ফ্লিপ ফ্লপ সার্কিট তৈরী (প্রজেক্ট ৫)

0
1235
ফ্লিপ ফ্লপ সুইচ

ফ্লিপ ফ্লপ সার্কিট নিয়ে কিছু সহজ বিষয় বুঝি

আজকের প্রজেক্ট ইলেকট্রনিক ফ্লিপ ফ্লপ সার্কিট তৈরী নিয়ে। তার আগে কিছু টগল সুইচ আর পুশ সুইচ বিষয়ে বেসিক কিছু কথা বুঝে নেই।

টগল সুইচ বনাম পুশ টু অন সুইচ

ম্যাকানিক্যাল পুশ সুইচ

এই দুটাই মেকানিক্যাল সুইচ। কিন্তু কার্যপদ্ধতি ভিন্ন । লাল রঙ্গের টিকে বলে পুশ সুইচ বা পুশ টু অন সুইচ

স্বাভাবিক অবস্থায় এটি বন্ধ অবস্থায় থাকে। এটি একবার চাপলে সার্কিট অন হয়, কিন্তু ছেড়ে দিলেই অফ হয়ে যায়।

মানে এর স্বাভাবিক অবস্থা (ষ্টেবল ষ্টেট) একটি (অর্থাৎ মনো স্টেবল), যা হলো বন্ধ অবস্থা।

অন-অফ সুইচ

এই কালো সুইচটিকে বলে টগল সুইচ

ছবি তে যায় যে এটিকে নীচে টেনে আনলে অফ থাকে। যতক্ষন না উপরে চাপ দিয়ে অন করা হয়।

আর একবার অন হলে টেনে নীচে আনার আগ পর্যন্ত (আজীবন) অন থাকে।

অর্থাৎ এর স্বাভাবিক অবস্থা (ষ্টেবল ষ্টেট) দুইটি, (অর্থাৎ বাই স্টেবল)।

আমাদের বাসার সুইচ গুলো হয় বাই স্টেবল

আমাদের বাসাবাড়ির ইলেকট্রিক সুইচগুলা টগল প্রকৃতির বা বাইষ্টেবল সুইচ। কিন্তু ইলেকট্রনিক সুইচিং ডিভাইসগুলো সাধারনত মনোষ্টেবল প্রকৃতির।

যেমন একটি রিলেতে যতক্ষন ভোল্টেজ থাকে ততখন অন থাকে কিন্তু ভোল্টেজ চলে গেলেই অফ হয়ে যায়। যা কিনা পুশ সুইচের অনুরূপ।

টগল সুইচের অসুবিধা সমূহ

আবার টগল সুইচের বেশ কিছু অসুবিধাও আছে। ধরা যাক বাসায় অটো কন্ট্রোল সার্কিট দিয়ে পাম্প কন্ট্রোল করতে চাচ্ছ।

পাম্পের সাথে ভারী টগল সুইচ লাগানো আছে। এখন একটি ইলেকট্রনিক কন্ট্রোলারের পক্ষে ঐ ভারী সুইচ কে চালানো সম্ভব নয়। তখন দরকার পরে ইলেকট্রনিক সুইচ। এটিই করতে পারে ফ্লিপ ফ্লপ সার্কিট।

ফ্লিপ-ফ্লপ সার্কিট তৈরী

এই দুই সুবিধাই যদি পুশবাটনে বাস্তবায়ন করা যায় তবে কেমন হয়?

অর্থাৎ একটি ইলেকট্রনিক বাই স্টেবল সুইচ?

যেমন এক পুশে অন আরেক পুশে অফ

টিভির রিমোট কন্ট্রোলের পাওয়ার বাটন টেপার অভিজ্ঞতা অবশ্যই আছে? এই বাই স্টেবল ইলেকট্রনিক সুইচ গুলাই একটি ফ্লিপ ফ্লপ (সংক্ষেপে ফফ বলবো)।

এক একটা ফ্লিপ ফ্লপ দুইটি অবস্থা ধরে রাখতে পারে বলে এদের ১ বিট (অন =১, অফ =০) ইলেকট্রনিক স্মৃতি বা মেমোরী হিসাবে ব্যবহার করা হয়।

আমরা যে বলি- আমার মেমোরী এত মেগা বাইট তার মানে, অত x10^6 x 8 টি ফফ আছে (যেমন ১০ মেগাবাইট = 10 x 1000000 x 8 = 80000000 টি ফ্লিপ ফ্লপ)।

এছাড়া প্রায় সব ডিজিটাল সার্কিট, আইসি এই ফফ বা ফ্লিপ-ফ্লপ সার্কিটের উপর নির্ভরশীল।

ফ্লিপ ফ্লপ সার্কিটের কর্ম পদ্ধতি

প্রথমে দেখা যাক সহজ ভাবে কি করে ফ্লিপ ফ্লপ সার্কিট বানানো যায়। নিচের সার্কিটে দুটি পুশ বাটন ও দুইটি ট্রানজিস্টর ব্যবহার করা হয়েছে।

এমতাবস্থায় পাওয়ার দিলে যে কোন একটি ট্রানজিস্টর চালু হবে ও সংশিলষ্ট লেডটি জ্বলবে (কোনটি জ্বলবে বলা অনিশ্চিত)।

ধরা যাক বাম পাশের ট্রানজিস্টর চালু তাই বাম পাশের এলইডি টি জ্বলছে।

এখন বাম পাশের পুশ বাটনটি চাপলে বামপাশের ট্রানজিস্টর এর বেস গ্রাউন্ড, বা নেগেটিভে সংযুক্ত হওয়ায় তা বেস ভোল্ট হারায়। ফলে ট্রানজিস্টর বন্ধ হয়ে যায়।

অপরপক্ষে ডানপাশের ট্রানজিস্টর টির কালেক্টর ভোল্টেজ বেড়ে বায়াস পাওয়ায় চালু হয়ে যায়। এবং ডানের লেড জ্বলতে শুরু করে।

এবার পুশবাটন ছেড়ে দিলেও তা চলতে থাকে যতক্ষন না ডান পাশের পুশ বাটনটি চাপা হয়।

এভাবে অল্টারনেট করে বাটন চেপে পুশ বাটন দিয়ে এলইডি জ্বালিয়ে রাখা যায়।

বাইস্টেবল ফ্লিপ ফ্লপ সার্কিট ডায়াগ্রাম
বাইস্টেবল ফ্লিপ ফ্লপ সার্কিট ডায়াগ্রাম

এই সার্কিটটিতে আসলে দুইটি পুশ বাটন দিয়ে একটি টগল সুইচের বাস্তবায়ন করা হয়েছে। যেটি আমরা অনেক ক্ষেত্রেই ব্যাবহার করি ।

যেমন এক সুইচ দিয়ে পাম্প অন করা (ধরা যাক সবুজ সুইচ)।

আরেক সুইচ দিয়ে অফ করা (ধরা যাক লাল সুইচ)।

রিমোট কন্ট্রোলে ব্যবহৃত হয় এমন ফ্লিপ ফ্লপ সার্কিট তৈরী

এখন আমরা রিমোট বাটনের মতো এক পুশ বাটনেই দুটি কাজ করা দেখবো।

নিচের বামপাশের ফ্লিপ ফ্লিপ সার্কিটটি লক্ষ্য করি। এতে কেবল একটি পুশবাটন আছে। এখানে দুইটি ট্রানজিস্টরের সাথে দুটি ক্যাপাসিটরও লাগানো হয়েছে।

এখন এই সার্কিটটিকে পুশ বাটন দিয়ে পাওয়ার দেয়ার সাথে সাথে দুই ক্যাপাসিটরের মধ্যে চার্জ হবার একটা প্রতিযোগিতা শুরু হয়। ধরা যাক বাম পাশের ক্যাপাসিটরটি প্রথমে প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়।

এতে ডান পাশের ট্রানজিস্টর বেস বায়াসিং ভোল্টেজ পাওয়ায় অন হয়ে ডানের এলইডি জ্বালিয়ে দেয়। প্রতিযোগিতায় আপাতত হেরে বামের ট্রানজিস্টর পরের মওকার অপেক্ষায় থাকে।

২য় বার যখন পুশ বাটন চাপা হয়, তখন বাম পাশের ক্যাপাসিটর অলরেডি চার্জড থাকায় আর চার্জ নেয়না। এবার ডান পাশের ক্যাপাসিটর চার্জ গ্রহন করার সুযোগ পায়।

সাথে সাথে বামের ট্রানজিস্টর বেস বায়াস ভোল্টেজ পাওয়ায় চালু হয়ে যায়। কিন্ত সে কালেক্টর থেকে প্রচুর কারেন্ট নিজে নিয়ে নেওয়ায় ডান পাশের ট্রানজিস্টর বায়াস ভোল্টেজ হারিয়ে বন্ধ হয়ে যায়।

ফলে প্রতিযোগিতার এই পর্যায়ে বাম পাশের ট্রানজিস্টর জয়ী হয়। ডান পাশের ট্রানজিস্টর আবার পরের সুযোগের জন্য অপেক্ষায় থাকে। এভাবে ইলেকট্রনিক ভাবে পুশ অন, পুশ অফ হতেই থাকে।

toggle

বাম পাশের সার্কিটকে মডিফাই করে ডান পাশের সার্কিটটি এমন ভাবে করা যা প্রাক্টিকেল লোড চালাতে পারে।

বাম পাশের লেড কে একটা রেজিষ্ট্যান্স দিয়ে আর ডান পাশের লেডটিক রিলে দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। আর অন্যান্য রেজিষ্ট্যান্সকেও ম্যাচিং করা হয়েছে।

কিছু সীমাবদ্ধতা

যদিও ডান পাশের সার্কিটটিকে প্র্যাক্টকেল বলা হয়েছে কিন্তু এর সীমাবদ্ধতা হলো লোডের উপর ভিত্তি করে এর রেসিষ্ট্যান্স ম্যাচিং করতে হয়।

এছাড়া পুশ বাটন টিপার সময় কয়েকবার ফলস ট্রিগারিং হয়ে পড়ে।

মেকানিকাল সব সুইচেই কম বেশী এই সমস্যা হয়। এক বারে কানেক্ট না হয়ে, অন-অফ-অন এভাবে হয়।

এই দুর্বলতা দূর করতে আমরা আবার ৫৫৫ আইসির শরনাপন্ন হব।

555 আইসি দিয়ে ফ্লিপ ফ্লপ তৈরী

555-Toggle

আমাদের অতি প্রিয় ৫৫৫ আইসিটি প্রায় আগের প্রজেক্ট গুলার মতোই তৈরি করা হয়েছে। শুধু একটি পুশ বাটন, একটি ১ মাইক্রোফেরাড ক্যাপাসিটর আর ১০০ কে রেজিষ্টর আমদানি করা হয়েছে।

এটি আগের কার্য পদ্ধতির মতোই পুশ অন, পুশ অফ হয়।

এর সুবিধা হলো লোড বদল হলেও এর সার্কিট উপাদান গুলি একই থাকে। আর হিস্টেরেসিস ভালো থাকায় পুশ বাটনের ফলস ট্রিগারিং ও হয় না।

আমরা ফ্লিপ ফ্লপের এই বৈশিষ্ঠ গুলা ব্যবহার করে পরবর্তিতে মজার মজার সব সার্কিট তৈরী করব।

এছাড়াও ট্রানজিস্টর দিয়ে মজার কিছু সার্কিট আমাদের পেতে ঘুরে আসো এই লিংক থেকে।