পরিচ্ছেদসমূহ
ক্যাপাসিটর বা ধারক কি?
ক্যাপাসিটর বা ধারক একটি বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ বিশেষ। দুটি পরিবাহী পাতের মাঝে একটি ডাই-ইলেকট্রিক অপরিবাহী পদার্থ নিয়ে এটি গঠিত। ডাই-ইলেকট্রিক এমন একটি পদার্থ যা বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের প্রভাবে পোলারায়িত হতে পারে। এ ডাই-ইলেকট্রিক পদার্থ হতে পারে কাঁচ, সিরামিক, প্লাস্টিক কিংবা শুধুই বাতাস।
ধারক, সার্কিট এ বিদ্যুৎ সংরক্ষণের আধার হিসেবে কাজ করে। ক্ষেত্রবিশেষে এটি উচ্চ ও নিম্ন তরঙ্গের জন্য ছাঁকনি (filter) হিসেবে কাজ করে। পূর্বে একে কনডেনসার বলে ডাকা হত (এখনো ক্ষেত্রবিশেষে ডাকা হয়)। কারণ, প্রথমে বিজ্ঞানীগণ ভেবেছিলেন, ধারক এর মাঝে তড়িৎ একেবারে জমাট বেঁধে যায়। কিন্তু পরে জানা যায় যে, এখানে তড়িৎ জমে যায় না। শুধুমাত্র আধান সঞ্চিত হয় এবং প্রয়োজনানুযায়ী ব্যবহার করা যায়। মাঝের ডাই-ইলেকট্রিক পদার্থ টি ধারকত্ব বৃদ্ধি করে। ক্যাপাসিটর এর একক হচ্ছে ফ্যারাড।
প্রকারভেদ

নিচে বহুল ব্যবহৃত ক্যাপাসিটরের কিছু প্রকারভেদ দেওয়া হলো।
ইলেকট্রোলাইটিক ধারক/ক্যাপাসিটর (Electrolytic Capacitor)
উচ্চ ধারকত্ব-র জন্য এই ধারক সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। রেডিও-র ফিল্টার বাইপাস সার্কিটে ব্যবহৃত হলেও AC সার্কিটে ব্যবহার করা যায় না।
সিরামিক ধারক/ক্যাপাসিটর (Ceramic Capacitor)
এতে সিরামিক কে ডাই-ইলেক্ট্রিক হিসেবে ব্যবহৃত হলেও এদের ধারকত্ব খুবই কম। মাত্র 1pF থেকে 1000pF এবং সর্বোচ্চ সহনীয় ক্ষমতা ৫০০ ভোল্ট পর্যন্ত। মূলত কাপলিং-ডিকাপলিং বাইপাস সার্কিটের এটি ব্যবহৃত হয়।

পরিবর্তনশীল বায়ু ধারক বা ট্রিমার (Varaible Capacitor/Trimmer Capacitor)
ট্রিমার ক্যাপাসিটরের মান প্রয়োজনমত বাড়ানো এবং কমানো যায়। এতে অনেকগুলো অর্ধবৃত্তাকার সমান্তরাল এলুমিনিয়ামের পাত দুভাগে ভাগ করে বসান থাকে। পাতগুলোর মাঝে বায়ু ডাই-ইলেকট্রিক মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। টিউনিং সার্কিট হিসেবে এদের ব্যবহার করা হয়।
ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক সার্কিটে ক্যাপাসিটর বা ধারকের ব্যবহার অনস্বীকার্য।
ক্যাপাসিটর সম্পর্কে কিছু সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও তার উত্তর
ইলেকট্রিকাল কিংবা ইলেকট্রনিক সার্কিটে ক্যাপাসিটরের গুরুত্ব অপরিসীম। ইন্ডাক্টর, রেজিস্টর, আইসি এর পাশাপাশি এ নিয়ে আমাদের প্রশ্ন ও কম নয়। নিচে তেমনি গুরুত্বপূর্ণ কিছু সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও তার উত্তর তুলে ধরছি।
ক্যাপাসিটর কি বা কাকে বলে?
এটি মূলত বৈদ্যুতিক চার্জ সঞ্চয়ক যন্ত্র বিশেষ। এর বাংলা অর্থ “ধারক” অর্থাৎ যে বৈদ্যুতিক চার্জ ধারণ করে।
সার্কিটে ক্যাপাসিটর এর কাজ কি
এটি কোনো ইলেকট্রিকাল কিংবা ইলেকট্রনিক্স সার্কিটে যুক্ত হয় ও বৈদ্যুতিক চার্জ সঞ্চিত করে। আবার সার্কিটের প্রয়োজনে উক্ত জমাকৃত চার্জ অবমুক্ত করে।
সহজ ভাবে বুঝতে ক্যাপাসিটরকে খুব ছোট আকারের ব্যাটারির সাথে তুলনা করা যেতে পারে। ব্যাটারি এই বৈদ্যুতিক চার্জ কে দীর্ঘ সময়ের জন্য জমা করতে পারে। অপরদিকে ক্যাপাসিটর খুব স্বল্প সময়ের জন্য এই চার্জ জমা করতে পারে।
পাওয়ার সাপ্লাইতে কেমন ধরনের ক্যাপাসিটর ব্যবহার করবো?
পাওয়ার সাপ্লাই সার্কিট গুলোতে একটু বড়, মোটা ও গুণগত মানে ভালো ধরনের ক্যাপাসিটর ব্যবহার করা উচিৎ। যেহেতু পাওয়ার সাপ্লাই যেকোনো সার্কিট ও প্রজেক্টের প্রাণ। তাই একে ভাল মতো তৈরী করলে তা যেমন দীর্ঘস্থায়ী হয় তেমনি এর গুনগত মান ও ভালো থাকে। তাই পাওয়ার সাপ্লাইতে কোনো সময়ই কার্পণ্য না করে উপযুক্ত ও গুনগত মানের যন্ত্রাংশ ব্যবহার করাই ভালো হবে।
কোনো সার্কিটে কত ভোল্টের ক্যাপাসিটর ব্যবহার করবো
ক্ষেত্র বিশেষে এমন হয় যে সার্কিট ডায়াগ্রামে ক্যাপাসিটরের মান দেয়া থাকলেও সেটির ভোল্ট উল্লেখ থাকে না। সেক্ষেত্রে সার্কিটের সাপ্লাই ভোল্টেজের মান কে স্থির ধরে নিয়ে ক্যাপাসিটরের ভোল্ট ধরতে হয়। খেয়াল রাখতে হবে যেন ক্যাপাসিটরের ভোল্ট সাপ্লাই ভোল্ট থেকে বেশী থাকে। নয়ত সার্কিট কাজ না করবার সমূহ সম্ভবনা আছে।
নোটঃ কিছু সার্কিট আছে যা এক সাপ্লাই ভোল্টে চলেও বিভিন্ন মানের ভোল্ট উৎপন্ন করতে পারে। যেমন আইপিএস, ইনভার্টার, ভোল্টেজ বুস্টার ইত্যাদি। সেক্ষেত্রে সার্কিট বুঝে ক্যাপাসিটরের ভোল্ট নির্ণয় করতে হবে। তবে সে সকল সার্কিটের ক্ষেত্রে ক্যাপাসিটরের ভোল্ট বিশেষ ভাবে উল্লেখ থাকে।
এম্পলিফায়ারে কেমন ধরনের ক্যাপাসিটর ব্যবহার করতে হবে
পাওয়ার এম্পলিফায়ার এর প্রাণ হচ্ছে পাওয়ার সাপ্লাই। উপযুক্ত কারেন্ট ও ভোল্টেজ না পেলে এম্পলিফায়ার ভালো কাজ করে না। কম্পিউটারের অথবা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে হাই ফাই এম্পলিফায়ার বাজানোর মজাই আলাদা। উপযুক্ত সাউন্ড বক্স এর মাধ্যমে তৈরীকৃত এমন ধরনের সাউন্ড সিস্টেমে অবশ্যই খুব উন্নত মানের জাপানী ক্যাপাসিটর ব্যবহার করা উচিৎ। আমাদের ইলেকট্রনিক্স সাইটে এ সংক্রান্ত তথ্যবহুল লেখা পড়তে পারেন এই লিংক থেকেঃ পাওয়ার এম্পলিফায়ার কিংবা আমাদের অডিও বিভাগ থেকে।
ছোট পিএফ (pF) ক্যাপাসিটরের মান কীভাবে নির্ণয় করবো
সাধারণত পিএফ ক্যাপাসিটরের মান গুলোকে কোডের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। যেমনঃ
101 – এর অর্থ হচ্ছে, এটির মান ১০০ পিএফ
102 – এর অর্থ হচ্ছে, এটি ১০০0 পিএফ বা ১ ন্যানো ফ্যারাড মানের, এভাবে…
105 – এর অর্থ হচ্ছে, এটির মান ১০০0০০০ পিএফ বা এটি ১ মাইক্রো ফ্যারাড মানের ক্যাপাসিটর
অর্থাৎ, ৩য় ঘরে যত মান দেয়া আছে ঠিক ততোগুলো “০” বসালে এই পিএফ (pF) ক্যাপাসিটরের মান পাওয়া যাবে। একে প্রয়োজনে ন্যানো ফ্যারাড বা মাইক্রোফ্যারাডে পরিবর্তন করে নিলেই এর ব্যবহারিক মান বের হবে।
শুধু মান ছাড়াও ক্যাপাসিটরে ব্যবহৃত কোড দিয়ে এর ভোল্টেজ, টলারেন্স প্রভৃতি নির্দেশিত থাকে।
আরো জানতে আমার ক্যাপাসিটর নাম্বার কোড নিয়ে লিখাটি পড়তে পারেন।
পরিশিষ্ঠঃ
ক্যাপাসিটর ইলেকট্রিক্যাল কিংবা ইলেকট্রনিক্স সার্কিটের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ। এর সম্পর্কে বলে শেষ করা সম্ভব নয়।
এই লেখার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিছু সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন তুলে দিলাম। যা হয়ত নবীনদের অনেক উপকারে আসবে। তাহলেই আমার কাজ স্বার্থক বলে মনে করবো।
আরো কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করে জানাতে অনুরোধ রাখছি।
কোন সার্কিটের জন্য কত মাইক্রোফ্যারাডের এবং কত ভোল্টের ক্যাপাসিটর লাগবে? এবং সেটা কিভাবে হিসাব করতে হয় কয়েকটা উদাহরনসহ আলোচনা করলে খুবই উপকৃত হতাম ভাইয়া।
ধন্যবাদ আপনার মতামতের জন্য। সামনের কোনো লেখাতে পাবেন আশাকরি
কাপলিং ও ডিকাপলিং কি
প্রিয় মাসুম, ধন্যবাদ তোমার কমেন্টের জন্য্য।
আমরা জানি একটি সার্কিট এর বিভিন্ন স্টেইজ থাকে। যেমন এম্পলিফায়ারের প্রথম স্টেজ, ২য় স্টেজ, ৩য় স্টেজ ইত্যাদি।
এখন এই স্টেজ গুলোর মাঝে সংযোগ করবার জন্য যে ক্যাপাসিটর ব্যবহার করাহয় তাকে কাপলিং ক্যাপাসিটর বলে।
কাপলিং ও ডি কাপলিং কি
প্রিয় মাসুম, ধন্যবাদ তোমার কমেন্টের জন্য্য।
আমরা জানি একটি সার্কিট এর বিভিন্ন স্টেইজ থাকে। যেমন এম্পলিফায়ারের প্রথম স্টেজ, ২য় স্টেজ, ৩য় স্টেজ ইত্যাদি।
এখন এই স্টেজ গুলোর মাঝে সংযোগ করবার জন্য যে ক্যাপাসিটর ব্যবহার করাহয় তাকে কাপলিং ক্যাপাসিটর বলে।
মন্তব্য: Thanks vaia. Gas generator operation and maintenance somporka akta post deban vaia pls.
অবশ্যই চেষ্টা করবো। হয়ত কিছু সময় লাগবে। ধন্যবাদ আপনাকে 🙂
sir resistor er kono polarity hoi na kano ?
onno dike capacitor,diode er polarity er projon hoi kano?
শুধু রেজিস্টরই নয় কিছু কিছু ক্যাপাসিটর ও বাই পোলার বা নন পোলার হয়ে থাকে।
এদের অভ্যান্তরীণ গঠনই এমন যে এটির প্রত্যেকটি পা এর আলাদা পোলারিটি থাকে। অপরদিকে রেজিস্টর এমন গঠনের নয় বিধায় রেজিস্টর এর কোন পোলারিটি থাকে না।
যারা বুজতে পারে তাদের জন্য ভাল, আর যারা বুজতে পারেনা তাদের জন্যই সমেস্যা
তবে আমার জানার ইচ্ছে আছে,,,,,
সাধারণ একটা ক্যাপাসিটর কীভাবে টেস্ট করবো। তথা সিলিং ফ্যানের ক্যাপাসিটর নষ্ট না ভালো তা পরিক্ষা করবো কিভাবে।
সিলিং ফ্যানের বড় হাই ভোল্টেজ ক্যাপাসিটর গুলো সিরিজ ল্যাম্প ব্যবহার করে টেস্ট করতে হয়। ধন্যবাদ প্রশ্নের জন্য।