লেড ফ্লাশার (প্রজেক্ট ৭)

3
997

পূর্বজ্ঞানঃ RC টাইমিং সম্পর্কে জ্ঞান

তাত্ত্বিক পাঠঃ RC টাইমিং

পুলিশের গাড়িতে বা এম্বুলেন্সে তোমরা অল্টারনেট করে বাতি ফ্লাশিং দেখেছ বোধ হয়। কিংবা খেলনা গাড়িতে বাতিগুলা একটা নিভেতো আরেকটা জ্বলে এমন দেখেছ নিশ্চই। আমরা এই ধরনের একটা ফ্লাশার সার্কিট বানাব লেড দিয়ে। আসলে প্রজেক্টটা একটা নিজেই মজার সার্কিট দিয়ে তৈরী কিন্তু এই সার্কিট থেকে অনেক বড় একটা থিউরিটক্যাল বেস তৈরীর আশা করছি। এই সার্কিট দিয়ে আসলে আমরা ভবিষ্যতে অসিলেটর সার্কিটের হাতে খড়ি দিব। অসিলেটর সার্কিট একটি অতি গুরুত্বপূর্ন সার্কিট। যা দিয়ে ডিসি থেকে এসি, ডিজিটাল ঘড়ি, রেডিও তৈরী, বা অনেক মজার আর সিরিয়াস এনালগ বা ডিজিটাল সার্কিট তৈরি করা যায়।

 

মূল সার্কিট বুঝার আগে আমরা একটু RC টাইমিং নিয়ে আলোকপাত করব। আবার RC টাইমিং বুঝতে ক্যাপাসিটরের ধর্ম নিয়ে হালকা আলোচনা করব।
ক্যাপাসিটর এক অর্থে একটি টাইমিং ডিভাইস হিসাবে কাজ করে। ক্যাপাসিটরে ভোল্টেজ দিলে ক্যাপাসিটরের ক্ষমতা অনুযায়ী (ক্যাপাসিটেন্স, ফ্যারাডে এই ক্ষমতা মাপা হয়, যত বেশি ফ্যারাড তত বেশী ক্ষমতা আর চার্জ হতে তত বেশী সময় নেয়) পরিপূর্ন চার্জ হবার আগ পর্যন্ত সার্কিট থেকে চার্জ গ্রহন করে এবং ক্ষমতা অনুযায়ী কিছু সময় পর চার্জ পূর্ন হয়ে গেলে তার দুই প্রান্তের ভোল্টেজ সাপ্লাই ভোল্টেজের সমান হয় এবং সে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। কিন্তু যদি সার্কিটে ভোল্টেজ ড্রপ করে (রেজিষ্ট্যান্স বা এসির প্রভাবে) তবে সে তার চার্জ ছাড়তে শুরু করে যতক্ষননা তার দুই প্রান্তের ভোল্টেজ সার্কিটের ভোল্টেজ ড্রপের সমান হয়। এই চার্জ ছাড়তেও কিছু সময় নেয়। এই চার্জ হতে যে সময় লাগে আর ছাড়তে যে সময় লাগে এটিই টাইমিং পালস তৈরী করে।

নিচের সার্কিটটি লক্ষ্য কর। ধরা যাক ১.৫ ভোল্টের একটা একটা ব্যাটারি একটা ক্যাপাসিটর আর বাল্বের সাথে চিত্রের মতো লাগানো হয়েছে। এই অবস্থায় একদিকে বাল্ব জ্বলতে শুরু করবে আর ক্যাপাসিটর চার্জ হতে শুরু করবে। ক্যাপাসিটর যত চার্জ হতে শুরু করবে তার + প্লেটের পজেটিভ চার্জ আর – প্লেটে নেগেটিভ চার্জ জমা হতে থাকে। এই চার্জই আবার নতুন করে সমজাতীয় চার্জকে প্লেটে আসতে বাধা দিতে থাকে কিন্তু ব্যাটারির ভোল্টেজের কারনে সেই বাধা পর্যদুস্ত হয়। কিন্ত চার্জ জমতে জমতে ক্যাপাসিটরের ভোল্টেজও বাড়তে থাকে এক পর্যায়ে তা ব্যাটারীর সমান ভোল্টেজে (১.৫ ভোল্ট) উপনিত হয়। এই সময় সে ব্যাটারীর সাথে সেয়ানে সেয়ানে ফাইট দেয় অর্থাৎ বিদ্যুৎ প্রবাহ থামিয়ে দেয়, কারন যেন ক্যাপাসিটরটি উলটা চার্জের ব্যাটারীতে পরিনত হয় (-১.৫ ভোল্ট)। তাই প্রথমে বাল্বটি ভালোভাবে জ্বলতে থাকলেও ক্যাপাসিটর যত চার্জ হয় ততই ডিম হতে হতে একবার নিভেই যায় (ক্যাপাসিটর ফুল চার্জ)।

battery-cap

এই বার যদি আমরা ব্যাটারীটাকে খুলে ফেলি এবং ব্যাটারী যেখানে ছিল সেই দুইপ্রান্ত জোড়া দিয়ে দেই তবে এই বার ফুল চার্জড ক্যাপাসিটর থেকে (উলটা ব্যাটারী) আগের কারেন্ট যে দিকে যেত ( আসল ব্যাটারির + থেকে –এর দিকে) তার উলটা দিকে প্রবাহিত হয়। এবারে ক্যাপাসিটরের চার্জ ফুল থেকে ধীরে ধীরে শুন্য হতে থাকে। ফলে বাল্বের উজ্বলতা প্রথমে বেশী থকে পরে একেবারে নিভে যায় (ক্যাপাসিটর ফুল ডিসচার্জ)। এই পেজে সুন্দর একটা ফ্ল্যাশ এনিমেশন সাথে থিউরি আছে দেখতে পারঃ (http://www.learnabout-electronics.org/ac_theory/capacitors02.php)

এখন এই ক্যাপাসিটর কতক্ষনে চার্জ হবে বা ডিসচার্জ হবে তা দুইটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে

১। ক্যাপাসিটরের ক্ষমতা (ক্যাপাসিটেন্স C, যার একক ফ্যারাড)

২। সার্কিটের রোধ (রেসিষ্ট্যান্স R যার একক ওহম, যা চার্জের চলাচলে বাধা দেয়। যত বেশী রেসিষ্ট্যান্স তত চার্জ চলাচলে বাধা, তত বেশী সময় লাগে চার্জ বা ডিসচার্জ হতে)

তাই R, C এর গুন ফল RC কে টাইম কনস্ট্যান্ট বলে। এই গুনফল R এর কারনেই হোক বা C এর কারনে হোক অথবা এই দুইয়ের কারনেই হোক যত বড় বা ছোট হবে ক্যাপাসিটিভ সার্কিটে তত বেশী বা কম সময় লাগবে ক্যাপাসিটর চার্জ হয়ে সার্কিটের প্রবাহ বন্ধ বা চালু হতে।

RC টাইমিং ব্যাবহারে ট্রাঞ্জিষ্টার বেসড লেড ফ্লাশারঃ

আমরা যদি ঐ ক্যাপাসিটরকে ক্রমাগত চার্জ ডিসচার্জ চক্রে ফেলতে পারি তবে আমরা ডিসি সার্কিট থেকেই এমন একটা অন/অফ পালস তৈরী হবে যা লেডকে অন অফ করতে পারব। তাই রেজিষ্ট্যান্স ও ক্যাপাসিটর ছাড়াও একটি সুইচিং ডিভাইস লাগবে যা ক্যাপাসিটর চার্জড হলেই ক্রমাগত শর্ট সার্কিট করে দিবে (ব্যাটারি খুলে আমরা দুই প্রান্ত জোড়া দিয়ে যে কাজ করেছি) আর ডিসচার্জ হলেই ওপেন সার্কিট করে দিবে যাতে ক্যাপাসিটর আবার চার্জড হতে পারে। এই সুইচিং (শর্ট সার্কিট/ ওপেন সার্কিট) আমরা ট্রাঞ্জিষ্টর দিয়ে খুব এফিশিয়েন্টলি করতে পারি। ট্রাঞ্জিষ্টর বেস ফরোয়ার্ড বায়াসে অন বা শর্ট হয় আর রিভার্স বায়াসে অফ বা ওপেন হয়ে যায়।

নিচের চিত্রের সার্কিটটি লক্ষ্য করিঃ

2trans-led-flasher
(এই সার্কিটের সাথে এর আগে প্রজেক্ট-৫ঃ ফ্লিপ-ফ্লপ তৈরী এর এক পুশ বাটন দুই লেড সার্কিটের তুলনা করে দেখতে পার। দেখবে যে এরা প্রায় একই। কিছুটা কানেকশন কিছুটা অদল বদল আর পুশ বাটনটি বাদ দেয়া হয়েছে। আগে যে কাজটি ম্যানুয়ালি বা টিপে টিপে করা হতো এখন ক্যাপাসিটর নিজেই সেই কাজটি করে।)

এই খানে দুইটি করে ক্যাপাসিটর, ট্রাঞ্জিষ্টর, আর লেড দিয়ে একটি সার্কিট তৈরী করা হয়েছে দৃষ্টি নন্দন করার উদ্দেশ্যে। এখানে লেড দুটির রঙ ভিন্ন করলে আরো ভালো হয়। এই সার্কিটের জোড়ায় জোড়ায় যে পার্টস ব্যাবহার করা হয়েছে তা একটি আরেকটির রেটিং সমতুল্য। কিন্তু বাস্তবে হুবুহু একই সমতুল পার্টস তৈরী করা যায় না। অন্তর্নিহিত কারনেই রেটিং একই থাকার পরও একই রেটিং এর দুটি পার্টসে কিছু ভিন্নতা থাকে। এখন যদি এই সার্কিটিকে চালু করলে কি হতে পারে? একটু বিশ্লেষন করে দেখা যাকঃ

প্রথম পর্যায়ঃ ধরাযাক সুইচ অন করার সাথে সাথে ডান পাশের ট্রাঞ্জিষ্টার, ডান রেসিষ্টোরের দ্বারা পজেটিভ বায়াস পেয়ে অন হয়ে যায় এবং ডান পাশের লেড জ্বলতে শুরু করে। ডানের ট্রাঞ্জিষ্টারটি এখানে শর্ট সার্কিটের মতো আচরন করায় ডানের ট্রাঞ্জিষ্টরে কোন চার্জ থাকেনা, কিন্ত ইত্যাবসরে বামের ট্রাঞ্জিষ্টারটি ওপেন সার্কিটে চার্জ হতে থাকে। যতই বামের ক্যাপাসিটর চার্জ হয়। তার নেগেটিভ প্লেটে যুক্ত ডানের ট্রাঞ্জিষ্টারের বেস, ততই বায়াস হারিয়ে একসময় ডান পাশের ট্রাঞ্জিষ্টারকে বন্ধ করে দেয় (0.69RT সেকেন্ড পরে)।
দ্বিতীয় পর্যায়ঃ ডানের ট্রাঞ্জিষ্টার বন্ধ হলে কারেন্ট বামের ট্রাঞ্জিষ্টরে প্রবাহিত হতে থাকে। ডানের ক্যাপাসিটর ইত্যাবসরে ওপেন সার্কিটে চার্জ হতে থাকে। কিন্ত চার্জ হতে থাকলে সেও আগের মতো করে বাম পাশের ট্রাঞ্জিষ্টারকে নির্দিষ্ট সময় পর (0.69RT সেকেন্ড পরে)অফ করে দেয়। এই ভাবে তৃতীয়, চতুর্থ ….. চলতেই থাকে যতক্ষন সার্কিটে বিদ্যুৎ প্রবাহ থাকে।

এখন এক্যটা লেড কতক্ষন জ্বলে ? এটি নির্ভর করে RC টাইম কনষ্ট্যান্টের উপর। যেমন পরিক্ষায় দেখা যায় এক একটা ট্রাঞ্জিষ্টর 0.69xRC সেকেণ্ড পরে অফ হয়ে যায়। তাহলে যদি ট্রাঞ্জিষ্টার অন-অফ টাইমিংকে এভাবে লেখা যায়ঃ

t1 = 0.69xRC (বামের ট্রাঞ্জিষ্টর)

t2 = 0.69xRC (ডানের ট্রাঞ্জিষ্টর)

এখন দুই টাঞ্জিষ্টর মিলে যে অফ-অন হয় একে পুর্ন একটা চক্র ধরলে পূর্ন টাইমিং সমীকরন নিচের মত হয়ঃ

T = t1+t2 = 1.38 RC

চিত্রানুসারে আমাদের ক্যাপাসিটর আর রেসিষ্টরের মান বসালে আমাদের টাইমিং আসে

T = 1.38 X (100×10^3) X (10 x10 ^ -6)
= 1.38 সেকেন্ড

আমরা জানি হার্জে ফ্রিকোয়েন্সি f= 1/T = 1/1.38= 0.72 হার্জ।

এখানে আমরা ধরে নিয়েছি t1 = t2, যেহেতু দুই জোড়া R,C অনুরূপ। কিন্তু তা যে হতেই হবে এমন নয়। আমরা ভিন্ন ভিন্ন মানের R, C নিলে t1 ও t2। ভিন্ন হবে। নিচের চিত্র উপরের অংশে t1 = t2 দিয়ে পালস দেখানো হয়েছে। নিচের অংশে t2>t1 দিয়ে দেখানো হয়েছে।
যেহেতু ১ হার্জ মানে সেকেন্ডে একবার পালস তৈরী হওয়া, তাই উপযুক্ত RC নির্বাচনে আমরা হয়তো ১ হার্জের একটা পালস তৈরী করে একটা ডিজিটাল ঘড়ির কাছাকাছি পালস তৈরি করতে পারব ( এক্সাক্ট ১ হার্জ পালস বেশ কঠিন কাজ)। আবার আমরা যদি ৫০ হার্জের একটা পালস তৈরী করতে পারি তবে হয়তো একটা ইনভার্টারও বানানো যায় যা দিয়ে বাসাবাড়ির এসি তৈরী করা সম্ভব।

৫৫৫ আইসি দিয়ে লেড ফ্লাশারঃ

নিচে ৫৫৫ আইসি আর ক্যাপাসিটর দিয়ে সহজে কিভাবে দুইটি লেড অল্টারনেটিভ ভাবে ফ্ল্যাশ করানো যায় তাই দেখানো হয়েছে। এখানে আমরা ভ্যারিয়েবল ১০০ কে রেসিষ্টর ব্যাবহার করেছি যাতে আমরা এর মান পরিবর্তন করে বা টাইম কনষ্টান্ট পরিবর্তন করে ফ্লাশের টাইমিং পরিবর্তন করতে পারি।

555 flasher
৫৫৫ আইসি কে কেন টাইমার আইসি বলা হয় সম্ভবত এখান থেকে তোমরা বুঝতে পারবে। ক্যাপাসিটর ও রেসিষ্টরের সাহায্যে এই আইসি দিয়ে টাইমিং পালস তৈরী করা যায়। সাধারনত এই পালস গুলি স্কয়ার ওয়েভ (অন-অফ-অন-অফ) হয়। তবে একটি মডিফাই করলেই আমরা সাইন ওয়েভ, স-টুথ ওয়েভ তৈরী করতে পারি। আসলে এই সিম্পল ফ্লাশিং ছাড়াও বুদ্ধি খাটিয়ে আরো কিছু কম্পোনেন্টের (ডিজিটাল/এনালগ) সহায়তায় অনেক জটিল জটিল ফ্লাশিং বা টাইমিং তৈরি করা যায়। নেটে এধরনের প্রচুর উদাহরন পাবে।

ইউটিউবে গেলে এই ৫৫৫ আইসি দিয়ে প্রচুর ফ্লাশিং লেডের উদাহরন দেখতে পাবে।

যেমন এখানেঃ https://www.youtube.com/watch?v=gYnd_nMi39g

3 মন্তব্য

  1. I’m planning to make an inverter with two transistor system you mentioned above. What will be the graph shape of the oscillator made with transistor? is it square or something near to square?
    Thanks

উত্তর প্রদান

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন