রীলে- কিভাবে কাজ করে ও এর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

রীলে (মতান্তরে রিলে, ইংরেজী শব্দ – Relay ) যদিও ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্র বিশেষ, তবুও এর গুরুত্ব ইলেকট্রনিক্স এ কম নয়। ধরি, আমি একটা ফ্লিপফ্লপ তৈরি করেছি যা দিয়ে এলইডি জ্বলছে-নিভছে। এখন আমি যদি চাই যে এই ফ্লিপফ্লপ সার্কিটটি দ্বারা বড় কোনো বাতি স্বয়ংক্রিয় ভাবে জ্বালাবো আর নেভাবো তখন আমাকে এমন কোনো যন্ত্র/কম্পোনেন্টের সাহায্য নিতে হবে যা ঐ ছোট সার্কিটে সংযুক্ত করে এই বেশি শক্তির বাতি কে অন-অফ করতে পারি।

এটি বেশ কয়েক ভাবেই সম্ভব, কিন্তু বহুল প্রচলিত ও জনপ্রিয় পদ্ধতি হচ্ছে রীলে ব্যবহার। এটি ব্যবহার করলে আমি নিম্ন ভোল্টেজের ইলেকট্রনিক সার্কিট দ্বারাই উচ্চ ভোল্টেজে সংযুক্ত কোনো বাতি, ফ্যান কিংবা ডিভাইস চালাতে সক্ষম হবো। এই লেখাটি নবীন হবিস্ট ও আগ্রহী পাঠকদের উতসর্গ করছি যারা বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ইলেকট্রনিক্স নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁদের উপকার হলে আমার পরিশ্রম স্বার্থক।

এই ধারাবাহিক লেখা পড়ে যা শিখতে পারবোঃ

লেখাটি ধারাবাহিক করেছি মূলত লেখার আয়তন কমানোর জন্য। এত দীর্ঘ লেখা পড়তে অনেকেই খুব বিরক্ত বোধ করেন বলে জানিয়েছেন। লেখাটিতে যেসমস্ত বিষয় অন্তর্ভূক্ত থাকছে-

  • রীলে কি
  • এটি কত প্রকার
  • দেখতে কেমন
  • লেখা গুলোর কোনটার মানে কি
  • আমার এই রীলে টি কতো ভোল্টের
  • এতে ব্যবহৃত পিন সমূহ
  • বুঝবো কীভাবে আমার রীলে কী ধরণের
  • কতো ভোল্টের তা বোঝার উপায়
  • একটি রীলে’কে খুললে কেমন দেখায়
  • কিছু সাধারণ প্রশ্ন
  • ব্যাসিক সার্কিট
  • অন্যান্য সার্কিটের সাথে সংযুক্ত করার জন্য
  • রীলে কোথায় ব্যবহার করা যায় না

[টিপসঃ ফ্লিপফ্লপ, এলইডি, ডায়োড ও এদের প্রতীক চিহ্ন সম্পর্কে জানতে এই লিংক গুলো ঘুরে আসতে পারেন- ফ্লিপফ্লপ (শামিম ভাই); এলইডি (দুরা ভাই), ডায়োড-ট্রানজিস্টর (সৈয়দ রাইয়ান), প্রতীক চিহ্ন (সৈয়দ রাইয়ান)]

আমরা এই পাঠে একটি রিলে কে নিয়ে অনুসন্ধান করবো যতদূর সম্ভব। আমরা গোয়েন্দা হয়ে খুঁজবো এতে লেখা বিভিন্ন মাণ সম্পর্কে। কী বুঝায় সেগুলো দিয়ে। ডাক্তার হয়ে রিলের ওপেন হার্ট সার্জারী করবো এর ভেতরে কী আছে তা দেখতে।

আর কিছু সাধারণ প্রশ্ন যেমনঃ একটি রিলে কে তার নির্দিষ্ঠ ভোল্টের চেয়ে বেশি ভোল্টে চালানো সম্ভব কিনা, কিংবা কম ভোল্টে চালানো সম্ভব কিনা তারপর একটি রীলে সর্বোচ্চ কতটুকু সহ্যশক্তি ধারণ করতে পারে ইত্যাদি বিষয়কে আমরা গবেষক হয়ে তত্ত্ব-তালাশ করবো। তাহলে পাঠক চলুন, দেরি না করে শুরু করি।

রীলে ও স্ক্রু-ড্রাইভার

রীলে কিঃ

এটি এক প্রকার ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক বা তড়িৎ চুম্বকীয় যন্ত্র বিশেষ। সাধারণ ভাবে যদি বুঝতে চাই তা হলে একে এমন ভাবে চিন্তা করা যেতে পারে- ছোট একটা সুইচ দিয়ে যখন আমরা একটা বাতি কে জ্বালাই তখন তার জন্য আমাদের সুইচে হাত দিয়ে তাকে অফ বা অন করতে হয়। অর্থাৎ কোনো বাহ্যিক একটা শক্তি লাগে সুইচ কে অন-অফ করতে। ঠিক তেমনি ভাবেই, কোনো রীলে কেও অন বা অফ করতে এমনি বাহ্যিক শক্তি লাগে, তবে এ ক্ষেত্রে শক্তিটি বিদ্যুত চুম্বকীয় শক্তি। অর্থাৎ, এতে একটা কয়েল বা অস্থায়ী বৈদ্যুতিক চুম্বক থাকে যার মধ্যে প্রয়োজনীয় পরিমাণ বিদ্যুত সরবরাহ করলে তা সুইচটিকে অন/অফ করতে পারে। কাজেই এর মধ্যে প্রধানত ২টি অংশ থাকেঃ

  1. সুইচিং অংশ
  2. বিদ্যুত চুম্বকীয় অংশ

এটি কত প্রকারঃ

বাজারে প্রচলিত রীলে সমূহ প্রধানত ৩ ধরনের

  1. SPST – Single pole single throw
  2. SPDT – Single pole double throw
  3. DPDT – Double pole double throw

আমরা আমাদের এই পাঠে বহুল প্রচলিত SPDT রিলে সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

রিলে দেখতে কেমনঃ

আমরা নিচের চিত্রটিকে লক্ষ্য করলে একটি বাস্তব রিলে দেখতে কেমন হয় তা দেখতে পাবো-

সচিত্র রিলে (Relay)

এখানে খেয়াল করলে দেখবো যে এই এটির ৫ টি লেগ/পা/প্রান্ত আছে আর এর গায়ে ছোট ছোট অক্ষরে কিছু জিনিস লেখা আছে। আমরা এখন এই লেখা গুলোর অর্থ বোঝার চেষ্টা করবো।

লেখা গুলোর কোনটার মানে কিঃ

আমরা যদি একটু কাছে থেকে দেখি তা হলে লেখা গুলোকে এমন দেখতে পাবো যা দ্বারা রীলে’র বিভিন্ন মাণ কে নির্দেশ করছে-

লেখা গুলোর কোনটার মানে কি বুঝায়

আগেই বলেছি এটি গঠিত হয় ২টি ভিন্ন অংশ নিয়ে। এই লেখাগুলো দ্বারা এই ২টি ভিন্ন ভিন্ন অংশের ভোল্টেজ, কারেন্ট, রেজিস্টেন্স ইত্যাদি বিভিন্ন মাণ নির্দেশ করে।

আমার এই রীলে টি কতো ভোল্টেরঃ

উপরের চিত্র মোতাবেক যে এর গায়ে ২ রকমের ভোল্টেজ নির্দেশ করছে-
১০ এম্পিয়ার, ২৫০ ভোল্ট এসি / ১৫ এম্পিয়ার ১২০ ভোল্ট এসি – এর দ্বারা এটির আভ্যন্তরীন সুইচের সর্বোচ্চ ভোল্ট-এম্প সহ্য ক্ষমতা নির্দেশ করছে। অপরদিকে, তার ঠিক নিচেই লেখা ১২ ভোল্ট ডিসি (সাথে কিছু নাম্বার) লেখাটি দিয়ে বোঝাচ্ছে এই এর মধ্যে ব্যবহৃত বিদ্যুত চুম্বকীয় কয়েলটি ১২ ভোল্টের। অর্থাৎ, এই Relay এর বিদ্যুৎ চুম্বকীয় অংশে ১২ ভোল্ট কিংবা তার কিছু কম বেশি (১০%-২৫%) প্রয়োগ করলে Relay টি সক্রিয় হয়ে তার সুইচিং কার্য স¤পন্ন করতে পারবে। সাধারণত এগুলো আভ্যন্তরীণ ম্যাগনেটিক কয়েলের ভোল্ট ও তার সুইচিং ধরণ অনুসারে পরিচিত হয় যেমন ১২ ভোল্ট SPDT Relay।

[নোটঃ সাধারণত রীলে গুলো তার ম্যাগনেটিক কয়েলের ভোল্ট ও তার সুইচিং ধরণ অনুসারে পরিচিত হয় ]

[টিপসঃ বাজারে Relay সাধারণত এর লেগ/পিন সংখ্যা দ্বারা বেশি পরিচিত যেমন SPDT Relay – ৫ পিন; DPDT Relay – ৮ পিন পভৃতি। সুতরাং বাজারে গিয়ে ১২ ভোল্ট ৫ পিন Relay চাইলে দোকানী SPDT Relay দিবে। (এর কয়েলের ভোল্ট এর সাথে সুইচের পিন সংখ্যা + কয়েলের পিন সংখ্যা বলতে হবে। যেমনঃ ১২ ভোল্ট ৫ পিন Relay )

রিলে সম্পর্কিত পরবর্তী পাঠ পাবেন এই লিংক থেকে – রিলে কিভাবে কাজ করে ও এর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য (Part-2)

2 মন্তব্য

উত্তর প্রদান

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন