মাইক্রোওয়েভ ওভেন কিভাবে কাজ করে

0
1780
মাইক্রোওয়েভ ওভেন কিভাবে কাজ করে
মাইক্রোওয়েভ ওভেন কিভাবে কাজ করে

খাবার গরম না করে অনেকে আমরা খেতে পারিনা৷ আবার ঠান্ডা পিজ্জা, বার্গার জাতীয় ফাস্টফুড গুলো গরম না করলে খাওয়াই যায়না ঠিকমত৷ এই রকম আগে থেকে তৈরী জিনিস গুলো খাওয়ার সময় গরম করা ছাড়াও অনেক খাবার তৈরী করতে প্রায়ই ব্যবহার করাহয় মাইক্রোওয়েভ ওভেন ৷ মাইক্রোওয়েভ ওভেন এ আসলে মাইক্রোওয়েভ (রেডিও ওয়েভের অতি ক্ষুদ্র কম্পাঙ্ক) দিয়ে রান্না করা হয় ৷ মাইক্রোওয়েভের মাধ্যমে রান্না করার ধারনা প্রথম নিয়ে আসেন Percy Spencer৷ উনি হঠাৎ করেই এই আইডিয়াটা পেয়েছিলেন। এটা একটা মজার ঘটনা যেটা পোস্টের শেষেই বলবো। তার আগে আসুন জেনে নেই মাইক্রোওয়েভ ওভেন দিয়ে রান্না করার পিছনে আসলে পদার্থ বিজ্ঞানের কোন নীতিটা কাজে করে৷

আমরা পদার্থ বিজ্ঞান থেকে জানি- কোনো বস্তুর তাপমাত্রা বাড়ালে এর আভ্যন্তরিন শক্তি বৃদ্ধিপায় এবং এর ভিতরের অণুগুলো আগের থেকে অধিক হারে কাঁপতে থাকে৷ আবার যদি এর তাপমাত্রা কমানো হয় তাহলে এর আভ্যন্তরীন শক্তি কমেযায়। ফলে অণুর কম্পনের হার আগের থেকে কমে যায় ৷

এখান থেকে আমরা বুঝতে পারছি যে, বস্তুর তাপমাত্রা নির্ভর করে বস্তু গুলার মধ্যস্থিত অণুগুলো কি হারে ছোটাছুটি করছে বা কাঁপছে৷ অর্থাৎ, যদি কোনভাবে একখন্ড বস্তুর অণুগুলোকে আগের থেকে বেশি হারে কাঁপানো যায় তবে এর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে৷

আর ঠিক এই কাজটি করেই মাইক্রোওয়েভ ওভেনে খাদ্যবস্তুর তাপমাত্রা বাড়ানো হয় বা গরম করা হয়৷ এবং খাদ্য বস্তুগুলোর অনুগুলোকে বাইরে থেকে বেশি হারে কাঁপানোর জন্য এখানে সাধারণত ব্যবহার করা হয় 4.7″ তরঙ্গ দৈর্ঘ্য এর বেতার তরঙ্গ৷

১০ মিলিমিটার থেকে ৩০ সেন্টিমিটার বেতার তরঙ্গ বা রেডিও ওয়েভকে মাইক্রোওয়েভ বলে৷ আমার আগের পোস্টে বলেছিলাম রেডিও ওয়েভ আসলে কি এবং এটা কিভাবে তৈরী করা যায়৷ আমি আরো বলেছিলাম রেডিও ওয়েভ বিভিন্ন ভাবে তৈরী করা যায় এবং একটা প্রক্রিয়ার কথাও বলেছিলাম যেখানে LC ট্যাংক সার্কিট এর মাধ্যমে রেডিও ওয়েভ তৈরী করার কথা বলা হয়েছিলো৷

কিন্তু মাইক্রোওয়েভ ওভেনে ঐ প্রক্রিয়ায় রেডিও ওয়েভ তৈরী করা হয়না। এখানে মাইক্রোওয়েভ তৈরী করতে যে জিনিসটা ব্যবহার করা হয় সেটার নাম ম্যাগনেট্রন (Magnetron)৷ নিচের চিত্রে আমরা ওভেনে ব্যবহৃত ম্যগনেট্রনের চিত্র দেখতে পাচ্ছি-

মাইক্রোওয়েভ ওভেনে ব্যবহৃত ম্যগনেট্রন
মাইক্রোওয়েভ ওভেনে ব্যবহৃত ম্যগনেট্রন

ম্যাগনেট্রন দুটি জিনিসের সমন্বয়ে তৈরী। একটা ঘুর্নায়মান চৌম্বক বা ড্রাম আর একটা হাইভোল্টেজ শক ওয়েভ ইনডাকশন কয়েল ৷

আগের পোস্টে আমরা জেনেছি- একটা চুম্বকক্ষেত্র এবং একটা তরিৎ ক্ষেত্রের মধ্যবর্তি আপেক্ষিক গতির সৃষ্টি হলে রেডিও ওয়েভ তৈরী হয়৷ এবং এও জেনেছি যে, একটা গতিশীল চৌম্বক তরিৎ ক্ষেত্র তৈরী করে৷

এখানে, ওভেনের ঐ ম্যাগনেট্রন ঘুর্নায়মান চৌম্বকটিই তরিৎ ক্ষেত্র হিসাবে কাজ করে, এবং ইন্ডাকশান কয়েলটি চৌম্বক ক্ষেত্র হিসাবে কাজ করে৷ যেখানে ইনডাকশন কয়েলের ম্যাগনেটিক ফিল্ডের দিক পরিবর্তন করা হয় এটাকে হাইভোল্টেজ শক ওয়েভ দ্বারা চালনা করে৷

ম্যগনেট্রনের মাধ্যমে মাইক্রোওয়েভ তৈরীর প্রকৃয়া
ম্যগনেট্রনের মাধ্যমে মাইক্রোওয়েভ তৈরীর প্রকৃয়া

এদের মধ্যবর্তি এই ক্রিয়ার ফলে উচ্চ শক্তির রেডিও ওয়েভ তৈরী হয়৷ এবং ইনডাকশন কয়েলের শক ওয়েভ ফ্রিকোয়েন্সি এবং চৌম্বকের ঘুর্নন এমন ভাবে সমন্বয় করা হয় যেটা সাধারনত উপরিউক্ত তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের মাইক্রো ওয়েভ তৈরী করে৷ তবে ওভেনের ক্ষেত্রে এই তরঙ্গ দৈর্ঘটি হয় সাধারণত ৪.৭ ইঞ্চি বা ২.৫ গিগাহার্জের আশেপাশে।

প্রসঙ্গক্রমে বলছি, আধুনিক কালে বহুল ব্যবহৃত রাডার (RADAR) প্রযুক্তিতেও ম্যগনেট্রন ব্যবহার করাহয়। যদিও ছোটখাটো অনেক রাডার আছে যা ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বনে করা হয় কিন্তু শক্তিশালী সব রাডার প্রযুক্তিতে ম্যগনেট্রনের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য।

মজার ব্যাপার হলো, সাধারনত মাইক্রোওয়েভ ওভেনে 4.7″ তরঙ্গ দৈর্ঘ্যে ব্যবহারের পিছনে আরও আরেকটা কারন আছে৷ কারনটা হল, এই তরঙ্গ দৈর্ঘ্য সাধারনত আঁশ জাতীয় জিনিসের ভিতর দিয়ে সহজে যেতে পারে এবং যাওয়ার সময় আঁশ জাতীয় অণুগুলা কে কাঁপাতে পার৷ আর ঠিক এ কারনে 4.7″ বা এর কাছাকাছি তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের ওয়েভ কে মাইক্রো ওয়েভ ওভেনের জন্য বেছে নেওয়া হয়, অণুগুলোকে কাঁপিয়ে বস্তুটিকে গরম করার জন্যে৷

কথা ছিলো Spencer সাহবের আবিষ্কার এর পিছনে মজার ঘটনাটা বলার৷

স্পেনসার সাহেবের একটা ছোট মেয়েছিলো। যথারিতি মেয়েটার চকলেট খাওয়ার বাতিক ছিলো৷ তিনি সে সময় কাজ করতেন কোন একটি প্রতিষ্ঠানের ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে। তো কাজ থেকে বাসায় যাওয়ার আগে উনার মেয়ের জন্যে চকলেট নিয়ে যাওয়া চাই-ই-চাই। কিন্তু মাঝেমাঝে ভুলে যেতেন৷

তাই একদিন উনি আগে থেকেই চকলেট কিনে প্যান্টের পকেটে নিয়ে কাজ করছিলেন একটি নতুন প্রযুক্তির জেনারেটরের উপরে৷ কাজ শেষে বাসায় ফিরে যেইনা চকলেট মেয়েকে দিয়েছেন অমনি মেয়ে দিলো কান্না করে৷ কারন, চকলেটটি গলে গিয়ে অন্য আকৃতির কোন বস্তুতে রূপান্তর হয়েছিলো স্পেনসার সাহেব খোঁজা শুরু করলেন এমন হওয়ার কারন কি- যার ফলশ্রুতিই আজকের এই মাইক্রোওয়েভ ওভেন৷ কারনটা যে কি ছিলো আপনারা এতক্ষণে নিশ্চই বুঝতে পারছেন। কারন সবই উপরে ব্যাখা করা হয়েছে 🙂

বি.দ্রঃ যে সব জিনিসে আয়রনের পরিমাণ বেশি থাকে সেগুলো মাইক্রোওয়েভ ওভেনে রান্না করতে যাবেন না৷ যেমন মূলা, গাজর, কচু, বেগুন। কারণ, মাইক্রোওয়েভ আয়রনের আয়নকে খুব দ্রুত কাঁপাতে পারে। যার ফলে ঐ জিনিস গুলো রান্না হওয়ার বদলে ভিতর থেকে দ্রুত গরম হয়ে আগুন লেগে যেতে পারে৷

ভালো থাকবেন, আজকে এ পর্যন্তই।

উত্তর প্রদান

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন