ব্লুটুথ টেকনোলজি সম্পর্কে বিস্তারিত
ব্লুটুথ টেকনোলজি সম্পর্কে বিস্তারিত

ওয়ারলেস টেকনোলজি তে যোগাযোগের জন্য ইদানীংকাল ব্লুটুথ খুব উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। স্বল্প দূরুত্বে যোগাযোগের জন্য এই টেকনোলজি খুবই জনপ্রিয় একটি মাধ্যম। ব্লুটুথ বর্তমানকালে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে মোবাইল ও স্মার্টফোনে। এছাড়াও ডেক্সটপ, ল্যাপটপ কম্পিউটার, পিডিএ, ডিজিটাল ক্যামেরা, স্ক্যানার, প্রিন্টার, হেডফোন, সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রেই এর ব্যবহার প্রচুর পরিমাণে পরিলক্ষিত হয়। ইদানীংকাল ব্লুটুথ ইয়ারফোন, ব্লুটুথ স্পিকার এমনকি অধুনা জনপ্রিয় ডিএসএলআর – DSLR camera তেও এর উল্লেখযোগ্য ব্যবহার আছে।

ব্লুটুথ ইয়ারফোন
ব্লুটুথ ইয়ারফোন
ব্লুটুথ হেডফোন
ব্লুটুথ হেডফোন
ইনফ্রারেড দিয়ে বিভিন্ন ডিভাইসের আন্তঃযোগাযোগ
ইনফ্রারেড দিয়ে বিভিন্ন ডিভাইসের আন্তঃযোগাযোগ

ইতোপূর্বে আবিষ্কৃত ইনফ্রারেড (Infrared – অবলোহিত রশ্মি) একই উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করত। কিন্তু তাতে ডাটা ট্রান্সফারে কিছু অসুবিধা ছিল। খুব স্বল্প দূরুত্বে কাজ করতে পারে ইনফ্রারেড। এছাড়া দুটি ইনফ্রারেড ডিভাইসের মধ্যে কোন বাঁধা থাকলে আর ডাটা ট্রান্সফার করতে পারেনা। টেলিভিশন রিমোটে এ ব্যাপারটি হয়ে থাকে। রিমোট এর সামনে যদি কোন কিছু থাকে তাহলে আর ডাটা ট্রান্সফার করতে পারে না। তখন রিমোট ও আর কাজ করে না।

ব্লটুথ এ ধরনের সকল প্রকার সীমাবদ্ধতা দূর করতে সক্ষম হয়। কারণ এই প্রযুক্তি রেডিও ওয়েভের উপর নির্ভর করে। ফলে এর সামনে দেয়াল বা ভিন্ন কিছু থাকলেও যোগাযোগের কোন বিঘ্ন ঘটেনা। খুব সুন্দরভাবেই ডাটা ট্রান্সফার করতে পারে। এছাড়া এটা ২.৪ গিগাহার্জ কম্পাঙ্কে কাজ করে। ফলে সকল ব্লুটুথ ডিভাইস প্রত্যেকটি প্রত্যেককে সাপোর্ট করে। কিন্তু এর সীমাবদ্ধতা হল, উচ্চকম্পাঙ্কের কারনে এটি মাত্র ৩০ ফিট অঞ্চল পর্যন্ত ডাটা ট্রান্সফার করতে পারে। তবে দৈনন্দিন সকল কাজের জন্য এই দূরত্ব যথেষ্ঠ।

ব্লুটুথ নামটি এলো কোথা থেকে?

অনেকের মনেই হয়ত এই প্রশ্নটি জেগেছে। আশ্চর্য জনক হলেও এই নামটি এসেছে এক সময়ের ডেনমার্কের ভাইকিং রাজা  হেরাল্ড ব্লুটুথ(Harald Bluetooth) এর নামানুসারে। ৯৫৮ থেকে ৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের ভাইকিং রাজা ছিলেন হেরাল্ড ব্লুটুথ। ডেনমার্ক এবং নরওয়ের কিছু অংশকে একত্র করে একটি দেশের আওতায় আনতে পেরেছিলেন তিনি।

বিগত শতকের ৯০ দশকে যোগাযোগ স্থাপনকারী একটি টেকনোলজি এর প্রয়োজন হয়ে পরেছিল। বিভিন্ন সংস্থা এগিয়ে আসে কাঙ্ক্ষিত বস্তুটি তৈরি করতে। তাদের মধ্যে বিশ্ববিখ্যাত ইন্টেল, নোকিয়া, এরিকসন ও ছিল। কিন্তু তারা সবাই-ই আলাদা আলাদা ভাগে বিভক্ত হয়ে কাজ করছিল। এই বিভক্ত হয়ে, সকলে পৃথকভাবে চেষ্টা করার মধ্যে অশনিসংকেত দেখেছিলেন অনেকে। বিশেষত জিম কার্ডাখ। ভিন্নভিন্ন স্ট্যান্ডার্ড, প্রটোকলের ফলে কোম্পানি গুলোর মাঝে রেষারেষি যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছিল তেমনি জটিলতার মাত্রা যাচ্ছিল ছাড়িয়ে। যে কয়টি সংস্থা আদাজল খেয়ে বাজারে নেমেছিল, তাদের একত্র করার উদ্যোগটা জিম কার্ডাখ নিয়েছিলেন।  অনেকটা সেই ভাইকিং রাজা হেরাল্ড ব্লুটুথের ভূমিকায়। প্রতিযোগী সবপক্ষকে একত্র করার কাজটা বিগতযুগে হেরাল্ডই করে দেখিয়েছিলেন! আর গত ৯০-এর দশকে কার্ডাখ।

এ টেকনোলজি আমাদের জীবনকে করেছে স্বাচ্ছন্দময়। খুব সহজেই ফোনের কল রিসিভ করা থেক শুরু করে ওয়ারেলস কিবোর্ড, মাউস সহ অনেক কিছুই ব্যবহার করতে পারি। কানে ব্লুটুথ ইয়ারফোন লাগিয়ে ব্যস্ত জানজটে বসে গানের মাঝে হারিয়ে থাকতে পারি, কিংবা প্রিয়জনের সাথে প্রিয় কথায় হতে পারি বিলীন। তা হয়ত সম্ভব হতোনা এমন কিছু স্বেচ্ছাত্যাগী মানুষ উদ্যোগী না হলে।

তথ্যসূত্রঃ EETimes, Wikipedia

বিশেষ কৃতজ্ঞতাঃ সৈয়দ রাইয়ান ভাই

2 মন্তব্য

উত্তর প্রদান

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন