বিভিন্ন অডিও সিস্টেম ও অডিও রেকর্ডিং সিস্টেমের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

2
1820
বিভিন্ন অডিও সিস্টেম ও অডিও রেকর্ডিং সিস্টেমের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
বিভিন্ন অডিও সিস্টেম ও অডিও রেকর্ডিং সিস্টেমের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

১৮৫৭ সালে শব্দ ধারনের জন্য প্রথম যন্ত্র আবিস্কার হয় যার নাম ফনোটোগ্রাফ এবং যার আবিষ্কর্তা এডওয়ার্ড লিয়ন স্কট মার্টিন (Édouard-Léon Scott de Martinville) নামের ফরাসী এক ছাপাখানার মালিক ও বই বিক্রেতা।

এই যন্ত্রে শুধুমাত্র শব্দ ধারণ করা যেতো কিন্তু শব্দকে আবার শুনবার কোন ব্যবস্থা ছিলো না। শুধুমাত্র শব্দ তরঙ্গের আকার-প্রকার কে ধারক এর মধ্যে কেমন হয় সেটা দেখা যেতো। পরবর্তীতে বিখ্যাত আমেরিকান উদ্ভাবক ও আবিস্কারক টমাস এডিসন (Thomas Edison) ১৮৭৭ সালে ধারনকৃত শব্দকে পুনরুৎপাদনের জন্য তৈরী করেন ফনোগ্রাফ বা গ্রামোফোন।

পদ্ধতিটা ছিলো একটি চোঙ এর সামনে শব্দ তৈরী করলে যে কাপুনি তৈরী হয় তা একটি মোম/সমজাতীয় বস্তুর ঘুর্নায়মান ও ক্রম চলমান ড্রামের উপর সুক্ষ পিনের সাহায্যে ধারণ করে আবার সেটাকে প্রথম থেকে সেট করে ঘুরিয়ে ধারন করা শব্দকে বাজানো। মুলত এটিই প্রথম অডিও রেকর্ডিং সিস্টেম ও শব্দ ধারণ করবার প্রাথমিক ইতিহাস।

বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন ও তাঁর আবিষ্কৃত ফনোগ্রাফ/গ্রামোফোন মেশিনের পেটেন্ট
বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন ও তাঁর আবিষ্কৃত ফনোগ্রাফ/গ্রামোফোন মেশিনের পেটেন্ট

এর মাঝে অনেক বিজ্ঞানী এটাকে অগ্রসরের জন্য কাজ করেছেন। যার ফলশ্রুতিতে শব্দ ধারণ ও পুনরুৎপাদন এখন একটি বড় শিল্প। বিশ্বে গড়ে উঠেছে বড় বড় স্টুডিও। সিনেমাতে শব্দ ও গান শুনবার জন্য শব্দকে ধারণ ও পুনরুৎপাদন করতে গিয়ে মূলত এই শিল্প ও টেকনোলজীর বিকাশ ঘটেছে।

প্রথম দিকের সম্পুর্ণ মেকানিক্যাল ডিভাইস থেকে বর্তমানে এটা ডিজিটাল প্রযুক্তিতে পরিণত হয়েছে। প্রথম দিকের এক চ্যানেল থেকে এখন এটা সর্বোচ্চ ১১ চ্যানেল হয়েছে।

বিভিন্ন অডিও চ্যানেল ও শব্দ পুনরুৎপাদন পদ্ধতির বিকাশ

এই এক চ্যানেল বা একটি ধারণ মাধ্যম কে সাধারণ ভাবে মনো সাউন্ড বলা হয়ে থাকে। বুঝবার সুবিধার জন্য যদি ধরি একটি গানের কথা। একটি গান গাইবার সময় গায়ক ছাড়াও যন্ত্র বাজানোর জন্য আরও একাধিক ব্যক্তি থাকে।

এখন এই মনো পদ্ধতিতে যদি একটি মাত্র মাইক্রোফোনের মাধ্যমে শব্দ ধারণ করা যায় তবে ঐ এক চ্যানেলেই গায়কের গলা ও তার সাথে বাজানো শব্দ রেকর্ড হবে। এবার এই ধারণ করা শব্দ যত আধুনিক পুনরুৎপাদন যন্ত্র দ্বারাই বাজানো হোক না কেনো সেটা ঐ এক চ্যানেলকেই বাজাবে। অর্থাৎ এটা মনো শব্দই থাকবে।

প্রথম দিকে এই মনো শব্দই ধারণ করা হতো কিন্তু দিন যাবার সাথে সাথে এটা বুঝা গেলো যে এভাবে ধারণ করা শব্দ বাস্তব লাগে না, কারণ আমাদের কান দুইটি এবং গায়ক গান গাইবার সময় গায়কের গলা ও বাদ্য যন্ত্রের সকল শব্দ এভাবে ধারণ ও পুনরুৎপাদন করলে আমরা সব শব্দ আসলে বাস্তবের মতো শুনতে পাই না।

এরপর আসলো স্টেরিও শব্দ ধারণ পদ্ধতি অর্থাৎ দুই চ্যানেলে শব্দকে ধারণ করা। এবং তা আবার দুই চ্যানেলেই পুনরুৎপাদন করা। মেকানিক্যাল যুগ থেকে শব্দ ইলেকট্রিক্যাল যুগে প্রবেশ করবার পর এটা করা সম্ভব হলো। শব্দকে শুধু ধারন ও পুনরুৎপাদন করাই নয় সম্ভব হলো একে বিবর্ধিত করা, পরিবর্তন করা ও পরিবর্ধিত করা।

দুটো আলাদা শব্দ বিবর্ধক দিয়ে দুই চ্যানেলে ধারণ করা শব্দকে বিবর্ধিত করবার পাশাপাশি, দুই কান যেন বুঝতে না পারে দুই পাশে দুই রকম শব্দ হচ্ছে – এমন সমস্যা মিক্সিং এর মাধ্যমে দূরকরা হলো। এটাকে বলে অডিও মাল্টিপ্লেক্সিং – আমাদের কান যেনো বুঝতে না পারে শব্দ দুই দিক থেকে দুই রকম আসছে।

একবার ভাবুন তো গান হচ্ছে, আপনার দুই পাশে দুটো স্পীকার। একটি থেকে খালি গায়কের গলা আর একপাশ থেকে শুধু বাজনা আসছে কেমন লাগবে শুনতে!!! মোটেও শ্রুতিমধুর লাগবে না এটা। এই সমস্যা তাই দূরকরা হলো। এই অল্প কিছুদিন আগের ম্যাগনেটিক টেপ দিয়ে আপনার শোনা গান (ক্যাসেট প্লেয়ার) আসলে এই স্টেরিও প্রযুক্তি ছিলো। এর জন্যই এর নাম স্টেরিও বলতেও শোনা যেতো।

শ্রবণ ক্ষমতা নির্ভর অত্যাধুনিক ডিজিটাল অডিও সিস্টেম এর ব্লক ডায়াগ্রাম
শ্রবণ ক্ষমতা নির্ভর অত্যাধুনিক ডিজিটাল অডিও সিস্টেম এর ব্লক ডায়াগ্রাম

এরপর শব্দ ডিজিটাল জমানায় আসলো – শুরুটা হয়েছিলো ২:১ প্রযুক্তি দিয়ে যাতে করে শব্দকে আরও ডিটেইল ভাবে ধারণ করা যায় সেই সাথে শুনবার জন্য পুনরুৎপাদন করা যায়। এখন এটা ৫:১ থেকে এখন ১০:১ পর্যন্ত আছে। এর বাইরেও বিভিন্ন আকারে প্রকারে আছে শ্রোতার পছন্দ ও চাহিদা অনুযায়ী। নিচে এমনি একটি ৫:১ অডিও সিস্টেমের ছবি দেখতে পাচ্ছি-

একটি ৫:১ অডিও স্পীকার সিস্টেম
একটি ৫:১ অডিও স্পীকার সিস্টেম

আমি স্টেরিও ও মনো সাউন্ড নিয়ে আসলে বলতে চেয়েছি এখানে। স্টেরিও মনো সাউন্ড আসলে কি তা আশা করি বুঝা গেছে। আসল ব্যাপার হলো রেকর্ডিং পর্যায়। রেকর্ডিং যদি মনো হয় তবে যত চ্যানেলেই বাজানো হোক না কেনো সেটা কখনই স্টেরিও সাউন্ড দিবে না। আবার স্টেরিও রেকর্ডিং করা থাকলে সেটা এক চ্যানেলে বাজালেও সম্পুর্ণ না হোক কিছুটা হলেও স্টেরিও শব্দের অনুভুতি দেবে।

মনো অডিও সিস্টেম

শব্দ পুনরুৎপাদন যন্ত্র (এমপ্লিফায়ার) যখন একটি ইনপুট থেকে সিগনাল নিয়ে একটি আউটপুট দিবে তখন তা মনো সিস্টেম। আবার যদি একটি ইনপুট থেকে নিয়ে দুটো আউটপুট দেয় তবে সেটা আউটপুট সাপেক্ষে স্টেরিও হলেও কাজ করবে মনো সিস্টেমের মতো। একটি ইনপুট ও একটি আউটপুট থাকবে যেখানে তা আভ্যন্তরীন গঠনে যাই হোক না কেনো সেটা মনো।

স্টেরিও অডিও সিস্টেম

যার দুটো আলাদা অডিও ইনপুট ও দুটো আলাদা অডিও আউটপুট থাকবে সেটা স্টেরিও অডিও সিস্টেম। এইক্ষেত্রে দুই চ্যানেল সম্পুর্ণ স্বাধীন থাকবে অর্থাৎ  এক চ্যানেলে সিগনালের উপস্থিতি ও অনুপস্থিতির জন্য আরেক চ্যানেলের শব্দ গ্রহণ ও পুনরুৎপাদনে কোন ব্যাঘাত ঘটবে না।

ব্রীজ এমপ্লিফায়ার অডিও সিস্টেম

অনেক সময় একটি স্টেরিও এমপ্লিফায়ার কে একটি ইনপুট দিয়ে আউটপুটকে ব্রীজ করে একটি আউটপুটের এমপ্লিফায়ারে পরিণত করা হয়। এটাকে বলা হয় ব্রীজ করা, সাধারণ ভাবে ব্রীজ এমপ্লিফায়ার নামে ডাকা হয় যা আসলে একটি স্টেরিও এমপ্লিফায়ারকে মনো এমপ্লিফায়ারে পরিণত করে। এতে কিছু সুবিধা পাওয়া যায় তবে মনে রাখতে হবে যে-

  • ব্রীজ করা থাকুক আর না থাকুক একটি ইনপুট ও একটি আউটপুটের সকল এমপ্লিফায়ার মনো এমপ্লিফায়ার।
  • দুটো স্বতন্ত্র ইনপুট ও আউটপুট সহ এমপ্লিফায়ার হলো স্টেরিও এমপ্লিফায়ার।
  • কোন এমপ্লিফায়ারের দুটো ইনপুট শর্ট করে একটি ইনপুটে পরিণত করলে আউটপুট দুটো হলেও দেখতে স্টেরিও হবে কিন্তু কাজ করবে মনো এমপ্লিফায়ারের মতো।

তোমাদের/আপনাদের জানবার আগ্রহের প্রেক্ষিতে এই লেখা। কোথাও বুঝতে সমস্যা হলে বা আরও কিছু জানবার থাকলে কমেন্ট অপশন খোলা রইলো। ধন্যবাদ।

2 মন্তব্য

  1. খুবই তথ্যবহুল এবং দরকারী লেখা। শেয়ার করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই! 🙂

উত্তর প্রদান

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন