ইলেকট্রনিক্সে কাজ করতে গেলে সোল্ডারিং শেখা অপরিহার্য। কারণ সোল্ডারিং যদি ভালো না হয় তাহলে পিসিবি তে সংযুক্ত পার্টস খুব দ্রুত ছুটে যেতে পারে। আবার অতিরিক্ত তাপে সোল্ডার করলে ইলেকট্রনিক পার্টস ও জ্বলে যেতে পারে। এসব চিন্তা করেই সোল্ডারিং সম্পর্কিত এই লেখাটি। সোল্ডারিং আয়রন কেমন? ভালো বিট দেখতে কেমন? রজন কেমন হয়? ইত্যাদির বিস্তারিত চিত্র সহ লেখাটি পড়ে নবীন ও প্রবীণ উভয়েই উপকৃত হবেন বলে আশারাখি।
পরিচ্ছেদসমূহ
- 1 সোল্ডারিং (Soldering) বা ঝালাই কি ?
- 2 সোল্ডার বা জোড়ক পদার্থ এবং জোড়া দেয়ার পদার্থ কি?
- 3 রাং বা সোল্ডারিং লিড (Soldering Lead) বা সোল্ডার (Solder) কি?
- 4 ফ্লাক্স বা রজন (Resin) কি ?
- 5 ইলেক্ট্রনিক্স কাজে ফ্লাক্স (Flux) বা রজন (Resin):
- 6 সোল্ডারিং আয়রন (Soldering Iron) বা তাঁতাল কি ?
- 7 আয়রনের বডি (Body):
- 8 সোল্ডারিং বিট (Bit) / টিপ (Tip) কি?
- 9 কয়েল (Coil):
- 10 ইলেক্ট্রিক তার (Electric Wire):
- 11 সোল্ডারিং (Soldering) বা ঝলাই করার নিয়মঃ
সোল্ডারিং (Soldering) বা ঝালাই কি ?
সোল্ডারিং হল এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে দুই বা ততোধিক ধাতুকে বা ইলেকট্রনিক্স কম্পোনেন্ট (Electronics Component) একে অপরের সাথে জোড়ক পদার্থ দ্বারা তাপ বা অন্যকোন বিশেষ শক্তি প্রয়োগ করে জোড়া দেওয়া হয় ।
সোল্ডার বা জোড়ক পদার্থ এবং জোড়া দেয়ার পদার্থ কি?
জোড়ক পদার্থ হলো এমন এক ধরনের পদার্থ যার নিম্ম গলনাংক থাকে (যে ধাতু ঝালাই দেওয়া হবে তার থেকে) এবং এর বিশেষ ধর্মের কারনে এটি ধাতুর সাথে আটকে বা লেগে থাকে। অপরদিকে ইলেকট্রনিক্স কাজে রাং বা সোল্ডারিং লিড বা সোল্ডার হলো জোড়ক পদার্থ।
রাং বা সোল্ডারিং লিড (Soldering Lead) বা সোল্ডার (Solder) কি?
রাং বা সোল্ডারিং লিড হলো এক ধরণের সংকর পদার্থ , এটি ৬০ ভাগ টিন (Tin) এবং ৪০ ভাগ সীসা (Zing) দিয়ে তৈরী, এটির গলনাংক ৮০ থেকে ৯০ ডিগ্রী সেলসিয়াস। সংকরায়নের অনুপাতের তারতম্য এর কারনে গলনাংক আরো বেশী হতে পারে।
ভাল মানের সোল্ডারিং লিড এর ভেতর ফ্লাক্স (Flux) বা রজন (Resin) থাকে। একে রেজিন কোর সোল্ডারিং লিড (Resin Core Soldering Lead) বলে। পাশের চিত্রে দেখতে পাচ্ছেন একটি সোল্ডারিং ওয়্যার বা তার । যার অভ্যন্তরে কালো বিন্দু চিহ্নিত অংশটুকু হচ্ছে সোল্ডারিং ফ্লাক্স বা রেজিন।
ফ্লাক্স বা রজন (Resin) কি ?
ফ্লাক্স বা রজন হলো একধরণের পদার্থ যা কিনা প্রাকৃতিকভাবে গাছের কষ (আঠা) থেকে তৈরী আবার এটি রাসায়নিক ভাবেও বানানো হয়।
ইলেক্ট্রনিক্স কাজে ফ্লাক্স (Flux) বা রজন (Resin):
যখন সোল্ডারিং লিড দিয়ে ঝালাই করা হয় তখন ঝালাইয়ের অংশটুকু পরিষ্কার করার কাজে ফ্লাক্স বা রজন ব্যবহার করা হয়, এছাড়া ঝালাইয়ের সময় যেন অক্সিডেশন (Oxidation) প্রক্রিয়া ঝালাইয়ে ব্যাঘাত ঘটাতে না পারে সেজন্য ফ্লাক্স বা রজন বিশেষ ভূমিকা পালন করে। অনেকেই বলে ফ্লাক্স বা রজন ব্যবহার করলে রাং বা সোল্ডার লিড নরম হয় বা সহজে গলে যায়। আসলে এই ব্যাপারটা হল অক্সিডেশন প্রক্রিয়া না ঘটতে দেওয়া, অক্সিজেন (Oxygen) রাং বা সোল্ডারিং লিড (Tin & Zinc) এর সাথে বিক্রিয়া করে এর কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়, আর ফ্লাক্স বা রজন তা করতে বাঁধা দেয় বা করে ফেললেও তা দূর করে দেয় ।
সোল্ডারিং আয়রন বা তাতাল এর টিপ বা বিট পরিষ্কার করতেও ফ্লাক্স বা রজন ব্যবহার করা হয় ।
সোল্ডারিং আয়রন (Soldering Iron) বা তাঁতাল কি ?
সোল্ডারিং বা ঝালাই করার মূলযন্ত্র হল সোল্ডারিং আয়রন বা তাতাল । এটি বৈদ্যুতিক শক্তিকে তাপ শক্তিতে রুপান্তরিত করে । সোল্ডারিং আয়রন বা তাতাল এর চারটি অংশ বডি, বিট, টিপ, কয়েল, ইলেক্ট্রিক তার ।
আয়রনের বডি (Body):
বডি দুটি অংশ দিয়ে গঠিত। বডির হাতল অংশটি তাপরোধী প্লাস্টিক বা কাঠ দিয়ে তৈরী । আর অপর অংশটি ধাতু (টিন বা লৌহ জাতীয় পদার্থ) দিয়ে তৈরী ।
সোল্ডারিং বিট (Bit) / টিপ (Tip) কি?
সোল্ডারিং আয়রন বা তাতাল এর মূলত যে অংশ দিয়ে ঝালাইয়ের এর কাজ করা হয় তাই বিট/টিপ নামে পরিচিত। এটি সোল্ডার আয়রন বা তাতাল এর অগ্রভাগ। এর আকার আকৃতি বিভিন্ন রকমের হয়। যেমনঃ চ্যাপ্টা, চোখা, সূচাল। কাজের সবিধার জন্য কখনও ৪৫ ডিগ্রি বাঁকান আবার কখনও ৯০ ডিগ্রি সোজা থাকে। তাতালের আকার বা শক্তির উপর ভিত্তি করে চিকন- মোটা বা বড়-ছোট বিট হয় । বিট কয়েক ধরনের হয়, যেমনঃ তামার তৈরী বিট (সাধারণ বিট) তামার উপর সিরামিক কোটিং করা বিট (সিরামিক বিট), বিশেষ কাজের জন্য বিশেষ ধাতু দ্বারা তৈরী বিট ।
কয়েল (Coil):
বিদ্যুৎ শক্তিকে তাপ শক্তিতে রুপান্তরিত করতে কয়েল ব্যবহার করা হয় । কয়েল এর ওয়াট যত হয় তত ওয়াট এর সোল্ডারিং আয়রন বা তাতাল বলে গন্য করা হয় । অতি সূক্ষ্ম নাইক্রম (Nichrome wire) তার চিনামাটি বা এলুমিনিয়াম এর কোর এর উপর পেচিয়ে কয়েল বানান হয় । (কোরটি দেখতে সরু পাইপের মত, যার দরুন এর ভিতর দিয়ে বিট প্রবেশ করতে পারে)
ইলেক্ট্রিক তার (Electric Wire):
কয়েল এ বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য ইলেকট্রিক তার ব্যবহার করা হয় ।
সোল্ডারিং (Soldering) বা ঝলাই করার নিয়মঃ
প্রথমে সার্কিট এর যে স্থান ঝালাই করা হবে সেই স্থান ঘষে পরিস্কার করে নিতে হবে এবং যে কম্পনেন্ট ঝালাই করা হবে সেটির লেগ/পা/টার্মিনাল/পিন ঘষে পরিস্কার করে নিতে হবে। এবার কম্পনেন্টকে সার্কিট এর জায়গা মত স্থানে স্থাপন করে নিয়ে তাতাল বা সোল্ডারিং আয়রন দিয়ে ঝালাইয়ের স্থান একটু গরম করে নিতে হবে । এবার ঝালাই এর স্থানে এক হাত দিয়ে ৪৫ ডিগ্রী বাকা করে তাতাল বা সোল্ডারিং আয়রন ধরি এবং অন্য হাতে ৪৫ ডিগ্রী বাঁকা করে সোল্ডারিং লীড বা রাং ধরি নিচের চিত্র মোতাবেক।
পরিমান মত সোল্ডারিং লীড বা রাং গলার পর তা সরিয়ে নেই এবং সোল্ডারিং আয়রন বা তাতাল দিয়ে ফিনিশিং করে ঝালাই সম্পন্ন করি। যদি কখনো সার্কিট বা কম্পনেন্ট এর জয়েন্ট ভালভাবে না হয় তবে কিছু পরিমান ফ্লাক্স বা রেজিন উক্ত স্থানে তাতাল দিয়ে গলিয়ে লাগিয়ে দিলে ঠিক মত ঝালাই হবে। প্রয়োজনে কম্পনেন্টের লেগ/পা/টার্মিনাল/পিন গলিত রেজিন এ চুবিয়ে তাতাল এর বিট দিয়ে কম্পনেন্টএর লেগ/পা/টার্মিনাল/পিন ঘষে ঘষে পরিস্কার করে নেই।
ভাল ঝালাই এবং খারাপ ঝালাই এর পার্থক্য বুঝতে নিচের চিত্র লক্ষ্য করি।
ভালো সোল্ডার করবার টিপসঃ
- কখনো কখনো আয়রন এর বিট এ ময়লা লেগে থাকে বলে রাং ধরেতে/গলতে চায় না। এক্ষেত্রে কোন কিছু দিয়ে আয়রন(তাতাল) এর বিট পরিস্কার করে নিতে হবে। ভালো হয় শক্ত কাপড় যেমন জিন্সের কাপড় কে ভিজিয়ে পরিষ্কার করা।
- আয়রন(তাতাল) এর বিট কাজ করতে করতে কাজের অনুপোযোগী বা ভোঁতা হয়ে পড়ে, এক্ষেত্রে ফাইল (রেত/রেতি) দিয়ে বিট এর মাথা ঘষে ঠিক করে নিতে হয়।
- ভালো ঝালাইয়ের দেখতে চকচক করবে, মন্দ ঝালাই দেখতে ঘোলাটে দেখাবে।
dokanta koy
অনলাইন শপ
বস, জানালেননা !!
??
রেজিস্টার, ডায়োট ব্রিজ, ও ফিউজের মাধ্যমে এলইডির কতটুকু নিরাপদ
কাল ক্যাবলের ভিতরে একটা ফিউজ আছে। ভাই একটা বানাইয়া দেখেন,,,, রেজিঃ ৫ওয়াট ১০ওহম,,, উস্তাদগন টেস্ট করার পর, পারমিশন পেলে আমরা কাজ করব,,,, এটাই নিয়ম
আমি ব্যক্তিগত ভাবে এর পক্ষপাতী নই কারণ- ক্যাপাসিটর এর মাধ্যামে প্রচুর স্পাইক এবং সার্জ কারেন্ট আসতে পারে যার ফলে এলইডি নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। আয়ু কমে যায়। কিছু জটিলতা করে এই সার্জ ও স্পাইক কমানো সম্ভব কিন্তু তার জন্য সব মিলিয়ে যে খরচ হয় তা দিয়ে আলাদা ট্রান্সফরমার বা এলইডি ড্রাইভার কেনা যায়… আর ২য় বড় কারন হলো এলইডি এর সিরিজে যুক্ত ঐ রেজিস্টার টি প্রচুর কারেন্ট খরচ করে তাপ হিসেবে… এসব দিক বিবেচনায় এলিইডি ড্রাইভার গুলোই বেশি সাশ্রয়ী।
বস্, খরচ হিসাব করে দেখলাম মাত্র ১০ টাকা, আর ড্রাইভার ৩০-৪০ টাকা, কিন্তু আলো পাওয়া যায় না। বিষয়টা জানাবেন
আচ্চা, আপনার কাছে কি প্লাস্টিকের ভাল বডি আছে? ১৫-২০ টাকার মাঝে, হোল্ডার পিন সহ
প্লাস্টিকের বডি, ড্রাইভার আর এলইডি সহ বানাতে ৫ ওয়াড় এখন ৮০ টাকার মত লাগে (কম-বেশি)।…
প্লাস্টিক বডি যদি থাকে, আমি কিছু অর্ডার করতাম
সোল্ডারিং আয়রনের বিটে অক্সিডেশনের কারণে রাং ধরছে না। বিট কাল হয়ে গেছে। সিরিজ কাগজ দিয়ে ঘষে চকচকে করলেও আইররণ কিছুক্ষণ পর আবার কাল হয়ে যাচ্ছে।
সোল্ডারিং আয়রনের বিট যদি অতিরিক্ত গরম হয় তাহলে এমন সমস্যা হতে পারে। সাধারণত ২৫-৩০ ওয়াটের সোল্ডারিং আয়রন ব্যবহার করাই সমীচীন।
বাজারে ইদানীংকাল অনেক উচ্চ ওয়াট যেমন ৬০-৮০ ওয়াটের আয়রন কে ৩০, ৪০ ওয়াট নামে বিক্রি করে। সেগুলো সাধারণত কমদামী ও নিম্ন মানের।
একান্তই সেরকম মানের সোল্ডারিং আয়রন ব্যবহার করতে হলে একটি সিরিজ ল্যাম্প ব্যবহারের পরামর্শ রইলো।
সিরিজ ল্যাম্পে ৬০-১০০ ওয়াটের সাধারন ফিলিপস, সৈনিক বাতি লাগিয়ে তার সিরিজে এই নিম্নমানের সোল্ডারিং আয়রন ব্যবহার করা যায়। তাতে বিট অতিরক্ত কালো হওয়ার হাত থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।
মূলত, সোল্ডারিং আয়রন অতিরিক্ত পরিমানে গরম হয়েগেলে বিট কালো হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে দ্রুত ক্ষয়ের সমস্যা পরিলক্ষিত হয়ে থাকে।
সিরিজ ল্যাম্প ব্যবহার করলে এই পরিস্থিতিতে কাজ হবে বলে আশা করা যায়।
আর সোল্ডারিং বিট পরিষ্কার করবার জন্য জিন্স এর বা মোটা কাপড় পানিতে ভিজিয়ে ব্যবহার করাই শ্রেয়। শিরিষ কাগজ বা রেতি দিয়ে ঘসে রেগুলার পরিষ্কার করবার প্রয়োজন নেই।
ভাই শুধু নাইক্রোম ওয়ার কিনতে পাওয়া যায় কি? পাওয়া গেলে ঠিকানা বলুন প্লিজ।
সাধারণ সোল্ডারিং আয়রন বা তাঁতালের মধ্যে যে হীটারের কয়ল থাকে তা এই নাইক্রোম ওয়ার।
পুরাতন নষ্ট কয়েল থেকে খুলে নিতে পারেন।