ছোটদের উপযোগী বিজ্ঞান – ২

0
830
ছোটদের জন্য বিজ্ঞান ও আবিস্কার
ছোটদের জন্য বিজ্ঞান ও আবিস্কার

আমরা এখন জানি আবিস্কার কি, উদ্ভাবন কি এবং সামনে আগাবার জন্য আমাদের করণীয় সম্পর্কে যা হলো প্রশ্ন করবার ক্ষমতা বা ইচ্ছা। তোমরা তোমার চারপাশে অনেক কিছু দেখো, শুনো, অনুভব করো। এই দেখা, শুনতে পারা বা অনুভুতির বিষয়গুলো কি সেটা নিয়ে প্রশ্ন করা যায়। এই প্রশ্নগুলো সহজ হতে অনেক কঠিন হতে পারে। সব সময় এর উত্তর পেতেও পারো বা নাও পেতে পারো। এই উত্তর পাওয়া বা না পাওয়া নির্ভর করবে আমাদের পুর্বপুরুষ কতটা প্রশ্ন করতে পেরেছিল তুমি আজ যা নিয়ে প্রশ্ন করছো তার উপর এবং সেই সাথে এই প্রশ্নগুলোর সমাধানের জন্য তাঁরা কতটুকু কাজ করেছিল।

বিজ্ঞান হলো প্রমাণ করা বিষয়। যে জিনিস বা বিষয় প্রমাণিত নয় তা বিজ্ঞান না জানবে। বিজ্ঞানের নানান সুত্র বা নিয়ম হয়তো অনেক বিষয়ের সাথে থাকবে কিন্তু ঐ বিষয়টি যখন সম্পুর্ণ রূপে প্রমাণিত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত তা বিজ্ঞান নয়। বিজ্ঞানের শুরুটা হয় প্রশ্ন থেকে। এর পর এই প্রশ্নের সমাধানের জন্য তোমাকে ধারণা করতে হবে এর সম্ভাব্য সমাধান কি কি হতে পারে তা। এই ধারনা করাকে গবেষণার ভাষায় বলে হাইপোথিসিস। এখন তোমার এই ধারনাকে প্রতিষ্ঠিত করতে তুমি কিভাবে প্রমাণ করবার জন্য কাজ করবে তা ঠিক করাটাই বিজ্ঞানের ভাষায় থিসিস। থিসিসে থাকবে তোমার উদ্দেশ্য যা আসলে তুমি কি প্রমাণ করতে চাও তার বর্ণণা। এর পর থাকবে কিভাবে কাজ করবে তার বর্ণণা। এটাকে বলে কার্যপদ্ধতি বা মেথোডোলজী। এর পর পরীক্ষা ও তার ফলাফল। ফলাফল সবসময় ইতিবাচক হবে তথা তুমি যা ভেবে কাজ করেছো তা হবে এমন হবে না। ফলাফল নেগেটিভও আসতে পারে। সেই ফলাফল থেকেও শেখা সম্ভব কেনো হলো না বা তোমার কার্যপদ্ধতি বা চিন্তাতে ভুল কি ছিল। এখানেও আবার সেই প্রশ্নই আসবে। আবার ফলাফল আসলে তা একটা নিয়মে পরিণত হবে যা তোমার চিন্তাকে বিজ্ঞানে পরিণত করবে।

একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টা সহজ বোধ্য হবে – ধরো তোমার হাতে একটা মার্বেল আছে। এখন এই মার্বেল টা তোমার হাতেই আছে। তুমি ছুড়ে দিলে এই মার্বেলটা দুরে যায়। ছুড়ে দিলে মার্বেলটা কেনো দুরে যাচ্ছে ? এটা কিন্তু একটা ভালো প্রশ্ন। তুমি ভাবলে এটা কেনো হয় তা তুমি প্রমাণ করবে বা জানবে এখানে শক্তি টা কি আছে। এখন ধরে নাও বা চিন্তা করো একটি শক্তি কাজ করছে এর পিছনে। এই ক্ষেত্রে আমাদের উদ্দেশ্য হলো মার্বেলটি কেনো দুরে চলে যায় ছুড়ে দিলে এটা জানা। কাজের পদ্ধতি হিসাবে আমরা বেছে নিতে পারি মার্বেল, একটা টেবিল এবং একটা তোমার হাত। টেবিলে মার্বেলটি রেখে দাও সমান করে দেখবা মার্বেলটি স্থির হয়ে আছে। এবার হাতের সাহায্যে আলতো করে টোকা দিলে দেখবে মার্বেলটি দুরে যাচ্ছে। যত জোরে টোকা দিবে মার্বেলটিতে ততজোড়ে তা সামনে যাবে। এখানে মার্বেলটিকে টোকা দেবার শক্তির সাথে সাথে মার্বেলটির সামনে যাবার গতি বাড়বে। আবার টোকা না দিলে মার্বেলটি  সমান জায়গাতে স্থির থাকবে। তাহরে আমরা ফলাফল পেলাম – মার্বেলটি সমান জায়গাতে থাকরে এবং তাকে কোন প্রকার বল প্রয়োগ না করলে স্থির থাকে, মার্বেলটিকে যত জোরে টোকা দেওয়া যায় তথা মার্বেলটির পেছনে যত জোরে বল প্রয়োগ করা যায় মার্বেলটি ততজোরে সামনে যায়। তার মানে হলো একটি স্থির বস্তু স্থির থাকে যতক্ষণ না তার উপর বল প্রয়োগ না করা হয়।

উপরে যা বলা হলো এটার মুল সূত্র আবিস্কার করেছেন মহান বিজ্ঞানী নিউটন। তোমরা নিউটনের নাম নিশ্চয়ই শুনেছো। ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী এই মহান বিজ্ঞানী বস্তু ও বল এর সম্পর্ক নিয়ে তিনটি সূত্র দিয়েছেন তার পরীক্ষালব্ধ ফলাফল থেকে। এই সূত্র তিনটি নিউটনের বল বিষয়ক তিনটি সূত্র নামে পরিচিত। আজকে যে বিমান আকাশে উড়ে, রকেট মহাকাশে যায়, বিভিন্ন যন্ত্র কাজ করে তার পিছনে এই সূত্র তিনটির অনেক অবদান। এই সুত্রকে কাজে লাগিয়েই পরবর্তীতে উদ্বাবকরা বিভিন্ন যন্ত্র তৈরী করেছে।

আমরা বিজ্ঞান কিভাবে কাজ করে এবং বিজ্ঞান আসলে কি জানলাম। তোমাদের বিভ্রান্ত করতে বা ভুল শেখাতে চারপাশে দেখবে নানান আয়োজন। যা প্রমাণিত নয় তা বিজ্ঞান নয়। তোমাদের বই দেখবে সামাজিক বিজ্ঞান নামে। এটাও একটা ভুল। সমাজ বিজ্ঞানের অংশ কিন্তু তা বিজ্ঞান নয় কোন ভাবেই জানবে। কারণ সমাজের, পরিবারের সব কিছু একভাবে কাজ করে না। একটু হরেও ভিন্নতা থাকে। যেমন ধরো তুমার বাবা, মা, তুমি, তোমার ভাই বোনেরা একই সমাজের হলেও একই রকম চিন্তা করে না, একই রকম পছন্দ করে না, একই রকম খাবার পছন্দ করে না। কিছু কিছু মিল থাকতে পারে তবে বিজ্হান হতে গ্যালে লাগবে ১০০% মিল। যতবারই তুমি কোন বিষয়কে পরীক্ষা করো বিজ্ঞানে ততবারই একই ফলাফল আসবে। সমাজ বিজ্ঞানে তেমন হবে না কখনও কারণ মানুষ বা পশু পাখি মেশিন না। এখানে ভৌত বা বস্তির নিয়ম খাটবে না। কারণ মানুষ এবং পশুর তথা জীবের আছে ব্রেইন বা মগজ নামক একটি বস্তু। বস্তুর জন্য প্রযোজ্য অনেক কিছুই তাই জীবের জন্য সঠিক হলেও ১০০ভাগ সঠিক হবে না প্রতিটি জীবের জন্য। আবার জীবের জন্য বিজ্ঞানের সুত্র বা কিছু নিয়ম কানুন প্রযোয্য হলেও সেটা নিজে বিজ্ঞান হবে না।

টাকা পয়সার হিসাব সবার জন্য সমান তাই না। এখন আবার ভেবে দেখো সবার চাহিদা কি সমান টাকা পয়সার? সবার কি টাকা হারালে এক রকম লাগে? সবার কি দামী দামী পোশাক পছন্দ? মোটেও তা না। টাকা পয়সার হিসাব কিন্তু আবার সবার জন্য সমান। চাহিদা যাই থাকুক ১০ টাকার নোট সবার জন্য সমান। সবাই দুটো পাঁচ টাকাকে অংকের মাধ্যমেই বলবে ১০ টাকা মোট। তাই বিজ্ঞানের অনেক কিছুই সমাজে তাকলেও সমাজ আসলে বিজ্ঞান নয়। সমাজ শুধু ধারনা করেই চলে এবং সেটা সবসময় ধারণামতো কাজ করে না।

আরেকটা উদাহরণ দেই – যেমন ধরো ঈদে বা পুজোতে বা বৈশাখীতে তোমার জন্য তোমার মা জামা কিনে আনলে কি সবসময় তোমার পছন্দ হবে? হবে না এটাই স্বাভাবিক, তোমার বয়স বারবার সাথে সাথে তোমার নিজস্ব পছন্দ হবে যা তোমার মা নাও জানতে পারে। এখানে তোমার মা এর ধারণা তোমার পছন্দ সম্পর্কে সব সময় সত্য হবে না তবে আবার কখনও কখনও সঠিক হবে। এটাই ধারণা করা – এভাবেই আমরা জানবো সমাজ বিজ্ঞান আসলে বিজ্ঞান নয়। সমাজে শুধু মাত্র বিজ্ঞানের কিছু কিছু সুত্র ব্যবহার করা যায়, প্রশ্ন করে বিভিন্ন বিষয়ে তার সম্পর্কে ধারণা করা যায় তবে শতভাগ প্রমাণ করা যায় না। যা শতভাগ প্রমাণিত নয় তা বিজ্ঞান নয়।

উত্তর প্রদান

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন