হাই ভোল্টেজ প্লাজমা গ্লোব বা প্লাজমা ল্যাম্প বিজ্ঞান মেলার জন্য দারুণ একটি প্রজেক্ট। এটি একটি গোলোকের মধ্যে খেলাকরা কিছু প্লাজমা যেগুলা আসলে হাই ভোল্টেজ স্পার্ক। অনেকটা যেন ছোট গোলকের ভেতরে বজ্রপাতের কৃত্রিম দৃশ্য! আবার কিছু ভুতুড়ে মুভিতেও আমরা প্লাজমা গ্লোব দেখেছি। ডাইনীরা ওগুলা দিয়ে ভবিষ্যৎ বলে দিচ্ছে এমন দৃশ্য আমরা অহরহ মুভিগুলোতে দেখি। আজকের এই টিউটোরিয়াল এ আমরা শিখব কিভাবে একটি টাংস্টেন বাল্ব দিয়ে নিজেই একটি সহজ প্লাজমা গ্লোব তৈরি করতে পারি।
পরিচ্ছেদসমূহ
- 1 প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- 2 ধাপ ১ – হাই ভোল্টেজ পাওয়ার সাপ্লাই তৈরি
- 3 ধাপ ২ – প্লাগ ও রেগুলেটর সংযুক্তকরণ
- 4 ধাপ ৩ – ক্যাপাসিটর সংযুক্তকরণ
- 5 ধাপ ৪ – ইগনিশন কয়েল সংযুক্তি
- 6 ধাপ ৫ – ইগনিশন কয়েলের সাথে অন্য তারটি সংযুক্তি
- 7 ধাপ ৬ – হাই ভোল্টেজ আউটপুট লাইন বের করা
- 8 ধাপ ৭ – প্লাজমা গ্লোব/ল্যাম্প তৈরি
- 9 ধাপ ৮ – প্লাজমা ল্যাম্পের উপর ধাতব নেট স্থাপন
- 10 প্লাজমা ল্যাম্প/গ্লোব কানেকশন ডায়াগ্রাম
- 11 শেষ ধাপ:
- 12 হাই ভোল্টেজ প্লাজমা ল্যাম্প/গ্লোব প্রজেক্টের সচল ভিডিও দখুন
- 13 পাদটিকা-
বিশেষ সতর্ক বার্তাঃ এই প্রজেক্ট এর সাথে হাই ভোল্টেজ সম্পর্কিত তাই বিশেষ সাবধানতা নিতে হবে। প্লাজমা গ্লোব/ প্লাজমা ল্যাম্প বানানোর সময় আপনার শক খেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে তাই হাতে রাবার এর গ্লাভাস পড়লে ভালো হয়। হাই ভোল্টেজ ট্রান্সফরমার এর সাথে কানেকশন দেওয়ার সময় কিংবা প্রজেক্ট এ মেইন লাইন দেয়া অবস্থায় যেন এর উন্মুক্ত অংশ গুলোর সাথে কোন ভাবেই হাতের স্পর্শ না লাগে সে দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। প্লাজমা গ্লোব বানানোর শেষ হলে গ্লোব স্পর্শ করা যাবে না কারণ এখানে অনেক শক্তিশালী বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় তাই এটি বিপদজনক।
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
প্লাজমা গ্লোব/ল্যাম্প টি বানাতে হলে আমাদের প্রথমে একটি হাই ভোল্টেজ উৎস তৈরি করতে হবে। এই প্রজেক্ট এর প্রাণই হলো হাই ভোল্টেজ। তাই এখানে উপকরণ গুলোর সিংহভাগই হলো হাই ভোল্টেজ এর জন্য। এর জন্য যা ব্যবহার করতে হবে সেগুলো নিচে দেয়া হলো-
- ১. মোটরসাইকেল এর ইগনিশন কয়েল
- ২. এসি ফ্যান এর গতি নিয়ন্ত্রক রেগুলেটর
- ৩. 3.5uf ক্যাপাসিটর (450V AC)
- ৪. কিছু তার এবং একটি প্লাগ
- ৫. একটি টাংস্টেন বাল্ব এবং হোল্ডার
- ৬. লোহার বা এ্যালুমিনিয়ামের নেট বা এ্যালুমিনিয়াম ফয়েল।
- ৭. একটি গ্লু গান
- ৮. একটি বক্স যেটাতে স্থাপন করবেন
উপরের ছবিগুলো উপকরণ গুলো নির্দেশ করে যেভাবে তৈরি করবেন :
ধাপ ১ – হাই ভোল্টেজ পাওয়ার সাপ্লাই তৈরি
এখন আমরা হাই ভোল্টেজ পাওয়ার সাপ্লাই তৈরি করব। প্রথমে প্লাগটি নিন এবং ওতে তার জুড়ে দিন।
ধাপ ২ – প্লাগ ও রেগুলেটর সংযুক্তকরণ
এবার প্লাগ এর দুটি তার এর একটি নিয়ে রেগুলেটর এর সাথে জুড়ে দিন এবং রেগুলেটর বক্স এর উপরে ছিদ্র করে গ্লু দিয়ে জুড়ে দিন। বক্স এর ভিতর তার প্রবেশ করার সময় দুটো ছিদ্র করে নিন।
ধাপ ৩ – ক্যাপাসিটর সংযুক্তকরণ
এখন রেগুলেটর এর আরেকটি তার ক্যাপাসিটর এর এক প্রান্তের সাথে জুড়ে দিন এবং ক্যাপাসিটর টি গ্লু দিয়ে বক্সে স্থাপন করুন।
ধাপ ৪ – ইগনিশন কয়েল সংযুক্তি
এবার ক্যাপাসিটর এর আরেক প্রান্ত জুড়ে দিন ইগনিশন কয়েল এর একটি পিন এ। নিচের ছবি অনুসরণ করুন
কালো তারটি ক্যাপাসিটর থেকে নীল তার যুক্ত পিন টির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। নীল তারটির কাজ পরের ধাপে বোঝাবো
ধাপ ৫ – ইগনিশন কয়েলের সাথে অন্য তারটি সংযুক্তি
এখন প্লাগ থেকে দুটি তার এর একটি আমরা আগেই রেগুলেটর এর সাথে লাগিয়েছি। বাকি রইল আর একটি। আমরা সেটি ইগনিশন কয়েল এর যেই প্রান্তে ছোট পিন এর সাথে কালো তার টি লাগিয়েছি তার বিপরীত প্রান্তের বড় ছিদ্র যুক্ত পিনের সংগে লাগাবো।
ধাপ ৬ – হাই ভোল্টেজ আউটপুট লাইন বের করা
আমাদের হাই ভোল্টেজের কাজ প্রায় শেষ। এখন আমরা শুধু আউটপুট লাইন বাইরে এনে গ্লু করব। মনে আছে ওই নীলরং এর তারটি? আমরা ওটা এবং ইগ্নিশন কয়েল এর সবচেয়ে বড় তারটি বক্স এর ঢাকনার সাথে ফুটো করে জুড়ে দেব।
এখন প্লাগটি আপনি যেকোনো সকেট এ ঢুকিয়ে দিন এবং রেগুলেটর দিয়ে ভোল্টেজ ও ফ্রিকুয়েন্সি ঠিক করে নিন। এরপর আপনি তার দুটিকে কাছাকাছি আনলে তাদের মাঝে স্পার্ক দেখবেন।
কিন্ত সতর্ক থাকবেন। কাজটি বিপদজনক। আপনার হাই ভল্টেজ তৈরি হয়েগেল। এটি আপনার অন্যান্য প্রেজেক্ট এও কাজে লাগতে পারে। এখন আমরা প্লাজমা গ্লোব টি তৈরি করি-
ধাপ ৭ – প্লাজমা গ্লোব/ল্যাম্প তৈরি
বালব টি নিন। ওটা হোল্ডারে স্থাপন করুন। আমি পুরানো ফিউজ হয়ে যাওয়া বাল্ব ব্যবহার করেছি। আপনি চাইলে ভালো বাল্ব ও ব্যবহার করতে পারেন। তাতেও কাজ হবে। মনে রাখবেন এই প্রজেক্টের জন্য অবশ্যই টাংস্টেন বাল্বই ব্যবহার করতে হবে।
ধাপ ৮ – প্লাজমা ল্যাম্পের উপর ধাতব নেট স্থাপন
এখন একটি ধাতব নেট নিয়ে বাল্ব এর আকার অনুযায়ী কাটুন এবং বাল্বের উপর চিত্র অনুযায়ী স্থাপন করুন। মশা মারার ব্যাট এ এমন সুক্ষ নেট থাকে। সেগুলোও ব্যবহার করতে পারেন।
প্লাজমা ল্যাম্প/গ্লোব কানেকশন ডায়াগ্রাম
বুঝবার সুবিধার্থে উপরোক্ত ধাপ গুলোকে ডায়াগ্রাম আকারে নিচে দেখানো হলো-
শেষ ধাপ:
আমাদের কাজ এখন শেষ। আমরা এখন বালব এর হল্ডারের নিচের টারমিনালের সাথে বড় তার এর সংযোগ দিব এবং নেট এর সাথে নিল তারটি যুক্ত করব। তারপরই বিদ্যুতিক সংযোগ দিলে আমরা বালব এর মধ্যে প্লাজমা দেখতে পাব।
মনে রাখবেন। এই প্লাজমায় কিন্তু হাত দিবেন না।
আশা করি আমার প্রজেক্ট আপনাদের ভালো লাগল। আরো প্রজেক্ট নিয়ে আবারো আপনাদের সাথে দেখা হবে। আজকে এখানেই সমাপ্ত করলাম। ভালো থাকবেন।
প্রস্তুতকরণে- আহমেদ সাদাত রেজা (আদিত্য)
হাই ভোল্টেজ প্লাজমা ল্যাম্প/গ্লোব প্রজেক্টের সচল ভিডিও দখুন
সবার বুঝবার সুবিদার্থে আমাদের ইলেকট্রনিক্স ইউটিউব চ্যানেলে এই প্লাজমা গ্লোবের ভিডিও দেয়া হয়েছে। আশাকরি ভিডিও টিউটোরিয়াল টি দেখলে সকলের বুঝতে অনেক বেশি সুবিধা হবে-
পাদটিকা-
প্লাজমা
পদার্থের তথাকথিত চতুর্থ অবস্থা। কঠিন, তরল, বায়বীয় অবস্থা ছাড়াও উচ্চতাপে কোন গ্যাস এর বিশেষ আয়নিত অবস্থাকে প্লাজমা বলে। এটি প্রায় সম সংখ্যক মুক্ত ইলেকট্রন ও ধনাত্মক আয়নের সমন্বয়ে গঠিত হয়। সাধারণ গ্যাস বায়বীয় কিন্তু আয়নিত নয়। অপরদিকে প্লাজমা আয়নিত এবং এই বৈশিষ্ঠ্যের জন্য একে বিশেষ শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে যাকে পদার্থের চতুর্থ অবস্থা বা Fourth state of matter আখ্যা দেয়া হয়েছে।
জোসসসস <3
ধন্যবাদ