ব্যাটারি ছাড়া আজকের দুনিয়া অচলই বলা যায়। মোবাইল এর রিচার্জেবল ব্যাটারি, আই পি এস এর ব্যাটারি, এমনকি ব্যাটারী চালিত সাইকেল ও আবিষ্কার হয়েছে। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা ৪০০ বছর টিকে থাকতে পারে এমন ব্যাটারিও আবিষ্কার করেছেন। তাও সেটি আবিষ্কার হয়েছে ভুল করে! জ্বী হ্যাঁ, আপনি ঠিকই শুনছেন।
পরিচ্ছেদসমূহ
সাধারণত দুর্ঘটনা কখনোই ভাল কিছু হতে পারে না, বিশেষ করে একটি গবেষণাগারে। যেখানে ছোট একটি দুর্ঘটনা সহজেই বড় একটি দুর্ঘটনা ঘটতে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু কখনও কখনও দুর্ঘটনাক্রমেই বড় বড় আবিষ্কার এর পথ খুলে যায়। নিচে ভুল করে আবিষ্কার হওয়া কিছু জিনিসের নাম দেখি-
বিজ্ঞানের ভুল করে আবিষ্কার হওয়া কিছু জিনিস-
- সুপার গ্লু
- স্যাকারিন
- ব্যাকেলাইট
- পেনিসিলিন ওষুধ
- মাইক্রোওয়েভ ওভেন
- এক্স-রে বা রঞ্জন রশ্মি
- হার্টের রোগীদের পেসমেকার
- টেফলন বা ননস্টিক ফ্রাই প্যানের বিশেষ আবরণ
এমনকি “বিগ ব্যাং” থিওরির আবিষ্কারও হয়েছিল একটি দুর্ঘটনার মাধ্যমে। সুতরাং দেখতেই পারছেন বিজ্ঞানে ভুলের কোন স্থান না থাকলেও ভুল করে আবিষ্কার হওয়া অনেক কিছুই আমরা ব্যবহার করছি 😛
মূল ঘটনা
ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষকরাও তেমনি দুর্ঘটনাক্রমে এমন একধরণের ব্যাটারী আবিষ্কার করেছেন, যা থিওরিটিক্যালি ৪০০ বছর টেকার কথা! এর নাম তাঁরা দিয়েছেন ইরভিন (Irvin) ব্যাটারি।
রেজিনাল্ড পেনার, ইরভিন টিমের একজন গবেষক জানান- “মিয়া লে থাই (Mya Le Thai) খেলাচ্ছলে আমাদের ব্যাটারী নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা করছিল, সেটির অংশ হিসাবেই সে পুরো ব্যাটারিকে খুব পাতলা জেল এর একটি আবরণ দিয়ে ঢেকে দেয় এবং সাইকেল করা শুরু করে।”
“সাইকেল করতে করতেই সে আবিষ্কার করলো, কয়েকশত হাজার বার সাইকেল করার পরও ব্যাটারির কোনও ক্ষতি হচ্ছেনা।”
“যেটা আমাদের কাছে খুব আশ্চর্যজনক ছিল, কারণ সাধারণ ব্যাটারি ৫০০০-৭০০০ বারের বেশি সাইকেল করলে নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু ওই ব্যাটারিটিকে ২০০,০০০ বার পর্যন্ত সাইকেল করলেও কোনও সমস্যা হচ্ছিল না।”
ব্যাটারি সম্পূর্ণ চার্জ করে তাকে সম্পূর্ণ ডিসচার্জ করার প্রক্রিয়াকে সাইকেল বলে
ইরভিন প্রজেক্টের মূল উদ্দেশ্য ছিল লিথিয়াম ব্যাটারির ভেতরে ব্যবহৃত তরলের বদলে আরও ঘন একটি ইলেকট্রোলাইট জেল ব্যবহার করে একটি সলিড স্টেট ব্যাটারি তৈরি করা। তারা আরও ভাল পারফর্মেন্স পাওয়ার জন্য ব্যাটারির ভেতরের লিথিয়ামও পরিবর্তন করে সোনার তৈরি খুব ক্ষুদ্র ন্যানোওয়্যার ব্যবহার করেছিলেন।
এখানে উল্লেখ্য যে সাধারণত আমরা আই পি এস এ যেসকল ব্যাটারি ব্যবহার করি সেগুলো লেড এসিড টাইপ। আবার মোবাইলে ব্যবহার করি লিথিয়াম আয়ন টাইপের ব্যাটারি।
“আমরা ব্যাটারিটি বিভিন্ন ডিভাইসে লাগিয়ে সাইকেল করা শুরু করলাম, এবং আবিষ্কার করলাম যে তারা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে না।” – বলেন রেজিনাল্ড পেনার। “আমরা এখনও এটা কেন হচ্ছে বের করতে পারিনি।”
কীভাবে এই ব্যাটারি ৪০০ বছর টিকবে
ইরভিন ব্যাটারির রিসার্চারদের ধারণা জেল এর আবরণ ব্যাটারির মেটাল অক্সাইডকে প্লাস্টিসাইজ হতে সাহায্য করছে, যা সোনার তৈরি ন্যানো ওয়্যার (Nano wire) গুলোর নমনীয়তা ও আয়ু বাড়াচ্ছে।
যদি এই ব্যাটারী বানিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হয়, তাহলে এটি সাধারণ লিথিয়াম ব্যাটারির তুলনায় ৪০০ গুন বেশি সময় টিকবে, এবং ব্যাটারি জাতীয় ই-ওয়েস্ট (নষ্ট ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস) কমাতেও ভূমিকা রাখবে।
কবে পাবো এই ব্যাটারী
ইরভিন ব্যাটারি এখনও গবেষণার পর্যায়ে রয়েছে, এবং আপাতত নিকট ভবিষ্যতে এটির বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন হবার সম্ভাবনা নেই। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ইরভিন ব্যাটারি যখন বাণিজ্যিকভাবে উৎপন্ন করা হবে, তখন এটি প্রচলিত লিথিয়াম ব্যাটারির জনপ্রিয়তাকে ছাড়িয়ে যাবে।
সুতরাং এরপর কেউ যদি আপনাকে আপনার ভুল নিয়ে খোঁটা দেয় তাহলে তার হাতে পটেটো চিপসের প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বলবেন – ভুল থেকে যদি দারুণ কিছু হয় তাহলে ভুলই ভালো। কারণ পটেটো চিপসও ঐ ব্যাটারির মত ভুল করেই জনপ্রিয় হয়েছিল।
তথ্যসূত্র-
https://www.techworm.net/2016/09/battery-invented-accident-ability-last-400-years.html
http://www.mnn.com/earth-matters/energy/blogs/this-rechargeable-battery-lasts-400-years
সম্পাদনায় – সৈয়দ রাইয়ান
New news
Thanks vai
আপনাকেও ধন্যবাদ! 🙂