সহজ ভাষায় সার্কিট ব্রেকার সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

22
16399
সহজ ভাষায় সার্কিট ব্রেকার সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
সহজ ভাষায় সার্কিট ব্রেকার সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

সার্কিট ব্রেকার (Circuit Breaker) আমরা কমবেশি সবাই দেখেছি। মূলত প্রচলিত কাট আউট, ফিউজ এর আধুনিক রূপ এটি।

এই গুরুত্বপূর্ণ জিনিসটি আপানার আমার বাসা-বাড়ির সকল ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিকে রক্ষা করে। কিন্তু কিভাবে এটি কাজ করে তা অনেকেই জানিনা।

আজকে তাই নিয়েই লিখছি। একই সাথে কতো মানের সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করা উচিৎ ও সার্কিট ব্রেকার লাগানোর নিয়ম নিয়েও লিখবো।

পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা ডিপ্লোমা পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রিদের আশাকরি উপকার হবে।

পরিচ্ছেদসমূহ

সার্কিট ব্রেকার কি?

সার্কিট ব্রেকার হচ্ছে নিরাপত্তা প্রদানকারী অর্ধ স্বয়ংক্রিয় (semi automatic) যন্ত্র বিশেষ।

এটি এমন একটি ইলেকট্রিক্যাল বা ইলেকট্রনিক যন্ত্র যা অপর কোন ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক যন্ত্রকে নিরাপদ রাখে।

কোন কারণে এসি লাইনে যদি অতিরিক্ত পরিমান বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় তাহলে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। যন্ত্রপাতি পুড়ে যাওয়া থেকে শুরু করে আগুন লাগাও বিচিত্র নয়। যেমন-

  • কোন কারণে যদি এসি লাইনে শর্ট সার্কিট (Short Circuit) ঘটে,
  • মাত্রাতিরিক্ত লোড লাগানো (ওভার লোড), কিংবা
  • যদি কোন কারণে আপনার বাসার লাইন ভোল্টেজ বেড়ে যায় (ফলে কারেন্টের প্রবাহ বৃদ্ধি হয়)।

এসমস্ত ক্ষেত্রে সার্কিট ব্রেকার নিজে থেকেই ট্রিপ (Trip) করে বা বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে মূল্যবান যন্ত্রপাতি কে রক্ষা করে।

সার্কিট ব্রেকার কে আবিষ্কার করেছিলেন?

প্রাথমিক ভাবে বিখ্যাত বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন ১৮৭৯ সালে তাঁর পেটেন্টে সার্কিট ব্রেকারের বর্ণনা করেন। যদিও তাঁর বাণিজ্যিক যন্ত্রগুলোতে পরবর্তিকালে ফিউজ ব্যবহার করাহয়।

মূলত তাঁর আবিষ্কৃত ফিলামেন্ট বাল্ব ও আলোক বিতরণী সার্কিট সমূহকে দূর্ঘটনাবশত শর্ট সার্কিট এবং ওভার লোড থেকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যেই এটি ব্যবহৃত হয়েছিল।

পরবর্তীকালে ১৯২৪ সালে ক্ষুদ্রকায় সার্কিট ব্রেকারের পেটেন্ট করেন Brown, Boveri & Cie নামক কোম্পানি যা আধুনিক সার্কিট ব্রেকার গুলোর পথ প্রদর্শক।

দেখতে কেমন?

বাসা-বাড়িতে ব্যবহৃত সার্কিট ব্রেকার গুলো মিনিয়েচার সার্কিট ব্রেকার (MCB) নামেও পরিচিত।

সেগুলোর আকার বেশ ছোট। চালু ও বন্ধ করার জন্য তার সামনে একটি লিভার (lever) মত থাকে যাকে অপারেটর (Operator) নামে ডাকা হয়।

নিচে বেশ কয়েক ধরণের সার্কিট ব্রেকারে চিত্র দেয়া হলো-

বাসা-বাড়িতে বহুল ব্যবহৃত সার্কিট ব্রেকারের চিত্র, একে MCB ও বলে
বাসা-বাড়িতে বহুল ব্যবহৃত সার্কিট ব্রেকারের চিত্র, একে MCB ও বলে

অপরদিকে পাওয়ার সাবস্টেশনে ব্যবহার হয় আরো বড় আকারের হাই ভোল্টেজ সার্কিট ব্রেকার-

পাওয়ার সাবস্টেশনে ব্যবহৃত হাই ভোল্টেজ সার্কিট ব্রেকার
পাওয়ার সাবস্টেশনে ব্যবহৃত হাই ভোল্টেজ সার্কিট ব্রেকার

এছাড়াও ইলেকট্রনিক সার্কিট ব্রেকারও আছে। নিচে পিসিবি তে তৈরি এমনি একটি ইলেকট্রনিক ব্রেকারকে দেখতে পাচ্ছি-

পিসিবি তে প্রস্তুতকৃত ইলেকট্রনিক সার্কিট ব্রেকার যা আলাদা ব্যাটারি পাওয়ার দিয়েও চলতে সক্ষম
পিসিবি তে প্রস্তুতকৃত ইলেকট্রনিক সার্কিট ব্রেকার যা আলাদা ব্যাটারি পাওয়ার দিয়েও চলতে সক্ষম

আভ্যন্তরীন গঠন

নিচের ছবিতে আমরা সাধারণ বাসা-বাড়িতে বহুল ব্যবহৃত সার্কিট ব্রেকারের অভ্যন্তরীন গঠন দেখতে পাচ্ছি।

একে এমসিবি বা মিনিয়েচার সার্কিট ব্রেকার নামেও ডাকা হয় (MCB – Miniature Circuit Breaker) তা আগেই জেনেছি।

চিত্র খেয়াল করলে MCB টিতে বামে কালো রঙের লিভার সুইচ যাকে Operator বলে, তা দেখতে পাচ্ছি।

উপরে ও নিচে আপার টার্মিনাল ও লোয়ার টার্মিনাল দ্বয় দেখা যাচ্ছে যার মাধ্যমে কোন সাপ্লাই থেকে লোডে সংযোগ দেয়া হয়।

সাধারণ সার্কিট (MCB) ব্রেকারের অভ্যন্তরীণ গঠন
সাধারণ সার্কিট (MCB) ব্রেকারের অভ্যন্তরীণ গঠন

নিচের চিত্রে একটি হাই ভোল্টেজ সার্কিট ব্রেকারের পার্শ্বচ্ছেদের চিত্র ও তারই পাশে ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারদের কে তা পাওয়ার সাবস্টেশনে বসানোর চিত্র দেখতে পাচ্ছি।

হাই ভোল্টেজ সার্কিট ব্রেকারের আভ্যন্তরীন ও প্রায়োগিক চিত্র
হাই ভোল্টেজ সার্কিট ব্রেকারের আভ্যন্তরীন ও প্রায়োগিক চিত্র

নিচের ড্রইংটিতে আমরা ২৫ কিলো ভোল্ট সিংগেল ফেজ এয়ার সার্কিট ব্রেকারের আভ্যন্তরীন বিভিন্ন অংশ সমূহ দেখতে পাচ্ছি-

২৫ কিলো ভোল্ট সিংগেল ফেজ এয়ার সার্কিট ব্রেকারের আভ্যন্তরীন বিভিন্ন অংশ সমূহ
২৫ কিলো ভোল্ট সিংগেল ফেজ এয়ার সার্কিট ব্রেকারের আভ্যন্তরীন বিভিন্ন অংশ সমূহ

সার্কিট ব্রেকারের সিম্বল

নিচে এর ইলেকট্রকাল সিম্বল দেখতে পাচ্ছি যেখানে-

  • A – ম্যানুয়েল টাইপ
  • B – থার্মাল ওভার লোড টাইপ ও
  • C – ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক ওভার লোড টাইপ
সার্কিট ব্রেকারের সিম্বল সমূহ
সার্কিট ব্রেকারের ইলেকট্রিক্যাল/ইলেকট্রনিক সিম্বল সমূহ

সার্কিট ব্রেকার কত প্রকার

সার্কিট ব্রেকারকে নিম্নোক্ত ভাগে ভাগ করা যায়-

আমরা বাসা বাড়িতে যেসব মিনিয়েচার টাইপ সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করি সেগুলো সাধারণত লো ভোল্টেজ টাইপের সার্কিট ব্রেকার।

অন্যান্য ধরণের সার্কিট ব্রেকারের মধ্যে আছে-

  • আরসিডি বা রিসিডিউয়াল কারেন্ট ডিভাইস (RCD) – এটি সম্পূর্ণ বর্তনিতে প্রবাহিত কারেন্টের ভারসাম্য পর্যবেক্ষণ করে। কোন কারণে এই কারেন্টের ভারসাম্য নষ্ট হলে (যেমনঃ আর্থ (Earth) এবং লাইভ (Live) তার শর্ট হলে বা মাত্রার অতিরিক্ত পরিমাণ বিদ্যুৎ আর্থ এ প্রবেশ করলে) এটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন বা ট্রিপ (Trip) করে। কিন্তু এটিতে ওভার লোড প্রোটেকশন ব্যবস্থা থাকে না।
  • রিসিডিউয়াল কারেন্ট ব্রেকার উইথ ওভার কারেন্ট প্রোটেকশন (RCBO) – উপরোক্ত সুবিধা সহ এটিতে ওভার লোড প্রোটেকশন ব্যবস্থা সংযুক্ত থাকে।
  • আর্থ লিকেজ সার্কিট ব্রেকার (ELCB) – এটি সরাসরি আর্থ লাইন দ্বারা প্রবাহিত কারেন্টের মাত্রার উপরে মূল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। বর্তমানে এই ধরণের ডিভাইস আর তেমন ব্যবহার হয়না কারণ এ ধরণের ডিভাইস বিভিন্ন সঙ্কটাপন্ন অবস্থার পার্থক্য ধরতে অপারগ।

উপরিউক্ত ৩টি সার্কিট ব্রেকার মূলত আর্থ বা গ্রাউন্ড ফল্ট থেকে যন্ত্রপাতি ও ব্যবহারকারী কে সুরক্ষা দিতে ব্যবহৃত হয়।

কিভাবে কাজ করে সার্কিট ব্রেকার

আমরা আগেই জেনেছি যে, কোন কারণে যদি ওভারলোড হয় বা শর্ট সার্কিট ঘটে তাহলে সার্কিট ব্রেকার স্বয়ংক্রিয় ভাবে বন্ধ হয় যায়।

কিন্তু কিভবে এই কাজটি ঘটে তা বেশ মজার। আগ্রহী পাঠকের জন্য সে ব্যাখ্যাটিই তুলে ধরছি। তবে বিভিন্ন ধরণের সার্কিট ব্রেকারে এই পদ্ধতিটিও ভিন্ন।

ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক টাইপ সার্কিট ব্রেকারের ক্ষেত্রে

একতি স্প্রিং চালিত পুশ টু অন সুইচ ব্যবহার করা হয় এই কাজে।

অনেকটা কলিং বেলে বহুল ব্যবহৃত গোলাকার পুশ সুইচের মতোই, কিন্তু এটি আরো দৃঢ় ও সুসংবদ্ধ।

এর সাথে ব্যবহার করা হয় একটি স্প্রিং লোডেড আয়রন বোল্ট। নিচের চিত্র দেখলে বুঝতে সুবিধা হবে আশাকরি-

সরল ভাবে ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক সার্কিট ব্রেকারের কার্য প্রণালি
সরল ভাবে ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক সার্কিট ব্রেকারের কার্য প্রণালি
  • সম্পূর্ণ ব্যবস্থাটি এমন ভাবে সাজানো থাকে যার ফলে পুশ সুইচ কে চেপে অন করা হলে তা নির্দিষ্ট স্থানে আটকে যায় অপরদিকে সুইচের ২ প্রান্ত কে পরষ্পর সাথে সংযুক্ত করে দেয়। চিত্রে  কমলা রঙ  দ্বারা সুইচের স্পর্শক প্রান্ত (Contact point) দেখানো হয়েছে।
  • অপরদিকে, নির্দিষ্ঠ স্থানে আটকে রাখা বা “লক” করবার জন্য ব্যবহৃত আয়রন বোল্ট টির ঠিক পেছনেই একটি ইলেকট্রো ম্যাগনেট রাখা হয়। এটি প্রকৃতপক্ষে সলিনয়েড (Solenoid) বা তারের কুণ্ডলী যার মধ্য দিয়ে কারেন্ট প্রবাহিত হলে এটি অস্থায়ী চুম্বকে পরিণত হয়।
  • সম্পূর্ন ব্যবস্থাটি এমন ভাবে করাহয় যেন-
    1. স্প্রিং লোডেড পুশ সুইচ কে অন করলে লোডে পাওয়ার পাবে, একই সাথে
    2. সলিনয়েডের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হবে এবং একে অল্প পরিমানে চুম্বকায়িত করবে।
  • এই ব্যবস্থার ফলে নির্দিষ্ঠ সীমার অতিরিক্ত লোড লাগানো হলে উক্ত সলিনয়েডের মধ্যদিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহের পরিমাণ বেড়ে যাবে। ফলে সলিনয়েড টি নির্দিষ্ঠ সীমার অতিরিক্ত পরিমাণ চুম্বকায়িত হয়ে  স্প্রিং বোল্ট কে নিজের দিকে টেনে নিয়ে পুশ সুইচ কে মুক্ত করে দিবে।
  • পুশ সুইচ টি মুক্ত হয়ে তার আভ্যন্তরীন স্প্রিং এর চাপে নিজেকে উপর দিকে ঠেলে উঠিয়ে দেবে যার ফলে স্পর্শক প্রান্তদ্বয় মুক্ত হয়ে যাবে যা লোডের থেকে পাওয়ারকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক সার্কিট ব্রেকারে ওভার লোড হলে অভ্যন্তরে যা ঘটে
ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক সার্কিট ব্রেকারে ওভার লোড হলে অভ্যন্তরে যা ঘটে

ওভার লোড হলে কিংবা শর্ট সার্কিট ঘটলে এই প্রক্রিয়ায় এ ধরণের ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক সার্কিট ব্রেকার স্বয়ংক্রিয় ভাবে লোডের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে সমূহ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।

এখানে উল্লেখ্য যে প্রায় সব ধরণের সার্কিট ব্রেকারই সেমি অটোমেটিক বা অর্ধ স্বয়ংক্রিয়। অর্থাৎ, ওভার লোডের কারণে এটি বন্ধ হলে একে ম্যানুয়ালি অন করতে হয়।

থার্মাল ওভার লোড টাইপ সার্কিট ব্রেকার

ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক ওভারলোড টাইপ সার্কিট ব্রেকারের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি ইলেকট্রো ম্যগানেট টি ওভার লোডের ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রাখছে।

একই ভাবে থার্মাল ওভার লোড টাইপ সার্কিট ব্রেকারের ক্ষেত্রে এই কাজটি করে দ্বীধাতু (bi metal) নির্মিত একটি পাত।

আমরা জানি যে কোন পরিবাহী ধাতুর মধ্যদিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে পারে। এবং এর মধ্যদিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহের সময় ধাতুটি গরম হয়।

একই ভাবে দ্বীধাতু নির্মিত পরিবাহির মধ্যদিয়েও বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে পারে। কিন্তু গরম হলে দ্বীধাতু তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বেঁকে যায়।

চিত্রে সরল ভাবে থার্মাল ওভার লোড টাইপ সার্কিট ব্রেকারের কাজ দেখানো হয়েছে

কাজেই থার্মাল ওভার লোড টাইপ সার্কিট ব্রেকারে ওভার লোড হলে তার অভ্যন্তরস্থ দ্বীধাতু নির্মিত অংশটি অতিরিক্ত কারেন্ট প্রবাহের কারণে গরম হয়ে বেঁকে যায় যা উক্ত পুশ সুইচ কে অফ পজিশনে নিয়ে গিয়ে ওভার লোড বা শর্ট সার্কিটের হাত থেকে লোড কে বাঁচায়।

ইলেকট্রনিক ওভার লোড টাইপ সার্কিট ব্রেকার কীভাবে কাজ করে?

ইলেকট্রনিক সার্কিট ব্রেকার গুলো মূলত তড়িৎ প্রবাহের পরিমাণ সেন্স করবার মাধ্যমে ওভার লোড বা শর্ট সার্কিট কে সনাক্ত করতে পারে এবং তদানুযায়ী পূর্ব নির্ধারিত কোন কাজ করতে পারে (যেমনঃ লোড কে পাওয়ার থেকে বিচ্যুত করা, এলার্ম বাজানো, মোবাইলে এসএমএস পাঠানো, ইত্যাদি)।

প্রয়োজনে এগুলোতে ডিজিটাল ডিসপ্লে সংযুক্ত করবার ব্যবস্থাও থাকে যার মাধ্যমে প্রবাহিত কারেন্টের পরিমাণ, ওভার লোড সিচুয়েশনে নির্দিষ্ট কাজ সেট করবার ব্যবস্থা, বিশেষ কোন বার্তা প্রদর্শন ইত্যাদি করা যায়।

ক্ষেত্র বিশেষে এসমস্ত তথ্যগুলো কে কম্পিউটারে স্থানান্তরের জন্য ডাটা পোর্ট (ইউএসবি বা অন্যকোন) ও ব্যবহার করা হয়।

ক্ষুদ্রাকৃতির ইলেকট্রনিক সার্কিট ব্রেকার গুলোকে ইলেকট্রনিক ফিউজ, ওভারলোড প্রোটেকশন সার্কিট  হিসেবেও ডাকা হয়।

নিচে আমরা একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কাজে ব্যবহৃত হয় এমন ইলেকট্রনিক সার্কিট ব্রেকার ও তার বাহ্যিক বিভিন্ন অংশ দেখতে পাচ্ছি-

ইলেকট্রনিক সার্কিট ব্রেকার ও তার বাহ্যক বিভিন্ন অংশ সমূহ
ইলেকট্রনিক সার্কিট ব্রেকার ও তার বাহ্যক বিভিন্ন অংশ সমূহ

এখানে বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য যে, বোঝার সুবিদার্থে এই লেখায় বেসিক ও মূল কার্য প্রণালী দেখানো হয়েছে যা প্রাযুক্তিক উন্নয়নের সাথে সাথে আরো উন্নত হচ্ছে। এখন এসকল পদ্ধতির সংকরায়নে আরো আধুনিক ও দ্রুত গতির সার্কিট ব্রেকার ও নির্মিত হচ্ছে।

সার্কিট ব্রেকার ব্যবহারের সুবিধাবলী কি কি?

সার্কিট ব্রেকার ব্যবহারের বিশেষ কিছু সুবিধা আছে-

  1. সার্কিট ব্রেকার ক্ষেত্রবিশেষে ফিউজের তুলনায় খুব দ্রুত কাজ করে
  2. এগুলি ফিউজের তুলনায় বেশি নির্ভরযোগ্য
  3. সার্কিট ব্রেকার বেশি পরিমাণ সেন্সেটিভ হয় ফিউজের তুলনায়
  4. ফিউজ একবার নষ্ট হলেই পাল্টাতে হয় যেখানে সার্কিট ব্রেকার একের অধিক বার ব্যবহার করা যায়
  5. সঠিক ও উপযুক্ত মানের সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করলে তা দীর্ঘদিন টেকার নিশ্চয়তা দেয়
  6. অপেক্ষাকৃত দ্রুত সময়ে লোডের বিদ্যুৎ পুনর্বহাল করা যায়। অর্থাৎ ডাউন টাইম (Down time) কম হয়
  7. ক্ষেত্রে বিশেষে লোডের জন্য আলাদা ভাবে সুইচ ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা থেকে বাঁচায়
  8. অধিকাংশ ভালো সার্কিট ব্রেকার গুলোতে টেস্ট বাটন থাকে যার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় সার্কিট ব্রেকারটি ঠিকমত কাজ করছে কিনা। ফিউজে এমন ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়।

সার্কিট ব্রেকার ট্রিপ (Trip) করে কখন?

মিনিয়েচার টাইপ সার্কিট ব্রেকার (MCB) গুলো সাধারণত ৩ ধরণের হয়। এই ধরন বা টাইপ অনুযায়ী এদের ট্রিপিং কারেন্ট ও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে, যথা-

  1. টাইপ B সার্কিট ব্রেকার – ৩ থেকে ৫ গুণ বেশি কারেন্ট প্রবাহিত হলে এগুলো ট্রিপ করে;
  2. টাইপ C সার্কিট ব্রেকার – ৫ থেকে ১০ গুন বেশি কারেন্টে এগুলো ট্রিপ করে;
  3. টাইপ D সার্কিট ব্রেকার –  লোড কারেন্ট ১০ থেকে ২০ গুণ হলে এগুলো ট্রিপ হয়

মূলত কোন সার্কিট ব্রেকার কখন ট্রিপ করবে তা তার ম্যানুয়েল বা ডাটাশিট এ উল্লেখ থাকে।

সার্কিট ব্রেকার লাগানোর ওয়্যারিং ডায়াগ্রাম কেমন?

সাধারণত সার্কিট ব্রেকার কে কোন লোডের সিরিজে সংযোগ দিতে হয়। কি ধরণের লোড ব্যবহার হচ্ছে এবং লোডের সম্ভাব্য সর্বোচ্চ পরিমাণ কারেন্ট রেটিং অনুযায়ী সার্কিট ব্রেকার লাগাতে হয়।

নিচে একটি বাসার বিভিন্ন রুমের জন্য লোডের পাওয়ার রেটিং অনুযায়ী সার্কিট ব্রেকার ব্যবহারের তুলনা মূলক ডায়াগ্রাম দেয়া হলো-

একটি বাসার বিভিন্ন ঘরে সার্কিট ব্রেকারের ওয়্যারিং ডায়াগ্রাম দেখানো হয়েছে
একটি বাসার বিভিন্ন ঘরে সার্কিট ব্রেকারের ওয়্যারিং ডায়াগ্রাম দেখানো হয়েছে
  • চিত্রটি খেয়াল করলে দেখতে পাবো যে একটি সম্পূর্ণ বাড়ির জন্য একটি মুখ্য বা প্রধান সার্কিট ব্রেকার থেকে প্রতিটি ঘরের লোড ও পাওয়ার অনুযায়ী বিভিন্ন মানের গৌন সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করা হয়েছে।
  • এভাবে ওয়্যারিং করবার ফলে কোন কারণে গৌন সার্কিট ব্রেকার ব্যর্থ হলেও বিশাল ক্ষতির হাত থেকে যেমন রক্ষা পায় তেমনি প্রতিটি ঘরের আলাদা আলাদা ব্রেকার ব্যবহারের ফলে ফল্ট ফাইন্ডিং (Fault finding/fault isolate) করতেও সুবিধে হয়।
  • প্রয়োজনে প্রতিটি হাই পাওয়ার লোডের ক্ষেত্রে আলাদা সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করা উচিৎ (যেমনঃ ফ্রিজ, এসি, ইলেকট্রকি হিটার, মাইক্রো ওয়েভ ওভেন, আয়রন প্রভৃতি)

কত মানের সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করা উচিৎ

রেজিস্টিভ লোডের ক্ষেত্রে – লোডের মোট গৃহীত এম্পিয়ারের ৩ গুণ ব্যবহার করা শ্রেয়। উল্লেখ্য রেজিস্টিভ লোড হচ্ছে – টাংস্টেন বা ফিলামেন্ট লাইট, হিটার, আয়রন প্রভৃতি।

ইন্ডাক্টিভ লোডের ক্ষেত্রে – লোডের মোট গৃহীত এম্পিয়ারের ৬ গুণ ব্যবহার করা উচিৎ। কারণ ইন্ডাক্টিভ লোড সমূহ, সুইচ অন করবার সময় ৩-৬ গুণ পরিমাণ কারেন্ট টানে এবং আস্তে আস্তে তার কারেন্ট টানার পরিমাণ স্বাভাবিক হয়ে আসে।

ইন্ডাক্টিভ লোড হচ্ছে সে সকল লোড যাদের মধ্যে ইন্ডাক্টর/কয়েল আছে। উদাহরণ – সিলিং ফ্যান, টেবিল ফ্যান, ইলেকট্রিক মোটর, ছোট ট্রান্সফরমার চালিত যন্ত্রপাতি, এয়ার কন্ডিশনার ইত্যাদি।

ক্যাপাসিটিভ লোডের ক্ষেত্রে – ক্যাপাসিটিভ লোড গুলোও প্রাথমিক ভাবে বেশি কারেন্ট টানে কিন্তু তা ক্ষণিক সময়ের জন্য এবং ইন্ডাক্টিভ লোডের মত দীর্ঘ সময় ব্যাপীও না।

একে ইনরাশ কারেন্ট বলে। তাই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে লোডের মোট কারেন্টের ৬ গুণ পরিমাণ ব্যবহার করাই শ্রেয়। এরফলে ইনরাশ কারেন্টে সার্কিট ব্রেকার ট্রিপ করবার সম্ভাবনা কমে।

সার্কিট ব্রেকার লাগানোর নিয়ম কি?

  1. যে লোডের সাথে সার্কিট ব্রেকার লাগানো হচ্ছে সেটি কত এম্পিয়ার কারেন্ট টানে তা হিসেব করে বের করতে হবে। তার জন্য, I = W÷V সূত্র প্রয়োগ করা যেতে পারে। যন্ত্রের গায়ে/পেছনে অনেক সময় ওয়াট ও এম্পিয়ার মান খোদাই/লেখা থাকে।
  2. যে লোডে সার্কিট ব্রেকার লাগানো হচ্ছে সেটি কি টাইপের তা নির্ণয় করতে হবে। যদি এমন হয় যে উক্ত লাইনে বা উক্ত সার্কিট ব্রেকারে ভিন্ন ভিন্ন টাইপের লোড লাগানো হবে (বাসা বাড়িতে যেমন থাকে) সে ক্ষেত্রে নিরাপত্তার জন্য সর্বোচ্চ মান ধরে হিসাব করতে হবে।
  3. ইন্ডাকটিভ লোডে ব্যবহারের জন্য লোডের এম্পিয়ার মানের চেয়ে ৩-৬ গুণ বেশি রেটিং সম্পন্ন সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করতে হবে।
  4. ক্যাপাসিটিভ লোডের ক্ষেত্রে সার্কিট ব্রেকারের মান হবে লোডের এম্পিয়ার মানের ৬ গুণ।
  5. রেজিস্টিভ লোডের ক্ষেত্রে সার্কিট ব্রেকার লাগানোর নিয়ম হচ্ছে লোড যত এম্পিয়ার টানবে তার চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি ধরা। অর্থাৎ লোড যদি ১ এম্পিয়ার টানে তাহলে সার্কিট ব্রেকার টি ১.২ এম্পিয়ারের হলেই চলবে। যদিও রেজিস্টিভ লোড চালু থেকে বন্ধ হবার আগে পর্যন্ত একই এম্পিয়ার টানে তবুও কিছু কিছু ক্ষেত্রে সার্জ কারেন্টের ফলে যেন অযথাই সার্কিট ব্রেকার ট্রিপ না করে তাই কিছুটা অতিরিক্ত মানের লাগানো ভালো।
  6. হাই এম্পিয়ার প্রতিটি লোড আলাদা আলাদা সার্কিট ব্রেকারে সংযোগ দিতে হবে। হাই এম্পিয়ার লোড যেমন – হাই পাওয়ার মোটর, পানির পাম্প, এয়ার কন্ডিশনার, ইলেকট্রিক হিটার, ইস্ত্রি লাগানোর প্লাগ পয়েন্ট ইত্যাদি।
  7. এখানে উল্লেখ্য যে- যদি হিসাবকৃত মান বাজারে না পাওয়া যায় তাহলে কাছাকাছি বেশি মানের ব্যবহার করা যেতে পারে। (যেমন – লোডের কারেন্ট ১১ এম্পিয়ার পাওয়া গেল কিন্তু বাজারে এই মানের সার্কিট ব্রেকার পাওয়া যায় না। কিন্তু ১৬ এম্পিয়ারের ব্রেকার সহজ লভ্য। কাজেই ১৬ এম্পের ব্রেকার ব্যবহার করা যেতে পারে)

ওয়্যারিং ডায়াগ্রাম আগেই এই পয়েন্টে উল্লেখ করেছি বিধায় তা আর এখানে লিখছি না।

পাদটিকা

ট্রিপ (Tripp)

সার্কিট ব্রেকারের প্রেক্ষাপটে “ট্রিপ” অর্থ বন্ধ হওয়া। 

ট্রিপিং কারেন্ট (Tripping current)

যে পরিমাণ কারেন্ট প্রবাহিত হলে একটি সার্কিট ব্রেকার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় তাকে ট্রিপিং কারেন্ট বলে।

ইনরাশ কারেন্ট

সুইচ অন করার সাথে সাথে কোন লোড যে কারেন্ট গ্রহণ করে তাকে ইনরাশ কারেন্ট বলে। স্বাভাবিক ভাবে ইন্ডাকটিভ ও ক্যাপাসিটিভ লোডে এই ইনরাশ কারেন্ট তার স্বাভাবিক গৃহীত কারেন্টের তুলনায় অনেক বেশি হয়।

সার্জ ভোল্টেজ

অল্টারনেটিং কারেন্ট বর্তনিতে অর্ধ সাইকেল বা তার কম সময়ের জন্য মাত্রাতিরিক্ত ভোল্টেজের উপস্থিতি কে সার্জ ভোল্টেজ বলে।

সার্জ কারেন্ট

ইনরাশ কারেন্টের অনুরূপ।

সেফটি ডিভাইস হিসেবে সার্কিট ব্রেকার এর ভূমিকা অপরিসীম। সংক্ষিপ্ত এই লেখায় গুরুত্বপূর্ণ ডিভাইস টির কিছু দিক আর সহজ হিসাব নিকাশ তুলে ধরলাম।

আরো অনেক চমকপ্রদ বিষয় আছে এ নিয়ে যা নিয়ে লিখতে গেলে বিশাল বই হয়ে যাবে! বিশেষ করে হাই ভোল্টেজ লাইনে ব্যবহৃত সার্কিট ব্রেকার গুলো আরো মজার!

এখানে উল্লেখ করছি, পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং এ বিশেষ ভাবে দক্ষ এবং সুদীর্ঘ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন সোহরাব হোসেন সৌরভ ভাই হাই ভোল্টেজ সার্কিট ব্রেকার এবং আরো কিছু বিষয় নিয়ে আমাদের মাঝে তাঁর অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে কিছু বিতরন করবেন এ প্রত্যাশা দিয়েছেন। আমাদের এ প্রত্যাশা সুদীর্ঘ হবে না এ আশাই করছি।

বিদায়ের শেষ মুহুর্তে একটি ছোট পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। নির্দিষ্ঠ মাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত লোড সংযোগ, শর্ট সার্কিট ইত্যাদি কারণে সার্কিট ব্রেকার ট্রিপ করে।

তাই কোন ব্রেকার ট্রিপ করলে সাথে সাথেই সেটিকে অন না করে আগে কারণ খোঁজা উচিৎ কেন সার্কিট ব্রেকার টি ট্রিপ করলো। এর মাধ্যমে আপনি মারাত্মক কোন দূর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচতে পারেন।

সবাই ভালো থাকবেন, নিরাপদে থাকবেন আর অবশ্যই ইলেকট্রিক্যাল কাজ করবার সময় মনে রাখবেন –   SAFETY FIRST! 

22 মন্তব্য

  1. মন্তব্য:পিসিবিতে তৈরী সার্কেট ব্রেকারের কথা উল্লেখ করেছেন ….. প্রস্তুত করার জন্য ডায়াগ্রামটা দিলে খুবই উপক্রিত হতাম….

  2. ভাই, রিলে সম্পর্কে যদি এমন বিশদ আলোচনা করেন,
    তাহলে একটু উপকৃত হতাম, আপনার এ আলোচনায় আমার বিশেষ ঙ্গান অজর্ন করতে পারতাম।
    ধন্যবাদ ভাই।

  3. ভাই, সার্কিট ব্রেকার থাকা অবস্থাই কি মানুষ শক লেগে মারা যায়?

    • সার্কিট ব্রেকারের সাথে শক লাগার কোন সম্পর্ক নেই। অর্থাৎ সার্কিট ব্রেকার থাকলেও শক লাগবে না লাগানো থাকলেও শক লাগবে। তবে সাধারণত কোন পাওয়ার সোর্সের ভোল্টেজ ৬০ ভোল্টের উপরে উঠলে শক এর অনুভূতি লাগে। এসি বা ডিসি যে কোন ভোল্টেজেই শক লাগতে পারে যদি তা ৬০ ভোল্টের উপরে হয়। এটি কেন ব্যবহার করা হয় তা লেখার এক অংশে লিখেছি দেখুন- “কোন কারণে যদি ওভারলোড হয় বা শর্ট সার্কিট ঘটে তাহলে সার্কিট ব্রেকার স্বয়ংক্রিয় ভাবে বন্ধ হয় যায়।” মূলত যন্ত্রপাতি রক্ষা করাই সার্কিট ব্রেকারের আসল কাজ। ধন্যবাদ আপনার প্রশ্নের জন্য।

  4. জনাব আমি জানতে চাচ্ছি যে, আমার বাসায় 3টি সিলিং ফ্যান, 4টি 30 ওয়াট বাল্ব, একটি হিটার (যা মাঝে মাঝে ব্যবহার হবে), একটি হাফ হর্স মটর, একটি টেলিভিশন, একটি সাউন্ড বক্স সেট । সুতরাং এগুলো চালানোর জন্য কত অ্যাম্পিয়ার সার্কিট ব্রেকার লাগাবো

  5. অসাধারন লিখেছেন ভাই, এর চেয়ে ভাল আর লিখাই হয় না? কিন্তু ভাই I = W÷V সূত্রটাই প্রয়োগ করতে পারছিনা আর কি।

  6. ভাই মেইন সাপ্লাই লাইন 1rm ক্যাবলের রেটিং ১২এম্প, এর জন্য কত মানের c টাইপ MCB ব্যবহার করব? এই ক্যবলে বিভিন্ন মানের লোড লাগানো আছে, আমি ক্যাবলের সুরক্ষা চাচ্ছি।

    • 1rm ক্যাবলের কারেন্ট রেটিং ১২-১৬ এম্পিয়ার। কাজেই এই ক্যাবলে 16C সার্কিট ব্রেকার লাগানো নিরাপদ হবে। আর আপনি বলেছেন ক্যাবলের সুরক্ষা চাচ্ছেন। প্রকৃতপক্ষে ক্যাবল ও ডিভাইস উভয়েরই সুরক্ষা চিন্তা করা উচিৎ।

উত্তর প্রদান

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন