পরিচ্ছেদসমূহ
- 1 গুরুত্বঃ
- 2 সঠিক কোনটিঃ
- 3 ট্রানজিস্টর এর লেগ বের করার সহজ উপায় কীঃ
- 4 ট্রানজিস্টর টেস্ট করতে ডায়োড কেনঃ
- 5 ডায়োড কি?
- 6 ডায়োড দেখতে কেমনঃ
- 7 ডায়োডের শ্রেণী বিভাগঃ
- 8 ডায়োডের প্রতীক বা চিহ্নের অর্থ কীঃ
- 9 ডায়োড টেস্ট করবো কীভাবেঃ
- 10 ডায়োডে যে ধরনের সমস্যা হয়ঃ
- 11 সার-সংক্ষেপ – মনে রাখার সহজ কৌশলঃ
- 12 পরিশিষ্ঠঃ
- 13 পাদটিকাঃ
- 14 ট্রানজিস্টর সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও তার উত্তরঃ
গুরুত্বঃ
ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক্যাল ভালোবাসি কিন্তু ট্রানজিস্টর আর ডায়োড চিনি না এমনটি খুঁজে পাওয়া কঠিন। কিন্তু ভালোবাসলে কি হবে, আমরা অনেকেই জানি না কিভাবে ট্রানজিস্টরের লেগ/পা বা শুদ্ধ ভাষায় বললে- প্রান্ত গুলো বের করতে হয়। চোখের দেখায় মনে হয় যে স্কিমেটিক ডায়াগ্রাম অনুযায়ী সার্কিট ঠিকই আছে তবুও কাজ করছে না। এর প্রধান কারণ লেগ না চিনে ট্রানজিস্টর কে ভুল ভাবে সার্কিটে সংযুক্ত করা, যার ফলে সার্কিট কাজ করে না। এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে কম্পোনেন্ট পুড়ে যাবার মতো ঘটনা ঘটাও বিচিত্র নয়। আর ডাটাশীট দেখেও সব ক্ষেত্রে ট্রানজিস্টরের লেগ সঠিক ভাবে বেরকরা সম্ভব নয়। যেমনঃ বহুল প্রচলিত ট্রানজিস্টার BC547, BC557, BC558, BC337 এর লেগ যদি খেয়াল করি তাহলে দেখবো যে এটি ২ ভাবে সজ্জিত হতে পারেঃ
- বাঁ দিকে কালেক্টর; মাঝে বেজ আর ডানে ইমিটার, কিংবা
- বাঁ দিকে ইমিটার; মাঝে বেজ আর ডানে কালেক্টর
[ টিপসঃ ট্রানজিস্টরের লেখা যুক্ত অংশটিই সচারচর সামনের দিক ধরা হয়। অর্থাৎ, চোখের সামনে ধরলে ট্রানজিস্টারের ‘D‘ এর চ্যাপ্টা অংশটি থাকবে চোখের সামনে আর ‘D‘ এর উঁচু পেটফোলা অংশটি থাকবে পেছনে ]
সঠিক কোনটিঃ
ট্রানজিস্টর এর লেগ বের করার সহজ উপায় কীঃ
ট্রানজিস্টর টেস্ট করতে ডায়োড কেনঃ
অভিজ্ঞরা বেশ ভালভাবেই বুঝে গেছেন এর কারণ কিন্তু লেখাটি যেহেতু শিশুতোষ আর নবীন শিক্ষানুরাগীদের জন্য তাই সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা হয়তো প্রয়োজন। তবে গুরগম্ভীর তত্ত্ব কথায় না গিয়ে সহজ ভাবে বললে- আভ্যন্তরীণ ভাবে ট্রানজিস্টর হচ্ছে দু’ই বা ততোধিক ডায়োডের সমষ্ঠি। পরীক্ষা করার সুবিধের জন্য আমরা একে নিম্নোক্তো ভাবে উপস্থাপন করতে পারিঃ
ছবিটি ভালোভাবে দেখলে দেখবো যে ট্রানজিস্টরের প্রতিটি লেগেই ডায়োড সংযুক্ত আছে। মূলত আমরা মিটার দিয়ে বা অন্যকোনো পদ্ধতিতে (পরবর্তিতে ব্যাখ্যা করবো) আমরা এই ডায়োড গুলোর রেজিস্টেন্স কিংবা ফরোয়ার্ড ভোল্টেজ ড্রপ পরিমাপ করে ট্রানজিস্টর টি ভালো না খারাপ তা নির্ণয় করি। তবে এটুকুই শেষ নয়, কালেক্টর আর ইমিটারের ডায়োডে কিছু সূক্ষ্ণপার্থক্য থাকে যা ভালো ডিজিটাল মিটার দিয়ে বোঝা যায়। আর এখন ডিজিটাল মিটার খুব সহজলভ্য হয়ে যাওয়ার কারণে আমরা পরীক্ষার জন্য ডিজিটাল মিটারই ব্যবহার করব। তবে যাদের ডিজিটাল মিটার নেই তাদের নিরাশ হবার কারণ নেই, তাদের জন্যও আমি সহজ একটি উপায় বলে দেবো যাতে তারা নিজেরা সহজেই ট্রানজিস্টর ও ডায়োডের লেগ বের করতে পারে, তাও খুব সহজলভ্য কিছু জিনিস যেমন ব্যাটারি, এলইডি এসব দিয়ে। তার আগে আমরা ডায়োড টেস্ট করবার বিস্তারিত পড়ি আর শিখে নেই যা কিনা আমাদেরকে পরবর্তীতে ট্রানজিস্টর টেস্ট করতে অনেক সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
এখানে বলে রাখা ভালো যে- উপোরোক্ত চিত্রের মতো করে ডায়োড সংযোগ দিলেই সেটি কিন্তু ট্রানজিস্টরে রূপান্তরিত হবে না, এটি বোঝা আর টেস্টিং এর সুবিধার জন্যই ব্যবহার করা ভালো।
[নোটঃ সার্কিটে ব্যবহার করা হয় এমন বহুল প্রচলিত প্রতীক / চিহ্ন বা সিম্বল সম্পর্কে বিস্তারি জানতে আমার লেখা সার্কিট সিম্বল টি পড়ে দেখতে পারেন]
ডায়োড কি?
সহজ কথায়, ডায়োড বিপরীত মুখী বিদ্যুৎ প্রবাহ কে একমুখী করে বা অন্যভাবে বললে এসি (AC) কে ডিসি (DC) করে রেক্টিফিকেশন প্রকৃয়ার মাধ্যমে। সে কারণেই এর অপর একটি নাম রেক্টিফায়ার। অন্যান্য সকল ইলেকট্রনিক্স কম্পোনেন্টের মতো ডায়োড বা রেক্টিফায়ার এরও কিছু বৈশিষ্ঠ আছে সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে বাবুল ভাইয়ের লেখাটি পড়ে দেখতে পারেন।
[নোটঃ ডায়োড বা রেক্টিফায়ার নিয়ে আরো বিস্তারিত জানতে চাইলে সাইটের লেখক লুৎফর রহমান বাবুল ভাইয়ের ডায়োড নিয়ে লেখা টি পড়ার অনুরোধ রাখছি। উনার লেখাতে উনি বিস্তারিত বলেছেন কিভাবে ডায়োড বিপরীত মুখী বিদ্যুৎ কে একমুখী করে, ফরোয়ার্ড ভোল্টেজ, ভোল্টেজ ড্রপ ইত্যাদি বিভিন্ন বৈশিষ্ঠ নিয়ে। লেখাটি পড়লে আগ্রহী পাঠকের অনেক উপকার হবে। লেখাটির লিংকঃ
ডায়োড সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য – (১) এবং ডায়োড সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য – (২)]
ডায়োড দেখতে কেমনঃ
ডায়োড কে যদি আমরা সামনা সামনি দেখি তাহলে এটি দেখতে এমন-
এখানে একটি প্রকৃত ডায়োড কে কাগজের ওপর রেখে কাছে থেকে ছবি তোলা হয়েছে। এখানে সবার উপরে আমরা দেখতে পাচ্ছি ডায়োডের প্রতীক চিহ্ন। মাঝে রয়েছে হাতে আঁকা ডায়োড আর সবার নিচে আছে বাস্তবিক ডায়োড যার গায়ে হাল্কা সাদা/রূপালি কালিতে সমান্তরাল দাগ দেয়া আছে আর লেখা আছে এর নাম্বারঃ 1N5408। এই নাম্বার টি ক্ষমতা ও গুণাগুণ অনুসারে বিভিন্ন রকম হতে পারে যেমনঃ 1N4007, 1N4001, 3A3, 6A ইত্যাদি। বাস্তবে ডায়োড দেখতে হরেক রকেমের হয় কিন্তু হবি বা শিক্ষানবিস অবস্থায় এরকম সাধারণ ডায়োড দিয়েই শুরু করা ভালো কারণ এটি বহুল ভাবে প্রচলিত এবং সহজলভ্য। তবে দেখতে যেমনি হোক, প্রতীক চিহ্ন কিন্তু একই (সাধারণ ডায়োডের ক্ষেত্রে)।
[টিপসঃ বাস্তবিক ডায়োডের গায় ক্যাথোড প্রান্ত— বোঝার জন্য রঙিন।সাদা বা কালো কালি দিয়ে দাগ দেয়া থাকে ক্ষেত্রবিশেষে ভিন্ন উপায়ে বোঝানো থাকে কোন প্রান্তটি ক্যাথোড আর কোন প্রান্তটি এনোড]
ডায়োডের শ্রেণী বিভাগঃ
এতক্ষণ যে ডায়োডের ছবি দেখলাম তা ছিলো সাধারণ বা কমন ডায়োড।
এছাড়াও সচারচর যেসব ডায়োড সার্কিটে আমরা ব্যবহার করি আর যেগুলো প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ না করলেই নয় সেগুলো হলো-
- লাইট ইমিটিং ডায়োড বা এলইডি (LED)
- ফটো ডায়োড (Photo Cell)
- জেনার ডায়োড (Zener Diode)
- শটকি বা স্কটকি ডায়োড (Schotky Diode)
- টানেল ডায়োড (Tunnel Diode)
- শকলি ডায়োড (Shockly Diode)
- ভ্যারেক্টর ডায়োড (Varactor Diode)
কাজের ধরণ অনুযায়ী আবার ডায়োড কে ২ শ্রেণীতে ভাগ করা যায়ঃ
যেহেতু আমাদের শেখার মূল বিষয় হচ্ছে ডায়োড টেস্ট/পরীক্ষা করা আর তার সমস্যা নিরূপণ করা তাই আমরা বেশি তাত্ত্বিক আলোচনায় প্রবেশ করবো না, শুধু যেটুকু না জানলেই নয় সেগুলোই কিছুটা জেনে রাখলাম। আর হ্যাঁ, সব ডায়োডের মূল পরীক্ষা পদ্ধতি প্রায় এক।
[নোটঃ এলইডি সম্পর্কে আরো জানতে চাইলে দুরন্ত- দুরা ভাইয়ের এলইডি ও এলসিডি ডিসপ্লে নিয়ে লেখা ২টি পড়ে দেখতে পারেন। চাইলে সাইটের ডিসপ্লে সেকশন থেকেও ঘুরে আসতে পারেন সেখানে বেশকিছু চিত্তাকর্ষক প্রজেক্ট আছে। লেখা গুলোর লিংক-
ডায়োডের প্রতীক বা চিহ্নের অর্থ কীঃ
ব্যাটারির ‘দিক‘ থেকে চিন্তা করলে বিষয়টি বুঝতে সুবিধে হবে। অর্থাৎ ইলেকট্রনের ফ্লো বা প্রবাহের দিক-টুকু বুঝে নিলেই খুব সহজ ব্যাপার এটি। বস্তুতঃপক্ষে এই বিশ্বচরাচরে পজেটিভ আর নেগেটিভ বলে কিছু নেই। যা আছে তাহলো ইলেকট্রনের আধিক্য কিংবা ঘাটতি আর তা থেকেই আকর্ষন-বিকর্ষণ বা পজেটিভ, নেগেটিভের উৎপত্তি। সহজ ভাবে বললে ইলেকট্রনের আধিক্য “-“ এবং স্বল্পতা “+” এর উৎপন্ন করে।
যাইহোক, ডায়োডের কোন প্রান্ত— ক্যাথোড আর কোন প্রান্ত— এনোড তা মনে রাখার সুবিধের জন্য নিচের ছবি টি অনেকাংশেই কাজ হবে।
ডায়োড টেস্ট করবো কীভাবেঃ
ডায়োড টেস্ট করার পদ্ধতি বেশ সহজ। একটু মন দিয়ে লক্ষ্য করলে যে কেউ এটি পারবে। এর জন্য আমরা সানওয়া (Sanwa CD800a) কম্পানির ডিজিটাল মিটার ব্যবহার করবো। অবশ্য এর জন্য যেকোনো ডিজিটাল মিটারই ব্যবহার করা যাবে। তবে এই মিটার টিতে ডায়োড, ওহম, ভোল্টেজ, কারেন্ট, ফ্রিকুয়েন্সী সহ বেশ কিছু কাজে লাগার মতো জিনিস আছে। আর শিক্ষানবিস থেকে শুরু করে মোটামুটি এক্সপার্ট লেভেলে কাজ করতে গেলেও এটির জুড়ি মেলা ভার। যাই হোক এখন মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি।
প্রথমেই আমাদের মিটারের সিলেক্টরকে ডায়োড চিহ্নিত স্থানে নিয়ে আসতে হবে। দেখতে কেমন হবে দেখি একটু ছবি তে-
[বিঃদ্রঃ মিটারের ওহম / রেজিস্টেন্স মাপার অপশন দিয়েও ডায়োড পরিমাপ করা যায় একই পদ্ধতিতে]
বাজারে প্রচলিত প্রায় সব ডিজিটাল মিটারেই এখন ডায়োড বা রেজিস্টেন্স টেস্ট করার সুবিধা আছে এমনকি এনালগ মাল্টিমিটারেও। তবু কারো কাছে যদি মাল্টিমিটার না থাকে তাহলে একটু সবুর করুন। আমি সহজ একটা পদ্ধতি নিয়ে শিঘ্রই হাজির হবো আপনাদের কাছে। ইত্যাবসরে আমরা শিখে নেই এর পরীক্ষা পদ্ধতিটি।
১ম ধাপঃ
প্রথমেই ডায়োডকে চিত্রের মতো করে কোনো কিছুর উপরে রেখে ২ টি প্রান্তে, পরীক্ষক দন্ড বা প্রোব কে চিত্রানুযায়ী স্পর্শ করি এবং তার ফলাফল কি আসে তা পর্যবেক্ষণ করি মিটারের ডিজিটাল ডিসপ্লে তে-
একে ডায়োডের ফরোয়ার্ড ভোল্টেজ টেস্টিং বলে। যা দিয়ে এই পরীক্ষামূলক ডায়োড টি কোনো নির্দিষ্ঠ সার্কিটে সংযুক্ত অবস্থায় কতো ভোল্টেজ ড্রপ করবে তা’র আনুমানিক ধারণা পাওয়া যায়। এ কারণেই মিটারের কোণায় ছোট করে ভোল্ট এর শাশ্বত চিহ্ন ”V‘ দেয়া থাকে।
আমাদের পরীক্ষনাধীন ডায়োডটি এই মান দেখাচ্ছে-
যার অর্থহলো এই ডায়োডটি কোনো সার্কিটে সংযুক্ত থাকা অবস্থায় আনুমানিক ০.৩৬২ ভোল্ট ড্রপ করবে যার অর্থহলো এই ডায়োডটির আনুমানিক ০.৩৬২ ভোল্ট ড্রপ করবে (এবং ,সম্ভবত এটি ভালো আছে) ৷ এখানে ০.৩৬২ রিডিংটি আনলোড অবস্থার রিডিং , এখানে মিটারে টেষ্ট করার সময় ডায়োডের মধ্যদিয়ে খুবই কম কারেন্ট অর্থাৎ ১ma থেকে ২ma কারেন্ট প্রবাহিত হচ্ছে (এটা আনলোড অবস্থা ) ৷ কোন সার্কিট চালু অবস্থায় যখন মাপা হবে তখন ঐ ডায়োডের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত কারেন্টের(বা লোডের) তারতম্য অনুযায়ী এই ভোল্টেজ ড্রপ এরও তারতম্য হবে অর্থাৎ লোড অবস্থায় এই ভোল্টেজ ড্রপ 0.7v পর্যন্ত হতে পারে, হবে … ( সাধারণ সিলিকন ডায়োডের ক্ষেত্রে যেমন 1N4007 )
[এ পদ্ধতিতে ওহম মাপলে আনুমানিক একটা রেজিস্টেন্স দেখাবে, এটা হল ডায়োডের ডাইনামিক রোধ, যা সার্কিট চালু অবস্থায় কারেন্ট প্রবাহের উপর নির্ভর করে এই রোধ কমতে থাকে, কারেন্ট প্রবাহ যত বাড়বে রোধ তত কমবে, এটাই হল ডায়োডের ধর্ম ]
[টিপসঃ ডায়োডের এনোড প্রান্ত দিয়ে পজেটিভ ভোল্টেজ পরিবাহিত হয় আর ক্যাথোড দিয়ে নেগেটিভ। এই অবস্থা কে বলে ফরোয়ার্ড বায়াস বা সম্মুখী সংযোগ। এর উলটো সংযোগ কে বলে রিভার্স বায়াস বা বিমুখী সংযোগ]
[গুরুত্বপূর্ণ নোটঃ এনালগ মাল্টিমিটার হলে উলটো করে ধরতে হবে অর্থাৎ, লাল প্রোবের জায়গায় কালো আর কালো প্রোবের জায়গায় লাল প্রোব ধরতে হবে। তবে বিশেষ কিছু এনালগ মাল্টিমিটার এখন ডিজাটাল মিটার কে অনুসরণ করে তৈরি করা হয় সেক্ষেত্রে ম্যানুয়েল দেখে নিতে হবে কোন প্রোবটি কী]
২য় ধাপঃ
এখন আমরা ডায়োডের রিভার্স টেস্ট করবো আর এর জন্য আমরা ঠিক আগের প্রকৃয়ার উলটো করবো অর্থাৎ আগে আমরা এনোডে ডিজিটাল মিটারের লাল প্রোব আর ক্যাথোডে কালো প্রোব ধরেছি এখন ধরবো ঠিক তার উলটো করে নিচের চিত্র মোতাবেক-
আমরা দেখছি ডিসপ্লে তে (OL-ও.এল) বা ওভার লোড দেখাচ্ছে যার মানে হচ্ছে রিভার্স বায়াস টেস্টিং এর সময় ডায়োডের মধ্যে দিয়ে কোনো পরিমাণ ভোল্টেজ প্রবাহীত হচ্ছে না (এবং এটিই স্বাভাবিক যেহেতু ডায়োড শুধুমাত্র একদিক দিয়ে বিদ্যুত প্রবাহিত হতে দেয়। আর এই ডায়োড টি ভালো বলে ধরে নেয়া যায়)
[ওহম মাপলে এক্ষেত্রে কোনো মান প্রদর্শণ করবে না]
ডায়োডে যে ধরনের সমস্যা হয়ঃ
সাধারণত ডায়োডের যে সমস্যা গুলো হয় তাহলো –
- শর্ট হয়ে যাওয়া – এ এক্ষেত্রে মিটারে ‘০০০’ আসবে
- ওপেন হয়ে যাওয়া – এ এক্ষেত্রে মিটারে ওভার লোড বা (OL-ও.এল) দেখাবে
আর কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে ডায়োড তার সাধারণ একমুখী আচরণ থেকে সরে আসে।
যেমনঃ বেশি পুরাতন হলে কিংবা নিম্ন মানের পার্টস ব্যবহার হয়ে থাকলে। অতিরিক্ত তাপ, ভোল্টেজ, কারেন্ট কিংবা ডায়োডকে তার নির্ধারিত মাত্রার সমান বা পূর্ণ মাত্রায় অথবা ফুল প্রেশারে অনেক দিন ধরে ব্যবহার করলে… এসব ক্ষেত্রে ডায়োড কে খুলে মিটার দিয়ে মাপলে আপাতপক্ষে ভালো মনে হলেও সেটি আসলে ভালো নয়। এসব ক্ষেত্রে সন্দেহজনক পার্টস বা কম্পোনেন্ট কে বাতিল করাই শ্রেয় (এটি অন্যান্য পার্টসের ক্ষেত্রে ঘটতে পারে)
সার-সংক্ষেপ – মনে রাখার সহজ কৌশলঃ
- যদি ডায়োড ভালো থাকে তাহলে-
যে কোনো এক দিক থেকে মিটারে মান দেখাবে
অপর দিক থেকে মান দেখাবে না বা ওভার লোড বা (OL-ও.এল) দেখাবে - যদি ডায়োড ভালো না থাকে তাহলে-
উভয় দিক থেকেই মিটারে একই মান দেখাবে যেমন- ‘০০০‘ (শর্ট) কিংবা ওভার লোড (OL)
[নোটঃ মাল্টিমিটার দিয়ে রেজিস্টেন্স কিংবা ডায়োড ভোল্টেজ যাই মাপা হোক না কেন, উভয় দিক থেকে মাপলে যদি ‘০০০‘ দেখায় তাহলে এর অর্থ ডায়োডে শর্ট আছে। আবার, উভয় দিক থেকেই ‘OL‘ দেখানোর অর্থ ডায়োডটি ওপেন। কিছু পরিমাণ রেজিস্টেন্স কিংবা ফরোয়ার্ড ভোল্টেজ দেখানোর অর্থ হচ্ছে ডায়োডটি ভালো]
পরিশিষ্ঠঃ
সামনের লেখায় পরীক্ষিত ট্রানজিস্টর টেস্টারের স্কিমেটিক ডায়াগ্রাম সহ সার্কিটের পিসিবি ডিজাইন দেবার চেষ্টা করবো। আর হ্যাঁ, সাথে থাকবে ব্যাটারি ও এলইডি দিয়ে সহজ টেস্টিং পদ্ধতি বিশেষ ভাবে শুধু তাদের জন্যই যাদের মাল্টিমিটার কেনার মতো সৌভাগ্য হয়নি এখনো।
(স্বীকারোক্তিঃ লেখাটি ছোট করতে গিয়েও বড় হয়ে গেলো। নিজের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে আর বাস্তবতার নিরিখে অনেক কথাই লিখলাম। মোবাইলের ক্যামেরা উন্নত মানের নয় বিধায় ছবি গুলো অপরিষ্কার এসেছে, তাই ক্ষমাপ্রার্থি। এতদ ত্রুটি সত্ত্বেও এই লেখাটি সবার উপকারে আসলে আমার পরিশ্রম স্বার্থক হবে। এখানে বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য যে- আমি কিংবা এ সাইটের কেউ কোনো ভাবেই সানওয়া ইনক. ও লেখায় ব্যবহার করা অন্যান্য দ্রব্যাদির উতপাদন ও বিতরণের সাথে জড়িত নই, তাদের অংগ সংগঠনের সাথেও জড়িত নই। লেখায় প্রাঞ্জলতা আর ব্যবহারিক দিক তুলে ধরার নিমিত্তেই শুধুমাত্র প্রয়োগ করা হয়েছে)
পাদটিকাঃ
ট্রানজিস্টর সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও তার উত্তরঃ
ট্রানজিস্টর (Transistor) কি বা কাকে বলে?
ট্রানজিস্টর মূলত একটি ডিভাইস বা কম্পোনেন্ট। ইলেকট্রনিক্স এ বহুল ব্যবহৃত হয় এটি। মুলত এটি পরিবর্ধক বা এম্পলিফায়ার হিসেবে সার্কিটে কাজ করে। আবার সার্কিটে এটি সুইচের ভূমিকাও নিতে পারে।
এটি কবে আবিষ্কৃত হয়
১৯৪৭ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বেল ল্যাবরেটরির উইলিয়াম শকলি, জন বার্ডিন এবং ওয়াল্টার ব্রাটেইন পৃথিবীর সর্বপ্রথম ব্যবহারিক পয়েন্ট-কন্টাক্ট সলিড স্টেট এম্পলিফায়ার (Point-contact solid state amplifier) তৈরি করতে সক্ষম হন। যা কিনা পরবর্তিতে ট্রানজিস্টর নাম ধারণ করে।
ট্রানজিস্টরের নামটি কোথা থেকে এলোঃ
১৯৪৮ সালের মে মাস। ওয়াল্টার ব্রাটেইন তাঁদের সদ্য আবিষ্কৃত পয়েন্ট-কন্টাক্ট সলিড স্টেট এম্পলিফায়ার এর জন্য একটা নাম খুঁজছিলেন। যাতে এক শব্দের মাধ্যমেই এটির পূর্ণ অর্থ প্রকাশ পায়। এত বড় নাম তো আর মনে রাখা সহজ নয়! ব্রাটেইন তাঁর ল্যাবের সবাইকে জিজ্ঞেস করলেন। কিন্তু কেউই সুন্দর আর গ্রহনযোগ্য কিছুই দিতে পারলো না, যা তাঁর মনঃপুত হয়।
সে সময় হঠাত করেই তাঁর বন্ধু জন পিয়ার্সের সাথে ব্রাটেইনের দেখা হয়ে যায়। পিয়ার্স শব্দ নিয়ে খেলা করতে বেশ পছন্দ করতেন। সায়েন্স ফিকশন বা কল্প বিজ্ঞানের লেখক হিসেবেও কিছু সুনাম কুড়িয়েছেন।
বন্ধুর প্রস্তাবে তাৎক্ষনিক ভাবে তাঁর মাথায় কিছু আইডিয়া আসে। সে সময়ে আবিষ্কৃত ভ্যারিস্টর আর থাইরিস্টরের নাম থেকে মিলিয়ে কিছু একটা ভাবছিলেন পিয়ার্স।
বন্ধুকে বললেন ভ্যাকিউম টিউবে ট্রান্সকন্ডাক্টেন্স (transconductance) বিদ্যমান। আর ব্রাইটনের আবিষ্কৃত যন্ত্রটিতে ইলেকট্রিক্যাল বৈশিষ্ঠ হিসেবে ট্রান্সইম্পিডেন্স/ট্রান্সরেজিস্টেন্স (Transimpedance/Transresistance) আছে। তাই এটিকে ট্রানজিস্টর নাম দিলে কেমন হয়। (Transfer থেকে Trans আর Impedance বা Resistance এর সমার্থক যন্ত্র/কম্পোনেন্ট Resistor থেকে istor নিয়ে Transistor) ব্রাটেইনের কাছে এ নামটি খুবই যুক্তিপূর্ণ মনে হয়। পছন্দ হয় তা বলাই বাহুল্য। তাই থেকেই এই নাম ট্রানজিস্টর।
তথ্যসূত্রঃ
— John Pierce, interview for “Transistorized!”
— Crystal Fire by Michael Riordan and Lillian Hoddeson
— Brattain, Walter H. Genesis of the Transistor. The Physics Teacher (March 1968, 109-114)
ট্রানজিস্টর কিভাবে কাজ করে
ট্রানজিস্টরের ইনপুটে খুব অল্প পরিমাণ কারেন্ট প্রবাহিত করলে আউটপুটে তা পরিবর্ধিত হয় ও এম্পলিফায়ারের ন্যায় আচরণ করে। আবার একই সাথে এটি সুইচের মত আচরণও করতে পারে। সাধারণত ইনপুটে কোনো কারেন্ট প্রবাহিত না হলে আউটপুটে খুবই নগণ্য পরিমাণ কারেন্ট প্রবাহিত হতে পারে। একে লিকেজ কারেন্ট বলে।
এখানে ট্রানজিস্টরের ইনপুট বলতে কমন ট্রানজিস্টরের বেজ কে বোঝানো হয়েছে। আউটপুট ধরা হয়েছে কালেক্টর ও ইমিটার। অপরদিকে মসফেট এর ক্ষেত্রে ইনপুট হবে গেট ও আউটপুট হবে ড্রেন ও সোর্স।
সার্কিটে ট্রানজিস্টরের কাজ কি?
আগেই বলেছি ট্রানজিস্টর এম্পলিফায়ার কিংবা সুইচের ন্যায় কাজ করতে পারে। যেমন রেডিও তে ট্রানজিস্টর এম্পলিফায়ার হিসেবে কাজ করে। আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা বিদ্যুৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ অত্যন্ত ক্ষীণ শক্তির। তাকে উপযুক্ত সার্কিটের মাধ্যমে ট্রানজিস্টর বিবর্ধিত করে ও স্পিকারের মাধ্যমে আমাদের কানে এসে পৌঁছায়।
ট্রানজিস্টর সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে ঘুরে আসুন উইকিপেডিয়ার এই বাংলা লিংক থেকেডায়োড সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে চাইলে উইকিপেডিয়ার এই লিংক দেখতে পারেন
Good tutorial….thanks.
vai parle mobile ar jonno kisu tutorial den
ভাইজান, এনালগ এবং ডিজিটাল মিটার দিয়ে ট্রানজিস্টারের বেস, ইমিটর ও কালেক্টর লেগস সঠিক ভাবে চেনার স্বার্থে ফটো সহ একটু বুঝাইলে উপকৃত হইতাম। সুন্দর সুন্দর লেখার আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
আপনার সুপরামর্শের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
আসলে বিভিন্ন ব্যস্ততায় এ নিয়ে লেখা আর হয়ে উঠছে না। চেষ্টা করবো আগামী পর্বে কিংবা আলাদাভাবে এটি দেবার।
ভাই অনেক ধন্য বাদ। mail এ পাবো কি?
আপনাকেও ধন্যবাদ কমেন্ট করবার জন্য।
Thank you so much
আপনাকেও ধন্যবাদ 🙂
Kubi valo…..
ধন্যবাদ সুন্দর বর্ণনার জন্য ।
অন্যান্য ডায়োড গুলার বরণ্ননা আশা করছি
বিশেষ করে জিনার ডায়োড ,ফটো ডায়োড গুলার
আপনাকেও ধন্যবাদ কমেন্ট করে উৎসাহ প্রদানের জন্য। সময়ের অভাবে এ বিষয়ে লেখা হয় না। চেষ্টা করবো লিখতে।
এখানে উল্লেখ্য যে জেনার ডায়োড নিয়ে ইতোমধ্যে কিছু লেখা আছে আ.ই সাইটে।
ধন্যবাদ ভাই অনেক ভালো সহজ ভাষায় লিখেছেন।
আপনাকেও ধন্যবাদ 🙂
vhi, mini projector kivabe banabo? apnar kase ki kono way ase? circuit diagram ase?plz……comment
আপনার লেখাগুলি অনেক স্পসট ভাবে লিখেন । বুজতে কোন প্রকার অসুবিধে হয়না নবীনদেরও । ধন্যবাদ
শীতের সকালে আপনাকে আন্তরিক ও উষ্ণ ধন্যবাদ 🙂
ধন্যবাদ এত সুুন্দরভাবে বুঝানোর জন্য।
আপনাকেও উষ্ণ ধন্যবাদ
Thanks Raiyan sir… 🙂
onk somoy niye likhechen bujhai jay..r amio onk kichu jante parlam 😛
স্বগতম 🙂