ছোটদের জন্য বিজ্ঞান – ৪

1
714
ছোটদের জন্য বিজ্ঞান - ৬ (বিজ্ঞানী ও উদ্ভাবন)

প্রশ্ন ও প্রমাণ নিয়েই বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠিত হয় এটা তোমরা জেনেছো। প্রশ্ন করবার পর তার উত্তর বা সমাধান পেতে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানো বিজ্ঞানের অংশ। আবার বিজ্ঞান কি এই প্রশ্নের উত্তরে আমরা অনেক কেই দেখি বলতে বিজ্ঞান মানে বিশেষ জ্ঞান

এই বিশেষ জ্ঞান জিনিসটা আসলে কি? এই প্রশ্নটি যদি করি তাহলে কি দাড়াচ্ছে বিষয়টা!!! তখন উত্তর আসতে পারে এমন – এই ধরো পদার্থ সম্পর্কিত জ্ঞান, রসায়ন সম্পর্কিত জ্ঞান ইত্যাদি। আসলেও কি এইগুলো বিশেষ জ্ঞান?

এইগুলো বিশেষ জ্ঞান নয় মোটেও – এগুলো আসরে বিষয় ভিত্তিক জ্ঞান। বিজ্ঞানের এই বিশেষ জ্ঞান সংঙ্গাটা আসলে একটি বাজে সংঙ্গা। এটা মোটেও বিজ্ঞানের সংঙ্গা নয়। বিজ্ঞানের সংঙ্গা হলো- আমরা যা জানি না তার প্রমাণিত জ্ঞানের যে বিশাল ভান্ডার তাই বিজ্ঞান। সোজা কথায় প্রমাণিত সবকিছুই বিজ্ঞান। যেখানে প্রমাণিত বিষয় নেই তা বিজ্ঞান নয় কোনভাবেই।

মহীয়সী বিজ্ঞানী আইনস্টাইন-Einstein
মহীয়সী বিজ্ঞানী আইনস্টাইন-Einstein

আবার আমরা যখন কোন বিষয় প্রমাণিত বলবো সেটা প্রতিবারই একই রকম আচড়ণ করবে এটাও কাঙ্খিত। একটা জিনিস একবার প্রমাণিত হবার পর যদি দেখা যায় পুনরায় করতে গেলে আর আগের মতো আচড়ণ করে না তবে সেটাও বিজ্ঞান হবে না। সেখানে যদি পারিপার্শিক বিষয়গুলো কাজ করে তবে সেটাও সেখানে যুক্ত হবে প্রমাণের শর্ত হিসাবে।

একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টি সহজ হবে – যেমন আমরা জানি জল ৪ ডিগ্রী তাপমাত্রাতে সর্বোচ্চ ঘণ অবস্থায় থাকে। এখন তোমার বাসার খাবার জলকে এই ৪ ডিগ্রীতে যদি পরিমাপ করো তবে তা সর্বোচ্চ ঘণ অবস্থায় কখোনই পাবে না। তাহলে আগের যে প্রমাণিত বিষয়টি জানলাম সেটা কি ভুল বলবে? এটা আসলে মোটেও ভুল নয়।

জল আসলেই ৪ ডিগ্রী তাপমাত্রায় সর্বোচ্চ ঘণ অবস্থায় থাকে তবে তা বিশুদ্ধ জল যার রাসায়নিক গঠন H2O। আমরা বাসাতে খাবার জন্য জল ব্যবহার করি তা ১০০ ভাগ বিশুদ্ধ জল নয় বিধায় তাকে ৪ ডিগ্রীতে সর্বোচ্চ ঘণ পাবে না। কারণ আমাদের খাবার জলে নানান ধরণের খনিজ ও বাইরের পদার্থ মেশানো থাকে। এর ফলে জলের গুণগত মান পরিবর্তন হয়। যার ফলে এটা ৪ ডিগ্রীতে আর সর্বোচ্চ ঘণ অবস্থায় আসতে পারে না।

পানির ঘনত্ব পরিবর্তীত হয় ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াসে
পানির ঘনত্ব পরিবর্তীত হয় ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াসে

কোন কিছু প্রমাণ করতে গেলে তাই আদর্শ অবস্থা ঠিক করে নিতে হয়। বিশেষ করে যা প্রমাণ করা হবে তার আদর্শ অবস্থা, তাপ, চাপ, এর সাথে অন্য পদার্থের মিশ্রণ, অন্য কোন কিছুর উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি ইত্যাদি। এইসব ঠিক না থাকলে কোন প্রমাণিত বিষয়ও স্থান কাল ভেদে ভিন্ন রকম আচড়ণ করতে পারে বা করে।

তার মানে এই না যে আগের প্রমাণ ভুল। এখানে শুধু ঠিক করে নিতে হয় কি কি বিষয় পরিবর্তনে ভুমিকা রাখছে। এই পরিবর্তনে ভুমিকা রাখা উপাদান গুলোকে বিবেচনা করেই একটি বিজ্ঞানের আবিস্কার কে নানান কাজে লাগানো হয়।

একটা উদাহরণ দেই আবারও – আমরা জানি জল শুণ্য ডিগ্রীতে বরফ হয়। তার মানে এর নীচে আর জলকে ঠান্ডা করা যায় না। কিন্তু আমরা যদি জলকে আরও ঠান্ডা করতে চাই তার জন্য আমরা জলের সাথে যদি লবণ মিশাই তবে জলকে – ২১ ডিগ্রী পর্যন্ত ঠান্ডা করা সম্ভব।

এই যে আবিস্কার- জলকে আরও ঠান্ডা করবার তাও একটি প্রমাণিত বিজ্ঞান। আবার বিশুদ্ধ জল শুণ্য ডিগ্রীতে জমে বরফ হয় তাও বিজ্ঞান। আমরা জলের সাথে বিভিন্ন জিনিস মিশিয়ে জলের এই বরফ হবার তাপমাত্রার পরিবর্তন করতে পারি।

প্রশ্ন, পরীক্ষা, প্রমাণ ও প্রমাণের শর্তাবলী তাহলে বিজ্ঞানের মুল কিছু ভিত্তি। এগুলো ছাড়া আসলে কোন কিছুই বিজ্ঞান হবে না কখনই। এর জন্যই আমরা আগে বলেছি সমাজ বিজ্ঞান আসলে বিজ্ঞান নয়, ধারণা। বর্তমানে সংবাত পত্রের পাতাতে মহাকাশ নিয়ে যত ধারণা প্রকাশিত হয় সেসবও শ্রেফ ধারণা; বিজ্ঞান নয়।

এই ধারণা গুলো হয়তো একদিন প্রমাণিত হবে তখন আবার তা বিজ্ঞান হয়ে যাবে। তাই কোন কিছু কেন হয় সেটার উত্তর খুঁজতে সাহায্যকারী ধারণা বিজ্ঞানের জন্য অপরিহার্য। এই ধারণা না তাকলে বা সঠিক না হলে কখনই উপযুক্ত প্রমাণ করা সম্ভব হবে না।

মহাবিশ্বের সৃষ্টি নিয়ে তাই বর্তমানে অনেক ধরনের ধারণা আছে, মানুষ কি টাইম মেশিনে চড়ে অতীত বা ভবিষ্যতে যেতে পারবে কিনা তা নিয়ে ধারণা আছে, মানুষ কি আলোর বেগে ছুটতে পারবে কি পারবে না তাও নিয়ে ধারণা আছে এমন কি সৃষ্টিকর্তা বলে কেউ আছেন কি নাই তারও ধারণা আছে। প্রতিটি ধারণার পক্ষে বিপক্ষে আছে নানান মতবাদ। কারও মতবাদ জনপ্রিয়তার কারণে অনেকের কাছে গ্রহণ যোগ্য আবার কারো মতবাদ অধিকাংশই মানেন না।

বিজ্ঞানী ডারউইনের বিবর্তন বাদ এমনই একটি মতবাদ। অনেকেই এটাকে মতবাদ মানতে চাইবেন না। আবার অনেকেই বলবে এটা ভুল মতবাদ। আবার অনেকেই বলবে এটাই সঠিক। এই না মানা, ভুল বলা আর সঠিক বলাদের কারো কাছেই কিন্তু সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই। সবগুলোই ধারণার উপর কাজ করছে। প্রমাণ সাপেক্ষে যদি আলোচনা করা যায় তবে কোন পক্ষই অকাট্য কোন প্রমাণ হাজির করতে পারবে না যার যার পক্ষে। এখানেই রয়েছে সৌন্দর্য। হাজার হাজার প্রশ্নের ভান্ডার। এই প্রশ্নগুলোই পরবর্তী গবেষণার মালমশলা। যা থেকে বের হয়ে আসবে বিজ্ঞানের সত্যির সৌন্দর্যতা।

মহামতি বিজ্ঞানী ডারউইন
মহামতি বিজ্ঞানী ডারউইন

এই সৌন্দর্যতার ধারবাহিকতায়ই কিন্তু আমরা পেয়েছি উন্নত প্রজাতির নানান ফসল, হাইব্রীড পশু সহ আরও অনেক জীবন্ত কিছু । বিজ্ঞানী ডারউইন যে চিন্তার দ্বার মানবজাতির জন্য খুলে গিয়েছেন তার মতবাদের দ্বারা তাতে যে বিতর্ক এবং তা মিথ্যা বা সত্যি প্রমাণের প্রকৃয়াতে পাওয়া গিয়েছে প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীর পারস্পরিক সম্পর্কের সাথে বর্তমানে জীবন্ত প্রাণী সমুহের সম্পর্কের সেতুগুলো।

জানা সম্ভব হয়েছে জীবনের পরিবর্তনের নিয়ম সমুহ যদিও তা জানবার পরিধির তুলনায় খুবই অপ্রতুল বা কম। আমি নিজেও এটাকে মতবাদ মনে করি কারণ এটা যদি মেনে নিয়ে প্রমাণিত বিজ্ঞান বলি তবে তা স্বীকার করে প্রশ্ন করা থামাতে হবে। এটার বিশালত্বের আর কোন কিছু তখন আর জানা হয়তো সম্ভব হবে না। এই সুন্দর কে লালন করতে হবে প্রতিনিয়ত প্রশ্ন দিয়ে, প্রশ্নের উত্তর জানবার চেষ্টার মধ্য দিয়ে, চেষ্টা গুলোকে বিধিবদ্ধ সুশৃঙ্খল পদ্ধতির মধ্যদিয়ে প্রমাণিত সত্যের সৌন্দর্যতায় ভাস্কর করবার জন্য।

এই সিরিজের বাকি লেখা পড়ুনঃ

বিজ্ঞান সংক্রান্ত আমাদের অন্যান্য লেখা পড়তে পারেনঃ বিজ্ঞান ও অন্যান্য

1 মন্তব্য

উত্তর প্রদান

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন