ভোল্টেজ, কারেন্ট, ওয়াট, পাওয়ারপাওয়ার ফ্যাক্টর সম্পর্কে কমবেশি সবারই আগ্রহ প্রচুর। সেই সূত্র ধরেই আজকের এই লেখা। প্রশ্নোত্তরে সাজানো এই লেখাটি পড়ে আশাকরি ছোটবড় সবাই উপকৃত হবেন।

ভোল্টেজ কি বা ভোল্টেজ কাকে বলে?

ভোল্টেজ (Voltage): কোন পরিবাহীর অভ্যন্তরে থাকা ইলেকট্রন সমূহকে স্থানচ্যুত করতে যে বল বা চাপের প্রয়োজন হয় তাকে বিদ্যুৎ চালক বল বা ভোল্টেজ বলে। ভোল্টেজ এর প্রতীক চিহ্ন হলো V এবং এর একক হলো Volt (ভোল্ট)।

ভোল্টেজ কিভাবে মাপে?

ভোল্টেজ মাপবার যন্ত্রের নাম ভোল্ট মিটার। এই ভোল্ট মিটারের টেস্ট প্রোব দুটি কে বিদ্যুতের উৎসের দুই প্রান্তে সংযুক্ত করে ভোল্টেজ পরিমাপ করতে হয়। নিচের চিত্রটি দেখলে বুঝতে সুবিধে হবে আশাকরি-

মাল্টিমিটারের অভ্যন্তরে থাকা ভোল্ট মিটার দিয়ে ব্যাটারি ভোল্টেজ মাপা হচ্ছে
মাল্টিমিটারের অভ্যন্তরে থাকা ভোল্ট মিটার দিয়ে ব্যাটারি ভোল্টেজ মাপা হচ্ছে (ছবিসত্ত্বঃ Sparkfun)

এখানে বিদ্যুৎ উৎস হিসেবে বামে পেন্সিল ব্যাটারি ও ডানে লিথায়াম আয়ন ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে। এর কানেকশন ডায়াগ্রাম যদি লক্ষ্য করি তাহলে তা নিচের চিত্রের মত দেখাবে। এখানে উল্লেখ্য যে মাল্টিমিটারের লাল প্রোব টি ব্যাটারির পজেটিভ প্রান্তে এবং কালো প্রোব টি নেগেটিভ প্রান্তে যাবে।

ভোল্ট মিটার দিয়ে কোন ব্যাটারির ভোল্টেজ মাপার চিত্র ও ডায়াগ্রাম
ভোল্ট মিটার দিয়ে কোন ব্যাটারিভোল্টেজ মাপার চিত্র ও ডায়াগ্রাম

এছাড়াও আরো ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ভোল্টেজ পরিমাপ করা সম্ভব। যেমন সার্কিট এর অভ্যন্তরে বিভিন্ন পার্টস ঠিকমত ভোল্টেজ পাচ্ছে কিনা প্রভৃতি। রিপেয়ারিং কাজের ক্ষেত্রে সার্কিট এর বিভিন্ন পার্টসের এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশের ভোল্ট মেপে ত্রুটি নির্ণয় করা হয়।

কারেন্ট কি বা কারেন্ট কাকে বলে?

কারেন্ট (Current): পরিবাহীর মধ্যকার ইলেকট্রন সমূহ নির্দিষ্ট দিকে প্রবাহিত হওয়ার হারকে কারেন্ট বলে। অর্থাৎ পরিবাহীর মধ্যে ইলেকট্রনের প্রবাহই ইলেকট্রিক কারেন্ট। কারেন্টের প্রতীক চিহ্ন – I. একক Ampere (A)

কারেন্ট কত প্রকার?

কারেন্ট কে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায় যথা-

  1. এসি বা অল্টারনেটিং কারেন্ট (AC – Alternating Current)
  2. ডিসি বা ডাইরেক্ট কারেন্ট (DC – Direct Current)
  3. এডি কারেন্ট (Eddy Current)

অ্যাম্পিয়ার/এম্পিয়ার কি?

এম্পিয়ার (Ampere): কোন পরিবাহীর যে কোন অংশের মধ্য দিয়ে এক কুলম্ব চার্জ এক সেকেন্ড সময় ধরে প্রবাহিত হলে উক্ত পরিমান চার্জকে ১ অ্যাম্পিয়ার/এম্পিয়ার বলে।

কারো কারো এখানে জটিল লাগতে পারে যে কারেন্ট ও এম্পিয়ার আলাদা ভাবে কেন সংজ্ঞায়িত করা হলো? এর উত্তর হচ্ছে কারেন্টের পরিমাপ করা হয় এম্পিয়ার দ্বারা।

এম্পিয়ার/কারেন্ট কিভাবে মাপে?

এম্পিয়ার মাপবার মিটার কে এমিটার (Ammeter) বা এম্পিয়ার মিটার বলে। এম্পিয়ার/অ্যাম্পিয়ার মাপবার জন্য এমিটার কে লোডের সিরিজে সংযুক্ত করতে হয়। নিচের চিত্র মোতাবেক-

অজ্ঞাত লোডের এম্পিয়ার মাপতে এম্পিয়ার মিটার কে সিরিজে সংযুক্ত করতে হয়
অজ্ঞাত লোডের এম্পিয়ার মাপতে এম্পিয়ার মিটার কে সিরিজে সংযুক্ত করতে হয়

এখানে উল্লেখ্য সরাসরি ব্যাটারির এম্পিয়ার মাপা সম্ভব নয় এ ধরণের মাল্টিমিটার বা এম্পিয়ার মিটার দ্বারা।

ওয়াট কি?

ওয়াট (Watt): সহজ ভাবে বললে ক্ষমতার একক হচ্ছে ওয়াট। আমরা জানি যে কোন যন্ত্র তা ইলেকট্রিকাল, ইলেকট্রনিক কিংবা ম্যাকানিকাল হোক না কেন চলবার জন্য শক্তির প্রয়োজন হয়। তেমনি ভাবে কোন যন্ত্র/লোড নির্দিষ্ট সময়ে কতটুকু শক্তি খরচ করে কোন কাজ সম্পূর্ণ করতে পারে সে হিসাব কেই ওয়াট বলে।

ওয়াট কিভাবে নির্ণয় করে?

ওয়াট বের করতে ওহম এর সূত্র (Ohm’s law) অনুযায়ী DC এর ক্ষেত্রে-

P = V×I = I2×R = V2÷R

 

 

অর্থাৎ,

  • P = V×I অথবা
  • P = I×R অথবা
  • P = V2/R

এই তিন ভাবে প্রকাশ করা যায়।

ওয়াট বের করতে ওহম এর সূত্র (Ohm’s law) অনুযায়ী AC এর ক্ষেত্রে-

P = V×I×p.f

= I2×R×p.f

= (V2×p.f)÷R

 

অর্থাৎ,

  • P = V×I×P.F অথবা
  • P = I2×R×P.F অথবা
  • P = (V2×P.F)÷R

এই তিন ভাবে প্রকাশ করা যায়।
এখানে,

P = Power যার একক হলো Watt
I = Current যার একক হলো Ampere
V = Voltage যার একক হলো Volt
R = Resistance যার একক হলো Ohms
PF = Power Factor, ফেজ এঙ্গেল এর মান (Cosϴ)

ওহম এর সূত্র সম্পর্কে মজা করে জানতে চাইলে আমাদের সাইটে প্রকাশিত ওহমের সূত্র – একটি বৈজ্ঞানিক সূত্রের অবৈজ্ঞানিক প্রমাণ লেখাটি পড়তে পারেন

ওয়াট কিভাবে মাপে?

ওয়াট মাপবার জন্য ওয়াট মিটার ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও ওহম এর সূত্র দ্বারা বের করা যায় যা উপরোক্ত পরিচ্ছেদে দেওয়া হয়েছে। নিচের চিত্রে অত্যাধুনিক ডিজিটাল ও এনালগ ওয়াট মিটার এর ছবি দেওয়া হলো-

অত্যাধুনিক ডিজিটাল ওয়াট মিটার ডানের টি এনালগ ওয়াট মিটার
অত্যাধুনিক ডিজিটাল ওয়াট মিটার ডানের টি এনালগ ওয়াট মিটার

পাওয়ার ফ্যাক্টর কি?

পাওয়ার ফ্যাক্টর (Power Factor – P.F): ভোল্টেজ ও কারেন্টের মধ্যবর্তী কোসাইন কোণ (Cosϴ) কে পাওয়ার ফ্যাক্টর বলে৷ অন্যভাবে বলা যায়- রেজিস্ট্যান্স এবং ইম্পিড্যান্স এর অনুপাত অথবা প্রকৃত শক্তি (Real Power) এবং আপাত শক্তির (Apparent Power) অনুপাতকে পাওয়ার ফ্যাক্টর (P.F) বলে৷

এসি লাইনে ভোল্টেজ ও কারেন্টের মধ্যবর্তি কোসাইন (Cosϴ) কোণ কে পাওয়ার ফ্যাক্টর বলে
এসি লাইনে ভোল্টেজ ও কারেন্টের মধ্যবর্তি কোসাইন (Cosϴ) কোণ কে পাওয়ার ফ্যাক্টর বলে

ইহার কোন একক নাই, শতকরা (%) হিসাবে প্রকাশ করা হয় ৷

সঠিক পাওয়ার ফ্যাক্টর (p.f) এর মান জানা না থাকলে, হিসেব করার সময় আদর্শ মান হিসেবে পাওয়ার ফ্যাক্টর ৮০% ধরে অর্থাৎ p.f = 0.8 (ল্যাগিং) ধরে হিসাব করা হয়৷

পাওয়ার ফ্যাক্টর তিন প্রকার যথা-

  • ল্যাগিং পাওয়ার ফ্যাক্টর (Lagging Power Factor)
  • লিডিং পাওয়ার ফ্যাক্টর (Leading Power Factor)
  • ইউনিটি পাওয়ার ফ্যাক্টর (Unity Power Factor)

সামনে অ্যাক্টিভ পাওয়ার, রিঅ্যাক্টিভ পাওয়ার, পাওয়ার ফ্যাক্টর কারেকশন নিয়ে বিস্তারিত লেখা আসছে তাই এ মুহুর্তে আর লেখা বাড়ালাম না। এছাড়াও ইন্ডাক্টর, ক্যাপাসিটেন্স, ইম্পিডেন্স, ফ্রিকুয়েন্সি ইত্যাদি নিয়ে লিখবো আশাকরি।

সম্পাদনা – সৈয়দ রাইয়ান

11 মন্তব্য

উত্তর প্রদান

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন