টিউব লাইট এর বৈজ্ঞানিক কর্ম পদ্ধতি
টিউব লাইট এর বৈজ্ঞানিক কর্ম পদ্ধতি

ভূমিকাঃ

টিউব লাইট বা ফ্লুরোসেন্ট বাতি এখন বহুল জনপ্রিয়। সেই সাথে এনার্জি সেভিং লাইট, স্টার্টার, ব্যালাস্ট ও অহরহই আমাদের চোখে পড়ে। এটি আসলে মারকারি ভ্যাপার ল্যাম্প (Mercury vapor lamp) এর সহোদর ভাই যা গ্যাস ডিসচার্জ প্রযুক্তিতে চালিত হয়। কিন্তু আমরা অনেকেই এর বৈজ্ঞানিক কর্ম পদ্ধতি সম্পর্কে জানিনা। চলুন আলোচনার মাধ্যমে কিছু ধারনা নেয়া যাক। এই আলোচনার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারবো কি করে এই সাদা রঙের বাতিটি এতো উজ্জ্বল আলো প্রদর্শন করে। আরো জানবো এই বাল্ব কেন আমাদের সাধারন ইনক্যান্ডসেনট (incandescent) বাল্বের তুলোনায় বেশি উপযোগী। এছাড়াও এতে আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ সম্পর্কেও জানবো। সাথে আরো জানবো টিউবলাইটে ব্যবহৃত স্টার্টার সুইচ, ব্যালাস্ট সম্পর্কে। এদের সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে। অধুনা বহুল ব্যবহৃত এনার্জি বাল্বে টিউবলাইটের ব্যবহার, এলইডি টিউব এবং এদের সুবিধা অসুবিধা নিয়েও টুকটাক আলোচনা করবো। চলুন তাহলে যাত্রা হোক শুরু।

পরিচ্ছেদসমূহ

আলোর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাঃ

আলো কি?

আলোর উৎস সম্পর্কে জানার আগে চলুন আলো সম্পর্কে কিছু জেনে নেয়া যাক। স্বাভাবিক ভাবে বলা যায় যে আলো এক প্রকার শক্তি। যার মূল উৎস পরমাণুর ভেতরে ইলেকট্রন নামক একটি ক্ষুদ্র কনিকার নড়াচড়া। অবশ্য আলো কেও অতি ক্ষুদ্র এক ধরণের গতিশীল কণিকা ধরা হয় যার শক্তি ও ভরবেগ আছে কিন্তু ভর নেই। একেক বর্ণের বা রং এর আলোর জন্য এই সব আলোর কণিকা এক একটি গুচ্ছ আকারে আসে। এইসব ক্ষুদ্র কণিকা কে ফোটন (photon) নামে ডাকা হয়। মূলত এই ফোটনই আলো তৈরি হবার পেছনে দায়ী।

ইলেকট্রন ও ফোটনঃ

একটি পরমাণু থেকে তখনি ফোটন নির্গত হয় যখন এর ভিতরে ইলেকট্রন গুলো উত্তেজিত হয়। এই ইলেকট্রন গুলো পরমাণুর ভিতরে নিউক্লিয়াস এর চারিদিকে ঘোরে। ইলেকট্রন এর এই ঘুর্ণন একটি নির্দিষ্ট বৃত্তাকার পথে হয়। এই বৃত্তাকার পথ কে orbital বলে। ইলেকট্রন গুলো মূলত negative charge যুক্ত আর কেন্দ্রের নিউক্লিয়াস এ যে প্রোটন আর নিউট্রন আছে তা positive charge যুক্ত হয়। যেহেতু বিপরীত চার্জ পরস্পর কে আকর্ষণ করে তাই ইলেকট্রন, নিউক্লিয়াস কে কেন্দ্র করে ঘোরে। এই আকর্ষন বল কে বলা হয় electrostatic force বা স্থিরতাড়িত শক্তি.

ইলেকট্রনের শক্তি গ্রহণ ও নিষ্ক্রমনঃ

Orbital গুলো যত শক্তি সম্পন্ন হয় এগুলো নিউক্লিয়াস থেকে ততো দূরে থাকে। ইলেকট্রন গুলো যখন বাইরে থেকে শক্তি গ্রহণ করে তখন এটি নিজের orbital ছেড়ে আরো বেশি শক্তি সম্পন্ন অরবিটাল এ যেতে পারে। আবার যখন এটি শক্তি নির্গত করে তখন এটি কম শক্তি সম্পন্ন orbital এ আসে। এই শক্তি মূলত তাড়িতচৌম্বক তরঙ্গ (electromagnetic wave) আকারে নির্গত হয়। এই তরঙ্গের বিভিন্ন ধরনের wavelength এর জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের শক্তি পাই। এই wavelength বা তরঙ্গ দৈর্ঘ্য নির্দিষ্ট একটি সীমার মধ্যে হলে একে আলো বলে। বাকি তরঙ্গ দৈর্ঘ্য এর শক্তি গুলো আমাদের কাছে দৃশ্যমান না। বাকি অদৃশ্যমান শক্তি শুধু আমরা অনুভব করি।

ইলেকট্রনের উত্তেজনাঃ

ফোটন বিচ্ছুরণ পদ্ধতি
ফোটন বিচ্ছুরণ পদ্ধতি

কোন পদার্থের মধ্যে পরমাণু যখন সংঘর্ষে লিপ্ত হয় তখন electron গুলো উত্তেজিত হয়ে যায় অর্থাৎ কিনা শক্তি প্রাপ্ত হয়। তখন এগুলো নিজের orbital ছেড়ে বেশি শক্তি সম্পন্ন orbital এ যায় কিন্তু electron এর ঘূর্ণন নির্দিষ্ট ছকে বাঁধা। তাই একে আবার আগের শক্তি স্তরে ফিরে আসতে হয়। এসময় এটি আবার শক্তি বিকিরণ করে। এই শক্তির তরঙ্গ দৈর্ঘ্য (wavelength) এর ওপর নির্ভর আমরা কোন ধরণের শক্তি পাব। এই তরঙ্গ দৈর্ঘ্য নির্দিষ্ঠ সীমার মধ্যে হলে আমরা তাকে দৃশ্যমান আলো বলি। ডানপেশের চিত্রটি দেখলে আশাকরি বুঝতে কিছুটা সুবিধে হবে। প্রয়োজনে ছবিতে ক্লিক করে দেখুন-

আলো কি তরঙ্গ না কণা?

একটা confusion দূর করা দরকার। একটু আগে আমরা জেনেছি আলো একধরণের কণিকা যার নাম photon. আবার এর পরেই শুনছি আলো আসলে তরঙ্গ। প্রকৃত অর্থে আলো দুইরূপ আচরণই করতে পারে। এ বিষয়ে বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন রকম তাত্ত্বিক বিশ্লেষন আছে। সে গভীরতায় না গিয়ে আমাদের আলোচনার সুবিধার জন্য আমরা ধরে নিচ্ছি ফোটন এক ধরনের কণা, যা কিনা তরঙ্গ আকারে প্রবাহিত হয়। তবে সুপ্রিয় পাঠক মনে রাখবেন যে এটি শুধুমাত্র বুঝবার সুবিদার্থে উল্লেখ করা, এর বৈজ্ঞানিক কোন ভিত্তি নেই।

আলোর রং কিভাবে হয়?

নির্গত আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের উপর নির্ভর করে কতটুকু শক্তি বিকির্ণ হয়েছে তার ওপর। আবার বিকির্ণ শক্তির পরিমাণ নির্ভর করে electron এর নির্দিষ্ট অবস্থান এর ওপর। বিভিন্ন পরমাণুর ক্ষেত্রে electron এর অবস্থান বিভিন্ন হয়। তাই একেক রকম পরমাণু একেক ধরনের আলো বা শক্তি ত্যাগ করবে। আলোর রঙ ও এর ওপর নির্ভর করে। অন্য কথায়, আমরা বিভিন্ন মৌলের পরমাণু কে উত্তেজিত করে বিভিন্ন রং এর আলো পেতে পারি। উদাহরণ হিসাবে এলইডি এর কথা ধরা যায়। এই এলইডি এর রং বিভিন্ন রকম হতে পারে এবং প্রতিটি ভিন্ন রং এর এলইডি এর পূর্ণ প্রজ্জ্বলন ভোল্টেজ ও ভিন্ন ভিন্ন।

নিচের চিত্রে আমাদের দৃশ্যমান আলোক বর্ণালীর সারণি তুলে ধরা হলো। এখানে দেখা যাচ্ছে যে আলোক তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ছোট হয়ে একদম অতিবেগুনি রশ্মির নিকট ঠেকেছে। একই ভাবে তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বড় হয়ে লাল আলোর উপরে চলে গেছে। এই উভয় সীমার আগে ও পরে আমরা মানুষেরা দেখতে পাই না। কিন্তু এখানে উল্লেখ থাকে যে কিছু কিছু প্রাণী অতিবেগুনি রশ্মি ও অবলোহিত রশ্মি তাদের চোখ দিয়ে দেখতে পায়। যেমন পতঙ্গ অতিবেগুনি রশ্মি দেখতে পায়। আবার  যাযাবর গোত্রিয় হাঁস ম্যাগনেটিক নর্থ দেখতে পারে।

দৃশ্যমান আলোক বর্ণালি
দৃশ্যমান আলোক বর্ণালি

এটিই মূলত আলো ও আলোক বর্ণালি উৎপন্ন হবার মূল কৌশল।

টিউব লাইট কে আবিষ্কার করেছিলেন?

একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সামনে এগুনো ঠিক হবেনা। সেটি হলো টিউবলাইটের আবিষ্কারক কে?

আসলে টিউবলাইট বা ফ্লুরোসেন্ট লাইট সরাসরি আবিষ্কার হয়নি। প্রথমে আবিষ্কৃত হয় মারকারি ভ্যাপার ল্যাম্প যার জনক পিটার কুপার হিউইট (Peter Cooper Hewitt) ১৯০১ সালে। কিন্তু তার মধ্যে ফ্লুরোসেন্ট পদার্থটি ছিল না। যারফলে তখনকার মারকারি ভ্যাপার ল্যাম্প গুলো সবুজাভ আলো বিকিরণ করতো। সেসময় এই মারকারি ল্যাম্প কে ভিন্নকাজে ব্যবহৃত হতো। তার আগে নিকোলা টেসলাটমাস আলভা এডিসন এ নিয়ে কিছু গবেষনা করেছিলেন। কিন্তু তাদের সে গবেষণা বাণিজ্যিক সাফল্য আনতে পারেনি। এছাড়াও আরো অনেক গবেষক লুমিনিসেন্সফ্লুরোসেন্স নিয়ে গবেষণা করেছেন যা ধারাবাহিক ভাবে টিউবলাইট এর উন্নতি সাধনে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিল।

আবিষ্কারক পিটার কুপার হিউইট ও তাঁর আবিষ্কৃত মারকারি ভ্যাপার ল্যাম্প
আবিষ্কারক পিটার কুপার হিউইট ও তাঁর আবিষ্কৃত মারকারি ভ্যাপার ল্যাম্প

ফ্লুরোসেন্ট বাল্ব ও সাধারণ বাল্বের মূল পার্থক্য

সাধারণ incandescent বাল্বের সাথে ফ্লুরোসেন্ট বাল্ব (যাকে আমরা টিউবলাইট বলি) এর পার্থক্য হল- পরমানু কে সক্রিয় বা উত্তেজিত করার প্রসেস এর মধ্যে। সাধারন বাল্ব গুলোতে পরমাণু কে সক্রিয় করা হয় উত্তপ্ত করার মাধ্যমে। আর ফ্লুরোসেন্ট বাল্বে এই কাজটি করা হয় তড়িত রাসায়নিক ক্রিয়ার মাধ্যমে। অবশ্য এই প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল এবং বিস্তৃত যা আমাদের এই আলোচনার মধ্যে কিছুটা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবো।

টিউব লাইট সিস্টেম এর উপাদান সমূহ

টিউব লাইট এর গাঠনিক উপাদান হল একটি বায়ুরোধী কাঁচনল যাকে কমন ভাবে বলে সীলড গ্লাস টিউব (SEALED glass tube)। এই টিউব টি বায়ুরোধী। টিউবের মধ্যে থাকে সামান্য পরিমাণ মারকারি (পারদ)। আরো থাকে একটি নিষ্ক্রিয় গ্যাস (সাধারণত Argon). এই টিউব টির ভিতর দিক দিয়ে ফসফরাস এর আবরন দেয়া থাকে। এজন্য একে সাদা দেখায়। টিউবের দুই প্রান্তে থাকে দুইটি ইলেকট্রোড (electrode) যা এর মধ্যে তড়িৎক্ষেত্র সৃষ্টি করতে পারে। এই electrode দুটো আবার একটি electrical circuit এর সাথে সংযুক্ত থাকে। ইলেকট্রিক্যাল এই সার্কিটে সাধারণত থাকে স্টার্টার সুইচব্যালাস্ট। এই সার্কিট যুক্ত থাকে আমাদের AC সাপ্লাই এর সাথে। নিচের চিত্রটি দেখলে আমরা কিছু ধারণা লাভ করতে পারবো-

টিউবলাইট সিস্টেমের বিভিন্ন অংশ
টিউবলাইট সিস্টেমের বিভিন্ন অংশ

এটি ম্যাগনেটিক ব্যালাস্ট সম্বলিত পুরানো সিস্টেম। আধুনিক ও উন্নত সিস্টেমে এটি কিছুটা আলাদা তবে মূল অংশ একই। নিচে পর্যায়ক্রমে বর্ণিত হচ্ছে।

চলুন সুইচ অন করি

যখন আমরা টিউবলাইট এর সুইচ on করি তখন শুরুহয় টিউব এর মাঝে electron এর খেলা। টিউব এর দুই পাশের electrode এ একটি এমন একটি মাত্রার voltage দেয়া হয় (আসলে potential difference) যার ফলে টিউবের ইনার্ট গ্যাসের মধ্য দিয়ে electron প্রবাহিত হয়।

আসলে সুইচ on-off কমার্শিয়াল শব্দ। বিজ্ঞান এর ভাষায় এটি হবে switch open এবং switch closed. Switch open থাকার অর্থ circuit টি open বা মুক্ত। অর্থাৎ current flow হবে না। closed switch হল এর উল্টোটি।

Electron গুলো এখানে কোনো মাধ্যম ছাড়াই বিভব পার্থক্যের কারনে মুক্ত ভাবে প্রবাহিত হয়। এর ফলে টিউবের ভিতরে কিছু পারদ বাষ্প হয়ে যায় (electron গুলো পারদ কে আঘাত করে ফলে শক্তি নির্গত হয়, এবং এটি মারকারি কে বাষ্পে পরিনিত করে)। এই প্রক্রিয়ায় যখন electron প্রবাহিত হতে থাকে তখন এগুলো পারদ বাষ্প এর সাথে সংঘর্ষ ঘটায়। এর ফলে পারদ পরমাণু গুলো উত্তেজিত হয়। ফলে এর ভিতরের electron গুলো উচ্চ শক্তি স্তরে যায়। আবার যখন এরা নিজের শক্তিস্তরে ফিরে আসে তখন photon নির্গত করে (প্রকৃতপক্ষে electromagnetic wave এর বিকিরন ঘটায়)।

টিউবলাইট এ বৈদ্যুতিক প্রবাহ

আগের অংশে আমরা জেনেছি, টিউব এর মধ্যে যে তরিৎ প্রবাহের ফলে electron এর ফ্লো হয়। এর কারনে পারদ পরমাণু গুলো electron এর সাথে সংঘর্ষ প্রাপ্ত হয়ে উত্তেজিত হয়। এই ফাঁপা টিউবের মধ্যে এই যে তড়িৎ প্রবাহ সেটা সাধারন বৈদ্যুতিক তার এর প্রবাহের মতই। তবে সেখানে solid (সাধারণত ধাতু) বস্তুর মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত হয় আর এখানে সেটা হয় গ্যাস এর মধ্যে দিয়ে। দুই ধরনের পরিবাহি (conductor) দুই রকম। তবে gas conductor আর metal conductor (ধাতব পরিবাহী) এর মাঝে আরো কিছু পার্থক্য রয়েছে।

মেটাল conductor এ charge পরিবাহিত হয় মুক্ত electron এর মাধ্যমে। Electron গুলো এক পরমাণু থেকে অন্য পরমানুতে লাফ দিয়ে negatively charged area থেকে positively charged area তে যায়। আমরা জানি যে electron গুলো negatively charged এর অর্থ এরা সবসময় positive charge এর দিকে আকর্ষিত হয়। গ্যাস এর মধ্যেও electrical charge মুক্ত electron দিয়ে পরিবাহিত হয় ইলেকট্রন গুলো এক্ষেত্রে পরমাণু থেকে মুক্ত হয়ে প্রবাহিত হয়। আবার গ্যাস এর মধ্য দিয়ে positive বা negative আয়ন চার্জ পরিবহন করে (আয়ন হল সেই সকল পরমাণু যেগুলো electron ত্যাগ করেছে বা গ্রহন করেছে)।

আয়ন গুলোও বিপরিতধর্মী charge দ্বারা আকর্ষিত হয়। আমরা আগেই জেনেছি, পরমাণু থেকে যে electromagnetic wave বের হয় তার ওয়েভ লেংথ নির্ভর করে পরমাণু তে electron এর সজ্জাবিন্যাস  এর ওপর। আর পারদের পরমাণু তে electron এর সজ্জাবিন্যাস এমন যে, এ থেকে নির্গত electromagnetic wave দৃশ্যমান আলো না হয়ে UVR বা আলট্রা ভায়লেট রশ্মি হয়। এখন এই টিউব থেকে আলো পাবার জন্য এই wavelength কে convert করতে হবে যার ফলে তা দৃশ্যমান হবে। এখানেই টিউবলাইটের সাদাপ্রলেপ তথা ফসফরের ভূমিকা আসছে।

নিচের ছবিতে টিউবের মধ্যে কিভাবে ইলেকট্রন ফ্লো হয় তা দেখানো হয়েছে-

টিউব লাইটের মধ্য দিয়ে কিভাবে ইলেকট্রন ফ্লো করে
টিউব লাইটের মধ্য দিয়ে কিভাবে ইলেকট্রন ফ্লো করে

টিউব লাইটের সাদা প্রলেপ টি কি?

টিউব লাইটে যে সাদা প্রলেপ টি দেখি সেটিই মূলত সাদা আলো উৎপন্ন করবার জন্য দায়ী। তাই বলে ভাববেন না যে হলুদ রঙ করে দিলে সেটি হলুদ আলো দিবে। এটি মূলত ফসফরাস পাউডার যা কিনা আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি কে সাদা বর্নের আলোতে পরিণত করে। Phosphorous এর এই ধর্মের কারনে একে অনেক কাজে ব্যবহার করা হয়। যেমন একে TV তেও ব্যবহার করা হয়। Phosphorous ছাড়াও এরকম আরো কিছু বস্তু আছে যারা এই রকম কাজ করে। এদের প্রতিপ্রভ বা ফ্লুরোসেন্ট – fluorescent বলে। ফসফরোসেন্ট (phosphorescent – অনুপ্রভ) পদার্থও আছে। জিংকসালফাইড, কুইনাইন প্রভৃতি একধরনের Fluorescence পদার্থ। ফ্লুরোসেন্ট পদার্থ দিয়ে এটি তৈরী হয় বিধায় টিউব লাইটের অপর নাম ফ্লুরোসেন্ট বাতি বা ফ্লুরোসেন্ট ল্যাম্প

নিচের ছবিতে দেখতে পাচ্ছি টিউবলাইটের আভ্যন্তরীণ দৃশ্য-

একটি টিউবলাইটের আভ্যন্তরীণ চিত্র(আংশিক)
একটি টিউবলাইটের আভ্যন্তরীণ চিত্র(আংশিক)

সাধারণ বাতি ও ফ্লুরোসেন্ট বাতির মূল পার্থক্য

আমরা সাধারণভাবে যে বাল্ব ব্যবহার করি (incandescent বাল্ব) সেগুলোতেও এরকম UVR উৎপন্ন হয়। কিন্তু সেগুলো দৃশ্যমান আলো তে transform করা হয় না বলে এইসব বাতিতে অনেক energy loss হয়। আবার এইসব বাতিতে যে আলো তৈরি হয় সেগুলো লালচে হয়। এর অর্থ হলো এর থেকে অনেক infrared ও তৈরি হয়। এজন্য এইসব বাতির আলো গরম হয়। সেই তুলনায় fluorescent বাতি গুলো অনেক উন্নত। এখানে energy loss অত্যন্ত কম, আলো ততোটা গরম না (এই আলো থেকে infrared রশ্মি কম বের হয়, সেই জন্য এই বাতি গুলোর আলো তে লালচে ভাব না থেকে কিছুটা নীলাভ হয়) ।

আমরা এতক্ষণ জানলাম কি করে এই টিউব এর মধ্যে বৈদ্যুতিক শক্তি থেকে আলোক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এখন আমরা জানবো কিভাবে এর মধ্যে current flow হয়।

কিভাবে টিউব লাইটের মধ্যে কারেন্ট ফ্লো হয়?

এই গ্যাস টিউব এর মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত করার জন্য ফ্লুরোসেন্ট লাইট এর দুটি ব্যাপার নিশ্চিত করতে হয়, তাহলো-

  • ১. মুক্ত electron এবং আয়ন।
  • ২. টিউব এর দুই প্রান্তে বিভব পার্থক্য (চার্জ এর ঘনত্বের পার্থক্য – voltage)

সাধারনভাবে গ্যাস এর মধ্যে মুক্ত electron এবং আয়ন থাকেনা। কারন সব পরমানুই চার্জ নিরপেক্ষ ধর্ম প্রদর্শন করে থাকে। যখন আমরা কোন ফ্লুরোসেন্ট বাতির সুইচ অন করি তখন এটি কাজ করার জন্য প্রয়োজন অনেক পরিমাণ মুক্ত electron যা টিউব এর দুই পাশের electrode থেকে বের করে আনতে হয়।

এর পেছনে বেশকিছু পদ্ধতি ও কৌশল আছে যেগুলো নিচে আলোচনা করা হয়েছে-

টিউব লাইটে স্টার্টার এর ভূমিকা

সাধারন fluorescent lamp design এ এটিকে জ্বালানোর জন্য starter switch (light এর এক পাশে ছোট্ট একটি যন্ত্র) ব্যাবহার করা হয় (আজকালের ইলেকট্রনিক ব্যবস্থায় অবশ্য এটা দেখা যায় না)। নিচের ছবির মাধ্যমে এটার mechanism দেখান হল।

স্টার্টার কিভাবে কাজ করে?

বাইপাস সার্কিট তৈরি

যখন আমরা বাতির সুইচ অন করি তখন starter এর মধ্য দিয়ে একটি bypass circuit সম্পূর্ণ হয়। (তখনো গ্যাস টিউব এর মধ্যে কোন circuit সম্পূর্ণ হয় না)। এই bypass circuit টিউব এর দু’পাশের electrode এর মধ্য দিয়ে আলাদা ভাবে সম্পূর্ণ হয়। electrode গুলো সাধারন ফিলামেন্ট এর মত (যেমন টি আমরা incandescent বাল্ব এ দেখি)। যখন এই bypass circuit দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত হয় তখন বিদ্যুত এই ফিলামেন্ট কে উত্তপ্ত করে। এই তাপে আবার ধাতব পৃষ্ঠের electron মুক্ত হয়ে গ্যাস এ প্রবেশ করে এবং গ্যাস কে আয়নিত করে।

স্টার্টার এর গঠন ও পর্যায়ক্রমিক কাজ

ঠিক একই সময়ে বৈদ্যুতিক প্রবাহ starter switch এর মধ্যে কয়েকটি মজাদার পর্যায়ক্রমিক কাণ্ড ঘটায়। আমাদের ব্যবহৃত starter switch আসলে একধরনের ছোট্ট discharge bulb. যার মধ্যে থাকে neon gas. এই বাল্ব এর মধ্যে আছে দু’টা electrode যেগুলা পাশাপাশি অবস্থান করে। যখন প্রাথমিক ভাবে বাইপাস সার্কিট এর মাধ্যমে electricity প্রবাহিত হয়, তখন একটা electrical arc এর সৃষ্টি হয় এবং ইলেকট্রোড দুটির মাঝে কানেকশান তৈরি করে এবং বাইপাস সার্কিট টি সক্রিয় হয়। এজন্যই টিউব লাইট জ্বলবার আগে আমরা স্টার্টার কে জ্বলতে নিভতে দেখি। নিচের চিত্রে একটি স্টার্টার সুইচের গঠন দেখতে পাচ্ছি-

স্টার্টার সুইচের আভ্যন্তরীণ গঠন
স্টার্টার সুইচের আভ্যন্তরীণ গঠন

দ্বীধাতু ও ইলেকট্রিক্যাল আর্ক

ইলেকট্রিক্যাল আর্ক হল বিদ্যুত এর ঝলকানি। এর ফলে আলো ও অল্প তাপ সৃষ্টি হয় ঠিক যেভাবে মূল টিউব এ হয় (এই কারণেই টিউব লাইট জ্বলবার আগে স্টার্টার কে পিটপিট করে জ্বলে যা আগেই বলেছি)। স্টার্টার এর মধ্যে অবস্থিত দুটি ইলেকট্রোড এর একটি নির্মিত হয় দ্বিধাতব পাত দ্বারা, যা উত্তপ্ত হলে বেঁকে যায়। electrical arc এর সৃষ্টি হলে পাত টি গরম হয় এবং দ্বিধাতুর বৈশিষ্ঠ্য অনুযায়ী এটি বেঁকে যায়। এর ফলে দুটি ইলেকট্রোড এর মধ্যে সংযোগ হয়। ফলে electrical arc আর উৎপন্ন হওয়া থেমে যায়। যে কারনে আর তাপও উৎপন্ন হয় না। ফলে পাতটি আবার ঠান্ডা হয়ে সোজা হয়ে যায়। উক্ত পাতটি সোজা হয়ে বাইপাস সার্কিট টি আবার মুক্ত করে দেয়। অর্থাৎ ঐ সার্কিট দিয়ে আর কোন ইলেকট্রিসিটি ফ্লো করেনা।

স্টার্টার এ বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলে এমন ভাবে জ্বলতে দেখা যায়
স্টার্টার এ বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলে এমন ইলেকট্রিক্যাল আর্ক উৎপন্ন হয়

মারকারি গ্যাস আয়নিত করণ

এই সময় এর মধ্যেই মূল টিউব এর ফিলামেন্ট গরম হয়ে ভিতরের মারকারি গ্যাস কে আয়নিত করে। আর আমরা সবাই জানি যে- যে কোন ধাতুই বিদ্যুৎ পরিবাহী। এই মারকারি গ্যাস অন্য গ্যাসের তুলনায় অধিক বিদ্যুৎ পরিবাহী। এর ফলে electricity প্রবাহের জন্য টিউব লাইটের মধ্যে একটা মাধ্যম তৈরি হয়। এখন এই টিউব এ প্রয়োজন একটা শক্তিশালি voltage kick যাতে টিউব এর দুই পাশের electrode এর মাঝে electric arc তৈরি হতে পারে। তাহলেই অবিচ্ছিন্ন তড়িৎ প্রবাহিত হতে পারবে টিউব এর মধ্য দিয়ে। এই ভোল্টেজ কিক টি ব্যালাস্ট (ballast) এর মাধ্যমে তৈরি হয়। এইভাবে টিউব এর মধ্যে বিদ্যুৎ প্রবাহ শুরু হলে এটি জ্বলে উঠে।

টিউব এ প্লাজমা উৎপাদন

যখন কারেন্ট বাইপাস সার্কিট দিয়ে যায়, তখন একটি magnetic field সৃষ্টি হয়। এই magnetic field, প্রবাহিত তড়িতের পরিমান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। যখন বাইপাস সার্কিট টি বন্ধ হয়ে যায় তখন ব্যালাস্ট  তড়িত প্রবাহ হঠাৎ করেই বৃদ্ধি করে দেয় (একেই ভোল্টেজ কিক বলে)। এই কারেন্ট প্রবাহের হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে গ্যাস এর মধ্য দিয়ে electric arc তৈরি তে সাহায্য করে। স্টার্টার এর মধ্য দিয়ে কারেন্ট প্রবাহের পরিবর্তে সময় electrical current টিউব এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর ফলে এর মধ্যে দিয়ে মুক্ত electron প্রবাহিত হয়। এগুলো আবার মারকারি পরমানুর সাথে সংঘর্ষ ঘটায় ফলে আয়ন সৃষ্টি হয়। ফলস্বরূপ plasma অবস্থার সৃষ্টি হয় যা কিনা মুক্ত আয়ন আর ইলেকট্রনে এ পরিপূর্ণ একটি গ্যাস। এভাবে তড়িত প্রবাহের জন্য রাস্তা তৈরি হয়।

Electron এর মুক্তভাবে বিচরনের ফলে এটি ফিলামেন্ট কে গরম রাখে। ফলে আরো মুক্ত electron আসতেই থাকে। ফলে যতক্ষন AC supply থাকবে আর ফিলামেন্ট ঠিক থাকবে ততক্ষন আলো জ্বলতেই থাকবে।

ব্যালাস্ট (ballast) কি

স্টার্টারের পরেই যে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান টি টিউবলাইট কে প্রজ্জ্বলনের জন্য দায়ী তার নাম ব্যালাস্ট। একটি টিউব লাইট সিস্টেমের মধ্যে ব্যালাস্ট এর মূল ভূমিকা কারেন্ট নিয়ন্ত্রক ও প্রজ্জ্বলক হিসাবে। এটি  টিউব লাইটে পর্যাপ্ত ভোল্টেজ ওয়েভ ফর্ম সরবরাহ সুনিশ্চিত করে। এখন আমরা ব্যালাস্ট সম্পর্কে কিছু জানবো।

টিউবলাইট এর ব্যালাস্ট কত প্রকার

দৈনন্দিন ব্যবহারিক দিক থেকে চিন্তা করলে টিউব লাইটের ব্যালাস্ট তিন প্রকার-

  • ১। ইলেকট্রিক্যাল বা ম্যাগনেটিক ব্যালাস্ট
  • ২। ইলেকট্রনিক ব্যালাস্ট
  • ৩। হাইব্রিড বা উপরোক্ত দুই পদ্ধতির মিশেল

তবে কর্মপদ্ধতির দিক থেকে ব্যালাস্ট কে নিম্নোক্ত ভাবে বিভক্ত করা হয়ঃ

  • প্রিহিট ব্যালাস্ট (preheat ballast)
  • ইন্সটেন্ট স্টার্ট ব্যালাস্ট (Instant start ballast)
  • র‍্যাপিড স্টার্ট ব্যালাস্ট (Rapid start ballast)
  • ডিমএবল/উজ্জ্বলতা কম বেশী করাযায় এমন ব্যালাস্ট (Dimmable ballast)
  • প্রোগ্রামড স্টার্ট ব্যালাস্ট (Programmed start ballast)
  • হাইব্রিড ব্যালাস্ট (Hybrid ballast)

এখানে উল্লেখ্য যে আমেরিকান ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ইন্সটিটিউট (American National Standard Institute – ANSI) কর্তৃক নির্ধারিত আছে নিম্নোক্ত ব্যালাস্ট পদ্ধতি –

  • প্রিহিট ব্যালাস্ট (preheat ballast)
  • ইন্সটেন্ট স্টার্ট ব্যালাস্ট (Instant start ballast)
  • র‍্যাপিড স্টার্ট ব্যালাস্ট (Rapid start ballast)

আমরা পুরানো দিনের টিউব লাইট সিস্টেমে যে ধরনের ব্যালাস্ট দেখতাম তা আসলে ইলেকট্রিক্যাল ব্যালাস্ট যা কিনা প্রিহিট পদ্ধতি তে টিউব লাইট কে প্রজ্বলিত করে। নিচে কিছু ব্যালাস্টের চিত্র দেয়া হলো-

ম্যাগনেটিক ব্যালাস্ট
ম্যাগনেটিক ব্যালাস্ট
ইলেকট্রনিক ব্যালাস্ট
ইলেকট্রনিক ব্যালাস্ট

টিউব লাইটে ব্যালাস্ট এর ভূমিকাঃ

ব্যালাস্ট (Ballast) শব্দের অর্থ ভারসাম্য রক্ষাকারী। মূলত টিউব লাইট সিস্টেমেও ব্যালাস্ট ভারসাম্য রক্ষাকারীর ভূমিকা পালন করে থাকে। কারেন্ট ও ভোল্টেজের স্থিতাবস্থা আনয়ন করে এটি। এই ব্যালাস্ট ছাড়া কোনো টিউব লাইট কে যদি সরাসরি মেইন লাইনের সাথে সংযুক্ত করাহয় তাহলে টিউব লাইটে মাত্রাতিরিক্ত কারেন্ট প্রবাহিত হবে। এরফলে টিউব লাইট টি প্রায় সাথে সাথেই নষ্ট হয়ে যাবে।

বিভিন্ন প্রকার ব্যালাস্টের কাজ কি কি

আমরা উপরের লেখা থেকে আগেই জেনেছি যে মারকারি গ্যাস কিভাবে আয়নিত হয়ে টিউবের মধ্যে একটি গ্যাসিয় কন্ডাক্টরের মত আচরন করে। এরজন্য প্রয়োজন তাপ ও উপযুক্ত ভোল্টেজ কিক। যা কিনা টিউব কে জ্বলতে সাহায্য করে। কিন্তু কিভাবে? এরজন্য সচারচর ৩টি পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। প্রিহিট, ইন্সটেন্ট স্টার্ট ও র‍্যাপিড স্টার্ট

প্রিহিট ব্যালাস্টঃ

প্রিহিট এর ক্ষেত্রে টিউব লাইটের মধ্যস্থিত ইলেকট্রোড বা ফিলামেন্ট গুলোকে স্টার্টারের মাধ্যমে উত্তপ্ত করা হয়। (স্টার্টার কিভাবে কাজ করে তা উপরে জেনেছি)। উত্তপ্ত হবার ফলে টিউবের আভ্যন্তরীণ মারকারি বাষ্পীভূত হয়ে গ্যাসিয় আকার ধারণ করে। যার ফলে টিউব লাইটের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহ শুরু হয় এবং যারফলে আমরা আলো দেখতে পাই (এই পদ্ধতির বিস্তারিত উপরে দেয়া হয়েছে)। কিন্তু এই পদ্ধতির বড় অসুবিধা হলো যে টিউব লাইট সুইচ অন করবার সাথে সাথেই না জ্বলে কিছুটা দেরি করে। এই অসুবিধা দূর করবার জন্যই তৈরি হয়েছে ইন্সটেন্ট স্টার্ট ব্যালাস্ট। এক্ষেত্রে টিউব লাইটের ফিলামেন্ট কে আলাদা ভাবে উত্তপ্ত করা হয়না। বরং উচ্চ ভোল্টেজ প্রবাহিত করাহয় টিউব লাইটের ইলেকট্রোডে। এই উচ্চ ভোল্টেজ (সাধারণত ৪০০ ভোল্ট বা তার বেশী) খুব দ্রুত টিউবের মধ্যস্থিত মারকারি কে গ্যাসে পরিণত করে ফেলে। কাজেই সুইচ অন করবার আনুমানিক ৫০ মিলি সেকেন্ডের মধ্যেই টিউব লাইট জ্বলে উঠে। তাই এই পদ্ধতির অপর নাম ইন্সটেন্ট স্টার্ট

র‍্যাপিড স্টার্ট ব্যালাস্টঃ

র‍্যাপিড স্টার্ট ব্যালাস্ট এর ক্ষেত্রে প্রিহিট ও ইন্সটেন্ট স্টার্ট উভয়েরই সাহায্য নেয়া হয়। এরজন্য সার্কিটে টিউব লাইটের ইলেকট্রোড দুটিতে আলাদা ভাবে কানেকশন দেয়া থাকে যা প্রিহিট হতে টিউব কে সাহায্য করে। টিউব টি প্রিহিটেড হলে (অর্থাৎ মারকারি গ্যাসিয় আকার ধারণ করলে) এরপর অপেক্ষাকৃত কম ভোল্টেজে টিউব টি জ্বালানো হয়।

প্রোগ্রামড স্টার্ট ব্যালাস্টঃ

প্রোগ্রামড স্টার্ট ব্যালাস্ট আসলে র‍্যাপিড স্টার্টেরই আরেকটু ভিন্ন ও আধুনিক রূপ। এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে ক্ষেত্র বিশেষে টিউব লাইটের স্থায়ীত্ব সাধারণের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ করা সম্ভব হয়েছে। একই সাথে এটি এনার্জি এফিশিয়েন্টও। এটি টিউবের উপরে গ্লো কারেন্ট (Glow Current) এর নেতিবাচক প্রভাব ও দূর করতে সক্ষম। যে কারেন্ট প্রবাহিত হয়ে টিউব লাইট এর দুই প্রান্ত কালো বর্ণ ধারণ করে এবং ল্যাম্প এর দীর্ঘ স্থায়ীত্বের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে তাকেই গ্লো কারেন্ট বলে। তাই অত্যাধুনিক টিউবলাইট এর ব্যালাস্ট গুলোতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করাহয়। এছাড়াও ডিমএবল ব্যালাস্ট ও আছে যা কিনা টিউবের উজ্জ্বলতাকে কমাতে ও বাড়াতে সাহায্য করে। সাধারণত ডিমএবল ব্যালাস্ট টিউবলাইট এর ভোল্টেজ কে ঠিক রেখে কারেন্ট প্রবাহ কম বেশী করে উজ্জ্বলতা বাড়ায়-কমায়।

উপরোক্ত বিভিন্নভাবেই একটি টিউব কে প্রজ্বলন করা সম্ভব। মূল বিষয় হচ্ছে টিউব এর মধ্যস্থত মারকারি কে গ্যাসিয় এবং আয়নিত করা এবং এর মধ্যদিয়ে ইলেকট্রন প্রবাহিত করা, যার ফলাফলে টিউবটি জ্বলতে পারে। তবে এক্ষেত্রে আরো একটি বড় বিষয় হচ্ছে কারেন্ট লিমিট করা। যখন মারকারি শীতল থাকে এবং আয়নিত অবস্থার বিপরীতে থাকবার সময় টিউবের আভ্যন্তরীন রোধ (রেজিস্টেন্স – Resistance) অনেক উচ্চ থাকে। কিন্তু যখনি মারকারি বাষ্প তৈরি হয় তখন টিউব এর আভ্যন্তরীণ রোধ অনেক নিচে নেমে আসে। প্রায় শর্ট সার্কিটের মত অবস্থা তৈরি হয়। এমন অবস্থায় সরাসরি এসি লাইনে সংযোগ থাকলে টিউব যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে তেমনি আগুন লাগাও বিচিত্র কিছু নয়। তাই কারেন্ট লিমিটিং এর ক্ষেত্রেও ব্যালাস্ট এর ভূমিকা অপরিসিম।

ইলেকট্রনিক ব্যালাস্ট কি

আমরা পূর্ববর্তি অনুচ্ছেদে জেনেছি বিভিন্ন রকম ব্যালাস্ট এর কথা এবং সেগুলোর কর্ম পদ্ধতি। এসকল ব্যালাস্ট টিউবলাইট এর আলো কিভাবে উৎপন্ন করে তাও জেনেছি। এখন জানবো ইলেকট্রনিক ব্যালাস্ট সম্পর্কে। প্রিহিট পদ্ধতিতে টিউবলাইট কে জ্বালাতে গেলে কিছু সমস্যার কথা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। মূলত এ সমস্যা দূর করার লক্ষ্যেই প্রস্তুত হয় ইলেকট্রনিক ব্যালাস্ট। এরফলে টিউবলাইট টি সুইচ অনকরা মাত্রই জ্বলে উঠে ঘরবাড়ি প্রজ্বলিত করে। যে ধরনের ব্যালাস্টের মাধ্যমে এই কাজ করা হয় তাকে ইলেকট্রনিক ব্যালাস্ট বলে। আরেকটু সংক্ষেপে বললে বলাযায় যে- যে ব্যালাস্টে অর্ধপরিবাহী পদার্থ ব্যবহার করে টিউবলাইট কে প্রজ্জ্বলিত করা হয় তাকে ইলেকট্রনিক ব্যালাস্ট বলে। সংজ্ঞা থেকেই বুঝতে পারছি এতে ট্রানজিস্টর ডায়োড এমনকি আইসি ও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সেই সাথে প্রয়োজন অনুযায়ী রেজিস্টর, ক্যাপাস্টর ও ব্যবহার করাহয়।

ইলেকট্রনিক ব্যালাস্ট এর সুবিধা কি?

নিচে ইলেকট্রনিক ব্যালাস্ট এর কিছু সুবিধা তুলে ধরা হলো-

আকৃতিগত দিক থেকে

আকৃতিগত দিক থেকে ইলেকট্রনিক ব্যালাস্ট বিভিন্ন রকম হয়। যদিও এর আকার কে বিভিন্ন রূপ দেয়া সম্ভব তবুও ইলেকট্রিক্যাল ব্যালাস্ট কে সাধারণ ম্যাগনেটিক ব্যালাস্ট এর মত আকার দেয়া হয়। এটি করাহয় মূলত ব্যবহার যোগ্যতা বৃদ্ধি করতে। যার ফলে ব্যবহারকারী খুব দ্রুত তার পুরানো ইলেকট্রিক্যাল ব্যালাস্টের স্থানে এই ইলেকট্রনিক ব্যালাস্টকে প্রতিস্থাপিত করতে পারেন।

ওজনগত দিক থেকে

প্রায় সবধরনের ইলেকট্রনিক ব্যালাস্ট অন্যগুলোর তুলনায় হাল্কা হয়ে থাকে। এর প্রধান কারণ ইলেকট্রনিক ব্যালাস্টে মেটাল বা ধাতুর ব্যবহার অনেক কম। এই ধাতু কম ব্যবহারের ফলে এই ধরনের ব্যালাস্ট হাল্কা হলেও তাপ সুপরিবাহী না হবার কারণে ইলেকট্রনিক ব্যালাস্ট অপেক্ষাকৃত বেশী গরম হয়। একটি ইলেকট্রিক্যাল ব্যালাস্ট আনুমানিক ভাবে ১-১.৫ কিলোগ্রাম ওজনের হয়ে থাকে, পক্ষান্তরে ইলেকট্রনিক ব্যালাস্ট ২৫০ গ্রাম থেকে ১ কেজি পর্যন্ত ওজন হতে পারে।

শব্দগত দিক থেকে

সাধারণ ব্যালাস্ট গুলোতে আয়রন কোর ব্যবহৃত হয়। যা কিনা এসি লাইনের ফ্রিকুয়েন্সি তে কাঁপতে পারে এবং এক ধরনের হামিং নয়েজ উৎপন্ন করে। এই শব্দ মাত্রা খুব ক্ষীণ থেকে বেশ জোরালো হতে পারে যা কিনা ব্যালাস্টের গুনগত মানের উপর নির্ভরশীল। মজার বিষয় হচ্ছে ইলেকট্রনিক ব্যালাস্টে এই সমস্যা খুবই সামান্য যা প্রায় ধরাই যায় না।

তাৎক্ষনিক প্রজ্জ্বলন

আগেই বলেছি সাধারণ ব্যালাস্ট দিয়ে টিউব লাইট জ্বলতে কিছুটা সময় লাগে। অনেক ক্ষেত্রেই তা ১ সেকেন্ড থেকে শুরু করে কয়েক সেকেন্ড ও হতে পারে। কিন্তু এ সমস্যা প্রায় নেই বললেই চলে ইলেকট্রনিক ব্যালাস্টের ক্ষেত্রে। র‍্যাপিড স্টার্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করেই হোক কিংবা ইন্সটেন্ট স্টার্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করে হোক, উভয় ক্ষেত্রেই ইলেকট্রনিক পদ্ধতি সুবিধাজনক। সাধারণত ইলেকট্রনিক ব্যালাস্ট গুলো ৫০ মিলি সেকেন্ডের মাঝে পূর্ণ শক্তিতে প্রজ্বলিত হতে পারে।

দীর্ঘ স্থায়ীত্বের দিক থেকে

সাধারণ ব্যালাস্টে গ্লো কারেন্টের এফেক্ট টিউবলাইট কে অত্যন্ত দ্রুত নষ্ট করে ফেলে। যার কারণে টিউবের উভয় প্রান্ত কালো হয়ে যাওয়ার মত সমস্যা তথা টিউবের দীর্ঘস্থায়ীত্ব কমে যায়। এই ব্যাপারটি ইলেকট্রনিক ব্যালাস্ট খুব সুন্দর ভাবে নিয়ন্ত্রন করা সম্ভবপর হয় বিধায় টিউব এর স্থায়ীত্ব ও নিশ্চিত হয়। আরো অন্যান্য টিউব এর অভ্যন্তরিস্থ ইলেকট্রোডের তাপমাত্রা, ভোল্টেজ (Cathode heating voltage) এসব নিয়ন্ত্রন করা সম্ভবপর হয়ছে এই ধরনের ব্যালাস্ট দিয়ে। মূলত ইলেকট্রোডকে উত্তপ্ত করবার ও প্রবাহিত ভোল্টেজ এবং কারেন্ট কে সূক্ষ্ণ সময় নিয়ন্ত্রিত করে এই কাজটি করাহয়।

ইনপুট ভোল্টেজের দিক থেকে

সাধারণ ব্যালাস্ট খুব একটা নিম্ন ভোল্টেজে চলতে সক্ষম নয়। যদিও ক্ষেত্র বিশেষে বিশেষ ডিজাইন করা সম্ভবপর হয়েও থাকে তা অনেক উচ্চমূল্য ও বিভিন্ন অসুবিধা সম্পন্ন। এদিক থেকেও এগিয়ে আছে ইলেকট্রনিক ব্যালাস্ট গুলো। এগুলো অনেক কম ভোল্টেজেও চলতে সক্ষম। এমনকি ৭০ ভোল্ট AC তেও এই ব্যালাস্ট গুলো কাজ করতে পারে যারফলে লো-ভোল্টজ প্রবন এলাকাতে এটি যথেষ্ঠ উপযোগী।

নিচে ল্যাবরেটরি তে ব্যালাস্ট ও টিউব কিভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ফলাফল যাচাই করাহয় তার তুলনামূলক ডায়াগ্রাম দেয়া হলো-

ল্যাবরেটরি তে ব্যালাস্ট ও টিউব পরীক্ষা করবার পদ্ধতিগত ডায়াগ্রাম
ল্যাবরেটরি তে ব্যালাস্ট ও টিউব পরীক্ষা করবার পদ্ধতিগত ডায়াগ্রাম

ইলেকট্রনিক ব্যালাস্ট এ স্টার্টার

আরো একটি বড় সুবিধা হচ্ছে এ ধরনের ইলেকট্রনিক ব্যালাস্টে স্টার্টার ব্যবহার করতে হয়না। এই ব্যালাস্ট সার্কিট থেকে দুটি সংযোগ টিউবের ফিলামেন্ট তথা ইলেকট্রোডে যায়। আর এই ইলেকট্রনিক্স সার্কিট প্রয়োজন মত সুইচিং, ভোল্টেজ, কারেন্ট কে উপযুক্ত ওয়েভ শেপ এর মাধ্যমে টিউবে প্রেরণ করে টিউব কে প্রজ্জ্বলিত করে। তাই ইলেকট্রনিক্স ব্যালাস্টে স্টার্টারের প্রয়োজন হয়না। নিচে ইলেকট্রনিক ব্যালাস্ট কে সংযুক্ত করবার সার্কিট ডায়াগ্রাম দেয়া হলো।

ইলেকট্রনিক ব্যালাস্ট সংযুক্তি করণ ডায়াগ্রাম
ইলেকট্রনিক ব্যালাস্ট সংযুক্তি করণ ডায়াগ্রাম

লেখার প্রারম্ভেই ম্যাগনেটিক ব্যালাস্ট ও স্টার্টার সুইচের এর সংযোগ পদ্ধতি দেয়া হয়েছি বিধায় তা আর দিলাম না।

ব্যালাস্ট ফ্যাক্টর কি

আমরা সাধারণত টিউবলাইটের উজ্জ্বলতা কে লুমেন (lumen) দিয়ে প্রকাশ করি। ইলেকট্রনিক কিংবা ইলেকট্রিক্যাল যে ধরনের ব্যালাস্ট ই হোক না কেন এই ব্যালাস্ট ফ্যাক্টরের উপরেই নির্ভর করে এই উজ্জ্বলতা। সঠিক ভাবে বললে ব্যালাস্ট ফ্যাক্টরের উপরে। একটা সহজ হিসাব আছে যা কিনা নর্থ আমেরিকান স্ট্যান্ডার্ড কর্তৃক (IES – Illuminating Engineering Society of North America) সারা বিশ্বে গৃহিত। শোবার ঘর, বসবার ঘর এমন সমস্ত স্থানে অর্থাৎ যেখানে বেশী আলো প্রয়োজন হয়না সেখানে ০.৭৭ ব্যালাস্ট ফ্যাক্টর সম্বলিত ব্যালাস্ট ব্যবহার করলেই চলে। অপরদিকে যেখানে বেশী আলো প্রয়োজন হয় যেমন রান্নাঘর, গুদাম প্রভৃতি স্থানে উচ্চ ব্যালাস্ট ফ্যাক্টর সম্বলিত (১.১ বা এর বেশী) ব্যালাস্ট ব্যবহার করা উচিৎ। তাতে আলো অধিক পাওয়া যায়।

নিচের চিত্রটিতে বিভিন্ন ধরনের ব্যালাস্টের ফ্যাক্টর সমূহ দেখানো হয়েছে এবং এর সংক্ষিপ্ত সুবিধা অসুবিধাও দেয়া আছে-

বিভিন্ন ধরণের ব্যালাস্টের ফ্যাক্টর
বিভিন্ন ধরণের ব্যালাস্টের ফ্যাক্টর

এনার্জি লাইট এ টিউব এর ব্যবহার

ইদানীং এনার্জি লাইটের প্রচলন অনেক বেড়েছে। এর প্রকৃত নাম সিএফএল (CFLCompact Fluroscent Lamp). মূলত এর ব্যবহারিক সুবিধাই এর জনপ্রিয়তার জন্য দায়ী। আগে যে বাল্ব হোল্ডারে সাধারণ ইনক্যান্ডেস্যান্ট বাতি ব্যবহার করা হতো সেখানে এনার্জি বাল্ব লাগিয়ে দিলেই এর সুবিধা ভোগ করাযায়। তবে এই এনার্জি বাল্বেও টিউব ব্যবহার করা হয়। এবং এতে ছোট ইলেকট্রনিক্স ব্যালাস্ট ও আছে। এনার্জি বাল্বের ঢাকনা খুলে ফেললে ভেতরে দেখা যায় মূল সার্কিট টি। উপরে প্যাঁচানো কাঁচের নলটির নাম যে টিউব তা এতক্ষণে অভিজ্ঞ পাঠক ঠিকই বুঝেছেন আশাকরি। নিচের চিত্রে একটি এনার্জি বাল্ব তথা সিএফএল এর বিভিন্ন অংশ দেখতে পাচ্ছি-

এনার্জি বাল্ব (সিএফএল) এর বিভিন্ন অংশ
এনার্জি বাল্ব (সিএফএল) এর বিভিন্ন অংশ

টিউব লাইট বনাম এনার্জি লাইট

আগেই উল্লেখ করেছি যে সিএফএল বা এনার্জি বাতিতে টিউব ব্যবহার হয়। এর সুবিধাও উল্লেখ করেছি। এর ছোট আকৃতির ফলে এটি সহজেই বহন যোগ্য। এতে ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক ব্যালাস্ট টি এতই কর্মক্ষম যে অনেক নিম্ন ভোল্টেজেও খুব ভালোভাবেই টিউব কে জ্বালাতে পারে।

তবে একটি ছোট সমস্যা কারো কারো ক্ষেত্রে দেখা যায়। যাদের চোখ উজ্জ্বল আলোর প্রতি সংবেদনশীল তারা এই এনার্জি বাতি তে অস্বস্তি বোধ করেন। তাদের জন্য টিউবলাইট উপযুক্ত পরিগণিত হয়। এটি ঘটে মূলত এনার্জি বাতির আয়তনের জন্য। এটি তুলনা মূলক ভাবে অনেক বেশ ছোট, অপরদিকে টিউবলাইটের আয়তন বড় ও দীর্ঘ। ছোট আলোক উৎস থেকে উজ্জ্বল আলোকচ্ছটা কারো কারো চোখের জন্য অসহনীয় হতেপারে।

সেসমস্ত ক্ষেত্রে এনার্জি বাতি (ছোট আলোক উৎস) এর চাইতে টিউবলাইট (বড় আয়তনের আলোক উৎস) ব্যবহার করা সুবিধা জনক।

এছাড়াও দামে সস্তা করবার লক্ষ্যে অনেক ব্যবসায়ী নিম্ন মানের পার্টস ব্যবহার করে এই সিএফএল উতপাদন করেন, যারফলে নিম্নমানের এই বাতিগুলোর আলো দ্রুত কম্পনশীল হয়। যা উক্ত আলোক সংবেদনশীল ব্যক্তিদের মাইগ্রেন, বমি ভাব সাহ আরো কিছু উপসর্গ তৈরী করে।

এমন অবস্থা এড়াতে উচ্চ গুনগত মানের এনার্জি বাতি ব্যবহার করে দেখা যেতে পারে। এছাড়া নিম্নমানের এসমস্ত বাল্বের উপরে ঘোলা ঢাকনা (Diffuser) জাতীয় কিছু ব্যবহার করা যেতে পারে যেন এর আলো সরাসরি চোখে না লাগে।

টিউব লাইট বনাম এলইডি লাইট

সচারচর আমরা টিউবলাইট কে কাঁচের তৈরি দেখতে পাই। এবং এরমধ্যে ইলেকট্রোড/ফিলামেন্ট থাকে। কিন্তু নতুন এলইডি প্রযুক্তি এসে এর আমূল পরিবর্তন সাধন হয়েছে। এখন এলইডি টিউব লাইট ও পাওয়া যায়। প্রকৃতপক্ষে এই এলইডি টিউবলাইট গুলোতে ছোট ছোট চিপ এলইডি (Chip LED) ব্যবহার করাহয়। এবং সেগুলোকে একটি লম্বা সার্কিট বোর্ডে সংযুক্ত করা থাকে। যার ফলে এটি অল্প ওয়াট-শক্তি খরচ করেও অনেক বেশী উজ্জ্বল আলো দিতে পারে।

সাধারণ ভাবে এলইডি টিউব লাইট গুলো ১৮-২২ ওয়াটের হয়ে থাকে। এবং এলইডি এর গুনগত মানের উপর নির্ভর করে সাধারণ ৪০ ওয়াটের টিউবলাইট (আসলে ৩২-৩৬ ওয়াট) তুলনায় সমান কিংবা দ্বীগুণের ও অধিক আলো দিতে সক্ষম।

সাধারণত এলইডি টিউব লাইট ডিসি পাওয়ার সাপ্লাই ড্রাইভার দ্বারা চালিত হয় বিধায় এর আলো কাঁপে না। তাই আলোক সংবেদন ব্যক্তিদের জন্য এটি বিশেষ ভাবে উপযোগী। ক্ষেত্র বিশেষে একই ক্ষমতার সাধারণ ক্ষুদ্র আয়তনের এলইডি লাইটের চেয়ে লম্বা টিউব এলইডি ব্যবহার বাঞ্চনীয় কারণ, আলোক উৎস যদি আয়তনে বড় হয় তাহলে আলোক উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় (আসলে আমাদের চোখে উজ্জ্বলতা বেশী বলে অনুভূত হয়)। নিচের চিত্রে একটি এলইডি টিউব লাইট দেখতে পাচ্ছি।

এলইডি টিউব লাইট
এলইডি টিউব লাইট

নিচে একটি অত্যাধুনিক এলইডি টিউবলাইটের বিভিন্ন অংশের চিত্র দেয়া হলো-

অত্যাধুনিক এলইডি টিউব লাইট এর বিভিন্ন অংশ
অত্যাধুনিক এলইডি টিউব লাইট এর বিভিন্ন অংশ

টিউব লাইটের ব্যবহারিক সমাপ্তি

এখন আমরা জানবো ব্যবহারিক দিক থেকে একটি টিউবলাইট কখন অযোগ্য হয়ে যায়। একটি টিউবলাইটের আয়ুষ্কাল বেশকিছু বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। ব্যবহারিক পদ্ধতি, পারিপার্শ্বিক তাপমাত্রা, বায়ুচাপ, ব্যবহারের স্থান প্রভৃতি।

সাধারণ ভাবে টিউব লাইটের উজ্জ্বলতা কমে গিয়ে গোলাপী বর্ণ ধারণ করতে পারে। মূলত আভ্যন্তরীণ মারকারি বা পারদ শেষ হয়ে যাওয়াই এর কারণ। বাল্বটি বারংবার ফ্লিকার বা অন-অফ হতে থাকে। বাল্বের মধ্যস্থ ইলেকট্রোড গুলো ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে নষ্ট হয়ে যাবার ঘটনাও অনেক সময় পরিলক্ষিত হয়।

দীর্ঘদিন ধরে ইলেকট্রোড গুলো ইলেকট্রন নিক্ষেপের ফলে অথবা নিম্নমানের কাঁচামাল দ্বারা প্রস্তুত করলে এই ক্ষয়প্রাপ্ত দ্রুতহয়। এছাড়াও ব্যালাস্ট ও স্টার্টার সুইচ যদি মান সম্পন্ন না হয় তাহলে টিউবলাইটের উপরে চাপ পড়ে তার আয়ু কমিয়ে দেয়।

টিউবের মধ্যস্থ ফসফর প্রলেপ দূর্বল হয়ে গিয়ে এর ব্যবহারকি ঔজ্জ্বল্য নষ্ট করে। সাধারণত উন্নত মানের টিউবলাইটের ফসফরাস প্রলেপ ২৫,০০০ ব্যবহারিক ঘন্টা প্রজ্জ্বলনে সক্ষম। এরপর উক্ত টিউবলাইটের উজ্জ্বলতা অর্ধেকে নেমে আসে; অর্থাৎ অর্ধজীবন চক্র বা হাফ-লাইফ (Half-life) সম্পূর্ন করে। ক্ষেত্রবিশেষে ফিলামেন্ট জ্বলে/কেটে যাবার ঘটনাও পরিলক্ষিত হয়।

টিউব লাইট ব্যবহারের কিছু আবশ্যিক সতর্কতা

যেকোনো কাঁচের বাল্বকে সতর্ক ভাবেই ব্যবহার করা উচিৎ। কিন্তু টিউবলাইটের ক্ষেত্রে এই সতর্কতা আরো বেশী হওয়া বাঞ্চনীয়। এর মধ্যে ব্যবহৃত মারকারি বা পারদ (Mercury, Hg – Hydrargyrum) মানব দেহের নিকট বিষ। এই বিষক্রিয়া অত্যন্ত খারাপ যার ফলে শ্বাসনালী’র রোগ থেকে শুরুকরে আরো অনেক জটিল উপসর্গ ও স্বাস্থ্য জটিলতা দেখাদিতে পারে। এছাড়াও নিম্নমানের ইলেকট্রনিক ব্যালাস্টে এমন সমস্ত উপাদান ব্যবহৃত হয় যার মধ্যে অধিক পরিমাণে সীসা (PlumbumPb – Lead) ব্যবহৃত হয় যা স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায়। এবং অবশ্যই বৈদ্যুতিক কাজকর্ম করবার সতর্কতা অবশ্যই নিতে হবে।

শুভ্র উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত হোক আমাদের প্রাত্যহিক দিন। তবে সেটি এলইডি নাকি টিউব লাইট দিয়ে তা বিচারের ভার পাঠকের হাতেই ন্যস্ত রইলো।

সম্পাদনা ও  পুনঃসংকলনঃ সৈয়দ রাইয়ান

তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট, বিভিন্ন ব্লগ, উইকি ও গবেষনা পত্র হতে গৃহীত।

4 মন্তব্য

উত্তর প্রদান

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন