আমরা এর আগে আবিস্কার ও উদ্ভাবন সম্পর্কে জেনেছিলাম। এখন এই আবিস্কার ও উদ্ভাবনের সাথে কোন যন্ত্রের কে জনক বা প্রথম আবিস্কারক সেটা কিভাবে নির্ধারিত হয়ে সেটা বুঝতে চেষ্টা করবো। এই চেষ্টাটা হবে আমাদের জানা কিছু জিনিসকে নতুন ভাবে জানবার মাধ্যমে।কিছু নতুন যুক্তি উপস্থাপনের মাধ্যমে আমরা দেখবো আসলে এই আবিস্কার বা উদ্ভাবন গুলো কিভাবে একজনের নামে আসে বা এ্রর পিছনের মানুষগুলো কিভাবে হারিয়ে যায় বা গ্যাছে। এই হারিয়ে যাওয়াগুলো আসলে শুণ্যতা – এই শুণ্যতা জ্ঞানের। যা আমাদের জানা জগতে তৈরী করে পিছনের দরজাতে কিছু কালো বিন্দুর। ফলে যা বাধা হয়ে দাড়ায় নতুন জ্ঞান তৈরীতে। আবার এই সুযোগে কিছু মানুষ কুতর্ক করে বা করবার সুযোগ পায়। বিজ্ঞান, আবিস্কার ও উদ্ভাবন নিয়ে।আমরা সবাই জানি রেডিও আবিস্কার করেছে বিজ্ঞানী মার্কনী। পাশাপাশি শুনতে পাবো এটা আগেই আবিস্কার করেছিলেন আমাদের বাঙালী বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বোস। আরেকটু ঘাটাঘাটি করলে দেখবো আরও কিছু নাম। বিজ্ঞানী টেসলা যাদের মধ্যে অন্যতম। বিজ্ঞানী টেসলা, বিজ্ঞানী মার্কনী না বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বোস কে প্রথম আবিস্কার করেছে রেডিও তা নিয়ে ব্যাপক তর্ক আছে। আমরা এই তর্কে যাবো না, আমরা শুধু দেখবো এই রেডিও টেকনোলজীর বা প্রযুক্তির বিকাশ। বিজ্ঞানী টেসলা বা বাঙালী বিজ্ঞানী জগদীশ বোস দুজনেই মার্কনীর আগে বিনাতারে যোগাযোগ প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেছেন কিন্তু প্রথম বাণিজ্যিক ভাবে সফল বিনাতারের প্রযুক্তি তথা সেই সময়কার টেলিগ্রাফ বার্তা বাণিজ্যিক ভাবে প্রেরণের কাজটি করেছে বিজ্ঞানী মার্কনী।
এভাবে যদি বিমান আবিস্কারের কথা বলি তবে দেখবো এর আবিস্কারক হচ্ছেন রাইট ভাইয়েরা, আসলেই কি এর আগে বিমান ছিলো না বা এর ধারণা ছিলো না? অবশ্যই ছিলো – বিমান উড্ডয়নের বিজ্ঞানের ইতাহাস অনেক পুরনো – এটা ধীরে ধীরে বিকশিত হয়েছে এর চুড়ান্ত ফল স্বরুপ রাইট ভাইয়েরা প্রথম কার্যকরী আকাশ যান তৈরী করতে সক্ষম হয়েছেন তাই উনারা এর আবিস্কারকের মর্যাদা পাচ্ছেন।
প্রতিটি আবিস্কারের পিছনেই থাকতে পারে কিছু পুর্বজ্ঞান কিন্তু যিনি এই জ্ঞানকে মানব কল্যাণে কাজে লাগাতে পারেন সেটাই আবিস্কারের মর্যাদা পাবে ও তিনিই হবেন আবিস্কর্তা। আবার যদি আমরা ভুলে যাই ঐ পুর্বজ্ঞানের কথা তবে বিজ্ঞান বা আবিস্কারের আর কোন উন্নতি হবে না বা আবার হয়তো নতুন করে শুরু করতে হবে একবারে গোড়া থেকে।
বিশ্বজুরে আবিস্কার ও আবিস্কারকে স্বীকৃতি দিতে একটি প্রতিষ্ঠান আছে যা মার্কীনযুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত। যা পেটেন্ট অফিস নামে পরিচিত। দুইজন ব্যক্তির একজন আরেক জনের আগে আবিস্কার করবার পরও যদি পরের ব্যক্তির আগে পেটেন্টের জন্য আবেদন করেন তবে আইনগতভাবে তিনি আর প্রথম থাকবেন না। বিজ্ঞানী জগদীশ বোসের ক্ষেত্রের এমনটিই হয়েছিলো – তিনি ১৮৯৫ সালে তাঁর রেডিও যন্ত্র প্রথম প্রদর্শন করলেও কোন প্রকার পেটেন্টের জন্য আবেদন করেন নি। কাঁর আবিস্কার করা একটি যন্ত্র যা কোহেরার যন্ত্রকে কাজে লাগিয়েই মার্কনী পরে তাঁর যন্ত্র বানান ১৯০১ সালে এবং পেটেন্ট নেন। বিজ্ঞানী জগদীশ বোস পরবর্তীতে ১৯০৪ সালে পেটেন্ট করেছিলেন।
উনি হয়তো আবিস্কারকের স্বীকৃতি পান নি কিন্তু কোহেরার যন্ত্রের মুল আবিস্কারক হিসাবে উনিই স্বীকৃত যা আসলে রেডিও যন্ত্রের হুদপিন্ড। তাই কোন আবিস্কারের পিছনে একক কোন ব্যক্তির অবদান নাই থাকতে পারে আবার একক অবদান থাকতে পারে যা স্থির নয়। তাই আবিস্কার আর আবিস্কারক নিয়ে তর্ক করতে গ্যালে আমাদের উচিৎ ঐ যন্ত্রের সম্পুর্ণ ইতিহাস জানা। একেবার যন্ত্রের চিন্তা থেকে শুরু করে এর পিছনের তত্ব ও তত্বের প্রায়োগিক বিষয়গুলো। এভাবেই সম্ভব একটি আবিস্কার ও তার সম্পর্কে সম্পূর্ণ রূপে জানা যা সঠিক ভাবে বিজ্ঞানের চর্চার একটি অংশ।