ডাটাশিট দিয়ে ট্রানজিস্টর নির্বাচন অনেকের জন্যই বেশ কষ্টকর। আজ এই লেখার মাধ্যমে ট্রানজিস্টর নির্বাচন এর জন্য #ডাটাশিট কে কিভাবে কাজে লাগানো যায় তাই জানবো। আমরা অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ট্রানজিস্টর বাজারে পাই না। তখন দরকার হয় অল্টারনেট বা বিকল্প কোন ট্রানজিস্টর ব্যবহার করা। কিন্তু কিভাবে বুঝবো আমার সার্কিট টিতে বিকল্প হিসাবে কোন ট্রানজিস্টরটি ঠিকমত কাজ করবে? ঠিক এমন অবস্থাতেই ডাটাশিট দরকার হয়ে পড়ে।
এছাড়াও একটি #ট্রানজিস্টর এর ডাটাশিটে বিভিন্ন রকমের অক্ষর, নাম্বার লেখা থাকে। যা মূলত উক্ত কম্পোনেন্টের বিভিন্ন বৈশিষ্ট তুলে ধরে। এর মাধ্যমেই আমরা এসব কম্পোনেন্টকে আলাদা আলাদা ভাবে চিনতে পারি (দেখতে একই হলেও)। এই আপাতঃ দূর্বোধ্য লেখাগুলো কে সহজবোধ্য করবার জন্যও আমাদের প্রয়োজন একটি অনন্য তথ্যভাণ্ডার, “ডাটাশিট“।
সতর্কবার্তাঃ একদম নতুনদের জন্য এই পদ্ধতিটি যথেষ্ট জটিল মনে হতে পারে। দীর্ঘ অনুশিলন ও বাস্তব প্র্যাকটিসের মাধ্যমে একে আয়ত্ব করতে হবে।
পরিচ্ছেদসমূহ
- 1 ডাটাশিট কি?
- 2 ডাটাশিট (Datasheet) কিভাবে পড়তে হয়?
- 3 ট্রানজিস্টর এর গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য সমূহঃ
- 4 একটি কমন ট্রানজিস্টর ডাটাশিট দেখিঃ
- 5 ফিচার (Features) বা বৈশিষ্ট সমূহঃ
- 6 ট্রানজিস্টরের Vceo এবং Vcbo কি?
- 7 ট্রানজিস্টরের বেজ এ সর্বোচ্চ কত ভোল্ট দেয়া যায়?
- 8 পিন আউট/পিনিং (Pinouts/Pinning) – পিন/লেগের সজ্জাঃ
- 9 একটি ট্রানজিস্টর সর্বোচ্চ কত এম্পিয়ার কারেন্ট দিতে পারে?
- 10 এপ্লিকেশন (Applications) – ব্যবহারঃ
- 11 ডেসক্রিপশন (Description) – বর্ণনাঃ
- 12 ক্যারেক্টারিস্টিক (CHARACTERISTICS) – গুণাবলীঃ
- 13 বিকল্প বা অল্টারনেট ট্রানজিস্টর নির্বাচন করাঃ
- 14 কিভাবে বুঝবো কোন ট্রানজিস্টর টি একই ধরণের?
ডাটাশিট কি?
ডাটাশিট বলতে আমরা কি বুঝি? ডেটা/ডাটা (Data) শব্দের অর্থ তথ্য বা উপাত্ত আর শিট (Sheet) মানে পাতা বা কাগজ। অর্থাৎ ডাটাশিট মানে কোন নির্দিষ্ট বিষয় বা বস্তু সম্পর্কে তথ্য সংবলিত পাতা বা কাগজ। সুতরাং বলা যায় ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স কম্পোনেন্ট এর বিস্তারিত তথ্য, বৈশিষ্ট্য সংবলিত নথিপত্র কে কম্পোনেন্ট এর ডাটাশিট বলে।
ডাটাশিট একটি ইলেকট্রিক্যাল বা ইলেকট্রনিক কম্পোনেন্টের সকল তথ্য ধারণ করে। অর্থাৎ একটি কম্পোনেন্টের বিভিন্ন মান, লোড ইত্যাদি তথ্য এতে লেখা থাকে। বলা যায় ম্যানুয়াল এর মতো। কোনো জিনিসের ম্যানুয়ালে যেমন জিনিসটির ব্যবহারবিধি সম্পর্কে বিস্তারিত লেখা থাকে, তেমনি ডাটাশিটে কম্পোনেন্ট এর সকল প্রকার তথ্য বিস্তারিত লেখা থাকে।
ডাটাশিট (Datasheet) কিভাবে পড়তে হয়?
চলুন এবার মূল কথায় আসি। আজকে আমরা আলোচনা করব ট্রানজিস্টর ডাটাশিট পড়া বা রিডিং নিয়ে। এবং ডাটাশিট কে কাজে লাগিয়ে একই রকমের বিকল্প ট্রানজিস্টর কিভাবে বের করা যায় তা নিয়ে। ডাটাশিট এর বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বুঝতে চাইলে কিছু বেসিক বিষয় জানা জরুরী। যেহেতু আজকে আমরা ট্রানজিস্টর ডাটাশিট নিয়ে আলোচনা করছি তাই আমাদের আলোচনা কে সহজবোধ্য করতে ট্রানজিস্টর এর প্রাথমিক কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।
ট্রানজিস্টর এর গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য সমূহঃ
আজকে আমরা বাইপোলার কমন ট্রানজিস্টর নিয়ে আলোচনা করবো। প্রথমে এই ট্রানজিস্টরের কিছু বেসিক বৈশিষ্ট্য বুঝতে চেষ্টা করবো। পরবর্তী কোন এক পর্বে আমরা আইসি ডাটাশিট নিয়েও জানবো।
একটি ট্রানজিস্টর এর প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য গুলো নিম্নরূপঃ
- * ট্রানজিস্টর টি কি টাইপ (NPN না PNP)
- * এটি সর্বনিম্ন বা সর্বোচ্চ কত কারেন্ট, ভোল্টেজ, ফ্রিকুয়েন্সি, সুইচিং গ্রহণ ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে
- * পিন কনফিগারেশন বা এর বিভিন্ন পা এর সজ্জা
- * এটি কোথায় ব্যবহার করা হয়
মোটামুটি ভাবে উপরের বৈশিষ্ট্য গুলোই ট্রানজিস্টর এর প্রধান এবং সচরাচর বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
একটি কমন ট্রানজিস্টর ডাটাশিট দেখিঃ
এখন আমরা বর্তমানে বহুল ব্যবহার হওয়া BC547, BC546 NPN ট্রানজিস্টর এর ডাটাশিটের প্রথম পাতা দেখে বুঝতে চেষ্টা করবো বিভিন্ন তথ্যসমূহ। সুবিধের জন্য পাঠকগণ নিচে দেয়া লিংক থেকে ডাটাশিট টি ডাউনলোড করে নিতে পারেন। তাহলে লেখার সাথে মিলিয়ে বুঝতে সুবিধা হবে।
BC547 ও BC546 এর ডাটাশিট টি ডাউনলোড করতে পারেন এই লিংক থেকে
আমরা জানি মোটামুটি সব জায়গায় পাওয়া যায় এই BC547 ট্রানজিস্টর টি। আমরা যদি ডাটাশিট লক্ষ্য করি তাহলে দেখবো এই ট্রানজিস্টর ডাটাশিট এর মূল বিষয়বস্তুগুলো হলঃ
- Features বা ট্রানজিস্টর টির বৈশিষ্ট
- Pinouts/Pinning বা ট্রানজিস্টর টির পিন/লেগের সজ্জা
- Applications বা এই ট্রানজিস্টর টি কোন ধরনের সার্কিট এ ব্যবহার হয় সেটি
- Description – ট্রানজিস্টরটির টাইপ, প্যাকেজ, ভার্শন ইত্যাদি বর্ণনা
- Limiting Value – সীমাবদ্ধতা বা সর্বোচ্চ/সর্বনিম্ন সীমা
- Characterestic – বিশেষ গুনাগুণ সমূহ
এখন আমরা পর্যায়ক্রমে এই বিষয় গুলো সম্পর্কে জানবো।
ফিচার (Features) বা বৈশিষ্ট সমূহঃ
উপরে দেয়া ডাটাশিটের ছবি’র 1 নাম্বার পয়েন্টে BC547 এর Features এ লেখা আছে Low Current (Max. 100mA). এর মানে হচ্ছে ট্রানজিস্টরটি সর্বোচ্চ ১০০ মিলি এম্পিয়ার কারেন্ট সহ্য করতে পারবে অথবা হ্যান্ডেল করতে পারবে।
Low Current এর নিচে লেখা আছে Low voltage (Max. 65v) অর্থাৎ ট্রানজিস্টরটি সর্বোচ্চ ৬৫ ভোল্ট সহ্য করতে পারবে (BC547 এর ক্ষেত্রে )।
যদি আপনার কোন সার্কিট এর কারেন্ট রেটিং ১০০ মিলিএম্পিয়ার এর বেশি হয়, অথবা সার্কিট এর ভোল্টেজ যদি ৬৫ ভোল্ট এর বেশি হয় (BC546 এর ক্ষেত্রে ৬৫ ভোল্ট। BC547 এর ক্ষেত্রে এটি সর্বোচ্চ ৪৫ ভোল্ট) এবং আপনি সেখানে এই ট্রানজিস্টরটি ব্যবহার করেন, তাহলে ট্রানজিস্টরটি অকার্যকর হয়ে যাবে। নিচের চিত্রটি দেখলে আশাকরি বুঝতে সহজ হবে-
উপরের চিত্রে মেক্সিমামের ঘরে লাল চিহ্নিত অংশটুকু দ্বারা BC547; BC547B; BC547C ট্রানজিস্টরের ভোল্টেজ 45V কে নির্দেশ করা হয়েছে। BC546A; BC546B এর ক্ষেত্রে তা ৬৫ ভোল্ট।
ট্রানজিস্টরের Vceo এবং Vcbo কি?
Vceo দ্বারা ট্রানজিস্টরের বেজ এ কোন সিগনাল প্রদান না করে কালেক্টর থেকে ইমিটার ভোল্টেজ এর সর্বোচ্চ মান কে বোঝানো হয়। কমন কালেক্টর টাইপ সার্কিট এর ক্ষেত্রে এই Vceo মান কেই ট্রানজিস্টরের সর্বোচ্চ ভোল্টেজ বলে গণ্য করা হয়।
অনুরূপভাবে, Vcbo দ্বারা কালেক্টর ও বেজ ভোল্টেজ এর সর্বোচ্চ সীমা নির্দেশ করে। কমন বেজ টাইপ সার্কিটের ক্ষেত্রে এই মানটি দ্বারাই উক্ত ট্রানজিস্টরের সর্বোচ্চ ভোল্টেজ নির্দেশিত হয়।
ট্রানজিস্টরের বেজ এ সর্বোচ্চ কত ভোল্ট দেয়া যায়?
এটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন সার্কিট ডিজাইনিং এর ক্ষেত্রে যার উত্তর ও ডাটাশিটে দেয়া আছে। উপরে দেয়া ছবিতে লক্ষ্য করেলে দেখতে পাবেন Vebo নামক একটি ঘর আছে।
এই Vebo দ্বারা কোন ট্রানজিস্টরের ইমিটার ও বেজ এর মধ্যকার সর্বোচ্চ ভোল্টেজ উল্লেখ করা থাকে (কমন কালেক্টর সার্কিটের ক্ষেত্রে)। এই ট্রানজিস্টরটির ক্ষেত্রে এটি ৬ ভোল্ট।
পিন আউট/পিনিং (Pinouts/Pinning) – পিন/লেগের সজ্জাঃ
সাধারণত ট্রানজিস্টর এর তিনটি পা থাকে। যথাঃ বেস, কালেক্টর এবং ইমিটার। আবার মসফেটের ক্ষেত্রে পা গুলোর নাম ভিন্ন (ড্রেন, গেট ও সোর্স)। BC547 এর ডাটাশিট এ সুন্দর করে চিত্রের মাধ্যমে এর পিন আউট দেখানো হয়েছে। বোঝানোর সুবিধার্থে ছবি দিয়ে তা দেখানো হলো।
আমরা যারা হবিষ্ট আছি তারা মোটামুটি সবাই BC547 ট্রানজিস্টর এর সাথে পরিচিত। মূলত আমরা, হবিস্টরা যেসব সার্কিট নিয়ে কাজ করে থাকি তার মধ্য সবচেয়ে বেশি সুইচিং, ভোল্টেজ প্রভৃতিকে ড্রাইভ দেওয়ার জন্য এই ট্রানজিস্টরই ব্যবহার করে থাকি।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে বিভিন্ন কারণে ডাটাশিটে উল্লেখকৃত পিন আউট এর সাথে বাস্তব ক্ষেত্রে ট্রানজিস্টরের পিন আউট মিলে না। এর প্রধান কারণ-
- একই ট্রানজিস্টর বিভিন্ন ম্যানুফেকচারার গণ প্রস্তুত করেন। এবং তাঁদের নিজস্ব স্ট্যান্ডার্ড মোতাবেক ডাটাশিটে এই পিন আউটের কথা উল্লেখ থাকে। কিন্তু আমরা সচারচর নেটে পাওয়া যায় এমন ডাটাশিট গুলো ফলো করি যেখানে ঐ ম্যানুফেকচারারের পিন আউট বা লেগ কনফিগ থাকে না।
- একই ম্যানুফেকচারার কোম্পানি একই পার্টসের বিভিন্ন ভার্শনে এই পিন আউটের পরিবর্তন ঘটালেও এই ঘটনা দেখা যায়।
- অধিক মুনাফার আশায় স্থানীয় ব্যবসায়ীগণ ক্ষেত্র বিশেষে ভিন্ন কোন সস্তা পার্টসের নাম্বার মুছে অধিক দামী পার্টসের নাম্বার স্থাপন করে তা বিক্রি করেন।
এসমস্ত ঝামেলা এড়াতে মাল্টিমিটার দিয়ে ট্রানজিস্টরের লেগ বের করে নেয়াই সবচেয়ে ভালো উপায়।
মাল্টিমিটার দ্বারা ট্রানজিস্টরের লেগ কিভাবে বের করতে হয় জানতে সৈয়দ রাইয়ান ভাইয়ের লেখা ট্রানজিস্টরের লেগ বের করার সহজ কৌশল লেখাটি পড়তে পারেন।
একটি ট্রানজিস্টর সর্বোচ্চ কত এম্পিয়ার কারেন্ট দিতে পারে?
আমরা সচারচর ট্রানজিস্টরের আউটপুট নেই কালেক্টর থেকে। সুতরাং আমরা যদি জানতে পারি যে আমাদের নির্দিষ্ট ট্রানজিস্টরের কালেক্টর সর্বোচ্চ কত এম্পিয়ার কারেন্ট দিতে পারে তাহলেই আমরা উক্ত ট্রানজিস্টরের মেক্সিমাম কারেন্ট রেটিং বুঝতে পারবো। উদাহরণ স্বরূপ আমাদের নেওয়া BC547 ট্রানজিস্টরের কথা বলছি। নিচের চিত্রটিতে এর সর্বোচ্চ কারেন্ট রেটিং ডাটাশিট থেকে তুলে দেওয়া হলো-
এখানে Ic দ্বারা ট্রানজিস্টরের সর্বোচ্চ কালেক্টর কারেন্ট বোঝানো হয়েছে। Icm দ্বারা পিক কারেন্ট বোঝানো হয়েছে। সাধারন ভাবে হিসাব করবার সময় কালেক্টর কারেন্ট (Ic) কেই মূল ধরা হয়। এই ট্রানজিস্টর ডাটাশিট অনুযায়ী-
- BC546, BC547 ট্রানজিস্টর দ্বয় সাধারণ ভাবে ১০০ মিলি এম্পিয়ার বা ০.১ এম্পিয়ার কারেন্ট সরবরাহ করতে পারে যা Ic (Collector Current) দ্বারা ডাটাশিট টিতে প্রকাশ করা হয়েছে।
- খুব স্বল্প সময়ের জন্য (মাত্র কয়েক ন্যানো সেকেন্ড থেকে কয়েক মিলি সেকেন্ড) সর্বোচ্চ ২০০ মিলি এম্পিয়ার বা ০.২ এম্পিয়ার কারেন্ট সরবরাহ করতে পারে যা কিনা এই ডাটাশিটে Icm (Collector Current, Maximum) দ্বারা নির্দেশিত হয়েছে।
এপ্লিকেশন (Applications) – ব্যবহারঃ
ট্রানজিস্টর টির Applications এর দিকে তাকালে দেখতে পাই এটি General Purpose Switching And Amplification এ ব্যবহৃত হয়। যার অর্থ এটি সাধারণ একটি ট্রানজিস্টর এবং সাধারণ দৈনন্দিন কাজ যেমন: সুইচিং, ড্রাইভিং, ছোট এম্পিলিফিকেশন এর জন্য ব্যবহার করা যায়।
তাই এই ট্রানজিস্টর দিয়ে আমরা প্রি-এম্পলিফায়ার, ছোটখাটো সুইচিং এর কাজে, অসিলেটর সার্কিট, রিলে ড্রাইভার সার্কিট, ছোট এলইডি ড্রাইভার সার্কিট ইত্যাদি তে বহুল ভাবে ব্যবহৃত হতে দেখি।
ডেসক্রিপশন (Description) – বর্ণনাঃ
এখন Description নিয়ে কিছু বলা যাক। BC547 এর ডাটাশীট টিতে লেখা আছে এটি একটি NPN transistor in a TO-92; SOT-54 plastic package। যার অর্থ ট্রানজিস্টরটি একটি npn transistor এবং ট্রানজিস্টরটি TO-92; SOT-54 Plastic Package এ আবৃত।
এখানে উল্লেখ্য যে বিভিন্ন ট্রানজিস্টরের প্যাকেজ বলতে ট্রানজিস্টরের বাইরের আকৃতিকে বুঝায়।
উদাহরণ হিসাবে BD139, BD140 ট্রানজিস্টরের কথা বলা যেতে পারে। এই ট্রানজিস্টর দুটি TO225 প্যাকেজের আওতাভুক্ত। একই ভাবে 2N3055, MJE3055 প্রভৃতি TO204AA গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। নিচের ছবিতে কিছু কমন ট্রানজিস্টরের ভিন্ন ভিন্ন প্যাকেজের ছবি দেয়া হলো-
ক্যারেক্টারিস্টিক (CHARACTERISTICS) – গুণাবলীঃ
ক্যারেক্টারিস্টিক অংশটি যেকোন ডাটাশিটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ যার মাধ্যমে কোন ইলেকট্রনিক পার্টসের বিশেষ গুণাবলী সম্পর্কে আমরা অবহিত হতে পারি। যেমন কোন ট্রানজিস্টর সর্বোচ্চ কত ফ্রিকোয়েন্সি পর্যন্ত ভালোভাবে কাজ করতে পারবে, এর সর্বোচ্চ এম্পলিফিকেশন বা গেইন কত হবে তা এই অংশ থেকেই জানা যায়। মূলত ডাটাশিটে এই টেবলিটির মাধ্যমেই আমরা কোন পার্টসের বিকল্প বা অল্টারনেটিভ বের করতে পারি। নিচে আমরা ডাটাশিট থেকে প্রাপ্ত BC546/BC547 এর ক্যারেক্টারিস্টিক টেবিল টি দেখতে পাচ্ছি-
প্রস্তুত কারক কোম্পানি কোন ট্রানজিস্টর তৈরি করবার পরে উক্ত ট্রানজিস্টরকে বিভিন্ন ভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা লব্ধ ফলাফল লিপিবদ্ধ করেন। এই টেবলটিতে উক্ত পরীক্ষা নিরীক্ষার বিভিন্ন মান কেই তুলে ধরা হয়েছে। যে কারনে ডাটাশিট এর ক্যারেক্টারেস্টিক টেবিলটি লক্ষ্য করলে আমরা Minimum, Maximum, Typical সহ বিভিন্ন রকম টেস্টিং Condition ও দেখতে পাই। নতুন কোন সার্কিট ডিজাইন করতে গেলে সাধারণত এই টিপিক্যাল (Typical) ভ্যালু কে ধরেই বাদ বাকি কম্পোনেন্টের মান বের করা হয়।
আমরা এখন এই টেবিলের বিভিন্ন প্যারামিটার সম্পর্কে সংক্ষেপে জানবো। প্রসঙ্গত এখানে উল্লেখ থাকে যে ভিন্ন ভিন্ন ম্যানুফেকচারার গণ ক্ষেত্রবিশেষে এই শব্দগুলোর কিছুটা এদিক সেদিক করে ব্যবহার করে থাকেন।
ট্রানজিস্টরের Icbo কি?
ডাটাশিটে Icbo দ্বারা কোন ট্রানজিস্টরের কালেক্টর প্রান্ত থেকে বেজ এর কাট অফ কারেন্ট কে নির্দেশিত করে যা এই ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২৫ ন্যানো এম্পিয়ার পর্যন্ত হতে পারে।
ডাটাশিটে ট্রানজিস্টরের Iebo কি
Iebo দ্বারা ইমিটার প্রান্ত থেকে বেজ এর কাট অফ কারেন্ট কে নির্দেশ করে
ট্রানজিস্টরের hFE কি?
ডাটাশিটে ট্রানজিস্টরের hFE অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কারণ আমরা জানি ট্রানজিস্টর বিবর্ধক বা এম্পলিফায়ার হিসেবে কাজ করতে পারে। আবার সব ট্রানজিস্টরের এম্পলিফাই করবার ক্ষমতাও সমান নয়। তাই ডাটাশিটে hFE দ্বারা কোন ট্রানজিস্টরের এম্পলিফাই করবার ক্ষমতাকে প্রকাশ করাহয়। hFE কে সাধারণ ভাষায় গেইন বলা হয়ে থাকে। সহজ ভাষায় বললে ট্রানজিস্টরের বেজ এ কারেন্ট দিলে তা আউটপুটে কত গুণ এম্পলিফাই হবে সেটি।
1 নাম্বার পয়েন্ট টি লক্ষ্য করলে আমরা দেখবো যে BC546B; BC547B এর টিপিক্যাল hFE ভ্যালু দেয়া আছে ১৫০। একে পড়তে হয়, BC547B এর কমন কালেক্টর কারেন্ট গেইন ১৫০.
অর্থাৎ, এই ট্রানজিস্টরটির বেজ এ যদি ১ মিলি এম্পিয়ার কারেন্ট দেয়া হয় তাহলে তাকে ১৫০ গুণ এম্পলিফাই বা বিবর্ধন করে কালেক্টরে এই কারেন্টের পরিমাণ হবে ১৫০ মিলি এম্পিয়ার।
VceSat কি?
ডাটাশিটে VceSat দ্বারা ট্রানজিস্টরের কালেক্টর এবং ইমিটার এর স্যাচুরেশন ভোল্টেজ কে বুঝিয়ে থাকে।
VbeSat কি?
ডাটাশিটে VbeSat দ্বারা বেজ এবং ইমিটারের স্যাচুরেশন ভোল্টেজ কে বোঝায়।
Cc ও Ce কি?
Cc দ্বারা কোন ট্রানজিস্টরের কালেক্টর ক্যাপাসিটেন্স ও Ce দ্বারা ইমিটার ক্যাপাসিটেন্স বোঝায়। হাই ফ্রিকোয়েন্সি সার্কিট ডিজাইন ও ট্রাবলশুটিং এর সময় এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সাধারণ ইলেকট্রনিক সার্কিটে তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়।
ডাটাশিটে fT দ্বারা কি বুঝায়?
এখন ডাটাশিটের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো যাকে ডাটাশিটে fT দ্বারা প্রকাশ করা হয়। fT একটি সংক্ষিপ্ত রূপ যার পূর্ণ রূপ হচ্ছে ফ্রিকোয়েন্সি ট্রানজিশন। আমরা জানি ট্রানজিস্টর কোন সিগনাল কে এম্পলিফাই করবার পাশাপাশি সুইচ হিসাবেও খুব দক্ষভাবে কাজ করতে পারে। কিন্তু কত দ্রুত অন বা অফ হতে পারে তাকে fT এর মাধ্যমে বোঝা যায়।
বিকল্প বা অল্টারনেট ট্রানজিস্টর নির্বাচন করাঃ
- প্রথমতই বুঝতে হবে আমার সার্কিট টি কি ধরনের এবং ব্যবহৃত ট্রানজিস্টর টির ভূমিকা কি উক্ত সার্কিটে। (সুইচিং, ড্রাইভিং, বাফারিং, ইম্পিড্যান্স ম্যাচিং ইত্যাদি)
- আমি যে ট্রানজিস্টরের অল্টারনেটিভ/বিকল্প খুঁজছি সেটি কি ধরনের (ক্যারেক্টারিস্টিক, বিশেষত্ব, বিশিষ্ট প্রভৃতি)
দ্বিতীয় অংশটুকু বোঝা বেশ সহজ। কোন ট্রানজিস্টরের ডাটাশিট পড়লে তা বোঝা যায়। তবে প্রথম অংশটুকু বুঝতে গেলে কিছুটা সময় আর পরিশ্রমের প্রয়োজন।
সহজ একটা বুদ্ধি হচ্ছে, একই ধরণের অন্যকোন ট্রানজিস্টর ব্যবহার করা।
কিভাবে বুঝবো কোন ট্রানজিস্টর টি একই ধরণের?
- প্রথমে আমার হাতে যে ট্রানজিস্টর টি আছে তার ডাটাশিট ভালোভাবে পড়তে ও বুঝতে হবে।
- কোন ম্যানুফেকচারার বা কোম্পানির তৈরি তা বের করলে অনেক ক্ষেত্রে সুবিধা হয়।
- চেষ্টা করতে হবে উক্ত ম্যানুফেকচারার কোম্পানি কর্তৃক অল্টারনেট কোন ট্রানজিস্টরের নির্দেশনা দেয়া আছে কিনা তা খোঁজা। এজন্য ইন্টারনেটের সাহায্য নিতে পারেন। অনেক সময়ই ম্যানুফেকচারার কোম্পানি গুলো অল্টারনেট মডেল সাজেস্ট করেন। সম্ভব হলে সেটি ব্যবহার করা উচিৎ।
এসবের পরেও বিকল্প/অল্টারনেট পাওয়া না গেলে ডাটাশিট বা ডাটাবুক থেকে এমন একটি ট্রানজিস্টর বের করতে হবে যার-
- ট্রানজিস্টরের টাইপ অর্থাৎ NPN বা PNP মিল আছে।
- কারেন্ট গেইন (hFE) এক থাকতে হবে।
- অল্টারনেট ট্রানজিস্টর টিকে আসল ট্রানজিস্টর টির সর্বোচ্চ ভোল্টেজ সীমার সমান বা উপরে হতে হবে।
-
আসল ট্রানজিস্টরের মত এটিরও মেক্সিমাম কারেন্ট ডেলিভারি বা হ্যান্ডেল করবার ক্ষমতা থাকতে হবে।
-
আসল ট্রানজিস্টরের ডাটাশিটে প্রাপ্ত মেক্সিমাম ফ্রিকোয়েন্সি সীমার নিচে অল্টারনেট ট্রানজিস্টর টিকে কাজ করতে হবে।
সংক্ষেপে বললে- আসল ট্রানজিস্টরের গেইন, মেক্সিমাম ভোল্টেজ, মেক্সিমাম কারেন্ট ও মেক্সিমাম ফ্রিকোয়েন্সি মিলিয়ে যেকোন অল্টারনেট ট্রানজিস্টর ব্যবহার করা যায়।
তাহলেই আমরা পেয়ে যাবো আমাদের কাঙ্ক্ষিত ট্রানজিস্টরের সমকক্ষ একটি অল্টারনেট ট্রানজিস্টর। ডাটাশিটের এই পদ্ধতিতে শতকরা ৯০ ভাগ ক্ষেত্রেই সাফল্য লাভ করা যায়। শতভাগ সফলতার জন্য ম্যানুফেকচারার কোম্পানি কর্তৃক নির্দেশিত অল্টারনেট বা বিকল্প ব্যবহার করাই বাঞ্চনীয় যা অনেক সময়ই সহজলভ্য হয়না।
বি.দ্রঃ বহুল জনপ্রিয়তা, ব্যবহার্য্য দিক ও সুবিধার কথা ভেবে এই লেখায় উল্লেখিত তথ্য সমূহ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কমন কালেক্টর টাইপ ও কমন ইমিটার টাইপ সার্কিট কে মাথায় রেখে লেখা হয়েছে।
পুনঃ সংকলন ও সম্পাদনাঃ সৈয়দ রাইয়ান
ভাল লিখেছেন 🙂
অসাধারন একটা লেখা উপহার দেবার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। খুবই প্রয়োজনীয় একটা লিখা। ধন্যবাদ আবারও।
ধন্যবাদ খুবই প্রয়োজনীয় একটা লিখা
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ ও স্বাগতম। আমাদের সাইটের অন্যান্য লেখাও পড়ুন আর কমেন্ট করে উৎসাহ দিন।