আরএফআইডি (RFID) কিঃ
আরএফআইডি (RFID) এর পূর্ণরূপ হচ্ছে Radio Frequency IDentification. RFID হচ্ছে ক্রেডিট কার্ডের মত পাতলা এবং ছোট একটা ইলেকট্রনিক ডিভাইস যেটায় খুবছোট একটি চিপ আর একটি কয়েল ও অ্যান্টেনা থাকে। চিপটা সাধারণত সর্বোচ্চ ২০০০ বাইট তথ্য ধারণ করতে পারে।
পরিচ্ছেদসমূহ
- 1 আরএফআইডি (RFID) কিঃ
- 2 আরএফআইডি (RFID) এর কাজ কিঃ
- 3 আরএফআইডি (RFID) ট্যাগ কিঃ
- 4 RFID Tag কত প্রকারঃ
- 5 আরএফআইডি ট্যাগ ব্যবহারের সুবিধাঃ
- 6 আরএফআইডি টেকনোলজি কবে থেকে চলছে?
- 7 আরএফআইডি টেকনোলজি এর কিছু সমস্যাঃ
- 8 আরএফআইডি টেকনোলজিতে কিছু সমস্যার সমাধানঃ
- 9 একটি আরএফআইডি (RFID) সিস্টেমে কি থাকেঃ
- 10 আরএফআইডি (RFID) সিস্টেমের কার্যপ্রণালীঃ
- 11 আরএফআইডি (RFID) এর ব্যবহারঃ
- 12 RFID সিস্টেম কি নিরাপদ?
- 13 জম্বি (Zombie) RFID ট্যাগঃ
আরএফআইডি (RFID) এর কাজ কিঃ
RFID ‘র কাজ অনেকটা বারকোডের মতই। শপিংমল কিংবা যেখানে কোনও জিনিস কে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও কম্পিউটার দ্বারা সনাক্ত করা লাগে, সেখানে অনেক সময় আরএফআইডি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। প্রত্যেকটি আরএফআইডি ট্যাগের (RFID ডিভাইসকে RFID ট্যাগ বলা হয়) একটি ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন আইডি নাম্বার থাকে। RFID Scanner দিয়ে আরএফআইডি ট্যাগ থেকে এই নম্বরটি বের করা হয়। এবং এই নম্বর দিয়ে প্রত্যেকটা ট্যাগকে আলাদাভাবে শনাক্ত করা হয়।

আরএফআইডি (RFID) ট্যাগ কিঃ
রেডিও ফ্রিকুয়েন্সি নিয়ন্ত্রিত ছোট ডিভাইস যা কোন বস্তুকে সনাক্ত করতে ব্যবহার করাহয়। এই পদ্ধতিকে কার্যকর করতে RFID Tag ছাড়াও আরও প্রয়োজন হয় একটি তথ্য আদান-প্রদানকারী সিস্টেম (Reader, writer and transmitter) যা কিনা ট্যাগে রেডিও ফ্রিকুয়েন্সি সিগনাল ট্রান্সমিট করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদানপ্রদান করতে পারে। এবং উক্ত তথ্য প্রসেসিং করে কোন নির্দিষ্ঠ কাজ ও সম্পাদন করা সম্ভব যায়।

RFID Tag কত প্রকারঃ
RFID ট্যাগ ২ ধরণের হয়, Active ও Passive। একটিভ ট্যাগে ব্যাটারি লাগে, প্যাসিভ ট্যাগ RFID স্ক্যানার থেকেই পাওয়ার পায়, ওয়্যারলেস পাওয়ার ট্রান্সমিশনের মাধ্যমে।

বেসিক ওয়্যারলেস পাওয়ার ট্রান্সমিশন প্রজেক্ট নিয়ে জানতে আমাদের সাইটে প্রকাশিত এই লেখাটি পড়তে পারেন
আরএফআইডি ট্যাগ ব্যবহারের সুবিধাঃ
RFID টেকনোলজি বারকোড টেকনোলজি থেকে অনেক কার্যকর, কারণ আরএফআইডি এর একটি বড় সুবিধা হচ্ছে, একে ঠিক স্ক্যানার এর উপর ধরতে হয়না। বারকোড স্ক্যানার আলোর মাধ্যমে কাজ করে, তাই ঠিক স্ক্যানারের উপর বারকোড না ধরলে স্ক্যান হতে সমস্যা হতে পারে। কিন্তু যেহেতু RFID রেডিও ফ্রিকুয়েন্সির মাধ্যমে কাজ করে, তাই আরএফআইডি ট্যাগকে আসলে RFID Scanner এর কয়েক ফিটের মধ্যে রাখলেই স্ক্যান করা যায়। এমনকি হাই ফ্রিকুয়েন্সির ট্যাগের ক্ষেত্রে ২০ ফিট পর্যন্ত রেইঞ্জ পাওয়া যায়।
আবার, প্যাসিভ RFID ট্যাগ এর ব্যাটারিও লাগেনা, আরএফআইডি স্ক্যানার থেকেই তারহীন ভাবে RFID ট্যাগ এ পাওয়ার সাপ্লাই করা হয়। তাই, আপনি যদি শপিংমলে আরএফআইডি ট্যাগ লাগানো জিনিসপত্র কিনে ব্যাগে রেখে কাউন্টারে আরএফআইডি স্ক্যানারের সামনে ব্যাগটি রাখেন, তাহলেই স্ক্যানার সবগুলো ট্যাগ স্ক্যান করে ফেলতে পারে। এমনকি আপনাকে ব্যাগ থেকে একটা জিনিসও বের করতে হবেনা। তবে এভাবে অনেকগুলো ট্যাগ একসাথে রেখে স্ক্যান করার কিছু অসুবিধাও আছে। পরে সেকথায় আসছি।

আরএফআইডি টেকনোলজি কবে থেকে চলছে?
আরএফআইডি টেকনোলজি মোটামুটি বছর পঞ্চাশ ধরে পাওয়া যায়। তবে গত কয়েকবছরে আরএফআইডি ট্যাগ এত সস্তা হয়ে গেছে যে বিদেশের অনেক শপিংমলেই বিভিন্ন প্রোডাক্টে এই ট্যাগ পার্মানেন্টলি আটকে দেয়া হয়। Alien Technologies কম্পানি সম্প্রতি Gillette কম্পানিকে ৫০০ মিলিয়ন RFID ট্যাগ বিক্রি করেছে প্রত্যেকটার দাম মাত্র ১০ সেন্ট ধরে।
আরএফআইডি টেকনোলজি এর কিছু সমস্যাঃ
একটু আগে বলেছিলাম যে অনেকগুলো ট্যাগ একসাথে স্ক্যান করার সমস্যাও রয়েছে। এ সমস্যাটিকে বলা হয় ট্যাগ কলিশন, খবরের কাগজের ভাষায় যার অর্থ হচ্ছে- “একাধিক RFID ট্যাগের তথ্যবাহী ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ, আহত ৩, ড্রাইভার পলাতক 😛 “। আসলে যদিও ব্যাপারটা ঠিক তা নয়।

যেহেতু আরএফআইডি ট্যাগ পাওয়ার পায় RFID স্ক্যানার থেকে, একসাথে যখন অনেকগুলো ট্যাগকে পাওয়ার করা হয়, তখন প্রত্যেকটা ট্যাগ একসাথে নিজের UID Number (Unique Identification Number) ট্রান্সমিট করা শুরু করে। তখন এতগুলো ট্যাগ একসাথে সামলাতে গিয়ে RFID স্ক্যানারের মাথায় প্যাঁচ লেগে যায় 😀 .
আরএফআইডি টেকনোলজিতে কিছু সমস্যার সমাধানঃ
বিভিন্ন কোম্পানি এ সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করেন, তবে জনপ্রিয় একটি পদ্ধতি হল, RFID স্ক্যানার যখন বুঝতে পারবে ট্যাগ কলিশন হচ্ছে, তখন সে প্রত্যেকটা ট্যাগকে কতক্ষন পর ইউআইডি (UID) নং পাঠাতে হবে সেটা বলে দিবে। প্রত্যেকটা ট্যাগ তার জন্য নির্ধারিত সময়ে তার ইউআইডি নং সেন্ড করবে, তাই ট্যাগ কলিশন হবেনা।
এছাড়া ২টি স্ক্যানার যদি একসাথে কোনও RFID ট্যাগ স্ক্যান করার চেষ্টা করে, তখন আবার ট্যাগ একসাথে ২টা স্ক্যানারকে ইউআইডি নং পাঠাতে পারেনা, একে রিডার কলিশন বা স্ক্যানার কলিশন সমস্যা বলা হয়।
একটি আরএফআইডি (RFID) সিস্টেমে কি থাকেঃ
একটা RFID সিস্টেমে-
- ১। একটি স্ক্যানিং অ্যান্টেনা
- ২। একটি ট্রান্সমিটার ও রিসিভার মডিউল এবং সাথে একটি ডিকোডার থাকে যা প্রাপ্ত তথ্য ডিকোড করে। একেবলে RFID রিডার (স্ক্যানার)
- ৩। একটি ট্রান্সপন্ডার, যেটা হচ্ছে RFID ট্যাগ

নিচে একটি আরএফআইডি সিস্টেমের আর্কিটেকচার দেখানো হলো-

আরএফআইডি (RFID) সিস্টেমের কার্যপ্রণালীঃ
স্ক্যানিং অ্যান্টেনা দুটি কাজ করে থাকে- আরএফ (রেডিও ফ্রিকুয়েন্সি) সিগনালের মাধ্যমে ট্যাগের সাথে যোগাযোগ করে এবং passive ট্যাগ এর ক্ষেত্রে ট্যাগে পাওয়ার ট্রান্সমিট করে ওয়্যারলেস পাওয়ার ট্রান্সমিশন টেকনোলজির মাধ্যমে।
একটা ট্যাগ যখন স্ক্যানিং অ্যান্টেনার রেঞ্জের মধ্যে আসে, তখন ট্যাগ টি স্ক্যানিং অ্যান্টেনাতে সর্বক্ষণ পাঠাতে থাকা একটিভেশন সিগনাল পেয়ে স্ক্যানারকে তার ইউআইডি(UID) পাঠায়।
সংক্ষেপে, এভাবেই একটি RFID সিস্টেম কাজ করে।
ফান ফ্যাক্ট – একটা RFID ট্যাগ পড়তে স্ক্যানার সময় নেয় ১০০ মিলিসেকেন্ড, আপনি চোখের পাতা ফেলতে যা সময় নেন তার ৪ ভাগের ১ ভাগ!
প্রথমদিকে RFID ট্যাগ শুধুমাত্র জড়বস্তু অর্থাৎ প্রাণহীন জিনিসে লাগানো হত। যেমন সুটকেস, কাপড় ইত্যাদি। বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে এখন প্রাণীদেহেও RFID ট্যাগ ব্যবহার করা যায়। প্রাণীদেহের RFID ট্যাগগুলো সাধারণ RFID ট্যাগ থেকে একটু ভিন্ন হয়ে থাকে। এগুলো ক্যাপসুল আকৃতির হয়।

এগুলো এত ছোট করে বানানো হয় যে একেকটা ট্যাগ একটা চালের সমান হয় এগুলোর ক্যাপসুল এমন পদার্থ দিয়ে বানানো হয় যাতে দেহের কোনও ক্ষতি বা অস্বস্তিবোধ না হয়।
এ ট্যাগগুলো প্রাণীদেহে স্থাপনের একটা সাধারণ সমস্যা হচ্ছে, ট্যাগগুলো বারবার এদিক সেদিক সরে যায়। তাই অনেক কোম্পানি ট্যাগের ক্যাপসুল এমন একটি পদার্থ দিয়ে বানান, যেটা আশেপাশের টিস্যুকে নিজের চারপাশে বর্ধিত করে, তখন টিস্যুগুলোই ট্যাগকে আটকে রাখে।
সাধারণত পোষা প্রাণী, গরু ইত্যাদির পরিচয় নির্দিষ্ট করার জন্য RFID ট্যাগ তাদের দেহে সিরিঞ্জের মাধ্যমে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। তবে কিছু ট্যাগ মানুষের দেহেও ব্যবহার করা হয়।
আরএফআইডি (RFID) এর ব্যবহারঃ
RFID ট্যাগ বিভিন্ন আকার এবং বিভিন্ন আকৃতিতে পাওয়া যায়, তাদের বিভিন্ন জায়গায় ফিক্স করাযায়। RFID ব্যবহারের কিছু ক্ষেত্র হচ্ছে-
- ১। কোনও প্রাণী ট্র্যাক(track) বা প্রাণীটির অবস্থান নির্ণয় করা
- ২। স্ক্রু আকৃতির ট্যাগ কে গাছে কিংবা কাঠের জিনিসে লাগানো, যা পরে আইডেন্টিফিকেশনের সুবিধা দেয়।
- ৩। ক্রেডিটকার্ড শেপের ট্যাগ ব্যবহার করে অফিস-বাসায় মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রন করা
- ৪। দোকানে পন্যের মধ্যে RFID ট্যাগ লাগিয়ে চুরি প্রতিরোধ করা (ট্যাগ দোকানের বাইরে গেলেই অ্যালার্ম বেজে উঠবে)
- ৫। শিপিং কন্টেইনার, ভারী যন্ত্রপাতি ইত্যাদি পরিবহনের সময় RFID ট্যাগ ব্যবহার করে পরিচয় নির্দিষ্ট করা।
RFID সিস্টেম কি নিরাপদ?
দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আরএফআইডি (RFID) সিস্টেম খুব একটা নিরাপদ না। RFID ট্যাগ যেহেতু স্ক্যানারের কাছাকাছি রেখেই স্ক্যান করা যায়, তাই কেউ সঠিক ফ্রিকুয়েন্সির স্ক্যানার নিয়ে আপনার পাশ দিয়ে হেঁটে গেলেই আপনার ট্যাগগুলো স্ক্যান করে জেনে নিতে পারবে আপনি কি কি জিনিস কিনেছেন অথবা আপনার পোশাকটি কোন কোম্পানির। এটা হয়তো তেমন মূল্যবান কোনও তথ্য নয়, তবে কোনও মিলিটারি সিচুয়েশনে শত্রুপক্ষ হাই রেঞ্জের স্ক্যানার নিয়ে অপরপক্ষের কাছাকাছি লুকিয়ে গেলেই তাদের মধ্যে কে অফিসার, কে জেনারেল শনাক্ত করে সেভাবে টার্গেট করতে পারবে।
সাধারণত সামরিক আর এধরণের ক্ষেত্রে যেখানে নিরাপত্তা দরকার সেখানে বিশেষ ধরণের RFID ট্যাগ ব্যবহার করা হয় যেগুলো ডেটা এনক্রিপ্ট করে ট্রান্সমিট করে।

কিন্তু সাধারণ ট্যাগ (যেমন যেগুলো শপিং মলে ব্যবহার করা হয়) এর চিপ ডেটা এনক্রিপ্ট করার মত শক্তিশালী হয়না। তাই ইচ্ছা করলে যে কেউ সহজেই আপনার RFID ট্যাগ স্ক্যান করে আপনার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে।
জম্বি (Zombie) RFID ট্যাগঃ
এরকম সমস্যা নিরসনে জম্বি (Zombie) RFID ট্যাগ নামে একধরণের ট্যাগ আবিষ্কার হয়েছে। জম্বি অর্থ হচ্ছে জীবন্মৃত মানুষ। যারা কবর দেয়ার পর বেঁচে উঠে জীবন্ত মানুষের কলিজা খাওয়ার জন্য (!) ব্যস্ত হয়ে ওঠে। যদিও এর কোনও বাস্তব ভিত্তি নেই।
জম্বি ট্যাগের আইডিয়াটাও অনেকটা সেরকমই। ধরি, একটা কাপড়ের দোকানে কোনও কাপড়ে জম্বি RFID ট্যাগ লাগানো আছে। ট্যাগটি যখন দোকানের ভিতর থাকবে, তখন এটি “জীবন্ত” থাকবে এবং কোনও স্ক্যানার দিয়ে স্ক্যান করা যাবে। কিন্তু ক্রেতা যখন কাপড়টি কিনে দোকান থেকে বের হয়ে যাবে, তখন একটা বিশেষ ডিভাইস RFID ট্যাগটিতে নির্দেশ পাঠাবে “মরে” যেতে, তখন ট্যাগটি আর কোনও স্ক্যানার দিয়ে স্ক্যান করে তথ্য পাওয়া যাবেনা। আবার, ক্রেতা যখন কোনও কারনে কাপড়টি নিয়ে দোকানে আসবে, তখন সেই ডিভাইসটি আবার জম্বি ট্যাগ এ নির্দেশ পাঠাবে “বেঁচে” উঠতে, তখন দোকানের ভিতর আবার স্ক্যানার দিয়ে জম্বি ট্যাগ স্ক্যান করা যাবে।
RFID আধুনিক ও অনেক কাজের উপযোগী একটি প্রযুক্তি। এ লেখায় যেগুলো আছে তার বাইরেও আরএফআইডি এর কাজের অনেক ক্ষেত্র আছে। আবার, আরএফআইডি স্ক্যান করা খুব সহজ হওয়ায় বারকোড ও অন্যান্য প্রচলিত শনাক্তকরণ প্রযুক্তি থেকে RFID অনেক ভাল কাজ করে। বর্তমানে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট, গাড়ির নাম্বার প্লেটেও এই প্রযুক্তি অহরহ ব্যবহার হচ্ছে। তবে, RFID ব্যবহার করায় এখনও কিছু নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে। RFID ট্যাগ এ সংরক্ষিত তথ্য যাতে অনাকাঙ্ক্ষিত কেউ দেখতে না পারে সেটি নিশ্চিত করতে হবে, তাহলেই আমরা দৈনন্দিন জীবনে নিশ্চিন্তে আরএফআইডি (RFID) টেকনোলজি সচ্ছন্দে ব্যবহার করতে পারবো।
লেখাটা খুবই ভালো।