বাড়ি ব্লগ পৃষ্ঠা 3

আরডুইনোতে ইপিরমের ব্যবহার – প্র্যাক্টিকাল প্রজেক্ট সহ

0

আরডুইনোতে ইপিরমের ব্যবহার করে আজকের টিউটোরিয়ালআরডুইনো নিয়ে আজকের টিউটোরিয়ালে আমরা শিখব কিভাবে আরডুইনোর ইপিরম (EEPROM) এর ব্যবহার করতে হয়। মাইক্রোকন্ট্রোলারে ইপিরম খুবই কমন একটি শব্দ। EEPROM এর সম্পূর্ণ অর্থ হল electrically erasable programmable read-only memory. অর্থাৎ যার মেমোরিকে বৈদ্যুতিক ভাবে রাইট ও ইরেজ করা যায়,

আরডুইনোর(ATmega328p) ইপিরমের সাইজ 2KB. তবে এর থেকে বেশী ডেটা সংরক্ষণের প্রয়োজন হলে এক্সারনাল ইপিরম ব্যবহার করা যেতে পারে।

ইপিরমের ব্যবহার - এক্সটারনাল ইপিরম
16Kb এর ইক্সটারনাল ইপিরম

বলে রাখা ভাল যে, আমি ইলেকট্রনিক্স/ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর কোন স্টুডেন্ট নই। জেনারেলের স্টুডেন্ট। ইলেকট্রনিক্স নিয়ে কাজ করতে ভাল লাগে তাই করি। আর ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্সেও পথচলা খুব বেশী দিনের নয়। তাই, স্বাভাবিক ভাবেই লেখাতে ভূলভ্রান্তি থাকতে পারে। যদি সেরকম কিছু পেয়ে থাকেন তাহলে আমাকে জানালে লেখা আপডেট করে দিবো।

আরডুইনোতে ইপিরমের ব্যবহার কেন করে? মাইক্রোকন্ট্রোলার এ স্থায়ীভাবে ডেটা সংরক্ষণের জন্য ইপিরমের ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আরডুইনোতে নিজস্ব ইপিরম লাইব্রেরী থাকায় অন্যান্য মাইক্রোকন্ট্রোলার অপেক্ষা আরডুইনোতে ইপিরমের ব্যবহার অনেক সহজ।

ইপিরমের ব্যবহার কেন করে

রিমোট দিয়ে এসি লোড নিয়ন্ত্রণ করার সার্কিট হয়ত আপনারা অনেকে দেখে কিংবা ব্যবহার করে থাকবেন। যেখানে বিদ্যুৎ চলে গিয়ে আবার আসলে লোড গুলো আগের অবস্থায় থাকে।

আরেকটু সহজে বুঝিয়ে বলি, মনে করুন আপনি একটি রিমোট কন্ট্রোল ডিভাইস কিনেছেন যেটা দিয়ে রুমের ফ্যান, লাইট অন-অফ করেন। ফ্যান চলছে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেল, কিছুক্ষণ পর আবার এল। তখন ফ্যান আবার চলতে থাকে। এই যে বিদ্যুৎ চলে যাবার আগে ফ্যান চলছিল এই বিষয় টা ডিভাইস মনে রাখে এবং বিদ্যুৎ এলে আবার ফ্যান চালু করে দেয়… এই পূর্ববর্তি অবস্থা মনে রাখার কাজটাই মূলত ইপিরম ব্যবহার করে করাহয়। তবে বাজারের সব ডিভাইসে এই সুবিধা থাকেনা। 😛

বিদ্যুৎ চলে যাবার সাথে সাথেই প্রয়োজন অনুযায়ী ইপিরমে ডেটা সংরক্ষণ করা হয় যাতে বিদ্যুৎ এলে ডিভাইস আগের অবস্থায় ব্যাক করতে পারে।

ইপিরম লাইব্রেরীর ফাংশন

ইপিরম লাইব্রেরীর ৪ টি ফাংশন রয়েছে (আমার জানা মতে)। তবে এর মধ্যে দুইটি ফাংশন বহুল ব্যবহৃত এবং অত্যাধিক প্রয়োজনীয়। ফাংশন দুইটি হলঃ

  1. EEPROM.write()
  2. EEPROM.read()

EEPROM.write() ফাংশন দিয়ে ইপিরমে ডেটা রাইট করা হয়। এই ফাংশনের প্যারামিটার দুইটি।

EEPROM.write(address, value)

প্রথম প্যারামিটার হল address এখানে একটা এড্রেস ডিফাইন করে দিতে হয়, যেই এড্রেসে ডেটা রাইট করা হবে। আর দ্বিতীয় প্যারামিটার হল value এখানে কি মান সংরক্ষণ করা হবে সেইটা দিতে হয়। তবে এটা মনে রাখা ভাল যে, value বাইট আকারে সংরক্ষণ করা হয়। যার মান 0 থেকে 255 এর মধ্যে হতে হবে। চলুন একটা উদাহরণ দেখে নিই তাহলে পরিস্কার হয়ে যাবে।

EEPROM.write('led', 1)

উপরের উদাহরণে দেখুন আমরা led নামে একটা এড্রেস ডিফাইন করেছি এবং তার মান দিয়েছি 1 .

Note: ইপিরমে ডেটা রাইট করতে মাত্র ৩.৩ মিলিসেকেন্ড সময় লাগে এবং ইপিরমের লাইফ সার্কেল হল 100,000। অর্থাৎ ১ লক্ষ্যবার ইপিরমে ডেটা লেখা/মুছে ফেলা যায়। তাই, এ ব্যাপারে অবশ্যই যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন। 🙂

এবার আসুন EEPROM.read() ফাংশনের কাজ নিয়ে জানা যাক। নাম শুনেই এর কাজ সম্পর্কে আশাকরি বুঝতে পেরেছেন। এই ফাংশন দিয়ে ইপিরম থেকে ডেটা রিড করা হয়। EEPROM.read() ফাংশনের প্যারামিটার একটা।

EEPROM.read(address)

প্যারামিটারে সেই এড্রেস দিতে হয় যেখান থেকে ফাংশনটি ডেটা তুলে আনবে। যদি এমন কোন এড্রেস দেওয়া হয় যেখানে কখনও ডেটা রাইট করা হয়নি তাহলে ফাংশনটি 255 রিটার্ন করবে। উদাহরণঃ

EEPROM.read('led')

তাহলে এই (led) এড্রেস থেকে ডেটা হিসাবে কত রিটার্ন করবে বলুন তো? হুম্ম ঠিকই বলেছেন 1 রিটার্ন করবে। তো আশাকরি বুঝতে পেরেছেন। চলুন এবার প্যাক্টিকাল প্রজেক্ট দেখা যাক।

প্র্যাক্টিকাল প্রজেক্ট

আমরা এমন একটা প্রজেক্ট বানাবো যেটা এন্ড্রয়েড মোবাইল দিয়ে ব্লুথের মাধ্যমে কন্টোল করা যাবে। খুবই সিম্পল। এন্ড্রয়েড ফোন থেকে আরডুইনোতে ডেটা হিসাবে 1 সেন্ড করলে একটি এলইডি জলে উঠবে আর 0 সেন্ড করলে এলইডি নিভে যাবে। এলইডি এর স্থানে রিলে কিংবা ট্রায়াক ব্যবহার করে এসি লোডও কন্টোল করা যাবে। এটা নিয়ে পরবর্তীতে কোন লেখা দিবো।

যা যা লাগবেঃ

  • Arduino UNO R3
  • HC5 Bluetooth Module
  • Red LED
  • 220 Ohm Resistor
  • Some wire

এবার নিচের ড্রায়াগ্রাম অনুযায়ী আরডুইনো, এলইডি এবং ব্লুটুথ মডিউলের মধ্যে কানেকশন দিন। সঠিকভাবে কানেকশন দিবেন। নাহলে ব্লুটুথ মডিউল নষ্ট হয়ে যাবে।

ইপিরমের ব্যবহার - কানেকশন ড্রায়াগ্রাম
কানেকশন ড্রায়াগ্রাম

কানেকশনঃ

কোডিং

খুবই সিম্পল একটা কোড লিখেছি আমরা। নিচের কোডটুকু কপি করে Arduino IDE তে পেষ্ট করুন। কিংবা পোষ্টের শেষে ডাউনলোড সেকশন থেকে .ino ফাইল টা ডাউনলোড করে Arduino IDE ওপেন করতে পারেন। Arduino IDE না থাকলে এখান থেকে (For windows, For android) ডাউনলোড করুন।

/*
 Contibuter: S.k.joy
 Web: http://skjoy.info
 E-mail: [email protected]
*/

// include the EEPROM library code:

#include <EEPROM.h>

    
    int LED= 13;  
    char input;  
    byte value;
    
    void setup(){  
      
      Serial.begin(9600);  
      
      /* Set LED as output */
      pinMode(LED, OUTPUT);
    }  
      
    void loop(){  
      if(Serial.available()>0){  
        
        /* Catch data from android via bluetooth module */
        input= Serial.read();  
        
        if(input=='1'){
          /* If receive 1 from android, trun on led */  
          digitalWrite(LED, HIGH);
          EEPROM.write('led', 1);
          delay(200);  
        }  
        if(input=='0'){
           /* If receive 0 from android, trun off led */  
          digitalWrite(LED, LOW);
          EEPROM.write('led', 0);  
          delay(200);  
        }
      }
      else{

       /* Read value from eeprom if Serial unavailable */
       value = EEPROM.read('led');
        
        if(value == 1){
           /* If receive 1 from eeprom trun on led */
          digitalWrite(LED, HIGH);
         }
         if(value == 0){
            /* If receive 1 from eeprom trun off led */
           digitalWrite(LED, LOW);
         }   
      }  
        
    }  

কোড ব্যাখা

যদিও কোডের মধ্যে কমেন্ট আকারে কোডের ব্যাখা দেওয়া হয়েছে, তারপরেও ছোট করে একটু ব্যাখা দেবার চেষ্টা করছি।

  • ৯ নং লাইনে ইপিরমের লাইব্রেরী যুক্ত করা হয়েছে।
  • ১২ নং লাইনে LED নামে একটি ভেরিয়েবল নিয়ে তাতে আরডুইনো ১৩ নং পিনকে স্টোর করা হয়েছে। এরপর ২১ নং লাইনে pinMode ফাংশনের মাধ্যমে LED ভেরিয়েবলে থাকা ১৩ নাম্বার পিনকে আউটপুট হিসাবে ডিফাইন করা হয়েছে।
  • ২৫ নং লাইনে if কন্ডিশনের মাধ্যমে চেক করা হয়েছে যে এন্ড্রয়েড থেকে ব্লুটুথ মডিউলের মাধ্যমে কোন ডেটা পাঠানো হচ্ছে কিনা।
  • ৩০ নং লাইনে চেক করা হচ্ছে যে, এন্ড্রয়েড থেকে যে ডেটা পাঠানো হচ্ছে সেটা ১ কিনা। যদি ১ হয় তাহলে এলইডি অন (৩২ নং লাইন) করো এবং ইপিরমে led নামক এড্রেসে মান হিসাবে ১ স্টোর করো।
  • ৩৬ নং লাইনে চেক করা হচ্ছে যে, এন্ড্রয়েড থেকে যে ডেটা পাঠানো হচ্ছে সেটা ০ কিনা। যদি ০ হয় তাহলে এলইডি অফ (৩৮ নং লাইন) করো এবং ইপিরমে led নামক এড্রেসে মান হিসাবে ০ স্টোর করো।
  • ৪৩ নং লাইনে else কন্ডিশনের মাধ্যমে বলা হচ্ছে এন্ড্রয়েড থেকে যদি কোন ডেটা না আসে তাহলে else কন্ডিশনের মধ্যে থাকা কোডগুলো কাজ করো। বোর্ডে পাওয়ার দিলেই else কন্ডিশনের মধ্যে থাকা কোডগুলো কাজ করা শুরু করবে।
  • ৪৬ নং লাইনে ইপিরম থেকে ডেটা রিড করা হচ্ছে।
  • ৪৮ নং লাইনে চেক করা হচ্ছে ইপিরমে যে ডেটা স্টোর হয়ে আছে সেটা ১ কিনা। যদি ১ হয় তাহলে এলইডি অন করো।
  • ৫২ নাম্বার লাইনে চেক করা হচ্ছে ইপিরমে যে ডেটা স্টোড় হয়ে আছে সেটা ০ কিনা। যদি ০ হয় তাহলে এলইডি অফ করো।

আশাকরি বোঝাতে পেরেছি। যারা প্রোগ্রামিং বেসিক টা জানেন তাদের কোডগুলো বুঝতে কষ্ট হবার কথা নয়। নতুনদের কথা মাথায় রেখেই একটু ব্যাখা দেবার চেষ্টা। 😛

এবার কোড কম্পাইল করে বোর্ডে আপলোড করার পালা। কিন্তু তার আগে আরডুইনো এবং ব্লুটুথ মডিউলের মধ্যে কানেকশন গুলো খুলে ফেলুন। প্রতিবার কোড আপলোড করার আগে এই কাজটি অবশ্যই করবেন। নাহলে আপনার এবং আমার সাধের ৩০০ টাকা দামের ব্লুটুথ মডিউলটা চিরদিনের জন্য নষ্ট হয়ে যাবে।  🙁

খুলেছেন? তাহলে এবার বোর্ডে কোড গুলো আপলোড করুন। আপলোড হয়ে গেলে বোর্ড থেকে পাওয়ার সাপ্লাই বিছিন্ন করে উপরের ড্রায়াগ্রাম অনুযায়ী ব্লুটুথ মডিউলের আরডুইনোর কানেকশন দিন। এবার বোর্ডে পাওয়ার সাপ্লাই দিন। দেখবেন, ব্লুটুথ মডিউলে একটি লাল এলইডি জলা নেভা করতে থাকবে।

এবার আপনার এন্ড্রয়েড ফোনের ব্লুটুথ অন করে সার্চ করুন। HC-05 নামে একটি ডিভাইস পাবেন। ঐটার সাথে পেয়ার করুন। পার্সওয়ার্ড চাইলে 1234 দিবেন। এবার এখান থেকে LED নামে এপটা ডাউনলোড করে আপনার এন্ড্রয়েড ফোন ইন্সটল করুন (একটু বিজ্ঞজনেরা Bluetooth terminal দিয়েও কাজ চালাতে পারবেন)।

এপসটি ওপেন করুন তাহলে পেয়ার করা ব্লুটুথ ডিভাইসের লিষ্ট পাবেন।

ইপিরমের ব্যবহার
পেয়ার করা ডিভাইসের লিষ্ট

সেখান থেকে HC-05 সিলেক্ট করুন। তাহলে আপনার এন্ড্রয়েড ফোন ব্লুটুথ মডিউলের সাথে কানেক্ট হয়ে যাবে। বুঝবেন কিভাবে যে কানেক্ট হয়েছে? কানেক্ট হলে ব্লুটুথ মডিউলের লাল রঙ এর এলইডির জলা নেভার স্পিড অনেক কমে যাবে এবং এপস টাতে Connected লেখা দেখিয়ে নতুন স্ক্রিনে চলে যাবে। যেখানে ON এবং OFF নামে দুইটি বাটন পাবেন। 😛

ইপিরমের ব্যবহার -এপসের ইউজার ইন্টারফেস
এপসের ইউজার ইন্টারফেস

এবার ON বাটনে ক্লিক করুন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আরডুইনোর ১৩ নং পিনের সাথে যুক্ত করা এলইডি টি জ্বলে উঠবে। OFF বাটনে ক্লিক করলে এলইডি টি নিভে যাবে।

ইপিরমের কার্যকারিতা চেক করা

এবার ইপিরমের কার্যকারিতা চেক করার পালা। এলইডি জলা অবস্থায় আরডুইনো বোর্ড থেকে পাওয়ার সাপ্লাই বিচ্ছিন্ন করুন। আবার সংযোগ দিন। কি দেখছেন? এলইডি নিজে থেকেই জ্বলছে তাইনা? তার মানে আপনি সফল হয়েছেন এবং সবকিছু একেবারে ঠিকঠাক কাজ করছে। (আহা কি আনন্দ আরডুইনোতে) 🙂

বিঃদ্রঃ সবকিছু রিয়েল হার্ডওয়ারে চেক করা। এটা ১০০% কাজ করে। আমার ফোনের ক্যামেরা টা তেমন ভালনা। তাই আর রিয়েল হার্ডওয়ারের ছবি দিলাম না। 🙁 তবে একটা ভিডিও দিলাম। 😛

ডাউনলোড

আপনাদের সুবিধার্থে ডাউনলোড লিংকগুলো একত্র করে দিলাম। আশাকরি ড্রপবক্স থেকে ডাউনলোড করতে কোন অসুবিধা হবেনা। 🙂

আরডুইনোতে ইপিরমের ব্যবহার নিয়ে এটাই ছিল আমার জগাখেচুরি টাইপের বিরক্তিকর লেখা। 😛 জানিনা কতটুকু বোঝাতে পেরেছি। তবে চেষ্টা করেছি সহজভাবে বোঝাতে। কোথাও বুঝতে অসুবিধা হলে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। ভাল থাকবেন সবাই। সময় সুযোগ হলে দেখা হবে পরবর্তীতে লেখাতে। 🙂

লেখাটি একই সাথে আমার ব্যাক্তিগত ব্লগ এবং আমাদের ইলেকট্রনিক্সে প্রকাশিত হল।

প্রশ্নোত্তরে লজিক গেইট, র‍্যাম ও ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্স

6
প্রশ্নোত্তরে লজিক গেইট, র‍্যাম ও ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্স
প্রশ্নোত্তরে লজিক গেইট, র‍্যাম ও ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্স

আজ প্রশ্নোত্তরে ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্স এর একটি মজার ও চমৎকার বিষয়- লজিক গেইট  (Logic gate) নিয়ে আপনাদের সামনে এসেছি। আশাকরি পড়ে মজা পাবেন এবং অজানা কিছু হয়ত জানতে পারবেন।

ভূমিকাঃ

আজকে আসলে যে বিষয়টি নিয়ে এসেছি তা হল ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্স এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ এবং মজার কিছু বিষয় নিয়ে। তা হল লজিক গেইট । AND, OR, NOT, XOR, NAND, NOR, XNOR এর নাম আমরা সবাই প্রায় কম বেশি শুনেছি। এগুলো কম্পিউটারে আসলে কিভাবে কাজ করে তা হয়ত আমাদের মধ্যে খুব কম লোকেরই জানা আছে। কিন্তু এগুলো জানা আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যারা মাইক্রোকন্ট্রোলারডিজিটাল ইলেকট্রনিক্স নিয়ে চর্চা করেন। তো চলুন শুরু করে দিই আমাদের ডিজিটাল যাত্রা।

ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্স কাকে বলে

ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্স বা ডিজিটাল সার্কিট হচ্ছে সেসমস্ত সার্কিট যারা ডিজিটাল সিগনাল নিয়ে কাজ করে। আর ডিজিটাল সিগনাল মানেই হচ্ছে আর (0 and 1) অর্থাৎ অন আর অফ।

লজিক গেইট

প্রশ্নঃ লজিক গেইট কি

উত্তরঃ সহজ কথায় শুরু করা যাক তাহলে। আমরা সবাই জানি কম্পিউটার শুধু বাইনারী কোড মানে ০ ও ১ ছাড়া আর কিছু বোঝে না। অর্থাৎ এর মধ্যে আপনি যাই কিছু ইনপুট দিন না কেন এটি সব কিছু কেই ০ ও ১ এ কনভার্ট করে নিবে। কিন্তু এই ০ ও ১ জিনিসটা কি? বলছি-

আমরা জানি ইলেকট্রনিক্স এর সব কিছু প্রায় ভোল্টেজ ও কারেন্ট এর সাথে সম্পর্কিত। তো কম্পিউটার এই ০ ও ১ দ্বারা কি বুঝে নেয়? কম্পিউটারের বা লজিক ডিজাইনের ভাষায় ০ বলতে বুঝায় সেখানে ০ ভোল্ট এপ্লাই করা হয়েছে বা ইনপুট ভোল্টেজ লো করা হয়েছে অর্থাৎ ইনপুট হিসেবে সেখানে কোন ভোল্টেজ ইনপুট দেওয়া হয় নি।

কিন্তু যখনই ১ বলা হবে তার মানে ইনপুট হিসেবে সেখানে ভোল্টেজ এপ্লাই করা হয়েছে বা সেখানে ভোল্টেজ হাই করা হয়েছে বা এভারেজে ৫ ভোল্ট (5 Volt) ইনপুট দেওয়া হয়েছে ।

আর কম্পিউটার এভাবেই টাইমিং ডায়াগ্রাম বা হাই-লো ভোল্টেজ আপ-ডাউনের মাধ্যমেই তার নেওয়া ইনপুট গুলোকে নিয়ে কাজ করে সঠিক আউটপুট দিয়ে থাকে । কিন্তু কাজ গুলোকে আমরা যত স্বাভাবিক ভাবে মুখে বলছি অত স্বাভাবিক ভাবে আসলে হয় না। অনেক গুলো ধাপ অতিক্রম করতে হয় এই কাজ গুলো করার জন্য । তো চলুন সেটিই দেখে নিই ।

লজিক সার্কিট এর কম্পোনেন্ট সমূহঃ

লজিক সার্কিট তৈরি করার জন্য আমরা ২ টি উপায় অবলম্বন করতে পারি । যথাঃ

  • ১। লজিক আই সি
  • ২। মসফেট

তবে এখানে আমি শুধু লজিক আইসি নিয়ে কথা বলব। তবে আপনারা যদি চান তাহলে আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী আমি আমার পরবর্তী লেখায় কিভাবে মসফেট দিয়েও লজিক সার্কিট বানানো যায় তা নিয়েও বিশদ আলোচনা করব। তবে এখানেও বেসিক কিছু বিষয় আলোচনা করব ইন শাহ আল্লাহ। তো চলুন বাজে না বকে শুরু করি।

লজিক আইসি সমুহ এবং তাদের কার্যক্রমঃ

নিচে বিভিন্নপ্রকার লজিক গেট আইসি সমূহ ও তাদের বেসিক কার্যক্রম তুলে ধরা হলো। এখানে উল্লেখ্য যে প্রাথমিক ভাবে বোঝার জন্য 74XX সিরিজের লজিক আইসি সমূহ বহুল ব্যবহৃত ও জনপ্রিয় বিধায় আজকের লেখায় তা নিয়েই বলেছি।

7404 ( NOT Gate – নট গেইট ):

এই মডেলের আইসি ব্যবহৃত হয় NOT গেইট এর ইমপ্লিমেন্টেশনে। অর্থাৎ এর ইনপুটে যদি আমরা ০ ভোল্ট এপ্লাই করি তাহলে আউটপুটে আমরা পাব ৫ ভোল্ট আবার ইনপুটে যদি ৫ ভোল্ট এপ্লাই করি তাহলে পাব ০ ভোল্ট। মজার না বিষয়টা? তবে এক্ষেত্রে আপনাকে আইসি টি অবশ্যই গ্রাউন্ড আর ভিসিসি সাপ্লাই (VCC) এর সাথে আগে থেকেই কানেক্ট করে নিতে হবে। এই আইসি টির সাপ্লাই পিন হল ১৪ আর ৭ নাম্বার পিনটি হল গ্রাউন্ড পিন।

7404 (Not Gate - নট গেইট আইসি এর আভ্যন্তরীণ গেট সমূহের সজ্জা)
7404 (Not Gate – নট গেইট আইসি এর আভ্যন্তরীণ গেট সমূহের সজ্জা)

7408 (AND Gate – এন্ড গেইট):

এটি ব্যবহার করা হয় এন্ড গেইট ইমপ্লিমেন্টেশনের জন্য। আমরা সাধারণত জানি গেইট এর ২ টি ইনপুট থাকবে। তবে বেশিও থাকতে পারে, কিন্তু এই আইসিটিতে ২ টি করে আলাদা আলাদা ইনপুট ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ আইসি প্রস্তুত কারক কোম্পানি এই ভাবেই তৈরি করেছে। এর ৭ নাম্বার পিনটি গ্রাউন্ড আর ১৪ নাম্বারটি পাওয়ার সাপ্লাই এর জন্য করা হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় এর ১ ও ২ , ৪ ও ৫, ৮ ও ৯ , ১১ ও ১২ নাম্বার পিনটি ইনপুট দেওয়ার জন্য করা হয়েছে । বাকি ৩,৬,১০,১২ নাম্বার পিনটি আউটপুটের জন্য করা হয়েছে। এর ইনপুটের যেকোন ২ পিনে ইনপুট দিলে এটি AND এর অপারেশন করে।

7408 AND - এন্ড লজিক গেটের আভ্যন্তরীণ সজ্জা
7408 AND – এন্ড লজিক গেটের আভ্যন্তরীণ সজ্জা

7432 (OR Gate – অর গেট):

এটি যোগের অপারেশন করে থাকে। পিন কনফিগারেশন পুরো আগের গেইটের মতই।

7432 OR - অর লজিক গেইট
7432 OR – অর লজিক গেইট

7400 (NAND Gate – ন্যান্ড গেইট):

এর অর্থ হল AND NOT. মানে এটা প্রথমে ইনপুট এ AND অপারেশন করে সেটাকে ইনভার্ট বা বিপরীত করে দিবে। এটা একটি ইউনিভার্সাল গেইট। আইসি টি ২ টি করে ইনপুট দেওয়ার জন্য প্যাকেজে বানানো। জেনে রাখা ভাল যে- আধুনিক বিশ্বে যত প্রসেসর, চিপ, মাইক্রো চিপ তৈরি করা হয় তার বেশিরভাগই এই ন্যান্ড গেইট টেকনোলজি মেনে করা হয়। এটা যেমন সহজ তেমনি নিখুঁত।

7400 NAND - ন্যান্ড লজিক গেটের আভ্যন্তরীণ চিত্র
7400 NAND – ন্যান্ড লজিক গেটের আভ্যন্তরীণ চিত্র

7402 (NOR Gate – নর গেইট):

এর মানে হল OR NOT। খুবই সহজ। আগের মতই কাজের ধরণ। কিন্তু এটা ২ টি ইনপুট কে আগে OR অপারেশন করে পরে ইনভার্ট বা বিপরীত উত্তর প্রদর্শন করে থাকে। এই আইসি টিও ২ টি করে ইনপুট দেওয়ার জন্য প্যাকেজে বানানো। এটাও একটি ইউনিভার্সাল গেইট। এটাও আগের মত বহুল ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

লজিক গেইট ব্যবহারের সতর্কতা

ডিজিটাল লজিক আইসি ব্যবহার এর বেশ কিছু সতর্কতা আছে। যেমনঃ

  • ১।  সাপ্লাই ভোল্টেজ ৫ এর বেশি দেওয়া যাবে না। তবে কিছু সিমস (CMOS) আইসি এর ব্যাতিক্রম।
  • ২। এগুলো খুব সেনসিটিভ হয়ে থাকে, অর্থাৎ একটুতেই নষ্ট হয়ে যায়। কি মাথায় ঢুকলো না বুঝি ? বলছি…

আমরা জানি মানব দেহে ২০,০০০ থেকে ৫৫,০০০ হাজার ভোল্টের স্ট্যাটিক চার্জ (Static Charge – স্থির বিদ্যুৎ) উতপন্ন হয়ে থাকে যা মাল্টি মিটার দিয়ে মাপলে বুঝা যায় না। আর আমরা যদি অন্যসব আইসি বা কম্পোনেন্ট এর মত এটিকেও খালি হাতে বা সবগুলো পিন একসাথে স্পর্শ করে নাড়াচাড়া করতে থাকি তাহলে এটির সমাধি সেখানেই হয়ে যাবে। তাছাড়া এই আইসি গুলোর দাম বাজারে বেশ। তাই আমরা আইসি গুলোর সরাসরি পিনে না ধরে দুই সাইডে দিয়ে ধরার চেষ্টা করব। ভালহয় যদি আমরা হাতে গ্লাভস পরে আইসি গুলো নাড়াচাড়া করি।

লজিক গেইট আইসির পাওয়ার সাপ্লাই

নিচের চিত্রে উদাহরণ স্বরূপ 74XX লজিক আইসি সমূহের পাওয়ার সাপ্লাই কেমন হওয়া উচিৎ তা দেখানো হল-

লজিক গেট আইসি সমূহের উদাহরণ মূলক পাওয়ার সাপ্লাই
লজিক গেট আইসি সমূহের উদাহরণ মূলক পাওয়ার সাপ্লাই

মসফেট দ্বারা তৈরি লজিক গেইটের কিছু উদাহরণ

এখানে মসফেট দিয়ে বানানো কিছু লজিক গেইটের সার্কিট ডায়াগ্রাম দেওয়া হল-

মসফেট দিয়ে সিমস ন্যান্ড গেইট এর উদাহরণ
মসফেট দিয়ে সিমস ন্যান্ড গেইট এর উদাহরণ
মসফেট দিয়ে তৈরি সিমন নর গেইট
মসফেট দিয়ে তৈরি সিমন নর গেইট

র‍্যাম(RAM) কি, এর প্রকারভেদ, উদাহরণ ও আলোচনা

র‍্যাম(RAM)

র‍্যাম এর পূর্ণরূপ হল Random Access Memory. অর্থাৎ সহজ কথায় অস্থায়ী স্মৃতি। কম্পিউটারের সব পার্টস এর সাথেই আমরা প্রায় কম বেশি পরিচিত। অনেক গুলো কম্পোনেন্ট একসাথে যুক্ত হয়ে একটি কম্পিউটার তৈরী করে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য গুলো হলঃ প্রসেসর, র‍্যাম, হার্ডডিস্ক, ডিভিডি রম গ্রাফিক্স কার্ড, মনিটর, কি বোর্ড, মাউস ইত্যাদি। আর এই সকল কম্পোনেন্ট সবগুলোকে যার সাথে যুক্ত করা হয় তার নাম হচ্ছে মাদার বোর্ড/মেইন বোর্ড/লজিক বোর্ড। এখানেই সকল কম্পোনেন্ট কে একসাথে জুড়েদিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ কম্পিউটার মেশিন তৈরী করা হয়। আর এদের মধ্যে র‍্যাম অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি কম্পোনেন্ট এর নাম।

মেমোরি কি

ইংরেজি মেমোরি শব্দের অর্থ স্মৃতি। কম্পিউটারের আভ্যন্তরীণ যেসকল যন্ত্রাংশ সমূহ এই স্মৃতিধারণ করতে সহায়তা করে তাকেই মেমোরি (Memory) বলে।

কম্পিউটারের স্মৃতি/মেমোরি (Memory) ‘র প্রকারভেদ

প্রথমেই আমরা জেনে নেই কম্পিউটারের কয় ধরনের মেমোরী বা স্মৃতির প্রয়োজন। সকল কম্পিউটারেরই প্রায় ২ ধরণের মেমোরী বা স্মৃতির প্রয়োজন। যথাঃ

  • ১। স্থায়ী স্মৃতি (Secondary memory)
  • ২। অস্থায়ী স্মৃতি (Primary memory)

স্থায়ী স্মৃতিঃ স্থায়ী স্মৃতি বলতে আমরা প্রধানত হার্ডডিস্ক, ফ্ল্যাশ মেমোরি, ইপরম, ইইপরম ইত্যাদিকে বুঝি। অর্থাৎ এদের ধারণ ক্ষমতা অনেক বেশি থাকে এবং এরা অনেক ডেটা একসাথে একই সময়ে স্টোর বা সেভ করে রাখতে পারে। এবং বিদ্যুৎ চলে গেলেও এই স্মৃতি/মেমোরি নষ্ট হয়না।

অস্থায়ী স্মৃতিঃ কিন্তু অস্থায়ী স্মৃতি বা র‍্যাম এর স্টোরেজ ক্যাপাসিটি হার্ড ডিস্কের মত এত বেশি হয় না। এটি যেকোন কাজ তাৎক্ষণিক লোড বা প্রসেস করার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ রিয়েল টাইম লোড প্রসেস ও দ্রুত গতির কাজ করার জন্য র‍্যাম ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার সাথে সাথে এই মেমোরির সব ডেটা আবার মুছে যায়। কিন্তু হার্ড ডিস্ক, ফ্ল্যাশ বা সেকেন্ডারি মেমোরিতে তা হয় না। কারেন্ট চলে যাওয়ার পরেও এটি বেশ ভাল ভাবেই সকল ডেটা সেভ রাখতে পারে।

কম্পিউটারের বিভিন্ন প্রকার স্মৃতি/মেমোরি
কম্পিউটারের বিভিন্ন প্রকার স্মৃতি/মেমোরি

র‍্যাম বা মেমোরি সংক্রান্ত মজার বিষয়ঃ

Random Access Memory (RAM-র‍্যাম) কে আরেক নামে ডাকা হয় Volatile Memory (ভোলাটাইল মেমোরি)। কারণ বিদ্যুৎ বা ভোল্টেজ চলে যাওয়ার সাথে সাথেই এটার আভ্যন্তরীন সকল ডাটা মুছে যায় সেই জন্যেই একে এ নামে ডাকা হয় । আধুনিক ডাটা স্টোরিং এবং মেমোরি ডিজাইনের ক্ষেত্রে এটিকে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়। তবে আমরা কিন্তু এটা একটু অন্য ভাবে ডাকতেই পারি বিশেষ করে মনে রাখার সুবিধের জন্য।

যেমন ধরুন, এর নাম হল ভোলা+টাইল = ভোলাটাইল। তো আমরা এমনটা ধরে নিতেই পারি, যে মেমোরি বিদ্যুৎ চলে গেলে তার স্মৃতি হারিয়ে ফেলে তাকেই ভোলাটাইল মেমোরি বা র‍্যাম (RAM) বলা হয়। মনে রাখার সহজ উপায় হিসেবে এটি বেশ কার্যকর 😉

বিভিন্ন র‍্যাম এর স্পেসিফিকেশনঃ

র‍্যাম বেশ কয়েক প্রকারের হয়ে থাকে। আকৃতি, তৈরী প্রণালী, ডেটা স্টোরিং ক্যাপাসিটি ও কাজের উপর ভিত্তি করে একে বেশ কয়েক প্রকারে ভাগ করা যায়। তবে এখানে আমরা শুধু ২ টি বিষয় নিয়ে জানব । সেগুলো হলঃ SRAM & DRAM .

SRAM: এর পূর্ণরূপ হল স্ট্যাটিক র‍্যান্ডম এক্সেস মেমোরি। এটি ট্রানজিস্টর দিয়ে তৈরী করা হয় ।
DRAM: এর পূর্ণরূপ হল ডায়নামিক র‍্যান্ডম এক্সেস মেমোরি। এটি তৈরী করা হয় ক্যাপাসিটর দিয়ে।

                                SRAM                                DRAM
এটি ট্রানজিস্টর দ্বারা তৈরী । এটি ক্যাপাসিটর দ্বারা তৈরী হয় ।
এগুলোর স্পিড আপেক্ষিক বেশি হয়ে থাকে । SRAM এর চেয়ে এটির স্পিড কম ।
অধিক জায়গা জুড়ে থাকে । তুলণামূলক ভাবে কম জায়গা নেয় ।

প্রশ্নঃ আমরা সাধারণত কম্পিউটারে রিফ্রেশ করি কেন?

উত্তরঃ মাঝে মাঝে আমরা আমাদের কম্পিটারের ডেস্কটপে এসে রাইট ক্লিক রিফ্রেশ করি এবং বেশ কয়েক বার করি। কিন্তু কেন? কি দরকার এটা করার? একবারও কি মনে হয়ছে? আচ্ছা, তো চলুন জেনে নিই।

কম্পিউটারের র‍্যাম এ DRAM যে অংশ থাকে সেখানে ক্যাপাসিটর গুলোকে অনেকক্ষণ যাবত ব্যবহার করার ফলে সেগুলো রিচার্জড না হওয়ায় অনেক সময় কম্পিউটার স্লো হয়ে কাজ করে। এটি কমানোর জন্যই আমরা কম্পিউটারে রিফ্রেশ বাটন চেপে রিফ্রেশ করি যাতে ক্যাপাসিটর গুলো পুণরায় চার্জ হয়ে আবার পরিপূর্ণ ভাবে কাজ করতে পারে এবং স্বাভাবিক কাজে যাতে কোন ব্যাঘাত না ঘটে।

হাল আমলের অপারেটিং সিস্টেমে গুলো এই কাজ নিজে নিজেই করতে পারে।  কিন্তু ইউজার দের পূর্ববর্তি হ্যাবিট ধরে রাখতে এই ব্যবস্থা এখনো উইন্ডোজে বিদ্যমান অপরদিকে লিনাক্সের অনেক অপারেটিং সিস্টেমেই এই ডেস্কটপ রিফ্রেশ অপশন নেই।

সমাপ্তিঃ

আশা করি আজকে আমরা ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্সের গুরুত্বপূর্ণ অংশ লজিক গেইট এর সামান্য অংশ শিখতে পারলাম। তবে আপনারা যদি চান তাহলে এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানা সম্ভব যেমন বুলিয়ান অ্যালজেবরা, ডিজিটাল লজিক ডিজাইন, গেইট ডিজাইন, ফ্লিপ ফ্লপ, ফাজি লজিক ইত্যাদি। যদি কোন বিষয় এখনও অস্পষ্ট থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। তার যথাযথ উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব, ইন-শাহ-আল্লাহ। আজকে আর আগাচ্ছি না। হয়ত আগামীর কোন সংখ্যায় আবার কোন এক উদ্ভট লেখা বা কাজ নিয়ে আসব আপনাদের সামনে । সবাই ভাল থাকবেন ।
টাটা বাই বাই। এবার আমি বাড়ি যাই 🙂 🙂 🙂

বৈদ্যুতিক লাইনে গ্রাউন্ডিং এর প্রয়োজনীয়তা ও ইলেকট্রিক শক

2
বৈদ্যুতিক লাইনে গ্রাউন্ডিং এর প্রয়োজনীয়তা ও ইলেকট্রিক শক
বৈদ্যুতিক লাইনে গ্রাউন্ডিং এর প্রয়োজনীয়তা ও ইলেকট্রিক শক

বিদ্যুৎ আমাদের জন্য আশির্বাদ স্বরূপ। আধুনিক যুগে বিদ্যুৎ ছাড়া কোন কিছুই চিন্তা করা যায় না। সেই সাথে বৈদ্যুতিক শক হলো জীবননাশকারী একটি ব্যাপার। এসি বিদ্যুত আবিষ্কার করবার পর, এটা যে প্রাণঘাতী এবং তা ব্যবহার করা ঠিক হবে না এই প্রচারে আলভা এডিসন নেমেছিলেন তার ডিসি বিদ্যুতের বাজার ঠিক রাখবার জন্য।

আমাদের বাসাবাড়িতে ২২০ ভোল্টের বিদ্যুত ব্যবহার করা হয় এবং বড়যন্ত্র সহ ট্রান্সমিশন লাইনে আরও বেশী ভোল্টেজ থাকতে পারে। আমাদের ব্যবহার করা অনেক যন্ত্র কম ভোল্টেজে চলবার পরও কাজের প্রয়োজনে বেশী ভোল্টেজ উৎপন্ন করতে পারে এর ভিতরের সার্কিট এর মাধ্যমে। তাই ইলেকট্রিক শক থেকে বাঁচবার জন্য সাধারণত গ্রাউন্ডিং বা আর্থিং করা হয়ে থাকে যন্ত্রপাতি ও লাইন। এতে করে শক পাওয়া বন্ধ করা না গেলেও তা যেন প্রাণঘাতি না হয় সে ব্যাপারে কিছুটা হলেও ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

হবিস্ট থেকে শুরু করে প্রফেশনাল পর্যন্ত আমরা যারা সার্কিট নিয়ে কাজ করি তাদের বৈদ্যুতিক শক সম্বন্ধে সচেতন থাকা একান্ত প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। সাধারণত আমাদের তৈরী করা সার্কিট থেকে একটি তারের মাধ্যমে আমরা লাইন স্থাপন করা হয় যে বাক্সে, তাতে গ্রাউন্ড সংযোগ করি নয়েজ ও শক প্রতিরোধ করবার জন্য। অনেক সময় কম্পিউটারের গায়ে হাত লাগলে আমরা মৃদু শক অনুভব করি এই কারণেই। সঠিক ভাবে গ্রাউন্ডিং/আর্থিং না থাকবার ফলে এই শকের ঘটনা ঘটে।

আমরা যদি আমাদের বাড়ির বৈদ্যুতিক সংযোগ দেখি তবে দেখবো যে মিটারের সাথে বা মুল কানেকশন থেকে একটি জি আই তারের (GI Wire) মাধ্যমে লাইন টেনে তা মাটিতে স্থাপন করা হয় যা গ্রাউন্ডিং এর কাজে লাগে। এটা ঠিক মতো না থাকলে বা নিয়ম অনুযায়ী স্থাপন না করলে আপনার বাড়িতে বৈদ্যুতিক সংযোগ হবার কথা না। তবুও অনেক বাড়িতে এটা ঠিক ভাবে থাকে না। এই ঠিক না থাকবার বিষয়টি সাধারণত অজ্ঞতা ও অবহেলার কারণে হয়ে থাকে যা মোটেও ঠিক না। এর ফলে বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনার ফলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে এবং সচরাচর হয়েও থাকে। সুতরাং এই গ্রাউন্ডিং নিয়ে অবহেলা করা উচিৎ না।

বাসা বাড়িতে তিন পিনের প্লাগ ব্যবহার করা হয়ে থাকে মুলত এই গ্রাউন্ডিং নিশ্চিত করবার জন্যই কিন্তু আমরা দুই পিনের প্লাগ ব্যবহার করেই অভ্যস্ত যা সেফটির দিক থেকে ঠিকনা যদিনা সঠিক গ্রাউন্ডিং না থাকে। নীচের ছবিটা আসুন দেখি –

বৈদ্যুতিক শক এর মূল কারন কি তা ডায়াগ্রাম আকারে দেখানো হয়েছে
বৈদ্যুতিক শক এর মূল কারন কি তা ডায়াগ্রাম আকারে দেখানো হয়েছে

Vc = (Vs X R2)/(R1+R2)

এখানে R2 এর মান শূণ্য হলে অর্থাত গ্রাউন্ডিং লাইনের কানেকশন থাকলে চেসিসের গায়ে কোন ভোল্টেজ থাকবে না। কিন্তু R2 এর মান অসীম হলে বা R2 না থাকলে একটি ভোল্টেজ থাকবে যা বিপজ্জনক হতে পারে। একে বলে স্ট্রে ইমপিডেন্স (Stray Impedance)। এই স্ট্রে ইমপিডেন্সের কারণেই অনেক সময় কম্পিউটার বা মেটাল কেবিনেট যুক্ত বৈদ্যুতিক যন্ত্রতে হাত দিয়ে স্পর্শ করলে শকের অনুভূতি পাওয়া যায়। আর এই R2 টিই গ্রাউন্ডিং বা অন্যভাবে আর্থিং বলে।

আশাকরি গ্রাউন্ডিং কেন প্রয়োজন একটু হলেও পরিষ্কার হয়েছে সবার কাছে।

এখন এসি লাইন যদি চেসিসের সাথে কোন কারণ বশত শর্ট হয় তবে বাঁচবার কোন রাস্তা থাকে না এবং সরাসরি বিদ্যুত শরীরদিয়ে প্রবাহিত হয়ে মৃত্যুর ঝুকি সৃষ্টি করে। আরেকটি ডায়াগ্রাম থাকলে বিষয়টি বুঝতে সুবিধা হবে, তাহলে চলুন দেখি –

এখানে গ্রাউন্ড লাইন সঠিক থাকলে মানুষ স্পর্শ করবার পরেও প্রবাহিত মোট বিদ্যুত দুই ভাগে ভাগ হয়ে প্রবাহিত হবে। গ্রাউন্ড লাইনের রোধ কম হওয়াতে বেশীরভাগ বিদ্যুত গ্রাউন্ড লাইন দিয়ে প্রবাহিত হবে এবং মানুষের শরীর দিয়ে কম বিদ্যুৎ যাবে।

এতে করে খুব অল্প শক খাবার পরও মানুষের বেঁচে যাবার একটি সম্ভাবনা থাকে তবে যদি গ্রাউন্ড লাইন না থাকে তবে সম্পুর্ণ বিদ্যুত শরীরের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হবার কারণে মারাত্মক শক হবে যা প্রাণঘাতী হবার সম্ভবনাই বেশী।

এখানে উল্লেখ্য যে শুকনো অবস্থায় মানুষের শরীরের রোধ ১ লক্ষ ওহম পর্যন্ত হতে পারে তবে ভেজা অবস্থায় তা ১০০০ ওহম থেকে কয়েক ওহমে নেমে আসতে পারে। এর জন্যই ভেজা শরীরে শক বেশী মারাত্মক হয় এবং ভেজা শরীরে বৈদ্যুতিক কাজ করা বেশী বিপদ জনক।

এই ছোট্ট লিখা থেকে সঠিক গ্রাউন্ডিং/আর্থিং এর প্রয়োজনীয়তা আশা করি বুঝা গেছে। তাই গ্রাউন্ডিং নিয়ে আর অবহেলা নয়। আজই আপনার বাড়িতে সঠিক গ্রাউন্ডিং আছে কিনা তা পরীক্ষা করে নিন এবং না থাকলে তা সঠিক ভাবে স্থাপন করবার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করুণ।

বিদ্যুত আশীর্বাদ তবে বৈদ্যুতিক শক জীবনঘাতি এটা মনে রাখবেন। এবং সেই সাথে এটা মনে রাখতে হবে বিদ্যুত কোন অবস্থায়ই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কাওকে কোন প্রকার খাতির যত্ন করবে না।

কৃতজ্ঞতা: ইএফওয়াই।

এলডিআর/এলডিয়ার (LDR) পরিচিতি, ব্যবহার ও মজার সার্কিট

6
এলডিআর/এলডিয়ার (LDR) পরিচিতি, ব্যবহার ও মজার সার্কিট

এলডিআর/এলডিয়ার (LDR) খুব মজার একটি জিনিস। এর বেশ কিছু চমতকার ব্যবহার আছে। হাইফাই অডিও এমপ্লিফায়ার, সিগনাল কম্প্রেশন থেকে শুরু করে মজার মজার প্রজেক্টসার্কিট এর মাধ্যমে তৈরি করা সম্ভব। আজকে এই মজার জিনিস টি নিয়েই লিখছি সাথে থাকছে মজার একটি সার্কিট।

LDR পরিচিতি

এলডিআর/এলডিয়ার (LDR) কি?

এলডিআর/এলডিয়ার (LDR) হচ্ছে আলোক নির্ভর রেজিস্ট্যান্স যার উপরে আলো পড়লে আলোর তীব্রতা অনুযায়ী এর রোধ কম বা বেশি হয়। LDR এর পূর্ণঅর্থ – লাইড ডিপেন্ডেন্ট রেজিস্টর। এর নির্দিষ্ট কোন ভ্যালু থাকেনা। তবে এর সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন ভ্যালু থাকে। এর আরো একটি জনপ্রিয় নাম ফটো রেজিস্টর।

সাধারণত ছোট এলডিআর গুলোর ১ মেগা ওহম পর্যন্ত রেজিস্ট্যান্স হয়। যেখানে বড় গুলোর রেজিস্ট্যান্স ১০০ কিলো ওহম বা এর আশেপাশে হতে পারে। আর সর্বনিম্ন রেজিস্ট্যান্স কয়েক ওহম পর্যন্ত হয়ে থাকে।

উল্লেখ্য যে বাজারে দুই ধরণের এলডিআর পাওয়া যায়।

  • ১. আলো পড়লে রেজিস্ট্যান্স কমে (বাজারে এটিই বেশী পাওয়া যায়)
  • ২. আলো পড়লে রেজিস্ট্যান্স বাড়ে 

কাজেই এলডিআর কিনে অবশ্যই মিটার দিয়ে পরীক্ষা করে নেয়া উচিৎ এলডিয়ার টি কোন ধরণের।

যেকোন ধরণের এলডিআর কেই সার্কিট এর সংযোগ পদ্ধতি পরিবর্তন করে প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ করানো সম্ভব। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলছি, সাধারণ রেজিস্টরের মতই এর কোন পোলারিটি নেই। অর্থাৎ এর দুই পা কে উল্টো করে সংযোগ দিলেও কাজ করবে।

এলডিআর দেখতে কেমন

নিচের চিত্রে বিভিন্ন রকমের এলডিআর দেখতে পাচ্ছি-

বিভিন্ন আকৃতির এলডিয়ার/এলডিআর
বিভিন্ন আকৃতির এলডিয়ার/এলডিআর

ইলেকট্রনিক্স সার্কিট ডায়াগ্রাম গুলোতে সাধারণত এর চিহ্ন এমন দেখানো হয়-

এলডিয়ার/এলডিআর এর সিম্বল
এলডিয়ার/এলডিআর এর সিম্বল

অর্থাৎ একটি রেজিস্টরের উপরে আলোর আপতিত হচ্ছে এমন। ঐ তীর চিহ্নগুলো দিয়ে আলোক রশ্মি বোঝায়।

কোথায় পাওয়া যায় এলডিআর, দাম কেমন?

ইলেকট্রনিক পার্টস বিক্রি করে এমন প্রায় সব ধরণের দোকানেই এলডিআর পাওয়া যায়। প্রয়োজনে মোবাইল এ করে এর ছবি নিয়ে দোকানদার কে দেখাতে পারেন, অবশ্যই পাবেন। এর দাম মূলত নির্ভর করে এর আকৃতির উপরে। বড় এলডিআর এর দাম বেশি, অপরদিকে ছোট গুলোর দাম কম হয়ে থাকে। ৫-১০ টাকা থেকে শুরু করে ৭০ টাকা পর্যন্তও হয়।

জ্ঞাতব্যঃ কোন ইলেকট্রনিক পার্টসের দাম এলাকা ও বাজার ভেদে ভিন্ন হতে পারে

এলডিআর এর ব্যবহার

এলডিআর দামে সস্তা ও সহজলভ্য হবার কারণে এর প্রচুর ব্যবহার রয়েছে, যেমন-

  • মোটামুটি মানের আলো পরিমাপক যন্ত্রপাতিতে (উন্নত মানের পরিমাপক যন্ত্রে ফটো ডায়োড বা ফটো ট্রানজিস্টর ব্যবহার করা হয়)
  • আলো নির্ভর সন্ধ্যা বাতি তৈরিতে (ডার্ক সেন্সর/লাইট সেন্সর)
  • আলো নির্ভর প্রক্সিমিটি সেন্সর হিসেবে 
  • আলো/লেজার নির্ভর সিকিউরিটি সিস্টেমে
  • আলোক উজ্জ্বলতা নিয়ন্ত্রক ডিভাইস যেমন অটো ব্রাইটনেস কন্ট্রোলার, 
  • লাইন ফলোয়ার রোবট তৈরী করতে
  • আলো নির্ভর মিউজিক্যাল বেল তৈরী করতে, ইত্যাদি।

এলডিআর দিয়ে মজার সার্কিট

নিচে একটি মজার ইলেকট্রনিক সার্কিট নিয়ে সংক্ষিপ্ত ভাবে লিখছি।

অডিও ভলিউম কন্ট্রোল সিস্টেম

আমরা অডিও ভলিউম কন্ট্রোলের জন্য ভেরিয়েবল রেজিস্টরের বহুল ব্যবহার জানি। এর স্বল্প মূল্যের জন্য এটি খুবই সমাদৃত। কিন্তু এর বেশ বড় একটা সমস্যা আছে। সময়ের সাথে সাথে ঘর্ষন জনিত কারণে নয়েজ সৃষ্টি হয়। তখন ভলিউম একটু কমালে বা বাড়ালেই স্পিকারে “খস-খস” শব্দ করে যা গানের শ্রুতি মধুরতা নষ্ট করে।

এ সমস্যা নিরসনের জন্য উন্নতমানের এমপ্লিফায়ার সিস্টেমে সরাসরি এম্প সিস্টেম এর সাথে ভলিউম ব্যবহার করা হয় না। এর পরিবর্তে ব্যবহার করা হয় এলডিআর/এলডিয়ার। খুব দামী এম্প গুলোতে অপটোকাপলার ও ব্যবহার করা হয়। নিচের ডায়াগ্রাম টি এমনি একটি সরল এলডিআর নির্ভর ভলিউম কন্ট্রোলার সিস্টেম-

এলডিআর/এলডিয়ার দিয়ে ভলিউম কন্ট্রোল সিস্টেম
এলডিআর/এলডিয়ার দিয়ে ভলিউম কন্ট্রোল সিস্টেম

কার্যপ্রণালী

সার্কিট টির কার্যপ্রণালী অত্যন্ত সরল, কিন্তু খুবই কার্যকর। সাধারণ ভলিউম কন্ট্রোল দিয়ে একটি লাল এলইডি এর উজ্জ্বলতা কমানো বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। লাল এলইডি এর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বেশি হবার কারণে এলডিয়ার এর রেসপন্স ভালো হয়। মূলত ভলিউম কন্ট্রোল টি ট্রানজিস্টর এর বায়াসিং কে কাজে লাগিয়ে এলইডি এর উজ্জ্বলতা কম-বেশি করছে। ক্যাপাসিটর টি ভলিউম ঘোরাবার সময়ে সামান্যতম নয়েজ ও ফিল্টার করে দিচ্ছে ফলে আউটপুটে প্রাপ্ত সিগনাল একদম নিখুঁত পাওয়া যায়।

এখানে বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য যে এলইডি ও এলডিআর কে মুখোমুখি অবস্থানে স্থাপন করতে হবে। সহজ বুদ্ধি হচ্ছে এলইডি কে হটগ্লু দিয়ে এলডিআর এর উপরে লাগিয়ে দেওয়া। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন বাইরের আলো এলডিয়ার এর উপরে না পড়ে।

স্বভাবতই উৎসাহী পাঠক বুঝে নিয়েছেন যে এটিকে একটু পরিবর্তন করলেই ডিজিটাল ভলিউম কন্ট্রোল বানানো সম্ভব। পরের অনুচ্ছেদে তাই নিয়েই লিখছি।

এলডিয়ার দিয়ে ডিজিটাল ভলিউম কন্ট্রোল সিস্টেম

একই ডায়াগ্রামের শুধু ভলিউম আর কিছু আনুষাঙ্গিক পার্টস বাদ দিয়ে একে ডিজিটাল কন্ট্রোলার করে ফেলা যায়। নিচের ডায়গ্রাম টি দেখি-

এলডিয়ার ও পিডব্লুএম সিগনাল দিয়ে ডিজিটাল ভলিউম কন্ট্রোল
এলডিয়ার ও পিডব্লুএম সিগনাল দিয়ে ডিজিটাল ভলিউম কন্ট্রোল

যারা মাইক্রোকন্ট্রোলার নিয়ে কাজ করেন তারা পিডব্লুএম (PWMসম্পর্কে অবশ্যই অবগত আছেন। একটি নির্দিষ্ট পালস এর স্থায়ীত্ব কমিয়ে বাড়িয়ে আউটপুট নিয়ন্ত্রন করা হয়। এখানেও ঠিক একই কাজ করা হয়েছে।

মাইক্রোকন্ট্রোলার থেকে পিডব্লুএম সিগনাল টি ট্রানজিস্টর এর বেইজ এ দেয়া হয়েছে। যার ফলে পালস এর স্থায়ীত্বকাল অনুযায়ী এলইডি এর উজ্জ্বলতা কম বেশি হবে। আর এই আলো এলডিয়ার এ পড়বার ফলে সেটির রেজিস্ট্যান্স ও পরিবর্তীত হবে।

প্রয়োজনে ট্রানজিস্টর ব্যবহার না করে সরাসরি মাইক্রোকন্ট্রোলারে পিন থেকেও এলইডি সংযোগ দেয়া যেতে পারে।

উপরোক্ত দু’টি ডায়াগ্রামই এক চ্যানেলের জন্য। অর্থাৎ স্টেরিও করতে চাইলে একই রকম দুটি সার্কিট তৈরি করতে হবে।

এখানে উল্লেখ থাকে যে অডিও ইন থেকে শুরু করে অডিও আউট পর্যন্ত তার গুলো Shielded audio cable হতে হবে। উন্নত মানের মাইক্রফোন, হেডফোনে যে সমস্ত অডিও ক্যাবল ব্যবহার করা হয় তা ব্যবহার করলেও চলবে। নয়ত স্পিকারে প্রচুর হামিং নয়েজ আসবে। এবং অবশ্যই এলডিআর ও এলইডি কে কালো টেপ দিয়ে মুড়িয়ে দিতে হবে যাতে বাইরের আলো না প্রবেশ করে।

ইন্টারনেটে এধরনের অসংখ্য সার্কিট আছে। একটু খুঁজলেই অনেক ধরণের পাবেন। যেমন-

ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত এলডিয়ার ভলিউম ও গেইন কন্ট্রোল সিস্টেম
ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত এলডিয়ার ভলিউম ও গেইন কন্ট্রোল সিস্টেম

তবে সবগুলো কাজ নাও করতে পারে।

এলইডি ও এলডিআর স্থাপন

এখন গুরুত্বপূর্ণ একটি বিশয়ে বলছি। এলডিয়ার ও এলইডি কে কিভাবে স্থাপন করতে হবে সে সম্পর্কে। নিচের চিত্রটি দেখুন। আশাকরি বুঝতে পারবেন-

এলইডি ও এলডিয়ার/এলডিআর কে এভাবে গায়ে গায়ে লাগিয়ে দিলে ভালো হবে
এলইডি ও এলডিয়ার/এলডিআর কে এভাবে গায়ে গায়ে লাগিয়ে দিলে ভালো হবে

গায়ে গায়ে লাগানোর জন্য হটগ্লু বা সুপারগ্লু জাতীয় আঠা ব্যবহার করতে পারেন। ডানের চিত্রে দেখতে পাচ্ছেন অনেক গুলো এলডিয়ার কে বড় একটি এলইডি (10mm) এর চারিপাশে লাগানো হয়েছে। মূলত এলডিআর গুলোর সবগুলো পিন কে প্যারালাল করে আউটপুট নেয়ে হয়েছে এখানে। এরফলে এলইডি এর সামান্য আলোও এর রেজিস্ট্যান্স কে কম বেশি করতে পারবে।

**উপরোক্ত সার্কিটে প্রদত্ত সবগুলো এলডিআর এমন যে তাদের উপর আলো পড়লে রোধ কমে। এর উল্টোটা হলে এই সার্কিটে কাজ হবে না।

**আমাদের সাইটে প্রকাশিত এলডিআর সংক্রান্ত অন্যান্য লেখা পাবেন LDR লিংক থেকে

সমাপ্তি

আজকের মত আপাতত এটুকুই। সামনে মজার একটি প্রজেক্ট স্মার্ট ইমার্জেন্সি এলইডি লাইট  এর বিস্তারিত ডায়াগ্রাম ও কার্যপদ্ধতি নিয়ে হাজির হবো। 🙂

সহজ ভাবে ভোল্টেজ, কারেন্ট, পাওয়ার ফ্যাক্টর ও আনুষাঙ্গিক বিষয়

11
সহজ ভাবে ভোল্টেজ, কারেন্ট, পাওয়ার ফ্যাক্টর ও আনুষাঙ্গিক বিষয়

ভোল্টেজ, কারেন্ট, ওয়াট, পাওয়ারপাওয়ার ফ্যাক্টর সম্পর্কে কমবেশি সবারই আগ্রহ প্রচুর। সেই সূত্র ধরেই আজকের এই লেখা। প্রশ্নোত্তরে সাজানো এই লেখাটি পড়ে আশাকরি ছোটবড় সবাই উপকৃত হবেন।

ভোল্টেজ কি বা ভোল্টেজ কাকে বলে?

ভোল্টেজ (Voltage): কোন পরিবাহীর অভ্যন্তরে থাকা ইলেকট্রন সমূহকে স্থানচ্যুত করতে যে বল বা চাপের প্রয়োজন হয় তাকে বিদ্যুৎ চালক বল বা ভোল্টেজ বলে। ভোল্টেজ এর প্রতীক চিহ্ন হলো V এবং এর একক হলো Volt (ভোল্ট)।

ভোল্টেজ কিভাবে মাপে?

ভোল্টেজ মাপবার যন্ত্রের নাম ভোল্ট মিটার। এই ভোল্ট মিটারের টেস্ট প্রোব দুটি কে বিদ্যুতের উৎসের দুই প্রান্তে সংযুক্ত করে ভোল্টেজ পরিমাপ করতে হয়। নিচের চিত্রটি দেখলে বুঝতে সুবিধে হবে আশাকরি-

মাল্টিমিটারের অভ্যন্তরে থাকা ভোল্ট মিটার দিয়ে ব্যাটারি ভোল্টেজ মাপা হচ্ছে
মাল্টিমিটারের অভ্যন্তরে থাকা ভোল্ট মিটার দিয়ে ব্যাটারি ভোল্টেজ মাপা হচ্ছে (ছবিসত্ত্বঃ Sparkfun)

এখানে বিদ্যুৎ উৎস হিসেবে বামে পেন্সিল ব্যাটারি ও ডানে লিথায়াম আয়ন ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে। এর কানেকশন ডায়াগ্রাম যদি লক্ষ্য করি তাহলে তা নিচের চিত্রের মত দেখাবে। এখানে উল্লেখ্য যে মাল্টিমিটারের লাল প্রোব টি ব্যাটারির পজেটিভ প্রান্তে এবং কালো প্রোব টি নেগেটিভ প্রান্তে যাবে।

ভোল্ট মিটার দিয়ে কোন ব্যাটারির ভোল্টেজ মাপার চিত্র ও ডায়াগ্রাম
ভোল্ট মিটার দিয়ে কোন ব্যাটারিভোল্টেজ মাপার চিত্র ও ডায়াগ্রাম

এছাড়াও আরো ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ভোল্টেজ পরিমাপ করা সম্ভব। যেমন সার্কিট এর অভ্যন্তরে বিভিন্ন পার্টস ঠিকমত ভোল্টেজ পাচ্ছে কিনা প্রভৃতি। রিপেয়ারিং কাজের ক্ষেত্রে সার্কিট এর বিভিন্ন পার্টসের এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশের ভোল্ট মেপে ত্রুটি নির্ণয় করা হয়।

কারেন্ট কি বা কারেন্ট কাকে বলে?

কারেন্ট (Current): পরিবাহীর মধ্যকার ইলেকট্রন সমূহ নির্দিষ্ট দিকে প্রবাহিত হওয়ার হারকে কারেন্ট বলে। অর্থাৎ পরিবাহীর মধ্যে ইলেকট্রনের প্রবাহই ইলেকট্রিক কারেন্ট। কারেন্টের প্রতীক চিহ্ন – I. একক Ampere (A)

কারেন্ট কত প্রকার?

কারেন্ট কে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায় যথা-

  1. এসি বা অল্টারনেটিং কারেন্ট (AC – Alternating Current)
  2. ডিসি বা ডাইরেক্ট কারেন্ট (DC – Direct Current)
  3. এডি কারেন্ট (Eddy Current)

অ্যাম্পিয়ার/এম্পিয়ার কি?

এম্পিয়ার (Ampere): কোন পরিবাহীর যে কোন অংশের মধ্য দিয়ে এক কুলম্ব চার্জ এক সেকেন্ড সময় ধরে প্রবাহিত হলে উক্ত পরিমান চার্জকে ১ অ্যাম্পিয়ার/এম্পিয়ার বলে।

কারো কারো এখানে জটিল লাগতে পারে যে কারেন্ট ও এম্পিয়ার আলাদা ভাবে কেন সংজ্ঞায়িত করা হলো? এর উত্তর হচ্ছে কারেন্টের পরিমাপ করা হয় এম্পিয়ার দ্বারা।

এম্পিয়ার/কারেন্ট কিভাবে মাপে?

এম্পিয়ার মাপবার মিটার কে এমিটার (Ammeter) বা এম্পিয়ার মিটার বলে। এম্পিয়ার/অ্যাম্পিয়ার মাপবার জন্য এমিটার কে লোডের সিরিজে সংযুক্ত করতে হয়। নিচের চিত্র মোতাবেক-

অজ্ঞাত লোডের এম্পিয়ার মাপতে এম্পিয়ার মিটার কে সিরিজে সংযুক্ত করতে হয়
অজ্ঞাত লোডের এম্পিয়ার মাপতে এম্পিয়ার মিটার কে সিরিজে সংযুক্ত করতে হয়

এখানে উল্লেখ্য সরাসরি ব্যাটারির এম্পিয়ার মাপা সম্ভব নয় এ ধরণের মাল্টিমিটার বা এম্পিয়ার মিটার দ্বারা।

ওয়াট কি?

ওয়াট (Watt): সহজ ভাবে বললে ক্ষমতার একক হচ্ছে ওয়াট। আমরা জানি যে কোন যন্ত্র তা ইলেকট্রিকাল, ইলেকট্রনিক কিংবা ম্যাকানিকাল হোক না কেন চলবার জন্য শক্তির প্রয়োজন হয়। তেমনি ভাবে কোন যন্ত্র/লোড নির্দিষ্ট সময়ে কতটুকু শক্তি খরচ করে কোন কাজ সম্পূর্ণ করতে পারে সে হিসাব কেই ওয়াট বলে।

ওয়াট কিভাবে নির্ণয় করে?

ওয়াট বের করতে ওহম এর সূত্র (Ohm’s law) অনুযায়ী DC এর ক্ষেত্রে-

P = V×I = I2×R = V2÷R

 

 

অর্থাৎ,

  • P = V×I অথবা
  • P = I×R অথবা
  • P = V2/R

এই তিন ভাবে প্রকাশ করা যায়।

ওয়াট বের করতে ওহম এর সূত্র (Ohm’s law) অনুযায়ী AC এর ক্ষেত্রে-

P = V×I×p.f

= I2×R×p.f

= (V2×p.f)÷R

 

অর্থাৎ,

  • P = V×I×P.F অথবা
  • P = I2×R×P.F অথবা
  • P = (V2×P.F)÷R

এই তিন ভাবে প্রকাশ করা যায়।
এখানে,

P = Power যার একক হলো Watt
I = Current যার একক হলো Ampere
V = Voltage যার একক হলো Volt
R = Resistance যার একক হলো Ohms
PF = Power Factor, ফেজ এঙ্গেল এর মান (Cosϴ)

ওহম এর সূত্র সম্পর্কে মজা করে জানতে চাইলে আমাদের সাইটে প্রকাশিত ওহমের সূত্র – একটি বৈজ্ঞানিক সূত্রের অবৈজ্ঞানিক প্রমাণ লেখাটি পড়তে পারেন

ওয়াট কিভাবে মাপে?

ওয়াট মাপবার জন্য ওয়াট মিটার ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও ওহম এর সূত্র দ্বারা বের করা যায় যা উপরোক্ত পরিচ্ছেদে দেওয়া হয়েছে। নিচের চিত্রে অত্যাধুনিক ডিজিটাল ও এনালগ ওয়াট মিটার এর ছবি দেওয়া হলো-

অত্যাধুনিক ডিজিটাল ওয়াট মিটার ডানের টি এনালগ ওয়াট মিটার
অত্যাধুনিক ডিজিটাল ওয়াট মিটার ডানের টি এনালগ ওয়াট মিটার

পাওয়ার ফ্যাক্টর কি?

পাওয়ার ফ্যাক্টর (Power Factor – P.F): ভোল্টেজ ও কারেন্টের মধ্যবর্তী কোসাইন কোণ (Cosϴ) কে পাওয়ার ফ্যাক্টর বলে৷ অন্যভাবে বলা যায়- রেজিস্ট্যান্স এবং ইম্পিড্যান্স এর অনুপাত অথবা প্রকৃত শক্তি (Real Power) এবং আপাত শক্তির (Apparent Power) অনুপাতকে পাওয়ার ফ্যাক্টর (P.F) বলে৷

এসি লাইনে ভোল্টেজ ও কারেন্টের মধ্যবর্তি কোসাইন (Cosϴ) কোণ কে পাওয়ার ফ্যাক্টর বলে
এসি লাইনে ভোল্টেজ ও কারেন্টের মধ্যবর্তি কোসাইন (Cosϴ) কোণ কে পাওয়ার ফ্যাক্টর বলে

ইহার কোন একক নাই, শতকরা (%) হিসাবে প্রকাশ করা হয় ৷

সঠিক পাওয়ার ফ্যাক্টর (p.f) এর মান জানা না থাকলে, হিসেব করার সময় আদর্শ মান হিসেবে পাওয়ার ফ্যাক্টর ৮০% ধরে অর্থাৎ p.f = 0.8 (ল্যাগিং) ধরে হিসাব করা হয়৷

পাওয়ার ফ্যাক্টর তিন প্রকার যথা-

  • ল্যাগিং পাওয়ার ফ্যাক্টর (Lagging Power Factor)
  • লিডিং পাওয়ার ফ্যাক্টর (Leading Power Factor)
  • ইউনিটি পাওয়ার ফ্যাক্টর (Unity Power Factor)

সামনে অ্যাক্টিভ পাওয়ার, রিঅ্যাক্টিভ পাওয়ার, পাওয়ার ফ্যাক্টর কারেকশন নিয়ে বিস্তারিত লেখা আসছে তাই এ মুহুর্তে আর লেখা বাড়ালাম না। এছাড়াও ইন্ডাক্টর, ক্যাপাসিটেন্স, ইম্পিডেন্স, ফ্রিকুয়েন্সি ইত্যাদি নিয়ে লিখবো আশাকরি।

সম্পাদনা – সৈয়দ রাইয়ান

বিভিন্ন অডিও সিস্টেম ও অডিও রেকর্ডিং সিস্টেমের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

3
বিভিন্ন অডিও সিস্টেম ও অডিও রেকর্ডিং সিস্টেমের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
বিভিন্ন অডিও সিস্টেম ও অডিও রেকর্ডিং সিস্টেমের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

১৮৫৭ সালে শব্দ ধারনের জন্য প্রথম যন্ত্র আবিস্কার হয় যার নাম ফনোটোগ্রাফ এবং যার আবিষ্কর্তা এডওয়ার্ড লিয়ন স্কট মার্টিন (Édouard-Léon Scott de Martinville) নামের ফরাসী এক ছাপাখানার মালিক ও বই বিক্রেতা।

এই যন্ত্রে শুধুমাত্র শব্দ ধারণ করা যেতো কিন্তু শব্দকে আবার শুনবার কোন ব্যবস্থা ছিলো না। শুধুমাত্র শব্দ তরঙ্গের আকার-প্রকার কে ধারক এর মধ্যে কেমন হয় সেটা দেখা যেতো। পরবর্তীতে বিখ্যাত আমেরিকান উদ্ভাবক ও আবিস্কারক টমাস এডিসন (Thomas Edison) ১৮৭৭ সালে ধারনকৃত শব্দকে পুনরুৎপাদনের জন্য তৈরী করেন ফনোগ্রাফ বা গ্রামোফোন।

পদ্ধতিটা ছিলো একটি চোঙ এর সামনে শব্দ তৈরী করলে যে কাপুনি তৈরী হয় তা একটি মোম/সমজাতীয় বস্তুর ঘুর্নায়মান ও ক্রম চলমান ড্রামের উপর সুক্ষ পিনের সাহায্যে ধারণ করে আবার সেটাকে প্রথম থেকে সেট করে ঘুরিয়ে ধারন করা শব্দকে বাজানো। মুলত এটিই প্রথম অডিও রেকর্ডিং সিস্টেম ও শব্দ ধারণ করবার প্রাথমিক ইতিহাস।

বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন ও তাঁর আবিষ্কৃত ফনোগ্রাফ/গ্রামোফোন মেশিনের পেটেন্ট
বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন ও তাঁর আবিষ্কৃত ফনোগ্রাফ/গ্রামোফোন মেশিনের পেটেন্ট

এর মাঝে অনেক বিজ্ঞানী এটাকে অগ্রসরের জন্য কাজ করেছেন। যার ফলশ্রুতিতে শব্দ ধারণ ও পুনরুৎপাদন এখন একটি বড় শিল্প। বিশ্বে গড়ে উঠেছে বড় বড় স্টুডিও। সিনেমাতে শব্দ ও গান শুনবার জন্য শব্দকে ধারণ ও পুনরুৎপাদন করতে গিয়ে মূলত এই শিল্প ও টেকনোলজীর বিকাশ ঘটেছে।

প্রথম দিকের সম্পুর্ণ মেকানিক্যাল ডিভাইস থেকে বর্তমানে এটা ডিজিটাল প্রযুক্তিতে পরিণত হয়েছে। প্রথম দিকের এক চ্যানেল থেকে এখন এটা সর্বোচ্চ ১১ চ্যানেল হয়েছে।

বিভিন্ন অডিও চ্যানেল ও শব্দ পুনরুৎপাদন পদ্ধতির বিকাশ

এই এক চ্যানেল বা একটি ধারণ মাধ্যম কে সাধারণ ভাবে মনো সাউন্ড বলা হয়ে থাকে। বুঝবার সুবিধার জন্য যদি ধরি একটি গানের কথা। একটি গান গাইবার সময় গায়ক ছাড়াও যন্ত্র বাজানোর জন্য আরও একাধিক ব্যক্তি থাকে।

এখন এই মনো পদ্ধতিতে যদি একটি মাত্র মাইক্রোফোনের মাধ্যমে শব্দ ধারণ করা যায় তবে ঐ এক চ্যানেলেই গায়কের গলা ও তার সাথে বাজানো শব্দ রেকর্ড হবে। এবার এই ধারণ করা শব্দ যত আধুনিক পুনরুৎপাদন যন্ত্র দ্বারাই বাজানো হোক না কেনো সেটা ঐ এক চ্যানেলকেই বাজাবে। অর্থাৎ এটা মনো শব্দই থাকবে।

প্রথম দিকে এই মনো শব্দই ধারণ করা হতো কিন্তু দিন যাবার সাথে সাথে এটা বুঝা গেলো যে এভাবে ধারণ করা শব্দ বাস্তব লাগে না, কারণ আমাদের কান দুইটি এবং গায়ক গান গাইবার সময় গায়কের গলা ও বাদ্য যন্ত্রের সকল শব্দ এভাবে ধারণ ও পুনরুৎপাদন করলে আমরা সব শব্দ আসলে বাস্তবের মতো শুনতে পাই না।

এরপর আসলো স্টেরিও শব্দ ধারণ পদ্ধতি অর্থাৎ দুই চ্যানেলে শব্দকে ধারণ করা। এবং তা আবার দুই চ্যানেলেই পুনরুৎপাদন করা। মেকানিক্যাল যুগ থেকে শব্দ ইলেকট্রিক্যাল যুগে প্রবেশ করবার পর এটা করা সম্ভব হলো। শব্দকে শুধু ধারন ও পুনরুৎপাদন করাই নয় সম্ভব হলো একে বিবর্ধিত করা, পরিবর্তন করা ও পরিবর্ধিত করা।

দুটো আলাদা শব্দ বিবর্ধক দিয়ে দুই চ্যানেলে ধারণ করা শব্দকে বিবর্ধিত করবার পাশাপাশি, দুই কান যেন বুঝতে না পারে দুই পাশে দুই রকম শব্দ হচ্ছে – এমন সমস্যা মিক্সিং এর মাধ্যমে দূরকরা হলো। এটাকে বলে অডিও মাল্টিপ্লেক্সিং – আমাদের কান যেনো বুঝতে না পারে শব্দ দুই দিক থেকে দুই রকম আসছে।

একবার ভাবুন তো গান হচ্ছে, আপনার দুই পাশে দুটো স্পীকার। একটি থেকে খালি গায়কের গলা আর একপাশ থেকে শুধু বাজনা আসছে কেমন লাগবে শুনতে!!! মোটেও শ্রুতিমধুর লাগবে না এটা। এই সমস্যা তাই দূরকরা হলো। এই অল্প কিছুদিন আগের ম্যাগনেটিক টেপ দিয়ে আপনার শোনা গান (ক্যাসেট প্লেয়ার) আসলে এই স্টেরিও প্রযুক্তি ছিলো। এর জন্যই এর নাম স্টেরিও বলতেও শোনা যেতো।

শ্রবণ ক্ষমতা নির্ভর অত্যাধুনিক ডিজিটাল অডিও সিস্টেম এর ব্লক ডায়াগ্রাম
শ্রবণ ক্ষমতা নির্ভর অত্যাধুনিক ডিজিটাল অডিও সিস্টেম এর ব্লক ডায়াগ্রাম

এরপর শব্দ ডিজিটাল জমানায় আসলো – শুরুটা হয়েছিলো ২:১ প্রযুক্তি দিয়ে যাতে করে শব্দকে আরও ডিটেইল ভাবে ধারণ করা যায় সেই সাথে শুনবার জন্য পুনরুৎপাদন করা যায়। এখন এটা ৫:১ থেকে এখন ১০:১ পর্যন্ত আছে। এর বাইরেও বিভিন্ন আকারে প্রকারে আছে শ্রোতার পছন্দ ও চাহিদা অনুযায়ী। নিচে এমনি একটি ৫:১ অডিও সিস্টেমের ছবি দেখতে পাচ্ছি-

একটি ৫:১ অডিও স্পীকার সিস্টেম
একটি ৫:১ অডিও স্পীকার সিস্টেম

আমি স্টেরিও ও মনো সাউন্ড নিয়ে আসলে বলতে চেয়েছি এখানে। স্টেরিও মনো সাউন্ড আসলে কি তা আশা করি বুঝা গেছে। আসল ব্যাপার হলো রেকর্ডিং পর্যায়। রেকর্ডিং যদি মনো হয় তবে যত চ্যানেলেই বাজানো হোক না কেনো সেটা কখনই স্টেরিও সাউন্ড দিবে না। আবার স্টেরিও রেকর্ডিং করা থাকলে সেটা এক চ্যানেলে বাজালেও সম্পুর্ণ না হোক কিছুটা হলেও স্টেরিও শব্দের অনুভুতি দেবে।

মনো অডিও সিস্টেম

শব্দ পুনরুৎপাদন যন্ত্র (এমপ্লিফায়ার) যখন একটি ইনপুট থেকে সিগনাল নিয়ে একটি আউটপুট দিবে তখন তা মনো সিস্টেম। আবার যদি একটি ইনপুট থেকে নিয়ে দুটো আউটপুট দেয় তবে সেটা আউটপুট সাপেক্ষে স্টেরিও হলেও কাজ করবে মনো সিস্টেমের মতো। একটি ইনপুট ও একটি আউটপুট থাকবে যেখানে তা আভ্যন্তরীন গঠনে যাই হোক না কেনো সেটা মনো।

স্টেরিও অডিও সিস্টেম

যার দুটো আলাদা অডিও ইনপুট ও দুটো আলাদা অডিও আউটপুট থাকবে সেটা স্টেরিও অডিও সিস্টেম। এইক্ষেত্রে দুই চ্যানেল সম্পুর্ণ স্বাধীন থাকবে অর্থাৎ  এক চ্যানেলে সিগনালের উপস্থিতি ও অনুপস্থিতির জন্য আরেক চ্যানেলের শব্দ গ্রহণ ও পুনরুৎপাদনে কোন ব্যাঘাত ঘটবে না।

ব্রীজ এমপ্লিফায়ার অডিও সিস্টেম

অনেক সময় একটি স্টেরিও এমপ্লিফায়ার কে একটি ইনপুট দিয়ে আউটপুটকে ব্রীজ করে একটি আউটপুটের এমপ্লিফায়ারে পরিণত করা হয়। এটাকে বলা হয় ব্রীজ করা, সাধারণ ভাবে ব্রীজ এমপ্লিফায়ার নামে ডাকা হয় যা আসলে একটি স্টেরিও এমপ্লিফায়ারকে মনো এমপ্লিফায়ারে পরিণত করে। এতে কিছু সুবিধা পাওয়া যায় তবে মনে রাখতে হবে যে-

  • ব্রীজ করা থাকুক আর না থাকুক একটি ইনপুট ও একটি আউটপুটের সকল এমপ্লিফায়ার মনো এমপ্লিফায়ার।
  • দুটো স্বতন্ত্র ইনপুট ও আউটপুট সহ এমপ্লিফায়ার হলো স্টেরিও এমপ্লিফায়ার।
  • কোন এমপ্লিফায়ারের দুটো ইনপুট শর্ট করে একটি ইনপুটে পরিণত করলে আউটপুট দুটো হলেও দেখতে স্টেরিও হবে কিন্তু কাজ করবে মনো এমপ্লিফায়ারের মতো।

তোমাদের/আপনাদের জানবার আগ্রহের প্রেক্ষিতে এই লেখা। কোথাও বুঝতে সমস্যা হলে বা আরও কিছু জানবার থাকলে কমেন্ট অপশন খোলা রইলো। ধন্যবাদ।

সহজ ভাষায় সার্কিট ব্রেকার সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

22
সহজ ভাষায় সার্কিট ব্রেকার সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
সহজ ভাষায় সার্কিট ব্রেকার সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

সার্কিট ব্রেকার (Circuit Breaker) আমরা কমবেশি সবাই দেখেছি। মূলত প্রচলিত কাট আউট, ফিউজ এর আধুনিক রূপ এটি।

এই গুরুত্বপূর্ণ জিনিসটি আপানার আমার বাসা-বাড়ির সকল ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিকে রক্ষা করে। কিন্তু কিভাবে এটি কাজ করে তা অনেকেই জানিনা।

আজকে তাই নিয়েই লিখছি। একই সাথে কতো মানের সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করা উচিৎ ও সার্কিট ব্রেকার লাগানোর নিয়ম নিয়েও লিখবো।

পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা ডিপ্লোমা পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রিদের আশাকরি উপকার হবে।

সার্কিট ব্রেকার কি?

সার্কিট ব্রেকার হচ্ছে নিরাপত্তা প্রদানকারী অর্ধ স্বয়ংক্রিয় (semi automatic) যন্ত্র বিশেষ।

এটি এমন একটি ইলেকট্রিক্যাল বা ইলেকট্রনিক যন্ত্র যা অপর কোন ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক যন্ত্রকে নিরাপদ রাখে।

কোন কারণে এসি লাইনে যদি অতিরিক্ত পরিমান বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় তাহলে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। যন্ত্রপাতি পুড়ে যাওয়া থেকে শুরু করে আগুন লাগাও বিচিত্র নয়। যেমন-

  • কোন কারণে যদি এসি লাইনে শর্ট সার্কিট (Short Circuit) ঘটে,
  • মাত্রাতিরিক্ত লোড লাগানো (ওভার লোড), কিংবা
  • যদি কোন কারণে আপনার বাসার লাইন ভোল্টেজ বেড়ে যায় (ফলে কারেন্টের প্রবাহ বৃদ্ধি হয়)।

এসমস্ত ক্ষেত্রে সার্কিট ব্রেকার নিজে থেকেই ট্রিপ (Trip) করে বা বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে মূল্যবান যন্ত্রপাতি কে রক্ষা করে।

সার্কিট ব্রেকার কে আবিষ্কার করেছিলেন?

প্রাথমিক ভাবে বিখ্যাত বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন ১৮৭৯ সালে তাঁর পেটেন্টে সার্কিট ব্রেকারের বর্ণনা করেন। যদিও তাঁর বাণিজ্যিক যন্ত্রগুলোতে পরবর্তিকালে ফিউজ ব্যবহার করাহয়।

মূলত তাঁর আবিষ্কৃত ফিলামেন্ট বাল্ব ও আলোক বিতরণী সার্কিট সমূহকে দূর্ঘটনাবশত শর্ট সার্কিট এবং ওভার লোড থেকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যেই এটি ব্যবহৃত হয়েছিল।

পরবর্তীকালে ১৯২৪ সালে ক্ষুদ্রকায় সার্কিট ব্রেকারের পেটেন্ট করেন Brown, Boveri & Cie নামক কোম্পানি যা আধুনিক সার্কিট ব্রেকার গুলোর পথ প্রদর্শক।

দেখতে কেমন?

বাসা-বাড়িতে ব্যবহৃত সার্কিট ব্রেকার গুলো মিনিয়েচার সার্কিট ব্রেকার (MCB) নামেও পরিচিত।

সেগুলোর আকার বেশ ছোট। চালু ও বন্ধ করার জন্য তার সামনে একটি লিভার (lever) মত থাকে যাকে অপারেটর (Operator) নামে ডাকা হয়।

নিচে বেশ কয়েক ধরণের সার্কিট ব্রেকারে চিত্র দেয়া হলো-

বাসা-বাড়িতে বহুল ব্যবহৃত সার্কিট ব্রেকারের চিত্র, একে MCB ও বলে
বাসা-বাড়িতে বহুল ব্যবহৃত সার্কিট ব্রেকারের চিত্র, একে MCB ও বলে

অপরদিকে পাওয়ার সাবস্টেশনে ব্যবহার হয় আরো বড় আকারের হাই ভোল্টেজ সার্কিট ব্রেকার-

পাওয়ার সাবস্টেশনে ব্যবহৃত হাই ভোল্টেজ সার্কিট ব্রেকার
পাওয়ার সাবস্টেশনে ব্যবহৃত হাই ভোল্টেজ সার্কিট ব্রেকার

এছাড়াও ইলেকট্রনিক সার্কিট ব্রেকারও আছে। নিচে পিসিবি তে তৈরি এমনি একটি ইলেকট্রনিক ব্রেকারকে দেখতে পাচ্ছি-

পিসিবি তে প্রস্তুতকৃত ইলেকট্রনিক সার্কিট ব্রেকার যা আলাদা ব্যাটারি পাওয়ার দিয়েও চলতে সক্ষম
পিসিবি তে প্রস্তুতকৃত ইলেকট্রনিক সার্কিট ব্রেকার যা আলাদা ব্যাটারি পাওয়ার দিয়েও চলতে সক্ষম

আভ্যন্তরীন গঠন

নিচের ছবিতে আমরা সাধারণ বাসা-বাড়িতে বহুল ব্যবহৃত সার্কিট ব্রেকারের অভ্যন্তরীন গঠন দেখতে পাচ্ছি।

একে এমসিবি বা মিনিয়েচার সার্কিট ব্রেকার নামেও ডাকা হয় (MCB – Miniature Circuit Breaker) তা আগেই জেনেছি।

চিত্র খেয়াল করলে MCB টিতে বামে কালো রঙের লিভার সুইচ যাকে Operator বলে, তা দেখতে পাচ্ছি।

উপরে ও নিচে আপার টার্মিনাল ও লোয়ার টার্মিনাল দ্বয় দেখা যাচ্ছে যার মাধ্যমে কোন সাপ্লাই থেকে লোডে সংযোগ দেয়া হয়।

সাধারণ সার্কিট (MCB) ব্রেকারের অভ্যন্তরীণ গঠন
সাধারণ সার্কিট (MCB) ব্রেকারের অভ্যন্তরীণ গঠন

নিচের চিত্রে একটি হাই ভোল্টেজ সার্কিট ব্রেকারের পার্শ্বচ্ছেদের চিত্র ও তারই পাশে ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারদের কে তা পাওয়ার সাবস্টেশনে বসানোর চিত্র দেখতে পাচ্ছি।

হাই ভোল্টেজ সার্কিট ব্রেকারের আভ্যন্তরীন ও প্রায়োগিক চিত্র
হাই ভোল্টেজ সার্কিট ব্রেকারের আভ্যন্তরীন ও প্রায়োগিক চিত্র

নিচের ড্রইংটিতে আমরা ২৫ কিলো ভোল্ট সিংগেল ফেজ এয়ার সার্কিট ব্রেকারের আভ্যন্তরীন বিভিন্ন অংশ সমূহ দেখতে পাচ্ছি-

২৫ কিলো ভোল্ট সিংগেল ফেজ এয়ার সার্কিট ব্রেকারের আভ্যন্তরীন বিভিন্ন অংশ সমূহ
২৫ কিলো ভোল্ট সিংগেল ফেজ এয়ার সার্কিট ব্রেকারের আভ্যন্তরীন বিভিন্ন অংশ সমূহ

সার্কিট ব্রেকারের সিম্বল

নিচে এর ইলেকট্রকাল সিম্বল দেখতে পাচ্ছি যেখানে-

  • A – ম্যানুয়েল টাইপ
  • B – থার্মাল ওভার লোড টাইপ ও
  • C – ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক ওভার লোড টাইপ
সার্কিট ব্রেকারের সিম্বল সমূহ
সার্কিট ব্রেকারের ইলেকট্রিক্যাল/ইলেকট্রনিক সিম্বল সমূহ

সার্কিট ব্রেকার কত প্রকার

সার্কিট ব্রেকারকে নিম্নোক্ত ভাগে ভাগ করা যায়-

আমরা বাসা বাড়িতে যেসব মিনিয়েচার টাইপ সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করি সেগুলো সাধারণত লো ভোল্টেজ টাইপের সার্কিট ব্রেকার।

অন্যান্য ধরণের সার্কিট ব্রেকারের মধ্যে আছে-

  • আরসিডি বা রিসিডিউয়াল কারেন্ট ডিভাইস (RCD) – এটি সম্পূর্ণ বর্তনিতে প্রবাহিত কারেন্টের ভারসাম্য পর্যবেক্ষণ করে। কোন কারণে এই কারেন্টের ভারসাম্য নষ্ট হলে (যেমনঃ আর্থ (Earth) এবং লাইভ (Live) তার শর্ট হলে বা মাত্রার অতিরিক্ত পরিমাণ বিদ্যুৎ আর্থ এ প্রবেশ করলে) এটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন বা ট্রিপ (Trip) করে। কিন্তু এটিতে ওভার লোড প্রোটেকশন ব্যবস্থা থাকে না।
  • রিসিডিউয়াল কারেন্ট ব্রেকার উইথ ওভার কারেন্ট প্রোটেকশন (RCBO) – উপরোক্ত সুবিধা সহ এটিতে ওভার লোড প্রোটেকশন ব্যবস্থা সংযুক্ত থাকে।
  • আর্থ লিকেজ সার্কিট ব্রেকার (ELCB) – এটি সরাসরি আর্থ লাইন দ্বারা প্রবাহিত কারেন্টের মাত্রার উপরে মূল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। বর্তমানে এই ধরণের ডিভাইস আর তেমন ব্যবহার হয়না কারণ এ ধরণের ডিভাইস বিভিন্ন সঙ্কটাপন্ন অবস্থার পার্থক্য ধরতে অপারগ।

উপরিউক্ত ৩টি সার্কিট ব্রেকার মূলত আর্থ বা গ্রাউন্ড ফল্ট থেকে যন্ত্রপাতি ও ব্যবহারকারী কে সুরক্ষা দিতে ব্যবহৃত হয়।

কিভাবে কাজ করে সার্কিট ব্রেকার

আমরা আগেই জেনেছি যে, কোন কারণে যদি ওভারলোড হয় বা শর্ট সার্কিট ঘটে তাহলে সার্কিট ব্রেকার স্বয়ংক্রিয় ভাবে বন্ধ হয় যায়।

কিন্তু কিভবে এই কাজটি ঘটে তা বেশ মজার। আগ্রহী পাঠকের জন্য সে ব্যাখ্যাটিই তুলে ধরছি। তবে বিভিন্ন ধরণের সার্কিট ব্রেকারে এই পদ্ধতিটিও ভিন্ন।

ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক টাইপ সার্কিট ব্রেকারের ক্ষেত্রে

একতি স্প্রিং চালিত পুশ টু অন সুইচ ব্যবহার করা হয় এই কাজে।

অনেকটা কলিং বেলে বহুল ব্যবহৃত গোলাকার পুশ সুইচের মতোই, কিন্তু এটি আরো দৃঢ় ও সুসংবদ্ধ।

এর সাথে ব্যবহার করা হয় একটি স্প্রিং লোডেড আয়রন বোল্ট। নিচের চিত্র দেখলে বুঝতে সুবিধা হবে আশাকরি-

সরল ভাবে ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক সার্কিট ব্রেকারের কার্য প্রণালি
সরল ভাবে ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক সার্কিট ব্রেকারের কার্য প্রণালি
  • সম্পূর্ণ ব্যবস্থাটি এমন ভাবে সাজানো থাকে যার ফলে পুশ সুইচ কে চেপে অন করা হলে তা নির্দিষ্ট স্থানে আটকে যায় অপরদিকে সুইচের ২ প্রান্ত কে পরষ্পর সাথে সংযুক্ত করে দেয়। চিত্রে  কমলা রঙ  দ্বারা সুইচের স্পর্শক প্রান্ত (Contact point) দেখানো হয়েছে।
  • অপরদিকে, নির্দিষ্ঠ স্থানে আটকে রাখা বা “লক” করবার জন্য ব্যবহৃত আয়রন বোল্ট টির ঠিক পেছনেই একটি ইলেকট্রো ম্যাগনেট রাখা হয়। এটি প্রকৃতপক্ষে সলিনয়েড (Solenoid) বা তারের কুণ্ডলী যার মধ্য দিয়ে কারেন্ট প্রবাহিত হলে এটি অস্থায়ী চুম্বকে পরিণত হয়।
  • সম্পূর্ন ব্যবস্থাটি এমন ভাবে করাহয় যেন-
    1. স্প্রিং লোডেড পুশ সুইচ কে অন করলে লোডে পাওয়ার পাবে, একই সাথে
    2. সলিনয়েডের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হবে এবং একে অল্প পরিমানে চুম্বকায়িত করবে।
  • এই ব্যবস্থার ফলে নির্দিষ্ঠ সীমার অতিরিক্ত লোড লাগানো হলে উক্ত সলিনয়েডের মধ্যদিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহের পরিমাণ বেড়ে যাবে। ফলে সলিনয়েড টি নির্দিষ্ঠ সীমার অতিরিক্ত পরিমাণ চুম্বকায়িত হয়ে  স্প্রিং বোল্ট কে নিজের দিকে টেনে নিয়ে পুশ সুইচ কে মুক্ত করে দিবে।
  • পুশ সুইচ টি মুক্ত হয়ে তার আভ্যন্তরীন স্প্রিং এর চাপে নিজেকে উপর দিকে ঠেলে উঠিয়ে দেবে যার ফলে স্পর্শক প্রান্তদ্বয় মুক্ত হয়ে যাবে যা লোডের থেকে পাওয়ারকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক সার্কিট ব্রেকারে ওভার লোড হলে অভ্যন্তরে যা ঘটে
ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক সার্কিট ব্রেকারে ওভার লোড হলে অভ্যন্তরে যা ঘটে

ওভার লোড হলে কিংবা শর্ট সার্কিট ঘটলে এই প্রক্রিয়ায় এ ধরণের ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক সার্কিট ব্রেকার স্বয়ংক্রিয় ভাবে লোডের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে সমূহ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।

এখানে উল্লেখ্য যে প্রায় সব ধরণের সার্কিট ব্রেকারই সেমি অটোমেটিক বা অর্ধ স্বয়ংক্রিয়। অর্থাৎ, ওভার লোডের কারণে এটি বন্ধ হলে একে ম্যানুয়ালি অন করতে হয়।

থার্মাল ওভার লোড টাইপ সার্কিট ব্রেকার

ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক ওভারলোড টাইপ সার্কিট ব্রেকারের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি ইলেকট্রো ম্যগানেট টি ওভার লোডের ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রাখছে।

একই ভাবে থার্মাল ওভার লোড টাইপ সার্কিট ব্রেকারের ক্ষেত্রে এই কাজটি করে দ্বীধাতু (bi metal) নির্মিত একটি পাত।

আমরা জানি যে কোন পরিবাহী ধাতুর মধ্যদিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে পারে। এবং এর মধ্যদিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহের সময় ধাতুটি গরম হয়।

একই ভাবে দ্বীধাতু নির্মিত পরিবাহির মধ্যদিয়েও বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে পারে। কিন্তু গরম হলে দ্বীধাতু তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বেঁকে যায়।

চিত্রে সরল ভাবে থার্মাল ওভার লোড টাইপ সার্কিট ব্রেকারের কাজ দেখানো হয়েছে

কাজেই থার্মাল ওভার লোড টাইপ সার্কিট ব্রেকারে ওভার লোড হলে তার অভ্যন্তরস্থ দ্বীধাতু নির্মিত অংশটি অতিরিক্ত কারেন্ট প্রবাহের কারণে গরম হয়ে বেঁকে যায় যা উক্ত পুশ সুইচ কে অফ পজিশনে নিয়ে গিয়ে ওভার লোড বা শর্ট সার্কিটের হাত থেকে লোড কে বাঁচায়।

ইলেকট্রনিক ওভার লোড টাইপ সার্কিট ব্রেকার কীভাবে কাজ করে?

ইলেকট্রনিক সার্কিট ব্রেকার গুলো মূলত তড়িৎ প্রবাহের পরিমাণ সেন্স করবার মাধ্যমে ওভার লোড বা শর্ট সার্কিট কে সনাক্ত করতে পারে এবং তদানুযায়ী পূর্ব নির্ধারিত কোন কাজ করতে পারে (যেমনঃ লোড কে পাওয়ার থেকে বিচ্যুত করা, এলার্ম বাজানো, মোবাইলে এসএমএস পাঠানো, ইত্যাদি)।

প্রয়োজনে এগুলোতে ডিজিটাল ডিসপ্লে সংযুক্ত করবার ব্যবস্থাও থাকে যার মাধ্যমে প্রবাহিত কারেন্টের পরিমাণ, ওভার লোড সিচুয়েশনে নির্দিষ্ট কাজ সেট করবার ব্যবস্থা, বিশেষ কোন বার্তা প্রদর্শন ইত্যাদি করা যায়।

ক্ষেত্র বিশেষে এসমস্ত তথ্যগুলো কে কম্পিউটারে স্থানান্তরের জন্য ডাটা পোর্ট (ইউএসবি বা অন্যকোন) ও ব্যবহার করা হয়।

ক্ষুদ্রাকৃতির ইলেকট্রনিক সার্কিট ব্রেকার গুলোকে ইলেকট্রনিক ফিউজ, ওভারলোড প্রোটেকশন সার্কিট  হিসেবেও ডাকা হয়।

নিচে আমরা একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কাজে ব্যবহৃত হয় এমন ইলেকট্রনিক সার্কিট ব্রেকার ও তার বাহ্যিক বিভিন্ন অংশ দেখতে পাচ্ছি-

ইলেকট্রনিক সার্কিট ব্রেকার ও তার বাহ্যক বিভিন্ন অংশ সমূহ
ইলেকট্রনিক সার্কিট ব্রেকার ও তার বাহ্যক বিভিন্ন অংশ সমূহ

এখানে বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য যে, বোঝার সুবিদার্থে এই লেখায় বেসিক ও মূল কার্য প্রণালী দেখানো হয়েছে যা প্রাযুক্তিক উন্নয়নের সাথে সাথে আরো উন্নত হচ্ছে। এখন এসকল পদ্ধতির সংকরায়নে আরো আধুনিক ও দ্রুত গতির সার্কিট ব্রেকার ও নির্মিত হচ্ছে।

সার্কিট ব্রেকার ব্যবহারের সুবিধাবলী কি কি?

সার্কিট ব্রেকার ব্যবহারের বিশেষ কিছু সুবিধা আছে-

  1. সার্কিট ব্রেকার ক্ষেত্রবিশেষে ফিউজের তুলনায় খুব দ্রুত কাজ করে
  2. এগুলি ফিউজের তুলনায় বেশি নির্ভরযোগ্য
  3. সার্কিট ব্রেকার বেশি পরিমাণ সেন্সেটিভ হয় ফিউজের তুলনায়
  4. ফিউজ একবার নষ্ট হলেই পাল্টাতে হয় যেখানে সার্কিট ব্রেকার একের অধিক বার ব্যবহার করা যায়
  5. সঠিক ও উপযুক্ত মানের সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করলে তা দীর্ঘদিন টেকার নিশ্চয়তা দেয়
  6. অপেক্ষাকৃত দ্রুত সময়ে লোডের বিদ্যুৎ পুনর্বহাল করা যায়। অর্থাৎ ডাউন টাইম (Down time) কম হয়
  7. ক্ষেত্রে বিশেষে লোডের জন্য আলাদা ভাবে সুইচ ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা থেকে বাঁচায়
  8. অধিকাংশ ভালো সার্কিট ব্রেকার গুলোতে টেস্ট বাটন থাকে যার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় সার্কিট ব্রেকারটি ঠিকমত কাজ করছে কিনা। ফিউজে এমন ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়।

সার্কিট ব্রেকার ট্রিপ (Trip) করে কখন?

মিনিয়েচার টাইপ সার্কিট ব্রেকার (MCB) গুলো সাধারণত ৩ ধরণের হয়। এই ধরন বা টাইপ অনুযায়ী এদের ট্রিপিং কারেন্ট ও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে, যথা-

  1. টাইপ B সার্কিট ব্রেকার – ৩ থেকে ৫ গুণ বেশি কারেন্ট প্রবাহিত হলে এগুলো ট্রিপ করে;
  2. টাইপ C সার্কিট ব্রেকার – ৫ থেকে ১০ গুন বেশি কারেন্টে এগুলো ট্রিপ করে;
  3. টাইপ D সার্কিট ব্রেকার –  লোড কারেন্ট ১০ থেকে ২০ গুণ হলে এগুলো ট্রিপ হয়

মূলত কোন সার্কিট ব্রেকার কখন ট্রিপ করবে তা তার ম্যানুয়েল বা ডাটাশিট এ উল্লেখ থাকে।

সার্কিট ব্রেকার লাগানোর ওয়্যারিং ডায়াগ্রাম কেমন?

সাধারণত সার্কিট ব্রেকার কে কোন লোডের সিরিজে সংযোগ দিতে হয়। কি ধরণের লোড ব্যবহার হচ্ছে এবং লোডের সম্ভাব্য সর্বোচ্চ পরিমাণ কারেন্ট রেটিং অনুযায়ী সার্কিট ব্রেকার লাগাতে হয়।

নিচে একটি বাসার বিভিন্ন রুমের জন্য লোডের পাওয়ার রেটিং অনুযায়ী সার্কিট ব্রেকার ব্যবহারের তুলনা মূলক ডায়াগ্রাম দেয়া হলো-

একটি বাসার বিভিন্ন ঘরে সার্কিট ব্রেকারের ওয়্যারিং ডায়াগ্রাম দেখানো হয়েছে
একটি বাসার বিভিন্ন ঘরে সার্কিট ব্রেকারের ওয়্যারিং ডায়াগ্রাম দেখানো হয়েছে
  • চিত্রটি খেয়াল করলে দেখতে পাবো যে একটি সম্পূর্ণ বাড়ির জন্য একটি মুখ্য বা প্রধান সার্কিট ব্রেকার থেকে প্রতিটি ঘরের লোড ও পাওয়ার অনুযায়ী বিভিন্ন মানের গৌন সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করা হয়েছে।
  • এভাবে ওয়্যারিং করবার ফলে কোন কারণে গৌন সার্কিট ব্রেকার ব্যর্থ হলেও বিশাল ক্ষতির হাত থেকে যেমন রক্ষা পায় তেমনি প্রতিটি ঘরের আলাদা আলাদা ব্রেকার ব্যবহারের ফলে ফল্ট ফাইন্ডিং (Fault finding/fault isolate) করতেও সুবিধে হয়।
  • প্রয়োজনে প্রতিটি হাই পাওয়ার লোডের ক্ষেত্রে আলাদা সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করা উচিৎ (যেমনঃ ফ্রিজ, এসি, ইলেকট্রকি হিটার, মাইক্রো ওয়েভ ওভেন, আয়রন প্রভৃতি)

কত মানের সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করা উচিৎ

রেজিস্টিভ লোডের ক্ষেত্রে – লোডের মোট গৃহীত এম্পিয়ারের ৩ গুণ ব্যবহার করা শ্রেয়। উল্লেখ্য রেজিস্টিভ লোড হচ্ছে – টাংস্টেন বা ফিলামেন্ট লাইট, হিটার, আয়রন প্রভৃতি।

ইন্ডাক্টিভ লোডের ক্ষেত্রে – লোডের মোট গৃহীত এম্পিয়ারের ৬ গুণ ব্যবহার করা উচিৎ। কারণ ইন্ডাক্টিভ লোড সমূহ, সুইচ অন করবার সময় ৩-৬ গুণ পরিমাণ কারেন্ট টানে এবং আস্তে আস্তে তার কারেন্ট টানার পরিমাণ স্বাভাবিক হয়ে আসে।

ইন্ডাক্টিভ লোড হচ্ছে সে সকল লোড যাদের মধ্যে ইন্ডাক্টর/কয়েল আছে। উদাহরণ – সিলিং ফ্যান, টেবিল ফ্যান, ইলেকট্রিক মোটর, ছোট ট্রান্সফরমার চালিত যন্ত্রপাতি, এয়ার কন্ডিশনার ইত্যাদি।

ক্যাপাসিটিভ লোডের ক্ষেত্রে – ক্যাপাসিটিভ লোড গুলোও প্রাথমিক ভাবে বেশি কারেন্ট টানে কিন্তু তা ক্ষণিক সময়ের জন্য এবং ইন্ডাক্টিভ লোডের মত দীর্ঘ সময় ব্যাপীও না।

একে ইনরাশ কারেন্ট বলে। তাই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে লোডের মোট কারেন্টের ৬ গুণ পরিমাণ ব্যবহার করাই শ্রেয়। এরফলে ইনরাশ কারেন্টে সার্কিট ব্রেকার ট্রিপ করবার সম্ভাবনা কমে।

সার্কিট ব্রেকার লাগানোর নিয়ম কি?

  1. যে লোডের সাথে সার্কিট ব্রেকার লাগানো হচ্ছে সেটি কত এম্পিয়ার কারেন্ট টানে তা হিসেব করে বের করতে হবে। তার জন্য, I = W÷V সূত্র প্রয়োগ করা যেতে পারে। যন্ত্রের গায়ে/পেছনে অনেক সময় ওয়াট ও এম্পিয়ার মান খোদাই/লেখা থাকে।
  2. যে লোডে সার্কিট ব্রেকার লাগানো হচ্ছে সেটি কি টাইপের তা নির্ণয় করতে হবে। যদি এমন হয় যে উক্ত লাইনে বা উক্ত সার্কিট ব্রেকারে ভিন্ন ভিন্ন টাইপের লোড লাগানো হবে (বাসা বাড়িতে যেমন থাকে) সে ক্ষেত্রে নিরাপত্তার জন্য সর্বোচ্চ মান ধরে হিসাব করতে হবে।
  3. ইন্ডাকটিভ লোডে ব্যবহারের জন্য লোডের এম্পিয়ার মানের চেয়ে ৩-৬ গুণ বেশি রেটিং সম্পন্ন সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করতে হবে।
  4. ক্যাপাসিটিভ লোডের ক্ষেত্রে সার্কিট ব্রেকারের মান হবে লোডের এম্পিয়ার মানের ৬ গুণ।
  5. রেজিস্টিভ লোডের ক্ষেত্রে সার্কিট ব্রেকার লাগানোর নিয়ম হচ্ছে লোড যত এম্পিয়ার টানবে তার চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি ধরা। অর্থাৎ লোড যদি ১ এম্পিয়ার টানে তাহলে সার্কিট ব্রেকার টি ১.২ এম্পিয়ারের হলেই চলবে। যদিও রেজিস্টিভ লোড চালু থেকে বন্ধ হবার আগে পর্যন্ত একই এম্পিয়ার টানে তবুও কিছু কিছু ক্ষেত্রে সার্জ কারেন্টের ফলে যেন অযথাই সার্কিট ব্রেকার ট্রিপ না করে তাই কিছুটা অতিরিক্ত মানের লাগানো ভালো।
  6. হাই এম্পিয়ার প্রতিটি লোড আলাদা আলাদা সার্কিট ব্রেকারে সংযোগ দিতে হবে। হাই এম্পিয়ার লোড যেমন – হাই পাওয়ার মোটর, পানির পাম্প, এয়ার কন্ডিশনার, ইলেকট্রিক হিটার, ইস্ত্রি লাগানোর প্লাগ পয়েন্ট ইত্যাদি।
  7. এখানে উল্লেখ্য যে- যদি হিসাবকৃত মান বাজারে না পাওয়া যায় তাহলে কাছাকাছি বেশি মানের ব্যবহার করা যেতে পারে। (যেমন – লোডের কারেন্ট ১১ এম্পিয়ার পাওয়া গেল কিন্তু বাজারে এই মানের সার্কিট ব্রেকার পাওয়া যায় না। কিন্তু ১৬ এম্পিয়ারের ব্রেকার সহজ লভ্য। কাজেই ১৬ এম্পের ব্রেকার ব্যবহার করা যেতে পারে)

ওয়্যারিং ডায়াগ্রাম আগেই এই পয়েন্টে উল্লেখ করেছি বিধায় তা আর এখানে লিখছি না।

পাদটিকা

ট্রিপ (Tripp)

সার্কিট ব্রেকারের প্রেক্ষাপটে “ট্রিপ” অর্থ বন্ধ হওয়া। 

ট্রিপিং কারেন্ট (Tripping current)

যে পরিমাণ কারেন্ট প্রবাহিত হলে একটি সার্কিট ব্রেকার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় তাকে ট্রিপিং কারেন্ট বলে।

ইনরাশ কারেন্ট

সুইচ অন করার সাথে সাথে কোন লোড যে কারেন্ট গ্রহণ করে তাকে ইনরাশ কারেন্ট বলে। স্বাভাবিক ভাবে ইন্ডাকটিভ ও ক্যাপাসিটিভ লোডে এই ইনরাশ কারেন্ট তার স্বাভাবিক গৃহীত কারেন্টের তুলনায় অনেক বেশি হয়।

সার্জ ভোল্টেজ

অল্টারনেটিং কারেন্ট বর্তনিতে অর্ধ সাইকেল বা তার কম সময়ের জন্য মাত্রাতিরিক্ত ভোল্টেজের উপস্থিতি কে সার্জ ভোল্টেজ বলে।

সার্জ কারেন্ট

ইনরাশ কারেন্টের অনুরূপ।

সেফটি ডিভাইস হিসেবে সার্কিট ব্রেকার এর ভূমিকা অপরিসীম। সংক্ষিপ্ত এই লেখায় গুরুত্বপূর্ণ ডিভাইস টির কিছু দিক আর সহজ হিসাব নিকাশ তুলে ধরলাম।

আরো অনেক চমকপ্রদ বিষয় আছে এ নিয়ে যা নিয়ে লিখতে গেলে বিশাল বই হয়ে যাবে! বিশেষ করে হাই ভোল্টেজ লাইনে ব্যবহৃত সার্কিট ব্রেকার গুলো আরো মজার!

এখানে উল্লেখ করছি, পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং এ বিশেষ ভাবে দক্ষ এবং সুদীর্ঘ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন সোহরাব হোসেন সৌরভ ভাই হাই ভোল্টেজ সার্কিট ব্রেকার এবং আরো কিছু বিষয় নিয়ে আমাদের মাঝে তাঁর অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে কিছু বিতরন করবেন এ প্রত্যাশা দিয়েছেন। আমাদের এ প্রত্যাশা সুদীর্ঘ হবে না এ আশাই করছি।

বিদায়ের শেষ মুহুর্তে একটি ছোট পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। নির্দিষ্ঠ মাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত লোড সংযোগ, শর্ট সার্কিট ইত্যাদি কারণে সার্কিট ব্রেকার ট্রিপ করে।

তাই কোন ব্রেকার ট্রিপ করলে সাথে সাথেই সেটিকে অন না করে আগে কারণ খোঁজা উচিৎ কেন সার্কিট ব্রেকার টি ট্রিপ করলো। এর মাধ্যমে আপনি মারাত্মক কোন দূর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচতে পারেন।

সবাই ভালো থাকবেন, নিরাপদে থাকবেন আর অবশ্যই ইলেকট্রিক্যাল কাজ করবার সময় মনে রাখবেন –   SAFETY FIRST! 

সাবউফার এম্পলিফায়ার – ১০০% টেস্টেড কমপ্লিট পিসিবি সহ

4
সাবউফার এম্পলিফায়ার - ১০০% টেস্টেড কমপ্লিট পিসিবি সহ
সাবউফার এম্পলিফায়ার - ১০০% টেস্টেড কমপ্লিট পিসিবি সহ

আজকে যে সার্কিট টি দিচ্ছি তা একটি কমপ্লিট অডিও সাবউফার এম্পলিফায়ার এর সার্কিট যা #পিসিবি সহ দেওয়া হচ্ছে। প্রথমে বলে নেই এই #সার্কিট টি আমি নিজে টেস্ট করেছি এবং সম্পুর্ণ কার্যকরী একটি সার্কিট। অরিজিনাল সার্কিট টি ডিজাইন করেছেন ভারতের Karunesh Shukla এবং প্রথম এই সার্কিট টি ইলেকট্রনিক্স ফর ইউ ম্যাগাজিনে পাবলিশ হয়। তাহলে সার্কিট টি দেখি –

সাবউফার এম্পলিফায়ার এর সার্কিট ডায়াগ্রাম
সাবউফার এম্পলিফায়ার এর সার্কিট ডায়াগ্রাম

একটি অপারেশনাল এমপ্লিফায়ারের উপর ভিত্তি করে এর ফিল্টার সেকশন ডিজাইন করা হয়েছে যার ইনপুটে মিক্সড অডিও ইনপুট সিগনাল ও আউটপুট একটি ইমিটার ফলোয়ার ট্রানজিস্টর এম্পের মাধ্যমে মুল এমপ্লিফায়ারের ইনপুটে দেওয়া হয়েছে। ইমিটার ফলোয়ার এমপ্লিফায়ার ব্যবহার করাহয় হাই আউটপুট ইম্পিডেন্স তৈরী করতে, যাতে ইনপুটের সাথে ইমপিডেন্স ম্যাচিং ভালো হয়।

সার্কিটের বিভিন্ন টেস্ট পয়েন্ট/টার্মিনাল পরিচিতি

সার্কিট টিতে বিভিন্ন TP বা টেস্ট পয়েন্ট/টার্মিনাল পয়েন্ট ব্যবহার করা হয়েছে নির্মান পরবর্তী টেস্ট ও সংযোগ করবার সুবিধার জন্য। এগুলো নিম্নরূপ-

  • সার্কিটের TP0 – গ্রাউন্ড
  • TP1 – ১৪.৪ ভোল্ট
  • TP2 – মিক্সড অডিও ইনপুট
  • TP3 – সাবউফার ফিল্টার আউটপুট চেক পয়েন্ট

তার মানে দাড়াচ্ছে এই TP3 কে ব্যবহার করে অন্য পাওয়ার এম্পলিফায়ার এর সাথে একে যুক্ত করা যাবে প্রয়োজন মতো।

সাবউফার এমপ্লিফায়ার এর পিসিবি ও কম্পোনেন্ট লেয়াউট

সাবউফার এম্পলিফায়ার এর পিসিবি লেয়াউট
সাবউফার এম্পলিফায়ার এর পিসিবি লেয়াউট
সাবউফার এম্পলিফায়ার এর কম্পোনেন্ট লেয়াউট
সাবউফার এম্পলিফায়ার এর কম্পোনেন্ট লেয়াউট

পিসিবি ও পার্টসের অবস্থান দেখানো হলো। চাইলে এখান থেকে মুল পিসিবি ফাইল ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।

সাবউফার এম্পলিফায়ার এর পার্টস লিস্ট

সাবউফার এমপ্লিফায়ার এর পার্টস লিস্ট দেওয়া হলো –

সাবউফার এম্পলিফায়ার এর পার্টস লিস্ট
সাবউফার এম্পলিফায়ার এর পার্টস লিস্ট

এই এম্পলিফায়ারের সুবিধা ও বৈশিষ্ট সমূহ

আবার বলছি, সার্কিটটি আমি নিজে তৈরী করেছি। এই সাবউফার এম্পলিফায়ারের সুবিধা ও বৈশিষ্ট-

  • এর ফ্রিকোয়েন্সী রেসপন্স 70 থেকে 150 হার্জ।
  • অনেক ভালো কাজ করে, তবে সম্পুর্ণ ভালো পারফরমেন্স পেতে চাইলে ভালো মানের সাবউফার স্পীকার ও ভালো সাউন্ড বক্স ব্যবহার করতে হবে।
  • গাড়ীর ব্যটারী দিয়েও চালানো যাবে। আর,
  • সরাসরি বিদ্যুত দিয়ে চালাতে চাইলে ভালো মানের ১২ ভোল্টের পাওয়ার সাপ্লাই তৈরী করে নিতে হবে।
  • পাওয়ার সাপ্লাই কমপক্ষে ৩ এম্পের হতে হবে।

এখানে ছবি ভালো না আসলে মুল আর্টিক্যাল থেকেও ছবি দেখে নিতে পারবেন – মুল আর্টিকেল দেখতে এখানে ক্লিক করবেন। বা ছবির উপর রাইটক্লিক করে ব্রাইজারে ওপেন করেও ছবি বড় করে দেখতে পারবেন।

আমাদের ইলেকট্রনিক্সের সাথে থাকবার জন্য ধন্যবাদ। কমেন্ট সেকশনে আপনার ভালো লাগা, প্রশ্ন বা আপনার চাহিদা জানাতে পারেন আমাদের। সেই সাথে আপনার বিজ্ঞান বা ইলেকট্রনিক্স নিয়ে যে কোন লিখা আমাদের কাছে দিতে পারেন সাইটে প্রকাশ করবার জন্য।

সহজ ভাষায় ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমের মূলকথা

13
সহজ ভাষায় ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমের মূলকথা
সহজ ভাষায় ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমের মূলকথা

সূচনাঃ

আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই? আশা করি অনেক অনেক ভাল। যাইহোক আমরা সবাই কম বেশি #পাওয়ার ট্রান্সমিশন ও #ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম  নিয়ে সব সময়ের জন্য একটু বেশিই কৌতূহল থাকি। বিশেষ করে ইলেকট্রিক্যাল #ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়াদের জন্য তো এটি মাস্ট। তো এবার আপনাদের সামনে হাজির হলাম এই নিয়ে। আশাকরি সাথে থাকবেন।

পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং কাজে ব্যস্ত এক ইঞ্জিনিয়ার অতিকায় গ্যাস টারবাইন পর্যবেক্ষণ করছেন যা জেনারেটরের বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রধান ভূমিকা রাখে
পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং কাজে ব্যস্ত এক ইঞ্জিনিয়ার অতিকায় গ্যাস টারবাইন পর্যবেক্ষণ করছেন যা জেনারেটরের বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রধান ভূমিকা রাখে

আজকের বিষয়ঃ

আজকের আলোচনার বিষয় ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার সিস্টেম নিয়ে। ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া স্টুডেন্টদের জন্য পাওয়ার সিস্টেম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আজকে সে সকল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া স্টুডেন্ট দের জন্য সহজ ভাষায় এই ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশনের ব্যাপারে লিখছি।

ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমের মূল ভিত্তিঃ

ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম প্রধানত ৩ টি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে চলে। সেগুলো হল-

অর্থাৎ, প্রথমে পাওয়ার তৈরি করা হচ্ছে; তারপর তা দুর-দূরান্তে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অবশেষে কোন একটি ব্যবস্থার সাহায্যে সেগুলো ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হচ্ছে।

সম্পূর্ণ প্রকৃয়াঃ

আমাদের দেশের কথাতেই আসা যাক। যেখানে পাওয়ার বা বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে সেখান থেকে সচারচর পাওয়া যায় ১১ কিলো ভোল্ট। এটিকে যদি আমরা পুরো দেশে বা দূরে কোথাও পাঠাতে চাই তাহলে মাত্র ১১ কিলোভোল্টে তা পাঠাতে গেলে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া ইঞ্জিনিয়ার দের হাতে বস্তা ভর্তি বিদ্যুৎ নিয়ে বসে থাকলেও বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে না। 😛

এর জন্য পাঠানোর আগেই সেটা একবার স্টেপ আপ করে নেওয়া হয়। এখানে উল্লেখ্য যে বিশেষ কয়েকটি কারণে এই ১১ কিলোভোল্ট বিদ্যুৎ কে ১৩২ অথবা ২৩০ অথবা ৪০০ কিলোভোল্ট এ স্টেপ আপ করা হয়। আমার পূর্বের লেখা ট্রান্সফরমার সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্নের উত্তরে স্টেপ আপ নিয়ে লিখেছি বিধায় এখন তা আবার উল্লেখ করছি না।

তারপর এটা ট্রান্সমিশন লাইনের মধ্যে দিয়ে পার করা হয় অনেক দূরে। এখন ধরুন একটা জায়গায় ঐ বিদ্যুৎ এর সংযোগ দেবার প্রয়োজন হয়েছে। সুতরাং সেখানে কানেকশন দেওয়ার জন্য সেই লাইন কে আবার ১৩২/২৩০/৪০০ কিলোভোল্ট থেকে স্টেপ ডাউন করে ১১ কিলোভোল্টে নামিয়ে নিয়ে আসা হয়। এবার সেটি যদি কোন বড় মিল, বা ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রতিষ্ঠান হয়ে থাকে তাহলে সেখানে সরাসরি ঐ ১১ কিলোভোল্টের লাইন চলে যায় ব্যবহারের জন্য। তারপর তারা সেটাকে কমিয়ে বা বাড়িয়ে ব্যবহার উপযোগী করে নেয়।

আচ্ছা এবার তাহলে আসা যাক বাসা-বাড়িতে কি হয়? খুবই সিম্পল ব্যপার। এবার সেই ১১ কিলোভোল্ট কে আবারও স্টেপ ডাউন করে ০.৪৪ কিলোভোল্টে বা ৪৪০ ভোল্টে নিয়ে আশা হয়। আর সেটা বাসা বাড়ি বা ছোট কোন ভোক্তার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকে প্রয়োজন মতো ২২০-২৪০ ভোল্টে ট্রান্সফর্ম করে ব্যবহার করা হয়।

নিচের চিত্রটিতে সম্পূর্ণ প্রকৃয়াটিকে সহজভাবে দেখানো হয়েছে-

ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমে
ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমে

যে সকল কোম্পানি এসব কাজ সুষ্ঠু ভাবে করে থাকেঃ

শুধু মাত্র একটি কোম্পানি এই এতগুলো কঠিন ও জটিল কাজ একা করতে পারে না। এই পুরো প্রসেস টা ঠিক ভাবে করার জন্য অনেক গুলো কোম্পানির এক হয়ে কাজ করতে হয়। যেমনঃ

  • বিপিডিবি (BPDB – Bangladesh Power Development Board): বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড। অর্থাৎ যেকোন জায়গা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজ বাংলাদেশে এক মাত্র এরাই করে থাকেন। অন্য কোন কোম্পানি এটা করতে পারে না।
  • পিজিসিবি (PGCB – Power Grid Company Bangladsh): পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশ। শুধু মাত্র এনারাই পুরো বাংলাদেশে পাওয়ার ট্রান্সমিশন করে থাকে। তার মানে দেশে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন করাই এদের মূল কাজ।

ডিস্ট্রিবিউশনঃ

এবার আসা যাক এই ট্রান্সমিশন লাইন থেকে আমরা অর্থাৎ সাধারন ভোক্তা কিভাবে বিদ্যুৎ পায়। এর জন্য বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কাজ করে থাকে । যেমনঃ

ডেসকো (DESCO – Dhaka Electric Supply Company Limited): এরা শুধু মাত্র ঢাকা জোন কে কভার করে। ঢাকার বাইরে এরা কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে লাইন দিতে পারে না। পুরো ঢাকা এই কোম্পানিটিই পাওয়ার সাপ্লাই দেয়।

বিপিডিবি, আর ই বি (BPDB, REB): এদের কাজ পুরো বাংলাদেশ কভার করা। একেকটি কোম্পানি তাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সাব জোনে তাদের অঞ্চল গুলোকে ভাগ করে নেয়। এতে তাদের কাজ আরও সহজ হয়ে উঠে।

ট্রান্সমিশন লাইনঃ

ট্রান্সমিশন লাইন প্রধানত ২ ধরনের হয়ে থাকে ।

  • ১। ওভার হেড
  • ২। আন্ডারগ্রাউন্ড

ওভার হেড ট্রান্সমিশন লাইনঃগ্রাম বাংলার মাঠে ইঞ্জিনিয়ারিং এর জ্বলন্ত স্বাক্ষর ওভার হেড ট্রান্সমিশন লাইন

আমরা অনেক সময় গ্রামের বাড়িতে গেলে অথবা ভ্রমনের সময় দূরে তাকালে দেখতে পাই যে অনেক বড় বড় টাওয়ার মাঠের মধ্যে দিয়ে অবস্থিত। এবং তার সাথে অনেক মোটা মোটা তার লাগানো। মূলত এগুলো কে ওভার হেড ট্রান্সমিশন লাইন বলে। অর্থাৎ মাথার উপর দিয়ে এগুলোর লাইন চলে যায়। এই প্রক্রিয়ার বেশ কিছু সমস্যা আবার উপকারি দিক উভয়ই আছে। যেমন-

অসুবিধাঃ

  • এগুলো অনেক জায়গা নিয়ে বিস্তৃত হয়ে থাকে
  • যদি কোন ইন্সট্রুমেন্ট নষ্ট বা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকে তাহলে এগুলো সাড়াতে অনেক খরচ হয়।

সুবিধাঃ

কিন্তু এগুলোর সুবিধাও কম নয়, যেমনঃ

  • এগুলো এভারেজ রেট ৬৬ কিলোভোল্টের উপরে বিদ্যুৎ পাস করানো সম্ভব এবং নিরাপদ।
  • যদি কোথাও লাইন ফল্ট দেখা যায় তবে তা নির্ণয় করা সহজ।
  • তাছাড়া এগুলো বানাতে বা স্থাপন করতেও অনেক কম খরচ হয় তূলণামূলক ভাবে।

আন্ডারগ্রাউন্ড ট্রান্সমিশন লাইনঃ

এই ধরনের ট্রান্সমিশন লাইন বলতে বুঝায় যেসব লাইন মাটির নিচ দিয়ে পাস করানো হয় । তবে মাটির নিচ দিয়ে পাস করানো লাইন খুবই বিপজ্জনক হতে পারে । তাই বাংলাদেশে আপাতত ওভারহেডকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এধরনের আন্ডারগ্রাউন্ড ট্রান্সমিশন লাইনের কিছু সুবিধা ও অসুবিধা হল-

অসুবিধাঃ

  • এগুলো বানাতে বা কোন জায়গা দিয়ে স্থাপন করতে অনেক খরচ হয়। অর্থাৎ এগুল খুব ই ব্যয় বহুল।
  • তাছাড়া এই প্রক্রিয়ায় যে তার ব্যবহার করা হয় সেগুল আর ১০ টি তারের মত এত সিম্পল ও না। বেশ কয়েকটি কোটিং করা থাকে এ ধরনের গায়ে। তবে এটি অনেক কম জায়গা খরচ করেই পাস হয়ে যেতে পারে।
  • এর আরেকটি প্রধান সমস্যা হল এটার ম্যাক্সিমাম লাইন ভোল্টেজ লিমিট ৬৬ কিলোভোল্ট। অর্থাৎ এর উপরে বিদ্যুৎ পাস করালে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। আবার এই লাইনের মধ্যে যদি কোন সমস্যা দেখা যায় তবে তা নির্ণয় করতে অবস্থা প্রায় কেরোসিন হয়ে যায়।

সুবিধাঃ

  • পরিচ্ছন্ন ভাবে সাজানো যায়। অর্থাৎ, রাস্তাঘাটে ক্যাবল ঝুলতে দেখা যায় না।

এসমস্ত দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশে আন্ডারগ্রাউন্ড লাইন এর পরিবর্তে ওভার হেড ট্রান্সমিশন লাইন পদ্ধতিকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। নিচের চিত্রে আন্ডারগ্রাউন্ড পাওয়ার লাইন নিয়ে পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারদের কর্ম ব্যস্ততা দেখতে পারছেন-

হংকং এ আন্ডার গ্রাউন্ড পাওয়ার লাইন বসাচ্ছেন পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ার গণ
হংকং এ আন্ডার গ্রাউন্ড পাওয়ার লাইন বসাচ্ছেন পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ার গণ

প্রশ্নঃ

অনেকে হবু ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়াদের মনেই হয়ত এতক্ষনে প্রশ্ন এসে গেছে যে- এই ইলেকট্রিক্যাল লাইন গুলোতে ডিসি ব্যবহার না করে এসি ব্যবহার করা হয় কেন?

উত্তরঃ আগামী পর্বে এর বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। তবে এখানে বলা বাহুল্য যে-

  • হাই ভোল্টেজ ডিসি এর চেয়ে হাই ভোল্টেজ এসি অনেক সাশ্রয়ী।
  • হাই ভোল্টেজ ট্রান্সমিশনে ডিসি এর ক্ষেত্রে যে যন্ত্রপাতি গুলো ব্যবহার করা হয় সেগুলো অনেক ব্যয় সাপেক্ষ।
  • লাইনের কোথাও কোন ফল্ট দেখা দিলে তা বের করতে করতে কিয়ামত ও চলে আসতে পারে।
  • আর প্রধান যে বিষয়টি সেটি হল ডিসি হাই ভোল্টেজ কে স্টেপ আপ করাটা খুব খুব কষ্ট সাপেক্ষ।

তাই ডিসি এর চেয়ে এসিকে গুরুত্ব দেওয়া হয় বেশি। তবে সামনের  সংখ্যায় তার পরিপূর্ণ উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব ।

সমাপ্তিঃ

আজ আর না। পরবর্তী তে আবারও দেখা হবে ইন শাহ আল্লাহ। আপনাদের যদি এই বিষয়ে অথবা যেকোন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রনিক্স বিষয়ে কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করুন অথবা সরাসরি আমার ফেসবুক প্রোফাইলে জানাতে পারেন। জানা থাকেলে তার উত্তর আমি দেওয়ার চেষ্টা করব। অবশ্যই শেয়ার ও লাইক দিয়ে সাথেই থাকবেন 🙂

বিজ্ঞান মেলার জন্য ৫টি দারুণ প্রজেক্ট আইডিয়া ও গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ

10
বিজ্ঞান মেলার জন্য ৫টি দারুণ প্রজেক্ট আইডিয়া
বিজ্ঞান মেলার জন্য ৫টি দারুণ প্রজেক্ট আইডিয়া

আমাদের কাছে অনেক পাঠক বিজ্ঞান মেলা তে প্রদর্শনের জন্য প্রজেক্ট আইডিয়া ও পরামর্শ চান। মূলত শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানে উৎসাহী করার উদ্দেশ্যে নিয়মিত বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও ইউনিভার্সিটিতে শত শত বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। এসব বিজ্ঞান মেলায় বিজ্ঞান সম্পর্কিত বিভিন্ন আয়োজন এর পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা চাইলে বিজ্ঞান সম্পর্কিত পেপার, প্রজেক্ট ও পোস্টার বানিয়ে প্রদর্শন করতে পারে।

তবে এক্ষেত্রে কিছু নিয়মকানুন মেনে প্রজেক্ট/পেপার/পোস্টার করলে সেটির গুণগত মান অনেক ভাল হয় এবং সেরা হিসেবে নির্বাচিত হবার সম্ভাবনাও বাড়ে। বিজ্ঞান মেলায় প্রজেক্ট ছাড়াও পেপার, পোস্টার প্রদর্শন করা গেলেও আজকের এ লেখায় শুধুমাত্র প্রজেক্ট নিয়ে আলোচনা এবং বিজ্ঞান মেলার জন্য ৫টি দারুণ মজার কিন্তু সহজ বিজ্ঞান প্রজেক্ট তৈরি করার আইডিয়া দেয়া হবে। সেই সাথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ থাকবে যা মেনে চললে বিজ্ঞান মেলায় সফল হওয়া সহজ হবে।

ব্যবহার করা।

প্রজেক্টের আইডিয়া

নিচে ৫টি প্রজেক্ট এর আইডিয়া ও প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেয়া হলো। প্রত্যেকটি প্রজেক্টই গবেষণা করে আরও উন্নত করা সম্ভব। উপস্থাপক প্রয়োজন মনে করলে এই প্রজেক্ট গুলোকে ভিন্ন নামেও উপস্থাপন করতে পারেন (যেমনঃ হাঁটতে চলতে বিদ্যুৎ, ওয়াকিং পাওয়ার প্যাড, আর্থকুয়েক এলার্ম মেশিন, ফোন-ও-এম্প ইত্যাদি)

বিজ্ঞান প্রজেক্ট – ১ – চাপশক্তি কে বিদ্যুৎ শক্তি তে রূপান্তর

এই প্রজেক্টটি দুইভাবে করা যায়।

এমন একটি ম্যাকানিকাল যন্ত্র বানানো যেটা থেকে একটি লিভার বের হয়ে থাকবে, সেই লিভারে চাপ পড়লে একটি ডায়নামোর শ্যাফট ঘুরবে, ফলে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে। তবে এ পদ্ধতির একটি অসুবিধা হচ্ছে, যন্ত্রটিতে বেশ কয়েকটা ম্যাকানিকাল অংশ থাকবে, তাই নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। নিচের এনিমেশন চিত্রে এমনি পায়ের চাপে বিদ্যুৎ তৈরির একটি প্রাথমিক ধারণা দেয়া হলো-

বিজ্ঞান প্রজেক্ট - পায়ের চাপে বিদ্যুৎ তৈরির ধারণা মূলক এনিমেশন চিত্র
বিজ্ঞান প্রজেক্ট – পায়ের চাপে বিদ্যুৎ তৈরির ধারণা মূলক এনিমেশন চিত্র

দ্বিতীয় পদ্ধতিটি হচ্ছে – পিজো এলিমেন্ট (Piezo element a.k.a piezo transducer) ব্যবহার করা।

পিজো এলিমেন্ট বা পিজো ট্রান্সডিউসার ব্যবহার করে খুব অল্প পরিমাণ বিদ্যুৎ তৈরি করা যায়
পিজো এলিমেন্ট বা পিজো ট্রান্সডিউসার ব্যবহার করে খুব অল্প পরিমাণ বিদ্যুৎ তৈরি করা যায়

চিত্রে- পিজো এলিমেন্ট

সাধারণত খুব ছোট ও পাতলা স্পিকার লাগে যেখানে, সেখানে পিজো এলিমেন্টকে ব্যবহার করা হয়। যেমন, কিছু গ্রিটিংস কার্ড পাওয়া যায় যেগুলো খুললেই মিউজিক শোনা যায়, সেগুলোতে স্পিকার হিসেবে পিজো এলিমেন্ট ব্যবহার করা হয়। কন্টাক্ট মাইক্রোফোন নামে একধরণের মাইক্রোফোন আছে, যেটা দিয়ে ড্রাম, গিটার ইত্যাদি মিউজিকাল ইন্সট্রুমেন্ট এর সাউন্ড রেকর্ড করা হয়, সেটাতেও পিজো এলিমেন্ট ব্যবহার করা হয়।

পিজো এলিমেন্ট এর একটা বৈশিষ্ট্য হলো, এর আকৃতি পরিবর্তন হলে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। যেমন, আপনি যদি গোলাকার পিয়েজো এলিমেন্টে হাত দিয়ে চাপ দেন, তাহলে পিয়েজোর আকৃতি পরিবর্তন হয়ে সামান্য চ্যাপ্টা হয়ে যাবে, এবং তখন বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে। তবে পিয়েজো এলিমেন্ট থেকে এসি বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়, তাই আপনাকে ডায়োড দিয়ে রেক্টিফায়ার বানিয়ে এসিকে ডিসিতে রূপান্তর করতে হবে।

এই প্রজেক্টের প্রয়োগঃ

এই প্রোজেক্ট বিভিন্ন জায়গায় প্রয়োগ করা যেতে পারে। যেমন,

  • কার্পেটের নিচে পিজো এলিমেন্ট স্থাপন করলে কার্পেটের উপর কেউ হেটে গেলেই বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে।
  • ফুটপাথে পিজো এলিমেন্ট স্থাপন করে উৎপন্ন বিদ্যুৎ রাস্তার ল্যাম্প পোস্টে সরবরাহ করা যেতে পারে। অথবা
  • জুতার সোলের মধ্যে পিজো এলিমেন্ট স্থাপন করে উৎপন্ন বিদ্যুৎ দিয়ে মোবাইল/পাওয়ারব্যাঙ্ক ইত্যাদি চার্জ করা যেতে পারে।

নিচে এমনি একটি ফুট ওয়াকিং চার্জার (foot walking charger) এর চিত্র দেয়া হলো যা এখনো পরীক্ষাধীন আছে-

ফুট ওয়াকিং চার্জার (foot walking charger) এ পিজো এলিমেন্টের ব্যবহার হয়গবেষণায় দেখা গেছে যে পিয়েজোর উপর সরাসরি চাপ না দিয়ে পিজোর উপরে ও নিচে ফ্লেক্সিবল পদার্থ (যেমন তুলা/ফোম) রেখে মাঝখানে পিজো এলিমেন্ট রাখলে বেশি শক্তি উৎপাদন করা যায়।

এখানে বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য –

  1. পিয়েজো এলিমেন্ট একটির বেশি ব্যবহার করলে প্যারালালে সংযোগ দিতে হবে। নইলে সবগুলো পিজো তে একসাথে চাপ না পড়লে কাজ হবেনা। এবং,
  2. উৎপন্ন বিদ্যুতের পরিমাণ প্রয়োজনমত ভোল্টেজ রেগুলেটর/বুস্ট কনভার্টার ব্যবহার করে বাড়িয়ে বা কমিয়ে নিতে হবে এবং ক্যাপাসিটর দিয়ে আউটপুট নয়েজ ফিল্টার করে নিতে হবে।
  3. এদিয়ে উৎপন্ন বিদ্যুৎ অত্যন্ত স্বল্প পরিমানের হবে।

এই বিজ্ঞান প্রজেক্টের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণসমূহঃ

  • ১। পিজো এলিমেন্ট/ পিজো ট্রান্সডিউসার
  • ২। ৪টা ডায়োড (যেমন 1N4007) – ব্রিজ রেক্টিফায়ার তৈরি করবার জন্য
  • ৩। তুলা/ফোম

বৈদ্যুতিক সংযোগ পদ্ধতিঃ

নিচে পিজো এলিমেন্ট গুলোকে কিভাবে ব্রিজ রেক্টিফায়ারের সাথে সংযুক্ত করতে হবে তা দেখানো হলো-

পিজো এলিমেন্ট গুলোকে সংযোগ দেবার পদ্ধতি
পিজো এলিমেন্ট গুলোকে সংযোগ দেবার পদ্ধতি

আউটপুটে প্রাপ্ত ডিসি কে উপযুক্ত ক্যাপাসিটর, ভোল্টজ রেগুলেটর বা বাক কনভার্টার দিয়ে কনভার্ট করে প্রয়োজনীয় লোডে দেয়া যাবে। এধরনের পাওয়ার সাপ্লাই সার্কিটের জন্য আমাদের পাওয়ার সাপ্লাই বিভাগ টি পড়ে দেখতে পারেন।


বিজ্ঞান প্রজেক্ট – ২ – মোবাইল ফোনের জন্য বিদ্যুৎ ছাড়া এম্পলিফায়ার

বিজ্ঞান প্রজেক্ট ২ - মোবাইলের জন্য বিদ্যুৎ ছাড়া এম্পলিফায়ার
বিজ্ঞান প্রজেক্ট ২ – মোবাইলের জন্য বিদ্যুৎ ছাড়া এম্পলিফায়ার

আমরা জানি যে এম্পলিফায়ার শ্রবণ যোগ্য শব্দ কে এম্পলিফাই বা বিবর্ধন করতে পারে। এই বিবর্ধনের কাজটি ইচ্ছা করলে এম্পলিফায়ার ছাড়াও করা সম্ভব। এখন তেমনি খুব মজার প্রজেক্ট নিয়ে লিখছি।

প্রয়োজনীয় উপকরণ সমূহঃ

বিজ্ঞান পজেক্ট এর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সমূহ

  • ১। টয়লেট পেপার রোলের ভিতরে থাকা কাগজের পাইপ, পিভিসি পাইপ অথবা অন্য কোনও পাইপ যার ব্যস ২-৩ ইঞ্চি
  • ২। ডিসপোজেবল প্লাস্টিকের কাপ
  • ৩। মার্কার পেন বা কলম/পেন্সিল
  • ৪। কাঁচি/কাটার

এই বিজ্ঞান প্রজেক্ট টি বানাতে আমাদের যা যা করতে হবেঃ

  1. ২টি প্লাস্টিকের কাপের নিচের দিকে ছিদ্র করে নিতে হবে। ছিদ্রটি এমন হতে হবে যেন আমাদের নেয়া পাইপ টি অনায়াসে ঢুকতে পারে।
  2. আমাদের নেয়া কাগজের পাইপ (অন্যকোন পাইপ হলেও হবে) টির এক মাথা একটি কাপের ছিদ্র দিয়ে ঢুকিয়ে দিতে হবে।
  3. পাইপের অপর মাথায় একইভাবে আরেকটি কাপ লাগাতে হবে।
  4. পাইপের মাঝখানে ফোনের সাইজে ছিদ্র করে ফোনের স্পিকার যে দিকে সেইদিক ঢুকিয়ে দিতে হবে।
  5. স্পিকার থেকে বেরোনো শব্দ প্লাস্টিকের কাপে এমপ্লিফাই হয়ে যাবে। কাপ ও পাইপের সাইজ বাড়িয়ে কমিয়ে শব্দের পরিমাণ ও কোয়ালিটি বাড়ানো যেতে পারে।

আনুমানিক খরচ – সর্বোচ্চ ৮০ টাকা

সুবিধাঃ

  1. অন্যসব এম্পলিফায়ার চালাতে বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় কিন্তু এটি চালাতে বিদ্যুৎ লাগে না
  2. মোবাইলে কোন প্রকার সার্কিট বা মডিফিকেশন করা ছাড়াই প্রায় ৩-১০ গুণ শব্দ বাড়াতে পারে। প্রয়োজনে বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের পাইপ ও বড় আকারের কাপ ব্যবহার করা যেতে পারে।

অসুবিধাঃ

  1. সহজে বহনযোগ্য নয়।

বিজ্ঞান প্রজেক্ট – ৩ – বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী সোল্ডারিং আয়রন

আমরা অনেক সময়ই সোল্ডারিং আয়রন নিয়ে বিপাকে পড়ি। সস্তা সোল্ডারিং আয়রন হলে তো কথাই নেই। কিছুদিন পরে পরেই আয়রনের বিট পাল্টাতে হয় নতুবা আয়রনের হিটিং কয়েল টি কেটে যায়। কিন্তু আজকে একটি পদ্ধতির কথা বলবো যা ব্যবহার করলে সিরিজ ল্যাম্প তো ব্যবহার করা লাগবেই না বরং অর্ধেক বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। একই সাথে সস্তা সোল্ডারিং আয়রন ও টিকবে অনেক দিন।

প্রয়োজনীয় উপকরণসমূহ

  • ১। ডায়োড (যেমন, 1N4007/1N5403)
  • ২। উপযুক্ত কারেন্ট রেটিং সম্পন্ন AC সুইচ

কিভাবে তৈরি ও ব্যবহার করতে হবে?

  1. এসি সোল্ডারিং আয়রনের এক প্রান্তে একটা 1N4007/1N5403 ডায়োড কে সিরিজে লাগিয়ে দিতে হবে। এসি লাইনের যেকোন এক তারে লাগালেই হবে।
  2. ডায়োডের সাথে প্যারালেলে একটি সুইচ লাগিয়ে দিতে হবে।
  3. সোল্ডারিং আয়রন প্রথমে চালু করার সময় সুইচটি অন করে রাখতে হবে। তাতে আয়রন দ্রুত গরম হবে।
  4. সোল্ডারিং আয়রন গরম হয়ে গেলে সুইচটি অফ করে দিতে হবে। তখন ডায়োডের মধ্যে দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হওয়ায় সোল্ডারিং আয়রনে কম বিদ্যুৎ যাবে। কিন্তু সোল্ডারিং আয়রন আগে থেকেই গরম থাকায় কম বিদ্যুৎ গেলেও আয়রনের টেম্পারেচার একই থাকবে।

সংযুক্তি করণ সার্কিট ডায়াগ্রামঃ

নিচের চিত্রটি দেখে আশাকরি বুঝতে পারছেন সম্পূর্ণ ব্যবস্থাটি কেমন হবে-

অর্ধেক বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী সোল্ডারিং আয়রন
অর্ধেক বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী সোল্ডারিং আয়রন

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী সোল্ডারিং আয়রনের কার্য প্রণালী

আমরা উপরের কানেকশন ডায়াগ্রাম লক্ষ করলে দেখতে পাচ্ছি যে একটা ডায়োড কে সুইচ এর সাথে প্যারালাল ভাবে লাগানো হয়েছে। এরপর তা সিরিজে সোল্ডারিং আয়রন এর সাথে লাগয়ে দেয়া হয়েছে।

সুইচ টা মূলত ডায়ড টাকে শর্ট করতে ব্যবহার করা হয়েছে। কারন এসি সাইন ওয়েভে থাকা মূল ২টি ওয়েভ কে পৃথক করবার জন্য।

এ ব্যবস্থার ফলে, সুইচ অফ অবস্থায় সোল্ডারিং আয়রন টি ২২০ ভোল্ট এসি কে রেক্টিফাই করে ১১০ ভোল্ট ডিসি করছে।

যেহেতু সোল্ডারিং আয়রন টি রেজিস্টিভ লোড টাইপ তাই এই পালসিটিং ডিসি দিয়েও খুব ভালোই কাজ চলে এবং আয়রন টি তার পূর্ণ ক্ষমতার অর্ধেক ক্ষমতায় চলে (৬০ ওয়াট টি ৩০ ওয়াট হয়)।

এর সুবিধা হলো, প্রয়োজন অনুযায়ী সোল্ডারিং আয়রন কে দ্রুত গরম করবার দরকার পড়লে (শুরুতে যখন ঠান্ডা থাকে বা মোটা কিছু কে সোল্ডার করতে) তখন সুইচ কে অন বা শর্ট করে দিয়ে তাতাল কে দ্রুত গরম করা যায়।

পর্যাপ্ত গরম হয়ে গেলে পরে সুইচ টিকে অফ করে দিলে ডায়োডের মাধ্যমে তাতাল টি ১১০ ভোল্ট পায় বা অর্ধেক ক্ষমতায় চলে।

এখানে বলে রাখা ভালো যে, তাপবিদ্যার মতে কোন পদার্থকে প্রাথমিক অবস্থায় গরম করতে যে পরিমান শক্তির ব্যবহার করতে হয় তা উক্ত পদার্থটি গরম হয়ে গেলে পরে আর লাগে না।
এখানেও ঠিক তাই ঘটছে।

ইচ্ছে করলে উক্ত ডায়োড ও সুইচ কে একত্র করে একটি  বেড সুইচের মধ্যে স্থাপন করেও ব্যবহার করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে বেড সুইচ টিই এই সুইচের কাজ করবে।

সুবিধাঃ

  1. প্রচুর বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে
  2. সোল্ডারিং আয়রনের বিট কে দ্রুত ক্ষয় হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষ করে
  3. দ্রুত আয়রনের কয়েল কেটে যাওয়া থেকে বাঁচায়
  4. সস্তা সোল্ডারিং আয়রনের আয়ু বৃদ্ধি করে
  5. এটি ব্যবহার করলে আলাদা ভাবে সিরিজ ল্যাম্প বা সিরিজ বোর্ড ব্যবহার করতে হয়না।
  6. হাই ওয়াটের সোল্ডারিং আয়রন কে কম ওয়াটেও ব্যবহার করা যায়। যেমন ৮০ ওয়াটের আয়রন কে ৪০ ওয়াট হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব।

এ পদ্ধতিতে সোল্ডারিং আয়রনের অর্ধেক বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব। এবং সিরিজ ল্যাম্পের ব্যবহার না করলেও চলে।

সোল্ডারিং আয়রনের মত কাজ করে এমন যন্ত্র যেগুলো রেজিস্টিভ লোড (যেমন ইস্ত্রি, হিটার, ফিলামেন্ট বাল্ব) তাতে এই পদ্ধতি চেষ্টা করা যেতে পারে। তবে যন্ত্রের বিদ্যুতের চাহিদার উপর নির্ভর করে সঠিক ডায়োড দিতে হবে।


বিজ্ঞান প্রজেক্ট – ৪ – গ্লোয়িং ওয়াটার (Glowing water)

বিজ্ঞান প্রজেক্ট - ৪ - গ্লোয়িং ওয়াটার (Glowing water)
বিজ্ঞান প্রজেক্ট – ৪ – গ্লোয়িং ওয়াটার (Glowing water)

গ্লোয়িং ওয়াটার এর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণসমূহ

  • ১। হাইলাইটার পেন
  • ২। আলট্রাভায়োলেট এলইডি অথবা আলট্রাভায়োলেট আলোর উৎস।

স্টেশনারি দোকানে যে হাইলাইটার পেন পাওয়া যায়। সেগুলোর কালির একটি বৈশিষ্ট্য হলো, কালি যদি অন্ধকারে রেখে তার উপর আলট্রাভায়োলেট রশ্মি ফেলা হয়, তাহলে কালি টি অন্ধকারে তার নিজের রঙে জ্বলজ্বল করা শুরু করবে। যেমন, সবুজ রঙের হাইলাইটারের কালিতে আলট্রাভায়োলেট রশ্মি ফেললে সবুজ রঙে জ্বলজ্বল করবে, হলুদ রঙের কালিতে ফেললে হলুদ রঙে জ্বলজ্বল করবে।

হাইলাইটারের কালির এই বৈশিষ্ট্যকে কাজে লাগিয়েই  গ্লোয়িং ওয়াটার বা অন্ধকারে জ্বলজ্বল করবে এমন পানি/রং বানানো যায়।

গ্লোয়িং ওয়াটার বানাতে যা যা করতে হবেঃ

  1. সেজন্য প্রথমে একটি হাইলাইটার পেন সংগ্রহ করতে হবে।
  2. তার নিব/ কালি বের হয় যে অংশ দিয়ে, সেটা প্লায়ারস দিয়ে অথবা অন্য কিছুর সাহায্যে খুলে ফেলতে হবে।
  3. তারপর অল্প কিছুটা পানিতে হাইলাইটার পেনটি ভিজিয়ে রাখতে হবে কয়েক মিনিট। এখন এই পানিতে আলট্রাভায়োলেট রশ্মি পড়লেই পানি জ্বলজ্বল করে উঠবে।

আলট্রাভায়োলেট রশ্মি হিসেবে বাজার থেকে কেনা আল্ট্রাভায়োলেট লাইট (যা ব্ল্যাকলাইট হিসেবেও পরিচিত) ব্যবহার করা যেতে পারে অথবা নিজে বানিয়েও নেয়া যেতে পারে। ২০-৩০টি UV (Ultraviolet) LED একটি সার্কিট বোর্ড এ সোল্ডার করে আলট্রাভায়োলেট টর্চ বানিয়ে নেয়া যায়।

এই গ্লোয়িং ওয়াটার দিয়ে দেয়াল, কাঁচ, কাগজে ছবি এঁকে অন্ধকারে তার মধ্যে ইউভি রশ্মি ফেললেও দারুন দেখাবে। নিচের ছবিতে দেয়ালে গ্লোয়িং ওয়াটার দিয়ে আঁকা চিত্রকর্ম দেখা যাচ্ছে-

গ্লোয়িং ওয়াটার দিয়ে করা দেয়াল চিত্র যা আলট্রাভায়োলেট আলোতে দেখা যায়
গ্লোয়িং ওয়াটার দিয়ে করা দেয়াল চিত্র যা আলট্রাভায়োলেট আলোতে দেখা যায়

বিজ্ঞান প্রজেক্ট – ৫ – খুব সহজেই বানিয়ে নিন ভূমিকম্প নির্ণায়ক যন্ত্র!

ভূমিকম্পের মাত্রা নির্ণয় করার জন্য সাধারণত সিসমোগ্রাফ ব্যবহার করা হয়। সাধারণ কিছু জিনিস দিয়ে সহজেই সিসমোগ্রাফ বানিয়ে নেয়া যায়। নিচে এমনি একটি সরল সিসমোগ্রাফ যন্ত্রের ছবি দেয়া হলো-

সরল সিসমোগ্রাফ যন্ত্রের ছবি
সরল সিসমোগ্রাফ যন্ত্রের ছবি

কিন্তু আপনি যদি শুধুমাত্র ভূমিকম্প হচ্ছে কিনা বোঝার জন্য একটি যন্ত্র বানাতে চান তাহলে সেটি আরও সহজে বানাতে পারবেন-

  1. একটি পানিভর্তি গ্লাস নিবেন।
  2. ঘরের যেকোনো প্রান্ত থেকে সহজেই দেখা যায় এরকম একটা জায়গায় গ্লাসটি রাখবেন।
  3. যদি আপনার মনেহয় ভূমিকম্প হচ্ছে তাহলে গ্লাসটির দিকে তাকাবেন।
  4. ভূমিকম্প হলে পানি এদিক সেদিক নড়তে থাকবে। আর ভূমিকম্প না হলে পানি স্থির থাকবে।

ইচ্ছা করলে এই প্রজেক্টটিতে একটি এলার্ম লাগিয়ে আরও আকর্ষণীয় করতে পারেন।

ভূ-কম্পন নির্ণায়কের জন্য এলার্ম সার্কিট – ১

বিজ্ঞান প্রজেক্ট - সহজ ভূকম্পন নির্ণায়কের সাথে সংযুক্ত করবার এলার্ম সার্কিট
বিজ্ঞান প্রজেক্ট – সহজ ভূকম্পন নির্ণায়কের সাথে সংযুক্ত করবার এলার্ম সার্কিট

সেক্ষেত্রে উপরের সার্কিট ডায়াগ্রামটি অনুসরণ করতে হবে। “খ” চিহ্নিত পয়েন্টটি থেকে একটি তার টেনে পানির মধ্যে ডুবিয়ে রাখতে হবে। এবং পানির লেভেলের হাফ সেন্টিমিটার উপরে “ক” পয়েন্ট থেকে একটি তার হটগ্লু/অন্য কোনও শক্তিশালী আঠা দিয়ে লাগিয়ে দিতে হবে নিচের চিত্রের মত করে।

বিজ্ঞান প্রজেক্ট - ৫ - সহজ ভূমিকম্প নির্ণায়ক যন্ত্র
বিজ্ঞান প্রজেক্ট – ৫ – সহজ ভূমিকম্প নির্ণায়ক যন্ত্র

ভূমিকম্পের সময় পানি নড়াচড়া করলে “ক” পয়েন্টের তারে পানি এসে লাগবে এবং তখন  ও  পয়েন্ট শর্ট হয়ে এলার্ম বেজে উঠবে এবং আপনি বুঝতে পারবেন যে ভূমিকম্প হচ্ছে।

উল্লেখ্য যে –

  • দুইটি তারের প্লাস্টিক সরিয়ে কপার অংশ বের করে নিয়ে সেখানে সোল্ডার লাগিয়ে নিতে হবে। নইলে পানির সংস্পর্শে থেকে কপারে নষ্ট হয়ে যাবে। তখন যন্ত্রটির কার্যক্ষমতা কমে যাবে।
  •  পয়েন্টের তারের সোল্ডার করা অংশটিতে যেন আঠা না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  • ব্যাটারি নিয়মিত চেক করতে হবে এবং ব্যাটারির চার্জ কমে গেলে বদলে দিতে হবে।

সুবিধাঃ

  1. দ্রুত নির্মাণ করা যায়
  2. তৈরি করা সহজ
  3. অল্প খরচ

অসুবিধাঃ

  1. পানি ও ব্যাটারির প্রতি প্রতিদিন খেয়াল রাখতে হয়

ভূমিকম্প নির্ণয়কারী যন্ত্রের জন্য এলার্ম সার্কিট – ২

নিচে আমাদের ইলেকট্রনিক্স ল্যাবে পরীক্ষিত একটি ভূমিকম্প নির্ণয়কারী যন্ত্রের জন্য ব্যবহৃত এলার্ম সার্কিট দেয়া হলো-

ভূমিকম্প নির্নয়কারী যন্ত্র - আর্থকুয়েক ডিটেক্টর প্রজেক্টের এর জন্য ব্যবহৃত পরীক্ষিত সার্কিট ডায়াগ্রাম
ভূমিকম্প নির্নয়কারী যন্ত্র – আর্থকুয়েক ডিটেক্টর প্রজেক্টের এর জন্য ব্যবহৃত পরীক্ষিত সার্কিট ডায়াগ্রাম

এই সার্কিট টি পূর্বের সার্কিটের কাছাকাছিই তবে এতে অতিরিক্ত হিসাবে পাওয়ার এলইডি ও আর্থকুয়েক ডিটেক্ট এলইডি আছে। একটি সার্কিট কে পাওয়ার দেওয়ার সাথে সাথে জ্বলবে আর অন্যটি ভূমিকম্প বা সেন্সরে অতিরিক্ত নড়াচড়া ডিটেক্ট করলে জ্বলবে ও একই সাথে বাযার টি সাউন্ড করে এলার্ম দিবে।

ভূমিকম্প নির্নয়কারী যন্ত্র এর জন্য ব্যবহৃত সেন্সর তৈরি

এই আর্থকুয়েক ডিটেক্টর বা ভূমিকম্প এলার্ম সার্কিটের জন্য সেন্সর টি হাতে তৈরি করতে হবে। এরজন্য একটি মোটা সিরিঞ্জ, একটি স্প্রিং, একটি ধাতুর পাত ও কিছু বুদ্ধি খরচ করতে হবে। নিচের চিত্রের মত করে সম্পূর্ণ ব্যবস্থাটি সাজিয়ে নিন-

ঘরে তৈরি সহজ ভূমিকম্প নির্নয়কারী যন্ত্র - আর্থকুয়েক ডিটেক্টর এর জন্য হাতে তৈরি সেন্সর
ঘরে তৈরি সহজ ভূমিকম্প নির্নয়কারী যন্ত্র – আর্থকুয়েক ডিটেক্টর এর জন্য হাতে তৈরি সেন্সর

এখানে উল্লেখ্য যে লম্বা স্প্রিং পাওয়া না গেলে মোটা হীটারের কয়েল ও ব্যবহার করতে পারেন।

ল্যাব নোট

যন্ত্রটি আমাদের ইলেকট্রনিক্স ল্যাবে পরীক্ষার সময় ফলস ট্রিগারিং সমস্যা দেখা দিয়েছিল। মূলত ৫৫৫ আইসি এর ২ নং ট্রিগার পিন টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিধায় এমন সমস্যা হচ্ছিল। তা দূর করবার জন্য ২ নং পিন ও গ্রাউন্ডের মাঝে একটি আর.এফ ফিল্টার (RF filter) ক্যাপাসিটর অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। এবং সেন্সর থেকে এই সার্কিট এ সংযোগ দেবার তারটি বেশি লম্বা দেওয়া উচিৎ নয়। 

সম্পূর্ণ প্রজেক্ট টি শেষ হলে পরে দেখতে এমন দেখাবে-

ভূমিকম্প নির্নয়কারী - আর্থকুয়েক ডিটেক্টর তৈরি করবার পরে যেমন দেখাবে
ভূমিকম্প নির্নয়কারী – আর্থকুয়েক ডিটেক্টর তৈরি করবার পরে যেমন দেখাবে

প্রজেক্টের টেস্টিং ভিডিও

আমাদের ইলেকট্রনিক্সের ইউটিউব চ্যানেলে এই ভূমিকম্প নির্নয়কারী যন্ত্রের টেস্টিং ভিডিও দেয়া হয়েছে। ভিডিও দেখলে আশাকরি বুঝতে সুবিধে হবে কিভাবে এই ভূ-কম্পন নির্ণায়ক যন্ত্রটি কাজ করে। আমাদের ইলেকট্রনিক্স চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করলে এমন আরো অনেক ভিডিও সামনে পাবেন। নিচে টেস্টিং ভিডিও টি দেখুন-

বিশেষ জ্ঞাতব্যঃ

এই টিউটোরিয়াল ভিডিওতে একটি সরল সার্কিট এর মাধ্যমে Earthquake এলার্ম তৈরি ও এলইডি জ্বালানো দেখানো হয়েছে। ইচ্ছে করলে এর সাথে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ যুক্তকরা সম্ভব যেমন-

  1. আর্থকুয়েক হওয়া মাত্রই যেন বিশেষ যন্ত্রপাতি, গ্যাস লাইনের সংযোগ, ব্যাংক এর ভল্ট ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস বন্ধ হয়ে যায়।
  2. আর্থকুয়েক ঘটবার সাথে সাথেই যেন বিশেষ কোন পরিষেবা চালু করা
  3. ঘটবার সাথে সাথেই গুরুত্বপূর্ণ মোবাইলে এসএমএস (SMS) বা আপদকালীন ক্ষুদ্র সতর্ক বার্তা পাঠানো, ইত্যাদি।

এই প্রজেক্ট টি আরো অনেক ভাবেই করা সম্ভব। যেমন মার্কারী টিল্ট সুইচ, গ্লাসের পানি, লেজার, গাইরোসেন্সর ব্যবহার করে ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে এর উদ্দেশ্য যেহেতু শিক্ষার্থীদেরকে বিজ্ঞানে অনুপ্রানিত করা তাই সেন্সর টিকেও নিজের হাতে তৈরি করতে দেখানো হয়েছে

বিজ্ঞান মেলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরামর্শ

বিজ্ঞান মেলায় অংশ গ্রহণের আগের প্রস্তুতিঃ

  1. বিজ্ঞান মেলায় যত সহজ প্রজেক্টই করা হোক না কেন কমপক্ষে ১ মাস আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে এবং বিজ্ঞান মেলার রেজিস্ট্রেশনের আগে প্রজেক্ট শেষ করতে হবে।
  2. সম্ভব হলে নিজেকে একটা ডেডলাইন দিয়ে ঠিক করতে হবে যে, বিজ্ঞান মেলার রেজিস্ট্রেশনের আগে এতদিনের মধ্যে প্রোজেক্ট শেষ করবো। নইলে হাতে অনেক সময় আছে ভেবে ধীরে সুস্থে কাজ করলে দেখা যাবে শেষের দিকে তাড়াহুড়া করে কোনওমতে জোড়াতালি দিয়ে প্রজেক্ট দাড় করাতে হচ্ছে। তাই টাইম ম্যানেজমেন্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ
  3. গবেষণা চালানোর সময় নিয়মিত নোট রাখতে হবে প্রজেক্টের অগ্রগতি সম্পর্কে, এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে গবেষণা করার সময়।
  4. যে বিষয় নিয়ে বিজ্ঞান মেলায় অংশগ্রহন করা হচ্ছে তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। যেন বিচারক মণ্ডলী বিভিন্ন প্রশ্ন করলেও আটকে যাওয়া না লাগে।
  5. প্রদর্শিত বিষয়ের তাত্ত্বীক ও ব্যবহারিক দিক সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখতে হবে।
  6. প্রয়োজনীয় গাণিতিক ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হাতের কাছে রাখতে হবে যেন বিচারক গণ চাইলেই তা প্রদর্শন করা যায়। প্রয়োজনে খাতা কলমে পুনরায় করে দেখাবার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

বিজ্ঞান মেলায় উপস্থাপনের জন্য প্রস্তুতিঃ

  1. ঘাবড়ানো যাবে না। পুরষ্কার পেতেই হবে এমন মনোভাবের চেয়ে বিজ্ঞান প্রজেক্ট কে সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করতে পেরেছি -এ তৃপ্তি পাবার জন্য যা করতে হয় তাই করা সমীচীন।
  2. উপস্থাপনের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। যেন কোন প্রশ্ন করে আটকাতে না পারেন বিচারক মণ্ডলী কিংবা দর্শক।
  3. অনেক সময়ই বিচারকগণ ভুল প্রশ্ন করে বিজ্ঞান মেলায় অংশগ্রনকারীর মেধার যাচাই করেন। সে বিষয়েও সম্যক ও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
  4. বেশিরভাগ বিজ্ঞান মেলাতেই পোস্টারের জন্য আলাদা নম্বর বরাদ্দ থাকে। তাই পোস্টার বানাতে হবে।
  5. পোস্টার এ বড় করে প্রজেক্টের নাম লিখতে হবে এবং পুরো পোস্টার এমন সাইজের হবে, যেন ৬ ফিট দূর থেকে প্রতিটা লেখা ভালভাবে পড়া যায়।
পোস্টারে খুব বেশি ডিজাইন করার দরকার নেই, কিন্তু এমনভাবে লেখা সাজিয়ে রাখতে হবে যেন একনজরেই দেখে প্রোজেক্ট সম্পর্কে মোটামুটি একটা আইডিয়া পাওয়া যায়।

আশাকরি উপরোক্ত নিয়ম গুলো মেনে বিজ্ঞান মেলায় প্রজেক্ট উপস্থাপন করলে যে কোন প্রজেক্টই খুব আকর্ষনীয় হবে। আর আমার দেয়া এই ৫ টি প্রজেক্ট বানিয়ে অবশ্যই অনেক আনন্দ পাবেন, কারণ নিজের তৈরি প্রজেক্টের আনন্দই আলাদা 😀

সম্পাদনায় – সৈয়দ রাইয়ান 

বিজ্ঞান মেলার প্রজেক্টের জন্য পোস্টার - হাসতে খেলতে বিজ্ঞান