কিভাবে শুরু করবেন ইলেক্ট্রনিক্স শিক্ষা

13
5452
ইলেক্ট্রনিক্স শিখতে গেলে কিভাবে শুরু করবো? কোথায় পাবো ইলেক্ট্রনিক্স পার্টস, প্রজেক্ট, সার্কিট ডায়াগ্রাম এসবের উত্তরে আমার অভিজ্ঞতা তুলে ধরছি। ইঞ্জিনিয়ারিং প

ইলেক্ট্রনিক্সের বিভিন্ন গ্রুপে আমরা একটা প্রশ্ন শুনতে পাই নবীন বন্ধুদের কাছ থেকে – গড়পড়তা প্রশ্নটা থাকে, ভাইয়া আমি ইলেক্ট্রনিক্স নিয়ে কাজ করতে চাই আমি কিভাবে কি করবো? এর উত্তরে নানান মানুষ নানান ভাবে জবাব দিয়ে থাকে যার অধিকাংশই আগ্রহী বন্ধুকে বিভ্রান্ত করে এবং তাঁর আগ্রহের টানে ভাটা ফেলে দিতে প্রবল ভুমিকা পালন করে। এই প্রশ্নটির উত্তর দিতে আমি আমার শিক্ষার গল্পদিয়েই শুরু করবো যদিও জানি একেক জনের শুরুটা একেক রকম ভাবেই হয় এবং হয়েছে।

তখন আমি ক্লাস ৯ এ পড়ি। একদিন বন্ধুর বাসায় গিয়ে ইংরেজীতে লিখা একটি বই দেখতে পাই এবং জানতে পারি এটা ইলেক্ট্রনিক্সের উপর একটি বই। বইটি ছিলো আমার বন্ধুর বড় ভাইয়ের। এরপর আমি এই ইলেক্ট্রনিক্স বইটি নিতে চাই এবং শিখবার আগ্রহ প্রকাশ করি। কিন্তু আমি ছোট এবং এইসব জটিল বিষয় আমি পারবো না বলে আমাকে আমার আগ্রহ ত্যাগ করতে পরামর্শ দেওয়া হয়।

তবুও আমি হাল ছেড়ে না দিয়ে বইয়ের বিভিন্ন লাইব্রেরীতে খোঁজ নিতে শুরু করি কিন্তু সবখানেই হতাশ হই। পাঠ্য বইয়ের ইলেক্ট্রনিক্স অংশ (এইচ এস সি ও অনার্স লেভেলের) পড়তে শুরু করি। কিন্তু খুব একটা বুঝতে সক্ষমহই না এবং কাজ শুরু করবার জন্য এইগুলো যে কোন কাজের না সেটা অল্পদিনেই বুঝে যাই।

এরপর আবার সঠিক বই ও মানুষের সন্ধান করার জন্য লেগে থাকি। একদিন পাবলিক লাইব্রেরীতে একটি ইলেক্ট্রনিক্স বই পাই যেখানে অল্প বিস্তর বর্ণনা আছে কিভাবে একটি ট্রান্সফরমারকে কাজে লাগিয়ে এসি থেকে কম ভোল্টের ডিসি বিদ্যুত তৈরী করা যায় সে সম্পর্কে। পার্টসের নাম ও উক্ত ইলেক্ট্রনিক্স সার্কিট ডায়াগ্রাম টি খাতায় তুলে নিয়ে আসি।

এইবার সমস্যা হয় কোথায় এসব ইলেক্ট্রনিক্স পার্টস পাবো তার সন্ধান করাতে। আমার ধারণা ছিলো যারা মেরামতের কাজ করে তারা পার্টস বিক্রয় করে কিন্তু তাদের কাছে কিনতে যেয়ে জানতে পারলাম আলাদা দোকান আছে এবং মেরামতকারীদের সহায়তায় দোকানের ঠিকানা নিয়ে দোকান থেকে পার্টস কিনে আনলাম।

ডায়াগ্রাম মিলিয়ে অতি যত্নে বেশ কয়েকদিন ধরে কোন প্রকার সোল্ডার (ঝালাই করা) ছাড়াই হাত দিয়ে মুচড়িয়ে কানেকশন করতে চেষ্টা করলাম। এরপর এটাকে কোন রকম জোড়া দিয়ে পাওয়ার দিলাম বাসার সবার অগোচরে। টেস্টার ধরে দেখলাম আউটপুটে কোন বাতি জ্বলে না সেই সাথে অনুধাবন করলাম কত ভোল্ট পাচ্ছি তাও দেখতে পারছি না। আবার এটাকে কি কাজে লাগাবো তেমন কোন ধারণাও বের করতে পারছিলাম না প্রয়োজনীয় জিনিসের অভাবে।

আবার ছুটাছুটি – উপায় অন্তর পাই না কোন। ঢাকা থেকে তখন কিছু বিজ্ঞান পত্রিকা বের হতো তা হাতে পেতাম অনিয়মিত এবং একটি বিজ্ঞান পত্রিকাতে কলিংবেলের সার্কিট পেলাম একটি। সেই সার্কিটের সকল যন্ত্রপাতি যোগার করলাম অনেক কস্টে (পার্টসের দাম গত ২০ বছর আগেও এখনকার মতোই ছিলো প্রায় তাতে বুঝা যাবে তখনকার তুলনায় দাম এখন কত কম)। এরপর দেখলাম এটাকে আর হাতে মুচড়িয়ে কানেকশন দেওয়া যাবে না। কিনলাম সোল্ডারিং আয়রন, রাং, একটি নোজ প্লায়ার, একটি ছোট মাল্টিমিটার, একটি ছোট স্পীকার আর কিছু চিকন তার।

শুরু হলো এক যুদ্ধ – মোটা কাগজের উপর ছিদ্র করে তাতে পার্টস বসিয়ে নীচ দিয়ে চিকন তার ঝালাই করে সার্কিট বানানো। কত যে ঝক্কি! প্রায় ১ সপ্তাহের প্রানান্তকর চেষ্টার পর এক বিকালে শেষ করলাম। বাসার টর্চের ব্যাটারী লাগিয়ে প্রথম শুনতে পেলাম নিজের বানানো সার্কিট থেকে মিষ্টি মিউজিক। এখনও সেই অনুভুতি কানে বাজে।

তারপর ঢাকায় আসা – বই জোগার করা – আরও আরও সার্কিট ও ইলেক্ট্রনিক্স প্রজেক্ট বানানো – ভ্যারোবোর্ড, বীমবোর্ডে কাজ করা, পিসিবি বানানো – সরল থেকে জটিল সার্কিটের জগতে প্রবেশ। সেই সাথে পড়াশুনা করা রেজিস্টর, ক্যাপাসিটর, ডায়োড, ট্রানজিস্টর, আইসি ইত্যাদির উপর। সেই থেকে চলছেই – এখনও অনেক পড়ি। এ যেন এক অতল জ্ঞানের সমুদ্র।

আমার গল্প থেকে আপনারা কিছুটা আঁচ করেতে পেরেছেন নিশ্চয়ই কি কি করতে হবে আর কি লাগবে ইলেক্ট্রনিক্স শিখতে। একটা তালিকা করে দেখি আসলে কি কি দরকার –

  • ১। আমাকে শিখতে হবে এমন মনের ইচ্ছা
  • ২। ইলেক্ট্রনিক্সের প্রতি ভালোবাসা
  • ৩। একটি সোল্ডারিং আয়রণ – (শুরুর জন্য ২৫-৪০ ওয়াট যথেষ্ট)
  • ৪। ঝালাইয়ের জন্য রাং, রজন ইত্যাদি
  • ৫। একটি টুল বক্স যাতে প্লায়ার্স, বিভিন্ন ধরনের স্ক্রু ড্রাইভার থাকবে
  • ৬। প্রয়োজনীয় পার্টস ও সার্কিট বানানোর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ (ভেরোবোর্ড/বীমবোর্ড বা প্রজেক্ট বোর্ড ইত্যাদি)
  • ৭। পার্টস সম্বন্ধে পড়াশোনা করবার জন্য প্রয়োজনীয় বই
  • ৮। এবং একবার না পারিলে দেখো শতবার মানসিকতা ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা সম্পর্কে ভালো ভাবে জেনে নেওয়া ও তা পালন করা।

যদি আপনি প্রকৃতই শিখতে চান তবে মনের প্রশ্নগুলোকে বইয়ের পাতাতে খুঁজতে শুরু করবেন – সেখানে বুঝতে সমস্যা হলে যিনি পারেন তার কাছ থেকে বুঝে নেবেন। কিন্তু না পড়ে, এইটা কেনো ভাই বা এইটা কিভাবে হবে বললে কোনদিনও শিখতে পারবেন না। আর যেহেতু এটা একটি সম্পূর্ণ ভাবে হাতে কলমে কাজ তাই হাতে কলমেই কাজ করতে করতে শিখতে হবে।

সাহস করে কাজে নামলে আমরা তো আছিই আপনাকে সাহায্য করতে – আর দেরী না করে কিভাবে শুরু করবো ভাবনা দুরে রেখে নেমে পড়ুন কাজে।

13 মন্তব্য

  1. আপনি http://www.amaderelectronics.com সাইটে শিখবার জন্য প্রয়োজনিয় সব পাবেন। যদি সেখানে না থাকে তবে সাইটের ফেসবুক পেইজে ম্যাসেজ করতে পারেন আপনার চাহিদা জানিয়ে। আর রেডিও ট্রান্সমিটার হলে ১০০ মিটারের বেশী রেঞ্জের কোন সার্কিটের ক্ষেত্রে আমরা কোন ধরনের সহায়তা করি না।

  2. সুন্দর ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতাটুকু গল্পে সাজিয়ে প্রাণ্জল ভাসাতে ঊপস্হাপন করেছেন বেশ ভালো. আপনার দোয়াই 90 সাল থেকে electronic এই আছি. আপনার মতো ভারতে আমাদের এত কষ্ট করতে হয়নি. পার্টচ কিংবা বইর অভাব সে সময় ছিলনা বরং বর্তমান অই সমস্ত বই ও পার্টচ পাওয়া প্রায়ই মুস্কিল. কারণটা হলো micro electronic, disposable সার্কিট, mosfit এই সমস্ত সার্কিটের বহুল ব্যবহারে half weave, full weave, bridge rectifier, STR, SCR ইত্যাদি অনেক electronics সার্কিট ইতিহাস মাত্র.

  3. আপনার বা আপনাদের লিখিত ইলেক্ট্রনিক্স বিষয়বস্তু খুবই উপকার করবে নতুনদের কিংবা ইন্জিনিয়ারিং পড়ছেন এমন পাটকদের। আমিও আজ অনেক পড়ে, অনেক কিছুই অর্জন করেছি। তবে আমার একটা ছোট্ট অনুরোধ, যে বিষয় আপনারা রচিয়তা করবেন, তাতে যাতে সেই বিষয়টির মুল ছবি এবং আলোচনাটি বিস্তারিত প্রকাশ করবেন। যাতে পাটক পড়ে সহজে বুঝতে পারে।
    আশাকরি আগামিতে আরও নতুন কিছু নিয়ে আসবেন। তাই আমমরা পাটকদের পক্ষ হতে আপনি বা আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ।

  4. ভাই আমি একটা কাজ করতে চাই যে কোন কাজ কিনতু আমি তো ইংলিশে জিনিসের নাম জানি না কি ভাবাবে সিরু করবো

  5. মন্তব্য:নতুনদের ইলেকট্রিক শেখা জন্য বই গুলোর নাম & দাম যদি জানাতে তাহলে ভালো হতো।

উত্তর প্রদান

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন