বাড়ি ব্লগ পৃষ্ঠা 10

ছোটদের জন্য বিজ্ঞান – ৫

0

ছোটদের জন্য বিজ্ঞান - ৫ (বিজ্ঞানের প্রমাণ)

বিজ্ঞানের প্রধানতম সৌন্দর্যতা হচ্ছে এর সত্য নিষ্ঠতা। এই সত্য নিষ্ঠতা আসে মুলত প্রমাণ সাপেক্ষে এবং এখানে এই প্রমাণ আসতে পারে দুটো উপায়ে।

১. নির্দিষ্ট পারিপার্শিক অবস্থার প্রেক্ষিতে

২. যে কোন অবস্থার ভিত্তিতে

যেখানে পারিপার্শিকতার প্রভাব থাকে সেখানে ঐ পারিপার্শিক অবস্থা ছাড়া ঐ নির্দিষ্ট প্রমাণ কাজ করবে না এবং এর মানে এই না যে তা সত্যি নয়। আবার যেখানে যে কোন অবস্থার প্রেক্ষিতে প্রমাণ থাকবে সেখানে প্রমাণিত বিষয়টি সকল অবস্থায় একই রকম ভাবে কাজ করবে। একটা মজার বিষয় হলো আমাদের বিজ্ঞানের এই বিষয়গুলো অধিকাংশই পারিপার্শিকতার উপরই নির্ভর করে। এখানে কিছু বিষয় আগে থেকেই নির্ধারণ করে দিতে হয় তা না হলে সেটা ঠিক ভাবে কাজ করে না। প্রায়োগিক, এপ্লাইড বা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যে ব্যবহার্য জিনিস তা এই নিয়মের আওতায় থেকেই কাজ করে। এর জন্য দেখা যায় যে প্রতিটি জিনিসের একটি ব্যবহার বিধি থাকে যার প্রেক্ষিতে আমাদের ব্যবহার করা জিনিসটি সবথেকে ভালো ভাবে কাজ করতে পারে। একটা উদাহরণ দেই তাহলে বুঝতে সুবিধা হবে তোমাদের –

বিজ্ঞান বলেছে যে পানির ঘনত্ব সব চেয়ে বেশী ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায়। এখন তুমি যদি তোমার বাসার কলের পানি ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াসে ঠান্ডা করে এর ঘনত্ব মাপতে যাও তবে দেখবে এর ঘনত্ব বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণিত ঘনত্বের সাথে মিলবে না। এর প্রধান কারণ তোমার কলের পানি আসলে বিশুদ্ধ পানি নয়। এর সাথে নানান ধরনের পদার্থ মিশ্রিত। অর্থাৎ পানির ঘনত্ব ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াসে বেশী এটা প্রমাণিত বিজ্ঞান হলেও এখানে একটি শর্ত আছে আর তা হলো পানি বিশুদ্ধ হতে হবে। এর রাসায়নিক গুণ ১০০ ভাগ পানির মতো হতে হবে।

তাহলে আগের আলোচনা আর আজকের আলোচনা থেকে আমরা জানলাম যে কোন কিছুর বিজ্ঞান হয়ে উঠবার জন্য শর্তাবলী অক্ষুন্ন থাকা অত্যাবশকীয়। এই অত্যাবশকীয় শর্তাবলী না মানলে প্রমাণিত জিনিসও কাজ করবে না সঠিক ভাবে। সেই সাথে এটাও জানা হলো কোন বিজ্ঞানীর আবিস্কার করা কোন নিয়মকে কাজে লাগাতে হলে নির্দিষ্ট শর্তাবলী পালন করতে হবে নিয়ম মেনে।

এ্‌ই নিয়মের মাঝে একটা নিয়ম এখন আমরা জানবো আর সেটা হলো শক্তির কোন ধ্বংস নাই – শক্তি এক অবস্থা থেকে আরেক অবস্থাতে শুধু রুপান্তরিত হতে পারে। সেই সাথে শূণ্য থেকে কোন শক্তি যেমন তৈরী হতে পারে না তেমন করেই কোন শক্তি শূণ্যে মিলিয়ে যেতে পারে না। এ্টা হলো শক্তির নিত্যতা সুত্র। তাহলে যদি শক্তি নতুন করে তৈরী হতে না পারে এবং শক্তি শেষ না হয় কখনো তবে আমাদের ভাবায় যে এই মহাবিশ্বের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মোট শক্তি একটি স্থির অবস্থানেই আছে। এর শুধু মাত্র রুপান্তর হয়েছে বা হচ্ছে। আমরা এই পৃথিবীতে এই শক্তি রপান্তরের বিভিন্ন যন্ত্র তৈরী করে আমাদের গাড়ী, বিদ্যুত সহ নানান যন্ত্র চালাচ্ছি। এই রুপান্তরের প্রকৃয়াতে যে শক্তি আমরা আমাদের কাজে লাগাতে পারছি না তা শক্তির অপচয় বলছি আমরা।

বিভিন্ন সময় আমরা এখন দেখতে পাই যে, জ্বালানী বিহীন বিদ্যুত উৎপাদনের খবর আসছে বিভিন্ন পত্রিকার পাতায়। ইন্টানেটে ঘাটলে তোমরা দেখবে যে ভিডিও আছে এই সব যন্ত্রের। অনেকে তা বিশ্বাসও করে। তোমরা কি বিশ্বাস করবে এমন যন্ত্র তৈরী করা সম্ভব? আসলেই কি এমন কোন যন্ত্র তৈরী করা সম্ভব যাতে কোন প্রকার শক্তি না দিয়ে শক্তি পাওয়া যাবে!! শক্তির নিত্যতা সূত্র মেনে কি এটা আদৌ সম্ভব? বিজ্ঞানের নিয়ম মেনে এখানে আমরা চিন্তা করলাম জ্বালানী বিহীন বিদ্যুৎ তৈরী করা সম্ভব কিনা এবং করলে কিভাবে আর না হরে কেনো নয়? চিন্তা ও প্রশ্ন তো হলো – এবার আসো আমরা দেখি প্রমাণ কি বলে –

তোমরা লক্ষ্য করলে দেখবে প্রতিটি এই ধরণের যন্ত্র একটি প্রাথমিক পাওয়ার সোর্স বা শক্তির উৎস ব্যবহার করে – সেটা ব্যাটারী, হাতের ধাক্কা বা চুম্বক শক্তি হতে পারে কিন্তু কিছু না কিছু থাকেই। এর পর দাবী করা হয় এটা এভাবেই চলতে থাকবে আজীবন ধরে কখনো এই যন্ত্র থামবে না। কিন্তু বিজ্ঞান বলে এই যন্ত্র প্রাথমিক শক্তির রুপান্তরের পরই থেমে যাবে। এখানে শর্তাবলী হলো এই যন্ত্র এমন এক মাধ্যমে চলছে যেখানে বাতাস আছে যার বাধা তৈরী করবার ক্ষমতা আছে, এই যন্ত্রের সাথে যুক্ত বিভিন্ন যন্ত্রাংশের সাথে এর ঘর্ষণ আছে যা বাধা তৈরী করবে, আর ঘর্ষণ মানেই হলো তাপ উৎপাদন অর্থাৎ গতি শক্তি কে তাপ শক্তিতে রুপান্তর, প্রাথমিক যে শক্তি দেওয়া হচ্ছে তার পরিমাণ নির্দিষ্ট। এখন এই যন্ত্রের প্রাথমিক অবস্থার পর থেকেই এর প্রাথমিক শক্তি রুপান্তরিত হতে থাকবে এবং একটা নির্দিষ্ট সময় পর যা নির্ভর করবে প্রাথমিক শক্তির পরিমানের উপর এই যন্ত্রে আসলে আর কোন শক্তি থাকবে না অর্থাৎ এই যন্ত্র থেমে যাবে।

রুপান্তুরিত শক্তিকে যদি এর প্রাথমিক শক্তির দিকে চালিত করা হয় অর্থাৎ এর আউটপুটকে যদি ইনপুটে দেওয়া যায় তবে এই শক্তির চলমান সময় বেড়ে যাবে। কিন্তু তাতে করে এর বাতাসের সাথে বাধার অপচয়, ঘর্ষণের ফলে শক্তির রুপান্তর এই সব শর্ত শিথিল হবে না। এর ফলে এই অপচয়ের শক্তি টুকু কখোনোই আর যুক্ত হবে না এর প্রাথমিক উৎসের সাথে। এতে করে যখন এর অপচয়কুত শক্তি ও এর প্রাথমিক শক্তির পরিমাণ এক হবে তখন এই যন্ত্র আর কাজ করবে না। এই ধরণের যন্ত্র পারপেচুয়াল মেশিন নামে পরিচিত। তাহলে আমরা এটা শিখলাম যে জ্বালানী বিহীন বা প্রতিনিয়ত সরবরাহকরা শক্তি বিহীন কোন যন্ত্র আজীবন চলতে পারবে না যা শক্তির নিত্যতা সুত্র দ্বারা নির্ধারিত এবং শক্তির রুপান্তরের কারণে বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণিত।

রীলে- কিভাবে কাজ করে ও এর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য (Part-2)

15
SPDT রীলে এর অভ্যন্তরে-internal contact assembly of a SPDT Relay-Amader Electronics

রীলে সম্পর্কিত আমার প্রথম পোস্টে অনেক সাড়া পেয়েছি। অনেকেই ইমেইল ও মেসেজের মাধ্যমে জানিয়েছেন তাদের ভালোলাগা আর চাও্য়ার কথা। চেষ্টা করবো তাদের ইচ্ছে পূরনের। আজকে রীলে সম্পর্কিত ২য় পোস্ট। প্রথম পার্ট টি পড়তে চাইলে এই লিংক থেকে ঘুরে আসুনঃ Relay Part-1

আজকে যেসব নিয়ে আলোচনা করবো তা হলঃ

রীলে তে ব্যবহৃত পিন সমূহঃ

প্রচলিত দিক থেকে চিন্তা করলে অন্যান্য ইলেকট্রনিক পার্টসের মতো রীলের পা গুলোকে লেগ বলাই সমীচিন ছিলো কিন্তু কোনো কারণে তা না হয়ে পিন নামেই বেশি সুপরিচিত তাই আমরা পরবর্তীতে একে পিন নামেই অভিহিত করছি।
আমরা যদি একটি SPDT রীলের পিন আউট/পিন কনফিগারেশন দেখি তাহলে তা দেখতে বাহ্যিক দিক থেকে এমন-

SPDT Relay PIN Config-Amader Electronics
এর একদিক থেকে ৩টি ও অপর দিক থেকে ২টি পিন আছে। এর মধ্যে ২টি প্রান্ত আভ্যন্তরীণ কয়েলের জন্য ও অপর ৩টি প্রান্ত সুইচিং এর জন্য ব্যবহৃত হয়। পিন বা প্রান্ত গুলোর নাম যথাক্রমেঃ

  • NC (Normally Close)
  • NO (Normally Open)
  • CO (Common) / Pole
  • Coil + / –
  • Coil – / +

NC (Normally Close)

এই পিনটি সাধারণ ভাবে অন অবস্থায় থাকে। অর্থাৎ, রীলের কয়েলে উপযুক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকলে এটি কমোন পিনের সাথে সংযুক্ত (শর্ট) অবস্থায় থাকে।

NO (Normally Open):

এই পিনটি সাধারণ অবস্থায় অফ থাকে। অর্থাৎ, রীলের কয়েলে উপযুক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকলে এটি কমোন পিন থেকে বিচ্যুত থাকে। কোনো ডিভাইস/বাতি কে সাধারণত এই পিন (NO) ও (কমোন – CO) পিনের সাথে সংযুক্ত করে সার্কিটে সুইচিং করা হয়।

[টিপসঃ কোনো ডিভাইস/বাতি কে সাধারণত ঘঙ NO (Normally Open / NO) পিন ও (কমোন – CO) পিনের সাথে সংযুক্ত করে সার্কিটে সুইচিং করা হয়।]

CO (Common) / Pole:

এটি হচ্ছে উপরোক্ত ২টি পিনের জন্যই কমোন (CO) বা অন্য নামে পোল (Pole) হিসেবেও অভিহিত করা হয়।

Coil:

সুইচিং করার সময় এই পিন দ্বয়ে রীলে কয়েলের মাণ মতো ভোল্টেজ প্রবাহিত করা হয়। সাধারণত কোনো সার্কিটের এলইডি লাগাবার স্থানে কিংবা ¯িপকার লাগাবার স্থানে লাগানো যায় (উপযুক্ত ক্যাপাসিটর ও রেজিস্টার সহযোগে)। এই রীলে কয়েলের সাধারণত কোনো পজেটিভ/নেগেটিভ প্রান্ত থাকে না। অর্থাৎ কয়েলটি যেকোনো ভাবেই ব্যাটারির ২ প্রান্তের সাথে লাগানো যেতে পারে।

বুঝবো কীভাবে আমার রীলে কী ধরণেরঃ

সর্বোমোট পা/পিন সংখ্যা গণনা করে বোঝাটাই বেশি সহজ যে আমার রীলে টি কোন ধরণের। সুবিধের জন্য এই চার্টটি মনে রাখা যেতে পারে-

  1. SPST – 4 পিন
  2. SPDT – 5 পিন
  3. DPST – 6 পিন
  4. DPDT – 8 পিন

প্রসঙ্গত, SPST এবং DPST তেমন পাওয়া যায় না কারণ ডাবল থ্রো যেকোনো রীলে’র যে কোনো এক পাশকে একটু কৌশলে লাগালেই এই কার্যোদ্ধার সম্ভব।

আমার রীলে’টি কতো ভোল্টেরঃ

রীলে পরিচিত হয় এর কয়েলের ভোল্টেজ দ্বারা, অর্থাৎ যে ভোল্টে একটি রীলের কয়েল সম্পূর্ণ চালু হয় সেটিই উক্ত রীলের ভোল্ট হিসেবে গণ্য হয়। এর প্রধান কারণ, রীলের সুইচিং প্রান্তে যেকোনো ভোল্টেই কার্যক্ষম থাকে তাই সে প্রান্তে’র শুধুমাত্র সর্বোচ্চ ভোল্ট আর কারেন্ট পরিবহনের মাত্রাই শুধু নির্দেশিত থাকে। আদতে একটি রীলে বিশেষ সুইচ ব্যতিত কিছুই নয়, এর জন্য আমরা একটি রীলে কে সম্পূর্ণ রূপে খুলে এর ভেতরের অংশ পর্যবেক্ষণ করব এবং তাকে আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেবো।

 

!!! সতর্কতাঃ এই পাঠের পরবর্তী অংশটুকু শুধুমাত্রই শিক্ষামূলক হিসেবে প্রস্তুতকৃত এবং এই প্রকৃয়ায় কোনো যন্ত্রাংশেরই ক্ষতি সাধিত হয়নি। সকল শিক্ষার্থীকে এই ধরণের কাজ পরিহারের উপদেশ দেয়া যাচ্ছে। বিশেষ ক্ষেত্রে, উপযুক্ত ও দক্ষ শিক্ষকের উপস্থিতিতে এটি করা যেতে পারে !!!

একটি রীলে’কে খুললে কেমন দেখায়ঃ

আমরা এখন একটি রীলের অভ্যন্তরে দেখবো এবং তা থেকে বোঝার চেষ্টা করবো এটি কিভাবে কাজ করে। চলুন তাহলে দেখি একটি রীলে কে খুললে কেমন দেখায় তা দেখি-

একটি SPDT রীলেকে খোলার পরের চিত্র - Amader Electronics

এই কাজের জন্য আমরা এন.সি. কাটার (NC Cutter) এবং মিনি স্ক্রু-ড্রাইভার (Mini Precision Screwdriver) ব্যবহার করেছি। উপযুক্ত সতর্কতা না নিলে এগুলো দ্বারা মারাত্মক ক্ষতি হবার সম্ভবনা আছে। সুতরাং, নতুন শিক্ষার্থি সকলকে অনুরোধ থাকবে তারা যেন এটি  একা একা (বড়দের ছাড়া) কখনোই করতে সচেষ্ট না হয়।
উপরোক্ত চিত্রে আমরা একটি SPDT রীলের আভ্যন্তরীন চিত্র দেখতে পাচ্ছি। আরো ভালোভাবে বুঝতে চাইলে নিচের চিত্রটি দেখতে পারি।

open spdt relay
এই চিত্রে একই রীলে’র খুব কাছ থেকে তোলা ছবি দেখছি। এর বিভিন্ন পিন এর অগ্রভাগ (কন্টাক্ট পয়েন্ট -Contact Point) অভ্যন্তরে কোথায় কিভাবে থাকে তা আমরা নিচের ছবিতে দেখতে পাবো।

internal contact assembly of a SPDT Relay-Amader Electronics
চিত্রে প্রদর্শিত পোল/কমোন প্রান্তটি নড়তে সক্ষম এবং তার নিচেই উজ্বল চিকন অন্তরিত তারে প্যাঁচানো ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক কয়েলকে দেখতে পাচ্ছি। মূলতঃ কমোন প্রান্তটি, ইলেকট্রো ম্যাগনেট বা তড়িৎ চুম্বক দ্বারা আকর্ষিত হয়ে একবার NO প্রান্তে এবং NC প্রান্তে সংযুক্ত হয়ে রীলে’র কাজ স¤পন্ন করে।
আমাদের পর্যবেক্ষণ শেষ হলে রীলে টিকে আমরা খোলের মধ্যে সাবধানে প্রবেশ করিয়ে ও সুপার গ্ল জাতীয় আঠাদিয়ে একে জোড়া দিয়ে দেই।
উল্লেখ্য যে, বিভিন্ন কম্পানি ও ধরণ অনুসারে এই আভ্যন্তরীণ চিত্র ভিন্ন হতে পারে।

(চলবে…)

ভেরিয়েবল রেজিষ্ট্যান্স

3

ইলেক্ট্রনিক্সে বহুল ব্যবহৃত এবং খুবই কাজের একটি জিনিস এই ভেরিয়েবল রেজিস্ট্যান্স। ভেরিয়েবল বা পরিবর্তনশীল রেজিস্ট্যান্স যেখানে প্রয়োজন সেখানেই এর ব্যবহার এবং এর দ্বারা সার্কিটের বিভিন্ন অংশে প্রয়োজন মাফিক ভোল্টেজ কম বেশী করা যায়। আমরা সবাই এই যন্ত্রাংশের সাথে পরিচিত কারণ আমাদের গান শুনবার যন্ত্রগুলোতে ভলিউম কমাতে বাড়াতে যে নবটি ঘুরাতে হয় তাই আসলে ভেরিয়েবল রেজিস্ট্যান্স। আসুন ছবি দেখি:

Potentiometer

এর সাধারণ বৈশিষ্ট হিসাবে তিনটি পা থাকে। এর একপাশে ইনপুট আর আরেকপাশে আউটপুট থাকে। মাঝের অংশটি ঘুরিয়ে রেজিস্ট্যান্স পরিবর্তনকরে কাজে লাগানো হয়। সার্কিটে সিম্বল হিসাবে কেমন থাকে তা দেখি:

symbol

নানান রকম আকারে ও প্রকারে বাজারে এটি পাওয়া যায়। নীচের ছবিটা দেখলে তা বুঝতে পারা যাবে:

বিভিন্ন ধরনের ভেরিয়েবল রেজিস্টর - Different Types of VARIABLE RESISTOR| Amader Electronics

এই আকার ও প্রকারে ভিন্নতা হয় মুলত কাজের সুবিধার জন্য এবং সার্কিটের প্রকারভেদের উপর। উপরের ছবির ডান দিকের উপরে তার প্যাঁচানো টাইপ টা আসলে ওয়্যারউন্ড টাইপ যা সাধারণত পাওয়ার সার্কিটে ব্যবহৃত হয়। যেখানে বেশী কারেন্ট প্রবাহের বিষয় থাকে সেখানে এই টাইপের ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কোন কোন এমন রেজিস্ট্যান্স এর সাথে সুইচও থাকে অন অফ করবার জন্য। ছোট আকারের ব্যাটারী চালিত অডিও সিস্টেম, রেডিও প্রভৃতিতে সাধারণত ভলিউম কন্ট্রোলের সাথেই অন অফ সুইচ একত্রে কাজ করবার জন্য এই ব্যবস্থা থাকে।

একটি ভেরিয়েবল রেজিস্ট্যান্স এর ভিতরের গঠন কেমন হয় তা দেখি:

ভেরিয়েবল রেজিস্টর এর ভেতরে কী আছে?

এখানে মুলত একটি রেজিস্টিভ মিডিয়া বা মাধ্যমকে (২ অংশ) দুটো পরিবাহীর মাধ্যমে যুক্ত করা হয়। এর সাথে ঘুরতে সক্ষম একটি পরিবাহী যুক্ত করে এর মাঝের ভেরিয়েবল অংশটি তৈরী করা হয়। A এবং W অংশ এর মাঝের রেজিস্ট্যান্স আর W এবং B এর মাঝের রেজিস্টেন্স নির্ভর করে রেজিস্টিভ মিডিয়া বা মাধ্যমের উপর W অংশের অবস্থানের উপর। এখন মাঝের অংশ ঘুরালে এর অবস্থান পরিবর্তনের সাথে সাথে A এবং B এর সাথে এর রেজিস্ট্যান্স এর পরিবর্তন ঘটবে। একটু বুদ্ধি খাটালে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে। 3 অংশের অবস্থান পরিবর্তনের সাথে সাথে A এবং B এর সাপেক্ষে W অংশের রেজিস্ট্যান্স পরিবর্তন ঘটবে। সকল ভেরিয়েবল রেজিস্ট্যান্স এভাবেই কাজ করে।

এমপ্লিফায়ার বা এই ধরনের যন্ত্রে যেখানে দুটো আলাদা অডিও চ্যানেল কে একই সাথে নিয়ন্ত্রণ করবার দরকার হয় সেখানে স্টেরিও ভেরিয়েবল রেজিস্ট্যান্স ব্যবহার করা হয়। আসুন দেখতে কেমন হয় তা দেখি (দেখতে অন্য রকমও হতে পারে ও পাওয়া যায়)

স্টেরিও ভেরিয়েবল রেজিস্টেন্স - Stereo Variable Resistance | Amader Electronics

বিশেষ রকমের ভেরিয়েবল রেজিস্ট্যান্স:

আলোর উপর নির্ভর করে কিছু পদার্থের রোধ বা রেজিস্ট্যান্স পরিবর্তন হয় এবং এই ব্যাবস্থাকে কাজে লাগিয়ে তৈরী করা হয়েছে – লাইট ডিপেনডেন্ট ভেরিয়েবল রেজিস্টেন্স বা এলডিআর (LDR)। ছবিতে দেখি:

LDR1

ইতিমধ্যে রাহিন এই এলডিআর কে কাজে লাগিয়ে কিভাবে সার্কিট করা যায় তা নিয়ে একটি পোষ্ট দিয়েছে। এখানে তা দেখা যাবে। 

কোন প্রকার প্রশ্ন থাকলে বা কোথাও বুঝতে অসুবিধা হলে কমেন্ট অংশ এবং ফেসবুক খোলা থাকলো – সবাইকে ধন্যবাদ আমাদের ইলেক্ট্রনিক্সের সাথে থাকবার জন্য।

আইসি’র পিন কীভাবে বের করতে হয়ঃ ইলেকট্রনিক্স পার্টস সমূহের টুকিটাকি (পর্ব-১)

10
Amader_Electronics-ATmega32U4, ATmega16U4, Microcontroller IC Pinout

ইলেকট্রনিক্স পার্টস সমূহের টুকিটাকি (পর্ব-১):

ভূমিকা

পার্টস বা কম্পোনেন্ট হচ্ছে ইলেক্ট্রনিক্সের প্রাণ। ইলেক্ট্রনিক্স নিয়ে যারা কাজ শুরু করতে চাচ্ছেন অথবা কাজ শুরুকরে দিয়েছেন তাদের পার্টস এর ব্যাপারে জানা খুবই জরুরী। জানার চেষ্টা করলেও অনেকেই এই কঠিন ব্যাপার গুলোকে না বুঝে বিরক্ত হয়ে থেমে যান অথবা ভুল টা ঠিক মত না খুঁজেই হাল ছেড়ে দেন। তাদের জন্য সহজ ভাষায় কিছু বিষয় তুলে ধরছি যাতে হতাশা কখনই মনের ভিতরে বাসা বাঁধতে না পারে। আজকে আইসি বা সমন্বিত বর্তনী নিয়ে কিছু লিখছি।

আজকের বিষয়ঃ আইসি বা সমন্বিত বর্তনী’র পিন/লেগ বের করবার পদ্ধতি

আজকে আমরা জানবো কীভাবে আইসি’র পিন/পা/লেগ বের করতে হয়।

আইসি (IC) আসলে কীঃ

ইলেক্ট্রনিক্স এ ব্যবহৃত পার্টস এর মধ্যে IC (INTEGRATED CIRCUIT) অন্যতম। অনেকের মনে প্রশ্ন থাকতে পারে এই আইসি গুলো আসলে কি ? আর এর ভিতরেই বা কি। এই প্রশ্নের উত্তর আই সি নামের মধ্যেই আছে।

I = Integrated, C= Circuit  একটি সংক্ষিপ্ত শব্দ। এর মানে দাঁড়াল একটা গোটা সার্কিট কে ছোট একটি বক্স এ ভরে দেওয়া হচ্ছে। বেপারটা আসলে ঠিক তাই।

কীভাবে পিন নাম্বার বের করতে হয়ঃ

আই সি. দিয়ে আমরা যখন কোন সার্কিট তৈরি করার কথা ভাবি তখন অবশ্যই নতুন হবিস্ট যারা আছেন,  তারা একটা ব্যাপার বুঝতে পারেন না সেটা হলে পিন নম্বর। সার্কিট ডায়াগ্রাম বা স্কিমেটিক এ অনেক ভাবেই এর পিন নম্বর লিখা থাকে কিন্তু সেটা অগোছালো হয় অথবা ডায়াগ্রাম আঁকার সুবিধার্থে এমনটা করা হয়ে থাকে। তবে খুব সহজেই আপনি আই সি এর পিন নাম্বার সনাক্ত করতে পারবেন ।

প্রথমে আপনি আইসি টি’র সামনের দিকটা (যেখানে আইসি এর নাম্বার লিখা থাকে) আপনার চোখের সামনে ধরুন। এখন আপনি আপনার বাম দিক থেকে ১ নাম্বার পিন ধরে গুনতে থাকুন।

(ক) যদি ৫  টা পিন হয় তাহলে যথাক্রমে ১,২,৩,৪,৫ (চিত্র ১) উদাহারন TDA2030- 2003-  ইত্যাদি।

TDA2030-Amplifier IC_Amader Electronics-আমাদের ইলেকট্রনিক্স

(খ) যদি একি রকম আইসি ৯ পিন এর হয় তাহলে হিসাব টা একই রকম হবে। (চিত্র ২) উদাহারন TDA 2009 – TDA2616 ইত্যাদি।

TDA2616 PIN OUT-Amader Electronics-আমাদের ইলেকট্রনিক্স-এম্পলিফায়ার আইসি

(গ) যদি আইসি এর উভয় পাশে পিন থাকে তখন একই ভাবে আইসি টি ধরবেন যাতে আপনি আই সি নম্বর টি সোজা থাকে, এবার আই সি এর উপরে একটি ডট  (.) থাকবে । ডট এর নিচের পিন কে ১ নম্বর পিন ধরে গুনেযান আগের মত। ধরুন ৭ নং পিন এ শেষ হচ্ছে, ঠিক তার পরের পিন টি কে ৮ নম্বর ধরে উল্টা দিকে গুনতে থাকুন পরের সব গুলো পিন। (চিত্র ৩) উদাহারন: CD4017/ LM324 /NE5558 ইত্যাদি।

LM324, LM324, SN74HC00, SN74LS47 IC Pinout - Amader Electronics

(ঘ) কিছু কিছু মাইক্রোকন্ট্রোলারের ক্ষেত্রে বিশেষ  করে সারফেস মাউন্ট যেসব, সেগুলোর পিন গুলো চার দিকে ছড়িয়ে থাকে। নিচের চিত্রে এমনই একটি মাইক্রোকন্ট্রোলারের চিত্র দেয়া হলো। এগুলোর পিন নাম্বারও উপরোক্ত ভাবেই হিসেব করতে হয়। বুঝবার সুবিধার্থে নিচের চিত্রটি ভাল করে দেখুন। চিত্রে এটিমেগা ৩২ইউ৪/১৬ইউ৪ (ATmega32U4/ATmega16U4) এর পিন নাম্বার গণনা পদ্ধতি দেখানো হয়েছে। বর্তমান ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্সের যুগে এটি জেনে রাখলে তা নিঃসন্দেহে সবার উপকারে আসবে।

Amader_Electronics-ATmega32U4, ATmega16U4, Microcontroller IC Pinout

আইসি তে হীটসিংক কী ও কেন ব্যবহার হয়ঃ

কোনো আইসি যখন আমাদের জন্য কাজ করে মানে আমরা যখন আই সি কে পাওয়ার সাপ্লাই দিয়ে থাকি তখন সেগুলো গরম হয় (সব ধরনের আইসি গরম হয় না) সেই ক্ষেত্রে আমরা কিছু কিছু আই সি এর পিছনের দিকে সিল্ভার/অ্যালুমিনিয়াম এর মত নির্ধারিত জায়গা দেখতে পাই। এই জায়গা দেয়া হয় হিটসিঙ্ক (Heat Sink) ব্যবহার করবার জন্য, এখানে আলাদা ভাবে তামা/অ্যালুমিনিয়াম এর পাত ব্যবহার করা হয় আইসির দুঃখ ভাগ করে নেওয়ার জন্য। মানে এর গরম টা বাইরে অ্যালুমিনিয়াম এর মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য। এই কাজ টা করার মূল কারণ হচ্ছে আই সি কখনই তার নির্দিষ্ট তাপমাত্রার বেশি হলে টিকে থাকতে পারে না। অনেক ক্ষেত্রে ফুটে বা জ্বলেও যায়। তাই এখানে হীটসিংক ব্যবহার করে তাপমাত্রা সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখা হয়।

TDA2030 IC based Amplifier mounted on a large Heat Sink
TDA2030 IC দ্বারা প্রস্তুত এম্পলিফায়ার। IC টি অতিরিক্ত গরম হয়ে নষ্ট হবার হাত থেকে বাঁচতে এতে বড় হীটসিংক ব্যবহার করা হয়েছে।

নতুনদের জন্য আমার অতি ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। আশা করছি ভাল লেগেছে। খুব শীঘ্রই নতুন কিছু নিয়ে আবার আসব। সবাই ভাল থাকবেন।

ধন্যবাদ।

আইসি বা সমন্বিত বর্তনি সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে চাইলে উইকিপেডিয়ার এই পেইজ থেকে ঘুরে আসতে পারেনঃ সমন্বিত বর্তনী (বাংলা) কিংবা IC (ইংরেজী)

সম্পাদনাঃ সৈয়দ রাইয়ান

আসুন সহজ ভাবে শিখে নেই পিসিবি তৈরী করা

2

অনেক ভাবে পিসিবি বা প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড তৈরী করা যায়। আমরা শিখব সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি যা টোনার ট্রান্সফার পদ্ধতি নামে পরিচিত। আমাদের যা যা লাগবে-

প্রয়োজনিয় উপকরণ

  • ১. যে সার্কিট এর পিসিবি বানাবো তার ডিজাইন।
  • ২. স্টিকার পেপার/গ্লোসি পেপার (ক্যালেন্ডার, লিফলেট যে ধরণের চকচকে কিন্তু পাতলা কাগজে প্রিন্ট হয়)।
  • ৩. লেজার প্রিন্টার।
  • ৪. সিসিবি বোর্ড।
  • ৫. ফেরিক ক্লোরাইড।
  • ৬. ড্রিল মেশিন (পিসিবি ছিদ্র করবার জন্য ছোট আকারের)।
  • ৭. কাপড় ইস্ত্রী করবার আয়রন।

পিসিবি তৈরি করবার ধাপ সমূহ

নিচে পিসিবি তৈরি করবার ধাপ গুলো ক্রমান্বয়ে বর্ণনা করছি। নতুনদের বুঝবার সুবিধার জন্য একে কয়েক ভাগে ভাগ করে দিয়েছি-

ডিজাইন প্রস্তুত করা

  • ইলেকট্রনিক্স বা ইলেকট্রিক সার্কিট ডায়াগ্রাম টি সংগ্রহ করুন।
  • কম্পিউটারে সঠিক মাপে এর ডিজাইন (যে সার্কিট এর পিসিবি বানানো হবে) করতে হবে। নিজে ডিজাইন করতে চাইলে Eagle, Proteus, Easy PCB, OrCad প্রভৃতি সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারেন।
  • প্রয়োজনে উক্ত ডিজাইন বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং বই, সাইট থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারেন। আমাদের ইলেকট্রনিক্স সাইটে এমন প্রচুর সার্কিট এর পিসিবি ডিজাইন আছে।
  • ডিজাইন টি অবশ্যই মিরর কপি (উল্টা) হতে হবে।

প্রিন্ট করা

  • এরপর ঐ ডিজাইন কে একটি স্টিকার পেপার বা গ্লোসি পেপারে হাই রেজোলুশনের লেজার প্রিন্টারে প্রিন্ট করে নিন।
  • সাধারণ ডট মেট্রিক্স প্রিন্টার বা ফটো প্রিন্টার ব্যবহার করলে হবে না
  • প্রিন্ট করবার জন্য লেজার প্রিন্টারের রেজোলুশন বেশি হলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে (যেমনঃ 1200 DPI).

সিসিবি বোর্ড প্রস্তুত করা

  • এবার ডিজাইনের সমান মাপে সিসিবি বোর্ড কে হ্যাক-স ব্যবহার করে কেটে নিন।
  • সিসিবি বোর্ড কে যে কোন ভাল ডিস ওয়াশ সাবান/ডিটারজেন্ট দিয়ে পরিস্কার করে পানি দিয়ে ধুয়ে শুকিয়ে নিন।
  • সিসিবি বোর্ড কে পরিস্কারের সময় স্টিলের স্ক্রাবার (মাজনি) ব্যবহার করবেন যাতে করে কোন তেল ময়লা সিসিবি বোর্ডে লেগে না থাকে।
  • এইবার, ডিজাইনটিকে সিসিবি বোর্ডের উপর মাপ মত রাখুন। কাগজের প্রিন্ট করা পিঠ সিসিবি বোর্ডের কপার সাইডের দিকে থাকবে।
  • কাপড় ইস্ত্রী করবার আয়রন ভাল করে হীট করে নিন (সর্বোচ্চ গরম করবেন)।
  • এরপর সাবধানে ইস্ত্রী দিয়ে কাগজের উপর ডলতে থাকুন। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন হাতে তাপ না লাগে এবং কাগজ বোর্ড থেকে সরে না যায়।
  • ভাল করে ডলবার পর কিছু সময়ের জন্য আয়রনটিকে (২/৩ মিনিট) বোর্ডের উপর দিয়ে রাখুন। এরপর আয়রন তুলে আস্তে আস্তে পুনরায় ২/৩ মিনিট সব জায়গাতে আয়রন করুণ।
  • এবার সিসিবি বোর্ড টিকে ঠান্ডা হতে দিন। কাগজ সহ বোর্ড কে।

বোর্ড পুনরায় পরিষ্কার করা

  • একটি পাত্রে পরিমাণ মত পানি দিয়ে বোর্ডটি ২০ মিনিট ধরে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।
  • হাতের আঙ্গুলের আলতো ঘসায় ধীরে ধীরে বোর্ড থেকে কাগজ উঠিয়ে নিন ভাল করে। কোথাও যেন বাড়তি কাগজ না থাকে খেয়াল রাখবেন এবং কোন অবস্থায় শক্ত কিছু দিয়ে কাগজ উঠাবেন না।

ফেরিক ক্লোরাইড (FeCl3) দিয়ে বোর্ড তৈরি করা

  • এবার একটি প্লাস্টিকের পাত্রে পরিমাণ মত হালকা গরম পানি নিন।
  • এই পানিতে ৩/৪ চামচ ফেরিক ক্লোরাইড পাউডার দিয়ে নাড়ুন।

অবশ্যই প্লাস্টিকের চামচ বা বস্তু হতে হবে – কোন অবস্থায় ধাতব কিছু ব্যবহার করা যাবে না

  • ফেরিক ক্লোরাইড পানিতে মিশবার পর ডিজাইন সহ সিসিবি বোর্ডটির ডিজাইনের দিক টিকে উপরের দিক করে (চিত করে) ফেরিক ক্লোরাইড মিশ্রনে দিন। ধীরে ধীরে নাড়তে থাকুন।
  • কোন প্রকার তাড়াহুড়ো করবেন না। ১০-১৫ মিনিটের মাঝে ডিজাইন অংশ বাদ দিয়ে বাকী অংশের কপার উঠে যাবে।
  • এরপর সাবধানে তা দ্রবণ থেকে তুলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন (চলন্ত পানি – টেপের নীচে বা মগ দিয়ে হলে সরাসরি ড্রেনে যাতে পানি চলে যায় এমন জায়গা নির্বাচন করুন)।

ফেরিক ক্লোরাইড বিষাক্ত – কোন অবস্থায় আপনার ত্বক এবং চোখে যেন না লাগে তা বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখবেন, ত্বকে লাগলে প্রচুর পানি দিয়ে ধুয়ে নিবেন আর চোখে লাগলে অবশ্যই ডাক্তারের শরনাপন্ন হবেন। বড় কারও সহায়তা ছাড়া ছোটদের এই কাজ করা উচিৎ না।

বোর্ড শুকিয়ে নিন

  • এখন পানি দিয়ে ধুয়ে নেওয়া পিসিবি বোর্ডকে স্ক্রাবার (বাসন মাজবার স্টিলের মাজনী) ব্যবহার করে ভাল করে পরিস্কার করে নিন। পানি দিয়ে ধুয়ে ভাল করে শুকিয়ে নিবেন।
  • এইবার পিসিবি ড্রিলবীট ব্যবহার করে পার্টসের জন্য প্রয়োজনীয় ছিদ্র করবেন।
  • এরপর রজন কে স্পিরিটে গুলে বা বার্ণিশ (মটর বা কয়েল বাঁধাই করে এমন দোকানে পাবেন) তুলাতে মেখে কপার অংশে হালকা করে প্রলেপ দিবেন।

আপনি এখন পেয়ে গেলেন একটি প্রফেশনাল মানের পিসিবি। প্রথমেই খুব ভাল হয়ত হবেনা তবে ছোট ছোট সার্কিট দিয়ে অনুশীলন করতে করতেই একসময় ভাল করতে পারবেন।

PCB making ভিডিও টিউটোরিয়াল – তৈরি করুন নিজের পিসিবি

আমাদের ইলেক্ট্রনিক্স টিম একটি ভিডিও টিউটোরিয়াল তৈরী করেছে পিসিবি তৈরীর উপর। আপনাদের হাতেকলমে কাজ করতে যা অনেক কাজে আসবে। উপরে উল্লিখিত সকল ধাপ সহ পিসিবি বানানোর সময় বিভিন্ন রকম সমস্যা ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়েছে এই ভিডিও টিউটোরিয়াল টিতে। যেমন-

  • কি ধরণের কাগজ নেব?
  • কী অনুপাতে মিশাবো ফেরিক ক্লোরাইড ও পানি?
  • কীভাবে দ্রুত মাত্র ৩ মিনিটেই তৈরি করতে পারি পিসিবি?
  • কোথায় পেতে পারি এই কপার বোর্ড?

এসকল গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর ছাড়াও প্রিন্ট করা কাগজ থেকে একদম পিসিবি ড্রিল করা পর্যন্ত এই ভিডিও টিউটোরিয়াল টিতে দেখানো হয়েছে।

সুখদেব, নাসির রাইয়ান কে ধন্যবাদ তাদের চমৎকার কাজের জন্য। 

এছাড়াও একই ড্রলবিট কে বারং বার ব্যবহার করবার জন্য দারুণ কাজের আরেকটি ভিডিও টিউটোরিয়াল আছে আ.ই চ্যানেলে। যার মাধ্যমে অনেক হবু ইঞ্জিনিয়ার, হবিস্ট উপকৃত হবে নিশ্চিত –

টিকা:

পিসিবি (PCB): প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড (ডিজাইন সহ বোর্ড)
সিসিবি (CCB): কপার ক্লেড বোর্ড (একপাশে তামার প্রলেপ সহ বোর্ড)
ফেরিক ক্লোরাইডঃ রাসায়নিক দ্রব্য বিশেষ

রীলে- কিভাবে কাজ করে ও এর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য (Part-1)

2
রীলে- কিভাবে কাজ করে ও এর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

রীলে (মতান্তরে রিলে, ইংরেজী শব্দ – Relay ) যদিও ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্র বিশেষ, তবুও এর গুরুত্ব ইলেকট্রনিক্স এ কম নয়। ধরি, আমি একটা ফ্লিপফ্লপ তৈরি করেছি যা দিয়ে এলইডি জ্বলছে-নিভছে। এখন আমি যদি চাই যে এই ফ্লিপফ্লপ সার্কিটটি দ্বারা বড় কোনো বাতি স্বয়ংক্রিয় ভাবে জ্বালাবো আর নেভাবো তখন আমাকে এমন কোনো যন্ত্র/কম্পোনেন্টের সাহায্য নিতে হবে যা ঐ ছোট সার্কিটে সংযুক্ত করে এই বেশি শক্তির বাতি কে অন-অফ করতে পারি।

এটি বেশ কয়েক ভাবেই সম্ভব, কিন্তু বহুল প্রচলিত ও জনপ্রিয় পদ্ধতি হচ্ছে রীলে ব্যবহার। এটি ব্যবহার করলে আমি নিম্ন ভোল্টেজের ইলেকট্রনিক সার্কিট দ্বারাই উচ্চ ভোল্টেজে সংযুক্ত কোনো বাতি, ফ্যান কিংবা ডিভাইস চালাতে সক্ষম হবো। এই লেখাটি নবীন হবিস্ট ও আগ্রহী পাঠকদের উতসর্গ করছি যারা বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ইলেকট্রনিক্স নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁদের উপকার হলে আমার পরিশ্রম স্বার্থক।

এই ধারাবাহিক লেখা পড়ে যা শিখতে পারবোঃ

লেখাটি ধারাবাহিক করেছি মূলত লেখার আয়তন কমানোর জন্য। এত দীর্ঘ লেখা পড়তে অনেকেই খুব বিরক্ত বোধ করেন বলে জানিয়েছেন। লেখাটিতে যেসমস্ত বিষয় অন্তর্ভূক্ত থাকছে-

  • রীলে কি
  • এটি কত প্রকার
  • দেখতে কেমন
  • লেখা গুলোর কোনটার মানে কি
  • আমার এই রীলে টি কতো ভোল্টের
  • এতে ব্যবহৃত পিন সমূহ
  • বুঝবো কীভাবে আমার রীলে কী ধরণের
  • কতো ভোল্টের তা বোঝার উপায়
  • একটি রীলে’কে খুললে কেমন দেখায়
  • কিছু সাধারণ প্রশ্ন
  • ব্যাসিক সার্কিট
  • অন্যান্য সার্কিটের সাথে সংযুক্ত করার জন্য
  • রীলে কোথায় ব্যবহার করা যায় না

[টিপসঃ ফ্লিপফ্লপ, এলইডি, ডায়োড ও এদের প্রতীক চিহ্ন সম্পর্কে জানতে এই লিংক গুলো ঘুরে আসতে পারেন- ফ্লিপফ্লপ (শামিম ভাই); এলইডি (দুরা ভাই), ডায়োড-ট্রানজিস্টর (সৈয়দ রাইয়ান), প্রতীক চিহ্ন (সৈয়দ রাইয়ান)]

আমরা এই পাঠে একটি রিলে কে নিয়ে অনুসন্ধান করবো যতদূর সম্ভব। আমরা গোয়েন্দা হয়ে খুঁজবো এতে লেখা বিভিন্ন মাণ সম্পর্কে। কী বুঝায় সেগুলো দিয়ে। ডাক্তার হয়ে রিলের ওপেন হার্ট সার্জারী করবো এর ভেতরে কী আছে তা দেখতে।

আর কিছু সাধারণ প্রশ্ন যেমনঃ একটি রিলে কে তার নির্দিষ্ঠ ভোল্টের চেয়ে বেশি ভোল্টে চালানো সম্ভব কিনা, কিংবা কম ভোল্টে চালানো সম্ভব কিনা তারপর একটি রীলে সর্বোচ্চ কতটুকু সহ্যশক্তি ধারণ করতে পারে ইত্যাদি বিষয়কে আমরা গবেষক হয়ে তত্ত্ব-তালাশ করবো। তাহলে পাঠক চলুন, দেরি না করে শুরু করি।

রীলে ও স্ক্রু-ড্রাইভার

রীলে কিঃ

এটি এক প্রকার ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক বা তড়িৎ চুম্বকীয় যন্ত্র বিশেষ। সাধারণ ভাবে যদি বুঝতে চাই তা হলে একে এমন ভাবে চিন্তা করা যেতে পারে- ছোট একটা সুইচ দিয়ে যখন আমরা একটা বাতি কে জ্বালাই তখন তার জন্য আমাদের সুইচে হাত দিয়ে তাকে অফ বা অন করতে হয়। অর্থাৎ কোনো বাহ্যিক একটা শক্তি লাগে সুইচ কে অন-অফ করতে। ঠিক তেমনি ভাবেই, কোনো রীলে কেও অন বা অফ করতে এমনি বাহ্যিক শক্তি লাগে, তবে এ ক্ষেত্রে শক্তিটি বিদ্যুত চুম্বকীয় শক্তি। অর্থাৎ, এতে একটা কয়েল বা অস্থায়ী বৈদ্যুতিক চুম্বক থাকে যার মধ্যে প্রয়োজনীয় পরিমাণ বিদ্যুত সরবরাহ করলে তা সুইচটিকে অন/অফ করতে পারে। কাজেই এর মধ্যে প্রধানত ২টি অংশ থাকেঃ

  1. সুইচিং অংশ
  2. বিদ্যুত চুম্বকীয় অংশ

এটি কত প্রকারঃ

বাজারে প্রচলিত রীলে সমূহ প্রধানত ৩ ধরনের

  1. SPST – Single pole single throw
  2. SPDT – Single pole double throw
  3. DPDT – Double pole double throw

আমরা আমাদের এই পাঠে বহুল প্রচলিত SPDT রিলে সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

রিলে দেখতে কেমনঃ

আমরা নিচের চিত্রটিকে লক্ষ্য করলে একটি বাস্তব রিলে দেখতে কেমন হয় তা দেখতে পাবো-

সচিত্র রিলে (Relay)

এখানে খেয়াল করলে দেখবো যে এই এটির ৫ টি লেগ/পা/প্রান্ত আছে আর এর গায়ে ছোট ছোট অক্ষরে কিছু জিনিস লেখা আছে। আমরা এখন এই লেখা গুলোর অর্থ বোঝার চেষ্টা করবো।

লেখা গুলোর কোনটার মানে কিঃ

আমরা যদি একটু কাছে থেকে দেখি তা হলে লেখা গুলোকে এমন দেখতে পাবো যা দ্বারা রীলে’র বিভিন্ন মাণ কে নির্দেশ করছে-

লেখা গুলোর কোনটার মানে কি বুঝায়

আগেই বলেছি এটি গঠিত হয় ২টি ভিন্ন অংশ নিয়ে। এই লেখাগুলো দ্বারা এই ২টি ভিন্ন ভিন্ন অংশের ভোল্টেজ, কারেন্ট, রেজিস্টেন্স ইত্যাদি বিভিন্ন মাণ নির্দেশ করে।

আমার এই রীলে টি কতো ভোল্টেরঃ

উপরের চিত্র মোতাবেক যে এর গায়ে ২ রকমের ভোল্টেজ নির্দেশ করছে-
১০ এম্পিয়ার, ২৫০ ভোল্ট এসি / ১৫ এম্পিয়ার ১২০ ভোল্ট এসি – এর দ্বারা এটির আভ্যন্তরীন সুইচের সর্বোচ্চ ভোল্ট-এম্প সহ্য ক্ষমতা নির্দেশ করছে। অপরদিকে, তার ঠিক নিচেই লেখা ১২ ভোল্ট ডিসি (সাথে কিছু নাম্বার) লেখাটি দিয়ে বোঝাচ্ছে এই এর মধ্যে ব্যবহৃত বিদ্যুত চুম্বকীয় কয়েলটি ১২ ভোল্টের। অর্থাৎ, এই Relay এর বিদ্যুৎ চুম্বকীয় অংশে ১২ ভোল্ট কিংবা তার কিছু কম বেশি (১০%-২৫%) প্রয়োগ করলে Relay টি সক্রিয় হয়ে তার সুইচিং কার্য স¤পন্ন করতে পারবে। সাধারণত এগুলো আভ্যন্তরীণ ম্যাগনেটিক কয়েলের ভোল্ট ও তার সুইচিং ধরণ অনুসারে পরিচিত হয় যেমন ১২ ভোল্ট SPDT Relay।

[নোটঃ সাধারণত রীলে গুলো তার ম্যাগনেটিক কয়েলের ভোল্ট ও তার সুইচিং ধরণ অনুসারে পরিচিত হয় ]

[টিপসঃ বাজারে Relay সাধারণত এর লেগ/পিন সংখ্যা দ্বারা বেশি পরিচিত যেমন SPDT Relay – ৫ পিন; DPDT Relay – ৮ পিন পভৃতি। সুতরাং বাজারে গিয়ে ১২ ভোল্ট ৫ পিন Relay চাইলে দোকানী SPDT Relay দিবে। (এর কয়েলের ভোল্ট এর সাথে সুইচের পিন সংখ্যা + কয়েলের পিন সংখ্যা বলতে হবে। যেমনঃ ১২ ভোল্ট ৫ পিন Relay )

রিলে সম্পর্কিত পরবর্তী পাঠ পাবেন এই লিংক থেকে – রিলে কিভাবে কাজ করে ও এর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য (Part-2)

বজ্রপাতে আপনার টেলিভিশন এর সুরক্ষায় বানিয়েনিন প্রোটেক্টর

3
বজ্রপাত অবশ্য পালনীয় বিধান ও টিভি প্রোটেক্টর সার্কিট

বজ্রপাত থেকে টেলিভিশন রক্ষা ও বাঁচার উপায়– প্রতিবছরই শহর কিংবা গ্রামাঞ্চলে বজ্রপাত এ ঘরের বিভিন্ন ধরনের ইলেক্ট্রনিক্স ব্যবহার্য পণ্য নষ্ট হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ডিভাইস টি হচ্ছে আপনার সাধের টেলিভিশন। লেখার শেষে এ থেকে বাঁচার সহজ কিছু উপায় ও যুক্ত করেছি।

বজ্রপাত কি ও কেন হয়?

মূলত বজ্রপাত হচ্ছে মেঘের মধ্যে পুঞ্জীভূত বৈদ্যুতিক চার্জের সমষ্ঠি। যা এতই শক্তিশালী যে বাতাসের ডাই ইলেকট্রিক ইন্সুলেশন প্রোপার্টি (Die electric insulation property) ভেদকরে মাটিতে বা কোনো উঁচু স্থানে আছড়ে পড়ে। বজ্রপাত কে English এ থান্ডার স্ট্রাইক – Thunder Strike বলে।

বজ্রপাত থেকে যন্ত্রপাতি বাঁচানোর উপায়?

শক্তিশালী বজ্রপাত হলে খুব একটা করনীয় কিছু নেই তবে ছোটখাটো বজ্রপাত থেকে আমরা সহজেই রক্ষা পেতে পারি কিছু নিয়ম মেনে চললে যা লেখার শেষে যুক্ত করেছি।

কিছু কিছু জায়গায় দেখা গেছে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন সত্ত্বেও বজ্রপাতের কারনে টেলিভিশন কিংবা মূল্যবান যন্ত্রপাতি’র দফারফা হয়েগেছে। আমি নিজে ব্যক্তিগত ভাবে গত কিছুদিনে প্রায় ১৪ টি টেলিভিশন দোকানে নিতে দেখেছি শুধুমাত্র এই বজ্রপাতের কারণে নষ্ট হয়েছে।

কিন্তু অবাক ব্যাপার হচ্ছে উক্ত একই সময়ে যাদের টেলিভিশন বা মূল্যবান যন্ত্রপাতি বৈদ্যুতিক প্লাগ সকেট থেকে সম্পূর্ণ খোলা ছিল ও ডিশের লাইন নেই তাদের ক্ষেত্রে এটি ঘটেনি। অর্থাৎ বজ্রপাত মূলত বৈদ্যুতিক খুঁটি বাহিত হয়ে ডিশের ক্যাবল কিংবা ইলেকট্রিক তার দ্বারা বাহিত হয়ে যন্ত্রের ক্ষতিসাধন করে। 

সমাধান কি

সমাধান টা খুব-ই সহজ। এমন একটি যন্ত্র লাগানো যার মাধ্যমে এই বৈদ্যুতিক প্লাগের সংযুক্তি ও ডিশ লাইনের সংযুক্তি স্বয়ংক্রিয় ভাবেই বন্ধ হয়ে যায়। নিচে এমনি একটি সার্কিট চিত্র দিচ্ছি-

বজ্রপাত থেকে টিভি রক্ষার জন্য সহজ সার্কিট

এই সার্কিটের মাধ্যমে মাত্র ৪ টি রিলে সুইচ দিয়েই বাঁচাতে পারেন আপনার টিভি।

যন্ত্রের মূল কাজ

মূলত সার্কিটে সংযুক্ত রিলে ২টি আপনার টিভি তে যুক্ত থাকা ডিশের লাইন ও পাওয়ার ক্যাবল প্লাগ কে একই সাথে বিচ্যুত করে দিবে।

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা টিভি কে পাওয়ার প্লাগ থেকে খুললেও ডিশ ক্যাবলের সংযোগ কে খুলতে ভুলে যাই। আর ঠিক সে সুযোগেই বজ্রপাতের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ টিভি’র চ্যানেল বক্স থেকে শুরু অরে মাদারবোর্ড জ্বালিয়ে দেয়।

কিন্তু এই সার্কিট ব্যবহার করলে ছোটখাট বজ্রপাতে আপনার টিভি কিংবা মূল্যবান যন্ত্রপাতি থাকবে সুরক্ষিত। (অন্যকোনো যন্ত্র ব্যবহার করলে ডিশলাইন সংযোগ দেবার অংশটুকু বাদ দিতে পারেন)

রিলে তে পাওয়ার থাকা অবস্থায়-

যখন সার্কিটে পাওয়ার দেয়া থাকবে তখন রিলে গুলো সক্রিয় থাকবার কারণে টিভিতে ডিশ সংযোগ থাকবে নিচের চিত্রে যেমন দেখানো হয়েছে –

রিলে কয়েলে পাওয়ার দেয়া অবস্থায় এর অভ্যন্তরীণ কন্টাক্ট গুলো ডিশের লাইনের সাথে যুক্ত আছে
রিলে কয়েলে পাওয়ার দেয়া অবস্থায় এর অভ্যন্তরীণ কন্টাক্ট গুলো ডিশের লাইনের সাথে যুক্ত আছে

রিলে তে পাওয়ার থাকা অবস্থায়-

অপরদিকে সার্কিট টি অফ থাকলে রিলেও অফ থাকবে নিচের চিত্রানুযায়ী-

রিলে তে পাওয়ার না থাকলে এর কন্টাক্ট গুলো যেভাবে থাকে
রিলে তে পাওয়ার না থাকলে এর কন্টাক্ট গুলো যেভাবে থাকে

রিলে তে পাওয়ার না থাকলে এর কন্টাক্ট গুলো যেভাবে থাকেডায়াগ্রাম অনুযায়ী আপনি ডিশ ক্যাবল আর সাথে পাওয়ার কেবল এর জন্য একই রকম সার্কিট বানিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। যখন বজ্রপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে তখন শুধু  রিলে সুইচ এর পাওয়ার প্লাগ টি খুলে দিলেই হবে, আপনি নিশ্চিন্ত।

উপরোক্ত সার্কিটের মাধ্যমে টিভি’র পাওয়ার প্লাগ বন্ধ হবার সাথে সাথে ডিশ সংযোগ ও বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। আর কোনো কারনে যদি ইলেক্ট্রিসিটি চলে যায় আর যদি আপনি ভুলেই যান, তবুও ভয় নেই। কারন এটি পাওয়ার চলে গেলেই স্বয়ংক্রিয় ভাবেই পরিবর্তন হয়ে যাবে।

এর সাথে চাইলে ৫ মিনিট ডিলে সার্কিট ও ব্যবহার করতে পারেন। এতে জোরদার হলো আপনার টিভির নিরাপত্তা, বৈদ্যুতিক সার্জ থেকেও বাঁচতে পারবেন।

এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে সার্কিট এর ডিশের ক্যাবল থেকে প্রাপ্ত অংশ যতটুকু সম্ভব ছোট রাখতে হবে। নয়ত কিছু চ্যানেল ঝিরিঝিরি আসতে পারে।

ভালো থাকুক আপনার সাধের টিভি।

বিশেষ সতর্কতা মূলক বার্তাঃ

এই সার্কিট টি সম্পূর্ণ রূপে বজ্রপাত নিরোধ করতে পারে না এবং তা আশাকরাও ভুল। প্রাকৃতিক বিভিন্ন দূর্যোগকে সম্পূর্ণরুপে প্রতিহত করতে পারে এমন কোনো কিছুই আবিষ্কার হয়নি।

আমরা যারা ইঞ্জিনিয়ার, গবেষক আছি তাঁরা শুধুমাত্র এসব প্রকৃতিক দূর্যোগ এড়িয়ে চলবার মতো প্রযুক্তিই উদ্ভাবন করি ও করছি। এটিও তেমন প্রয়াস মাত্র।

এর মাধ্যমে ছোটখাটো বজ্রপাত থেকে টিভি রক্ষা পেলেও বড়ধরনের বজ্রপাত আটকাতে পারবে না।

এই সার্কিট তৈরি ও ব্যবহার করে কারো কোনো প্রকার ক্ষতি সাধন হলে ও ব্যবহারকারীর বুঝবার অক্ষমতায় সার্কিট সঠিক ভাবে কাজ না করলে তার দায় লেখক ও সাইট সংক্রান্ত কেউ গ্রহন করবেন না। 

বজ্রপাত থেকে বাঁচার উপায়

দুঃখজনক ভাবে ইদানীং প্রায় স্থানেই বজ্রহতের ঘটনা ঘটছে। সচেতনতার অভব মূলত এরজন্য দায়ী। কিছু সহজ উপায় ও কৌশল মনে রাখলে আমরা এই বজ্রপাতের হাত থেকে অনেকাংশেই রক্ষা পেতে পারি। নিচে কিছু আবশ্যকীয় উপায় তুলে ধরা হলো।

বজ্রপাত প্রবণ মৌসুমে এই সতর্কতা গুলো অবশ্যই পালন করবেনঃ

  1. গুমোট আবহাওয়ার দিনে পারতপক্ষে বাড়িঘর থেকে বের হবেন না। কারণ ঘরের ভিতরে বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে এমন উদাহরণ খুবই কম।
  2. জানালা থেকে দূরে থাকুন। ধাতব বস্তু স্পর্শ করবেন না।
  3. প্রত্যেকের বাড়িঘর বৈজ্ঞানিক উপায়ে বজ্রপাত প্রতিরোধী হিসেবে তৈরি করা উচিৎ। দু’ভাবে বাড়িঘরকে বজ্রপাত প্রতিরোধী করা যেতে পারে।
    ক. বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি বিশেষ করে—ইস্ত্রি, ফ্রিজ, টিভি, কম্পিউটার, এসি, মোবাইল সেট, ওভেনসহ ঘরের বিদ্যুত্ ব্যবস্থাকে সুরক্ষাকরণের জন্য ইলেক্ট্রিকেল আর্থিং করা
    খ. সুউচ্চ গগনচুম্বী দালানকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষার জন্য পুরো দালানকে আর্থিং করা
  4. খোলা আকাশের নিচে যেকোনো উঁচু জিনিসের প্রতি বজ্র বিদ্যুতের চার্জ বা ডিসচার্জ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেখানে লম্বা গাছ (তাল, সুপারি), বিদ্যুত্ ও টেলিফোনের খুঁটি, মোবাইল টাওয়ারসহ যে কোনো ধরনের ধাতব এমনকি বিদ্যুত্ অপরিবাহী/কুপরিবাহী জিনিসও বজ্রের বিদ্যুতকে আকর্ষণ করে। সেজন্য বজ্রপাতের সময় এগুলোর নিচে থাকা যাবে না।
  5. খোলা আকাশের নিচে কিংবা খোলা মাঠে বজ্রপাতের সময় লম্বা শিক/লাঠিযুক্ত ছাতা মাথায় দিয়ে হাঁটা যাবে না, তাহলে ছাতার মাধ্যমে চার্জিত হতে পারেন।
  6. খোলা আকাশের নিচে থাকলে বজ্রপাতের সময় সম্ভব হলে কোনো আশেপাশের ঘরে আশ্রয় নিতে হবে, না পারলে মাটিতে তাত্ক্ষণিক শুয়ে পড়তে হবে। পানির কাছে থাকবেন না, রাস্তায় সাইকেল বা মটরসাইকেলের উপর থাকলে দ্রুত নিরাপদ স্থানে আশ্রয় গ্রহন করুন।
  7. নৌকাতে থাকলে এর লম্বা ছই বা মাস্তুল থেকে দূরে গিয়ে শুয়ে পড়তে হবে
  8. বজ্রপাতের বিদ্যুত্ থেকে প্রায় ১০,০০০ এম্পিয়ার বিদ্যুত্ উত্পন্ন হয় এবং তা থেকে ৫০,০০০ কেলভিন তাপশক্তি রিলিজ হয় মাত্র শতভাগের একভাগ মিলি সেকেন্ড সময়ের মধ্যে। সেজন্যই বজ্রপাতে নিমিষেই মানুষের শরীর পুড়ে ঝাঁজরা হয়ে যায় এবং তা মানুষ বুঝে উঠার আগেই।

উপরোক্ত নিয়মগুলো সঠিকভাবে পালন করলে অনেকাংশেই বজ্রপাতের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। বাঁচানো সম্ভব মূল্যবান প্রাণ। সবার সুন্দর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনায় আজকের মতো বিদায় নিচ্ছি।

সম্পাদনায়ঃ সৈয়দ রাইয়ান

ইলেক্ট্রনিক্সে ফাঁকিবাজী গবেষণা

5

এই পোস্টের টেকনিক সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। শুধুমাত্র নবীন যারা সহজ ও এনালগ সার্কিট নিয়ে কাজ করছেন তাদের জন্য প্রযোজ্য।

এই ফাঁকিবাজীটা এক ধরনের গবেষণাও বলা চলে। সুতরা্ং নো টেনশন। নীচের এই সার্কিট টি দেখি-

ভিন্ন টেকনিক অবলম্বন করে tda2822m দিয়ে প্রস্তুত এম্পলিফায়ার সার্কিট

আপনি এই ছোট এম্পলিফায়ার TDA2822M IC দিয়ে সার্কিট বানাতে গিয়ে দেখলেন আপনার কাছে ৫০ কি ওহম ভেরিয়েবল নেই, ১০০ মাইক্রোফেরাড ক্যাপাসিটর নেই, ১০৪ পিএফ নেই, ৪.৭ ওহম রেজিস্টরও নেই। আইসি টি আছে। আর আছে কাছাকাছি মানের পার্টস। বাজার থেকে তবে ডায়াগ্রাম মিলিয়ে পার্টস কিনবার কোন দরকার নেই। ৫০ কি ওহম ভেরিয়েবলের পরিবর্তে ১০ কি ওহম বা ১০০ কি. ওহম মানের আছে ? নিশ্চিন্তে লিগিয়ে দিন। ১০০ মাইক্রোফেরাড নেই তবে ৪৭ বা ১০ মাইক্রোফেরাড আছে লাগাতে পারেন। ১০৪ পিএফ সহ ৪.৭ ওহম রেজিস্টর নেই – না লাগালেও আমি অসুবিধা দেখি না। সার্কিট কাজ করবে। পারফরমেন্স হয়তো ১০০% পাবেন না তবে কাজ করবে সার্কিট।

এখানে এই টেকনিক অবলম্বন করে আপনার এনালগ যে কোন সার্কিটে কাজ করতে পারবেন তবে পাওয়ার লাইনের কোন রেজিস্টরের ভ্যালু পরিবর্তন করা যাবে না। যেখানে ফ্রিকোয়েন্সী কন্ট্রোলের বিষয় আছে সেখানেও কম্পোনেন্টের মানের পরিবর্তন করা যাবে না করলে সার্কিট সঠিক ভাবে কাজ করবে না মোটেও। 

এই পোষ্টটি তাদের জন্য যারা নতুন তারা কাজ শুরু করতে গ্যালে দেখা যায় একটি বা দুটি পার্টস না পেয়ে হতাশ হয়ে আর কাজই করতে পারে না তবে বিকল্প থাকা সত্বেও না জানবার ফলে বিকল্পের সন্ধানও করতে পারে না। সাহস রেখে কাজ করতে হবে – শিখতে হলে প্রতিনিয়ত বিকল্পের সন্ধানে থাকতে হবে। এভাবেই একটি সার্কিট নিয়ে নানান ভাবে কাজ করতে করতে সার্কিট সম্বন্ধে জানা যাবে। এতে করে নতুন নতুন জিনিস যেমন শিখা যাবে তেমনই শিখতে গ্যালে যে পড়াশোনাটা করতে হবে তার জন্য শিক্ষাটা স্থায়ী হবে। একটি সার্কিটের কোন পার্টস ঐ সার্কিটে কি কাজ করছে তা জনতে পারলে সার্কিটকে পরিবর্তন করা সম্ভব। মনে রাখতে হবে প্রকাশিত সার্কিট অপটিমাম রেঞ্জে কাজ করবার জন্য ডিজাইন করে প্রকাশ করা হয় তার মানে এই সার্কিটে অন্য ভ্যালুর পার্টস দিলেও কাজ করবে তবে তার পারফরমেন্স আলাদা রকম হবে।

তাই একটা পার্টসের জন্য কাজ আটকে আছে বা সার্কিটের কাজে হাত দেওয়া যাচ্ছে না এই হতাশা ঝেড়ে সার্কিট পড়ে ফেলুন – বিকল্প অনুসন্ধান করে কাছাকাছি মানের পার্টস লাগিয়ে কাজে হাত দিন। জয় আসবেই। ধন্যবাদ

পুনশ্চ: সার্কিটের বেসিক না বুঝে উল্টাপাল্টা পার্টস ও কানেকশন দিয়ে সার্কিট নষ্ট করলে লেখক দায়ী নয়। প্রয়োজনে আমাদের ইলেক্ট্রনিক্স ফেসবুক পাতা বা ওয়েবে কমেন্ট করে পরামর্শ নিতে পারেন। 

ইলেকট্রনিক্স শুরু করবার আগের সতর্কতা শিক্ষা

11
ইলেকট্রনিক্স শুরু করবার আগের সতর্কতা শিক্ষা
ইলেকট্রনিক্স শুরু করবার আগের সতর্কতা শিক্ষা

ইলেকট্রনিক্স শেখার আগে সতর্কতা শিক্ষা সবচেয়ে জরুরী। আমরা জানি নিজের হাতে যন্ত্র বানানোর মজাই আলাদা। আর সেটা যদি হয় ইলেকট্রনিক্স কোন যন্ত্র তবে তার মজা আরও বেশী। যারা বিভিন্ন প্রজেক্টে সফল হয়েছেন তারা অবশ্যই স্বীকার করবেন প্রতিটি সফল প্রজেক্ট মন কে ভরিয়ে দেয় এক অনাবিল আনন্দে। আবার সেই সাথে প্রতিটি বিফল প্রজেক্ট দেয় নতুন করে শুরু করবার প্রেরণা। এই সুখ বা শক্তি নিমিষেই ভয়ংকর দুর্ঘটনার ছোবলে বাজে অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করতে পারে আপনাকে যদি আপনার নিরাপত্তা বিধি জানা না থাকে এবং আপনি জানা থাকবার পরও তা পালন না করেন।

সকল বৈদ্যুতিক কাজের সাধারণ একটি নিরাপত্তা বিধি আছে যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এবং অবশ্য পালনীয়। এই শিক্ষা আপনাকে করবে কাজের সময় ও কাজের পরে যন্ত্র কার্যক্ষম থাকার সময় নিরাপদ। এই নিরাপত্তা আপনার এবং আপনার তৈরীকৃত যন্ত্র দুই’য়ের জন্যই জরুরী। অনেকেই শখের বশে কাজ করতে যেয়ে বা অতি সাহসী বা উৎসাহিত হয়ে নিরাপত্তা বিধি না মেনেই কাজ করে থাকেন। এই ধরনের কাজ করবার চেয়ে কোন কাজ না করাই ভালো। নিরাপত্তা বিধি বিহীন যে কোন ইলেকট্রনিক্স কাজ অবশ্যই পরিত্যাজ্য।

সাধারণ কিন্তু অবশ্য পালনিয় কিছু নিরাপত্তা বিধি আজ আমরা জানবো। যা প্রত্যেক ইলেকট্রনিক্স হবিস্টকে অবশ্যই মেনে চলতে পরামর্শ থাকবে। আসুন কি কি করতে হবে জেনে নেই –

  1. পায়ে অবশ্যই রাবার বা বিদ্যুত অপরিবাহী বস্তু দ্বারা তৈরী সোলের জুতা পড়তে হবে।
  2. হাতের কাছে টেস্টার রাখতে হবে এবং সকল সময় কোথাও খালি হাতে সার্কিটে হাত দিতে যাবার আগে সেখানে টেস্টার দ্বারা চেক করে নিতে হবে
  3. হাতে রাবার গ্লোভস পরিধান করা উচিৎ
  4. বৈদ্যুতিক লাইন সঠিক ভাবে গ্রাউন্ডিং আছে কিনা তা পরীক্ষা করে নেওয়া উচিৎ
  5. অভিজ্ঞতা না থাকলে হাই ভোল্টেজ লাইন বা বাড়িতে যে বিদ্যুত সকল কাজে ব্যবহার করা হয় তেমন লাইনে অভিজ্ঞ কারো উপস্থিতি ছাড়া কাজ না করা উচিৎ
  6. লাইনের পজেটিভ নেগেটিভ বা লাইভ নিউট্রাল কখনোই একসাথে সর্ট করা উচিৎ না
  7. কোন কম্পোনেন্ট উল্টো করে লাগানো যাবে না
  8. কোন সার্কিট বানানোর পর কমপক্ষে তিনবার পরীক্ষা করে দেখবার পর সব কিছু সঠিক পাওয়া গ্যালে তারপর কানেকশন দিতে হবে
  9. কোন অবস্থায় ব্যাটারী খুলে ভিতরে কি আছে তা দেখা চলবে না
  10. হাতের কাছে সবসময় পর্যাপ্ত পানি রাখতে হবে কাজ করবার সময়
  11. দ্রুত মেইন লাইন ডিসকানেক্ট করবার ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং সেই সাথে যথাযথ মানের নিরাপত্তা ফিউজ ব্যবহার করতে হবে
  12. একটি ফার্স্ট এইড বক্স খুব জরুরী ( সামান্য তুলা, ব্যান্ডেজ, এন্টিসেপটিক ক্রিম সহ)
  13. জিহ্বা বা শর্ট করে দিয়ে কখনও ব্যাটারী বা লাইনে বিদ্যুত আছেকিনা তা পরীক্ষা করা যাবে না
  14. সোল্ডারিং করবার সময় উৎপন্ন ধোয়া সরাসরি নাকে যাতে না আসে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে
  15. ধারালো বস্তু নিয়ে কাজ করতে হলে সতর্কতার সাথে করতে হবে
  16. সকল টুলস কাজের আগেই পরীক্ষা করে দেখতে হবে সচল ও সঠিক ভাবে কাজ করে কিনা
  17. ঘুম ঘুম ভাব, ক্লান্ত শরীর ও অসুস্থ অবস্থায় কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে
  18. সস্তা পার্টস না খুঁজে মানসম্মত পার্টস ব্যবহার করতে হবে
  19. সব সময় সতর্কভাবে কাজ করতে হবে
  20. কাজের জায়গায় কোন শিশুকে প্রবেশ করতে দিবেন না
  21. অনভিজ্ঞ কারও সাহায্য নিলে সাহায্য নেবার আগে সাহায্যকারীকে ভালো ভাবে বুঝিয়ে তারপর কাজ শুরু করবেন
  22. হাই ভোল্টেজ প্রজেক্ট করবার সময় শরীরের কোন অংশ যেনো কোন অবস্থায় না স্পর্শ পায় সেইব্যাপারে সতর্ক থাকবেন
  23. চোখে পরিস্কার রংয়ের নিরাপত্তা চশমা পরা উচিৎ
  24. বৈদ্যুতিক লাইন সিরিজ কানেকশনে ব্যবহার করা উচিৎ এবং সেই সাথে একটা আলাদা সার্কিট ব্রেকার লাইনের সাথে যুক্তকরে নিলে নিরাপত্তা সংহত হবে।

মনে রাখবেন – আপনি বিদ্যুতের কিছু না জানলেও আপনাকে শক দিতে বিদ্যুত সবসময় প্রস্তুত থাকে তাই কোন প্রকার সাহসীকতা ও ম্যাজিক দেখাতে যাবেন না কোন অবস্থায়ই।

সকল সতর্কতা হয়তো লিপিবদ্ধ হয়নি তবে কমেন্টে কেউ বাদ গিয়েছে এমন সতর্কতামুলক বিষয় আনলে পোস্টে যুক্ত করা হবে। সবাই সতর্কভাবে কাজ করবেন, সুস্থ থাকবেন, নতুন নতুন প্রজেক্ট করে সুখি হবেন। আর অবশ্যই ইলেকট্রনিক্স শুরু করবার আগের সতর্কতা শিক্ষা নিবেন। ভালো থাকুন, নিরাপদে থাকুন সবাই।

কিভাবে শুরু করবেন ইলেক্ট্রনিক্স শিক্ষা

13
ইলেক্ট্রনিক্স শিখতে গেলে কিভাবে শুরু করবো? কোথায় পাবো ইলেক্ট্রনিক্স পার্টস, প্রজেক্ট, সার্কিট ডায়াগ্রাম এসবের উত্তরে আমার অভিজ্ঞতা তুলে ধরছি। ইঞ্জিনিয়ারিং প

ইলেক্ট্রনিক্সের বিভিন্ন গ্রুপে আমরা একটা প্রশ্ন শুনতে পাই নবীন বন্ধুদের কাছ থেকে – গড়পড়তা প্রশ্নটা থাকে, ভাইয়া আমি ইলেক্ট্রনিক্স নিয়ে কাজ করতে চাই আমি কিভাবে কি করবো? এর উত্তরে নানান মানুষ নানান ভাবে জবাব দিয়ে থাকে যার অধিকাংশই আগ্রহী বন্ধুকে বিভ্রান্ত করে এবং তাঁর আগ্রহের টানে ভাটা ফেলে দিতে প্রবল ভুমিকা পালন করে। এই প্রশ্নটির উত্তর দিতে আমি আমার শিক্ষার গল্পদিয়েই শুরু করবো যদিও জানি একেক জনের শুরুটা একেক রকম ভাবেই হয় এবং হয়েছে।

তখন আমি ক্লাস ৯ এ পড়ি। একদিন বন্ধুর বাসায় গিয়ে ইংরেজীতে লিখা একটি বই দেখতে পাই এবং জানতে পারি এটা ইলেক্ট্রনিক্সের উপর একটি বই। বইটি ছিলো আমার বন্ধুর বড় ভাইয়ের। এরপর আমি এই ইলেক্ট্রনিক্স বইটি নিতে চাই এবং শিখবার আগ্রহ প্রকাশ করি। কিন্তু আমি ছোট এবং এইসব জটিল বিষয় আমি পারবো না বলে আমাকে আমার আগ্রহ ত্যাগ করতে পরামর্শ দেওয়া হয়।

তবুও আমি হাল ছেড়ে না দিয়ে বইয়ের বিভিন্ন লাইব্রেরীতে খোঁজ নিতে শুরু করি কিন্তু সবখানেই হতাশ হই। পাঠ্য বইয়ের ইলেক্ট্রনিক্স অংশ (এইচ এস সি ও অনার্স লেভেলের) পড়তে শুরু করি। কিন্তু খুব একটা বুঝতে সক্ষমহই না এবং কাজ শুরু করবার জন্য এইগুলো যে কোন কাজের না সেটা অল্পদিনেই বুঝে যাই।

এরপর আবার সঠিক বই ও মানুষের সন্ধান করার জন্য লেগে থাকি। একদিন পাবলিক লাইব্রেরীতে একটি ইলেক্ট্রনিক্স বই পাই যেখানে অল্প বিস্তর বর্ণনা আছে কিভাবে একটি ট্রান্সফরমারকে কাজে লাগিয়ে এসি থেকে কম ভোল্টের ডিসি বিদ্যুত তৈরী করা যায় সে সম্পর্কে। পার্টসের নাম ও উক্ত ইলেক্ট্রনিক্স সার্কিট ডায়াগ্রাম টি খাতায় তুলে নিয়ে আসি।

এইবার সমস্যা হয় কোথায় এসব ইলেক্ট্রনিক্স পার্টস পাবো তার সন্ধান করাতে। আমার ধারণা ছিলো যারা মেরামতের কাজ করে তারা পার্টস বিক্রয় করে কিন্তু তাদের কাছে কিনতে যেয়ে জানতে পারলাম আলাদা দোকান আছে এবং মেরামতকারীদের সহায়তায় দোকানের ঠিকানা নিয়ে দোকান থেকে পার্টস কিনে আনলাম।

ডায়াগ্রাম মিলিয়ে অতি যত্নে বেশ কয়েকদিন ধরে কোন প্রকার সোল্ডার (ঝালাই করা) ছাড়াই হাত দিয়ে মুচড়িয়ে কানেকশন করতে চেষ্টা করলাম। এরপর এটাকে কোন রকম জোড়া দিয়ে পাওয়ার দিলাম বাসার সবার অগোচরে। টেস্টার ধরে দেখলাম আউটপুটে কোন বাতি জ্বলে না সেই সাথে অনুধাবন করলাম কত ভোল্ট পাচ্ছি তাও দেখতে পারছি না। আবার এটাকে কি কাজে লাগাবো তেমন কোন ধারণাও বের করতে পারছিলাম না প্রয়োজনীয় জিনিসের অভাবে।

আবার ছুটাছুটি – উপায় অন্তর পাই না কোন। ঢাকা থেকে তখন কিছু বিজ্ঞান পত্রিকা বের হতো তা হাতে পেতাম অনিয়মিত এবং একটি বিজ্ঞান পত্রিকাতে কলিংবেলের সার্কিট পেলাম একটি। সেই সার্কিটের সকল যন্ত্রপাতি যোগার করলাম অনেক কস্টে (পার্টসের দাম গত ২০ বছর আগেও এখনকার মতোই ছিলো প্রায় তাতে বুঝা যাবে তখনকার তুলনায় দাম এখন কত কম)। এরপর দেখলাম এটাকে আর হাতে মুচড়িয়ে কানেকশন দেওয়া যাবে না। কিনলাম সোল্ডারিং আয়রন, রাং, একটি নোজ প্লায়ার, একটি ছোট মাল্টিমিটার, একটি ছোট স্পীকার আর কিছু চিকন তার।

শুরু হলো এক যুদ্ধ – মোটা কাগজের উপর ছিদ্র করে তাতে পার্টস বসিয়ে নীচ দিয়ে চিকন তার ঝালাই করে সার্কিট বানানো। কত যে ঝক্কি! প্রায় ১ সপ্তাহের প্রানান্তকর চেষ্টার পর এক বিকালে শেষ করলাম। বাসার টর্চের ব্যাটারী লাগিয়ে প্রথম শুনতে পেলাম নিজের বানানো সার্কিট থেকে মিষ্টি মিউজিক। এখনও সেই অনুভুতি কানে বাজে।

তারপর ঢাকায় আসা – বই জোগার করা – আরও আরও সার্কিট ও ইলেক্ট্রনিক্স প্রজেক্ট বানানো – ভ্যারোবোর্ড, বীমবোর্ডে কাজ করা, পিসিবি বানানো – সরল থেকে জটিল সার্কিটের জগতে প্রবেশ। সেই সাথে পড়াশুনা করা রেজিস্টর, ক্যাপাসিটর, ডায়োড, ট্রানজিস্টর, আইসি ইত্যাদির উপর। সেই থেকে চলছেই – এখনও অনেক পড়ি। এ যেন এক অতল জ্ঞানের সমুদ্র।

আমার গল্প থেকে আপনারা কিছুটা আঁচ করেতে পেরেছেন নিশ্চয়ই কি কি করতে হবে আর কি লাগবে ইলেক্ট্রনিক্স শিখতে। একটা তালিকা করে দেখি আসলে কি কি দরকার –

  • ১। আমাকে শিখতে হবে এমন মনের ইচ্ছা
  • ২। ইলেক্ট্রনিক্সের প্রতি ভালোবাসা
  • ৩। একটি সোল্ডারিং আয়রণ – (শুরুর জন্য ২৫-৪০ ওয়াট যথেষ্ট)
  • ৪। ঝালাইয়ের জন্য রাং, রজন ইত্যাদি
  • ৫। একটি টুল বক্স যাতে প্লায়ার্স, বিভিন্ন ধরনের স্ক্রু ড্রাইভার থাকবে
  • ৬। প্রয়োজনীয় পার্টস ও সার্কিট বানানোর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ (ভেরোবোর্ড/বীমবোর্ড বা প্রজেক্ট বোর্ড ইত্যাদি)
  • ৭। পার্টস সম্বন্ধে পড়াশোনা করবার জন্য প্রয়োজনীয় বই
  • ৮। এবং একবার না পারিলে দেখো শতবার মানসিকতা ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা সম্পর্কে ভালো ভাবে জেনে নেওয়া ও তা পালন করা।

যদি আপনি প্রকৃতই শিখতে চান তবে মনের প্রশ্নগুলোকে বইয়ের পাতাতে খুঁজতে শুরু করবেন – সেখানে বুঝতে সমস্যা হলে যিনি পারেন তার কাছ থেকে বুঝে নেবেন। কিন্তু না পড়ে, এইটা কেনো ভাই বা এইটা কিভাবে হবে বললে কোনদিনও শিখতে পারবেন না। আর যেহেতু এটা একটি সম্পূর্ণ ভাবে হাতে কলমে কাজ তাই হাতে কলমেই কাজ করতে করতে শিখতে হবে।

সাহস করে কাজে নামলে আমরা তো আছিই আপনাকে সাহায্য করতে – আর দেরী না করে কিভাবে শুরু করবো ভাবনা দুরে রেখে নেমে পড়ুন কাজে।