অনেকেই দেখেছেন (বিশেষত ইউরোপ আমেরিকায়) যে বাড়ির সিড়িকোঠায়/গ্যারেজে বা কম্পাউন্ডে অটো কিছু সুইচ আছে যা মানুষের উপস্থিতি টের পেয়ে জ্বলে উঠে। কিংবা দোকান বা বাসাবাড়িতে কেউ প্রবেশ করলে এলার্ম সাউন্ড হয়। আজকাল অনেক প্রক্রিয়া এটি সম্ভব। যেমন সি সি ক্যামেরা, এমনকি এন্ড্রয়েড বেসড ফ্রি এপ আছে যে গুলা এই কাজ করে দিতে পারে। সিসি ক্যামেরা বা এন্ড্রয়েড এপে ক্যামেরা বা মাইক্রোফোনের ইনপুট প্রসেসিং করে সফটওয়্যার দিয়ে এই কাজটি করা হয়। কিন্তু এগুলার কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। যেমনঃ ক্যামেরা অন্ধকারে কাজ করেনা (সিসি ক্যামেরায় আই আর অবশ্য অন্ধকারেও দেখে, কিন্তু আই আর এর আলো দেখে ক্যামেরা সনাক্ত করা যায় যা সিকিউরিটির ক্ষেত্রে বিপদজনক)। কিংবা লো সাউন্ডও অনেকসময় ডিটেক্ট হয়না (হাই পাওয়ার দিয়ে করা যায়)। কিন্তু আমরা হার্ডওয়্যার বেসড (পির সেন্সর/মোশন সেন্সর দিয়ে) একটি ডিটেক্টর বানাব যা খুবই কম খরচ, সফটওয়্যার ছাড়াই কাজ করে এবং সাধারন ভাবে ডিটেক্ট করা যায়না। এটি মানুষের নড়াচড়া সহজেই ধরতে পারে।
আমাদের এই সার্কিটের মূলে রয়েছে পির (PIR= Passive Infrared Sensor) সেন্সর। আমরা বিজ্ঞান থেকে জানি (বিকির্ণ) তাপ আর আলো একই শক্তি। শুধু ফ্রিকোয়েন্সি ভিন্ন। আমাদের চোখ উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি ডিটেক্ট করে যাকে আমরা বলে আলো। আর ত্বক লো ফ্রিকোয়েন্সি ডিটেক্ট করে যাকে আমরা বলি তাপ। যখন কোন একটা বস্তু সামান্যও গরম হয় তা থেকে তাপ/আলো বিকরিত হয়। কোন কোন বিকিরন এত কম যে আমাদের ত্বক তা ডিটেক্ট করেনা। কিন্তু ইলেকট্রনিক যন্ত্র দিয়ে তা ঠিকই বের করা সম্ভব। যেমন জীবিত প্রানির দেহের উত্তাপও বিকিরিত হয়। সাধারন ভাবে আমরা তা বুঝিনা (একত্রে অনেক লোক ঠাসাঠাসি করে থাকলে টের পাওয়া যায়)। এই সামান্য বিকির্ণ তাপ লাইট স্পেকট্রামের (বর্নালী সারনী) লাল আলোর নীচের সারনিতে ফেলা হয় তাই একে Infra (নীচ) Red (লাল), বা সংক্ষেপে IR বা অবলোহিত আলো বলে। পির সেন্সর এই আই আর ডিটেক্ট করে। তাই এই পির বা মোশন সেন্সর দিয়ে মানুষের নড়াচড়া সহজেই ধরা সম্ভব।কিন্তু PIR বা পির প্যাসিভ (নিস্ক্রিয়) সেন্সর, এক্টিভ (সক্রিয়) সেন্সর নয়। এটি আই আর এর মাত্রা নির্ধারন করেনা। সে শুধু আই আর এর তারতম্য নির্ধারন করতে পারে (যেমন, আমাদের ত্বক কত ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তা বলতে পারেনা, কিন্তু দুটি বস্তুর মধ্যে কোনটি তে তাপ কম/বেশী তা বলতে পারে)।
পির সেন্সর ফ্রেম বাই ফ্রেম আই আর এর তুলনা করে। যেমন প্রথম ফ্রেম ১ম সেকেন্ডে ২য় ফ্রেম ২য় সেকেন্ডে। কিংবা ১ম ফ্রেম ১ম সেকেন্ড ২য় ফ্রেম ৫ম সেকেন্ড ইত্যাদি। ফ্রেম টু ফ্রেম আই আর মাত্রার ভিন্নতা দেখা দিলে সে একটা সিগনাল তৈরী করে, অন্যথায় কোন সিগনাল জেনারেট হয় না। চিত্রে একটা পির সেন্সর মডিউল দেখানো হয়েছে। একটাতে গ্রাউন্ড (সাপ্লাই [-]) আরেকটায় Vcc (সাপ্লাই [+])। মাঝের পিনটা সিগনাল পিন (হাই= ৩.৩ ভোল্ট, লো = ০ ভোল্ট)। সেন্সরটিতে দুইটা পট (POTential control) আছে যা ঘুরিয়ে একে ফাইন টিউন করা যায়।
Sx: সেন্সিটিভিটি কন্ট্রোল। এটি ঘুরিয়ে পির সেন্সরের সংবেদনশীলতা কম বেশী করা যায় (কত ঘনঘন ফ্রেমের তুলনা করবে ০.০০ থেকে ১০ সেকেন্ড)। বেশী সেন্সিটিভিটি মানে অল্প মুভমেন্টেই সিগনাল জেনারেট হবে।
Tx: এটি টাইমার কন্ট্রোল। মানে একবার সিগনাল জেনারেট হলে সিগনাল পিন কতক্ষন হাই থাকবে (৫ থেকে ৩০০ সেকেন্ড)। বেশী করা মানে সিগনাল পিন বেশীক্ষন হাই থাকবে ।
এছাড়া অনেক কম্পানির পির সেন্সরে একটি জাম্পার সেটিং থাকে।
H: রিপিট ট্রিগারঃ এই সেটিং মুভমেন্ট চলতে থাকলে ট্রিগারিং বার বার হতে থাকে ফলে হাই অবস্থা প্রলম্বিত হয়।
L: সিংগেল ট্রিগারঃ এই সেটিং মুভমেন্ট চলতে থাকলেও ট্রিগারিং এক বারি হয় ফলে হাই অবস্থা কেবল Tx টাইম পর্যন্তই হয়।
পির সেন্সরের (মূল সেন্সরটি যেটি পাইরোইলেক্ট্রিক সেন্সর তা ছোট স্কয়ার জানালা যুক্ত তিন পায়া মেটাল কেসিং-এ দৃষ্টির আড়ালে থাকে) উপর সাদা একটা লেন্স বসানো থাকে যেটি বিভিন্ন এঙ্গেলের আই আর (IR) সংগ্রহ করে ভিতরে থাকা সেন্সরে পাঠায়। সাধারনত এর এঙ্গেল ১১০ ডিগ্রি হয়। (দামী গুলায় আরো বেশী হয়।) আর কম দামী গুলায় সেন্সিং ডিষ্টেন্স/দুরত্ব ১০ মিটার (সর্বোচ্চ, আসলে আরো কম)।
পির মোশন সেন্সরসার্কিট একটি অতি সরল সার্কিট। গ্রাউন্ড পিন আর সিগনাল পিন (+৩.৩ ভোল্ট) ব্যবহার করে সহজেই একটা লেড (LED) জ্বালানো যায়। প্রথম চিত্রে সেটি দেখানো হয়েছে। আমরা যদি মিডিয়াম ভোল্টেজ ডিসি লোড (৫০ ভোল্ট পর্যন্ত) চালাতে চাই তাহলে একটি ট্রানজিস্টর ই যথেষ্ঠ আর যদি আরো হাই ভোল্ট বা/এবং এসি চালাতে চাই তাহলে ট্রানজিস্টর ও রীলে ব্যবহার করা উচিত।
এই বার Sx, Tx ঘুরিয়ে ইচ্ছামত সেটিং ঠিক করে নাও।
মনে রাখবেঃ
# Sx ঘুরিয়ে সেন্সিভিটি বাড়ার সাথে সাথে সেন্সরের কভারিং ডিস্টেন্স কমে আসে।
# মডিউল ভেদে এটি ৫ ভোল্ট থেকে ১৫ ভোল্ট পর্যন্ত সাপ্লাই দেয়া চলে। অবশ্যই তোমার মডেলের সাপ্লাই ভোল্টেজ অনলাইনে বা দোকান থেকে শিউর হয়ে নিবে।
# দোকানে গিয়ে পির মডিউল কিনবে, পির সেন্সর না। পির সেন্সর কিনলে অনেক কিছু এড করতে হবে ফলে বর্নিত মোতাবেক প্রজেক্ট করা যাবেনা।
# পির মডিউল উজ্জ্বল আলো (ডাইরেক্ট সুর্যালোক) মধ্যে স্থাপন করা যাবেনা নাইলে পির সেন্সরের চোখ ধাধিয়ে যেতে পারে। ছায়া যুক্ত স্থানে (অন্ধকারে কোন সমস্যা নেই) লাগানো সর্বোত্তম।
# পির মডিউল প্রথম সুইচ অন করার পর ১ মিনিট পর্যন্ত সময় নেয় আশে পাশের পরিবেশকে চিনতে। এই সময় ফলস ট্রিগারিং হতে পারে। তাই ১ মিনিট পর থেকে তা সঠিক ভাবে কাজ করবে।
অনেকসময় একটা পির সেন্সর পুরো এরিয়া কভার করতে পারেনা সেক্ষেত্রে একাধিক পির সেন্সর একত্র জুড়ে দেয়া যায় তবে প্রতিটার সিগনাল পিনে একটা ডায়োড লাগানো উচিত যাতে একটার কারেন্ট আরেকটায় প্রবেশ না করে। আর প্রতিটা পির সেন্সরের টাইমিং ও একই করা উচিত।
সিকিউরিটি লাইট (যেমন সিড়ির লাইট) ইত্যাদি দিনের বেলা প্রয়োজন পড়েনা। শুধু রাতে এবং একই সাথে লোকের উপস্থিতিতে জ্বালানো প্রয়োজন পড়ে। সেক্ষেত্রে একটি ডার্ক সেন্সর বা লাইটসেন্সর এর সাথে এই সেন্সর এড করে দেয়া যায়। যাতে শুধু রাতের বেলা পির যুক্ত সিকিউরি লাইট অন থাকে।
আপাতত এই প্রজেক্ট এখানেই শেষ। আশাকরি তোমরা সহজেই এটি বানাতে পারবে।
ইলেক্ট্রনিক্সের মজার প্রজেক্ট নামে একটি ধারাবাহিক লেখা শুরু করতে চাচ্ছি। চেষ্টা করব ধারাবাহিক ভাবে ছোট খাট ইলেক্ট্রনিক্স কিছু প্রজেক্ট ধারাবাহিক ভাবে উপস্থাপন করতে। যাতে নবীন শিক্ষার্থীরা মজার সাথে ইলেক্ট্রনিক্স শিখতে পারে। চাইলে বিভিন্ন বিজ্ঞান মেলায়/ বন্ধু মহলে এই প্রজেক্টগুলা উপস্থাপন করে দর্শকদের বাহবা পেতে পার (#মূলত ছোটদের টার্গেট করার কারনে তুমি বা তুমি সংক্রান্ত সম্বোধন বাছাই করা হল, আশা করি বড়রা এতে কিছু মনে করবেনন না) । সংশ্লিষ্ট ডাটা/কার্য পদ্ধতি ও মূলনীতিও উপস্থাপন করার চেষ্টা থাকবে, যাতে শুধু মুখস্থ নয় বুঝে শুনে তোমরা প্রজেক্টগুলা করতে পার। জানার কিছু থাকলে কমেন্ট অপশনতো রইলই।
ডিসক্লেইমারঃ
এই প্রজেক্টগুলা টেষ্টেড এবং কার্যকরী বলে প্রমানিত। কিন্তু লেখক প্রজেক্ট বাস্তবায়নের কোন দায় (লাভ/লোকসান/ দুর্ঘটনা ইত্যাদি) নিতে অপারগ। বিদ্যুৎ নিয়ে কাজ বিশেষত উচ্চ ভোল্টেজের কাজ (ডিসি/এসি যাই হোকনা কেন) অত্যন্ত ঝুকিপূর্ন। বিদ্যুত নিয়ে কাজ করার সতর্কতা অবলম্বন বাঞ্ছনীয়। এই প্রজেক্টগুলি, যদিও কোন বাধ্যবাধকতা নেই, তার পরও কোন এক্সপার্ট তত্ত্বাবধায়কের অধীনে করতে পারলে দ্রুত ও বেশী কার্যকরী হবে।
প্রজেক্ট-১ : ডার্ক সেন্সর (লাইট সেন্সর)
এই সার্কিটটির মূলে রয়েছে LDR (Light Dependent Resistor) নামক একটি রেজিস্টর (ফটো রেজিস্টর বলে)। যাকে দিয়ে একটি লাইট বা ফটো সেনসিটিভ সুইচিং সার্কিট করা যায়। সাধারনত অন্ধকারে এর রোধ অনেক উচ্চ কিন্তু এই রেজিস্টর উপর আলো পড়লে এর রোধ নাটকিয় ভাবে হ্রাস পেয়ে (প্রায়) পূর্ন পরিবাহির পর্যায়ে চলে আসে। এই ধর্মটিকে কাজে লাগিয়ে সুইচিং সার্কিটকে সুইচ (অন/অফ) করা হয়। লাইট সেন্সর/ডার্ক সেন্সরঃ LDR দিয়ে দুটোই বানানো যায়, যার যেটা প্রয়োজন। শুধু কানেকশন এদিক সেদিক করে এই পরিবর্তন করা সম্ভব। তবে ডার্ক সেন্সর (অন্ধকার হলে অন হয়) বেশী জনপ্রিয়। তাই আমরা ডার্ক সেন্সরই তৈরী করব । চেষ্টা করব হিন্টস দিতে যাতে একে লাইট সেন্সরে পরিনত করা যায়।
দ্রষ্টব্যঃ
বুঝতে হলে ভোল্টেজ ডিভাইডার সার্কিট সম্পর্কে ধারনা থাকা দরকার।
প্রজেক্টের এই LDR গুলায় আলো পড়লে রোধ কমে। বাজারে কিছু ফটো রেজিস্টর বা ফটো ট্রানজিস্টর থাকতে পারে যা এর উলটা কাজ করে (আলো পড়লে রোধ বাড়ে)। তাই মাল্টি মিটারে টেস্ট করে বা দোকানিকে দিয়ে শিউর হতে হবে যে এটিতে আলো পড়লে রোধ কমে টাইপের কি না।
এক্সপেরিমেন্টাল সার্কিটঃ
নিচে একটি ডার্ক ডিটেক্টরের জন্য এক্সপেরিমেন্টাল সার্কিট দিচ্ছি।
ডার্ক সেন্সরঃ
খুবই সিম্পল এই সার্কিটটিতে একটি LDR একটি ট্রানজিস্টর দিয়ে তৈরী। এই সার্কিটটিতে একটা LDR একটা ভ্যারিয়েবল রেজিস্টর মিলে ভোল্টেজ ডিভাইডার সার্কিট তৈরী করা হয়। দিনের বেলা LDR এর রোধ খুব কম থাকায় বেশী ড্রপ হয় ভ্যারিয়েবল রেজিস্টরে ফলে ট্রানজিস্টরের বেস বায়াস না পাওয়ায় ট্রানজিস্টর অফ অবস্থায় থাকে ফলে সংযুক্ত লেড (LED) টি জ্বলেনা। কিন্তু রাতে LDR এর রেসিষ্ট্যান্স অত্যন্ত বেশী থাকায় ভোল্টেজ ড্রপ হয় LDR এর সাইডে। ফলে বেস বায়াস পাওয়ায় ট্রানজিস্টর টি অন হয়ে লেড জ্বালিয়ে দেয়।
LDR আর ভ্যারিয়েবল রেজিস্টর এর অবস্থায় অদল-বদল করে।
NPN এর যায়গায় PNP ট্রানজিস্টর ব্যবহার করে ৩য় ছবির মতো করে (লেডের অবস্থান লক্ষ্যনীয়)।
LDR দিয়ে প্রাক্টিক্যাল সার্কিটঃ
আগের ডার্ক/লাইট সেন্সরটিতে দুইটা সমস্যা আছে।
প্রথম সমস্যা হলো ঐ সার্কিট দিয়ে ছোট লোড (যেগুলা অল্প কারেন্টে চলে যেমন লেড) ছাড়া আর কিছু (ফ্যান, লাইট ইত্যাদি) কন্ট্রোল করা যায়না। কারন আমরা যে ট্রানজিস্টর ব্যবহার করেছি তার পাওয়ার রেটিং অনেক কম। দুই ভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়।
প্রাক্টিক্যাল সার্কিটের সুইচিং সমস্যা ও সমাধানঃ
# পাওয়ারট্রানজিস্টর বা সুইচিং ডিভাইস ব্যবহারঃ এই পদ্ধতিতে ডিভাইস গুলিকে হাই পাওয়ার রেটিং করতে হবে যা ব্যায়বহুল, কষ্টসাধ্য ও বিপদজনক। এই পদ্ধতি ব্যবহার হয়না বললেই চলে।
# রিলের ব্যবহারঃ এই পদ্ধতিতে সার্কিটটাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। একসাইডে লো পাওয়ার ডিসি কন্ট্রোল সার্কিট। অন্য দিকে হাই পাওয়ার এসি/ডিসি লোড সার্কিট। এই দুই সার্কিটের মধ্যস্থতা করে একটি ছোট ডিভাইস যাকে রিলে বলে। রিলে বিভিন্ন প্রকার হয়
১) ইলেক্ট্রোমেকানিকালঃ
ইলেক্ট্রোম্যাগনেটের দ্বারা মেকানিকাল সুইচ অন অফ করে । কম স্পিডে অন অফ করার জন্য তৈরী (সেকেন্ডে ৫০/১০০ বার বা তার কম)
২) সলিড স্টেটঃ
কোন মেকানিকাল পার্টস নাই। সেমিকন্ডাকটার পদার্থ দিয়ে তৈরী। হাই স্পিড অন/অফ করে (সেকেন্ড হাজার বার থেকে লক্ষ্য বার বা তার বেশী)
রিলে সম্পর্কিত কিছু তথ্যঃ
সাধারন অন/অফের জন্য ইলেক্ট্রোমেকানিকাল রিলেই যথেষ্ঠ। আমাদের সেকেন্ডে কেবল একবার হলেও কাজ চলেবে। তাই ইলেক্ট্রোমেকানিক্যাল রিলেই ব্যবহার করব। বাজারে ৩, ৫, ৬, ৯, ১২, ২৪ ইত্যাদি কন্ট্রোল ভোল্টের রিলে পাওয়া যায়। ভোল্ট গুলা হলো কন্ট্রোল ভোল্টেজ। অর্থাৎ রিলেকে অন অফ করাতে কন্ট্রোল সাইডে যে সর্বনিম্ন ডিসি ভোল্টেজ দিতে হবে তা। উল্লেখিত ভোল্টেজের নিচে রিলে কাজ নাও করতে পারে।
হাই লোড অংশের ভোল্টেজ ও এম্প রেটিং ও জানা দরকার। হাই লোড অংশে ডিসি না এসি ভোল্টেজ খেয়াল করতে হবে। এসি ভোল্টেজ ২৫০ হলে বাসাবাড়ির লোড (ফ্যান, লাইট ) ইত্যাদি কন্ট্রোল করা সম্ভব। হাইলোড সাইডের এম্প রেটিং অনেক গুরুত্বপূর্ন। একটা রিলে দিয়ে কতগুলা যন্ত্র বা কত পাওয়ারফুল যন্ত্র নিয়ন্ত্রন করা যায় তা জানতে এম্প রেটিং জানতে হবে। একটা/দুইটা ফ্যান বা লাইট এর জন্য ৫এম্প (5A) যথেষ্ঠ। কিন্তু ৫ টা লাইট বা ফ্যানের জন্য তা যথেষ্ঠ নাও হতে পারে সেক্ষেত্রে ১০ এম্প নেয়া উচিত। আবার বাসার একটা পাম্পের জন্য ৩০ এম্প দরকার হতে পারে।
রিলের টার্মিনাল সমূহঃ
সাধারন ইলেক্ট্রো মেকানিকাল রিলেতে ৫ টার্মিনাল থাকে।
#দুইটা ডিসি কন্ট্রোল টার্মিনাল (+ ও -): এটা দিয়ে রিলের কয়েলে কন্ট্রোল ভোল্টেজ দেয়া হয়। উলটা পালটা হলে সমস্যা নাই যে কোন টার্মিনালে (+) বা (-) দেয়া যাবে। উপরের ছবিতে COIL হিসেবে চিহ্নিত।
NO (Normally Off / Open): এই টার্মিনালটি কন্ট্রোল ভোল্টেজ না পেলে বন্ধ থাকে। কন্ট্রোল ভোল্টেজ পেলে চালু হয়। এটি দিয়েই মূলত আমরা অন/অফ করব।
NC (Normally Connected / Closed) : এটি NO এর উলটা। অর্থাৎ কন্ট্রোল না থাকলে চালু থাকে আর কন্ট্রোল ভোল্টেজ পেলে অফ হয়। এটি সাধারন ভাবে ব্যাবহার হয়না। তবে যদি আমরা ডার্ক সেন্সর বানাতে গিয়ে ভুলে লাইটসেন্সর বানিয়ে ফেলি এটিতে কানেক্ট করলে বিকল্প পদ্ধতিতে আমাদের ভূলটা কারেকশন করা যাবে (উল্টাটাও সত্য মানে লাইটসেন্সর -> ডার্ক সেন্সর করা যাবে)
আমরা নিচের সার্কিট দিয়ে বাসার বাতি, ফ্যান অন্যান্য লোড চালাতে পারব কারন এখানে একটি রিলে ব্যাবহার করে ডিসি/এসি হাইলোডকে কন্ট্রোল করতে পারি।
* রিলের সাথে অবশ্যই প্রদর্শিত ডায়োডটি যেমন দেখানো সেভাবে লাগাতে হবে (রিভার্স/উল্টা বায়াসে, সাধারনত সার্কিটে আমরা ফরওয়ার্ড/সম্মুখ বায়াসে লাগাই কিন্তু রিলের সাথে লাগাতে হয় রিভার্স বায়াসে)।
* রিলেযুক্ত সার্কিটে হাইভোল্টেজ এসি ব্যাবহৃত হবে যা খুবই বিপদজনক। হাই ভোল্টেজবিদ্যুৎ সম্পর্কে যাদের ধারনা কম তারা রিলে দিয়ে এসি সার্কিট বানাবে না।
রিলে সার্কিটে বাইপাস ডায়োদের গুরুত্বঃ
এই ডায়োডটি একটি বাইপাস ডায়োড। ম্যাগনেটিক রিলে যখন অফ হয় তখন তার কয়েলে মূল প্রবাহের বিপরিত মূখি একটা কারেন্ট (ব্যাক ই এম এফ) তৈরী হয়। এটাকে সরাসরি সার্কিটি যেতে দিলে আমাদের ট্রানজিস্টর বা সেন্সেটিভ ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে তাই ডায়োড দিয়ে একে বাইপাস করে নিস্ক্রিয় করা হয়। তাই অবশ্যই মনে রাখতে হবে ম্যাগনেটিক রিলে ব্যবহার করলে এর কয়েলে রিভার্স বায়াসে একটি ডায়োড (যে কোন মানের) লাগাতে হবেই।
সেন্সর সার্কিটের সংবেদনশীলতাঃ
আমাদের এখনকার সার্কিট দিয়ে মোটামুটি কাজ চালানো গেলেও এর সংবেদনশীলতা অনেক কম। মানে প্রখর আলো বা নিকশ অন্ধকার ছাড়া এটি কাজ করতে চায়না। তাই একে সাধারন ষ্ট্রিট লাইট কন্ট্রোলে ব্যবহার করতে গেলে সমস্যায় পড়তে হয়। যেমন ভোরে আলো ফোটার পরও বাতি বেশ অনেক্ষন জ্বলে থাকে আবার সন্ধ্যা হয়ে যাবার পরও সহজে জ্বলতে চায়না। তাই এর সংবেদনশীলতা বাড়ানো প্রয়োজন। খুব সহজ একটা মডিফিকেশনের মাধ্যমে আমরা এটি করতে পারি। পরের চিত্রে দেখা যাচ্ছে আমরা দুটি ট্রানজিস্টর ব্যবহার করেছি। আরো একটু সংবেদনশীলতা বাড়াতে আরেকটি ট্রানজিস্টর যুক্ত করা যায় (পরের চিত্র)। কিন্ত এভাবে ট্রানজিস্টর আর বাড়াতে থাকলে সংবেদনশীলতা আর বাড়বেনা।
শুধু ট্রানজিস্টর দিয়ে তৈরী সার্কিটের একটা সমস্যা হলো রিলে চ্যাটারিং। খুব ভোরে বা গোধুলিতে আলো যখন অল্প থাকে তখন ট্রাঞ্জিষ্টার বেসড ডার্ক সেন্সর গুলি সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে, যে রিলে অন করবে না অফ করবে।
এই সময় অনেকবার দ্রুত রিলে অন অফ হতে থাকে (চ্যাটারিং মানে বাচলতা বা সোজা বাংলায় কট কট করা – রিলে সুইচিং এর সময় কট করে আওয়াজ হয় দ্রুত অন অফ হলে কট কট আওয়াজ হয় একেই রিলের চ্যাটারিং বলে)।
এই চ্যাটারিং দূর করার উপায় হলো এমন এক সার্কিট যা দ্রুত সিদ্ধান্ত দিতে পারে। মাইক্রোকন্ট্রলার এক্ষেত্রে ভাল সমাধান হতে পারে। ডিজিটাল এই পদ্ধতি, কিন্তু তা মশা মারতে কামান দাগার মতো অবস্থা। এনালগ পদ্ধতিতে এর একটা ভাল সল্যুশন হলো অপ-এম্প বা কম্পারেটরের ব্যবহার।
অপ-এম্প (Operational Amplifier) একটি ছোটখাট এমপ্লিফাইয়ার যা দুই ইনপুটকে তুলনা করে বড় না ছোট সিদ্ধান্ত দিতে পারে। শেষের চিত্রে অপ-এম্প সার্কিট দেখানো হয়েছে।
যে কনফিগারেশনে অপ-এম্পটি লাগানো তাতে তা ২ আর ৩ এর ভোল্টেজ তুলনা করে ৬ নং দিয়ে সিদ্ধান্ত (ভোল্টেজ) দেয়। ৩ নং পিনে ভোল্টেজ ২ নং এর চেয়ে বেশি হলেই কেবল ৬ নং দিয়ে আউটপুট ভোল্টেজ পাওয়া যায়।
তাই দিনে LDR রেসিষ্ট্যান্স কম থাকায় প্রচুর ভোল্টেজ ২ নং পিনে যায় যা ৩ থেকে বেশী থাকায় ৬ নং পিনের আউটপুট শুন্য থাকে যা ট্রাঞ্জিষ্টরকে অফ করে রাখে। কিন্তু রাতে উলটে যায় মানে ২ নং পি্ন থেকে ৩ নং পিনে বেশী ভোল্টেজ এসে ৬ নং এ আউটপুট দেয় যা ট্রানজিস্টর ড্রাইভ করে অন করে। আর ট্রাঞ্জিষ্টর রিলেকে অন করে হাইলোডকে অন করে। এই পদ্ধতিতে চ্যাটারিং থেকে নিস্তার পাওয়া যায়।
প্রশ্ন হতে পারে শুধু অপ এম্পদিয়েই তো রিলে ড্রাইভ করানো যেত। কিন্তু অপ-এম্পের কারেন্ট রেটিং অনেক কম থাকে (২৫ মিলি এম্প) ঐ কারেন্ট দিয়ে রিলের কয়েল ম্যাগনেটাইজ হয় না তাই ট্রানজিস্টর সাহায্য নিতেই হয়।
তবে শুধু একটি মাত্র আইস দিয়েও (যা মধ্যে অপ-এম্প + রিলেড্রাইভার বিল্ট ইন আছে) এটি বাস্তবায়ন করা যায় অত্যন্ত এফিশিয়েন্ট ভাবে। আর সেটিই আমাদের এই প্রজেক্টের চুড়ান্ত সার্কিট, যা পরবর্তিতে আলোচ্য।
আমার হিসাবে বেস্ট ডার্ক সেন্সর হলো ৫৫৫ আইসি দিয়ে তৈরী। ৫৫৫ একটা মজার আইসি যাকে অনেকে টাইমারআইসিও বলে (টাইমার বানাতে বহুল ব্যবহৃত বলে)। এটি দিয়ে অসংখ্য ও নানা ধরনের প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করা যায়। এর দামও সামান্য আর সর্বত্র পাওয়াও যায়। আমরা পরবর্তি প্রজেক্ট আলোচনায় ৫৫৫আইসির কার্য পদ্ধতি নিয়ে সবিস্তারে আলাপ করব। আমরা এই প্রজেক্টে ৫৫৫ এর শুধু প্রাসঙ্গিক দিক নিয়ে আলাপ সাড়ব।
এই প্রজেক্টের মূলে রয়েছে একটি ৫৫৫ আইসি। যার ৮ টি পা আছে। চিত্রে যে ভাবে পা গুলা সাজানো আছে বাস্তবে ওভাবে না থেকে সিরিয়ালি (১,২,৩ ইত্যাদি ২ নং চিত্র) থাকে; সরলতার খাতিরে পরের চিত্রে পা গুলি দরকার মতো দেখানো হয়েছে।
# R1=10k ভ্যারিয়েবল রেজিষ্টর, ট্রিগার কম বেশি করার জন্য
# R2 = সেনসিটিভিট বাড়ানোর জন্য। অপশনাল, ব্যবহার করব না। ব্যবহার না করায় ৭ নং পিন ডিসকানেক্টেড থাকবে।
# c1 = স্পাইক বাইপাস। সুইচিংএর সময় ৫৫৫আইসিতে স্পাইক তৈরী হলে এটি দিয়ে বাইপাস করে। (অপশনাল বাট ব্যবহার করার জন্য বিনিত পরামর্শ দেয়া হলো)। না ব্যবহার করলে ৫ নং পিন ডিসকানেক্টেড থাকবে।
# ১নং পিন = গ্রাউন্ড পিন বা সাপ্লাই (-) টার্মিনাল যুক্ত হবে।
# ৮ নং পিন = Vcc বা সাপ্লাই (+) টার্মিনাল যুক্ত হবে। ৫- ১৫ ভোল্ট কানেক্ট করা যায়। তবে ৫ ভোল্টে অনেক আইসি কাজ করেনা তাই ভোল্টেজ ৯, ১২,১৫ ইত্যাদি হলে ভালো।
# ৩ নং পিন = আউটপুট পিন, যা দিয়ে রিলে ড্রাইভ করবে। এটি ২০০ মি এম্প কারেন্ট প্রদান বা গ্রহন করতে পারে আর (Vcc -1.5) ভোল্ট সাপ্লাই দেয়। যা কিনা রিলে বা ছোট ডিসি মটর চালানোর জন্য যথেষ্ঠ।
# ৪ নং পিন = রিসেট পিন, যাতে গ্রাউন্ড পিনের ছোয়ায়, ৫৫৫ আইসি রিসেট হয়। আমরা যেহতু কোন অবস্থায়ই রিসেট করবো না তাই এটি সব সময় Vcc যুক্ত থাকবে।
# ২ নং পিন = ট্রিগার পিন, বা সেট পিন। যাতে নির্দিষ্ট ভোল্টেজের নিচে দিলে ৫৫৫ আইসি সেট করে (পরে আলোচ্য)
# ৬ নং পিন = থ্রেশহোল্ড পিন, যাতে নির্দিষ্ট ভোল্টেজের উপর গেলে ৪ নং পিনের মতো আচরন করে অর্থাৎ আইসিকে রিসেট করে (পরে আলোচ্য)
৫৫৫ সার্কিটের কার্যপ্রণালীঃ
৫৫৫আইসিকে বহুভাবে ব্যবহার করা যায়, যেমন টাইমার, টগল সুইচ ইত্যাদি। বর্তমানে আমরা একে একটি কন্ট্রোলড টগল সুইচ হিসাবে ব্যাবহার করব। যাতে ২ আর ৬ নং পিন ব্যাবহার হবে; আর পিন ৩ হবে আউটপুট। বাকি পিন যেভাবে সংযুক্ত সেভাবে বেকার বসে থাকবে। ৫৫৫আইসির টগলের মুলে আছে সেট/রিসেট।
সেট হয়ঃ ২ নং পিনের ভোল্টেজ যদি 1/3 x Vcc এর কম হয় ( যেমন Vcc=12 volt হলে ২নং পিন ভোল্ট 4 ভোল্টের কম হলে)।
রিসেট হয়ঃ ৬ নং পিনের ভোল্টেজ যদি 2/3 x Vcc এর বেশী হয় (যেমন Vcc= 12 volt হলে ৬ নং পিনের ভোল্ট 8 (৮) ভোল্টের বেশী হলে)
চিত্রে দিকে তাকালে দেখা যায় যে আগের মতো LDR, ভ্যারিয়েবল রেসিষ্টর একটা ভোল্টেজ ডিভাইডার সার্কিট তৈরী করে।
দিনের বেলাঃLDR এর রেজিস্ট্যান্স প্রায় শুন্য তাই সব ভোল্টেজ ড্রপ হয় ভ্যারিয়েবল রেজিস্টরে। ফলে ৬ নং পিনের ভোল্টেজ প্রায় Vcc এর কাছাকাছি চলে যায় (যা ৮ ভোল্টের বেশী), ফলে ৫৫৫ আইসি রিসেট থাকে মানে ৩ নং পিনে কোন ভোল্টেজ না থাকায় রিলে অফ থাকে।
রাতের বেলাঃLDR এর রেজিস্ট্যান্স, ভ্যারিয়েবল রেজিস্ট্যান্স তুলনায় খুব হাই। তাই সব ড্রপ ঘটে LDR এ। ফলে ২ নং পিনের ভোল্টেজ কমে প্রায় শুন্যের কাছাকাছি চলে যায়। ফলে ৫৫৫ আইসি সেট হয়ে যায় মানে ৩ নং পিনে ভোল্টেজ চলে এসে রিলে অন করে দেয়।
৫৫৫ আইসে রিলে ড্রাইভ করার মতো যথেষ্ট ভোল্টেজ আর প্রচুর কারেন্ট দিতে পারে বলে আর কোন ট্রানজিস্টর বা অতিরিক্ত পার্টসের দরকার পড়েনা। আবার কম্পারেটরের মতো (আসলে ৫৫৫ এ দুইটা কম্পারেটর আছে) দ্রুত সিদ্ধান্ত দেয়ায় চ্যাটারিং ঘটেনা। তাই ৫৫৫ আইসি খুব সিম্পল বাট রিলায়বল সার্কিট উপহার দেয়।
লাইট সেন্সরে পরিবর্তনঃ
LDR এবং ভ্যারিয়েবলে রেজিস্ট্যান্স জায়গা বদলালেই ডার্ক সেন্সর টি লাইট সেন্সরে পরিনত হবে। পরবর্তি প্রজেক্টগুলিতে ৫৫৫ আইসি দিয়ে আরো মজার মজার প্রজেক্ট করার আশা রাখি।
পরবর্তিতে>>> প্রজেক্ট২-মোশন সেন্সরঃ জীবিত প্রানী নড়াচড়া ধরতে পারে এমন যন্ত্র
ইলেকট্রনিক্সইঞ্জিনিয়ারিং এর সাথে জড়িত কিংবা ইলেকট্রনিক্স সম্পর্কে ধারণা রাখেন অথচ ওহম এর সূত্রের নাম শোনেননি, এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুঃস্কর। ওহম এর সূত্র না জেনে ইলেকট্রনিক্সের কাজ করা আর চোখ বেঁধে সোনামুখী সূচে সুতা পরানো একই কথা।
বিশিষ্ট জার্মান বিজ্ঞানী জর্জ সায়মন ও’ম (বা ওহম) (Georg Simon Ohm) ১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে ফুরিয়ারের তাপ পরিবহণ সংক্রান্ত গবেষণার উপর ভিত্তি করে বতর্নীর তড়িৎ পরিবহণের গাণিতিক ব্যাখ্যা প্রদান করেন, যেটি তার নাম অনুসারে ওহম এর সূত্র (Ohm’s law) নামে পরিচিত।
উষ্ণতা ও অন্যান্য ভৌত অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে, কোনো পরিবাহীর মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহমাত্রা ওই পরিবাহীর দুই প্রান্তের বিভব-পার্থক্যের সমানুপাতিক এবং পরিবাহীর রোধের ব্যস্তানুপাতিক।
সূত্রটিকে গাণিতিক ভাষায় নিম্নক্তভাবে প্রকাশ করা যায়-
এখানে,
R হলো পরিবাহীর রোধ বা রেজিস্টেন্স যা একটি সমানুপাতিক ধ্রুবক যার একক ওহম (Ω)
V হলো পরিবাহীর দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্য যার একক ভোল্ট এবং
I হলো পরিবাহীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত কারেন্টের পরিমাণ যার একক এম্পিয়ার বা এম্প(A)
কি? বোরিং লাগছে? এটা তো আপনি জানতেনই, তাইতো? নাকি বিজ্ঞানের জটিলত্বত্ত বুঝতে কষ্ট হচ্ছে? আবার অনেককেই দেখেছি ভোল্ট কারেন্ট এবং রেজিস্টেন্স নিয়ে কনফিউশনে ভোগেন। আপনারও কি সেই দশা? উত্তর যেটাই হোক, ভয়ের কোনো কারণ নেই। চলুন, বিজ্ঞানের ধরাবাধা গন্ডি থেকে বেরিয়ে সূত্রটিকে একটু অবৈজ্ঞানিক ভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করি, তাহলে হয়তো কনফিউশান কিছুটা হলেও দুর হবে।
গল্পে গল্পে ওহম এর সূত্র
মনে করুন আপনি এবং আপনার বিশিষ্ট বাঁদরগোত্রীয় ছোটভাই ( 😛 ) ঘরে বসে আছেন। আপনি গার্লফ্রেন্ড বা বয়ফ্রেন্ডের সাথে মোবাইল ফোনে গল্প করছেন। আর আপনার ভাইটি ফেসবুকে “বাংলাদেশ লাইক ভিক্ষুক সমিতি” কিংবা “লাইক দিবি কিনা বল” টাইপের পেজে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
অন্যদিকে আপনার আব্বাজান সদর দরজার পাশে বসে দৈনিক মতিকন্ঠ পড়ায় ব্যস্ত। তো গল্প করতে করতে হটাৎ ফোনের টাকা শেষ হয়ে গেলো, কিন্তু কথাতো তখনো শেষ হয়নি। আবার রিচার্জ করা দরকার, নিজে বাইরে যেয়ে রিচার্জ করবেন, তাও ইচ্ছা করছে না। তাই ছোটো ভাইকেই পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেন।
কিন্তু তাকে কিভাবে পাঠাবেন? সে তো লাইক ভিক্ষায় ব্যস্ত 😮
তাহলে উপায়?
আপনি তাকে ভুজুং ভাজুং দিয়ে ঘাড়ে পিঠে হাত বুলিয়ে পাঠালেন, সে আস্তে ধীরে হেলতে দুলতে বাইরে গেলো
একখানা রাম ঝাড়ি দিয়ে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে পাঠালেন, সে বেশ দ্রুততার সহিত টাকা নিয়ে বাইরে ছুটলো
উপরে বাৎলানো যেকোনো ভাবেই আপনি তাকে বাইরে পাঠাতে পারেন। সে যাওয়ার জন্য রওনাও হলো, কিন্তু দরজায় আপনার বাপ বসে আছে। সেটা ভুললে তো চলবে না। তিনি যদি দরজায় কোনো বাঁধা না দেন, তাহলে তো সব সমস্যা মিটে গেলো। কিন্তু যদি তিনি বাধা দেন, তাহলে কি হবে?
আপনি যদি ভাইকে ভুজুং ভাজুং দিয়ে পাঠান, তাহলে সে বাপের মৃদু বাঁধাতেও যেতে পারবে না। তাকে বাইরে পাঠাতে হলে বেশ জোরেশোরেই একটা ধাক্কা দিতে হবে, যাতে সে বাপের বাঁধা পেরিয়ে বাইরে যেয়ে আপনার জন্য বাংলালিংকের কার্ড কিনে আনতে পারে। কিন্তু, বাপ যদি দরজায় লাঠি হাতে বসে থাকে, যে এই দুপুর রোদে কাউকেই বের হতে দেবে না, তাহলে উপায় কি?
ভাইয়ের পাছায় কষে একটা লাথি মারুন, বাপের পাহারার ফাঁক গলে ঠিকই সে বাইরে চলে যাবে। আর যদি বাপে কোনো বাধা না দেয়, তাহলে তো কোনো কথাই নেই, দৌড়ে সে উসাইন বোল্টকেও হার মানাবে
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে যে, আপনি বাইরে যাবার জন্য আপনার ছোট ভাইয়ের উপর যত বেশি বল প্রয়োগ করবেন, সে ততো দ্রুত ঘর ছেড়ে বাইরে দৌড়াবে, অন্যদিকে দরজায় আব্বাজান যতবেশি বাঁধা দেবেন, ভাইয়ের দৌড়ের স্পীডও ততই কমে যাবে।
এবার এই গল্পের তিনজনকে অর্থাৎ আপনি, ভাই আর আপনার আব্বাজানকে যথাক্রমে ব্যাটারী (বা অন্য যে কোনো তড়িৎ উৎস), চার্জ বা ইলেকট্রন এবং রোধের সাথে তুলনা করুন। এবং বাড়ির সদর দরজাকে কোনো পরিবাহীর সাথে তুলনা করুন। ওহম এর সূত্রটিকে সহজেই বুঝতে পারবেন।
আপনার লাথির জোর অর্থাৎ ভোল্ট (V) যত বেশি হবে, ছোটভাই ইলেকট্রনের দৌড়ানোর গতিও ততবেশি হবে।
প্রকৃতপক্ষে এখানে গতি হবে না, হবে ইলেকট্রনের পরিমাণ। গবেষণায় দেখা গেছে ইলেকট্রন প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ২২০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে এবং এটা কনস্ট্যান্ট
অর্থাৎ ভোল্ট কমলে কম পরিমাণ ইলকট্রন প্রবাহিত হবে। ভোল্ট যত বাড়বে ইলেকট্রনও তত বেশি পরিমাণে হাই ভোল্ট থেকে লো ভোল্টের দিকে (যেমন এক্ষেত্রে ঘরের বাইরে) প্রবাহিত হবে।
ইলেকট্রনের এই প্রবাহের ইংরেজী প্রতিশব্দই হলো কারেন্ট (I) যার একক এম্পিয়ার বা এম্প (A)। অন্যদিকে পরিবাহীর রোধ বা রেজিস্টেন্স (R) (যার একক ওহম Ω) যত বেশি হবে, ইলেকট্রনের প্রবাহ অর্থাৎ এম্পিয়ারও তত কমে আসবে।
কিন্তু এমন যদি হয়, আপনি নিজেই ছোট ভাইয়ের পশ্চাৎদেশে সুপারসনিক গতিতে লাথি মারলেন, তাহলে কি হবে? আপনার বাপ যত পাহারাই দিন না কেনো, সে বেচারা এক লাফেই বাড়ির বাইরে চলে যাবে। দৌড়ানোর সুযোগই পাবে না।
টেসলা কয়েল বা এ ধরনের অন্যান্য হাই ভোল্টেজ যন্ত্রপাতিতে এ অবস্থা দেখা যায়। যেখানে কারেন্ট বাতাসের মধ্য দিয়েই প্রবাহিত হয়, যদিও বাতাস একটি ডাই-ইলেকট্রিক পদার্থ, যার রেজিস্টেন্স এতটাই বেশি যে সেটা সম্পূর্ণ অপরিবাহীর ন্যায় আচরণ করে। গবেষণায় দ্যাখা যায় প্রতি ১০০০ ভোল্টেজের জন্য বাতাসের মধ্য দিয়ে প্রায় ১ সেন্টিমিটার দুরেও ইলেকট্রন বা চার্জ প্রবাহিত হয়।
কি? ওহমের সূত্র মাথায় ঢুকেছে? নাকি মাথা এখনো চুলকাচ্ছে? তাহলে নিচের মন্তব্যের ঘরখানি ব্যবহার করুন, যথাসম্ভব উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো। চাইলে আমাদের ফেসবুক পেজ থেকেও ঘুরে আসতে পারেন।
বিশেষ দ্রষ্টব্য:
এই পোষ্টের অনেক উদাহরণই বিজ্ঞানের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয় এবং কাউকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ বা হেয় করারও বিন্দুমাত্র কোনো চেষ্টা করা হয়নি। বিজ্ঞানের জটিল ত্বত্তগুলোকে সহজভাবে এবং হাস্যরসের মাধ্যমে বোঝার জন্য রূপক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। দয়া করে কেউ এগুলোকে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার সাথে মেলানোর চেষ্টা করবেন না।
ইদানীং তরুণ সমাজের মাঝে ফ্রি এনার্জি নিয়ে দারুণ উৎসাহ উদ্দিপনা দেখি। বিজ্ঞান প্রেমী হোক বা সাধারণ মানুষ, সবার কাছেই একি কথা, ফ্রি এনার্জি কি ভাবে পাই?? যে ভাবে বিদ্যুৎ এর দাম বাড়ছে!
(ফ্রি এনার্জি মেশিন বলতে এখানে Perpetual Motion Engine/ Free running engine বোঝানো হয়েছে যা কিনা ব্যহ্যিক কোনো শক্তি ছাড়াই নিজের উৎপন্ন শক্তি দিয়েই চলে ও সাথে অন্যান্য যন্ত্রপাতি চালানোর উপযুক্ত শক্তি সরবরাহ করতে পারে)
(১) একটা ব্যাটারি দিয়ে মোটর চালাবো। আবার সেই মোটরের সাথে একটা ছোট জেনারেটর থাকবে। যা কিনা বিদ্যুৎ তৈরি করবে মোটর ঘুরবার সাথে সাথে। আবার সেই জেনারেটর থেকে উৎপন্ন বিদ্যুৎ কে আবার ব্যাটারি তে দেয়া হবে। অথবা,
(২) কোনো ম্যাগনেট কে কয়েলের চারিপাশে ঘোরানো হবে। তাতে কয়েলে যে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে তা দিয়ে আবার একটা ছোট মোটর বা ইলেকট্রিকাল ম্যাগনেট কে চালানো হবে।
ইত্যাদি ইত্যাদি বিভিন্ন উপায় বাৎলানো আছে যা ইউটিউব ঘাটলে পাওয়া যায়। সেদিন তো শুনলাম আমাদের দেশেও নাকি কোন কম্পানি এক বিশেষ আইপিএস তৈরি করেছে যার ব্যাটারি সারা বছরে মাত্র এক বার চার্জ দিলেই বাকি ৩৬৪ দিন চলবে! নলকূপ চেপেও নাকি ব্যাটারি চার্জ দেয়া যাবে এমন খবর ও শুনতে পেলাম!
তবে আমি ঐ সব গুরু তত্ত্ব কথা- কিভাবে হয়, কেন হয় বা হয়না- তার ভেতরে যাবো না। আমার শুধু একটা প্রশ্ন জাগে মনে যে ফ্রি এনার্জি যদি আবিষ্কার করা হয় তা কি আসলেই ফ্রি হবে? নাকি তা ফ্রি থাকা সম্ভব?? শুধু উৎপাদনের দিক থেকে নয় বরং বিলি বন্টনের দিক থেকে চিন্তা করলে?
আসুন একটু ভাবি। আর আমাদের কল্পনার ঘোড়া গুলোর লাগাম ছেড়ে দেই।
ধরুন, আজকে ভোরে স্বপ্নে এমনি একটা যন্ত্র দেখলাম। আর সকালেই কাজে লেগে তা বানিয়েও ফেল্লাম! বাহ! মহা আবিষ্কারক হয়ে যাওয়ার খুশিতে আমি আত্মহারা। ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস ও দিয়ে দিলাম যে আমি অমুক পদ্ধতিতে ফ্রি এনার্জি আবিষ্কার করেছি। বেলা গড়িয়ে দুপুর হবার আগেই আমার ইনবক্স আর ফোনের জ্বালায় মোবাইল ও ফেসবুক কোম্পানি দিশেহারা কি ভাবে কি সামাল দেবে! এর পর শুরু হলো আসল ঝামেলা!
বেলা গড়িয়ে দুপুরের মধ্যেই বিদ্যুৎ আর তেলের ব্যবসায়ী সকল যোগাযোগ করতে শুরু করল- “তোমার জিনিস আমার কাছে বেচে দাও”। ধরে নিলাম আমি মহৎপ্রাণ। এই আবিষ্কার সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেবো এই উদ্দেশ্যে কাজ করছি। তাই স্বভাবতই কারো কাছে বিক্রি করবো না।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে না হতেই বিখ্যাত কোনো এক পাওয়ার প্ল্যানট এর প্রতিনিধি হাজির এবং তাকেও সসম্মানে একই উত্তর দিয়ে ফিরিয়ে দেয়ার পর আমার অবস্থা কি হতে পারে?
একটু সহজ ভাবে ভাবি চলুন, ধরুন আপনি এক জন ব্যবসায়ী। আপনার কাজই হচ্ছে আপনার উৎপাদিত পণ্য সবার মাঝে পৌঁছে দেয়া। অবশ্যই টাকার বিনিময়ে। এমনকি আপনার অনেক নামডাক ও আছে যে আপনি সৎ ব্যবসায়ী। তো যখন আপনি শুনবেন যে অমুক এলাকার এক ছেলে এই জিনিস আবিষ্কার করছে তখন কি হবে? আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন না যে সবাই আপনার পণ্য না কিনে ঐ ছেলের কাছ থেকে জিনিস টা নিয়ে ব্যবহার শুরু করুক? নিজের ব্যবসার ক্ষতি কেই বা চায় বলুন! কেউ কেউ একটু চিকন বুদ্ধি সম্পন্ন। তারা মুখে “ছেলেটার পাশে দাঁড়াই, ছেলেটা কত ভালো, এগিয়ে যাও ভায়া আমি তোমার জন্য আছি” ইত্যাদি বিভিন্ন কথাবার্তা বলবেন। তাও আসলে নিজের ব্যবসা ঠিক রাখবার জন্যই।
উপরন্তু যদি এমন হয় যে আমি (ঐ ছেলে) সেই আবিষ্কার একদম উন্মুক্ত করে দিলাম। যার খুশি সেই বানিয়ে ব্যবহার করুক তখন?? আপনার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়বে! হায় হায়, ঐ ছেলের কাছ থেকে সবাই সেই মেশিন নিয়ে ব্যবহার শুরু করে দিলে তো আপনার উৎপাদিত বিদ্যুৎ আর লসেও বিক্রি করতে পারবেন না!
সহজ কথায় সেই ছেলে আপনার ব্যবসার বারোটা নয় আঠারো টা বাজিয়ে ছাড়বে! আপনি যদি খুব ভালো মানুষ হন তাহলে সে ছেলের কাছে গিয়ে অনুরোধ করবেন যেন তার আবিষ্কার টা আপনার কাছে বিক্রি করে দেয়। যদি দেয় তাহলে তো আপনি কোটি পতি থেকে লক্ষ কোটি পতি হয়ে যাবেন বলাই বাহুল্য! আর ঐ এক কালিন টাকা দিয়ে সেই ছেলে যেখানে ছিলো সেখানেই ফিরে যাবে। আচ্ছা এমন যদি হয় যে সে ছেলে আপনার
কাছেও বেচলো আবার আপনার বিপরীত ব্যবসায়ীর কাছেও বেচলো তখন? তখন আপনার টাকা গুলোই শুধু জলে যাবে! কারণ ফ্রি এনার্জি
আর কত দামেই বা বেচবেন বলেন? অবশ্য এসব ঝামেলা না করেও কাজ হাসিল করতে পারেন আপনি!
কিভাবে?
কিছুই না, শুধু ঐ ছেলে কে ধরে একটা ভূয়া কেস এ জড়িয়ে তার চৌদ্দ গুষ্ঠি কে ঘোল খাওয়াবেন! তখন সে ছেলে কই যাবে হারায়ে— তার জীবন আর পরিবার নিয়েই তখন সংশয়ে কাটবে! তখন কই সময় পাবে এই সব জনদরদী গবেষণার! আবার তাকে ব্রেন ওয়াশের চেষ্টাও করতে পারেন! ভুলিয়ে ভালিয়ে তার যন্ত্র তাঁকে দিয়ে বানিয়ে, দিতে পারেন লাথি!
আর হয়তো আপনি ভালো মানুষ। এমন কিছু করবেনই না কিন্তু আপনার সাথের ব্যবসায়ীরা যে করবে না তার গ্যারান্টি কিন্তু নেই। আচ্ছা মনে করুন আপনি সেই আবিষ্কারক আর আপনি ব্যবসাও বেশ ভাল বোঝেন। তো আপনি করলেন কি আপনার আবিষ্কৃত যন্ত্রটি স্বল্প মূল্যে বিক্রি করার উদ্দেশ্যে বাজারে ছেড়ে দিলেন। অবশ্যই সবার ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে দাম ধরলেন। আবার অন্য উৎপাদকদের সাথে পাল্লা দিতে আর তাদের চক্ষুশূল না হতে দামটাও রাখলেন তাদের সাথে মিলিয়ে বা কিছু কম! তখন কি হবে?
হেহে, বাঙ্গালি অনেক বুদ্ধিমান প্রাণি। তা না হলে ধোলাইখাল আর ফুটপাথে চাইনিজ কম্পানির তৈরি বাংলা ভার্শন বালু ভরা পাওয়ার ব্যাংক বা গাড়ির দুই নাম্বার পার্টস পাওয়া যেতো না!
সহজ কথায় ২ দিনের মাথায় তার ডুপ্লিকেট বের হবেই! তখন আপনার এই ফ্রি এনার্জি মেশিন রাস্তায় বিক্রি হবে। তাও আপনার চেয়ে কম দামেই!
আমি পেলেও বানাতাম, ফ্রী এনার্জি বলে কথা!
তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই ফ্রি এনার্জি আছে, তা হলেও দেখা যাচ্ছে ফ্রি এনার্জি নিয়ে যতোই হাঙ্কিপাঙ্কি হোক, তা আদতে আসলে ফ্রিই থাকছে না!
সারা দুনিয়ার বৈশ্বিক পাওয়ার/তেল এনার্জি সঙ্কটে এগুলো ফ্রি নামে শুধু লোকের চোখে আগের দিনে প্রচলিত ভানুমতী’র খেল বা হাত সাফাই ছাড়া আর কিছুই নয়!
পরিশিষ্টঃ
আমাদের চেনা বিজ্ঞান ও এর আবিষ্কৃত সকল যন্ত্রপাতি যে সকল সূত্রানুসারে চলে তাতে এখন পর্যন্ত এমন যন্ত্র আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। কারণ তা শক্তির নিত্যতা সূত্রকে লঙ্ঘন করে। ক্ষেত্র বিশেষে পরীক্ষকের ভূল, যন্ত্রের পারিপার্শ্বিক অবস্থা এমন ফলাফলের জন্য দায়ী। আর বাস্তবতার নিরিখে এটি আবিষ্কার হলেও তা আদতে ফ্রি থাকার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
এল ই ডি বা লাইট ইমিটিং ডায়োড। এর দুইটি পা থাকে। একটি এনোড বা পজেটিভ আরেকটি ক্যাথোড বা নেগেটিভ। নতুন অবস্থায় সাধারণত এর পজেটিভ বা এনোড পা টি অপরটি হতে বড় হয় লম্বায়। কোন কারণে পা দুটো সমান হয়ে গ্যালে বুঝবার জন্য দুটো অপশন সামনে থাকে –
এলইডির ভিতরে তাকালে দুটো অংশ দেখা যায় এবং এর নীচের দিকে থাকা অংশের সাথে যুক্ত পা টি এনোড আর অপরটি ক্যাথোড বা নেগেটিভ। আরেকটি পদ্ধতি হলো এর গায়ের মার্কিং যা অবশ্য সব এলইডিতে নাও থাকতে পারে। একদিকে সমান করা অংশ এর দিকের পা টি ক্যাথোড বা নেগেটিভ হবে ও অপর টি এনোড বা পজেটিভ হবে।
সার্কিটে লাগানোর সময় এর পজেটিভ প্রান্ত সবসময় সার্কিটের + প্রান্তের সাথে সংযোগ পাবে এবং নেগেটিভ প্রান্ত নেগেটিভ বা গ্রাউন্ডের সাথে সংযোগ দিতে হবে। উল্টো করে কানেকশন দিলে এর থেকে আমরা আলো বা কাজ পাব না। বাজারে নানান রকম সাইজ ও ডিজাইনের এলইডি পাওয়া যায়। খুব কম আলো দিতে সক্ষম এলইডি থেকে শুরু করে একেবারে চোখ ধাধানো আলো দিতে সক্ষম শক্তিশালী এলইডি এখন সহজলভ্য ইলেক্ট্রনিক্স এর দোকানগুলোতে।
আধুনিক লাইট ফিটিংস মানেই এলইডি লাইটিং। এর দ্বারা অল্প বিদ্যুত খরচে অন্যান্য প্রকার আলো প্রদানকারী লাইটের তুলনায় বেশী আলো পাওয়া যায় এবং এর আয়ু কমবেশী সঠিক ভাবে ব্যবহার করলে ৫০ হাজার ঘন্টা।
ইলেকট্রক্স নিয়ে কাজ করতে গেলে ছোট বড় নানান ধরনের ক্যাপাসিটর চোখে পড়ে। ছোট মুসুর দানার মত দেখতে যেমন আছে তেমন ঢাউস আকারের ব্যাটারির মত বড় ক্যাপাসিটর ও দেখতে পাওয়া যায়। এ নিয়ে ছোট্ট মজার অভিজ্ঞতা বলতে পারি। ২০০৯ সালের দিকে ছোট পিএফ ক্যাপাসিটর কিনতে গেছি মারকেটে। ট্রান্সমিটার বানানোর জন্য এই এটি দরকার ছিল। তো দোকানি কে বল্লাম, ভাই ১০০ পি.এফ ক্যাপাসিটর দিন। তো দোকানি আমার দিকে হাঁ করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বিশেষ ভাবের সাথে বলল “ও জিনিস নেই”! কি আর করা আমি এই দোকান সে দোকান ঘুরে এই ক্যাপাসিটর তো আর পাই না! আমি তো হতাশ যে গেল বুঝি আমার এফ.এম. ট্রান্সমিটার বানানোর সকল প্রচেষ্টা ক্যাপাসিটর এর জন্য বিফল হয়ে!! এমতাবস্থায় এক বয়স্ক দোকানি আমার ঘর্মাক্ত কলেবর দেখে, দয়া পরবশত হয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলেন। আমার ট্রান্সমিটার বানানোর কথা শুনে মুচকি হেসে বের করে দিলেন আমার কাঙ্ক্ষিত সেই ক্যাপাসিটর আর প্রত্যুত্তরে যা বললেন তা শুনে আমি নির্বাক! এগুলোকে নাকি “মুশুর দানা পি.এফ বলে আবার ক্ষেত্র বিশেষে ‘ডাইল পি.এফ ও বলা হয়’ ” (কারন মুশুর ডালের দানার মতো দেখতে কিনা)! আর সরাসরি ১০০ পিএফ বললে অনেক দোকানি চেনে না, কোড আকারে বলা লাগে যেমন ১০০ পি.এফ এর কোড 101… আবার ভোল্ট, টেম্পারেচার, টলারেন্স ইত্যাদি কোড আকারে দেয়া থাকে… (নিচের চিত্রে বিস্তারিত বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে) তাহলে বুঝতেই পারছেন ক্যাপাসিটর এর জন্য কোড কত গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার! বিশেষ করে ছোট ক্যাপাসিটর তো কোড ছাড়া বোঝাই যায় না! কিন্তু আমরা সবাই কি জানি এই ক্যাপাসিটর এর গায়ে লেখা বিভিন্ন কোডের কি অর্থ হয়? যেমন J, K কিংবা 104 এর মানেই বা কি? আসুন ছবি দেখে বুঝে নেই কোন কোডের কি মানে- চিত্রঃ ক্যাপাসিটর এর গায়ের নাম্বার কোড আকারে লেখা থাকে তার অর্থ গুলো চিত্রানুরূপ। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে আজ এ এপর্যন্তই। আবার দেখা হবে নতুন কোন পোস্ট এ। সবাই ভালো থাকবেন। আর হ্যাঁ, আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক, কমেন্ট, শেয়ার করে আমাদের সাথেই থাকবেন আশা করি। বাংলাভাষায় ইলেকট্রনিক্স চর্চা হোক উন্মুক্ত ধন্যবাদ। ফেসবুক পেজঃ http://www.facebook.com/AmaderElectronics (কোড গুলোর বাংলা রূপান্তর করলাম না কারণ ক্যাপাসিটর এর গায়ে এগুলো ইংরেজিতেই থাকে। সবার ভাল লাগলে ভবিষ্যতে এ নিয়ে আরো বিস্তারিত লিখবো আশা করি)
Transformer (Step Down) সম্বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য
Transformer (Step Down) সম্বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য লেখার মাধ্যমে আমরা ট্রান্সফরমার সম্পর্কিত বহুল আলোচিত কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজবো। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।
একই Transformer কে দ্বিগুন Volt এ ব্যবহার করলে Ampere কেন অর্ধেক হয়? অর্থাৎ 6V-0-6V 600ma থেকে 0-12V 300ma হয় কেন?
ট্রান্সফরমার সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয় সম্বন্ধেও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে৷
প্রশ্নঃ Center tapped Transformer এর দুটি কয়েল কিভাবে অবস্থান করে এবং কেন? এর সুবিধা কি ?
এই ধরনের Transformer এ সেন্টার ট্যাপ থেকে একটি কয়েল Clockwise অন্যটি Anti Clockwise অবস্থায় সংযুক্ত থাকে ৷ এর কারন, প্রতিটি Half cycle এ সেন্টার ট্যাপকে (0V) ধরে অপর প্রান্ত দিয়ে রেকটিফায়ার দ্বারা DC (+V) অথবা (-V) প্রবাহিত করার জন্য এভাবে সংযোগ দেওয়া হয় ৷
সুবিধাঃ
প্রয়োজনে Ampere অর্ধেক ধরে দ্বিগুন Volt এর জন্য ব্যবহার করা যায় ৷
প্রয়োজনে Dual বা Split পাওয়ার সাপ্লাই হিসেবে ব্যবহার করা যায় ৷
Bridge রেকটিফায়ার এর তুলনায় Doide কম লাগে তাই জটিলতা কম হয় ৷
প্রশ্নঃ Transformer (TF) এর সর্বোচ্চ Current Rating কি?
আমরা সবাই জানি ইলেকট্রনিক্সে সময় (Time) হল গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়৷ Sine wave 50Hz এর ক্ষেত্রে One cycle = Half cycle (10ms) + Half cycle (10ms) = full cycle (20ms) বা (180+180=360 Degree) তে সম্পূর্ণ হয়৷ যেহেতু ট্রান্সফরমারের output AC, তাই ট্রান্সফরমারের ক্ষেত্রে Full cycle (20ms) বা 360 ডিগ্রীতে যে পরিমান কারেন্ট প্রবাহিত হয়, তাকে Continuous current বলা যায়৷ এটাই সর্বোচ্চ কারেন্ট রেটিং যা ট্রান্সফরমারের গায়ে লেখা থাকে।
প্রশ্নঃ একই Transformer দিয়ে 6V-0-6V 600ma এবং 0V-12V এর বেলায় 300ma হয়? এই পার্থক্য কেন হয় ?
center tapped Transformer 6V-0-6V এর বেলায় আলাদা দুটি কয়েল থাকে, প্রতি কয়েলে Half cycle(10ms) অন্তর সুইচিং (Current Flow) হয়। ফলে ঐ তারের Efficiency বা সক্ষমতা দ্বিগুন হয়। তাই দুই কয়েল একত্রে বেশী কারেন্ট দিতে পারে৷ ঐ একই Transformer কে যদি Center tap বাদ দিয়ে 0-12V করা হয়,তখন একটি কয়েলে রুপান্তর হয়৷ ঐ একই size এর তারের উপর Full cycle বা দুটো Half cycle + Half cycle সুইচিং (current flow) হয়। ফলে তারের Efficiency বা সক্ষমতা, 6V-0-6V এর তুলনায় কম হয়, এবং তা অর্ধেক হয়ে যায়৷ তাই কারেন্ট রেটিংও কম হয়, অর্ধেক৷ এই জন্যই 6v-600ma আর 12V 300ma হয়৷
বাস্তব ক্ষেত্রে, একটি কাজে একজন মানুষের তুলনায় দুইজন মানুষের একত্রে কর্মক্ষমতা বেশী হবে,বা দ্বিগুন হবে ৷ এটাই তো স্বাভাবিক
প্রশ্নঃ Center tapped Transformer (6V-0-6V) এর প্রতিটি কয়েল যদি প্রতি Half cycle এ 600ma দেওয়ার ক্ষমতা রাখে,তাহলে দুটি কয়েল একত্রে Full cycle এ 600ma ই দেয় কেন? (600ma+600ma) বা 1200ma হয় না কেন? এবং 1200ma লোড দিলে কি হবে?
এই জন্য যে, এক প্রান্তে প্রতি Half cycle(10ms) বা 180॰ অন্তর অন্তর 600ma দিচ্ছে ৷ অন্যভাবে বলা যায় প্রতি Full cycle এ 180॰ বা Half cycle(10ms) missing হচ্ছে ৷ এই (10ms) missing সময়ে অন্য প্রান্ত আবার 600ma দিচ্ছে, তাহলে কি দাড়াল, Continuous current শর্ত অনুযায়ী দুই প্রান্ত মিলিয়ে 600ma ই পাচ্ছি ৷
1st Coil + 2nd Coil অনুযায়ী প্রতি Half cycle + Half cycle = Full cycle এ যে সমীকরন দাড়ায় তাহল….
0+600ma = 600ma+0 = 600ma = Full cycle(10ms+10ms) = Maximum Current Rating.
একটু খেলার ছলে বুঝিঃ
আসুন এবার একটু খেলার ছলে বুঝতে চেষ্টা করি৷ ধরুন দুটি মানুষ আছে। মনেকরি প্রতিটি মানুষের হাতে সর্বোচ্চ 10kg নেওয়ার ক্ষমতাই রাখে৷ দুইজন মানুষ। একজনের ডানহাত অন্যজনের বামহাত ধরে পাশাপাশি দাড়িয়ে আছে। দুটি কয়েল সিরিজ সংযোগের মতোই৷
খেলার শর্ত হলো- দুইজন মানুষের দুইপাশের দুটি হাতের মধ্যে, একজনের ডান হাতে ১টি 10kg ওজনের একটি বল দেওয়া হবে। ঠিক ঐ সময়ে অন্যজনের বাম হত খালি থাকবে৷ আবার কিছু সময় পর একজনের ডান হাতের বলটি তুলে নেওয়া হবে, তখন অন্যজনের বাম হাতে 10kg ওজনের আরেকটি বল দেওয়া হবে, তখন তার ডান হাত খালি থাকবে৷ একসঙ্গে দুটি বল দেওয়া হবে না৷
এভাবে পর্যায় ক্রমে চলতে থাকবে৷ এখন যে কোন সময় আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় ঐ মানুষ দুটির হাতে কয়টি বল এবং ওজন কত? নিশ্চয়ই এক বাক্যে বলবেন ১টি বল এবং ওজন 10kg৷ নিশ্চয়ই বলবেন না 10kg+10kg=20kg কারন একসাথে মানুষ দুটির হাতে দুইটি বল কখনই দেওয়া হয় নি।
যদি খেলার নিয়ম ভেঙ্গে 20kg ওজনের বল দেওয়া হয় তাহলে, কিছুক্ষন পর লোকদুটি কুঁজো হবে তারও কিছু সময় পর লোকদুটি ভার সইতে না পেরে বসে পড়বে৷ কারন লোকদুটির হাতে সর্বোচ্চ বহন ক্ষমতা ছিল 10kg৷
এখানে কিছু সময়ের জন্য 20kg ধরে রাখার ক্ষমতাকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা বলা যায় না ৷ এখানে প্রতি মানুষকে ট্রান্সফরমারের একটি কয়েল ভাবতে পারি ৷
দুইজনের দুই পাশের দুটি হাতকে ট্রান্সফরমারের দুটি কয়েলের দুই প্রান্ত এবং মিলিত(সংযোগকৃত) হাত দুটি একত্রে সেন্টার ট্যাপ ভাবতে পারি৷ বলের পরিবর্তন করার সময়কে Half cycle(10ms) ও সর্বোচ্চ ভার বহন(10kg) ক্ষমতাকে কারেন্ট রেটিং ভাবলেই ট্রান্সফরমারের দুটি কয়েলের মাঝে এর সম্পর্ক বুঝতে পারবো৷
প্রশ্ন ৫: 0-12V 300ma Transformer এর দুই টার্মিনাল দিয়ে AC তরঙ্গ পজেটিভ Half cycle এবং নেগেটিভ Half cycle অর্থাৎ Full cycle কিভাবে প্রবাহিত হয়?
0-12V Transformer (এক কয়েল) এর বেলায় দুই টার্মিনালে Wave sequence অদলবদল বা interchange পদ্ধতিতে Full cycle প্রবাহিত হয়৷
একটু ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করি। মনে করি সেকেন্ডারী কয়েলের এক টার্মিনাল “A” এবং অন্য টার্মিনাল “B” ধরি৷ প্রথম পজেটিভ Half cycle(180॰) তে টার্মিনাল “A” Rising Edge দিয়ে (0V) অন্যদিকে “B” Falling edge দিয়ে (+V) প্রবাহিত হয় ৷ আবার Zero crossing পরবর্তি নেগেটিভ Half cycle (180॰) তে ঠিক উল্টোভাবে টার্মিনাল “B” Rising edge দিয়ে(0V) অন্যদিকে “A” falling edge দিয়ে (+V) প্রবাহিত হয়৷
এই ভাবে প্রতি Half cycle এ পর্যায়ক্রমে অদলবদল হতেই থাকে৷ এই পক্রিয়ায় সবসময় দুই টার্মিনালে Alternative Volt (AC) পাই ৷ এভাবে বলতে পারি টার্মিনাল A(+-) ও B(+-) volt প্রবাহিত হয় ৷
এখন দুটি টার্মিনালে একটা Brigde রেকটিফায়ার সংযোগ করলে DC তে আমরা একই দিকে (180॰ +180॰) Full Wave sap’s পাব, এবার ফিল্টারিং এর জন্য Capacitor লাগালেই Pure DC Volt পেয়ে যাব৷
Single coil = 300ma = Full Cycle(10ms+10ms) = Maximum current Rating.
আসুন আবারও খেলার ছলে বুঝতে চেষ্টা করি, এখানে খেলার শর্ত হল দুটি বল আছে, একটিতে লেখা আছে (0v) অন্যটিতে লেখা আছে (+v)৷
একটি মানুষের দুটি হাতের মধ্যে, ডান হাতে দেওয়া হবে (0v) বল আর বাম হাতে দেওয়া হবে (+v) লেখা বল ৷ দুই হাতে সর্বোচ্চ ওজন নেওয়ার ক্ষমতা 10Kg৷ ঐ মানুষটি কিছু সময় পর ডান হাতের বলটি বাম হাতে ছুড়ে দিবে আর বাম হাতের বলটি ডান হাতে ছুড়ে দিবে একই সঙ্গে৷ ডান হাতের বল বাম হাতে আবার বাম হাতের বল ডান হাতে৷ মানে অদলবদল বা interchange পদ্ধতি৷ অনেকটা সার্কাসের বল ছুড়ে খেলার মত৷ কিছু সময় পর পর এই অদলবদল পক্রিয়াটা পর্যায়ক্রমে চলতে থাকবে৷
এখন যেকোন সময় যদি আপনাকে প্রশ্ন করা হয় লোকটির দুই হাতে কি দেখছেন নিশ্চয়ই এক বাক্যে বলবেন দুটি বল একটিতে (0v) লেখা অন্যটিতে (+v) লেখা৷
নিশ্চয়ই বলবেন না, কিছু সময় দুই হাতে বল দেখছি, আবার কিছু সময় পর দুই হাত খালি বা শুন্য দেখছি৷ কারন পর্যায়ক্রমে এই হাতের বল ঐ হাতে এবং ঐ হাতের বল এই হাতে শুধু অদলবদল হচ্ছে, বল কিন্তু সবসময় হাতেই থাকছে ৷ এখানেও মানুষটিকে Transformer এর কয়েল ভাবতে পারি, দুই হাতকে সেকেন্ডারীর দুই টার্মিনাল, A ও B ধরতে পারি৷ বল অদলবদল হওয়ার সময়ের ব্যবধানকে প্রতি Half cycle(10ms) এবং বলের ওজনকে কারেন্ট রেটিং মনে করতে পারি৷
প্রশ্নঃ যে Center tapped Transformer (৩ টার্মিনালের) বেলায় প্রতি কয়েলে Half cycle(10ms) অন্তর সুইচিং হচ্ছে। অন্যদিকে Non center tapped Transformer (২ টার্মিনালের) এর বেলায় একটি কয়েলের উপর Half cycle + Half cycle বা Full cycle সুইচিং হয়, এই তারতম্য কেন? বা Non center tapped Transformer (দুই টার্মিনালের) ক্ষেত্রে প্রথম Half cycle এ Volt,amp পাব, দ্বিতীয় Half cycle এ কি Volt,amp পাওয়া যাবে না?
Sine wave নিয়ম অনুযায়ী Center tapped Transformer (তিন টার্মিনাল) এর বেলাতেও প্রতি কয়েলে একই নিয়মে Half cycle + Half cycle সুইচিং হচ্ছে, কিন্তু আমরা নিচ্ছি একটি Half cycle, অন্য Half cycle ব্লক করে রাখা হচ্ছে৷
যেমন Center tapped Transformer(৩ টার্মিনালের) বেলায় আমরা দুই পাশে দুটি Doide ব্যবহার করে Full Wave রেকটিফায়ার করে প্রতি কয়েল থেকে শুধুমাত্র একটি করে Half cycle নিচ্ছি, অন্য Half cycle টি নিচ্ছি না, বা ব্লক থাকছে৷ দুই পাশে দুটি Diode এর Anode প্রান্তটি TF ট্রার্মিনালে সংযুক্ত থাকায় Cathode প্রান্তদিয়ে DC পজেটিভ Volt (+V) টার্মিনালে প্রবাহিত হয়৷ Center Tap থেকে পাই (0V)৷
অন্যদিকে Non Center Tapped Transformer (এক কয়েল বা দুই টার্মিনালের) ক্ষেত্রে Doide এর Bridge circuit ব্যাবহার করে Full wave রেকটিফায়ার করা হয় ৷ দুটি Half cycle + Half cycle কাজে লাগছে৷ চার Doide এর Bridge cicuit টা ভাল করে লক্ষ্য করুন, বিষয়টা বুঝতে পারবেন৷ ১টি Doide এর Anode প্রান্ত ও অন্য ১টি Doide এর Cathode প্রান্ত একত্রে সংযুক্ত আছে Transformer এর টার্মিনালের দিকে, দুই টার্মিনালে একই ভাবে সংযুক্ত আছে৷ এতে প্রতি Half cycle এ Doide এর Cathode প্রান্ত দিয়ে DC পজেটিভ volt প্রবাহিত হচ্ছে পজেটিভের (+v) প্রান্তে, অন্যদিকে দিকে Doide এর Anode প্রান্ত দিয়ে নেগেটিভটা প্রবাহিত হচ্ছে (0V) প্রান্তের দিকে৷
প্রতিটি কয়েলে একই নিয়মে AC প্রবাহিত হয়, প্রয়োজন অনুযায়ী শুধুমাত্র রেকটিফায়ার Diode এর মাধ্যমে এই পক্রিয়ার ব্যাতিক্রম ঘটানো হয়৷
প্রশ্নঃ এক কয়েল 0-12V এর উপর দ্বিগুন বা দুই কয়েলের 6V-0-6V সম পরিমান লোড চাপালে কি ঘটবে?
বিষয়টি একটু গভীর থেকে দেখি- (6V-0-6V) Transformer হওয়ার কারনে, ক্লক এবং এন্টি ক্লকওয়াইজ দুটি আলাদা কয়েল ৷ প্রতি কয়েলে আলাদা হাফ সাইকেল সুইচিং হচ্ছে বলে, আউটপুটের লোড ma, দুই কয়েলে সমান শেয়ারিং হচ্ছে। Transformer ডিজাইনে তারের গেজ এই হিসাবেই নির্বাচন করা হয়৷ যদি (0-12V) একটি কয়েলের উপর দুটি হাফ সাইকেলের কারেন্ট প্রবাহিত হয় তাহলে, ঐ কয়েলের উপর লোডের চাপটাও দ্বিগুন হয়৷ এতে ঐ তারের সর্বোচ্চ সহন ক্ষমতা অতিক্রম করবে, ফলে ট্রান্সফরমারটি গরম হবে এবং দীর্ঘক্ষন চললে পুড়ে নষ্ট হবে৷
তাই নির্দিষ্ট ma লোডের জন্য Center tap এবং Non center tap Transformer ডিজাইনে ক্ষেত্রে সেকেন্ডারী কয়েলের তার দুই রকম হয় ৷
প্রশ্নঃ Full cycle, Half cycle, Zero crossing, Rising edge,falling edge, peak Value বলতে কি বুঝি?
ওয়ান সাইকেল (One cycle) বা ফুল সাইকেল (Full cycle):
Sine wave এর নিয়মানুযায়ী wave (তরঙ্গ) এর বিস্তার (Ampltude) 0॰ থেকে শুরু করে পজেটিভ অভিমুখে Peak value 90॰ পর্যন্ত উর্ধ্বমুখি(Rising) হয়ে আবার নিম্নমুখি হয়ে 180॰ অতিক্রম করে নেগেটিভ অভিমুখে Peak value 270॰ পর্যন্ত উর্ধ্বমুখি হয়ে আবার নিম্নমুখি (falling) হয়ে 360॰ তে এসে একটি সম্পূর্ন চক্রে আবর্তিত হয় ৷ এইভাবে 0॰ থেকে 360॰ পর্যন্ত এই সম্পূর্ন চক্রটিকে one cycle বা Full cycle বলা হয় ৷
রাইজিং এজ (Raising edge):
যে প্রান্ত হইতে তরঙ্গ(wave) পজেটিভ ও নেগেটিভ অভিমুখে উর্ধ্বমুখি হতে শুরু করে, শুরুর ঐ প্রান্তটিকে Rising edge বলে ৷ ( উদাহরন পজেটিভ Half cycle এ 0॰ এবং নেগেটিভ Half cycle180॰ ঐ প্রান্ত )
ফলিং এজ (Falling edge):
তরঙ্গ(wave) পজেটিভ ও নেগেটিভ অভিমুখে 90॰ থেকে নিম্মমুখি হয়ে যে প্রান্তে শেষ হয়, শেষের ঐ প্রান্তটি falling edge বলে ৷ (উদাহরন পজেটিভ Half cycle 180॰ এবং নেগেটিভ Half cycle 360॰ ঐ প্রান্ত )
হাফ সাইকেল (Half cycle):
পজেটিভ এবং নেগেটিভ অভিমুখে প্রতি 180॰ দুরত্ব অতিক্রম করাকে half cycle বলা হয় ৷ (উদাহরন 0॰ থেকে 180॰ এবং 180॰ থেকে 360॰ দুটি আলাদা Half cycle )
Zero Crossing
জিরো ক্রসিং (Zero crossing):
প্রতিটি Half cycle(180॰) আবর্তিত হয়ে যে বিন্দুতে প্রান্তবদল করে, অর্থাৎ পজেটিভ Direction থেকে নেগেটিভ Direction এ পরিবর্তিত হয় ঐ বিন্দুটিকে Zero crossing বলা হয় ৷
(উদাহরন 0॰, 180॰ ও 360॰ হল জিরো ক্রসিং)
Peak Value
পিক ভ্যালু (Peak value):
পজেটিভ ও নেগেটিভ Half cycle এ তরঙ্গ(wave) আনুভুমিক ভাবে শুরু থেকে উর্ধ্বমুখি(Rising) হয়ে 90॰ বিন্দুতে পৌঁছায়,এই 90॰ কে peak value বলা হয় ৷ উদাহরণঃ 90॰ এবং 270॰ peak value
ক্যাপাসিটর বা ধারক একটি বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ বিশেষ। দুটি পরিবাহী পাতের মাঝে একটি ডাই-ইলেকট্রিক অপরিবাহী পদার্থ নিয়ে এটি গঠিত। ডাই-ইলেকট্রিক এমন একটি পদার্থ যা বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের প্রভাবে পোলারায়িত হতে পারে। এ ডাই-ইলেকট্রিক পদার্থ হতে পারে কাঁচ, সিরামিক, প্লাস্টিক কিংবা শুধুই বাতাস।
ধারক, সার্কিট এ বিদ্যুৎ সংরক্ষণের আধার হিসেবে কাজ করে। ক্ষেত্রবিশেষে এটি উচ্চ ও নিম্ন তরঙ্গের জন্য ছাঁকনি (filter) হিসেবে কাজ করে। পূর্বে একে কনডেনসারবলে ডাকা হত (এখনো ক্ষেত্রবিশেষে ডাকা হয়)। কারণ, প্রথমে বিজ্ঞানীগণ ভেবেছিলেন, ধারক এর মাঝে তড়িৎ একেবারে জমাট বেঁধে যায়। কিন্তু পরে জানা যায় যে, এখানে তড়িৎ জমে যায় না। শুধুমাত্র আধান সঞ্চিত হয় এবং প্রয়োজনানুযায়ী ব্যবহার করা যায়। মাঝের ডাই-ইলেকট্রিক পদার্থ টি ধারকত্ব বৃদ্ধি করে। ক্যাপাসিটর এর একক হচ্ছে ফ্যারাড।
উচ্চ ধারকত্ব-র জন্য এই ধারক সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। রেডিও-র ফিল্টার বাইপাস সার্কিটে ব্যবহৃত হলেও AC সার্কিটে ব্যবহার করা যায় না।
সিরামিক ধারক/ক্যাপাসিটর (Ceramic Capacitor)
এতে সিরামিক কে ডাই-ইলেক্ট্রিক হিসেবে ব্যবহৃত হলেও এদের ধারকত্ব খুবই কম। মাত্র 1pF থেকে 1000pF এবং সর্বোচ্চ সহনীয় ক্ষমতা ৫০০ ভোল্ট পর্যন্ত। মূলত কাপলিং-ডিকাপলিং বাইপাস সার্কিটের এটি ব্যবহৃত হয়।
পরিবর্তনশীল বায়ু ধারক বা ট্রিমার (Varaible Capacitor/Trimmer Capacitor)
ট্রিমার ক্যাপাসিটরের মান প্রয়োজনমত বাড়ানো এবং কমানো যায়। এতে অনেকগুলো অর্ধবৃত্তাকার সমান্তরাল এলুমিনিয়ামের পাত দুভাগে ভাগ করে বসান থাকে। পাতগুলোর মাঝে বায়ু ডাই-ইলেকট্রিক মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। টিউনিং সার্কিট হিসেবে এদের ব্যবহার করা হয়।
ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক সার্কিটে ক্যাপাসিটর বা ধারকের ব্যবহার অনস্বীকার্য।
ক্যাপাসিটর সম্পর্কে কিছু সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও তার উত্তর
ইলেকট্রিকাল কিংবা ইলেকট্রনিক সার্কিটে ক্যাপাসিটরের গুরুত্ব অপরিসীম। ইন্ডাক্টর, রেজিস্টর, আইসি এর পাশাপাশি এ নিয়ে আমাদের প্রশ্ন ও কম নয়। নিচে তেমনি গুরুত্বপূর্ণ কিছু সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও তার উত্তর তুলে ধরছি।
ক্যাপাসিটর কি বা কাকে বলে?
এটি মূলত বৈদ্যুতিক চার্জ সঞ্চয়ক যন্ত্র বিশেষ। এর বাংলা অর্থ “ধারক” অর্থাৎ যে বৈদ্যুতিক চার্জ ধারণ করে।
সার্কিটে ক্যাপাসিটর এর কাজ কি
এটি কোনো ইলেকট্রিকাল কিংবা ইলেকট্রনিক্স সার্কিটে যুক্ত হয় ও বৈদ্যুতিক চার্জ সঞ্চিত করে। আবার সার্কিটের প্রয়োজনে উক্ত জমাকৃত চার্জ অবমুক্ত করে।
সহজ ভাবে বুঝতে ক্যাপাসিটরকে খুব ছোট আকারের ব্যাটারির সাথে তুলনা করা যেতে পারে। ব্যাটারি এই বৈদ্যুতিক চার্জ কে দীর্ঘ সময়ের জন্য জমা করতে পারে। অপরদিকে ক্যাপাসিটর খুব স্বল্প সময়ের জন্য এই চার্জ জমা করতে পারে।
পাওয়ার সাপ্লাইতে কেমন ধরনের ক্যাপাসিটর ব্যবহার করবো?
পাওয়ার সাপ্লাই সার্কিট গুলোতে একটু বড়, মোটা ও গুণগত মানে ভালো ধরনের ক্যাপাসিটর ব্যবহার করা উচিৎ। যেহেতু পাওয়ার সাপ্লাই যেকোনো সার্কিট ও প্রজেক্টের প্রাণ। তাই একে ভাল মতো তৈরী করলে তা যেমন দীর্ঘস্থায়ী হয় তেমনি এর গুনগত মান ও ভালো থাকে। তাই পাওয়ার সাপ্লাইতে কোনো সময়ই কার্পণ্য না করে উপযুক্ত ও গুনগত মানের যন্ত্রাংশ ব্যবহার করাই ভালো হবে।
কোনো সার্কিটে কত ভোল্টের ক্যাপাসিটর ব্যবহার করবো
ক্ষেত্র বিশেষে এমন হয় যে সার্কিটডায়াগ্রামে ক্যাপাসিটরের মান দেয়া থাকলেও সেটির ভোল্ট উল্লেখ থাকে না। সেক্ষেত্রে সার্কিটের সাপ্লাই ভোল্টেজের মান কে স্থির ধরে নিয়ে ক্যাপাসিটরের ভোল্ট ধরতে হয়। খেয়াল রাখতে হবে যেন ক্যাপাসিটরের ভোল্ট সাপ্লাই ভোল্ট থেকে বেশী থাকে। নয়ত সার্কিট কাজ না করবার সমূহ সম্ভবনা আছে।
নোটঃ কিছু সার্কিট আছে যা এক সাপ্লাই ভোল্টে চলেও বিভিন্ন মানের ভোল্ট উৎপন্ন করতে পারে। যেমন আইপিএস, ইনভার্টার, ভোল্টেজ বুস্টার ইত্যাদি। সেক্ষেত্রে সার্কিট বুঝে ক্যাপাসিটরের ভোল্ট নির্ণয় করতে হবে। তবে সে সকল সার্কিটের ক্ষেত্রে ক্যাপাসিটরের ভোল্ট বিশেষ ভাবে উল্লেখ থাকে।
এম্পলিফায়ারে কেমন ধরনের ক্যাপাসিটর ব্যবহার করতে হবে
পাওয়ার এম্পলিফায়ার এর প্রাণ হচ্ছে পাওয়ার সাপ্লাই। উপযুক্ত কারেন্ট ও ভোল্টেজ না পেলে এম্পলিফায়ার ভালো কাজ করে না। কম্পিউটারের অথবা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে হাই ফাই এম্পলিফায়ার বাজানোর মজাই আলাদা। উপযুক্ত সাউন্ড বক্স এর মাধ্যমে তৈরীকৃত এমন ধরনের সাউন্ড সিস্টেমে অবশ্যই খুব উন্নত মানের জাপানী ক্যাপাসিটর ব্যবহার করা উচিৎ। আমাদের ইলেকট্রনিক্স সাইটে এ সংক্রান্ত তথ্যবহুল লেখা পড়তে পারেন এই লিংক থেকেঃ পাওয়ার এম্পলিফায়ার কিংবা আমাদের অডিও বিভাগ থেকে।
ছোট পিএফ (pF) ক্যাপাসিটরের মান কীভাবে নির্ণয় করবো
সাধারণত পিএফ ক্যাপাসিটরের মান গুলোকে কোডের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। যেমনঃ
101 – এর অর্থ হচ্ছে, এটির মান ১০০ পিএফ
102 – এর অর্থ হচ্ছে, এটি ১০০0 পিএফ বা ১ ন্যানো ফ্যারাড মানের, এভাবে…
105 – এর অর্থ হচ্ছে, এটির মান ১০০0০০০ পিএফ বা এটি ১ মাইক্রো ফ্যারাড মানের ক্যাপাসিটর
অর্থাৎ, ৩য় ঘরে যত মান দেয়া আছে ঠিক ততোগুলো “০” বসালে এই পিএফ (pF) ক্যাপাসিটরের মান পাওয়া যাবে। একে প্রয়োজনে ন্যানো ফ্যারাড বা মাইক্রোফ্যারাডে পরিবর্তন করে নিলেই এর ব্যবহারিক মান বের হবে।
শুধু মান ছাড়াও ক্যাপাসিটরে ব্যবহৃত কোড দিয়ে এর ভোল্টেজ, টলারেন্স প্রভৃতি নির্দেশিত থাকে।