কাঁটার ঝাঁপঃ একটি অলৌকিক ঘটনার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা

0
811

যারা গ্রামে থাকেন বা চরক পূজার সাথে পরিচিত তারা অনেকে দেখেছেন যে অনেকে খালি গায়ে কাঁটার ঝোপে ঝাঁপ দেয়। কিন্তু তাদের এক প্রকার কিছুই হয়না৷ বেশির ভাগ সময় এটাকে অলৌকিক বা জাদুকরী ঘটনার সাথে তুলনা করা হয়। কিন্তু এটা মোটেও অলৌকিক কোন ঘটনা নয় বরং এর পিছনে কাজ করে পদার্থ বিজ্ঞান৷ আমি আজ সেটারই বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিব৷

কাঁটার ঝাঁপ কি?

যেহেতু ঘটনার ব্যাখ্যা করবো সেহেতু, লোকে কি ভাবে কাঁটার ঝোপে ঝাঁপ দেয় সেটা বলে নেওয়া উচিত ৷ প্রথমে, কাঁটার একটি মঞ্চ তৈরী করা হয় ধানের বিচুলি দিয়ে (ধান গাছের শুকনো অবস্থা)। সেটির উচ্চতা প্রায় 25 সে.মি এর আসেপাশে বা তারও বেশি ৷ এটির উপরে কাঁটা জাতীয় গাছের অংশ বিছানো হয় 20 সে.মি এর মত উঁচু করে ৷ (ঐ কাঁটা জাতীয় উদ্ভিদকে বুজ নামে চেনে গ্রামে। কিন্তু আসল নাম কি তা এ মুহুর্তে জানা নেই। আপনাদের কারো জানা থাকলে আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন)। এর উপরে কোন ব্যক্তিকে অন্য চার পাঁচজন উচু করে ধরে। কাঁটার 5-15 সে.মি উপর থেকে কাঁটার উপর ছেড়ে দেয়৷ কিন্তু ব্যক্তিটির গায়ে কাঁটা বেঁধে না৷ একেই কাঁটার ঝাপ বলে, গ্রাম বাংলায়৷

ব্যাখাঃ কিছু পদার্থ বিজ্ঞানের ফরমুলা দেখে নেওয়া যাক ৷

ধরি,

একজন ব্যক্তির ভর = m

  • বিচুলি ও কাঁটার স্তরের মোট উচ্চতা = x
  • কাঁটার স্তরের উপর থেকে ব্যক্তির নিম্নতল পর্যন্ত উচ্চতা = h
  • তাহলে ভুমি থেকে ব্যক্তির/বস্তুর মোট উচ্চতা = h+x
  • (h+x) উচ্চতায় ব্যক্তির বিভব শক্তি Ep=mg(h+x) যেখানে g হল অভিকর্ষ ত্বরন ৷

এখন কাঁটার উপর আছড়ে পরলে, কাঁটা কর্তৃক ব্যক্তির উপর প্রয়োগকৃত বল F। তাহলে কাঁটা কর্তৃক ব্যক্তির উপর কাজ হবে F.x৷ কারন কাঁটা যখন ঐ বল প্রয়োগ করবে তখন কাঁটা ও বিচুলি স্প্রিং এর মত কাজ করে x সরন ঘটিয়ে প্রায় মাটির কাছাকাছি চলে আসবে (বাস্তবে একটু কম আসবে)৷ যেহেতু বল যেদিকে ক্রিয়া করছে সরন হচ্ছে তার বিপরীত দিকে, তাই এটা একটি ঋনাত্মক কাজ বা কাঁটা দ্বারা ব্যক্তির উপর কাজ হচ্ছে। এখন আমরা জানি, কাঁটা দ্বারা ব্যক্তির উপর করা কাজ = ব্যক্তির বিভব শক্তি বা-

F.x = mg(h+x) অথবা, F = mg(h+x)/xকাঁটার ঝাঁপে ব্যবহৃত স্থানের প্রস্তুতি চিত্র

তাই ব্যক্তিটি যদি পিঠের দিয়ে পরে তাহলে সে তার পিঠের সমান ক্ষেত্র ফলের এলাকা ব্যাপি এই F বল গ্রহন করবে৷ এখন এই এলাকায় যদি N পরিমান কাঁটা থাকে তবে তার প্রত্যেকটা কাঁটায়, f =F/N বল প্রযুক্ত হবে৷ বা,

f=mg(h+x)/Nx ——– (1)

এখন এই f বল একটা কাঁটা প্রদান করলে যদি সেটা সহনশীল হয় তবে এই ঝাপ দিলে কিছুই হবে না ৷

এখন ধরা যায়, একজন ব্যক্তির ওজনঃ m=76 kg এবং ঐ অনুষ্ঠানে ব্যহৃত তথ্যগুলোর প্রয়োজনীয় মান বসাই- h=0.05 মিটার x=0.45 :: h+x=0.5 মিটার g=9.81 মিটার/সেকেন্ড² ব্যক্তিটির পিঠের ক্ষেত্রফলে কাঁটা থাকতে পারে সর্বনিম্ন, N=3000 টি (অনেক কম ধরলাম ) এই মান গুলো (1) নং সমীকরনে বসিয়ে পাই 

f=0.276 নিউটন; যা বল হিসাবে পরিমাণে খুবই অল্প।

একটা বুজের কাঁটা আপনার গায় ধরে এ পরিমান বল প্রয়োগ করলে কাঁটা আপনার গায় কখনোই ফুটবেনা ৷ আরেক ভাবে বলা যায় একটা বুজের কাঁটা আপনার গায় রেখে তার উপর 28.1768707483 গ্রাম ভর চাপালে ঐ f বল তৈরী হবে৷ তো ঐ ভর কোন বুজের কাটার উপর রেখে আপনার গায়ে রাখলে আপনার কোন সমস্যা হবে না৷

বাস্তবে আমরা বিজ্ঞানের মূলসূত্র ঠিক মত জানিনা বিধায় আমাদের কাছে এজাতীয় কাজ কে অলৌকিক মনে হয়। কিন্তু আসলে তা মোটেও নয়

উত্তর প্রদান

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন