আজ আমি লিখছি 4v ব্যাটারী ফুল চার্জ ইন্ডিকেটর (4V Battery full charge indicator) সম্পর্কে। এই সার্কিটের মাধ্যমে আমরা জনপ্রিয় লেড এসিড ব্যাটারির চার্জ ফুল হয়েছে কিনা তা খুব সহজেই বোঝা যাবে। যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে তা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
বর্তমানে পরিবর্তনশীল বিদ্যুৎ বা AC Current এর পাশাপাশি একমুখী বিদ্যুৎ বা DC Current খুব জনপ্রিয় এবং খুব দরকারি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারন সৌর বিদ্যুৎ, বায়ু বিদ্যুৎ, জল বিদ্যুৎ -এসবের মাধ্যমে আহরিত শক্তি আমরা ব্যাটারীতে সঞ্চিত রাখতে পারছি। যা পরবর্তীতে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে AC Current এ রূপান্তরিত করে আমাদের দৈনন্দিন যন্ত্রপাতি চালাতে পারছি।
ব্যাটারী চালিত কিছু যন্ত্রের নামঃ
কিছু জনপ্রিয় ব্যাটারী চালিত যন্ত্রের নাম আইপিএস, ইউপিএস, ইনভার্টার। ছাড়াও হবিস্টদের তৈরী কমবেশি সকল সার্কিটই ব্যাটারী চালিত হয়।
এই ব্যাটারী ফুল ইন্ডিকেটরের উপকারিতাঃ
ইলেকট্রনিক্স হবিস্টদের কাছে ব্যাটারী খুব প্রয়োজনীয় উপকরন। ব্যাটারী হিসেবে এখন খুব জনপ্রিয় একটি ব্যাটারী হচ্ছে ৪ ভোল্টের সাবান ব্যাটারী যা আসলে লেড এসিড ব্যাটারী’র নামান্তর। এই ব্যাটারী গুলো চার্জ করতে হয় অর্থাৎ এগুলো রিচার্জেবল।
কিন্তু এই রিচার্জেবল ব্যাটারীকে যদি অতিরিক্ত সময় চার্জ দেয়া হয় তাহলে তার আয়ু কমে যায়। এর জন্য আমরা ব্যবহার করতে পারি এই সার্কিটটি। যার মাধ্যমে খুব সহজেই বুঝতে পারব যে ব্যাটারী ফুল চার্জ হয়েছে কিনা। ফলে ব্যাটারী ওভার চার্জ হবার আগেই আমরা চার্জিং থেকে খুলে ফেলতে পারবো। এতে করে যেমন আমাদের ব্যাটারী’র আয়ু বাড়বে তেমনি অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচের হাত থেকেও আমরা রক্ষা পাবো।
ব্যাটারী ফুল ইন্ডিকেটর যন্ত্রের ব্যবহার পদ্ধতিঃ
এই সার্কিট টি ব্যাটারীর সাথে লাগাতে হবে। একই সাথে ব্যাটারীতে চার্জিং এর জন্য লাইন দিতে হবে। আমি সরাসরি মোবাইলের চার্জার ব্যবহার করি এই ব্যাটারী চার্জ দেবার জন্য। সাথে এই সার্কিট টি ব্যবহার করি ব্যাটারী ফুল হলে ইন্ডিকেটর হিসেবে।
সার্কিটে ২টি এলইডি আছে। যখন ব্যাটারী চার্জ এ দেয়া হবে তখন ১ম এলইডি জ্বলবে।
ফুল চার্জ হয়ে গেলে ২য় এলইডি জ্বলে উঠবে। তখন বোঝা যাবে যে ফুল চার্জ হয়ে গেছে। তখন চার্জার থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হবে।
ব্যাটারী ফুল ইন্ডিকেটর এর সার্কিট-ডায়াগ্রামঃ
সার্কিটের পার্টস লিস্টঃ
১। Bc547 ট্রানজিস্টর ৩টা (যে কোন NPN ট্রানজিস্টর যেমন C828, D400, S9014 ব্যবহার করা যাবে। তবে সেই ট্রানজিস্টরের লেগ (E, C, B) গুলাতে সঠিক কানেকশন দিতে হবে)
তাহলে দেরি না করে এখনি এই ইন্ডিকেটর সার্কিটটি বানিয়ে নিন আর আপনার ব্যাটারীর আয়ুকে করুন দীর্ঘ, বাঁচান আপনার বৈদ্যুতিক খরচ।
সম্পাদকের মন্তব্যঃ নেটে এই সংক্রান্ত অনেক ধরনের সার্কিটই আছে। এই সার্কিটকে কিছু পরিবর্ধন করে বাযার (Buzzer) সংযুক্ত করা যেতে পারে যাতে ব্যাটারী ফুল হলেই সাউন্ড হয়ে জানান দেয় (Audible Indication System)। আবার এর সাথে অটোকাট সিস্টেম ও সংযুক্ত করা যায় যাতে ব্যাটারী চার্জ সম্পূর্ণ হলেই নিজে থেকেই চার্জ বন্ধ হয়ে যায় (Full Auto Charging System)। আশাকরছি সাইটের অন্যান্য লেখক এই অটো ব্যাটারী চার্জিং সিস্টেম নিয়ে লিখবেন।
আজ ডার্ক সেন্সরDark sensor/ Auto Street Light/ Emergency Light সম্পর্কে । আগেই বলে নিচ্ছি সাইট এ আমার প্রথম টিউন এটি। যদি কোন ভুল হয়ে থাকে তা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
মানুষের সভ্যতার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে বিদ্যুৎ। বর্তমানে বিদ্যুৎ ছাড়া বিশ্ব প্রায় অচল। তাছাড়া আমাদের এই বাংলাদেশ এ বিদ্যুৎ খুব দামি একটি সম্পদ। আমদের উচিৎ এর সুষ্ঠু ব্যবহার করা। এসব দিক বিবেচনা করে ডার্ক সেন্সর অনেক বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে পারবে বলে আমি মনে করি।
ডার্ক সেন্সর যন্ত্রের মূল কার্যাবলি-
এই যন্ত্রের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় ভাবে আপনার বিদ্যুতিক বাতি নিয়ন্ত্রন করতে পারবেন।
কীভাবে কাজ করে ডার্ক সেন্সর
যন্ত্রটি মূলত আলোক সংবেদনশীল। অর্থাৎ, সার্কিটে প্রদত্ত LDR (Light Dependant Resistor) এর উপর আলো পরলে যন্ত্রটি অফ হয়। আলো কমে গেলে (সন্ধ্যার সময়) অন হয়ে যায়।
উপকারিতাঃ
এই যন্ত্র ব্যবহার করলে আপনার বাড়ির বারান্দা/ উঠান/ মাঠ এ থাকা লাইটটি সন্ধ্যার সময় চালু এবং দিনের আলো ফুটলেই বন্ধ হয়ে যাবে। এর ফলে আপনার বাড়তি বিদ্যুৎ বিল থেকে রক্ষা পাবেন।
সতর্কতাঃ
১। ডার্ক সেন্সরে ব্যবহৃত LDR টি এমন ভাবে লাগাতে হবে যেন তার উপর সরাসরি কোনো বৈদ্যুতিক বাতি’র আলো না পড়ে। আলো পড়লেই এই যন্ত্রের সাথে যুক্ত বাতিটি নিভে যাবে। ২। সার্কিট টি যদি ২২০ ভোল্ট এসি লাইনে ব্যবহার করা হয় তাহলে অবশ্যই উপযুক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যাতে বৈদ্যুতিক শক না লাগে।
কাজেই দেরি না করে আজই বানিয়ে ফেলুন এই সার্কিট টি আর দেশের অমূল্য সম্পদ- বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে উদ্যোগী হোন।
সম্পাদকের মন্তব্যঃ উভয় সার্কিট খুব চমৎকার কাজ করে এবং পরীক্ষিত। তবে 555 IC দিয়ে নির্মিত সার্কিট টি বেশী স্টেবল ও কার্যকরী। আমি ও আমার পরিচিত বহুজন এই সার্কিট ব্যবহার করছেন। ৫৫৫আইসির আউটপুটে একটি ট্রানজিস্টর ও রীলে ব্যবহার করে 220 – AC লাইনের বাতি জ্বালানো-নেভানো সম্ভব।
কেউ আরো বিস্তারিত ভাবে এই সেন্সর/ডিটেক্টর কিভাবে কাজ করে জানতে চাইলে আমাদের সাইটে প্রকাশিত শামিম আহমেদ ভাইয়ের এই লেখাটি পড়তে পারেনঃ ডার্ক সেন্সর
এই প্রজেক্টটি উপস্থাপন করে রাহিন মুনতাসিরপ্রথম আলো বিজ্ঞান প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেছিলো – আমাদের ইলেকট্রনিক্স পরিবার থেকে সে জন্য তাকে শুভেচ্ছা।
প্রশ্ন ও প্রমাণ নিয়েই বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠিত হয় এটা তোমরা জেনেছো। প্রশ্ন করবার পর তার উত্তর বা সমাধান পেতে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানো বিজ্ঞানের অংশ। আবার বিজ্ঞান কি এই প্রশ্নের উত্তরে আমরা অনেক কেই দেখি বলতে বিজ্ঞান মানে বিশেষ জ্ঞান।
এই বিশেষ জ্ঞান জিনিসটা আসলে কি? এই প্রশ্নটি যদি করি তাহলে কি দাড়াচ্ছে বিষয়টা!!! তখন উত্তর আসতে পারে এমন – এই ধরো পদার্থ সম্পর্কিত জ্ঞান, রসায়ন সম্পর্কিত জ্ঞান ইত্যাদি। আসলেও কি এইগুলো বিশেষ জ্ঞান?
এইগুলো বিশেষ জ্ঞান নয় মোটেও – এগুলো আসরে বিষয় ভিত্তিক জ্ঞান। বিজ্ঞানের এই বিশেষ জ্ঞান সংঙ্গাটা আসলে একটি বাজে সংঙ্গা। এটা মোটেও বিজ্ঞানের সংঙ্গা নয়। বিজ্ঞানের সংঙ্গা হলো-আমরা যা জানি না তার প্রমাণিত জ্ঞানের যে বিশাল ভান্ডার তাই বিজ্ঞান। সোজা কথায় প্রমাণিত সবকিছুই বিজ্ঞান। যেখানে প্রমাণিত বিষয় নেই তা বিজ্ঞান নয় কোনভাবেই।
আবার আমরা যখন কোন বিষয় প্রমাণিত বলবো সেটা প্রতিবারই একই রকম আচড়ণ করবে এটাও কাঙ্খিত। একটা জিনিস একবার প্রমাণিত হবার পর যদি দেখা যায় পুনরায় করতে গেলে আর আগের মতো আচড়ণ করে না তবে সেটাও বিজ্ঞান হবে না। সেখানে যদি পারিপার্শিক বিষয়গুলো কাজ করে তবে সেটাও সেখানে যুক্ত হবে প্রমাণের শর্ত হিসাবে।
একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টি সহজ হবে – যেমন আমরা জানি জল ৪ ডিগ্রী তাপমাত্রাতে সর্বোচ্চ ঘণ অবস্থায় থাকে। এখন তোমার বাসার খাবার জলকে এই ৪ ডিগ্রীতে যদি পরিমাপ করো তবে তা সর্বোচ্চ ঘণ অবস্থায় কখোনই পাবে না। তাহলে আগের যে প্রমাণিত বিষয়টি জানলাম সেটা কি ভুল বলবে? এটা আসলে মোটেও ভুল নয়।
জল আসলেই ৪ ডিগ্রী তাপমাত্রায় সর্বোচ্চ ঘণ অবস্থায় থাকে তবে তা বিশুদ্ধ জল যার রাসায়নিক গঠন H2O। আমরা বাসাতে খাবার জন্য জল ব্যবহার করি তা ১০০ ভাগ বিশুদ্ধ জল নয় বিধায় তাকে ৪ ডিগ্রীতে সর্বোচ্চ ঘণ পাবে না। কারণ আমাদের খাবার জলে নানান ধরণের খনিজ ও বাইরের পদার্থ মেশানো থাকে। এর ফলে জলের গুণগত মান পরিবর্তন হয়। যার ফলে এটা ৪ ডিগ্রীতে আর সর্বোচ্চ ঘণ অবস্থায় আসতে পারে না।
পানির ঘনত্ব পরিবর্তীত হয় ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াসে
কোন কিছু প্রমাণ করতে গেলে তাই আদর্শ অবস্থা ঠিক করে নিতে হয়। বিশেষ করে যা প্রমাণ করা হবে তার আদর্শ অবস্থা, তাপ, চাপ, এর সাথে অন্য পদার্থের মিশ্রণ, অন্য কোন কিছুর উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি ইত্যাদি। এইসব ঠিক না থাকলে কোন প্রমাণিত বিষয়ও স্থান কাল ভেদে ভিন্ন রকম আচড়ণ করতে পারে বা করে।
তার মানে এই না যে আগের প্রমাণ ভুল। এখানে শুধু ঠিক করে নিতে হয় কি কি বিষয় পরিবর্তনে ভুমিকা রাখছে। এই পরিবর্তনে ভুমিকা রাখা উপাদান গুলোকে বিবেচনা করেই একটি বিজ্ঞানের আবিস্কার কে নানান কাজে লাগানো হয়।
একটা উদাহরণ দেই আবারও – আমরা জানি জল শুণ্য ডিগ্রীতে বরফ হয়। তার মানে এর নীচে আর জলকে ঠান্ডা করা যায় না। কিন্তু আমরা যদি জলকে আরও ঠান্ডা করতে চাই তার জন্য আমরা জলের সাথে যদি লবণ মিশাই তবে জলকে – ২১ ডিগ্রী পর্যন্ত ঠান্ডা করা সম্ভব।
এই যে আবিস্কার- জলকে আরও ঠান্ডা করবার তাও একটি প্রমাণিত বিজ্ঞান। আবার বিশুদ্ধ জল শুণ্য ডিগ্রীতে জমে বরফ হয় তাও বিজ্ঞান। আমরা জলের সাথে বিভিন্ন জিনিস মিশিয়ে জলের এই বরফ হবার তাপমাত্রার পরিবর্তন করতে পারি।
প্রশ্ন, পরীক্ষা, প্রমাণ ও প্রমাণের শর্তাবলী তাহলে বিজ্ঞানের মুল কিছু ভিত্তি। এগুলো ছাড়া আসলে কোন কিছুই বিজ্ঞান হবে না কখনই। এর জন্যই আমরা আগে বলেছি সমাজ বিজ্ঞান আসলে বিজ্ঞান নয়, ধারণা। বর্তমানে সংবাত পত্রের পাতাতে মহাকাশ নিয়ে যত ধারণা প্রকাশিত হয় সেসবও শ্রেফ ধারণা; বিজ্ঞান নয়।
এই ধারণা গুলো হয়তো একদিন প্রমাণিত হবে তখন আবার তা বিজ্ঞান হয়ে যাবে। তাই কোন কিছু কেন হয় সেটার উত্তর খুঁজতে সাহায্যকারী ধারণা বিজ্ঞানের জন্য অপরিহার্য। এই ধারণা না তাকলে বা সঠিক না হলে কখনই উপযুক্ত প্রমাণ করা সম্ভব হবে না।
মহাবিশ্বের সৃষ্টি নিয়ে তাই বর্তমানে অনেক ধরনের ধারণা আছে, মানুষ কি টাইম মেশিনে চড়ে অতীত বা ভবিষ্যতে যেতে পারবে কিনা তা নিয়ে ধারণা আছে, মানুষ কি আলোর বেগে ছুটতে পারবে কি পারবে না তাও নিয়ে ধারণা আছে এমন কি সৃষ্টিকর্তা বলে কেউ আছেন কি নাই তারও ধারণা আছে। প্রতিটি ধারণার পক্ষে বিপক্ষে আছে নানান মতবাদ। কারও মতবাদ জনপ্রিয়তার কারণে অনেকের কাছে গ্রহণ যোগ্য আবার কারো মতবাদ অধিকাংশই মানেন না।
বিজ্ঞানী ডারউইনের বিবর্তন বাদ এমনই একটি মতবাদ। অনেকেই এটাকে মতবাদ মানতে চাইবেন না। আবার অনেকেই বলবে এটা ভুল মতবাদ। আবার অনেকেই বলবে এটাই সঠিক। এই না মানা, ভুল বলা আর সঠিক বলাদের কারো কাছেই কিন্তু সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই। সবগুলোই ধারণার উপর কাজ করছে। প্রমাণ সাপেক্ষে যদি আলোচনা করা যায় তবে কোন পক্ষই অকাট্য কোন প্রমাণ হাজির করতে পারবে না যার যার পক্ষে। এখানেই রয়েছে সৌন্দর্য। হাজার হাজার প্রশ্নের ভান্ডার। এই প্রশ্নগুলোই পরবর্তী গবেষণার মালমশলা। যা থেকে বের হয়ে আসবে বিজ্ঞানের সত্যির সৌন্দর্যতা।
এই সৌন্দর্যতার ধারবাহিকতায়ই কিন্তু আমরা পেয়েছি উন্নত প্রজাতির নানান ফসল, হাইব্রীড পশু সহ আরও অনেক জীবন্ত কিছু । বিজ্ঞানী ডারউইন যে চিন্তার দ্বার মানবজাতির জন্য খুলে গিয়েছেন তার মতবাদের দ্বারা তাতে যে বিতর্ক এবং তা মিথ্যা বা সত্যি প্রমাণের প্রকৃয়াতে পাওয়া গিয়েছে প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীর পারস্পরিক সম্পর্কের সাথে বর্তমানে জীবন্ত প্রাণী সমুহের সম্পর্কের সেতুগুলো।
জানা সম্ভব হয়েছে জীবনের পরিবর্তনের নিয়ম সমুহ যদিও তা জানবার পরিধির তুলনায় খুবই অপ্রতুল বা কম। আমি নিজেও এটাকে মতবাদ মনে করি কারণ এটা যদি মেনে নিয়ে প্রমাণিত বিজ্ঞান বলি তবে তা স্বীকার করে প্রশ্ন করা থামাতে হবে। এটার বিশালত্বের আর কোন কিছু তখন আর জানা হয়তো সম্ভব হবে না। এই সুন্দর কে লালন করতে হবে প্রতিনিয়ত প্রশ্ন দিয়ে, প্রশ্নের উত্তর জানবার চেষ্টার মধ্য দিয়ে, চেষ্টা গুলোকে বিধিবদ্ধ সুশৃঙ্খল পদ্ধতির মধ্যদিয়ে প্রমাণিত সত্যের সৌন্দর্যতায় ভাস্কর করবার জন্য।
রেজিস্টর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা - আমাদের ইলেকট্রনিক্স
রেজিস্টর কি?
ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিতে কারেন্ট প্রবাহকে বাধা দেওয়ার কাজে যে উপাদান বা কম্পোনেন্ট (Component) ব্যবহার করা হয় তাকে রেজিস্টর বা রোধক বলে।
রেজিস্ট্যান্স (Resistance) কি?
রেজিস্টার বা পরিবাহীর যে বৈশিষ্ট্যের কারনে এর মধ্যদিয়ে কারেন্ট প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হয় উক্ত বৈশিষ্ট্য বা ধর্মকে রেজিস্ট্যান্স বা রোধ বলে।
প্রকাশ, একক ও সিম্বল (Unit of resistance)
রেজিস্ট্যান্স বা রোধকে গানিতিকভাবে R দিয়ে প্রকাশ করা হয়। এর একক হলো ওহমΩ
চিত্র দেখলে এর সিম্বল(Symbol) বুঝা যাবে, স্কেমেটিক ডায়াগ্রাম (Schematic Diagram) এবং সার্কিট বোর্ড এ এই ধরনের সিম্বল ব্যবহার করা হয়।
***যে রেজিস্টর তৈরি করার সময় এর মান নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয় এবং যার মান প্রয়োজন অনুসারে ইচ্ছামতো পরিবর্তন করা যায়না তাকে ফিক্সড বা অপরিবর্তনশীল রেজিস্টর বলে। চিত্রে একটি ফিক্সড রেজিস্টরের উদাহরন দেখানো হলো।
অপরিবর্তনশীল রেজিস্টর বা ফিক্সড রেজিস্টর
*** যে রেজিস্টর মান প্রয়োজন অনুসারে ইচ্ছামতো পরিবর্তন করা যায় তাকে ভেরিয়েবল বা পরিবর্তনশীল রেজিস্টর বলে। চিত্রে একটি ভেরিয়েবল রেজিস্টরের উদাহরন দেখানো হলো।
পরিবর্তনশীল রেজিস্টর
রেজিস্টর এর কাজ (Working principle of a resistor)
সার্কিটে কারেন্ট প্রবাহে বাধা দান করা বা ভোল্টেজ ড্রপ ঘটানোই রেজিস্টর এর প্রধান কাজ। এখন হয়তো অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে যে কোনো পার্টসকে কেন কম ভোল্ট/কারেন্ট প্রদানের প্রয়োজন হয়। একটা উদাহরন দেই শুধুমাত্র বেসিক ব্যাপারটুকু বুঝবার সুবিদার্থে।
জীবনের প্রয়োজনে আমরা সবাই খাদ্য গ্রহণ করি তা বলাই বাহুল্য। এই খাদ্য গ্রহণের ফলেই আমরা শক্তি পাই আমাদের বিভিন্ন কাজ করার জন্য।
ঠিক একই ভাবে ইলেকট্রনিক্স সার্কিটে কাজ করতে গেলে প্রতিটি পার্টসেরই খাদ্য গ্রহণ করতে হয়। ভোল্টেজ আর কারেন্ট ই হচ্ছে সেই খাদ্য। বাস্তবে আমরা যদি বেশি খাই তাহলে স্বভাবতই অসুস্থ হয়ে পড়ি।
ঠিক তেমনি ভাবেই সার্কিট সংযুক্ত কোনো পার্টস কিংবা কম্পোনেন্টে যদি এর খাদ্য (ভোল্ট-কারেন্ট) বেশি দেয়া হয় তাহলে সেটা কাজ করতে পারেনা। ফলশ্রুতিতে সেই কম্পোনেন্ট টি নষ্ট হয়ে যায় অতি দ্রুত। এটি যাতে না ঘটে তাই এই রেজিস্টরের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ভোল্ট-কারেন্ট প্রদান করা হয়।
তাত্ত্বিকভাবে বললে, ইলেকট্রনিক্স সার্কিটে ব্যবহৃত বিভিন্ন কম্পোনেন্টসমূহ বিভিন্ন ভোল্টেজ ও কারেন্টে কাজ করে। এজন্য কম্পোনেন্টসমূহের চাহিদা মোতাবেক নির্দিষ্ট মানের ভোল্টেজ সরবরাহ দেয়ার জন্য ঐ কম্পোনেন্টের সাপ্লাই ভোল্টেজ এর পথে রেজিস্টর সংযোগ করে অতিরিক্ত ভোল্টেজ ড্রপ ঘটানোর উদ্দেশ্যেই ইলেকট্রনিক্স সার্কটে রেজিস্টর ব্যবহার করা হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী কারেন্ট বা এম্পিয়ার সরবরাহ করাও হল রেজিস্টর এর কাজ। নিচের চিত্রে একটি মাত্র মজার উদাহরন দিয়ে বুঝানো হলো।
রোধক, রোধকত্ব, ও’মের সূত্র, রোধের সমবায়, তূল্য রোধ, সমান্তরাল সমবায় ইত্যাদি আরো বিস্তারিত তত্ত্বকথা জানতে উইকিপেডিয়া থেকে ঘুরে আসুন – রেজিস্টর / রোধক
মান নির্ণয় পদ্ধতি (How to find out value of a resistor)
প্রতিটা রেজিস্টর এর নিজস্ব মান থাকে, এই মান এর গায়ে উল্লেখ করা থাকে। বড় আকারের রেজিস্টর এর গায়ে মান সরাসরি লেখা থাকে। ছোট আকারের রেজিস্টর এর মান গায়ে লেখা সম্ভব হয়না বা লিখলে বোঝা কষ্টকর হবে, এজন্য কালার কোড ব্যবহার করা হয়। রেজিস্টর এর গায়ে সুস্পষ্টকালার এর রিং করে দাগ দেয়া থাকে।
এর সাহায্যে রেজিস্টর এর মান নির্ণয় করতে হলে (এনালগ মিটার এর ক্ষেত্রে সিলেকটিং নবটিকে ওহম পজিশন এ স্থাপন করতে হবে) শুরুতেই মিটারের কর্ড (প্রোব) দুটিকে শর্ট করে, জিরো এডজাস্টমেন্ট স্ক্রুর সাহায্যে নির্দেশক কাটাকে জিরো অবস্থানে আনতে হবে। এরপর যে রেজিস্টর এর মান পরিমাপ করতে হবে তার দুইপ্রান্তে (লেগ) ওহমমিটার বা এনালগ মাল্টিমিটারের কর্ড দুটি স্থাপন করালে বা ধরলে যে পাঠ পাওয়া যাবে তাই হবে রেজিস্টর এর মান।
ডিজিটাল মাল্টিমিটার (Digital Multimeter)
এর সাহায্যে রেজিস্টর এর মান নির্ণয় করতে হলে সিলেকটিং নবটিকে ওহম পজিশন এ স্থাপনকরতে হবে। এরপর যে রেজিস্টর এর মান পরিমাপ করতে হবে তার দুই প্রান্তে মাল্টি মিটারেরকর্ড দুটি স্থাপন করালে বা ধরলে যে পাঠ পাওয়া যাবে তাই হবে রেজিস্টর এর মান।
ছোট আকারের রেজিস্টর এর মান প্রকাশ করার জন্য এদের গায়ে বিভিন্ন রং এর কতগুলো চিহ্ন বা রিং আকারের দাগ প্রদান করা হয়। এই চিহ্ন বা রিং দাগ গুলোকে কালার কোড বলে। ছোট ছোট রেজিস্টর এর গায়ে এদের মান লেখা সম্ভব নয় বলে কালার কোড পদ্ধতিতে এদের মান প্রকাশ করা হয় ।(বড় আকারের রেজিস্টর এর গায়ে মান লেখা থাকে)
রেজিস্টর কালার চার্ট
১ম ও ২য় কালার ব্যান্ড
মান
৩য় কালার ব্যান্ড
গুনক
৪র্থ কালার ব্যান্ড (টলারেন্স)
মান
(মাইনাস, প্লাস)
কালো (Black)
0
কালো (Black)
1
বাদামী (Brown)
1
বাদামী (Brown)
10
বাদামী (Brown)
-+1%
লাল (Red)
2
লাল (Red)
100
লাল (Red)
-+2%
কমলা (Orange)
3
কমলা (Orange)
1000
হলুদ (Yellow)
4
হলুদ (Yellow)
10000
সবুজ (Green)
5
সবুজ (Green)
100000
সবুজ (Green)
-+0.5%
নীল (Blue)
6
নীল (Blue)
1000000
নীল (Blue)
-+0.25%
বেগুনী (Violet)
7
সোনালী (Golden)
0.1
বেগুনী (Violet)
-+0.1%
ধূসর (Gray)
8
রুপালী (Silver)
0.01
ধূসর (Gray)
-+0.05%
সাদা (White)
9
সোনালী (Golden)
-1
সোনালী (Golden)
-+5%
রুপালী (Silver)
-2
রুপালী (Silver)
-+10%
নো কালার (No colour)
নো কালার (No colour)
-+20%
কালার কোড মনে রাখার বিশেষ পদ্ধতি
মানগুলো ক্রমিক অনুসারে মনে রাখার জন্য অনেক পদ্ধতি আছে নিচে একটি দেওয়া হলো
BB ROY Good Boy Very Good Worker
B তে – কালো (Black)
B তে – বাদামী (Brown)
ROY এর
R তে -লাল (Red)
O তে – কমলা (Orange)
Y তে – হলুদ (Yellow)
Good এর G তে -সবুজ (Green)
Boy এর B তে -নীল (Blue)
Very এর V তে -বেগুনী (Violet)
Good এর G তে -ধূসর (Gray)
Worker এর Wতে – সাদা (White)
BBROY Good Boy Very Good Worker
বুঝবার সুবিদার্থে, উপরের বাক্যটিতে প্রতিটি প্রয়োজনীয় অক্ষরে রং দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে
মান নির্ণয় করতে হলে :
খুব সহজ উপায়-
১ম কালারের মান লিখি আর এর পাশেই ২য় কালার এর মান লিখি ৩য় কালার এর মান যত ঠিক ততটি শুণ্য (১ম ও ২য় কালারের) পাশে লিখি। যেমন ৩য় কালারের মান যদি ৪ হয় তাহলে চারটি শূন্য লিখি (“০০০০”)
**৩য় কালার যদি কালো রং হয় তবে এর জন্য কিছু লেখার দরকার নাই।
এইভাবে প্রাপ্তমান টি উক্ত রেজিস্টরের মান।
যেমন কমলা, কমলা, হলুদ হচ্ছে -> “৩ ৩ ০০০০” বা ৩৩০,০০০ ওহম (৩৩০ কিলো ওহম )
এইভাবে মান বের করা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সহজ হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। তবে নতুনদের জন্য এই পদ্ধতিটিই কাজ করার জন্য সুবিধা জনক। কাজ করতে করতে আয়ত্বে এসে গেলে বাকিটুকু বোঝা কষ্টকর হবে না।
অথবা
সূত্রের মাধ্যমে-
১ম ও ২য় কালারের পাশাপাশি বসানো মানকে উপরের চার্ট এ উল্লেখ্ করা গুনক দ্বারা গুন করি।
৪র্থ কালার ব্যান্ড হচ্ছে রেজিস্টর এর টালারেন্স এটা লেখার দরকার নাই। মুখে জানা থাকলেই হবে ।
এইবার যে মান পাওয়া যাবে তা হল – রেজিস্টর এর মান
অর্থাৎ রেজিস্টর টি তত ওহম ( Ω বা R ) এখন এই মান যদি এক হাজার এর ভিতরে থাকে তবে তাকে তত ওহম এর রেজিস্টর বলা হয় । যেমন ৫৬০ ওহম।
*যদি এই মান এক হাজার ওহম এর সমান বা অতিক্রম করে তবে তাকে এক হাজার দিয়ে ভাগ করতে হবে, যে মান পাওয়া যাবে তাতে ঐ রেজিস্টর কে ততো কিলো ওহম ( KΩ ) এর রেজিস্টর বলা হয় । যেমন ১০০০ ওহম কে ১ কিলো ওহম বলে।
*আবার এই মান যদি এক হাজার কিলো ওহম এর সমান বা অতিক্রম করে তবে তাকে এক হাজার দিয়ে ভাগ করতে হবে। এবং যে মান পাওয়া যাবে তাতে ঐ রেজিস্টর কে তত মেগা ওহম ( MΩ ) এর রেজিস্টর বলা হয়। যেমন ১০০০, ০০০ ওহমকে ১ মেগা ওহম হিসেবে প্রকাশ করা হয়।
উদাহরণ
#1 ধরি একটা রেজিস্টর এর গায়ের কালার যথাক্রমে হলুদ, বেগুনী, বাদামী, সোনালী
আগে মাণ লেখা হত এভাবে 47Ω , 56KΩ , 3MΩ
কিন্তু এর বিশেষ কিছু সমস্যা দেখা দেয়। যেমন সার্কিট স্কিমেটিকে দশমিক “.” মান বোঝা কষ্টকর হয়ে যায় আর পড়তেও ভুল হয়। তাই পরবর্তীতে এভাবে লেখা হয় 47R , 56K, 3M
এক্ষেত্রে সংখ্যার পরে R থাকলে ওহম ধরা হয় আর K দ্বারা কিলো ওহম আর M দ্বারা মেগাওহম বুঝায়।
যে সকল মাণ দশমিক আকারে আসে, সে মাণ গুলোকে আগে দশমিক দিয়ে লেখা হত
যেমন: 4.7KΩ, 2.6MΩ এখন এভাবে লেখা হয় 4K7, 2M6
বিভিন্ন প্রকার রেজিস্টর চেনার সুবিধার্থে নিচে কতগুলো রেজিস্টর এর চিত্রসহ নাম দেওয়া হলো এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের রেজিস্টর সম্পর্কে জানতে আমাদের সাইটে প্রকাশিত এই লেখাটি পড়ে দেখতে রেসিস্টর চেনার খুটিনাটি তথ্য
আমাদের সাইটের লেখক আশিকুর রহমান রেজিস্টর নিয়ে একটি ভিডিও টিউটোরিয়াল তৈরি করেছেন। ভিডিও টিউটোরিয়াল টিতে সহজ ভাবে রেজিস্টরের কর্মপদ্ধতি ও মান নির্নয় দেখানো হয়েছে-
পরিশিষ্ঠ
লেখাটি বড় হয়ে গেল বিধায় পাঠকের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। তবে বেসিক বিষয়ে লিখতে গেলে অনেক কিছু নিয়েই লেখার প্রয়োজন পরে। এই লেখাটি পড়ে নতুন পুরানো কারো উপকার হলে আমার কষ্ট স্বার্থক। আমদের ইলেকট্রনিক্সস্বার্থক। আসুন উন্মুক্ত জ্ঞানের আলোক বর্তিকায় আলোকিত হই। আমাদের এই সুন্দর দেশে ইলেকট্রনিক্সেরসাথে জড়িত সবাইকে নিয়ে গড়ে তুলি একটি ভিন্নধর্মী উন্মুক্ত বিপ্লব।
রেসিস্টর ইলেকট্রনিক্সের বহুল ব্যবহৃত একটি কম্পোনেন্ট। কাজের ধরন ও ক্ষমতা অনুসারে রেসিস্টরের মান ও সাইজ বিভিন্ন হয়ে থাকে। কখনো কখনো রেসিস্টরের সাইজ এত ছোট হয় যে তাদের গায়ে এর ভ্যেলু লিখার জায়গা থাকেনা। তাই কালার কোডের মাধ্যমে বিশেষ পদ্ধতিতে রেজিস্টরের মান প্রকাশ করা হয়। আজকের এ লেখাতে আমি আমার জানা তথ্য গুলো শেয়ার করব কিভাবে সহজে রেসিস্টর চিনবেন এবং কাজ অনুসারে সঠিক মানের রেসিস্টর নির্বাচন করবেন।
রেসিস্টর কি ও এর কাজ কি
এটা এমন একটি কম্পোনেন্ট যেটা কারেন্ট প্রবাহকে বাধা দেয়। কোন বর্তনীতে কারেন্ট এর প্রবাহ কমানোর জন্য কিংবা বাধা দেয়ার জন্য এটি ব্যবহার করা হয়। সহজ উদাহরণ হিসেবে আমরা বাসা বাড়িতে ফ্যানের রেগুলেটরের কথা বলতে পারি। সংক্ষেপে ও সহজ ভাবে বললে এটি একটি ভ্যারিয়েবল রেজিস্টর এর ন্যায় যেটার মান পরিবর্তনের মাধ্যমে কারেন্ট প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে ফ্যানের স্পিড কন্ট্রোল করা হয়।
রেসিস্টরের বিভিন্ন রেটিং সমূহ
রেসিস্টরের একক হল ওহম। তবে ব্যবহারিক কাজে আমরা কিলো ওহম এককের রেসিস্টর বেশি ব্যবহার করি। রেসিস্টরের গায়ে কালার কোডের মাধ্যমে এর ভ্যেলু জানা যায়।
রেসিস্টরের আরেকটি রেটিংস থাকে সেটা হল ওয়াট বা ক্ষমতা। ওয়াট ভ্যালু দিয়ে বোঝা যায় সেটা কতটুকু কারেন্ট বা লোড নিতে সক্ষম। তার বেশি হলে এটি পুড়ে যেতে পারে।
কোন ইলেকট্রনিক্স সার্কিটে ওয়াট বলে দেয়া না থাকলে কিংবা আপনি ইলেকট্রনিক পার্টসের দোকানে গিয়ে রেসিস্টর কেনার সময় ওয়াট বলে না দিলে তারা আপনাকে কোয়ার্টার ওয়াট (1/4 watt) ধরেই রেসিস্টর দেবে। সুতরাং কোয়ার্টার ওয়াট হলে সাধারনত সার্কিটে রেসিস্টরের ওয়াট উল্লেখ করা হয় না।
তবে হাফ ওয়াট কিংবা এর উপরের কোন ভ্যেলু হলে ওয়াটের কথা উল্লেখ করতে হবে কিংবা উল্লেখ করা থাকে।সাধারনত ওয়াট চিনতে হয় রেসিস্টরের সাইজ দেখে। অনেক সময় বড় রেসিস্টরের গায়েও ওয়াট লেখা থাকে।
আরেকটি বিশেষ কথা –রেজিস্টারের কোন পোলারিটি নেই। মানে এর কোন প্রান্ত পজেটিভ আর কোন প্রান্ত নেগেটিভ তা নিয়ে আপনাকে টেনশন করতে হবেনা।
রেসিস্টর কালার কোড চার্ট
এবার দেখে নিই কিভাবে কালার কোড থেকে রেসিস্টরের ওহম নির্ধারন করা যায়। নিচের কালার কোড চার্ট টি ফলো করলে সহজেই আপনি যে কোন রেজিস্টার এর ওহম নির্ণয় করতে পারবেন-
অনেক সময় থার্ড ব্যান্ড টা ফোর্থ ব্যান্ডের সাথে সোনালী হয়। এ ক্ষেত্রে থার্ড ব্যান্ডের মান 0.1 হয়। মূলত ভগ্নাংশ মানের রেজিস্টারগুলোর ক্ষেত্রে এটা দেখা যায়। যেমন 0.47 ওহম।
টেকনিক্যালি একটা রেসিস্টরের গায়ে যে ভ্যালু লেখা থাকে, আসল ভ্যালু তার চেয়ে কিছুটা কম বা বেশি হয়। এই কম বেশি হওয়ার একটা মাত্রা বা টলারেন্স আছে। চার নম্বর কালার ব্যান্ড দিয়ে এই টলারেন্স বলে দেয়া হয়। যেমন গোল্ডেন কালারের জন্য টলারেন্স ৫% মানে, ভ্যালু ১০০ ওহম হলে সত্যিকারের ভ্যালু ৯৫ থেকে ১০৫ পর্যন্ত হতে পারে। বাজারে কিনতে গেলে এটা গোল্ডেন কালারের (৫% টলারেন্স) হয় সাধারণত।
উদাহরণ
কালার কোড দেখে এবার নিচের রেসিস্টর টির মান হিসাব করি
দেখতে পাচ্ছি রেসিস্টরটিতে দেয়া আছে কমলা-কমলা-লাল-সোনালী।
প্রথমে সোনালী ব্যান্ডকে ডানে নিয়ে রাখলাম।
কমলা কমলা -কে পাশাপাশি বসালে হয় 33 আর
লাল এর জন্য 100 দিয়ে গুন,
সবমিলিয়ে 33 x 100 = 3.3 Kilo Ohm ।
টলারেন্স হিসেব করা সাধারণ কাজের জন্য তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু না।
বিভিন্ন ওয়াটের রেসিস্টর থাকলেও মূলত আমরা নিচের ৪ ধরনের ওয়াট বেশি ব্যবহার করি। বাজারে মূলত এগুলো পাওয়া যায়।
১। কোয়ার্টার ওয়াট (1/4 watt) – একদম ছোট
২। হাফ ওয়াট (1/2 watt) – একটু বড়
৩। ওয়ান ওয়াট (1 watt) – মাঝারী
৪। টু ওয়াট (2 watt) – বড়
সাইজ বুজতে নিচের চার্টটির সাহায্য নিতে পারেন। তবে কাজ করতে করতে আপনার চোখের আন্দাজে আইডিয়া হয়ে যাবে। তখন আর চার্টের দরকার হবেনা।
রেসিস্টরের প্রকারভেদ
কার্বন রেসিস্টর
সাধারণত এটাই বেশী ব্যবহার করা হয়। সাধারনত কালার কোড থাকে গায়ে। একক ওহম থেকে মেগা ওহম পর্যন্ত হয়ে থাকে।
কার্বন রেসিস্টর
সিমেন্ট বা সিরামিক রেসিস্টর
২ ওয়াটের চেয়ে বেশি ওয়াটের রেসিস্টর প্রয়োজন হলে আমরা সিমেন্ট রেজিস্টর ইউস করি। সাধারনত ৫ ওয়াট থেকে ২৫ ওয়াট হয়ে থাকে। এর গায়ে সাধারনত কালার কোড থাকেনা। সরাসরি রেটিংস লিখা থাকে।
সিমেন্ট রেসিস্টর
ভ্যারিয়েবল রেসিস্টর/ পটেনশিওমিটার
সাধারণত ভ্যেলু ভেরি করার যায় এ রেসিস্টরের মাধ্যমে। ৬ কিলো ওহমের রেটিংস হলে এটা দিয়ে ০ থেকে ৬ পর্যন্ত বিভিন্ন ভ্যেলু নেয়া যাবে প্রয়োজন মত। উদাহরন হিসেবে আমরা বাসা বাড়িতে ফ্যানের রেগুলেটরের কথা বলতে পারি।
ভেরিয়াবেল রেসিস্টর’
লাইট ডিপেন্ডিং রেজিস্টর (এল ডি আর – LDR)
আলোর উপর নির্ভর করে এর রেসিস্ট্যান্স বাড়ে কিংবা কমে। সাধারনত আলো বাড়লে রেসিস্ট্যান্স কমে,প্রবাহ বাড়ে। আর আলো কমলে রেসিস্ট্যান্স বাড়ে,প্রবাহ কমে। লাইট ফলোয়ার রোবট সহ বিভিন্ন রকম প্রজেক্টের কাজে এটি ব্যবহার করা হয় লাইটসেন্সর হিসেবে।
রেসিস্টর নিয়ে আমার লেখাটি এখানেই শেষ করলাম। কোন ভুল থাকলে অনুগ্রহ করে কমেন্টে তথ্য দেয়ার জন্য অনুরোধ রইল। কারন মানুষের জানার মধ্যেও সীমাবদ্ধ আছে। এমন অনেক কিছুই আমি জানি যা আপনি জানেন না। আবার আপনি অনেক কিছু জানেন যেটা আমি জানিনা। জ্ঞান বিনিময় বা শেয়ারের মাধ্যমেই মূলত আমরা আরো জ্ঞান আহরণ করতে পারি। ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। দেশের জন্য কাজ করুন।
লোডশেডিং এখন আমাদের জীবনেরই একটা অংশ হয়ে দাড়িয়েছে। একটা সময় ছিলো যখন বিদ্যুৎ চলে গেলে উফ করে উঠতাম। আর এখন মনেহয় এতো নিত্যদিনে ঘটনা, নতুন আর কী! আকাশে বিদ্যুৎ চমকানো সহ ঝড়ো হাওয়া বইতে থাকলে, কালো মেঘের আনাগোনা দেখলে অথবা বৃষ্টি পড়তে শুরু করলে শুরু হয় লোডশেডিং। ইদানীং তো মনে হয়, আরে বিদ্যুৎ আসেতো চলে যাবার জন্যই! এখনই চলে গেল, তাহলে পরে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজনের যখন মর্জি, তখন চলে আসবে। লোডশেডিং যেন একেবারেই যেন স্বাভাবিক।
তবে আপনার কাছে যদি যথেষ্ট টাকা পায়সা থাকে তাহলে লোডশেডিং আপনার জন্য কোন মাথা ব্যাথার কারন হবে না। আপনি চাইলেই জেনারেটর কিনতে পারেন। তেল কিনে ঘন্টার পর ঘন্টা ইঞ্জিন-জেনারেটর কন্ট্রোল সিস্টেম এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজনকে বুড়ো আংগুল দেখিয়ে দিতে পারেন, লোডশেডিং এর পিন্ডি চটকাতে পারেন। আবার ছোটবড় আইপিএস কিনে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রনা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পেতে পারেন। তবে যারা উপরের দু’টাই করতে পারছেন না তারা হয় ইমার্জেন্সি চার্জার লাইট ও ফ্যান কিনেন অথবা খাতা দিয়ে বাতাস খান আর মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে লোডশডিংয়ের সময়টুকু সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন!
আমার বর্তমান লোডশেডিং এর সিডিউল অনুযায়ী ১ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকে আর ৪ ঘন্টা থাকেনা। এই রেশিও তে বাজারের রেডিমেড চার্জারগুলি ঠিকমত চার্জ হবার সুযোগ পায় না, আবার এই চার্জার ফ্যান ও লাইটগুলির দাম অনেক। এবং খুবই নিম্নমানের চাইনিজ যন্ত্রাংশ দিয়ে তৈরি বিধায়, এগুলি তেমন একটা টিকেনা।
তবে আপনার যদি নূন্যতম ইচ্ছাও থাকে তাহলে আপনি একটি মিনি আইপিএস বানিয়ে ফেলতে পারেন নিজ হাতেই। খুবই কম খরচে। খুবই অল্প সময়ে (২-৩ ঘন্টায়) চার্জ হয়ে যাবে আবার বেশী সময় আপনাকে আলো ও বাতাস দিবে। দরকার নেই যে আপনার এই ইলেকট্রনিক্স কাজে পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। অথবা আপনি কোনদিনও এইসব ইলেকট্রনিক্স পার্টস চোখেও দেখেননি, আপনার দ্বারাও সম্ভব এই মিনি আই পি এস বানানো। আপনার শুধু দরকার এইটা বানানোর আন্তরিকইচ্ছা।
সংক্ষেপে মিনি আইপিএস সার্কিট ডায়াগ্রাম
এই মিনি আইপিএস বানাতে আপনার যা লাগবে
আর মিনি আইপিএস এর চার্জার বানাতে যা লাগবে
কোথায় পাবেন সকল পার্টস
এই প্রজেক্টের সব পার্টস আপনি এই ছবির মার্কেটে পাবেন। সাথে দোকানের বিজনেস কার্ডের স্ক্যান কপিও দিয়ে দিলাম।
নোটঃ এই প্রজেক্টের কানেক্টিং তারগুলা একটু মোটা ধরনের হতে হবে। আমি আমার প্রজেক্টে মনিটর বা সিপিইউর এসি তারের ভিতরের ৩ টি তার ইউজ করেছি। আপনাদের বাসায়ও এমন এসি পাওয়ার কর্ড অবশ্যই থাকবে।
লোডশেডিং এর এই প্রজেক্ট টির ডিটেইলসে যাবার আগে এই ডিডিওটা দেখুন
নিচে মিনি-আইপিএস এর যন্ত্রাংশ সংযোগ পদ্বতি ধাপে ধাপে ছবি সহ দেখানো হলো
বক্সের বাইরের স্ক্রু লাগানোর ছিদ্র, ট্রান্সফরমার ও ব্যাটারী আটকানোর ক্লাম এর মাপ অনুযায়ী ক্যাসিংয়ে ছিদ্র করে ফেলুন। ব্যাটারী আর ট্রান্সফরমার ও ব্যাটারী ক্লামের ছিদ্র একটু মোটা করুন, আর ক্যাসিং আটকানোর ছিদ্র একটু চিকন।
এসি সকেট ও এসি সুইচ সংযোগ করে ফেলুন। সুইচের দুটি ফাকা পোর্টে ২২০ ভোল্ট এসি পাবেন
এবার ট্রান্সফরমার এর এসি দুটির তার কানেক্ট করে ফেলুন।
এবার ছবির অনুযায়ী ২ টা ডায়োড আর একটা ক্যাপাসিটরের কানেকশন করে ফেলুন। ক্যাপাসিটরের নেগেটিভ পয়েন্ট টি ক্যাসিংয়ের সাথে ঝালাই করে লাগিয়ে দিন। ক্যাপাসিটরের দুই লেগে ১৫ ভোল্ট ডিসি পাবেন।
ক্যাপাসিটরের পজেটিভ এ একটা ডায়োডের নেগেটিভ লেগ জয়েন্ট দিয়ে পজেটিভ লেগ এ দুটি তার সংসুক্ত করুন। একটি তার চলে যাবে ব্যাটারির পজেটিভ এ, আরেকটি তার যাবে ফ্যান ও লাইটের সুইচের মাঝের পোর্টে। ব্যাটারির নেগেটিভ তারটি আসবে ক্যাসিং এর বডি থেকে। ব্যাটারীর পজেটিভ ও নেগেটিভ অংশে ব্যাটারী ক্লিপ লাগাবেন ঝালাই করে।
ফ্যান ও লাইটের সুইচের উপরের ফাকা পোর্টে ২ টি ১ কিলো ওহম মানের রেজিস্টর সংযুক্ত করুন। এই দুইটি রেজিস্টর এর অপর প্রান্তে দুইটি LED বসবে। LED র নেগেটিভ থাকবে বডির সাথে সংযুক্ত। দুইটি সুইচের উপরের পয়েন্ট থেকে দুটি তার RCA Jack এর মিডল পয়েন্টে কানেক্ট করবেন।
এখন আপনি যদি লাইটসার্কিট টি বক্সের ভিতরে ফিট করতে চান তাহলে ছবি অনুযায়ী সার্কিটের নেগেটিভ বক্সের বডির সাথে কানক্ট করুন। আর পজেটিভ অংশটি কানেক্ট করুন লাইট সুইচের পোর্ট থেকে। আর এই সার্কিটের আউটপুট কানেক্ট করুন একটা CFL light এর ফিলামেন্ট অংশে। তবে এই সার্কিট ফিট করার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যাতে সার্কিটের হিটসিংকের সাথে বডির সংস্পর্শ না আসে। আমি AC Cord এর ফেলে দেওয়া কাভার এখানে ফিট করে দিয়েছি সুপার গ্লু দিয়ে।
এবার ডায়োড আর সুইচের মাঝখানের তারটি কেটে ফেলুন। এই তারের দুই মাথায় একটি রীলে কানেক্ট করুন। রীলে’র পজেটিভ আর নেগেটিভ ক্যাপাসিটরের পজেটিভ নেগেটিভে যাবে। রীলে’র নেগেটিভ পজেটিভে একটা ডায়োড কানেক্ট করতে হবে। ডায়োডের পোলারিটি অনুযায়ি রীলে’র পজেটিভ নেগেটিভ নির্ধারন করবেন।
এবার আপনার আপনার চার্জার রেডি। আপনি এখন একটা RCA Jack থেকে DC Fan আর একটা RCA Jack থেকে DC light এর ভোল্টেজ পাবেন। হলুদ তারের কানেকশনের অপর প্রান্ত থেকে সরাসরি ফিলামেন্ট জ্বালাতে পারবেন।
আপনার এলাকায় এসি ভোল্টেজ যদি লো মাণের (১৫০-১৮০) হয়ে থাকে তাহলে আপনাকে ১৮ ভোল্টের ট্টান্সফরমার লাগাতে হবে। সেক্ষেত্রে এসি তারের একটা ডায়োড কমে যাবে অথবা ৪ টা ডায়োড দিয়ে ব্রিজ কানেকশন করতে হবে।
এবার আমাদের চার্জার টেষ্ট করার পালা। ভিডিওটা দেখুন।
এই ধরনের আইপিএস বাজারে কিনতে পাওয়া যায় ৩০০০-৩৫০০ টাকায়। ফ্যান ছাড়া এবং সেখানে নষ্ট CFL ফিলামেন্ট বা এনার্জি বাতি জ্বালানোর কোন উপায় থাকে না। শুধু DC light জ্বালানোর উপায় থাকে। এবং বাজারের চার্জারে পুরাতন নষ্ট ব্যাটারি ও অতি নিম্ন মানের ট্রান্সফরমার ইউজ করা হয়। যা বেশদিন টিকে না। আপনাকে ওরা ওয়ারেন্টি দিবে তবে ঐ নষ্ট ব্যাটারী ও নিম্নমানের ট্রান্সফরমার দিয়ে সার্ভিস দিবে।
পরিশিষ্ঠঃ
এইপ্রজেক্ট টি খুবই সহজ। যে কোন বয়সের যে কেউ এই মিনি আইপিএস বানিয়ে ফেলতে পারেন। কোনো ধরনের অসুবিধা ছাড়াই।
প্রথমবার সোল্ডারিং আয়রন, লিড, মাল্টিমিটার, ড্রিলমেশিন কিনার পরে প্রজেক্ট টি আর্থিকভাবে তেমন লাভবান হবে না। তবে একের অধিক আইপিএস বানাতে গিয়ে এই প্রাথমিক খরচটা আর হবে না। সেক্ষেত্রে আপনার পরিশ্রম বৃথা যাবে না। প্রতিটা ইউনিটে বাজার মূল্যের ৪০০-৫০০ টাকা লাভ থাকবেই। আর ব্যাপারটা যদি স্রেফ শখের বশেই করবার ইচ্ছা পোষন করেন, তাহলে লাভের কথা নাই বা বললাম।
(আমার বাংলা গদ্য ভালো না। ভাষার ব্যাবহারে কোন কারুকার্য নেই। তাই বাক্য গঠনে ভুল হওয়া স্বাভাবিক। এমনটা হলে ক্ষমা করে দিবেন প্লিজ। হোম মেইড ভিডিও দুটি দেখে হাসির উদ্রেক হইলেও হইতে পারে)
ইলেকট্রনিক্সে কাজ করতে গেলে সোল্ডারিং শেখা অপরিহার্য। কারণ সোল্ডারিং যদি ভালো না হয় তাহলে পিসিবি তে সংযুক্ত পার্টস খুব দ্রুত ছুটে যেতে পারে। আবার অতিরিক্ত তাপে সোল্ডার করলে ইলেকট্রনিক পার্টস ও জ্বলে যেতে পারে। এসব চিন্তা করেই সোল্ডারিং সম্পর্কিত এই লেখাটি। সোল্ডারিং আয়রন কেমন? ভালো বিট দেখতে কেমন? রজন কেমন হয়? ইত্যাদির বিস্তারিত চিত্র সহ লেখাটি পড়ে নবীন ও প্রবীণ উভয়েই উপকৃত হবেন বলে আশারাখি।
সোল্ডারিং (Soldering) বা ঝালাই কি ?
সোল্ডারিং হল এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে দুই বা ততোধিক ধাতুকে বা ইলেকট্রনিক্স কম্পোনেন্ট (Electronics Component) একে অপরের সাথে জোড়ক পদার্থ দ্বারা তাপ বা অন্যকোন বিশেষ শক্তি প্রয়োগ করে জোড়া দেওয়া হয় ।
সোল্ডার বা জোড়ক পদার্থ এবং জোড়া দেয়ার পদার্থ কি?
জোড়ক পদার্থ হলো এমন এক ধরনের পদার্থ যার নিম্ম গলনাংক থাকে (যে ধাতু ঝালাই দেওয়া হবে তার থেকে) এবং এর বিশেষ ধর্মের কারনে এটি ধাতুর সাথে আটকে বা লেগে থাকে। অপরদিকে ইলেকট্রনিক্স কাজে রাং বা সোল্ডারিং লিড বা সোল্ডার হলো জোড়ক পদার্থ।
রাং বা সোল্ডারিং লিড (Soldering Lead) বা সোল্ডার (Solder) কি?
সোল্ডারিং লিড বা রাং
রাং বা সোল্ডারিং লিড হলো এক ধরণের সংকর পদার্থ , এটি ৬০ ভাগ টিন (Tin) এবং ৪০ ভাগ সীসা (Zing) দিয়ে তৈরী, এটির গলনাংক ৮০ থেকে ৯০ ডিগ্রী সেলসিয়াস। সংকরায়নের অনুপাতের তারতম্য এর কারনে গলনাংক আরো বেশী হতে পারে।
ভালো সোল্ডারিং লিড এর মধ্যে ফ্লাক্স থাকে
ভাল মানের সোল্ডারিং লিড এর ভেতর ফ্লাক্স (Flux) বা রজন (Resin) থাকে। একে রেজিন কোর সোল্ডারিং লিড (Resin Core Soldering Lead) বলে। পাশের চিত্রে দেখতে পাচ্ছেন একটি সোল্ডারিং ওয়্যার বা তার । যার অভ্যন্তরে কালো বিন্দু চিহ্নিত অংশটুকু হচ্ছে সোল্ডারিং ফ্লাক্স বা রেজিন।
ফ্লাক্স বা রজন (Resin) কি ?
ফ্লাক্স বা রজন হলো একধরণের পদার্থ যা কিনা প্রাকৃতিকভাবে গাছের কষ (আঠা) থেকে তৈরী আবার এটি রাসায়নিক ভাবেও বানানো হয়।
ভালো মানের রজন/রেজিনসাধারন রজনসোল্ডারিং পেস্ট
ইলেক্ট্রনিক্স কাজে ফ্লাক্স (Flux) বা রজন (Resin):
যখন সোল্ডারিং লিড দিয়ে ঝালাই করা হয় তখন ঝালাইয়ের অংশটুকু পরিষ্কার করার কাজে ফ্লাক্স বা রজন ব্যবহার করা হয়, এছাড়া ঝালাইয়ের সময় যেন অক্সিডেশন (Oxidation) প্রক্রিয়া ঝালাইয়ে ব্যাঘাত ঘটাতে না পারে সেজন্য ফ্লাক্স বা রজন বিশেষ ভূমিকা পালন করে। অনেকেই বলে ফ্লাক্স বা রজন ব্যবহার করলে রাং বা সোল্ডার লিড নরম হয় বা সহজে গলে যায়। আসলে এই ব্যাপারটা হল অক্সিডেশন প্রক্রিয়া না ঘটতে দেওয়া, অক্সিজেন (Oxygen) রাং বা সোল্ডারিং লিড (Tin & Zinc) এর সাথে বিক্রিয়া করে এর কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়, আর ফ্লাক্স বা রজন তা করতে বাঁধা দেয় বা করে ফেললেও তা দূর করে দেয় ।
সোল্ডারিং আয়রন বা তাতাল এর টিপ বা বিট পরিষ্কার করতেও ফ্লাক্স বা রজন ব্যবহার করা হয় ।
সোল্ডারিং আয়রন (Soldering Iron) বা তাঁতাল কি ?
সোল্ডারিং বা ঝালাই করার মূলযন্ত্র হল সোল্ডারিং আয়রন বা তাতাল । এটি বৈদ্যুতিক শক্তিকে তাপ শক্তিতে রুপান্তরিত করে । সোল্ডারিং আয়রন বা তাতাল এর চারটি অংশ বডি, বিট, টিপ, কয়েল, ইলেক্ট্রিক তার ।
সোল্ডারিং আয়রন বা তাতাল
আয়রনের বডি (Body):
বডি দুটি অংশ দিয়ে গঠিত। বডির হাতল অংশটি তাপরোধী প্লাস্টিক বা কাঠ দিয়ে তৈরী । আর অপর অংশটি ধাতু (টিন বা লৌহ জাতীয় পদার্থ) দিয়ে তৈরী ।
সোল্ডারিং বিট (Bit) / টিপ (Tip) কি?
সোল্ডারিং আয়রন বা তাতাল এর মূলত যে অংশ দিয়ে ঝালাইয়ের এর কাজ করা হয় তাই বিট/টিপ নামে পরিচিত। এটি সোল্ডার আয়রন বা তাতাল এর অগ্রভাগ। এর আকার আকৃতি বিভিন্ন রকমের হয়। যেমনঃ চ্যাপ্টা, চোখা, সূচাল। কাজের সবিধার জন্য কখনও ৪৫ ডিগ্রি বাঁকান আবার কখনও ৯০ ডিগ্রি সোজা থাকে। তাতালের আকার বা শক্তির উপর ভিত্তি করে চিকন- মোটা বা বড়-ছোট বিট হয় । বিট কয়েক ধরনের হয়, যেমনঃ তামার তৈরী বিট (সাধারণ বিট) তামার উপর সিরামিক কোটিং করা বিট (সিরামিক বিট), বিশেষ কাজের জন্য বিশেষ ধাতু দ্বারা তৈরী বিট ।
বিদ্যুৎ শক্তিকে তাপ শক্তিতে রুপান্তরিত করতে কয়েল ব্যবহার করা হয় । কয়েল এর ওয়াট যত হয় তত ওয়াট এর সোল্ডারিং আয়রন বা তাতাল বলে গন্য করা হয় । অতি সূক্ষ্ম নাইক্রম (Nichrome wire) তার চিনামাটি বা এলুমিনিয়াম এর কোর এর উপর পেচিয়ে কয়েল বানান হয় । (কোরটি দেখতে সরু পাইপের মত, যার দরুন এর ভিতর দিয়ে বিট প্রবেশ করতে পারে)
ইলেক্ট্রিক তার (Electric Wire):
কয়েল এ বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য ইলেকট্রিক তার ব্যবহার করা হয় ।
সোল্ডারিং (Soldering) বা ঝলাই করার নিয়মঃ
প্রথমে সার্কিট এর যে স্থান ঝালাই করা হবে সেই স্থান ঘষে পরিস্কার করে নিতে হবে এবং যে কম্পনেন্ট ঝালাই করা হবে সেটির লেগ/পা/টার্মিনাল/পিন ঘষে পরিস্কার করে নিতে হবে। এবার কম্পনেন্টকে সার্কিট এর জায়গা মত স্থানে স্থাপন করে নিয়ে তাতাল বা সোল্ডারিং আয়রন দিয়ে ঝালাইয়ের স্থান একটু গরম করে নিতে হবে । এবার ঝালাই এর স্থানে এক হাত দিয়ে ৪৫ ডিগ্রী বাকা করে তাতাল বা সোল্ডারিং আয়রন ধরি এবং অন্য হাতে ৪৫ ডিগ্রী বাঁকা করে সোল্ডারিং লীড বা রাং ধরি নিচের চিত্র মোতাবেক।
সঠিক সোল্ডারিং এর পদ্ধতি
পরিমান মত সোল্ডারিং লীড বা রাং গলার পর তা সরিয়ে নেই এবং সোল্ডারিং আয়রন বা তাতাল দিয়ে ফিনিশিং করে ঝালাই সম্পন্ন করি। যদি কখনো সার্কিট বা কম্পনেন্ট এর জয়েন্ট ভালভাবে না হয় তবে কিছু পরিমান ফ্লাক্স বা রেজিন উক্ত স্থানে তাতাল দিয়ে গলিয়ে লাগিয়ে দিলে ঠিক মত ঝালাই হবে। প্রয়োজনে কম্পনেন্টের লেগ/পা/টার্মিনাল/পিন গলিত রেজিন এ চুবিয়ে তাতাল এর বিট দিয়ে কম্পনেন্টএর লেগ/পা/টার্মিনাল/পিন ঘষে ঘষে পরিস্কার করে নেই।
ভাল ঝালাই এবং খারাপ ঝালাই এর পার্থক্য বুঝতে নিচের চিত্র লক্ষ্য করি।
একটি কম্পোনেন্ট ও পিসিবি এর খুব কাছে থেকে তোলা সোল্ডার এর পার্শ্ব চিত্র
ভালো সোল্ডার করবার টিপসঃ
কখনো কখনো আয়রন এর বিট এ ময়লা লেগে থাকে বলে রাং ধরেতে/গলতে চায় না। এক্ষেত্রে কোন কিছু দিয়ে আয়রন(তাতাল) এর বিট পরিস্কার করে নিতে হবে। ভালো হয় শক্ত কাপড় যেমন জিন্সের কাপড় কে ভিজিয়ে পরিষ্কার করা।
আয়রন(তাতাল) এর বিট কাজ করতে করতে কাজের অনুপোযোগী বা ভোঁতা হয়ে পড়ে, এক্ষেত্রে ফাইল (রেত/রেতি) দিয়ে বিট এর মাথা ঘষে ঠিক করে নিতে হয়।
ভালো ঝালাইয়ের দেখতে চকচক করবে, মন্দ ঝালাই দেখতে ঘোলাটে দেখাবে।
আমরা এখন জানি আবিস্কার কি, উদ্ভাবন কি এবং সামনে আগাবার জন্য আমাদের করণীয় সম্পর্কে যা হলো প্রশ্ন করবার ক্ষমতা বা ইচ্ছা। তোমরা তোমার চারপাশে অনেক কিছু দেখো, শুনো, অনুভব করো। এই দেখা, শুনতে পারা বা অনুভুতির বিষয়গুলো কি সেটা নিয়ে প্রশ্ন করা যায়। এই প্রশ্নগুলো সহজ হতে অনেক কঠিন হতে পারে। সব সময় এর উত্তর পেতেও পারো বা নাও পেতে পারো। এই উত্তর পাওয়া বা না পাওয়া নির্ভর করবে আমাদের পুর্বপুরুষ কতটা প্রশ্ন করতে পেরেছিল তুমি আজ যা নিয়ে প্রশ্ন করছো তার উপর এবং সেই সাথে এই প্রশ্নগুলোর সমাধানের জন্য তাঁরা কতটুকু কাজ করেছিল।
বিজ্ঞান হলো প্রমাণ করা বিষয়। যে জিনিস বা বিষয় প্রমাণিত নয় তা বিজ্ঞান না জানবে। বিজ্ঞানের নানান সুত্র বা নিয়ম হয়তো অনেক বিষয়ের সাথে থাকবে কিন্তু ঐ বিষয়টি যখন সম্পুর্ণ রূপে প্রমাণিত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত তা বিজ্ঞান নয়। বিজ্ঞানের শুরুটা হয় প্রশ্ন থেকে। এর পর এই প্রশ্নের সমাধানের জন্য তোমাকে ধারণা করতে হবে এর সম্ভাব্য সমাধান কি কি হতে পারে তা। এই ধারনা করাকে গবেষণার ভাষায় বলে হাইপোথিসিস। এখন তোমার এই ধারনাকে প্রতিষ্ঠিত করতে তুমি কিভাবে প্রমাণ করবার জন্য কাজ করবে তা ঠিক করাটাই বিজ্ঞানের ভাষায় থিসিস। থিসিসে থাকবে তোমার উদ্দেশ্য যা আসলে তুমি কি প্রমাণ করতে চাও তার বর্ণণা। এর পর থাকবে কিভাবে কাজ করবে তার বর্ণণা। এটাকে বলে কার্যপদ্ধতি বা মেথোডোলজী। এর পর পরীক্ষা ও তার ফলাফল। ফলাফল সবসময় ইতিবাচক হবে তথা তুমি যা ভেবে কাজ করেছো তা হবে এমন হবে না। ফলাফল নেগেটিভও আসতে পারে। সেই ফলাফল থেকেও শেখা সম্ভব কেনো হলো না বা তোমার কার্যপদ্ধতি বা চিন্তাতে ভুল কি ছিল। এখানেও আবার সেই প্রশ্নই আসবে। আবার ফলাফল আসলে তা একটা নিয়মে পরিণত হবে যা তোমার চিন্তাকে বিজ্ঞানে পরিণত করবে।
একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টা সহজ বোধ্য হবে – ধরো তোমার হাতে একটা মার্বেল আছে। এখন এই মার্বেল টা তোমার হাতেই আছে। তুমি ছুড়ে দিলে এই মার্বেলটা দুরে যায়। ছুড়ে দিলে মার্বেলটা কেনো দুরে যাচ্ছে ? এটা কিন্তু একটা ভালো প্রশ্ন। তুমি ভাবলে এটা কেনো হয় তা তুমি প্রমাণ করবে বা জানবে এখানে শক্তি টা কি আছে। এখন ধরে নাও বা চিন্তা করো একটি শক্তি কাজ করছে এর পিছনে। এই ক্ষেত্রে আমাদের উদ্দেশ্য হলো মার্বেলটি কেনো দুরে চলে যায় ছুড়ে দিলে এটা জানা। কাজের পদ্ধতি হিসাবে আমরা বেছে নিতে পারি মার্বেল, একটা টেবিল এবং একটা তোমার হাত। টেবিলে মার্বেলটি রেখে দাও সমান করে দেখবা মার্বেলটি স্থির হয়ে আছে। এবার হাতের সাহায্যে আলতো করে টোকা দিলে দেখবে মার্বেলটি দুরে যাচ্ছে। যত জোরে টোকা দিবে মার্বেলটিতে ততজোড়ে তা সামনে যাবে। এখানে মার্বেলটিকে টোকা দেবার শক্তির সাথে সাথে মার্বেলটির সামনে যাবার গতি বাড়বে। আবার টোকা না দিলে মার্বেলটি সমান জায়গাতে স্থির থাকবে। তাহরে আমরা ফলাফল পেলাম – মার্বেলটি সমান জায়গাতে থাকরে এবং তাকে কোন প্রকার বল প্রয়োগ না করলে স্থির থাকে, মার্বেলটিকে যত জোরে টোকা দেওয়া যায় তথা মার্বেলটির পেছনে যত জোরে বল প্রয়োগ করা যায় মার্বেলটি ততজোরে সামনে যায়। তার মানে হলো একটি স্থির বস্তু স্থির থাকে যতক্ষণ না তার উপর বল প্রয়োগ না করা হয়।
উপরে যা বলা হলো এটার মুল সূত্র আবিস্কার করেছেন মহান বিজ্ঞানী নিউটন। তোমরা নিউটনের নাম নিশ্চয়ই শুনেছো। ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী এই মহান বিজ্ঞানী বস্তু ও বল এর সম্পর্ক নিয়ে তিনটি সূত্র দিয়েছেন তার পরীক্ষালব্ধ ফলাফল থেকে। এই সূত্র তিনটি নিউটনের বল বিষয়ক তিনটি সূত্র নামে পরিচিত। আজকে যে বিমান আকাশে উড়ে, রকেট মহাকাশে যায়, বিভিন্ন যন্ত্র কাজ করে তার পিছনে এই সূত্র তিনটির অনেক অবদান। এই সুত্রকে কাজে লাগিয়েই পরবর্তীতে উদ্বাবকরা বিভিন্ন যন্ত্র তৈরী করেছে।
আমরা বিজ্ঞান কিভাবে কাজ করে এবং বিজ্ঞান আসলে কি জানলাম। তোমাদের বিভ্রান্ত করতে বা ভুল শেখাতে চারপাশে দেখবে নানান আয়োজন। যা প্রমাণিত নয় তা বিজ্ঞান নয়। তোমাদের বই দেখবে সামাজিক বিজ্ঞান নামে। এটাও একটা ভুল। সমাজ বিজ্ঞানের অংশ কিন্তু তা বিজ্ঞান নয় কোন ভাবেই জানবে। কারণ সমাজের, পরিবারের সব কিছু একভাবে কাজ করে না। একটু হরেও ভিন্নতা থাকে। যেমন ধরো তুমার বাবা, মা, তুমি, তোমার ভাই বোনেরা একই সমাজের হলেও একই রকম চিন্তা করে না, একই রকম পছন্দ করে না, একই রকম খাবার পছন্দ করে না। কিছু কিছু মিল থাকতে পারে তবে বিজ্হান হতে গ্যালে লাগবে ১০০% মিল। যতবারই তুমি কোন বিষয়কে পরীক্ষা করো বিজ্ঞানে ততবারই একই ফলাফল আসবে। সমাজ বিজ্ঞানে তেমন হবে না কখনও কারণ মানুষ বা পশু পাখি মেশিন না। এখানে ভৌত বা বস্তির নিয়ম খাটবে না। কারণ মানুষ এবং পশুর তথা জীবের আছে ব্রেইন বা মগজ নামক একটি বস্তু। বস্তুর জন্য প্রযোজ্য অনেক কিছুই তাই জীবের জন্য সঠিক হলেও ১০০ভাগ সঠিক হবে না প্রতিটি জীবের জন্য। আবার জীবের জন্য বিজ্ঞানের সুত্র বা কিছু নিয়ম কানুন প্রযোয্য হলেও সেটা নিজে বিজ্ঞান হবে না।
টাকা পয়সার হিসাব সবার জন্য সমান তাই না। এখন আবার ভেবে দেখো সবার চাহিদা কি সমান টাকা পয়সার? সবার কি টাকা হারালে এক রকম লাগে? সবার কি দামী দামী পোশাক পছন্দ? মোটেও তা না। টাকা পয়সার হিসাব কিন্তু আবার সবার জন্য সমান। চাহিদা যাই থাকুক ১০ টাকার নোট সবার জন্য সমান। সবাই দুটো পাঁচ টাকাকে অংকের মাধ্যমেই বলবে ১০ টাকা মোট। তাই বিজ্ঞানের অনেক কিছুই সমাজে তাকলেও সমাজ আসলে বিজ্ঞান নয়। সমাজ শুধু ধারনা করেই চলে এবং সেটা সবসময় ধারণামতো কাজ করে না।
আরেকটা উদাহরণ দেই – যেমন ধরো ঈদে বা পুজোতে বা বৈশাখীতে তোমার জন্য তোমার মা জামা কিনে আনলে কি সবসময় তোমার পছন্দ হবে? হবে না এটাই স্বাভাবিক, তোমার বয়স বারবার সাথে সাথে তোমার নিজস্ব পছন্দ হবে যা তোমার মা নাও জানতে পারে। এখানে তোমার মা এর ধারণা তোমার পছন্দ সম্পর্কে সব সময় সত্য হবে না তবে আবার কখনও কখনও সঠিক হবে। এটাই ধারণা করা – এভাবেই আমরা জানবো সমাজ বিজ্ঞান আসলে বিজ্ঞান নয়। সমাজে শুধু মাত্র বিজ্ঞানের কিছু কিছু সুত্র ব্যবহার করা যায়, প্রশ্ন করে বিভিন্ন বিষয়ে তার সম্পর্কে ধারণা করা যায় তবে শতভাগ প্রমাণ করা যায় না। যা শতভাগ প্রমাণিত নয় তা বিজ্ঞান নয়।
আমরা যারা ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্সের হবিস্ট, তাদের একটি কমন সমস্যা হলো কোনো কিছু হোল বা ছিদ্র করা। PCB, কোনো পাতলা ধাতব বা প্লাস্টিকের/কাঠের বোর্ড, বক্সের জন্য প্রয়োজনীয় ছিদ্র করতে গেলেও বিভিন্ন সমস্যার মুখে আমরা প্রতিনিয়তই পড়ি। এই কাজটি অনেকেই অনেকভাবে চেষ্টা করেন, অনেকে সফল হন, আবার অনেকে পারছেন না বা মনের মতো হচ্ছেনা। কারণ এটার চক বা বিট হোল্ডার আমাদের স্থানীয় বাজারে সহজলভ্য নয় বলে পিনটোন দিয়ে কাজ চালিয়ে নিতে হয়।
কিন্তু এই পিন্টন কে যদি আমাদের মনের মতো বা যতটা সম্ভব কাজের উপযোগী করে পরিবর্তন করে নিতে পারি। তাহলে আমাদের প্রজেক্টের কার্যকারিতা বাড়বে ও বারবার ড্রিল বিট কেনার হাত থেকে আমরা রক্ষা পাবো, বাঁচবে অনেক টাকা।
এ সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতা থেকে কিছু শেয়ার করছিঃ
১। প্রথমে পিনটোনের বডিকে ঠিক মাঝ থেকে কেটে ফেলুন।
ক) এটা কাটার জন্য হ্যাকস ব্লেড (Hacksaw Blade) ব্যবহার করতে পারেন।
খ) আরও ভালো হয় যদি কারও পাওয়ার হ্যান্ডড্রিল থাকে, তাহলে পিনটনের বডিকে ড্রিল চকে লাগিয়ে নিন। এবারে মেশিন রান করে হ্যাকস ব্লেডের কাটার অংশে চেপে ধরুন। অনেক সুন্দরভাবে কেটে যাবে, অনেকটা লেদ মেশিনের মতো। (২ নাম্বার ছবি দেখুন)
২। পিনটোনের যে অংশটা ড্রিল বিটকে চেপে রাখে বা আটকিয়ে রাখে সেটা বের করুন। একটা পিনটোনের দুমাথায় দুটো ছোটো ছোটো চক থাকে (৩ নাম্বার ইমেজ দেখুন)। প্রতিটি চকের দুই দিকে আবার দুটো করে চোয়াল বা বিটকে আটকানোর ম্যাকানিজম থাকে। তবে সব চোয়ালই মটরের শ্যাফ্টকে আটকে রাখতে পারে না। তাই প্রথমে দেখে নিন, কোন চকের কোন চোয়াল মটরের শ্যাফ্টকে ভালোমতো আটকে রাখতে পারে।
এবারে নিচের পদ্ধতি দুইটি অনুসরণ করুন। এর ফলে ড্রিলবিট ধরে রাখার চোয়াল মসৃণ হবে ও বিট কাঁপবে না
ক) একটি পাওয়ার ড্রিলে ১/৮ মানের বিট লাগান। এবার পিনটোনের যে চোয়াল শ্যাফ্টের জন্য ভালো, সেই চোয়ালের চেরা মুখ দিয়ে ১/৮ মানের ড্রিলবিট ঢুকিয়ে মুক্তভাবে পাওয়ারড্রিল চালান। এ সময় ছোটো চকটির অপর মাথা, অর্থাৎ অপর চোয়াল সোজা এবং শক্ত করে কোনো কিছু দিয়ে ধরে রাখুন নিচের ছবির মতো করে।
এতে করে চোয়ালের অমসৃণ বা উঁচুনিচু অংশ সমান হয়ে যাবে আর মটরকে টালমুক্ত ভাবে আটকে রাখবে। মুক্তভাবে ড্রিল করার অর্থ হলো চোয়ালের মাথায় কোনো চাপ থাকবেনা, এতে পাওয়ার ড্রিলের বিট চোয়ালের উপর খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারবেনা, মানে বিটের কাটিং পয়েন্ট চোয়ালের উচুনিচু অংশকেই শুধু কেটে ফেলবে, হোল-কে বড় করবে না।
খ) অনুরূপ ভাবে চকটির অপর চোয়ালকে ১/১৬ মানের বিট দিয়ে ড্রিল করে মসৃণ করুন।
৩। পিনটোনের কাটা বডির এক টুকরো বেছে নিন, আর এর মাঝে মাত্র মসৃণ করা চকটি প্রবেশ করান। এখানে লক্ষণীয় যে। বিটকে আটকে রাখার পাশে চিকন হোল-ওয়ালা চক রাখুন। আর নিচের ছবির মতো করে মটরকে আটকে রাখা চোয়াল বডির কাটাপাশের দিকে ঢুকিয়ে দিন।
৪। কাটা অংশের দিক দিয়ে মটরের শ্যাফট প্রবেশ করান। আর অন্যপাশে ড্রিলবিট কে রেখে পিনটোনের মাথার অংশ (পেঁচওয়ালা নাট) টাইট করুন। এই নাট টাইট দিলে চকের দুটি চোয়ালই একই সাথে মটরের শ্যাফ্ট ও বিটের সাথে আটকে যাবে
পিনটোন ও মটর সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যঃ
৫। পিসিবি ড্রিলিংয়ের ক্ষেত্রে মটরের পাওয়ার নির্বাচন অনেক গুরুত্ব বহন করে। কারণ বেশি গতির মটোরের কম্পন, বিটের কাটিং এজ-এ (Edge) প্রভাব ফেলে বিটের লাইফ-টাইম নষ্ট করে দেয়, বা ছিদ্র করার ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়।
এক্ষেত্রে মটোরের ভোল্ট দেখেনিয়ে পাওয়ার সাপ্লাই ভোল্ট নির্বাচন করুন।
যেমন: ৬ ভোল্টের মটর হলে ০.৮৮ মিমি বা ১/৩২ সাইজের বিটের ক্ষেত্রে ৪.৫ ভোল্ট থেকে ৫ ভোল্ট ব্যবহার করুন। ১২ ভোল্টের মটর হলে ১০ থেকে ১১ ভোল্টের মটর ব্যবহার করুন। অপেক্ষাকৃত মোটা বিট যেমন ১.২মিমি বা ১/১৬ বিট হলে ৬ ভোল্টের মটরে ৬ ভোল্ট, আর ১২ ভোল্টের মটরে ১২ ভোল্ট-ই ব্যবহার করুন।
৬। আর একটা বিষয় না বললেই নয়। যদি চকের চোয়াল ড্রিল বিট বা মটর শ্যাফট কে মজবুত বা শক্ত করে আটকাতে না পারে, তবে সাবধানতার সহিত চায়না হ্যাক্স ব্লেড দিয়ে চোয়ালের চেরা অংশকে বড় করে নিতে পারেন, এতে মটরের সাথে ভাল ভাবে আটকাবে।
এই কথা গুলো আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলেছি। অনেকেই কলম বা অন্যকিছু দিয়ে মটরের সাথে বিটকে আটকানোর চেষ্টা করেন। ব্যাপারটা অবশ্যই মজার। নিজে কিছু করার মজাই আলাদা। কিন্তু সেসব ক্ষেত্রে কিছুটা সীমাবদ্ধতা থাকে। সহজে বিট পরিবর্তন করা যায় না। বা অন্য সাইজের বিট লাগানো যায় না, ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে এই পদ্ধতিতে চাইলেই আপনি বিট পরিবর্তন করতে পারবেন। বা বিভিন্ন মানের বা সাইজের বিট লাগাতে পারবেন। পিসিবি ড্রিলিংয়ের কোয়ালিটিও অনেক অনেক ভালো হবে। আমার এই টিপস্গুলো আশাকরি আপনাদের সবার উপকারে আসবে। সবাই ভালো থাকবেন। নতুন কোনো আইডিয়া থাকলে শেয়ার করবেন। প্রশ্ন থাকলে কমেন্টস করবেন। ধন্যবাদ।
আমরা সবাই জানি বিজ্ঞানী নিউটন গতি বিষয়ে তিনটি সূত্র আবিস্কার করে গ্যাছেন। আবার আমরা জানি টমাস আলভা এডিসন উদ্ভাবন করেছেন বৈদ্যুতিক বাতি। আবিস্কার আর উদ্ভাবন এই দুটো শব্দ দেখ সম্পুর্ণ আলাদা দুটি শব্দ কিন্তু দুটো শব্দই খুবই কাছাকাছি অর্থ প্রকাশ করে। তোমরা কি জানো এই শব্দ দুটোর মাঝে পার্থক্য কি? যারা জানো তারা খুবই ভালো – যারা জানো না তাদের জন্য বলছি –
আমরা যে পৃথিবীতে বেড়ে উঠছি সেখানে কিছু জিনিস আমাদের নিয়ন্ত্রণে না মোটেও। উদাহরণ হিসাবে সূর্যের উদয়, অস্ত যাওয়া, চাঁদ ওঠা, সমুদ্রের বিস্তার ও বাতাসের চলাচল, পৃথিবীর নিজের চারদিকে ঘোরা ইত্যাদি বলা যায়। এই সব প্রাকৃতিক কাজের প্রতিটি একটি নির্দিষ্ট সুত্র বা নিয়ম মেনে চলে। এই নিয়মগুলোর সব কিছু মানুষ এখনও জানে না। মানুষ চেষ্টা করছে জানতে কিভাবে এই সব ঘটনা ঘটে, এই ঘটনা গুলোর পেছনে আসলে কোন শক্তি কাজ করে। এই সব শক্তির উৎস কোথায়। এটা জানবার জন্য মানুষ প্রতিনিয়ত গবেষণা করছে, নতুন নতুন জিনিস শিখছে।
প্রাকৃতিক বা প্রকৃতিতে আগে থেকেই ছিল এমন কিছুর সুত্র বা নিয়ম জানাকেই আসলে আবিস্কার বলে। আরেকটু সহজ করে বললে যা আগে থেকেই ছিলো কিন্তু মানুষ পরে জানতে পেরেছে সেটাকেই আবিস্কার বলা হয়। তাহলে উদ্ভাবন কি ? তোমাদের মনে প্রশ্ন জাগছে না !!!
উদ্ভাবন হলো আবিস্কার করা সুত্র বা নিয়ম কে কাজে লাগিয়ে কোন কিছু তৈরী করা। মানুষ মহাশুণ্যে যাবার জন্য যে রকেট বা মহাকাশযান তৈরী করেছে তা একটি উদ্ভাবন। মানুষকে প্রথম জানতে হয়েছে একটি নিয়ম যা নিউটন আবিস্কার করেছিলেন। পরে সেটাকে কাজে লাগিয়ে মানুষ তৈরী করেছে রকেট।
একটি উদ্ভাবনের পিছনে এক বা একের বেশী আবিস্কারের নিয়ম থাকতে পারে। তবে একটি আবিস্কার একটি সুনির্দিষ্ট বিষয়ের উপর হয় তবে সেখানে নিয়মের ব্যতিক্রম হবার জন্য কি কি বিষয় কাজ করে তা উল্লেখ থাকে। প্রতিটি আবিস্কার কে প্রমাণিত পরীক্ষার মাধ্যমে পাশ করে আসতে হয়। হঠাৎ করে কোন আবিস্কার হয় না। সুনির্দিষ্ট প্রমাণ বা পরীক্ষা ছাড়া কোন আবিস্কার গ্রহণযোগ্য হয় না।
মানুষ আবিস্কার করতে শিখেছে মুলত দুটো কারণে। একটি হলো প্রশ্ন করবার ইচ্ছা থেকে আরেকটি হলো জানবার আগ্রহ থেকে। নিউটন যখন দেখেছে গাছ থেকে কেন আপেল পরে বা একটি ঢিল কে ছুড়ে দিলে কেন সেটা গতি হারিয়ে মাটিতে পরে সেটা দেখে তাঁর মনে প্রশ্ন জেগেছে কেন এমন হয়। এর উত্তর বের করতে গিয়েই আবিস্কার হয়েছে অভিকর্ষ বলের। আবার এই পৃথিবীর কোথায় কি আছে সেটা জানবার আগ্রহ থেকে প্রাচীনকালে নাবিকগণ অজানার উদ্দেশ্যে সমুদ্রে জাহাজ ভাসিয়েছে – আবিস্কার করেছে নতুন নতুন মহাদেশ। আবিস্কার করেছে আমাদের এই সবুজ পৃথিবীর।