ডার্ক সেন্সর - লাইট সেন্সর প্রজেক্ট

ইলেক্ট্রনিক্সের মজার প্রজেক্ট

ইলেক্ট্রনিক্সের মজার প্রজেক্ট নামে একটি ধারাবাহিক লেখা শুরু করতে চাচ্ছি। চেষ্টা করব ধারাবাহিক ভাবে ছোট খাট ইলেক্ট্রনিক্স কিছু প্রজেক্ট ধারাবাহিক ভাবে উপস্থাপন করতে। যাতে নবীন শিক্ষার্থীরা মজার সাথে ইলেক্ট্রনিক্স শিখতে পারে। চাইলে বিভিন্ন বিজ্ঞান মেলায়/ বন্ধু মহলে এই প্রজেক্টগুলা উপস্থাপন করে দর্শকদের বাহবা পেতে পার (#মূলত ছোটদের টার্গেট করার কারনে তুমি বা তুমি সংক্রান্ত সম্বোধন বাছাই করা হল, আশা করি বড়রা এতে কিছু মনে করবেনন না) । সংশ্লিষ্ট ডাটা/কার্য পদ্ধতি ও মূলনীতিও উপস্থাপন করার চেষ্টা থাকবে, যাতে শুধু মুখস্থ নয় বুঝে শুনে তোমরা প্রজেক্টগুলা করতে পার। জানার কিছু থাকলে কমেন্ট অপশনতো রইলই।

ডিসক্লেইমারঃ

এই প্রজেক্টগুলা টেষ্টেড এবং কার্যকরী বলে প্রমানিত। কিন্তু লেখক প্রজেক্ট বাস্তবায়নের কোন দায় (লাভ/লোকসান/ দুর্ঘটনা ইত্যাদি) নিতে অপারগ। বিদ্যুৎ নিয়ে কাজ বিশেষত উচ্চ ভোল্টেজের কাজ (ডিসি/এসি যাই হোকনা কেন) অত্যন্ত ঝুকিপূর্ন। বিদ্যুত নিয়ে কাজ করার সতর্কতা অবলম্বন বাঞ্ছনীয়। এই প্রজেক্টগুলি, যদিও কোন বাধ্যবাধকতা নেই, তার পরও কোন এক্সপার্ট তত্ত্বাবধায়কের অধীনে করতে পারলে দ্রুত ও বেশী কার্যকরী হবে।

প্রজেক্ট-১ : ডার্ক সেন্সর (লাইট সেন্সর)

এই সার্কিটটির মূলে রয়েছে LDR (Light Dependent Resistor) নামক একটি রেজিস্টর (ফটো রেজিস্টর বলে)। যাকে দিয়ে একটি লাইট বা ফটো সেনসিটিভ সুইচিং সার্কিট করা যায়। সাধারনত অন্ধকারে এর রোধ অনেক উচ্চ কিন্তু এই রেজিস্টর উপর আলো পড়লে এর রোধ নাটকিয় ভাবে হ্রাস পেয়ে (প্রায়) পূর্ন পরিবাহির পর্যায়ে চলে আসে। এই ধর্মটিকে কাজে লাগিয়ে সুইচিং সার্কিটকে সুইচ (অন/অফ) করা হয়।
লাইট সেন্সর/ডার্ক সেন্সরঃ LDR দিয়ে দুটোই বানানো যায়, যার যেটা প্রয়োজন। শুধু কানেকশন এদিক সেদিক করে এই পরিবর্তন করা সম্ভব। তবে ডার্ক সেন্সর (অন্ধকার হলে অন হয়) বেশী জনপ্রিয়। তাই আমরা ডার্ক সেন্সরই তৈরী করব । চেষ্টা করব হিন্টস দিতে যাতে একে লাইট সেন্সরে পরিনত করা যায়।

দ্রষ্টব্যঃ

  1. বুঝতে হলে ভোল্টেজ ডিভাইডার সার্কিট সম্পর্কে ধারনা থাকা দরকার।
  2. প্রজেক্টের এই LDR গুলায় আলো পড়লে রোধ কমে। বাজারে কিছু ফটো রেজিস্টর বা ফটো ট্রানজিস্টর থাকতে পারে যা এর উলটা কাজ করে (আলো পড়লে রোধ বাড়ে)। তাই মাল্টি মিটারে টেস্ট করে বা দোকানিকে দিয়ে শিউর হতে হবে যে এটিতে আলো পড়লে রোধ কমে টাইপের কি না।

এক্সপেরিমেন্টাল সার্কিটঃ

নিচে একটি ডার্ক ডিটেক্টরের জন্য এক্সপেরিমেন্টাল সার্কিট দিচ্ছি।

সরল-ডার্ক-ডিটেক্টর-সার্কিট

ডার্ক সেন্সরঃ

খুবই সিম্পল এই সার্কিটটিতে একটি LDR একটি ট্রানজিস্টর দিয়ে তৈরী। এই সার্কিটটিতে একটা LDR একটা ভ্যারিয়েবল রেজিস্টর মিলে ভোল্টেজ ডিভাইডার সার্কিট তৈরী করা হয়। দিনের বেলা LDR এর রোধ খুব কম থাকায় বেশী ড্রপ হয় ভ্যারিয়েবল রেজিস্টরে ফলে ট্রানজিস্টরের বেস বায়াস না পাওয়ায় ট্রানজিস্টর অফ অবস্থায় থাকে ফলে সংযুক্ত লেড (LED) টি জ্বলেনা। কিন্তু রাতে LDR এর রেসিষ্ট্যান্স অত্যন্ত বেশী থাকায় ভোল্টেজ ড্রপ হয় LDR এর সাইডে। ফলে বেস বায়াস পাওয়ায় ট্রানজিস্টর টি অন হয়ে লেড জ্বালিয়ে দেয়।

লাইট সেন্সরঃ

দুই ভাবে উপোরোক্ত সার্কিটকে লাইট সেন্সর করা যায়।

  1. LDR আর ভ্যারিয়েবল রেজিস্টর এর অবস্থায় অদল-বদল করে।
  2. NPN এর যায়গায় PNP ট্রানজিস্টর ব্যবহার করে ৩য় ছবির মতো করে (লেডের অবস্থান লক্ষ্যনীয়)।

এলডিয়ার দিয়ে সরল এক্সপেরিমেন্টাল সার্কিট

 

LDR দিয়ে প্রাক্টিক্যাল সার্কিটঃ

আগের ডার্ক/লাইট সেন্সরটিতে দুইটা সমস্যা আছে।

প্রথম সমস্যা হলো ঐ সার্কিট দিয়ে ছোট লোড (যেগুলা অল্প কারেন্টে চলে যেমন লেড) ছাড়া আর কিছু (ফ্যান, লাইট ইত্যাদি) কন্ট্রোল করা যায়না। কারন আমরা যে ট্রানজিস্টর ব্যবহার করেছি তার পাওয়ার রেটিং অনেক কম। দুই ভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়।

প্রাক্টিক্যাল সার্কিটের সুইচিং সমস্যা ও সমাধানঃ

  • # পাওয়ার ট্রানজিস্টর বা সুইচিং ডিভাইস ব্যবহারঃ এই পদ্ধতিতে ডিভাইস গুলিকে হাই পাওয়ার রেটিং করতে হবে যা ব্যায়বহুল, কষ্টসাধ্য ও বিপদজনক। এই পদ্ধতি ব্যবহার হয়না বললেই চলে।
  • # রিলের ব্যবহারঃ এই পদ্ধতিতে সার্কিটটাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। একসাইডে লো পাওয়ার ডিসি কন্ট্রোল সার্কিট। অন্য দিকে হাই পাওয়ার এসি/ডিসি লোড সার্কিট। এই দুই সার্কিটের মধ্যস্থতা করে একটি ছোট ডিভাইস যাকে রিলে বলে। রিলে বিভিন্ন প্রকার হয়

relay-principle2

১) ইলেক্ট্রোমেকানিকালঃ

ইলেক্ট্রোম্যাগনেটের দ্বারা মেকানিকাল সুইচ অন অফ করে । কম স্পিডে অন অফ করার জন্য তৈরী (সেকেন্ডে ৫০/১০০ বার বা তার কম)

relay-principle

২) সলিড স্টেটঃ

কোন মেকানিকাল পার্টস নাই। সেমিকন্ডাকটার পদার্থ দিয়ে তৈরী। হাই স্পিড অন/অফ করে (সেকেন্ড হাজার বার থেকে লক্ষ্য বার বা তার বেশী)

রিলে সম্পর্কিত কিছু তথ্যঃ

সাধারন অন/অফের জন্য ইলেক্ট্রোমেকানিকাল রিলেই যথেষ্ঠ। আমাদের সেকেন্ডে কেবল একবার হলেও কাজ চলেবে। তাই ইলেক্ট্রোমেকানিক্যাল রিলেই ব্যবহার করব। বাজারে ৩, ৫, ৬, ৯, ১২, ২৪ ইত্যাদি কন্ট্রোল ভোল্টের রিলে পাওয়া যায়। ভোল্ট গুলা হলো কন্ট্রোল ভোল্টেজ। অর্থাৎ রিলেকে অন অফ করাতে কন্ট্রোল সাইডে যে সর্বনিম্ন ডিসি ভোল্টেজ দিতে হবে তা। উল্লেখিত ভোল্টেজের নিচে রিলে কাজ নাও করতে পারে।

হাই লোড অংশের ভোল্টেজ ও এম্প রেটিং ও জানা দরকার। হাই লোড অংশে ডিসি না এসি ভোল্টেজ খেয়াল করতে হবে। এসি ভোল্টেজ ২৫০ হলে বাসাবাড়ির লোড (ফ্যান, লাইট ) ইত্যাদি কন্ট্রোল করা সম্ভব। হাইলোড সাইডের এম্প রেটিং অনেক গুরুত্বপূর্ন। একটা রিলে দিয়ে কতগুলা যন্ত্র বা কত পাওয়ারফুল যন্ত্র নিয়ন্ত্রন করা যায় তা জানতে এম্প রেটিং জানতে হবে। একটা/দুইটা ফ্যান বা লাইট এর জন্য ৫এম্প (5A) যথেষ্ঠ। কিন্তু ৫ টা লাইট বা ফ্যানের জন্য তা যথেষ্ঠ নাও হতে পারে সেক্ষেত্রে ১০ এম্প নেয়া উচিত। আবার বাসার একটা পাম্পের জন্য ৩০ এম্প দরকার হতে পারে।

রিলের টার্মিনাল সমূহঃ

সাধারন ইলেক্ট্রো মেকানিকাল রিলেতে ৫ টার্মিনাল থাকে।

practical-relay

#দুইটা ডিসি কন্ট্রোল টার্মিনাল (+ ও -): এটা দিয়ে রিলের কয়েলে কন্ট্রোল ভোল্টেজ দেয়া হয়। উলটা পালটা হলে সমস্যা নাই যে কোন টার্মিনালে (+) বা (-) দেয়া যাবে। উপরের ছবিতে COIL হিসেবে চিহ্নিত।

তিনটা হাই লোড টার্মিনাল।

  1. কমন (সুইচের গোড়া বা COM): যেটা দিয়ে সাধারনত রিলে সার্কিটে কারেন্ট ঢুকে
  2. NO (Normally Off / Open): এই টার্মিনালটি কন্ট্রোল ভোল্টেজ না পেলে বন্ধ থাকে। কন্ট্রোল ভোল্টেজ পেলে চালু হয়। এটি দিয়েই মূলত আমরা অন/অফ করব।
  3. NC (Normally Connected / Closed) : এটি NO এর উলটা। অর্থাৎ কন্ট্রোল না থাকলে চালু থাকে আর কন্ট্রোল ভোল্টেজ পেলে অফ হয়। এটি সাধারন ভাবে ব্যাবহার হয়না। তবে যদি আমরা ডার্ক সেন্সর বানাতে গিয়ে ভুলে লাইট সেন্সর বানিয়ে ফেলি এটিতে কানেক্ট করলে বিকল্প পদ্ধতিতে আমাদের ভূলটা কারেকশন করা যাবে (উল্টাটাও সত্য মানে লাইট সেন্সর -> ডার্ক সেন্সর করা যাবে)

আমরা নিচের সার্কিট দিয়ে বাসার বাতি, ফ্যান অন্যান্য লোড চালাতে পারব কারন এখানে একটি রিলে ব্যাবহার করে ডিসি/এসি হাইলোডকে কন্ট্রোল করতে পারি।

* রিলের সাথে অবশ্যই প্রদর্শিত ডায়োডটি যেমন দেখানো সেভাবে লাগাতে হবে (রিভার্স/উল্টা বায়াসে, সাধারনত সার্কিটে আমরা ফরওয়ার্ড/সম্মুখ বায়াসে লাগাই কিন্তু রিলের সাথে লাগাতে হয় রিভার্স বায়াসে)।

* রিলেযুক্ত সার্কিটে হাইভোল্টেজ এসি ব্যাবহৃত হবে যা খুবই বিপদজনক। হাই ভোল্টেজ বিদ্যুৎ সম্পর্কে যাদের ধারনা কম তারা রিলে দিয়ে এসি সার্কিট বানাবে না।

রিলে সার্কিটে বাইপাস ডায়োদের গুরুত্বঃ

এই ডায়োডটি একটি বাইপাস ডায়োড। ম্যাগনেটিক রিলে যখন অফ হয় তখন তার কয়েলে মূল প্রবাহের বিপরিত মূখি একটা কারেন্ট (ব্যাক ই এম এফ) তৈরী হয়। এটাকে সরাসরি সার্কিটি যেতে দিলে আমাদের ট্রানজিস্টর বা সেন্সেটিভ ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে তাই ডায়োড দিয়ে একে বাইপাস করে নিস্ক্রিয় করা হয়। তাই অবশ্যই মনে রাখতে হবে ম্যাগনেটিক রিলে ব্যবহার করলে এর কয়েলে রিভার্স বায়াসে একটি ডায়োড (যে কোন মানের) লাগাতে হবেই।

light operated relay

সেন্সর সার্কিটের সংবেদনশীলতাঃ

আমাদের এখনকার সার্কিট দিয়ে মোটামুটি কাজ চালানো গেলেও এর সংবেদনশীলতা অনেক কম। মানে প্রখর আলো বা নিকশ অন্ধকার ছাড়া এটি কাজ করতে চায়না। তাই একে সাধারন ষ্ট্রিট লাইট কন্ট্রোলে ব্যবহার করতে গেলে সমস্যায় পড়তে হয়। যেমন ভোরে আলো ফোটার পরও বাতি বেশ অনেক্ষন জ্বলে থাকে আবার সন্ধ্যা হয়ে যাবার পরও সহজে জ্বলতে চায়না। তাই এর সংবেদনশীলতা বাড়ানো প্রয়োজন। খুব সহজ একটা মডিফিকেশনের মাধ্যমে আমরা এটি করতে পারি। পরের চিত্রে দেখা যাচ্ছে আমরা দুটি ট্রানজিস্টর ব্যবহার করেছি। আরো একটু সংবেদনশীলতা বাড়াতে আরেকটি ট্রানজিস্টর যুক্ত করা যায় (পরের চিত্র)। কিন্ত এভাবে ট্রানজিস্টর আর বাড়াতে থাকলে সংবেদনশীলতা আর বাড়বেনা।

২ ট্রানজিস্টর বিশিষ্ট সংবেশনশীল ডার্ক সেন্সর সার্কিট - ১৩ ট্রানজিস্টর বিশিষ্ট সংবেশনশীল ডার্ক সেন্সর সার্কিট

শুধু ট্রানজিস্টর দিয়ে তৈরী সার্কিটের একটা সমস্যা হলো রিলে চ্যাটারিং। খুব ভোরে বা গোধুলিতে আলো যখন অল্প থাকে তখন ট্রাঞ্জিষ্টার বেসড ডার্ক সেন্সর গুলি সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে, যে রিলে অন করবে না অফ করবে।

এই সময় অনেকবার দ্রুত রিলে অন অফ হতে থাকে (চ্যাটারিং মানে বাচলতা বা সোজা বাংলায় কট কট করা – রিলে সুইচিং এর সময় কট করে আওয়াজ হয় দ্রুত অন অফ হলে কট কট আওয়াজ হয় একেই রিলের চ্যাটারিং বলে)।

এই চ্যাটারিং দূর করার উপায় হলো এমন এক সার্কিট যা দ্রুত সিদ্ধান্ত দিতে পারে। মাইক্রোকন্ট্রলার এক্ষেত্রে ভাল সমাধান হতে পারে। ডিজিটাল এই পদ্ধতি, কিন্তু তা মশা মারতে কামান দাগার মতো অবস্থা। এনালগ পদ্ধতিতে এর একটা ভাল সল্যুশন হলো অপ-এম্প বা কম্পারেটরের ব্যবহার।

অপ-এম্প (Operational Amplifier) একটি ছোটখাট এমপ্লিফাইয়ার যা দুই ইনপুটকে তুলনা করে বড় না ছোট সিদ্ধান্ত দিতে পারে। শেষের চিত্রে অপ-এম্প সার্কিট দেখানো হয়েছে।

যে কনফিগারেশনে অপ-এম্পটি লাগানো তাতে তা ২ আর ৩ এর ভোল্টেজ তুলনা করে ৬ নং দিয়ে সিদ্ধান্ত (ভোল্টেজ) দেয়। ৩ নং পিনে ভোল্টেজ ২ নং এর চেয়ে বেশি হলেই কেবল ৬ নং দিয়ে আউটপুট ভোল্টেজ পাওয়া যায়।

তাই দিনে LDR রেসিষ্ট্যান্স কম থাকায় প্রচুর ভোল্টেজ ২ নং পিনে যায় যা ৩ থেকে বেশী থাকায় ৬ নং পিনের আউটপুট শুন্য থাকে যা ট্রাঞ্জিষ্টরকে অফ করে রাখে। কিন্তু রাতে উলটে যায় মানে ২ নং পি্ন থেকে ৩ নং পিনে বেশী ভোল্টেজ এসে ৬ নং এ আউটপুট দেয় যা ট্রানজিস্টর ড্রাইভ করে অন করে। আর ট্রাঞ্জিষ্টর রিলেকে অন করে হাইলোডকে অন করে। এই পদ্ধতিতে চ্যাটারিং থেকে নিস্তার পাওয়া যায়।

অপএম্প LM741 ব্যবহার করে খুব সংবেদনশীল ডার্ক সেন্সর সার্কিট

প্রশ্ন হতে পারে শুধু অপ এম্পদিয়েই তো রিলে ড্রাইভ করানো যেত। কিন্তু অপ-এম্পের কারেন্ট রেটিং অনেক কম থাকে (২৫ মিলি এম্প) ঐ কারেন্ট দিয়ে রিলের কয়েল ম্যাগনেটাইজ হয় না তাই ট্রানজিস্টর সাহায্য নিতেই হয়।

তবে শুধু একটি মাত্র আইস দিয়েও (যা মধ্যে অপ-এম্প + রিলে ড্রাইভার বিল্ট ইন আছে) এটি বাস্তবায়ন করা যায় অত্যন্ত এফিশিয়েন্ট ভাবে। আর সেটিই আমাদের এই প্রজেক্টের চুড়ান্ত সার্কিট, যা পরবর্তিতে আলোচ্য।

৫৫৫ আইসি দিয়ে এফিসিয়েন্ট + প্রাক্টিক্যাল ডার্ক সেন্সরঃ

আমার হিসাবে বেস্ট ডার্ক সেন্সর হলো ৫৫৫ আইসি দিয়ে তৈরী। ৫৫৫ একটা মজার আইসি যাকে অনেকে টাইমার আইসিও বলে (টাইমার বানাতে বহুল ব্যবহৃত বলে)। এটি দিয়ে অসংখ্য ও নানা ধরনের প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করা যায়। এর দামও সামান্য আর সর্বত্র পাওয়াও যায়। আমরা পরবর্তি প্রজেক্ট আলোচনায় ৫৫৫ আইসির কার্য পদ্ধতি নিয়ে সবিস্তারে আলাপ করব। আমরা এই প্রজেক্টে ৫৫৫ এর শুধু প্রাসঙ্গিক দিক নিয়ে আলাপ সাড়ব।

এই প্রজেক্টের মূলে রয়েছে একটি ৫৫৫ আইসি। যার ৮ টি পা আছে। চিত্রে যে ভাবে পা গুলা সাজানো আছে বাস্তবে ওভাবে না থেকে সিরিয়ালি (১,২,৩ ইত্যাদি ২ নং চিত্র) থাকে; সরলতার খাতিরে পরের চিত্রে পা গুলি দরকার মতো দেখানো হয়েছে।

555 আইসি পিন আউট
555 আইসি পিন আউট
৫৫৫ আইসি দিয়ে নির্ভরযোগ্য ডার্ক সেন্সর/লাইট সেন্সর সার্কিট ডায়াগ্রাম
৫৫৫ আইসি দিয়ে নির্ভরযোগ্য ডার্ক সেন্সর/লাইট সেন্সর সার্কিট ডায়াগ্রাম

সার্কিটে ব্যবহৃত পার্টস গুলোর কাজঃ

  • # R1=10k ভ্যারিয়েবল রেজিষ্টর, ট্রিগার কম বেশি করার জন্য
  • # R2 = সেনসিটিভিট বাড়ানোর জন্য। অপশনাল, ব্যবহার করব না। ব্যবহার না করায় ৭ নং পিন ডিসকানেক্টেড থাকবে।
  • # c1 = স্পাইক বাইপাস। সুইচিংএর সময় ৫৫৫ আইসিতে স্পাইক তৈরী হলে এটি দিয়ে বাইপাস করে। (অপশনাল বাট ব্যবহার করার জন্য বিনিত পরামর্শ দেয়া হলো)। না ব্যবহার করলে ৫ নং পিন ডিসকানেক্টেড থাকবে।
  • # ১নং পিন = গ্রাউন্ড পিন বা সাপ্লাই (-) টার্মিনাল যুক্ত হবে।
  • # ৮ নং পিন = Vcc বা সাপ্লাই (+) টার্মিনাল যুক্ত হবে। ৫- ১৫ ভোল্ট কানেক্ট করা যায়। তবে ৫ ভোল্টে অনেক আইসি কাজ করেনা তাই ভোল্টেজ ৯, ১২,১৫ ইত্যাদি হলে ভালো।
  • # ৩ নং পিন = আউটপুট পিন, যা দিয়ে রিলে ড্রাইভ করবে। এটি ২০০ মি এম্প কারেন্ট প্রদান বা গ্রহন করতে পারে আর (Vcc -1.5) ভোল্ট সাপ্লাই দেয়। যা কিনা রিলে বা ছোট ডিসি মটর চালানোর জন্য যথেষ্ঠ।
  • # ৪ নং পিন = রিসেট পিন, যাতে গ্রাউন্ড পিনের ছোয়ায়, ৫৫৫ আইসি রিসেট হয়। আমরা যেহতু কোন অবস্থায়ই রিসেট করবো না তাই এটি সব সময় Vcc যুক্ত থাকবে।
  • # ২ নং পিন = ট্রিগার পিন, বা সেট পিন। যাতে নির্দিষ্ট ভোল্টেজের নিচে দিলে ৫৫৫ আইসি সেট করে (পরে আলোচ্য)
  • # ৬ নং পিন = থ্রেশহোল্ড পিন, যাতে নির্দিষ্ট ভোল্টেজের উপর গেলে ৪ নং পিনের মতো আচরন করে অর্থাৎ আইসিকে রিসেট করে (পরে আলোচ্য)

৫৫৫ সার্কিটের কার্যপ্রণালীঃ

৫৫৫ আইসিকে বহুভাবে ব্যবহার করা যায়, যেমন টাইমার, টগল সুইচ ইত্যাদি। বর্তমানে আমরা একে একটি কন্ট্রোলড টগল সুইচ হিসাবে ব্যাবহার করব। যাতে ২ আর ৬ নং পিন ব্যাবহার হবে; আর পিন ৩ হবে আউটপুট। বাকি পিন যেভাবে সংযুক্ত সেভাবে বেকার বসে থাকবে। ৫৫৫ আইসির টগলের মুলে আছে সেট/রিসেট।

  • সেটঃ ৩ নং পিন হাই (ভোল্টেজ আছে)
  • রিসেটঃ ৩ নং পিন লো (ভোল্টেজ নাই)
  • সেট হয়ঃ ২ নং পিনের ভোল্টেজ যদি 1/3 x Vcc এর কম হয় ( যেমন Vcc=12 volt হলে ২নং পিন ভোল্ট 4 ভোল্টের কম হলে)।
  • রিসেট হয়ঃ ৬ নং পিনের ভোল্টেজ যদি 2/3 x Vcc এর বেশী হয় (যেমন Vcc= 12 volt হলে ৬ নং পিনের ভোল্ট 8 (৮) ভোল্টের বেশী হলে)
  • চিত্রে দিকে তাকালে দেখা যায় যে আগের মতো LDR, ভ্যারিয়েবল রেসিষ্টর একটা ভোল্টেজ ডিভাইডার সার্কিট তৈরী করে।

দিনের বেলাঃ LDR এর রেজিস্ট্যান্স প্রায় শুন্য তাই সব ভোল্টেজ ড্রপ হয় ভ্যারিয়েবল রেজিস্টরে। ফলে ৬ নং পিনের ভোল্টেজ প্রায় Vcc এর কাছাকাছি চলে যায় (যা ৮ ভোল্টের বেশী), ফলে ৫৫৫ আইসি রিসেট থাকে মানে ৩ নং পিনে কোন ভোল্টেজ না থাকায় রিলে অফ থাকে।

রাতের বেলাঃ LDR এর রেজিস্ট্যান্স, ভ্যারিয়েবল রেজিস্ট্যান্স তুলনায় খুব হাই। তাই সব ড্রপ ঘটে LDR এ। ফলে ২ নং পিনের ভোল্টেজ কমে প্রায় শুন্যের কাছাকাছি চলে যায়। ফলে ৫৫৫ আইসি সেট হয়ে যায় মানে ৩ নং পিনে ভোল্টেজ চলে এসে রিলে অন করে দেয়।

৫৫৫ আইসে রিলে ড্রাইভ করার মতো যথেষ্ট ভোল্টেজ আর প্রচুর কারেন্ট দিতে পারে বলে আর কোন ট্রানজিস্টর বা অতিরিক্ত পার্টসের দরকার পড়েনা। আবার কম্পারেটরের মতো (আসলে ৫৫৫ এ দুইটা কম্পারেটর আছে) দ্রুত সিদ্ধান্ত দেয়ায় চ্যাটারিং ঘটেনা। তাই ৫৫৫ আইসি খুব সিম্পল বাট রিলায়বল সার্কিট উপহার দেয়।

লাইট সেন্সরে পরিবর্তনঃ

LDR এবং ভ্যারিয়েবলে রেজিস্ট্যান্স জায়গা বদলালেই ডার্ক সেন্সর টি লাইট সেন্সরে পরিনত হবে। পরবর্তি প্রজেক্টগুলিতে ৫৫৫ আইসি দিয়ে আরো মজার মজার প্রজেক্ট করার আশা রাখি।

পরবর্তিতে>>> প্রজেক্ট২-মোশন সেন্সরঃ জীবিত প্রানী নড়াচড়া ধরতে পারে এমন যন্ত্র 

15 মন্তব্য

  1. আমার একটু সমস্যা যা হল- ২টি রিলের কানেকশন। আমি যখন ১ম রিলে অন করব তখন ২য় রিলে অফ থাকবে।এমন অবসথায় যখনি ২য় রিলে অন করব তখন ১ম রিলে অটোমেটিক অফ হতে হবে। এই রিলে কানেকশন ডায়াগ্রাম পোস্ট করে সাহায্য করবেন।।

    • ৩ নাম্বার পিনের আউটপুট একটা রিলের NO এবং একই সাথে অন্য রিলের NC তে কানেক্ট করবেন। এতে এক রিলে অন্য রিলের উল্টা কাজ করবে।
      দেরিতে রিপ্লাই দেবার জন্য দুঃখিত।

  2. আমি ৫০ ১০০টা লাইট এক সাথে কনট্রোল করব এতে রিলে চেন্জ করব নাকি যেটা আছে এটা দিয়ে হবে?

  3. onk bar try kore o banate parlam na…….
    post er kothaa gula o temon clear na, jara notun tara kichu e bujhbena diagram dekhe…
    555 ic er diagram tay R2 te veriable er ek pin khali kn.? eta kothay giye lagse.? ami onuman kore 6 num pin a disi but kono kaz korsena…R2 & pin5 use na kora lagle ullekh kore confused kore felsen, pin 5 bad dilam but R2 jodi use e na korben tahole ullekh korar ki dorkar…
    poriseshe sudu eta e jani onk vabe try kore o ami success hoite parlam na

  4. মন্তব্য: poriseshe rayan bhai er help a project ta hoye gelo 🙂
    jara 5volt output diye try korben tara VCC & 10k VR er majhe ekta 10k R diyen…I mean (5volt+) VCC to 10k resistance series with 10k veritable…
    & veritable er ekta pin khali e thakbe…

    • তোমার এলডিয়ার টি ছোট বিধায় এই সমস্যা হয়েছে বলে মনে করছি। এলডিআর বড় হলে অল্প আলোতেই রোধের পার্থক্য অনেক কম-বেশি হয়। আর ছোট গুলোতে তেমন পার্থক্য হয়না বললেই চলে। অপর দিকে উপরে যে ভেরিয়েবল রেজিস্টর আছে তাও খুব ছোট মানের। ফলে সুইচিং হবার মত রেজিস্টেন্সের পার্থক্য তৈরি হচ্ছিল না। আমার মতে ভেরিয়েবল রেজিস্টর টি ১০০ কিলো ওহম মানের লাগালে আর কোনো অতিরিক্ত রেজিস্টর ব্যবহারের প্রয়োজন পড়বে না।

      পরিশেষে, অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইল তোমার প্রতি 🙂

উত্তর প্রদান

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন