সূচনাঃ
আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই? আশা করি অনেক অনেক ভাল। যাইহোক আমরা সবাই কম বেশি #পাওয়ার ট্রান্সমিশন ও #ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম নিয়ে সব সময়ের জন্য একটু বেশিই কৌতূহল থাকি। বিশেষ করে ইলেকট্রিক্যাল #ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়াদের জন্য তো এটি মাস্ট। তো এবার আপনাদের সামনে হাজির হলাম এই নিয়ে। আশাকরি সাথে থাকবেন।
পরিচ্ছেদসমূহ
আজকের বিষয়ঃ
আজকের আলোচনার বিষয় ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার সিস্টেম নিয়ে। ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া স্টুডেন্টদের জন্য পাওয়ার সিস্টেম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আজকে সে সকল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া স্টুডেন্ট দের জন্য সহজ ভাষায় এই ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশনের ব্যাপারে লিখছি।
ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমের মূল ভিত্তিঃ
ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম প্রধানত ৩ টি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে চলে। সেগুলো হল-
অর্থাৎ, প্রথমে পাওয়ার তৈরি করা হচ্ছে; তারপর তা দুর-দূরান্তে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অবশেষে কোন একটি ব্যবস্থার সাহায্যে সেগুলো ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হচ্ছে।
সম্পূর্ণ প্রকৃয়াঃ
আমাদের দেশের কথাতেই আসা যাক। যেখানে পাওয়ার বা বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে সেখান থেকে সচারচর পাওয়া যায় ১১ কিলো ভোল্ট। এটিকে যদি আমরা পুরো দেশে বা দূরে কোথাও পাঠাতে চাই তাহলে মাত্র ১১ কিলোভোল্টে তা পাঠাতে গেলে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া ইঞ্জিনিয়ার দের হাতে বস্তা ভর্তি বিদ্যুৎ নিয়ে বসে থাকলেও বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে না। 😛
এর জন্য পাঠানোর আগেই সেটা একবার স্টেপ আপ করে নেওয়া হয়। এখানে উল্লেখ্য যে বিশেষ কয়েকটি কারণে এই ১১ কিলোভোল্ট বিদ্যুৎ কে ১৩২ অথবা ২৩০ অথবা ৪০০ কিলোভোল্ট এ স্টেপ আপ করা হয়। আমার পূর্বের লেখা ট্রান্সফরমার সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্নের উত্তরে স্টেপ আপ নিয়ে লিখেছি বিধায় এখন তা আবার উল্লেখ করছি না।
তারপর এটা ট্রান্সমিশন লাইনের মধ্যে দিয়ে পার করা হয় অনেক দূরে। এখন ধরুন একটা জায়গায় ঐ বিদ্যুৎ এর সংযোগ দেবার প্রয়োজন হয়েছে। সুতরাং সেখানে কানেকশন দেওয়ার জন্য সেই লাইন কে আবার ১৩২/২৩০/৪০০ কিলোভোল্ট থেকে স্টেপ ডাউন করে ১১ কিলোভোল্টে নামিয়ে নিয়ে আসা হয়। এবার সেটি যদি কোন বড় মিল, বা ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রতিষ্ঠান হয়ে থাকে তাহলে সেখানে সরাসরি ঐ ১১ কিলোভোল্টের লাইন চলে যায় ব্যবহারের জন্য। তারপর তারা সেটাকে কমিয়ে বা বাড়িয়ে ব্যবহার উপযোগী করে নেয়।
আচ্ছা এবার তাহলে আসা যাক বাসা-বাড়িতে কি হয়? খুবই সিম্পল ব্যপার। এবার সেই ১১ কিলোভোল্ট কে আবারও স্টেপ ডাউন করে ০.৪৪ কিলোভোল্টে বা ৪৪০ ভোল্টে নিয়ে আশা হয়। আর সেটা বাসা বাড়ি বা ছোট কোন ভোক্তার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকে প্রয়োজন মতো ২২০-২৪০ ভোল্টে ট্রান্সফর্ম করে ব্যবহার করা হয়।
নিচের চিত্রটিতে সম্পূর্ণ প্রকৃয়াটিকে সহজভাবে দেখানো হয়েছে-
যে সকল কোম্পানি এসব কাজ সুষ্ঠু ভাবে করে থাকেঃ
শুধু মাত্র একটি কোম্পানি এই এতগুলো কঠিন ও জটিল কাজ একা করতে পারে না। এই পুরো প্রসেস টা ঠিক ভাবে করার জন্য অনেক গুলো কোম্পানির এক হয়ে কাজ করতে হয়। যেমনঃ
- বিপিডিবি (BPDB – Bangladesh Power Development Board): বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড। অর্থাৎ যেকোন জায়গা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজ বাংলাদেশে এক মাত্র এরাই করে থাকেন। অন্য কোন কোম্পানি এটা করতে পারে না।
- পিজিসিবি (PGCB – Power Grid Company Bangladsh): পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশ। শুধু মাত্র এনারাই পুরো বাংলাদেশে পাওয়ার ট্রান্সমিশন করে থাকে। তার মানে দেশে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন করাই এদের মূল কাজ।
ডিস্ট্রিবিউশনঃ
এবার আসা যাক এই ট্রান্সমিশন লাইন থেকে আমরা অর্থাৎ সাধারন ভোক্তা কিভাবে বিদ্যুৎ পায়। এর জন্য বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কাজ করে থাকে । যেমনঃ
ডেসকো (DESCO – Dhaka Electric Supply Company Limited): এরা শুধু মাত্র ঢাকা জোন কে কভার করে। ঢাকার বাইরে এরা কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে লাইন দিতে পারে না। পুরো ঢাকা এই কোম্পানিটিই পাওয়ার সাপ্লাই দেয়।
বিপিডিবি, আর ই বি (BPDB, REB): এদের কাজ পুরো বাংলাদেশ কভার করা। একেকটি কোম্পানি তাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সাব জোনে তাদের অঞ্চল গুলোকে ভাগ করে নেয়। এতে তাদের কাজ আরও সহজ হয়ে উঠে।
ট্রান্সমিশন লাইনঃ
ট্রান্সমিশন লাইন প্রধানত ২ ধরনের হয়ে থাকে ।
- ১। ওভার হেড
- ২। আন্ডারগ্রাউন্ড
ওভার হেড ট্রান্সমিশন লাইনঃ
আমরা অনেক সময় গ্রামের বাড়িতে গেলে অথবা ভ্রমনের সময় দূরে তাকালে দেখতে পাই যে অনেক বড় বড় টাওয়ার মাঠের মধ্যে দিয়ে অবস্থিত। এবং তার সাথে অনেক মোটা মোটা তার লাগানো। মূলত এগুলো কে ওভার হেড ট্রান্সমিশন লাইন বলে। অর্থাৎ মাথার উপর দিয়ে এগুলোর লাইন চলে যায়। এই প্রক্রিয়ার বেশ কিছু সমস্যা আবার উপকারি দিক উভয়ই আছে। যেমন-
অসুবিধাঃ
- এগুলো অনেক জায়গা নিয়ে বিস্তৃত হয়ে থাকে
- যদি কোন ইন্সট্রুমেন্ট নষ্ট বা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকে তাহলে এগুলো সাড়াতে অনেক খরচ হয়।
সুবিধাঃ
কিন্তু এগুলোর সুবিধাও কম নয়, যেমনঃ
- এগুলো এভারেজ রেট ৬৬ কিলোভোল্টের উপরে বিদ্যুৎ পাস করানো সম্ভব এবং নিরাপদ।
- যদি কোথাও লাইন ফল্ট দেখা যায় তবে তা নির্ণয় করা সহজ।
- তাছাড়া এগুলো বানাতে বা স্থাপন করতেও অনেক কম খরচ হয় তূলণামূলক ভাবে।
আন্ডারগ্রাউন্ড ট্রান্সমিশন লাইনঃ
এই ধরনের ট্রান্সমিশন লাইন বলতে বুঝায় যেসব লাইন মাটির নিচ দিয়ে পাস করানো হয় । তবে মাটির নিচ দিয়ে পাস করানো লাইন খুবই বিপজ্জনক হতে পারে । তাই বাংলাদেশে আপাতত ওভারহেডকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এধরনের আন্ডারগ্রাউন্ড ট্রান্সমিশন লাইনের কিছু সুবিধা ও অসুবিধা হল-
অসুবিধাঃ
- এগুলো বানাতে বা কোন জায়গা দিয়ে স্থাপন করতে অনেক খরচ হয়। অর্থাৎ এগুল খুব ই ব্যয় বহুল।
- তাছাড়া এই প্রক্রিয়ায় যে তার ব্যবহার করা হয় সেগুল আর ১০ টি তারের মত এত সিম্পল ও না। বেশ কয়েকটি কোটিং করা থাকে এ ধরনের গায়ে। তবে এটি অনেক কম জায়গা খরচ করেই পাস হয়ে যেতে পারে।
- এর আরেকটি প্রধান সমস্যা হল এটার ম্যাক্সিমাম লাইন ভোল্টেজ লিমিট ৬৬ কিলোভোল্ট। অর্থাৎ এর উপরে বিদ্যুৎ পাস করালে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। আবার এই লাইনের মধ্যে যদি কোন সমস্যা দেখা যায় তবে তা নির্ণয় করতে অবস্থা প্রায় কেরোসিন হয়ে যায়।
সুবিধাঃ
- পরিচ্ছন্ন ভাবে সাজানো যায়। অর্থাৎ, রাস্তাঘাটে ক্যাবল ঝুলতে দেখা যায় না।
এসমস্ত দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশে আন্ডারগ্রাউন্ড লাইন এর পরিবর্তে ওভার হেড ট্রান্সমিশন লাইন পদ্ধতিকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। নিচের চিত্রে আন্ডারগ্রাউন্ড পাওয়ার লাইন নিয়ে পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারদের কর্ম ব্যস্ততা দেখতে পারছেন-
প্রশ্নঃ
অনেকে হবু ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়াদের মনেই হয়ত এতক্ষনে প্রশ্ন এসে গেছে যে- এই ইলেকট্রিক্যাল লাইন গুলোতে ডিসি ব্যবহার না করে এসি ব্যবহার করা হয় কেন?
উত্তরঃ আগামী পর্বে এর বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। তবে এখানে বলা বাহুল্য যে-
- হাই ভোল্টেজ ডিসি এর চেয়ে হাই ভোল্টেজ এসি অনেক সাশ্রয়ী।
- হাই ভোল্টেজ ট্রান্সমিশনে ডিসি এর ক্ষেত্রে যে যন্ত্রপাতি গুলো ব্যবহার করা হয় সেগুলো অনেক ব্যয় সাপেক্ষ।
- লাইনের কোথাও কোন ফল্ট দেখা দিলে তা বের করতে করতে কিয়ামত ও চলে আসতে পারে।
- আর প্রধান যে বিষয়টি সেটি হল ডিসি হাই ভোল্টেজ কে স্টেপ আপ করাটা খুব খুব কষ্ট সাপেক্ষ।
তাই ডিসি এর চেয়ে এসিকে গুরুত্ব দেওয়া হয় বেশি। তবে সামনের সংখ্যায় তার পরিপূর্ণ উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব ।
সমাপ্তিঃ
আজ আর না। পরবর্তী তে আবারও দেখা হবে ইন শাহ আল্লাহ। আপনাদের যদি এই বিষয়ে অথবা যেকোন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রনিক্স বিষয়ে কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করুন অথবা সরাসরি আমার ফেসবুক প্রোফাইলে জানাতে পারেন। জানা থাকেলে তার উত্তর আমি দেওয়ার চেষ্টা করব। অবশ্যই শেয়ার ও লাইক দিয়ে সাথেই থাকবেন 🙂
Thank you Vai ??
Youre most welcome
মন্তব্য:Thanks vaia
Many many thank’s
thakns for this bro
Most welcme
মন্তব্য:tnx
onk sondor post
Thanks a lot. I already share your post. We want this type of post.
Thank you very much . We will keep posting more good posts . 🙂 Stay connected
খুব ভালো। ধন্যবাদ।
Welcome . Sathe thakben 🙂
খুব ভালো। ধন্যবাদ