তুলনা করা যায়, যার ভোল্টেজ জেনার ভোল্টেজ VZ এর সমান। নির্দিষ্ট পরিমাণ কারেন্ট  IZ(min)  গেলে ব্যাটারীটি অন হয়, তারপর কারেন্ট যতই বাড়ানো হোক, ভোল্টেজ আর বাড়ে না। আবার কারেন্ট কমে গেলে ব্যাটারী অফ হয়ে যায়।

এবারে সার্কিট ডায়াগ্রামটা একটু দেখে নেয়া যাক-

জেনার রেগুলেটর সার্কিট - ১
জেনার রেগুলেটর সার্কিট – ১

খেয়াল করে দেখুন, সার্কিটটি আগের মতোই, শুধু ডায়োডটি উল্টো করে লাগানো, কারণ আমরা ডায়োডের ফরোয়ার্ড বায়াসকে ব্যাবহার না করে রিভার্স বায়াসে ব্রেকডাউনে নিয়ে ব্যবহার করবো। এবারে আসুন, সার্কিটের ডিজাইন নিয়ে আলোচনা করা যাক।

ধরে নিই আমাদের জেনার ডায়োডটি একটি 4V জেনার, অর্থাৎ এর ব্রেকডাউন ভোল্টেজ VZ =4V, IZ(min) = 1mA, IZ(max) = 200mA। তাহলে R1 এর মান এমনভাবে নির্বাচন করতে হবে, যাতেকরে জেনারের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত কারেন্টের পরিমাণ 1mA এবং 200mA এর ভেতর থাকে। 1mA এর কম হলে জেনার অন হবে না। আবার 200mA এর বেশি হলে জেনারটি পুড়ে যাবে। জেনার কারেন্ট এই সীমার মধ্যে যে কোনো যায়গায় থাকলেই A ও B প্রান্তের মধ্যে ভোল্টেজ পার্থক্য 4V হবে।

এবারে R1 এর মান হিসাব করতে হবে। শুরুতে ধরে নিই কোনো লোড লাগানো নেই। তাহলে সার্কিটের সমস্ত কারেন্টই জেনার ডায়োড দিয়ে প্রবাহিত হবে। ধরে নিই এ অবস্থায় আমরা জেনার দিয়ে 10mA কারেন্ট প্রবাহিত করাবো। সেক্ষেত্রে আগের মতোই হিসাব করতে হবে। সোর্স ভোল্টেজ 12V, জেনার ভোল্টেজ 4V, তাহলে R1 রেজিস্টেন্সের ড্রপ 12V-4V = 8V, এবং কারেন্ট 10mA, সুতরাং R1 = 8V / 10mA = 800Ω। অর্থাৎ R1 এর মান যদি 800Ω ধরি, তাহলে জেনার দিয়ে 10mA কারেন্ট প্রবাহিত হবে। আমাদের এই জেনারটির মিনিমাম জেনার কারেন্ট যেহেতু 1mA, সেহেতু 10mA কারেন্টে জেনারটি ভালোভাবেই অন হবে। ফলে A ও B বিন্দুর ভোল্টেজ পার্থক্য 4V হবে।

এবারে লোড লাগানোর পালা। R1 কে 800Ω -এ রেখে যদি আমরা 5mA এর একটি লোড লাগাই, তাহলে লোডে 5mA নেবার পরেও জেনারের জন্য আরও 5mA কারেন্ট অবশিষ্ট থাকবে, যা জেনারের জন্য যথেষ্ট। কিন্তু যদি 10mA এর বেশি লোড লাগাই, তাহলে? R1 কে এমনভাবে নির্বাচন করা হয়েছিলো, যাতেকরে তার মধ্যদিয়ে 10mA কারেন্ট প্রবাহিত হতে পারে। কিন্তু লোডের 10mA থেকেও বেশি কারেন্ট দরকার, ফলে জেনারের জন্য আর কোনো কারেন্টই অবশিষ্ট থাকবে না। সেক্ষেত্রে জেনারটি অফ হয়ে নিচের মতো অবস্থার সৃষ্টি হবে-

জেনার রেগুলেটর সার্কিট - ২
জেনার রেগুলেটর সার্কিট – ২

এক্ষেত্রে লোড এবং R1 সিরিজে থাকায় তাদের মধ্যদিয়ে যতটুকু কারেন্ট প্রবাহিত হবার কথা তাই প্রবাহিত হবে, এবং সেই কারেন্টের জন্য লোডে যতটুকু ভোল্টেজ ড্রপ হবার কথা ছিলো, তাই ড্রপ হবে (অবশ্যই 4V থেকে কম)। তাহলে আগের মতই আমাদের R1 এর মান কমাতে হবে।

ধরা যাক, এই সার্কিটে আমরা যেসমস্ত লোড ব্যবহার করবো, সেগুলো সর্বোচ্চ 100mA কারেন্ট টানতে পারে। অর্থাৎ 1mA থেকে 100mA পর্যন্ত বিভিন্ন মানের লোড আমরা ব্যবহার করবো। সেক্ষেত্রে লোড কারেন্ট সর্বচ্চো 100mA হবে। আরও ধরা যাক, আমাদের সোর্স একটি 12V ব্যাটারী যার প্রাথমিক ভোল্টেজ 12V, সর্বোচ্চ ভোল্টেজ 14.4V, এবং সর্বনিম্ন ভোল্টেজ 10.5V হতে পারে। সেক্ষেত্রে যখন সোর্স ভোল্টেজ সর্বনিম্ন (10.5V) এবং লোড কারেন্ট সর্বোচ্চ (100mA), সেই অবস্থায়ই জেনার সবথেকে কম কারেন্ট পাবে। ধরা যাক এ অবস্থায় আমরা জেনার দিয়ে 10mA কারেন্ট প্রবাহিত করতে চাই, তাহলে জেনারটি কাজ করবে। তাহলে মোট কারেন্ট

I = IZ + ILoad = 10mA + 100mA = 110mA

জেনার রেগুলেটর সার্কিট - ৩
জেনার রেগুলেটর সার্কিট – ৩

জেনার ভোল্টেজ 4V, সোর্স ভোল্টেজ 10.5V, মোট কারেন্ট 110mA, তাহলে V = IR সূত্র প্রয়োগ করলে R1 এর মান পাওয়া যায় 59Ω। এ অবস্থায় জেনারটি ভালোভাবেই কাজ করবে, ফলে জেনার ভোল্টেজ অর্থাৎ লোড ভোল্টেজ 4V এ স্থির থাকবে।
এবার ধরা যাক লোড কারেন্ট কমিয়ে 1mA করা হলো। তাহলে বাকি 109mA কারেন্টই জেনারের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হবে। কিন্তু আমাদের জেনারটির সর্বোচ্চ জেনার কারেন্ট 200mA হতে পারবে। ফলে জেনারটির কোনো সমস্যা হবে না। আবার ধরা যাক, সোর্স ভোল্টেজ বেড়ে 14.4V হলো। সেক্ষেত্রে-

R1 রেজিস্টেন্সের ড্রপ 14.4V – 4V = 10.4V,
সুতরাং সোর্স কারেন্ট I = 10.4V / 59Ω = 176mA

লোড 1mA কারেন্ট নিলে বাকি থাকে 175mA যা জেনারের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হবে। যেহেতু এটিও আমাদের সর্বোচ্চ জেনার কারেন্ট সীমার ভেতরেই আছে, তাই এক্ষেত্রেও কোন সমস্যা হবে না। এক্ষেত্রেও জেনার ভোল্টেজ 4V এই স্থির থাকবে।

জেনার রেগুলেটর সার্কিট - ৪
জেনার রেগুলেটর সার্কিট – ৪

সুতরাং দেখা গেলো এই সার্কিটের মাধ্যমে আমাদের এর আগে আলোচনা করা সকল সমস্যারই সমাধান করা গেছে। এবারে আসুন, নতুন কিছু সমস্যা দেখা যাক।

সমস্যা ১:

শুরুতেই আমরা  ধরে নিয়েছিলাম সাধারণ ডায়োড Threshold Voltage এর পরে এবং জেনার ডায়োড ব্রেকডাউন ভোল্টেজের পরে কনস্ট্যান্ট ভোল্টেজ সোর্স বা ব্যাটারীর মতো আচরণ করে, অর্থাৎ কারেন্ট যতই বাড়ানো হোক, ভোল্টেজ আর বাড়বে না। কিন্তু বাস্তবে ব্যাপারটা একটু আলাদা।

Characteristics Curve - Diode and Zener Diode
Characteristics Curve – Diode and Zener Diode

গ্রাফ থেকে দেখুন (সাধারণ ডায়োডের ক্ষেত্রে Y অক্ষের ডান পাশে এবং জেনার ডায়োডের ক্ষেত্রে বাম পাশে) ডায়োড কারেন্ট বা জেনার কারেন্ট বাড়ালে কারেন্ট লাইনটি লাল দাগ বরাবর স্থির থাকে না, বরং দাগ থেকে দুরে সরে যায়, অর্থাৎ ভোল্টেজ বেড়ে যায়। আবার কারেন্ট কমালে লাল দাগের কাছে সরে আসে, অর্থাৎ ভোল্টেজ কমে যায়। কারেন্টের সামান্য পরিবর্তন হলে ভোল্টেজও খুব কম পরিমাণে পরিবর্তিত হয় যা হয়তো ধরার মধ্যে পড়ে না। কিন্তু কারেন্টের পরিবর্তন বেশি হলে ভোল্টেজেও বেশ পরিবর্তন আসে।

যেমন ডাটাশিট অনুযায়ী 1N4732A এর জেনার ভোল্টেজ 53mA কারেন্টে 4.7V, এই ডায়োডকে কোনো সার্কিটে লাগিয়ে জেনার কারেন্ট 5mA দিলে জেনার ভোল্টেজ 4.6V এ নেমে যায়। আবার জেনার কারেন্ট 150mA দিলে জেনার ভোল্টেজ বেড়ে 4.73V হয়। কারেন্ট আরও বাড়ালে ভোল্টেজ আরও বেড়ে যাবে। এটি এই সার্কিটের একটি সমস্যা। আমরা লোড হিসেবে সর্বোচ্চ 100mA লোড ব্যবহার করেছিলাম, কিন্তু লোড যদি আরও বেশি হয়, তাহলে? এই জেনারটি সেক্ষেত্রে কাজ করবে না। আরও বেশি পাওয়ারের জেনার লাগাতে হবে। ধরা যাক আমরা 1A এর কোনো লোড ব্যবহার করবো। সেক্ষেত্রে সার্কিটে যখন কোনো লোড সংযুক্ত থাকবে না, তখন পুরো 1A কারেন্টই জেনার দিয়ে প্রবাহিত হবে। সেক্ষেত্রে জেনারকে কমপক্ষে 4W জেনার হতে হবে (যেহেতু জেনারটি 4V এবং জেনার কারেন্ট 1A), তাহলে হয়তো জেনারটি পুড়বে না। কিন্তু আমরা আগেই দেখেছি কারেন্টের পরিবর্তন বেশি হলে ভোল্টেজের অনেক বেশি পরিবর্তন হবে। আগের উদাহরণে কারেন্ট মিলিএম্পিয়ারের স্কেলে পরিবর্তীত হওয়ায় ভোল্টেজের পরিবর্তন চোখে পড়েনি। কিন্তু এক্ষেত্রে কারেন্টের পরিবর্তন অনেকগুণ বেশি (প্রায় 1A) ফলে এবারে কিন্তু ভোল্টেজ আর স্থির থাকবে না। যেমন 1N5337B একটি 4.7V, 5W জেনার ডায়োড। কিন্তু মাত্র 500mA জেনার কারেন্টেই জেনার ভোল্টেজ প্রায় 7V এর উপরে উঠে যায়, যা সার্কিটের জন্য খুবই ভয়াবহ।

সমস্যা ২:

যে কোনো সার্কিট ডিজাইন করার সময় সার্কিটের এফিসিয়েন্সি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এই সার্কিটে লোডের জন্য প্রয়োজনীয় ভোল্টেজ রেখে সোর্স ভোল্টেজের বাকি অংশ সিরিজ রেজিস্টেন্স R1 –এ ড্রপ হয়। 12V সোর্স এবং 4V জেনারের জন্য রেজিস্টেন্সে ড্রপ 8V, এক্ষেত্রে সোর্স কারেন্ট যদি 100mA হয়, তাহলে রেজিস্টেন্সে 8V X 100mA = 800mW পাওয়ার লস হয়, ফলে R1 কে কমপক্ষে 1W রেজিস্টেন্স হতে হবে। কিন্তু যদি সোর্স কারেন্ট 1A হয়, তাহলে রেজিস্টেন্সে 8W পাওয়ার লস হয়। সেক্ষেত্রে রেজিস্টেন্সের আকার যেমন বড় হবে, তেমনি সার্কিটের এফিসিয়েন্সিও অনেক কমে যাবে।

আজকের আলোচনা শেষ করার আগে আসুন একনজরে ডায়োড রেগুলেটরের সুবিধা অসুবিধা দেখে নেয়া যাক:

সুবিধা

  1. জটিলতা কম, সহজে তৈরি করা যায়
  2. খরচ সাশ্রয়ী
  3. ইনপুট থেকে কম মানের যে কোনো ভোল্টেজই তৈরি করা যায়
  4. স্বল্পপরিসরে মোটামুটি স্থির আউটপুট ভোল্টেজ পাওয়া যায়।

অসুবিধা:

  1. বেশিমানের লোডের ক্ষেত্রে আউটপুট স্থির নয়।
  2. ইনপুট ভোল্টেজের থেকে বেশি ভোল্টেজ পাওয়া যায় না
  3. ইনভার্ট বা উল্টো ভোল্টেজ যেমন 12V ইনপুট থেকে -12V আউটপুট পাওয়া যায় না
  4. এফিসিয়েন্সী বা কর্মদক্ষতা কম

বাস্তবক্ষেত্রে জেনার রেগুলেটর 100mA বা 150mA এর বেশি লোডের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় না। তবে ট্রানজিস্টার বা মসফেট বায়াসিং কিংবা অপএম্পের বায়াসিংয়ের ক্ষেত্রে জেনার রেগুলেটর বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়। আর এ পদ্ধতি ব্যবহার করেই বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন লিনিয়ার রেগুলেটর। আপনাদের বহুল পরিচিত LM317, LM7805, LM7806 ইত্যাদি আইসি এই লিনিয়ার রেগুলেটরের উদাহরণ।

তবে আজ আর নয়, সময় স্বল্পতা এবং ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কারণে এই পর্ব দিতে একটু দেরি হয়ে গেলো। একই কারণে ইচ্ছা থাকা স্বত্তেও এই পর্বে অনেক কিছু বাদ দিতে হয়েছে। অনেক ভূল ত্রুটিও থাকতে পারে। কেউ যদি কোনো ভূল-ত্রুটি খুজে পান, বা কারও যদি কোনো প্রশ্ন থাকে, নিচের কমেন্টস বক্স ব্যবহার করুন। যথাসম্ভব উত্তর দেবার চেষ্টা করবো। আর পরের পর্বে লিনিয়ার রেগুলেটর নিয়ে বিস্তারিত লেখার চেষ্টা করবো। ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের সাথেই থাকুন। ঘুরে আসুন আমাদের ফেসবুক পেজ থেকে, আশাকরি অনেক মজার মজার তথ্য জানতে পারবেন।
ধন্যবাদ 🙂

বিশেষ কৃতজ্ঞতা: Lutfur Rahman Babul

 

 

 

6 মন্তব্য

  1. একটি ডিসি টেবিল ফ্যান এবং একটি ডিসি লাইট জালানোর জন্য , কি কি লাগবে , দয়া করে জানাবেন কি ?
    বা বানিজ্যিক ভাবে উৎপাদনে কত খরচ পরতে পারে ?
    জানালে উপকৃত হব ।
    ধন্যবাদ ।

    • ১২ ভোল্ট ব্যাটারী, চার্জিং সার্কিট, চার্জিং ট্রান্সফরমার। বানিজ্যিক উৎপাদন সম্পর্কে জানা নেই, দুঃখিত

  2. অনেক ধন্যবাদ। খুবই মজার বিষয়, অনেক গুরুত্বপূর্ণ টপিকস ছিল এটি। আমরা যারা ইলেকট্রনিক্স বিভিন্ন সার্কিট নিয়ে কাজ করতে চাই তাদের জন্য অত্যন্ত জরুরী বিষয় হল ইলেকট্রনিক্স এর প্রত্যেকটি ডিভাইস & ইকুইপমেন্ট এর কাজ, কেন ব্যবহার করব,সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে জানা।সুতরাং যারা এই গ্রুপে বিভিন্ন সার্কিট নিয়ে কাজ করছেন তাদের কাছ থেকে ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস & ইকুইপমেন্ট এর ধারাবাহিক লেকচার আসা করছি। (আমাদের ইলেকট্রনিক্স গ্রুপের এডমিনদের অনেক অনেক ধন্যবাদ।)

উত্তর প্রদান

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন